তারে আমি চোখে দেখিনি পর্ব-২৩+২৪

0
176

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ২৩
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ঝিমাচ্ছে রনি। শরীরের ব্যথায় তার জান যায় যায় অবস্থা। নিয়ম করে প্রতিদিন মারধর করায় ক্ষতগুলো শুকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। ফলাফল এই অসহনীয় যন্ত্রণা। এর চাইতে ম*র*লে বোধহয় কষ্ট কম হতো। কথাগুলো ভেবে নিজে নিজেই তাচ্ছিল্য হাসে রনি। ম*র*তে চাইলেই কি আর ম*র*তে দেবে। ওকে যে তিলে তিলে মারবে এরা।

এরই মাঝে হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করে সোহেল। চোখে মুখে তার আতঙ্কের ছাপ। সোজা রনির পায়ের কাছে এসে ধপ করে বসে পড়ে। বিচলিত কন্ঠে বলে,

—“গন্ডগোল হয়ে গেছে ভাই। মেয়েগুলোকে ওরা খুঁজে পেয়ে গেছে। এখন কি হবে?”

সোহেলের কথা শুনে চমকে ওঠে রনি। পরোক্ষণেই আবার চুপ হয়ে যায়। সে জানতো এক না এক সময় মেয়েগুলো ধরা পড়বেই। এই বাড়ির ভেতরে থাকা কোনো মানুষকে বাহিরে বের করা সম্ভব নয়। তাও আবার এতোগুলা মেয়েকে বের করা তো আরো অসম্ভব। রনি প্রণপন চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তার চেষ্টা বিফলে গেছে। কথাগুলো ভাবতেই হতাশর নিঃশ্বাস ছাড়ে রনি। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে।

রনির শুকনো মুখ দেখে আহত চোখে তাকায় সোহেল। রনির অসহায়ত্ব সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। সে নিজেও তো অসহায়। হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে চোখ তুলে তাকায় সোহেল। চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

—“একটা ভালো খবর আছে ভাই। অর্পন স্যার মনে হয় এই জায়গার সন্ধান পেয়ে গেছে। আজ সকালেই তাকে সামনের রাস্তায় দেখেছি। সে এই বাড়িটাই দেখছিলো।”

এই পর্যায়ে রনির ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। বুকের ওপর জমে থাকা ভারি পাথর যেনো একটু একটু করে সরে যাচ্ছে। আশার আলো দেখতে পাচ্ছে রনি। ফোটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি ফুটিয়ে রনি বলে,

—“এই জায়গার খোঁজ যখন পেয়ে গেছে তাহলে আক্রমণ করতে বেশি সময় অর্পন নেবে না। এবার মনে হচ্ছে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

সোহেলের মুখেও মৃদু হাসি। অর্পনের এই জায়গায় আসা ওদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ।

————————-

ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে অর্পনের পরিবার। প্রাপ্তির বাবা আর মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলছে সবাই। অর্পন পাশের সোফায় সাগর আর অঙ্কনের মাঝে বসে আছে। বিচলিত দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে না পারায় মনের ছটফটানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথায় প্রাপ্তি? আসছে না কেনো? অনন্তকাল অপেক্ষা করাবে নাকি?

এদিক সেদিক চোখ বুলাতে গিয়ে হঠাৎ দৃষ্টি আটকে যায় সিঁড়ির দিকে। এক মুঠো শীতল বাতাস ছুয়ে দেয় অর্পনের তনু মন। চোখে এসে ভর করে একরাশ মুগ্ধতা। দৃষ্টি হয় স্বচ্ছ, পরিস্কার, মোহনীয়। প্রাপ্তি তার দাদুর হাত ধরে নিচে নেমে আসছে। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো খুলে রাখা। পুরো পিঠময় ছড়িয়ে আছে চুলগুলো। কালো কামিজের সাথে সাদা ওড়না গলায় একটা প্যাচ দিয়ে দুই পাশে ঝুলিয়ে রেখেছে। অর্পন তাকিয়েই থাকে সেই দিকে। এ দেখার যেনো কোনো শেষ নেই। মনে মনে ভাবে, “মেয়েটার মুখে এতো মুগ্ধতা কেনো? যখনই সামনে আসে, চারিদিকে মোহ ছড়িয়ে দেয়।”

বারান্দায় পেরিয়ে সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা দিতেই দাড়িয়ে পড়ে প্রাপ্তি। আকস্মিক ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায় তার । নিঃশব্দে লম্বা শ্বাস টেনে নেয়। পরিচিত ঘ্রাণ নাকে আসতেই চমকে ওঠে প্রাপ্তি। সে অর্পনকে অনুভব করতে পারছে। বাতাসে পারফিউমের সুবাস জানান দিচ্ছে যে অর্পন এখানেই আছে। প্রাপ্তির আশেপাশেই। খুব কাছে। কিন্তু কিভাবে? অর্পন এখানে আসবে কেনো? মাথায় ঢুকছে না প্রাপ্তির। প্রাপ্তিকে এভাবে দাড়িয়ে পড়তে দেখে কামরুল সাহেব বলেন,

—“দাড়িয়ে পড়লে যে?”

—“কিছু না দাদু।”

ছোট্ট করে উত্তর দিয়ে নিচে নেমে আসে প্রাপ্তি। তবে কান তার সজাগ। অনুভবের ওপর আজ বড্ড বেশি সন্দেহ কাজ করছে যেনো। সে গলার স্বর শুনে নিশ্চিত হতে চায়। এটা কি আসলেই অর্পন!

