তারে আমি চোখে দেখিনি পর্ব-০৩

0
107

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ০৩
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

অর্পনের চোখে বিস্ময়। অবাকের চুড়ান্তে পৌঁছে গেছে সে। প্রাপ্তি যে চোখে দেখতে পায় না সেটা যেনো অর্পন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু প্রাপ্তির চোখের চাহনি, ভাব ভঙ্গি এটা প্রমান করে দিচ্ছে সে সত্যি অন্ধ।

হাতে আইসক্রিমের দুইটা কোণ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় সুপ্তি। নিজের বোনের চারপাশে এতোগুলা পুলিশকে দেখে কিছুটা চমকে ওঠে। সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় প্রাপ্তির কাছে। পাশে বসে বোনের হাত শক্ত করে ধরে। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,

—“কি হয়েছে আপি? এতো পুলিশ কেনো?”

বোনের ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে ধরে রাখা হাতটা মুঠোয় পুরে নেয় প্রাপ্তি। অভয় দিয়ে বলে,

—“ভয় কেনো পাচ্ছিস তুই? ওনারা একটা কেসের বিষয়ে কিছু ইনফরমেশন নিতে এসেছে। এছাড়া আর কিছু না। ভয় নেই। তোর আপি কোনো ক্রিমিনাল নয়, যে তোকে ভয় পেতে হবে।”

কথাগুলো বলে থেমে যায় প্রাপ্তি। ছোট্ট একটা বিরতি নিয়ে অর্পনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“আমি চোখে দেখতে পাই না অফিসার। তাই এখানে যদি কোনো ক্রাইম হয়েও থাকে সেটা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে হ্যা, পরশু সন্ধ্যায় যখন এখানে বসে ছিলাম তখন ঐ ঝোপঝাড়ের পাশে আমি কিছু মানুষের পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই। মনে হচ্ছিলো একাধিক লোক এখানে এসেছে। আওয়াজ কানে আসতেই আমি কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কে ওখানে? কিন্তু কেউ আমার কথায় সাড়া দেয়নি। এখন এটা তো একটা পাবলিক প্লেস, তাই এখানে যে কেউ আসতে পারে। এজন্য আর বেশি কিছু না ভেবে বাসায় চলে গেছিলাম। এর চেয়ে বেশি আর কিছুই বলতে পারবো না। আপনাদের সাহায্য করতে না পারার জন্য দুঃখিত। এখন কি আমরা যেতে পারি?”

অর্পন এখনো নিশ্চুপ। গভীর চোখে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে। সে আদৌ প্রাপ্তির কোনো কথা শুনেছে কি না সেটাও তার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে অর্পনের কোনো সাড়া না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে যায় প্রাপ্তির। লোকটা কিছু বলছে না কেনো? জিজ্ঞাসা কন্ঠে বলে,

—“আপনি কি এখানে আছেন অফিসার?”

পাশ থেকে সুপ্তি এগিয়ে এসে বোনের কানে কানে ফিসফিস করে বলে,

—“তোমার পাশেই আছে আপি। কোথাও যায়নি।”

এই পর্যায়ে টনক নড়ে অর্পনের। নড়েচড়ে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—“হুম, আমি এখানেই আছি। আমার যা জানার সেটা জানা হয়ে গেছে। আপনারা বাসায় যেতে পারবেন নাকি আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো?”

—“ধন্যবাদ অফিসার, তার কোনো দরকার নেই। আমরা চলে যেতে পারবো।”

বলেই প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ায়। বোনের সাথে সাথে সুপ্তিও উঠে দাঁড়ায়। বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রাপ্তির হাত ধরে এগিয়ে যেতেই আবার থেমে যায় সুপ্তি। প্রাপ্তি সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,

—“সুপ্তি আবার!”

—“আপি! চলো না আমার হাত ধরে। যদি পায়ের নিচে কিছু পড়ে হোঁচট খাও তাহলে?”

