#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৭
#রেজওয়ানা_রমা
HAPPY BIRTHDAY
NIR PAKHI
পুরা ছাদ লাইটিং করা। চারিদিকে আলো আর আলো। আর ছাদের এক কোণে মাটির প্রদ্বীপ দিয়ে বড় বড় করে লেখা হ্যাপি বার্থডে। মেহুলের ওপর গোলাপের পাপড়ি পড়ছে ওপর থেকে। মেহুল খুশি তে আত্নহারা।
হ্যাঁ আজকে মেহুলের জন্ম দিন। অথচ মেহুলের মনেই ছিল না। রিয়ান এভাবে তাকে সারপ্রাইজ দেবে মেহুল বুঝতেও পারে নি। মেহুল চারিদিকে ঘুরছে আর হাসছে। মেহুল অনেক খুশি। মেহুলের খুশি দেখে রিয়ান মুচকি মুচকি হাসছে পিছনে দাড়িয়ে। আস্তে আস্তে মেহুলের কাছে এসে বলে।
-হ্যাপি বার্থডে নীড়। ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে
মেহুল কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিয়ান মেহুলের ঠোঁট আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। আর বলে,
-আমি আমার নীড় কে সব সময় এভাবেই খুশি দেখতে চাই।
-(নিশ্চুপ)
মেহুলের চোখ মুখে প্রাপ্তির হাসি। মেহুল এতো দিনে এক জন সঠিক মানুষ পেয়েছে। যে কিনা মেহুল কে সত্যি ভালোবাসে। মেহুলের মুখের হাসি দেখে রিয়ান যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। হঠাৎ করেই মেহুল রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। একদম রিয়ানের বুকের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছে। রিয়ান কিছুটা অবাক হলেও একটু পরে সেও তার প্রীয়সী কে জড়িয়ে নেয় তার বাহুডোরে। বেশ কিছুক্ষন পর মেহুল মাথা তুলে রিয়ানের দিকে তাকাতেই রিয়ান মেহুলের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে আবারও বলে,
– হ্যাপি বার্থডে
মেহুল মুচকি হেসে রিয়ান কে ছেড়ে দেয়। অনেকক্ষন পরে তারা নিচে আসে। এখন প্রায় রাত ৩ টা বাজে। সবাই ঘুমাচ্ছে। মেহুল আর রিয়ান রুমে আসে। মেহুল ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চুল চিরুনী করতে থাকে। আর রিয়ান ওয়াসরুমে যায়। মেহুল চুল টা বেনী করে নেয়। আর রিয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেহুলের কোমর জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।
রিয়ানের এমন কান্ডে মেহুল একটু অশস্তিবোধ করলেও মুখে কিছু বলে না। কিন্তু মনে মনে ভাবে,
এই লোক টা এমন কেন? এভাবে এত কাছে আসে। উনার স্পর্শে আমার এমন অনুভূতি কেন হয়। পুরা শরীর যেন অবশ করে আসছে। উফফ কি যে হয়
মেহুলের ভাবনার মধ্যে রিয়ান বলে উঠে,
-আই লাভ ইউ নীড়
-(নিশ্চুপ)
-কি হলো কিছু বলো (আবেগ জড়ানো কন্ঠে)
-কি বলবো?
-আই লাভ ইউ
-হুম
-কি হুম আই লাভ ইউ
-হুম শুনেছি
-হুম, শুনেছি এসব কি?🙄 বলছি যে আই লাভ ইউ
– হুম।
-ধ্যাত। হুম ছাড়া অন্য কিছু বলো
-চলুন ঘুমাই
– এ্যাহ!! ঘুমাই? এই তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন😕 ধ্যাত। আচ্ছা চলো ঘুমাই। কিন্তু একটা শর্ত আছে।
– কি শর্ত🙄
-আজকে আমি আমার বউ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো😁
– কিহহহ
-হুম প্লিজ🥹
-হুহহ ( রিয়ান কে সরিয়ে দিয়ে)
মেহুল রিয়ান কে সরিয়ে দিয়ে এসে শুয়ে পড়ে। আর রিয়ান বোকার মত আয়নার সামনে দাড়িয়ে থাকে। মেহুল এর মধ্যে বলে উঠে,
– আসবেন নাকি লাইট অফ করবো?
– আরে আসছি তো এতো মেজাজ দেখাও কেন
-আসুন।
রিয়ান এসে মেহুল কে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে যায়। মেহুল আর কিছুই বলে না। কারন মেহুল একটু একটু করে রিয়ানের প্রতি দুর্বল হচ্ছে।
সকালে দুজনের ঘুম ভাঙে মায়ের কন্ঠে। মা দরজায় ধাক্কাচ্ছে আর রিয়ান মেহুল কে ডাকছে। মেহুল রিয়ান দুইজন ই উঠে তারাতারি দরজা খোলে,
– রিয়াআআন ( কান্নায় ভেঙে পড়ে)
-মা! কি হয়েছে? ( মেহুল)
-বউ মা! তোমার বাবা ( আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে।
-বাবা? কি হয়েছে বাবার?