প্রাপ্তির মনের কথা যেনো বুঝতে পেরে যায় অর্পন। প্রাপ্তি যে মন আর মস্তিষ্ককের দন্দে হাবুডুবু খাচ্ছে সেটা বাকিদের চোখে না পড়লেও অর্পনের চেখে ঠিকই পড়েছে। তাই কাল বিলম্ব না করে গলা উঁচু করে খাঁকারি দিয়ে ওঠে। সাথে সাথে জমে যায় প্রাপ্তি। এবার সে নিশ্চিত, এটা অর্পনই।

প্রাপ্তিকে নিজের পাশে বসিয়ে আয়েশ করে বসেন কামরুল সাহেব। একবার তাকান তার ছেলে এবং ছেলের বৌয়ের দিকে। তারা হাসি মুখে বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইতিমধ্যে তারা সম্মতি দিয়ে দিয়েছে। নজর ঘুরিয়ে তাকান পাশে দাঁড়ানো সুপ্তির দিকে। সে আপাতত ছেলের দিকে বিস্ফোরিত নজরে তাকিয়ে আছে। যে কোনো সময় চোখ তার কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে এমন ভাব। এবার তিনি তাকান মেহমান দের দিকে। তারা স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বসে আছে। প্রাপ্তির হাতটা মুঠো করে ধরে কামরুল সাহেব বলেন,

—“আপনারা এতো দূর থেকে কষ্ট করে এসেছেন তার জন্য ধন্যবাদ। তবে একবার জানিয়ে আসলে ভালো হতো। আসলে আমাদেরও তো একটা মতামতের ব্যপার স্যপার আছে নাকি? আমার বড় নাত জামাইও উপস্থিত নেই এখানে।”

সুভাষ সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছেন। কামরুল সাহেবের সব কথা মন দিয়ে শুনলেন। কামরুল সাহেব কথা শেষ করতেই তিনি প্রতিউত্তরে বলেন,

—“আপনাদের মেয়ে। আপনাদের মতামত তো অবশ্যই থাকবে।”

মারুফ সাহেব কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই কামরুল সাহেব তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন। নরম কন্ঠে বলেন,

—“আমি এই মুহুর্তে নাতনির বিয়ে দিতে চাইছি না। ওর মাস্টার্স পরিক্ষা শেষ হোক আগে। তারপর ভেবে দেখবো।”

—“বিয়ের সবকিছু ঠিক করে রাখি। আমরা না হয় প্রাপ্তি আম্মুর পরিক্ষার পরেই বাড়ি নিয়ে যাবো।”

সন্ধ্যা বেগমের তৎক্ষনাৎ জবাবে সরু চোখে তাকান কামরুল সাহেব। এরা তো ছাড়ার নামই নিচ্ছে না। যতই কথা কাটিয়ে দিতে চাইছেন ততই যেনো লতার মতো পেচিয়ে ধরছে। এতো ভরি মুশকিল।

এদিকে বাম হাতে সোফার হাতল খাবলে ধরে হাসফাস করছে প্রাপ্তি। পেটের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে। গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। কণ্ঠনালি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে কিছু না বলা কথা। দাদুকে জানাতে চাইছে এটাই সেই মানুষ, যাকে মনের ঘরে জায়গা দিয়েছে প্রাপ্তি। কিন্তু মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের করতে পারছে না। শব্দরা যেনো বিদ্রোহ শুরু করেছে। এক অসয্য দহনে পীড়িত হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।

দুই দাদু নাতনির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্পন। কিছু একটা তো গোলমাল আছেই যা অর্পন বুঝতে পারছে না। অর্পনের জানা মতে প্রাপ্তিও তার প্রতি দুর্বল। অর্পন অনুভব করেছে সেটা। তাই তো প্রাপ্তিকে না জানিয়েই চলে এসেছে। কিন্তু হঠাৎ কামরুল সাহেবের অমত করার বিষয়টা ঠিক ধরতে পারছে না। কারণ কি হতে পারে? মনের সন্দেহ দূর করতে অর্পন সাবলীল ভঙ্গিতে বলে,

—“কারণটা জানতে পারি? এখন বিয়ে দিতে না চাওয়ার কারণ?”

—“কারনটা ওর লেখাপড়া। আগে সেটা শেষ হোক।”

—“তার মানে পরিক্ষার পরে তো বিয়ে দিতে কোনো আপত্তি নেই? আমরা না হয় তখনই ব্যটারটা আগাবো।”

কামরুল সাহেব দমে যান। সাথে কিছুটা অবাকও হন অর্পনের কাঠকাঠ কন্ঠে। মনে মনে আওড়ান, “এই ছেলে তো মরিয়া হয়ে উঠেছে বিয়ে করতে। আশ্চর্য!”
তবে মুখে কিছুই বলেন না। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় যে, প্রাপ্তির পরিক্ষার পর বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে কোনো আপত্তি থাকবে না। কামরুল সাহেবের ইশারা বুঝতেই হুট করে উঠে দাঁড়ায় অর্পন। কন্ঠের গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে,

—“আমার মনে হয় একবার প্রাপ্তির সাথে আলাদা কথা বলা প্রয়োজন। ওর মতামত আমি ওর মুখ থেকেই শুনতে চাই।”

দিলারা বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠেন। প্রথম দেখাতেই তার অর্পনকে পছন্দ হয়েছে। তার ওপর ছেলে পুলিশ। সেই সাথে কঠোর ব্যক্তিত্বের মানুষ। প্রাপ্তিকে আগলে রাখতে এমন শক্ত মনের একটা ছেলেই তো চাই। খুশি হয়ে উঠে তিনি বলেন,

—“কেনো নয়? এটা আধুনিক যুগ। ছেলে মেয়ের আলাদা কথা বলাটা স্বাভাবিক। তোমরা ছাদে গিয়ে নিরিবিলি কথা বলে আসো। সেটাই ভালো হবে। তাই না বাবা?”

শেষ কথাটা তিনি মারুফ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন। মারুফ সাহেব বিরক্তিকর চোখে তাকান ছেলের বৌয়ের দিকে। নিজের মতো সব তো বলেই দিলো, তাহলে এখন অনুমতি চাওয়ার কি আছে। এখন কি তিনি না বলতে পারবেন? ভদ্রতা নামেরও তো কোনো শব্দ আছে না কি? তিনি মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানান।

কামরুল সাহেব সম্মতি জানাতেই অর্পন এগিয়ে যায় প্রাপ্তির কাছে। আলতো করে হাতটা ধরে ধীর কন্ঠে বলে,

—“চলো!”