—“আমি একা চলতে পারি সুপ্তি। কেনো বারে বারে আমার অক্ষমতা বুঝিয়ে দিস তোরা? এবার দাদাভাইয়ের কাছে তোদের সবার নামে নালিশ করবো।”

হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে সুপ্তি। আর কথা না বাড়িয়ে হাত ছেড়ে দেয়। হতাশ সুরে বলে,

—“বেশ! চলো।”

কথাটা বলেই বোনের পেছন পেছন যেতে থাকে।

প্রাপ্তির চলে যাওয়ার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে অর্পন। কে জানে মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে যা অর্পনকে খুব করে টানে। মাথা নিচু করে ফেলে অর্পন। ঠোটের কোণে তার মৃদু হাসি। তবে হাসিটা খুব সপ্তপর্ণে আড়াল করে রেখেছে যাতে কারো চোখে না পড়ে। কয়েক সেকেন্ড পর উঠে দাঁড়ায় অর্পন। পেছনে দাঁড়ানো কনস্টেবলদের দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় নিজের সাথে আসতে বলে।

ঝোপঝাড়ের যে জায়গাটাতে মেয়েটার লা*শ পাওয়া গেছিলো সেখানে এসে দাড়ায় অর্পন। জহুরি নজরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে পুরো জায়গা। অনেক খোঁজাখুজির পরেও অপরাধীর বিষয়ে কোনো প্রমান পাওয়া যায় না। কনস্টেবলদের কাজে লাগিয়ে দিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায় অর্পন। কোনো ভাবেই কোনো সুত্র পাওয়া যাচ্ছে না। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে ভাবতে থাকে।

কনস্টেবল রহিম অর্পনের পাশে এসে দাঁড়ায়। কিছু বলার উদ্দেশ্যে আসলেও কোনো কারণে বলতে পারছে না। পেছনে দাড়িয়ে শুধু হাসফাস করছে। অর্পন অন্য দিকে তাকিয়েই খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

—“কিছু বলতে চাইলে বলে ফেলুন রহিম সাহেব। এতো ভাবার কিছু নেই।”

—“স্যার একটা কথা বলতে চাইছিলাম।”

—“জ্বি, বলুন।”

—“স্যার, এই প্রাপ্তি মেয়েটা কি সত্যি অন্ধ? তার কথায় আমরা বিশ্বাস করবো কিভাবে? সে তো নাটকও করতে পারে।”

কনস্টেবলের কথা শুনে থেমে যায় অর্পনের হাত। হাত নামিয়ে পেছন ঘুরে তাকায় কনস্টেবল রহিমের দিকে। অর্পনকে এভাবে তাকাতে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় রহিম। শুকনো একটা ঢোক গিলে নড়েচড়ে দাঁড়ায়। অর্পন কিছুক্ষণ সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,

—“আমার মনে হয় না মেয়েটা মিথ্যে বলছে। আর সে নাটক করলে আমি সেটা বুঝতে পারতাম। আমার নজর ফাঁকি দেয়া এতটাও সহজ নয় রহিম সাহেব। এখন থানায় চলুন। বাকি কথা সেখানে হবে।”

_______________

ড্রয়িংরুমের সামনে এসেই সবার শোরগোল শুনে পা জোড়া থমকে যায় প্রাপ্তির। ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে যে এখানে ঠিক কি হচ্ছে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ একজন দৌড়ে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি আসলে কে, সেটা বুঝতে পারতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে প্রাপ্তির। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে “বড় আপি” বলে লাফিয়ে ওঠে প্রাপ্তি। এতোদিন পর বড় বোনকে কাছে পেয়ে প্রাপ্তি তো বেজায় খুশি। খুশি হয়ে বলে,

—“আপি তুমি কখন আসলে? আর দাদা ভাই! সে কোথায়? আসেনি?”