রিয়ান আর এক মুহূর্ত ও দেরী না করে সোজা বাবা মায়ের রুমে চলে যায়। দরজার সামনে যেতেই দাড়িয়ে যায় রিয়ান।
এদিকে মেহুলও মা কে নিয়ে তারাতারি বাবা মায়ের রুমের দিকে যায়। দরজায় রিয়ান কে এমন ঠাই দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেহুল বলে,
– কি হলো আপনি আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?
রিয়ান কোনো কথা বলছে না। হঠাৎ মেহুলের চোখ যায় রুমের দিকে। মেহুল ভয়ে চিৎকার করে উঠে। রিয়ান এখনো ঠাই দাড়িয়ে আছে। যেন সে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। মেহুল ভয়ে চোখ বন্ধ করে রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মেহুলের স্পর্শে রিয়ানের হুঁশ ফেরে। মেহুল কে সরিয়ে দিয়ে রুমে প্রবেশ করে রিয়ান। রিয়ানের বাবা ফ্লোরে অজ্ঞাত অবস্থায় পড়ে আছে। পুরা শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে। পুরা রুম রক্তে ভেসে যাচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরির আঘাত। রিয়ান বাবার কাছে গিয়ে বলে,
-আব্বুউউ চোখ খোলো আব্বু। আব্বু প্লিজ চোখ খোলো। আব্বু
-কিভাবে হলো এমন (মেহুল)
-জানি না মা। সকাল উঠে দেখি উনি এভাবে পড়ে আছে ( কাদতে কাদতে মা)
-রিয়ান বাবা কে তারাতারি হাসপাতালে নিয়ে চলুন (মেহুল)
– হ্যাঁ হ্যাঁ চলো। ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলো।
বাড়ির সবাই হসপিটালে। মি.রাইয়ান সাহেব (রিয়ানের বাবা) কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। বাহিরে রেহানা বেগম (রিয়ানের মা), রিয়ান আর মেহুল অপেক্ষা করছে। রেহানা বেগম কান্নায় অস্থীর হয়ে পড়ছে। মেহুলে বার বার বুঝাচ্ছে,
-মা তুমি শান্ত হও। বাবার কিচ্ছু হবে না। বাবা ঠিক হয়ে যাবে
-কি থেকে কি হয়ে গেল মা। কিভাবে এমন টা হলো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ( কান্না করতে করতে)
-তুমি ভেঙে পড়ো না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা মা কাল রাতে কি হয়েছিল? তোমার কি কিছু মনে পড়ে?
– বেশ তো ছিলাম। প্রতিদিনের মত ডিনার করে রুমে এসেছি। আমার শরীর টা খারাপ লাগছিল তাই উনাকে বলেছিলাম লাইট অফ করে শুয়ে পড়তে আমি আগেই শুয়ে পড়ি। এর পর তিনিও একটু পরে এসে শুয়ে পড়ে। আমি ঘুমিয়ে যাই। আর সকালে উঠে দেখি হুহু হুহুহু( আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে)
-মা তুমি শান্ত হও। যে এমন টা করেছে আমরা ছাড়বো না তাকে। সে শাস্তি পাবে। তুমি শান্ত হও মা।
রেহানা বেগম মেহুল কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আর রিয়ান পায়চারি করে যাচ্ছে। আর ভাবছে,
কে করলো? বাড়ি তে ঢুকলো কিভাবে? আর বাবা কে অ্যাটাক কেন করলো? কি উদ্দেশ্য ছিল? না আর কিছু ভাবতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর ডক্টর রিক ওটি থেকে বের হয়। সাথে সাথে ছুটে যায় রিয়ান। বলে,
-রিক বাবা কেমন আছে?
-তুই শান্ত হ। আমরা চেষ্টা করছি। আংকেল সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে। ও নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন।
-তোদের এখানে আছে?
-না। কিন্তু ব্লাড ব্যাংক এ খোঁজ নিতে হবে
– ঠিক আছে। আমি এখনই যাচ্ছি।
-তোকে যেতে হবে না। আমি লোক পাঠিয়েছি।
-ও।
– কিছু খেয়েছিস?
-না। আগে আব্বু সুস্থ হোক পরে খাওয়া যাবে।
-কিন্তু রিয়ান এসব হলো কি করে?