কেঁপে ওঠে প্রাপ্তি। আজ অর্পনের ছোঁয়ায় ভিন্ন রকম অনুভূতি হচ্ছে। এই অদ্ভুত অনুভূতির কারণ কি? অর্পন তাকে নিজের জীবনের একটা অংশ বানাতে চাইছে তাই? প্রাপ্তির অন্ধকার জীবন আলোকিত করতে চাইছে তাই? কিন্তু এটা কি সঠিক হচ্ছে? প্রাপ্তির জীবন আলোকিত করতে গিয়ে অর্পন নিজের জীবনে অন্ধকার ডেকে আনছে। অন্ধদের কি আদৌ কোনো ভবিষ্যৎ আছে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই অর্পনের সাথে পা বাড়ায় প্রাপ্তি। অর্পনের জায়গায় সুপ্তি থাকলে হাতটা জোর দেখিয়ে সরিয়ে নিতো। সাহায্য করতে চাওয়ার জন্য কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতো। কিন্তু অর্পনের ক্ষেত্রে কোনো কথাই কণ্ঠনালি ভেদ করে বের হচ্ছে না। কড়া কথা শোনাতে চেয়েও বলতে পারছে না। অগত্যাই পা বাড়ায় ছাঁদের দিকে।

ছাদের শেষ প্রান্তে এসে থামে দুজন। অর্পনের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দৃষ্টি রাখে সামনের পানে। যদিও সেই দৃষ্টিতে বন্দী হচ্ছে না কোনো দৃশ্য। তবুও চেয়ে থাকে দূর দূরান্তে। কিছুক্ষণ চলে নিরবতা। দু’জনেই চুপ। শান্ত পরিবেশ। নিরবতা ভেঙে প্রথম প্রাপ্তি প্রশ্ন করে,

—“এখানে কেনো এসেছেন?”

—“কারণটা তুমি জানো।”

অর্পনের গম্ভীর কন্ঠে তৎক্ষনাৎ জবাব শুনে চুপ হয়ে যায় প্রাপ্তি। একটা ছোট্ট দম নিয়ে বলে,

—“পাগলামিটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”

—“পাগলামির কিছুই দেখোনি তুমি। আমার কথার অবাধ্য হলে তখন দেখবে অর্পনের পাগলামি ঠিক কেমন।”

—“হুমকি দিচ্ছেন?”

—“না, শুধু জানিয়ে রাখছি।”

ফের নিরবতা। প্রাপ্তি বার বার হেরে যাচ্ছে অর্পনের সাথে তর্কে। সত্যি বলতে প্রাপ্তি তর্ক করতে জানে না। অল্পতেই হার মেনে নেয়। কারণ বাঁচাল স্বভাবের পুরোটাই সুপ্তি রপ্ত করতে পারলেও, প্রাপ্তি পারেনি। চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানোর পর আরো বেশি চুপ হয়ে গেছে।

ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে রেলিংয়ে হাত রাখে প্রাপ্তি। শক্ত করে চেপে ধরে উদাসীন কন্ঠে বলে,

—“আমার জীবনটা বাকি পাঁচটা মেয়ের থেকে আলাদা অফিসার। এই সামনে তাকিয়ে দেখুন, রঙিন একটা প্রকৃতি দেখতে পাবেন। কিন্তু আপনার দৃষ্টি কেন্দ্র করে আমি সেখানে তাকালে দেখতে পাই অন্ধকার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। যেখানে আলোর কোনো চিহ্ন নেই। আমি এমন একটা মেয়ে যে নিজের কাজ নিজেই করতে অক্ষম। কারণ একটাই, আমি চোখে দেখতে পাই না। সুপ্তির মুখ থেকে শোনা বর্ননা অনুযায়ী আপনি দেখতে মারাত্মক সুদর্শন। আপনার চেহারা, আপনার ব্যক্তিত্ব কোনোদিকেই ত্রুটি নেই। আপনি এমন পার্ফেক্ট একটা মানুষ হয়ে আমার মতো ত্রুটিযুক্ত মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছেন। কেনো?”

—“যদি বলি তোমার এইসব ত্রুটিতে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।”

ঘুরে দাড়ায় প্রাপ্তি। গভীর চোখে তাকানোর চেষ্টা করে। দৃষ্টিহীন চোখেই একবার অর্পনকে দেখার প্রয়াশ। তবে ব্যর্থ হয় প্রাপ্তি। কারণ চোখের দৃষ্টি যতই গভীর করুক, সেই চোখে অন্ধকার ব্যতিত আর কিছুই যে নেই। ভেতর থেকে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে প্রাপ্তির। সেই দীর্ঘশ্বাসের রেশ ধরেই বলে,

—“কেনো? ভালোবাসেন আমায়?”

—“কে বললো এই কথা? আমি কখনো বলেছি? তোমার পেছনে অনেক শত্রু লেগে আছে। তারা তোমার ক্ষতি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করবে। তাদের থেকে বাঁচাতে তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চাইছি। জবাব পেয়েছো?”

দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে শেষ করে অর্পন। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতে প্রাপ্তিকে। মশকরা করছে সে অর্পনের সাথে! ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে অর্পনের? অর্পন নিজের কথা, আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে তার মনের কথা। তবুও মেয়েটা আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করছে। না জানার ভান করছে। এখন কি অর্পনের মুখ ফুটে সব সরাসরি বলতে হবে? সে নিজে থেকে কেনো বুঝে নিচ্ছে না? রাগে হিসহিস করছে অর্পন।

অর্পনের কথার ধরনে হয়তো রাগের আভাস পেয়েছে প্রাপ্তি। তাই আর কথা বাড়ায়নি। চুপ হয়ে যায়। কিছু সময় চুপ থেকে অর্পন গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—“বাড়তি আর কোনো কথা বাড়াবে না। নিচে গিয়ে সবাইকে বলবে তুমি এই বিয়েতে রাজি। আর কিছু না হোক অন্তত নিজের সেফটির কথা তো ভাবো ইস্টুপিট।”

কথাগুলো বলেই হনহন করে সেখান থেকে চলে আসে অর্পন। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। প্রাপ্তি তো বেশ বুদ্ধিমতি। তাহলে আজ অবুঝদের মতো এমন আচরণ করছে কেনো? আজব!