কথাটা বলেই সামনে হাত বাড়িয়ে খুজতে থাকে তার দাদাভাইকে। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রাপ্তির হাত ধরে ফেলে সজীব। হেসে দিয়ে বলে,

—“এতো অস্থিরতা কিসের? তোর আপি এসেছে কিন্তু দাদাভাই আসেনি এমনটা কখনো হয়েছে? বরং তোর আপিকে রেখেই তো আমি আসি।”

পাশেই গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে সুপ্তি। অভিমানী কন্ঠে বলে,

—“হ্যা, আমি তো তোমাদের কেউ না। আমাকে তো কুড়িয়ে এনেছে! আমার সাথে কার কিসের কথা?”

সুপ্তির কথা শুনে হেসে ফেলে সবাই। সজীব এগিয়ে এসে সুপ্তির গাল টেনে ধরে বলে,

—“কথা একদম ঠিক ছুটকি, তোকে তো কুড়িয়েই নিয়ে এসেছি। একটা বস্তির রাস্তায় বসে কান্না করছিলি তুই। আমার আবার দয়ার শরীর তাই তোকে এনে এই বাড়িতে রেখে গেছিলাম।”

সুপ্তি রাগে ফুঁসে উঠে হনহন করে সোজা দোতলায় চলে যায়। ওর পেছন পেছন হাসতে হাসতে সজীবও ছোটে অভিমানীর রাগ ভাঙাতে।

বড় বোনের হাত ধরে সোফায় গিয়ে বসে প্রাপ্তি। বোনের দিকে ঘুরে বসে জিজ্ঞেস করে,

—“কখন এসেছো আপি?”

—“এই তো, মিনিট পাঁচেক হবে।”

—“হঠাৎ করে চলে এলে যে? আগে থেকে কেনো জানাও নি?”

—“কেনো? না বলে কি আসতে পারি না?”

অপ্রস্তুত হাসে প্রাপ্তি, বোনের হাত শক্ত করে ধরে নত কন্ঠে বলে,

—“আমি সেটা বলিনি আপি। এটা তোমারও বাড়ি, তুমি যখন খুশি আসতে পারো। বলছিলাম তুমি যে আসলে তোমার শ্বাশুড়ি কিছু বলবে না?”

—“তোকে এতো ভাবতে হবে না। তোর দাদা ভাই আছে তো, সে সব সামলে নেবে। তুইই তো বলিস তোর দাদা ভাই সুপার হিরো।”

—“হ্যা, আমার দাদা ভাই সুপার হিরো। সব সমস্যার সমাধান সে তুড়ি মেরে বের করে ফেলে।”

বলেই হেসে ফেলে দুই বোন। তাদের কথার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হন মারুফ রহমান। বড় মেয়েকে দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। কাছে এগিয়ে এসে বড় মেয়েকে মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন,

—“কেমন আছো দীপ্তি আম্মু? কখন আসলে?”

নিজের বাবাকে দেখেই মুখের হাসি মিলিয়ে যায় দীপ্তির। হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

—“খুব টায়ার্ড লাগছে প্রাপ্তি। আমি ওপরে গেলাম। পরে কথা হবে।”

এটুকু বলেই আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে সোজা দোতলায় চলে যায় দীপ্তি। মেয়ের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন মারুফ রহমান। বুক চিরে বেরিয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ায়। বাবার হাত ধরে বলে,

—“আপি খুব টায়ার্ড ফিল করছে বাবা, তাই চলে গেলো। পরে কথা বলে নিও।”

মারুফ সাহেব মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যান।

________________

রাতে নিজের রুমে বসে কেসের ফাইলগুলো দেখছে অর্পন। কেসটা যতই সমাধান করার চেষ্টা করছে ততই যেনো ঘেটে যাচ্ছে। এই সাধারণ কেসটা এতো জটিল হয়ে যাচ্ছে কেনো? ইভা নামের মেয়েটা কোনো অপরাধী নয়। কোনো অনৈতিক কাজের সাথেও সে জড়িত ছিলো না। খুবই সাধারণ একটা মেয়ে ছিলো সে। তাহলে তাকে কে খু*ন করতে পারে? আর তার স্বামীই বা কোথায়? হতে পারে সে নিজে খু*ন করে পালিয়ে গেছে কোথাও। কিন্তু সে নিজের স্ত্রীকে খু*ন করবে কেনো? এতে তার কি লাভ? হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারছে না অর্পন।