-সেটাই তো বুঝতে পারছি না। কে অ্যাটাক করলো? কেউ কিছু বুঝতে পারলাম না। আব্বুর চিৎকারের আওয়াজ ও আমরা কেউ পাই নি। কিছুই বুঝতে পারছি না রে
– সব কিছু আংকেল বলতে পারবেন। তার আগে উনাকে সুস্থ হতে হবে। তুই চিন্তা করিস না আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ( রিয়ানের কাধে হাত দিয়ে)
-হুম।
-তুই আন্টি আর ভাবী কে নিয়ে বাড়ি যা। এদিকে আমি আছি তো।
-ঠিক আছে। আম্মুর রেস্টের প্রয়োজন। একটু দেখিস এদিক টা।
– আমি আছিতো। উনি কি শুধু তোর একার বাবা? আমারও বাবা। সেই ছোট থেকে আংকেল আন্টি তোকে আর আমাকে কিভাবে বড় করেছে আমি ভুলি নি। আমি নিজের বাবার মতই খেয়াল রাখব। তুই বাড়ি যা। এখানে উনার আরেকটি ছেলে আছে তো।
-হুম
রিয়ান মা কে নিয়ে চলে যাবে এমন সময় ওটি থেকে একজন নার্স এসে বলেন,
– স্যার পেশেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ তারাতারি আসুন।
রিক তারাতারি চলে যায়। রিয়ান আর রেহানা বেগম দাড়িয়ে পড়ে। রেহানা বেগম হু হু করে কেদে উঠে। মেহুল তারাতারি রেহানা বেগমের কাছে যায়।
– মা শান্ত হন। বাবার কিচ্ছু হবে না।
মেহুল রেহানা বেগম কে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। রিয়ান আর বাড়ি ফিরতে পারলো না। এদিকে আজকেই তাকে চলে যেতে হবে কিন্তু বাবার এমন অবস্থা কিভাবে যাবে। অফিসে ফোন করে ৫ দিনের ছুটি নেয়।
সবাই রাইয়ান সাহেব কে নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে রিফা একা। কারো রিফার কথা মনেই নেই। হঠাৎ মেহুল রিয়ানের কাছে এসে বলে।
-রিফা বাড়ি তে একা। আমরা সবাই এখানে। সকাল থেকে দেখলাম না। এত কিছু হয়ে গেলো। এত চিল্লাচিল্লির মধ্যেও রিফা বের হলো না। ও ঠিক আছে তো?
রিয়ানের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। তাই তো সকাল থেকে রিফার কোনো খবর নাই। রুম থেকে বের হলো না কেন
– তাই ই তো। রিফা তো একটু আওয়াজ হলেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। আর সেখানে এতো কিছু হয়ে গেল ওর কোনো সাড়া শব্দ নেই। তুমি এখানে মায়ের সাথে থাকো আমি এক্ষুনি আসছি।
বলেই রিয়ান বেরিয়ে যায়। মেহুলের উত্তরের অপেক্ষা না করেই। রিয়ান বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই ডক্টর রিক এসে রেহানা বেগমের কে বলেন,
– অপারেশন সাকসেসফুল। আর রক্তও পাওয়া গেছে আন্টি। আপনি চিন্তা করবেন না। ICU তে আছেন এখন ৪৮ ঘন্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি আমি আছিতো। আপনি চলুন আংকেল কে দেখে আসবেন,
-বাবা রিক তোমাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো বুঝতে পারছি না। চলো বাবা আমাকে একটু নিয়ে চলো।
– জ্বী আন্টি। চলুন
মেহুল রেহানা বেগম কে সাথে নিয়ে রিকের সাথে যায়। মি.রাইয়ান অচেতন অবস্থায় বেডের ওপর আছেন। তারা দেখা করে বের হয়ে আসেন।
আর এদিকে রিয়ান বাড়ি ঢুকে সোজা রিফার রুমে চলে যায়। রুমের দরজা খোলা ছিল। এতে রিয়ান একটু অবাক হয়। কারণ রিফা দরজা সব সময় বন্ধ রাখে। রিয়ান রুমে প্রবেশ করে দেখে রিফা ঘরের কোথাও নেই। রিয়ান রিফা কে ডাকতে ডাকতে বেলকালনী তে যায়। বেলকানী তে রিফা গুটি শুটি মেরে বসে বসে কাদছে। চোখ মুখ ফোলা। ভয়ে কাপছে। রিয়ান কে দেখে আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়। নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয়। রিয়ান রিফা কে এভাবে দেখে হতবাক হয়ে যায়। তারাতারি রিফার কাছে গিয়ে বলে,
-রিফু কি হয়েছে বোন? তুই এখানে এভাবে বসে আছিস কেন? কি হয়েছে বোন তোর?
-(কান্না করেই যাচ্ছে)
-বল আমাকে। কি হয়েছে? তুই এতো ভয় পেয়ে আছিস কেন? কাদছিস কেন তুই? বল আমাকে ( বুকে জড়িয়ে নিয়ে)
এইবার রিফা জোরে কেদে উঠে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে
#চলবে