——————————

রান্নাঘরে রাতের জন্য রান্না করছে দীপ্তি। সাথে সাহায্য করছে কাজের মেয়ে। চুলায় তরকারি বসিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে যায় দীপ্তি। সেদিন সজীবের অদ্ভুত আচরণ দেখে প্রচন্ড আশ্চর্য হয়েছিলো দীপ্তি। বিয়ের এতোগুলা বছরে এই প্রথম সজীব এমন অদ্ভুত আচরণ করছে। সেই সাথে ঐ বন্ধ ঘরের রহস্য খুব করে ভাবাচ্ছে দিপ্তিকে। ঐ বন্ধ ঘরের রহস্য উদঘাটন করতেই মূলত এই বাড়িতে ফিরে এসেছে দীপ্তি। সজীবকে ছাড়া একাই চলে এসেছে। যদিও দিপ্তিকে এভাবে বাড়ি ফিরতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলো সজীব। তবে কিছু বলেনি। নিত্যদিনের মতো কাজের বাহানায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।

দীপ্তির ভাবনার ছেদ ঘটে ফোনের রিংটোন শুনে। পাশেই তার ফোনটা আপন গতিতে বেজে চলেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার মা ফোন করেছে। মায়ের নাম্বার দেখে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে দীপ্তির। চুলার আচ কমিয়ে দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে। অপর পাশ থেকে শোনা যায় দিলারা বেগমের উৎসুক আওয়াজ,

—“কেমন আছিস দীপ্তি? জামাই কোথায়? ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছে না যে।”

সজীবের কথা শুনতেই ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে যায় দীপ্তির। চোখে মুখে ভর করে বিষাদের ছায়া। আছে হয়তো তার কোনো জরুরি কাজে। আজকাল তার জরুরি কাজ একটু বেশিই বেড়ে গেছে। বিষয়টা ধামাচাপা দিতে দীপ্তি মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বলে,

—“কারখানায় গেছে মা। কাজের চাপ অনেক বেশি বুঝলে। বাড়ি ফেরারও সময় পাচ্ছে না।”

—“ও আচ্ছা, জামাইয়ের যত্ন নিস।”

—“হুম, তুমি কিছু বলতে ফোন দিয়েছো?”

—“আরে হ্যা, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। প্রাপ্তির বিয়ের একটা সম্বন্ধ এসেছে। ছেলেটা অনেক ভালো। পুলিশের চাকরি করে বুঝলি।”

ভ্রু কুঁচকে যায় দিপ্তির। সাথে কিছুটা রাগও হয়। কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে,

—“তোমরা আবার কাকে ধরে বেঁধে আনছো? আগের বারের কথা ভুলে গেছো?”

—“কিচ্ছু ভুলিনি। ছেলেটা অনেক ভালো। আর তাছাড়া, বিয়ে হয়ে তো যায়নি। তোর দাদু তাদের বলেছেন” আমার বড় নাতনি আর নাত জামাই আছে। তাদের সাথে পরামর্শ করে আমরা আপনাদের জানাবো।” তুই জামাইকে নিয়ে একবার এবাড়ি আসিস তো।”

ছোট্ট করে দম ছাড়ে দীপ্তি। শান্ত কন্ঠে বলে,

—“বেশ, যাবো।”

রাতে সজীব বাড়ি ফেরেনি আজ। দীপ্তি বেশ খুশি হয়েছে এতে। তার উদ্দেশ্য সফল করতে এটা মোক্ষম সুযোগ। সজীব থাকলে কাজটা সহজ হতো না। উত্তেজনায় ঘুমাতে পারেনি দীপ্তি। ঘড়ির দিকে চেয়ে আছে কাঙ্ক্ষিত প্রহরের অপেক্ষায়। রাত ঠিক দুটোর সময় ফোনের এলার্ম বেজে ওঠে। অপেক্ষা করতে করতে চোখটা লেগে গিয়েছিলো মাত্রই। ভাগ্যিস এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো। না হলে তো গভীর ঘুরে তলিয়ে যেতো।

ফোনের এলার্ম বন্ধ করে ঘর থেকে বের হয় দীপ্তি। মধ্যে রাত হওয়ায় পুরো বাড়ি অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিছুই ভালো মতো দেখা যাচ্ছে না। রাতের নিরবতাই বুঝিয়ে দিচ্ছে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হাতের ফোনটা সামনে এনে লাইট জ্বালায় দীপ্তি। সবার প্রথম উঁকি দেয় শ্বাশুড়ির জানালায়। দড়জা ভেতর থেকে আটকানো তাই জানালায় এসেছে। ভেতরে তাকাতেই ড্রিম লাইটের আলোয় দেখতে পায় শ্বাশুড়ি ঘুমে বিভোর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে দীপ্তি। ঢোক গিলে এগিয়ে যায় কাজের মেয়ের ঘরের দিকে। সেও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সামনের দিকে পা বাড়ায় দীপ্তি। এর মাঝে কদম আর থামে না। সোজা এসে দাড়ায় সেই নিষিদ্ধ ঘরের সামনে। হাতের মধ্যে মুঠো করে রাখা চাবিটা বের করে দীপ্তি। এখানে আসার পর সবার প্রথম সে এই ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়েছে। কাজটা ঠিক কতটা কঠিন আর বিপদজনক ছিলো সেটা শুধু দীপ্তিই জানে। একটা শুকনো ঢোক গিলে চারিদিকে নজর বুলায় দীপ্তি। কেনো যেনো প্রচন্ড ভয় লাগছে তার। আজ নিজের বাড়িটাই বড্ড অচেনা লাগছে। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে চাবিটা এগিয়ে নিয়ে যায়। খুব সাবধানে তালা খুলে আস্তে করে দড়জা ধাক্কা দেয়। ভেতরটা অন্ধকার। তবে ঘরের মধ্যে আরো একটা ঘর দেখা যাচ্ছে। গুপ্ত সেই ঘরের দড়জার নিচ দিয়ে হালকা আলো আসছে।

সেদিকে পা বাড়ায় দীপ্তি। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দড়জার সামনে দাঁড়ায়। দড়জায় তালা দেয়া নেই। দড়জাটা আলতো হাতে খুলে নিঃশব্দে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে দড়জা খুলে যায়। ঘরের ভেতর তাকাতেই দৃষ্টি থমকে যায় দীপ্তির। চোখের আকাশ ধারণ করে দ্বিগুণ। চেহারার ভাব হয় অস্বাভাবিক। ভয়ে কেঁপে ওঠে তার পুরো সত্তা।

চলবে?