এরই মাঝে অর্পনের ফোন বেজে ওঠে। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে দেখে রাত দুইটা বাজে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে শোনা যায় কারো ধীর কন্ঠের আওয়াজ,

—“স্যার, আগামীকাল কলেজ মাঠে তারা আসবে। সাথে নিয়ে আসছে বিপুল পরিমাণ ড্রা*গ*স। কাল সময় মতো যেতে পারলে সবাইকে হাতে নাতে ধরতে পারবেন।”

ভ্রু কুঁচকে যায় অর্পনের। শক্ত কন্ঠে ওপাশের ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলে,

—“খবর কতটা সঠিক?”

—“একদম পাক্কা খবর স্যার, কাল আপনাকে আর খালি হাতে ফিরতে হবে না। শুধু সময়টা মনে রাখবেন, ঠিক সকাল দশটা।”

ফোন কেটে বালিশের পাশে রেখে দেয় অর্পন। ঠোঁটের কোনে তার বাঁকা হাসি। অনেকদিন ধরে খুঁজে চলেছে এদের। টাকার জন্য ড্রা*গ*সে*র নেশায় আসক্ত করে আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে কিছু অসাধু লোক। তাদের ধরতেই অর্পনের এই অভিযান। এস আই দিদার সাহেব অনেক বছর ধরে চেষ্টা করে গেছেন কিন্তু এই অপরাধীদের ধরতে পারেননি। ড্রা*গ*সে*র ব্যবসার সাথে সাথে এখন তারা নারী পা*চা*র চক্রও শুরু করে দিয়েছে। কোনোভাবে এদের ধরতে না পেরে তিনি অর্পনকে এখানে নিয়ে আসেন।

নিজের মনে মনে পরিকল্পনায় মশগুল হয়ে যায় অর্পন। কাল যেভাবেই হোক অপরাধীদের ধরতেই হবে। চোখ দুটো বন্ধ করে কপালে আঙুল স্লাইড করতে করতে ভাবতে থাকে।

চুপচাপ নিঃশব্দে দড়জা ঠেলে রুমে ঢোকে অঙ্কন। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নিজের ভাইয়ের পাশে বসে। পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে চলতে থাকা হাত থামিয়ে দেয় অর্পন। চোখ বন্ধ রেখেই বলে,

—“এখনো ঘুমাসনি কেনো তুই?”

—“তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এসেছি?”

চোখ মেলে তাকায় অর্পন। নিজের ছোট ভাইয়ের দিকে মুখ করে বসে বলে,

—“তুই হয়তো ভূলে যাচ্ছিস আমি কে! তোর উপস্থিতি বুঝতে আমার খুব একটা বেগ পেতে হয় না অঙ্কন। আর এতো রাতে জেগে আছিস কেনো?”

—“তাহলে তো তোমার জানার কথা আমি কেনো জেগে আছি।”

হেসে ফেলে অর্পন, হেসে বলে,

—“জানি তো! ভবিষ্যৎ ডক্টর সাহেব। তবে এত রাত জেগে পড়তে হবে না। কিছুদিন পর তুই এমনিই ডাক্তার হবি। এখন যা ঘুমিয়ে পড়।”

অঙ্কন না গিয়ে সেখানেই ঠাই বসে আছে। সেদিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে অর্পন বলে,

—“কি? কিছু বলবি?”

—“তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো ভাই? তুমি রাত জেগে ভাবনা চিন্তা তখনই করো যখন খুব ভয়ানক কিছু করতে যাও। আগের বারের কথা মনে আছে তো? সেদিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলে তুমি। এমন কিছু আবার করতে চাইছো না তো?”

