#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ২০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
নাস্তা বানাচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করে কেউ একজন ঈশাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ঈশা একটু ভয় পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তার দুষ্টু হাজব্যান্ড তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ঈশা অয়নকে পাত্তা দিলো না। নিজের মতো কাজ করতে লাগলো সে। অয়ন ঈশার ঘাড়ে মুখ ঘসতে লাগলো। অয়নের প্রতিটা স্পর্শ ঈশাকে ব্যাকূল করে তুলছে। মনের মধ্যে জাগাচ্ছে এই অব্যক্ত শিহরণ। অয়নের স্পর্শের মাত্রা যখন বেড়ে যাচ্ছে ঈশা বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে তাকে কিছু একটা করতে হবে। অয়নের স্পর্শ তাকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বাধ্য করছে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন কি করছো এসব? রান্নাঘর রোমান্স করার জায়গা নয়। ছাড়ো আমায়।
অয়ন ঈশার পেটের উপর আলতো করে হাত রেখে বলল
— হুম তবে জনাবা চলুন বেড রুমে। ওখানটাতো রোমান্স করার জায়গা তাই না।
ঈশা একটু বিব্রত বোধ করলো। ঈশা অয়নকে বলল
— উফফফফ অয়ন কেউ চলে আসবে তো।
— আসুক কেউ। সমস্যা নাই। আমার লজ্জা কম।
— ধূর।
ঈশা অয়নকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে একটু দূরে ঠেলে দিলো। অয়ন মিট মিট করে হাসতে লাগলো ঈশার দিকে তাকিয়ে। লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে তার। অয়ন আবারও ঈশাকে জরিয়ে ধরে। ঈশা চরম বিরক্তি নিয়ে বলে
— অয়ন ভালো লাগে না কিন্তু। অফিস আছে তোমার যাও।
— হুম যেতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।
ঈশা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
— কি শর্ত?
অয়ন মুচকি হেসে বলল
— আমার ওই ঠোঁটের আবেশ চাই।
— কিহহহ! না। অয়ন দুষ্টুমি করবে না।
— আমি কিন্তু জোর করে আদায় করে নিতে জানি।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন ঈশার কোমর ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঈশা অয়নের কাঁধের উপর হাত রাখতেই অয়নের পিংকালারের ঠোঁট জোড়া ঈশার ঠোঁটকে স্পর্শ করে নিলো। পরম আবেশে বিনিময় হচ্ছে ভালোবাসা। কিছু সময় পর অয়ন নিজেই ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশার ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে গেছে। অয়ন ঈশাকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
— হয়েছে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়ে নেই।
ঈশা লজ্জা পেয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলো। অফিস যেতে হবে।
* অফিসে আসার সময় অয়নের মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। কি উদ্দেশ্য ও দিন দিব্ব অনুর কেবিনে গিয়েছিলো? দিব্বর সাথে অনুর কি করে পরিচয়? অনু তো এই শহরে নতুন। না কিছু মাথায় ঢুকছে না অয়নের। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে যেতে লাগলো অফিসের দিকে। পথি মধ্যে অনেক চিন্তা এসেছে তার মাথায় তবে অয়ন একটু অপেক্ষা করছে সবটা জানার।
অফিসে পৌঁছে অয়ন নিজের কেবিনে চলে আসে। কেবিনে বসে ল্যাপটপটা অপেন করতেই অয়ন চমকে যায়। একি দেখছে সে? সব কিছু কপি করা হয়েছে তার। এমনকি সব প্রপার্টির ডকুমেন্ট ও সেম করে কপি! এসবের মানে কি? কে করলো এমন কাজ? অয়ন সব ফোল্ডার অপেন করে দেখছেডডমনযোগ সহকারে। অনেক জরুরী ফাইল ডিলিট হয়ে গেছে। ওহহহহ গড! হাউ ইট’স পসিবল? অয়ন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব ফাইলের উপর নজর দিচ্ছে এমন সময় অনুর প্রবেশ ঘটে অয়নের চেম্বারে। অনু অয়নের চেম্বারে এসে অয়নের পাশের সিটে বসলো। এই দিকে অয়নের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন এতো মনযোগ দিয়ে কি দেখছো?
অনুর গলার কন্ঠ শুনে অয়ন একটু চমকে যায়। অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— তুমি এখানে কেনো? তোমাকে তো হসপিটালে থাকার কথা ছিলো।
অনু একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল
— কেনো আমাকে দেখে কি তুমি খুশি হওনি!
অয়ন শান্ত গলায় বলল
— আরে খুশি কেনো হবো না? অবশ্যই খুশি হয়েছি। আমি তো চাইতাম তুমি শিঘ্রই সুস্থ হয়ে যাও। এখন কেমন আছো?
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অয়ন কে উদ্দেশ্য করে অতন্ত কোমল সুরে বলল
— তোমার মন খারাপ হলে আমি কি করে ভালো থাকি?
অয়ন মৃদু হেসে জবাব দিলো
— তাই না! আচ্ছা এসবের মানে কি? তুমি কেনো পাগলামি করছো?
অনু অয়নের চোখ বরাবর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল
— সত্যিই কি কেনো করছি বুঝো না তুমি? বুঝতে পারো না এই হৃদয়ের দহন। আমি যে তোমায় ভালোবাসি। কেনো বুঝতে চাও না।
— হুম
— ঈশার কি খবর?