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ২৪
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল প্রকৃতি। মধ্যে রাতের ধরনী নিকষ কালো অন্ধকারময়। গগনের বুকে বিচরণ করছে শতশত কৃষ্ণ মেঘের রাশি। বেওয়ারিশ মেঘের দল নিজ গন্তব্য ভুলে পুরো আকাশময় ছোটাছুটি করছে। কখনো কখনো একে অপরের সাথে সংঘর্ষে গর্জে উঠছে প্রকৃতি। অন্ধকার ভেদ করে আলোকিত হয়ে উঠছে পৃথিবী। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ফের তলিয়ে যাচ্ছে অতল কৃষ্ণ গহ্বরে। এলোমেলো ঝড়ো হাওয়ায় বেগতিক হারে কাপছে পর্দা। কখনো বা বাতাসের দাপটে তা ছিটকে এসে দীপ্তির চোখ মুখ ছুয়ে দিচ্ছে। ঘোর কাটে দীপ্তির। চোখের বিস্ময় এখনো নয়নে বিদ্যমান।

এই বাড়ির প্রতিটা কোণায় কোণায় শহস্র রহস্য লুকিয়ে আছে। যা এতোদিন ছিলো সবার চক্ষুর আড়ালে, অগোচরে। নিজের বিস্ময় কাটিয়ে কৌতুহলী চোখে তাকায় দীপ্তি। গুপ্ত কক্ষের মাঝ বরাবর একটা রাজকীয় খাট। সেখানে শুভ্র চাদরে আবৃত হয়ে শুয়ে আছে কেউ। ড্রিম লাইটের হালকা আলোয় দীপ্তি এটুকু বুঝতে পারছে যে বিছানায় শয়নরত মানুষটা একজন পুরুষ। হাতে ক্যানুলা লাগানো। খাটের চারিদিকে পুরো কক্ষ জুড়ে অসংখ্য চিকিৎসা সামগ্রী। দেখে মনে হচ্ছে পুরো একটা হসপিটাল এই কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে। ছেলেটার শরীরে চলাচল করা স্যালাইনের নল এটার জানান দিচ্ছে যে, ছেলেটা সুস্থ নয়। বরং গুরুতর অসুস্থ সে।

খাটের পাশেই টুলে বসে বিছানার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে একজন নার্স। পোশাকে তার পেশা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কে এই ছেলেটা? এই বাড়িতে কেনো সে? এই গুপ্ত কক্ষে তাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে কেনো? আর ছেলেটা যখন অসুস্থ তাহলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়নি কেনো? এই বন্ধ ঘরে তার চিকিৎসা কেনো হচ্ছে? যদি এই ছেলেটা এই পরিবারের কোনো সদস্য হয়ে থাকে তাহলে দীপ্তি তাকে আগে দেখেনি কেনো?

ভাবনার মাঝেই আবারো মেঘ ক্ষিপ্র স্বরে গর্জন করে ওঠে। কয়েক মুহুর্তের জন্য আলোকিত হয়ে ওঠে ধরনী। সেই কিঞ্চিৎ সময়ের মধ্যেই দীপ্তির চোখ আটকে যায় ছেলেটার মাথার দিকের দেয়ালে। সেখানে প্রাপ্তির একটা হাস্যজ্জল ছবি টানানো। কয়েক মুহুর্তের আলোতেও নিজের বোনকে চিনতে বিন্দু মাত্র ভুল হয়নি দীপ্তির। আজ থেকে প্রায় আট দশ বছর আগের ছবি এটা। চেহারায় একটা বাচ্চা বাচ্চা ফুটে আছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রাপ্তির ছবির ওপর লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন আকা। যেনো বিশেষ ভাবে মুখটা চিহ্নিত করে রেখেছে।

ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে দীপ্তির। এখানে প্রাপ্তির ছবি, সেই সাথে ছবির ওপর লাল কলমে ক্রস চিহ্ন। বিষয়টা দীপ্তির কাছে ঠিক লাগছে না। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এসে আরো হাজারটা প্রশ্নের জট পেকে গেলো।

ঝড়ো হাওয়ায় সাথে এবার ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। থেকে থেকে মেঘর দল তাদের সমস্ত হিংস্রতা ঢেলে গর্জে উঠছে। প্রকৃতির ঝড়ের থেকে দ্বিগুণ জোরে ঝড়ো হাওয়ায় বইছে দীপ্তির মনে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে দীপ্তির কাছে। এতো বছরের পরিচিত বাড়ি আজ বড্ড অচেনা, ভয়ঙ্কর, রহস্যময় লাগছে।

বৃষ্টির বেগ বাড়তেই বাতাসের সাথে বৃষ্টির কণা আছড়ে পড়ে কক্ষের মেঝেতে। এতে যেনো ঘুমটা ভেঙে যায় নার্সটার। হালকা গুঙিয়ে নড়েচড়ে ওঠে। সাথে সাথে সেখান থেকে সরে যায় দীপ্তি। তড়িঘড়ি করে দড়জা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে এক দৌড়ে প্রস্থান করে এই জায়গা থেকে। আজ নিজেকে ছন্নছাড়া লাগছে। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শত-শত প্রশ্ন। নিজের বাড়িতে এতো রহস্য কেনো? ওই অসুস্থ ছেলেটাকে নিয়ে এতো লুকোচুরি কেনো? আর সেই ঘরে প্রাপ্তির ছবিই বা কোনো? তবে কি সজীব আর তার মা প্রাপ্তিকে আগে থেকেই চেনে? কিন্তু কিভাবে? আর ওই ছেলেটার পরিচয়ই বা কি? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না দীপ্তির। মাথাটা ব্যথায় টনটন করছে। আর চিন্তা করা সম্ভব নয়। এবার সব প্রশ্নের উত্তর সজীবই দিতে পারবে। দীপ্তি মনে মনে ঠিক করে নেয় সজীব আসলেই এই বিষয়ে কথা বলবে। তার সব প্রশ্নের উত্তর চাই।