অর্পন নিশ্চুপ, তার এই ছোট ভাইটা খুবই বুদ্ধিমান। কিছু না বলতেই সব বুঝে যায়। কিন্তু অর্পন আপাতত তার কাজের বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে চাইছে না। তাই চুপ করে আছে। কিন্তু অঙ্কন যেনো নাছোড়বান্দা। জোর জবরদস্তি শুরু করে দেয় সবটা জানার জন্য। একরোখা সুরে বলে,

—“আমি জানি তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছো। তুমি না বলা পর্যন্ত আমি তোমাকে ছাড়ছি না। তোমাকে বলতেই হবে ভাই।”

হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে অর্পন। তার জেদি ভাই যে সহজে ওকে ছাড়বে না সেটা অর্পন বেশ বুঝতে পারছে। তাই নিরুপায় হয়ে বলে,

—“বলতে পারি তবে তোকে কথা দিতে হবে এই কথা তুই আর আমি ছাড়া কেউ জানবে না।”

—“প্রমিস! কাউকে বলবো না।”

ছোট্ট করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে অর্পন। তারপর ধীর কন্ঠে বলতে শুরু করে,

—“বিগত বারো বছর ধরে আমাদের এই এলাকায় ড্রা*গ*স আর না*রী পা*চা*র হচ্ছে সেটা তো জানিস। পুলিশ অনেকদিন ধরেই অপরাধীদের খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু এখনো কাউকে ধরতে পারেনি। দিদার স্যার এই কেসটা আমাকে দিয়েছেন। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

অঙ্কন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অর্পনের দিকে। অর্পনের কথা শেষ হতেই হুট করেই দাড়িয়ে পড়ে। চেচিয়ে বলে,

—“এসব কি ভাই? এজন্য তুমি এখানে এসেছো? ভাই তুমি জানো না ওরা কতটা ভয়ানক? এর আগে চারজন পুলিশ অফিসার এই কেসটা নিয়ে তাদের প্রাণ হারিয়েছে। আর তুমি জেনে শুনে সেই কেস নিজের দায়িত্বে নিচ্ছো! তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”

অর্পন লাফিয়ে উঠে অঙ্কনের মুখ চেপে ধরে। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

—“একদম চেঁচাবি না অঙ্কন। বাবা মা জেগে যাবে। তুই তো প্রমিস করেছিস কাউকে বলবি না, তাহলে চেঁচাচ্ছিস কেনো?”

—“তুমি এত বড় ঝুকি কেনো নিচ্ছো? তোমার প্রাণের ঝুঁকি আছে। এটাতে তোমার প্রাণ চলে যাবে ভাই। প্লিজ এই কেসটা তুমি হাতে নিও না।”

অর্পনের একরোখা জবাব,

—“কেসটা অলরেডি হাতে নিয়ে নিয়েছি অঙ্কন। এখন আর এটা থেকে পিছনে যেতে পারবো না। পুলিশের চাকরিতে জয়েন করার দিন মৃত্যুর সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছি। দেশের জন্য আমি প্রাণ দিতেও রাজি। আর তাছাড়া এই কেস আর বেশিদিন ঝুলবে না। অপরাধীরা অনেক মুক্ত শ্বাস নিয়েছে। এবার সময় এসে গেছে তাদের জেলের অন্ধকারে জীবন কাটানোর। কালকে সবাইকে হাতেনাতে ধরবো আমি।”

—“আমার খুব ভয় করছে ভাই। আমি অনেক বড় বিপদের আভাস পাচ্ছি।”

অর্পন নির্বিকার। প্রতিউত্তরে আর কিছুই বলে না। সে নিজেও জানে এই কাজে ঝুঁকি ঠিক কতটা। এর আগে চারজন সাহসী অফিসার তাদের প্রাণ হারিয়েছে। অর্পন নিজেও জানে না সে অপরাধীদের ধরতে পারবে কি না। কিন্তু মৃ*ত্যু*র ভয়ে পেছনে তো আসতে পারবে না। কারণ সে একজন পুলিশ অফিসার। দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব তার কাঁধে। তাকে যে ভয় পেলে চলবে না।

ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে অঙ্কনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় অঙ্কন। কাল আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। প্রস্তুতি নেয়া বাকি আছে এখনো। যা হবে কাল দেখা যাবে।”

চলবে?