—————————

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বকুল গাছের নিচে বসে আছে প্রাপ্তি। পাশেই ফোনে বিভিন্ন পোজ দিয়ে ছবি উঠছে সুপ্তি। আজ বেশ কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে এসেছে দুজন। যদিও সুপ্তি আসতে চায়নি কিন্তু প্রাপ্তির জোরাজুরিতে এসেছে। না হলে প্রাপ্তি একাই চলে আসতো। প্রাপ্তিকে তো আর একা ছাড়তে পারবে না। আগে থেকেই প্রাপ্তি যেখানে গেছে সুপ্তিরও পেছনে পেছনে গেছে। কিন্তু এখন উপর দিয়ে অর্পনও এই দায়িত্ব সুপ্তিকে দিয়েছে। প্রাপ্তির সাথে ছায়ার মতো থাকতে বলেছে সুপ্তিকে। অর্পনের সাথে সুপ্তির গোপনে আলাপন হয়। বিষয়টা সবারই অজানা। এমনকি প্রাপ্তি নিজেও এই বিষয়ে অজ্ঞ।

একা একা কয়েকটা সেলফি তুলে প্রাপ্তির দিকে ক্যমেরা তাক করে সুপ্তি। প্রাপ্তিকে কিছু বুঝতে না দিয়েই ফটাফট বেশ কয়েকটা ছবি ক্লিক করে ফেলে। মনে মনে দাঁত কেলিয়ে হাসে। এবার এই ছবি অর্পনের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেবে। ছবি তোলা শেষে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে কোনগুলো ভালো হয়েছে। সেগুলোই পাঠাবে।

এতোক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলো প্রাপ্তি। সুপ্তির নড়াচড়ার ভঙ্গিতে সবটা বুঝলেও মুখে কিছু বলেনি। চুপচাপ ছিলো। এবার সুপ্তি থামতেই প্রাপ্তি বলে,

—“হয়েছে তোর? ছবি তোলা শেষ হলে বাড়ির রাস্তা ধরি? আর ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।”

বোনের কথায় ফোন থেকে চোখ সরায় সুপ্তি। ফের একবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নেয়। সকাল এগারোটা বাজে মাত্র। ফোনটা ব্যাগে ভরে সুপ্তি বলে,

—“মাত্র এগারোটা বাজে আপি, এখনই বাড়ি যাবে? চলো সেই নদীর পাড়ে গিয়ে একটু সময় কাটিয়ে আসি।”

—“আজ না, মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। অন্য সময় যাবো। এখন বাড়ি চল।”

মাথা ব্যথার কথা শুনে আর বায়না করে না সুপ্তি। শরীর ভালো না থাকলে কি আর ঘুরে আনন্দ পাওয়া যায়? একদম যায় না। হঠাৎ কিছু একটা ভাবতেই সুপ্তি উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,

—“আগে আগে বাড়ি যাচ্ছি তাহলে বিকেলে আবার গানের আসর বসাবো, কি বলো?”

—“আগে বাড়ি যাই। আমার সত্যিই খুব মাথা ব্যথা করছে সুপ্তি।”

প্রাপ্তির বেদনা মিশ্রিত কন্ঠস্বর শুনে একেবারে দমে যায় সুপ্তি। বিনাবাক্যে উঠে দাঁড়ায়। প্রাপ্তির একটা হাত আলতো করে ধরে এগিয়ে যায়। না করার জন্য মুখ খুলেও দমে যায় প্রাপ্তি। তার কথা বলতে একদম ভালো লাগেছে না।

গেটের বাহিরে এসে প্রাপ্তিকে দাঁড়াতে বলে সুপ্তি। ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে রাস্তার একটু কাছে এগিয়ে যায়। ঘাড় কাত করে এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে নেয়। কোনো খালি রিকশা পেলেই সেটা নিয়ে বাসায় চলে যাবে। কিন্তু ভাগ্য বুঝি আজ সহায় নেই। পুরো রাস্তা ফাকা। এই সময়ে ভার্সিটি ছুটি হয় না তাই হয়তো রিকশার এতো অভাব। এদিকে প্রাপ্তির দেখাদেখি কালো জামা পড়ায় গরমে নাজেহাল অবস্থা সুপ্তির। প্রাপ্তি যে কিভাবে কালো রঙের জামাকাপড় পড়ে সেটাই বুঝে আসেনা সুপ্তির। ওড়নার একটা কোনা নিয়ে কপালের ঘাম মুছে নেয়। মুখের ওপর থেকে ওড়না সড়িয়ে সামনে তাকাতেই নিজের অতি নিকটে একটা মাইক্রো দেখতে পায়। গাড়ির দড়জা খোলা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তড়িৎ গতিতে কেউ সুপ্তিকে হ্যাচকা টানে গাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। আকস্মিক ঘটনায় মাথা ফাঁকা হয়ে যায় সুপ্তির। দিক বেদিক ভুলে আপি বলে চিৎকার করে ওঠে।

গেটের পাশেই দাড়িয়ে সুপ্তির জন্য অপেক্ষা করছিলো প্রাপ্তি। হঠাৎ সুপ্তির উচ্চ স্বরে ডাক শুনে চমকে ওঠে ভীষণ। কি হয়েছে বুঝতে কান পেতে শোনার চেষ্টা করে। কিন্তু বেশি সময় পায়না সুপ্তির আওয়াজ শোনার। শা শা শব্দে বাতাসের বেগে চলে যায় গাড়িটা। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় সুপ্তির গলার আওয়াজ। ভয় পেয়ে যায় প্রাপ্তি। ভার্সিটি এখনো ছুটি হয়নি তাই এদিকটায় লোকজন কম। উচ্চ স্বরে দারোয়ানকে ডাকে প্রাপ্তি। দারোয়ান নিজেও হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে আছে। বুঝে উঠতেই এগিয়ে আসে প্রাপ্তির কাছে। প্রাপ্তি তড়িঘড়ি করে বলে,

—“এখানে কি হলো চাচা? আমার বোন কোথায়? ও চিৎকার করলো কেনো?”

দারোয়ান ঢোকা গিয়ে বলে,

—“একটা গাড়ি আইসা তারে তুইলা নিয়া গেলো।”

চমকে ওঠে প্রাপ্তি। ভয়ে মৃদু কম্পন ধরে শরীরে। সুপ্তিকে কেউ অ*প*হ*র*ণ কেনো করলো? ওর কোনো ক্ষতি করবে না তো? ভয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে প্রাপ্তি। চোখ থেকে ঝরঝর করে অশ্রুকনা বিসর্জন দিচ্ছে। কি করবে, কোথায় যাবে কিচ্ছু মাথায় আসছে না। নিজেকে স্থীর করে প্রাপ্তি। দারোয়ানের সামনে হাত জোর করে মিনতি করে,

—“প্লিজ আমাকে একটা রিকশার ব্যবস্থা করে দিন। আপনার দুটো পায়ে পড়ি চাচা। আমার বোনটা বিপদে পড়েছে। প্লিজ সাহায্য করুন।”

প্রাপ্তির ছলছল চোখের চাহনি ও কান্না ভেজা কন্ঠ শুনে মায়া হয় দারোয়ানের। সে সম্মতি জানিয়ে ছুটে চলে যায় সামনের বাজারের দিকে। সেখান থেকে একটা রিকশা এনে তাতে উঠিয়ে দেয় প্রাপ্তিকে। রিকশাওয়ালাকে নিজের গন্তব্য জানিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে প্রাপ্তি। মনের ভেতর কু ডাকছে। সুপ্তির যদি কোনো ক্ষতি হয়। ওকে সুস্থ ভাবে ফিরে পাবে তো?

——————————-

চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে একটা ফাইল খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো অর্পন। তার ধ্যান জ্ঞান আপাতত হাতের ফাইলে নিবদ্ধ। অন্য কোনোদিকে হুশ নেই তার। ফাইলটা দেখে একটা সাদা কাগজে কিছু একটা আঁকাআকি করছে। পেন্সিলের খসখস আওয়াজে ফুটে উঠছে কোনো এক নাম না জানা চিত্র। এমন সময় সেখানে হন্তদন্ত ভঙ্গিতে উপস্থিত হয় কনস্টেবল রহিম। এসেই তড়িঘড়ি করে বলে,

—“স্যার প্রাপ্তি ম্যাডাম এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।”

মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় অর্পনের। ফাইল থেকে নজর সরিয়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে সামনে তাকায়। ভ্রুদ্বয়ের মাঝে কিঞ্চিৎ ভাজ পড়েছে। অবাক সুরে বলে,

—“ও এই সময় এখানে কেনো?”

—“জানি না স্যার তবে ম্যাম কাঁদছে।”

প্রাপ্তি কাঁদছে কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বুকের ভেতর ধ্বক করে ওঠে অর্পনের। তড়িঘড়ি করে উঠে বেরিয়ে আসে। বাহিরে আসতেই চোখে পড়ে প্রাপ্তির কান্নারত করুন মুখশ্রী। হৃদপিণ্ডের দহন বেড়ে যায় অর্পনের। ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে এসে প্রাপ্তির সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে। প্রাপ্তি বাইরের একটা বেঞ্চে বসে ছিলো। অর্পনের আগমন অনুভব করতেই সামনে হাত বাড়িয়ে দেয় প্রাপ্তি। সাথে সাথে অর্পন খপ করে প্রাপ্তির হাত নিজের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোবন্দি করে নেয়। শোনা যায় অর্পনের গম্ভীর কন্ঠে ব্যাকুল প্রশ্ন,

—“কি হয়েছে প্রাপ্তি? তুমি এখানে, এই অবস্থায়? কিছু কি হয়েছে?”

ভরসাযোগ্য হাত পেয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে প্রাপ্তি। ভেতরের কান্নারা এবার দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নিজেকে সবসময় শক্ত রাখা প্রাপ্তি আজ অর্পনের সামনে সব শক্তি খুইয়ে বসেছে। হার মেনে নেয় তার শক্ত ব্যক্তিত্ব। ভেঙে পড়ে পুরো দমে। নিজের সবচেয়ে আদরের ছোট বোনের বিপদের আভাস মনে জাগতেই কেঁপে ওঠে হৃদপিণ্ড। বেড়ে যায় তার চলাচলের গতিবিধি। অর্পনের হাত আঁকড়ে ধরে বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রাপ্তি। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে টেনে টেনে বলে,

—“ক.কলেজ। কলেজ থেকে ফিরছিলাম। তখন……”

কান্নার দাপটে কন্ঠনালী ভেদ করে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সারাজীবন ধরে রপ্ত করা শব্দ, বাক্য আজ কণ্ঠনালী ভেদ করে বেরিয়ে আসতে অক্ষম।

পাশ ঘেঁষে বসে অর্পন। প্রাপ্তির মাথাটা বুকের সাথে ঠেকিয়ে আলতো করে মাথায় হাত রাখে। যেনো প্রাপ্তিকে স্বাভাবিক হওয়ার সময় দিচ্ছে। আশেপাশে কর্মরত সকল পুলিশ, কনস্টেবল, লেডি পুলিশ সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অর্পনের এই রুপ তারা আগে কখনো দেখেছি। এই থানায় আসার পর থেকেই অর্পন সবার সাথে কঠোর হয়ে চলেছে। হাসির চিহ্ন তার চেহারায় পাওয়া দুষ্কর। দুর্বিন দিয়ে খুঁজলেও তার আবেগ কেউ খুঁজে পেতো না। সবার মতে অর্পন একজন রসকষহীন, রাগী, গম্ভীর, বদমেজাজি পুলিশ অফিসার। আজ এমন কঠোর ব্যক্তিত্বের মানুষের চোখে ব্যাকুলতা সবাইকে ভাবাচ্ছে। সেই সাথে চলছে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক, আলোচনা। মানুষের স্বভাবই এমন।

অর্পনের সান্নিধ্যে পেয়ে শান্ত হয় প্রাপ্তি। কান্নাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে কিছুটা। ধীরে সুস্থে মাথা তোলে অর্পনের বুক থেকে। শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে,

—“কলেজ থেকে ফিরছিলাম। সুপ্তি আমাকে গেটের কাছে দাঁড়াতে বলে রিকশা আনতে সামনে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে সুপ্তিকে নিয়ে চলে গেছে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িটা হাওয়ার গতিতে মিলিয়ে গেছে। কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। সুপ্তিকে কে নিয়ে গেলো? কেনো নিয়ে গেলো? ওর কোনো ক্ষতি করবে না তো? আপনি প্লিজ আমার বোনকে ফিরিয়ে এনে দিন। ওর কোনো ক্ষতি হলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না অফিসার। প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।”

কথাগুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রাপ্তি। সুপ্তির ক্ষতি হওয়ার ভয়ে ভেতরটা জ্বলছে। এতো কেনো শত্রু চারিদিকে? কে সেই শত্রু? কেনো ওদের ক্ষতি করতে চাইছে? প্রাপ্তির সাথে এতো কিসের শত্রুতা? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব পাচ্ছে না প্রাপ্তি।

অর্পন এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনছিলো। প্রাপ্তি কথা শেষ করতেই একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে। বিপদ যেনো পিছুই ছাড়ছে না। অর্পন প্রাপ্তিকে আস্বস্ত করে বলে,

—“চিন্তা করোনা। সুপ্তির কিচ্ছু হবে না। যেভাবেই হোক ওকে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আসবো। আমাকে একটু সময় দাও।”

—“কথা দিচ্ছেন?”

—“কথা দিলাম।”

অর্পনের কথায় ভরসা পায় প্রাপ্তি। অর্পন যখন বলেছে তখন সে নিশ্চয়ই সুপ্তিকে ফিরিয়ে আনবে। এই অল্প দিনেই অর্পনের প্রতি প্রাপ্তির মনে অগাধ বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

প্রাপ্তিকে রহিমের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজের সাথে দুজন কনস্টেবলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অর্পন। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এক মিনিট দেরি করা মানেই সুপ্তির জন্য চরম বিপদ। না জানি মেয়েটা কোথায় কিভাবে আছে! ভার্সিটির সামনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কি না, প্রথমে সেটা দেখতে হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে পড়ে অর্পন।

———————————

পুরো রাত, পুরো সকাল পার করে এই মাত্র বাসায় ফিরলো সজীব। চোখ মুখ তার রাগে লাল হয়ে আছে। হিংস্র তার চাহনি। বাসায় ঢুকেই সোজা চলে যায় রাবেয়া বেগমের ঘরের দিকে।

সজীবকে এভাবে রেগে বাসায় ফিরতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় দীপ্তির। আজকাল সজীবের এই আকাশ সমান রাগের কোনো কারণ দীপ্তি খুঁজে পায় না। সজীবকে হনহন করে তার মায়ের ঘরের দিকে যেতে দেখে দীপ্তিও পিছু পিছু যায়। কিন্তু সময় মতো পৌঁছাতে পারে না। তার আগেই সজীব ঘরে ঢুকে ধাম করে দড়জা আটকে দেয়। ধীর পায়ে দড়জার সামনে এসে দাড়ায় দীপ্তি। মনের মধ্যে হিসফিস করছে। সজীব এতো রেগে আছে কেনো? একবার কি ডাকবে? ডাকা কি উচিত হবে?

নিজের ঘরের খাটের সাথে আধশোয়া হয়ে বসে পুরনো দিনের গান শুনছিলেন রাবেয়া বেগম। এমন সময় সজীবকে আসতে দেখে উঠে সোজা হয়ে বসেন। তিনি কিছু বলার আগেই সজীব ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,

—“আপনি কোন সাহসে সুপ্তিকে অ*হ*র*ন করিয়েছেন?

—“সুপ্তিকে নয়, আমি প্রাপ্তিকে নিতে বলেছিলাম। গাধা গুলো আবার ভুল করেছে।”

এবার যেনো সজীবের রাগ আরো বেড়ে যায়। পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ গর্জে উঠে বলে,

—“আমার অনুমতি ছাড়া আপনি ওদের এমন আদেশ দিলেন কিভাবে?”

—“এখন কি তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে?”

—“হ্যা, দিতে হবে। আমাকে কৈফিয়ত অবশ্যই দিতে হবে। আমাদের শত্রুতা প্রাপ্তির সাথে। ওর পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে নয়। বাকিদের শুধু গুটি হিসেবে ব্যবহার করছি মাত্র। কিন্তু ওদের কোনো ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কথাটা কি ভুলে গেছেন?”

সজীবের বাঘের মতো গর্জন শুনে চোখ মুখ কুঁচকে কান চেপে ধরেন রাবেয়া বেগম। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,

—“তোর বসগিরি আস্তানাতে দেখাস। আমার কাছে নয়৷ ভুলে যাস না আমি তোর মা, তুই আমার মা নয়।”

—“শুধু মাত্র এই কারণেই বেঁচে যান আপনি। না হলে আমার অনুমতি ছাড়া এতবড় কাজ করার অপরাধে আপনাকে মৃত্যু দন্ড দিতাম।”

—“হ্যা, গলার জোর শুধু আমার সামনেই বাড়াতে পারিস। ওদিকে প্রাপ্তি বিয়ে করে সুখের ঘর বাঁধতে যাচ্ছে সে খবর রাখিস?”

এই পর্যায়ে গলার আওয়াজ থেমে যায় সজীবের। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে বিস্ময়। বিস্মিত কন্ঠে বলে,

—“মানে?”

—“মানে প্রাপ্তির বিয়ে হতে যাচ্ছে। তুই তো তোর রাজকার্য নিয়ে মহা ব্যস্ত। তাহলে এদিক সামলাবে কে? ওই মেয়ে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে সেটা তো আমি হতে দেবো না।”

রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে সজীবের। একটু এদিক থেকে নজর সরিয়েছে তো পুরো খেলাই ঘুরে গেছে। এতো বছরের পরিশ্রম কি বিফলে যেতে দেবে? কখনোই না। আটকাতে হবে এই বিয়ে। যে করেই হোক আটকাতে হবে।

চলবে?