অয়ন একটু বিরক্তি নিয়ে রাগি কন্ঠে বলল
— যাস্ট স্টপ অনু। ঐ মেয়েটার নাম আমার সামনে আর নিবে না। সহ্য হয় না আমার।
অয়নের কথা শুনে অনু ভিশন অবাক হয়ে গেলো। অনু অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। তার মানে অনুর প্লান কাজ করেছে। ঈশার সাথে অয়নের দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। অনু খুশিতে আত্মহারা হয়ে অয়নকে বলল
— মানে? ঈশাকে তুমি সহ্য করতে পারছো না কেনো? ও তো তোমার স্ত্রী।
— হুম। ঈশা আমার স্ত্রী তবে তা বেশি দিনের জন্য নয়। আমি আজ ডিভোর্সের জন্য পিটিশন করে এসেছি। খুব শীঘ্রই এই অসুস্থ সম্পর্কের অবসান ঘটবে।
অনু যাস্ট অবাক হয়ে গেলো। অয়ন ডিভোর্স দিবে ঈশাকে। ইয়েস এটাই তো চেয়েছি আমি। একটা বার ডিভোর্স হয়ে গেলে অয়ন আমার আর ওর সমস্ত প্রপার্টি আমার। কিন্তু আমি কোনো রিক্স নিতে চাই না। যা করার তা আজি আমায় করতে হবে। আজকেই সুন্দর সুযোগ আছে। এই সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে চাই না। অনু একটু শান্ত গলায় বলল
— অয়ন মন খারাপ করো না তুমি। আমি আছি তো তোমার পাশে। খারাপ সঙ্গ পরিত্যাগ করা উত্তম। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি।
— হুম
* অয়ন অনুকে বিন্দুমাত্র বুঝতে দিলো না যে অয়ন তাকে সন্দেহ করছে। অয়ন অনুর সাথে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করছে। আগে করতো তবে আজ একটু বেশি। অয়ন অনুকে বুঝতে বাধ্য করছে যে অয়ন তাকে চায়। অয়ন ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছে। অনু কাজের ফাঁকে ফাঁকে অয়নের দিকে তাকাচ্ছে। অয়ন এই সব ছোট ছোট বিষয়ে গুলো চরম বিরক্তি নিয়ে নোটিস করছে। তবে আজ অয়নকে বিরক্ত হলে চলবে না। অনুর সত্যি সামনে আনতে হবে। অনু আচমকা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন আমার ল্যাপটপটা কাজ করছে না একটু দেখবে তুমি?
অয়ন একটু বিব্রত হলো। কারন ল্যাপটপ দেখার কথা বলে অনু কিন্তু নিজের জায়গা থেকে সরে বসলো না। তার মানে অয়নের নিজে থেকে উঠতে হবে। অয়ন কিছু না ভেবে নিজের চেয়ার থেকে উঠে অনুর দিকে একটু ঝুঁকে ল্যাপটপটা চেক করতে লাগলো। অপ্রত্যাশিত ভাবে অয়নের হাত অনুকে স্পর্শ করে ফেলে। অয়নের স্পর্শ অনু অনুভব করতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো পরম আবেশে। অয়ন বিষয়টা লক্ষ্য করতে পেরেই। অনুকে বলল
— আই এম সরি। আসলে আমি খেয়াল করতে পারিনি।
অনু অয়নের দিকে মৃদু হেসে জবাব দিলো
— না ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি।
* অয়ন কিছু বলার আগেই অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো তার পরিচিত কেউ কল করেছে। অয়ন ফোনটা পিক করলো। তবে অয়ন নিশ্চুপ। ওপার থেকে কিছু সময় কথা ভেসে আসার পরে অয়ন জবাব দিলো
— হুম বুঝতে পেরেছি আমি। সব কিছু নষ্ট করে দাও। আমি দেখছি কি করা যায়।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন কলটা কেটে দিলো। অনু প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নকে বলল
— কে কল করেছে? আর কি নষ্ট করার কথা বললে তুমি?
অয়ন বাঁকা হেঁসে জবাব দিলো
— লয়ার কল করেছে। জানালো ঈশা আর আমার ডিভোর্স হতে সময় লাগবে। কিছু কাগজ পত্রের ঝামেলা আছে। আমি বলে দিয়েছি নষ্ট করে ফেলতে সব কাগজপত্র। আমি নিজেই ঈশাকে বাধ্য করবো ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে।
অনুর মুখে হাসির ঝিলিক। এই তো অয়ন একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। অয়নের পাশে শুধু আমাকে মানায়। অন্য কাউকে নয়। আনমনে কথাটা বলল অনু।
* দুপুরের দিকে অনু বেশ বিচলিত হয়ে পরে। অনু একবার না বহুবার দিব্বকে কল করেও পাচ্ছে না। ফোনটা বন্ধ পাচ্ছে অনু।
— এই দিব্বর কি হলো? ওকে বলে রেখেছি সব ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কি করলো কে জানে? এই ছেলেটা বিরক্তিকর।
আনমনে কথা বলছে অনু। অয়ন এসে অনুকে বলল
— তোমাকে বেশ চিহ্নিত দেখাচ্ছে। কেউ কি তোমার ফোন তুলছে না? এই জন্য চিহ্নিত নাকি তুমি?
অয়নের বাঁকা হাসি অনুর মনের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে দিলো। অয়ন কার ফোনের কথা বলছে? তবে কি অয়ন সবটা জেনে ফেলেছে? অনু আমতো আমতো করে বলল
— কে কাকে কল করছি আমি? আর আমি চিহ্নিত হবো কেনো?
অয়ন আবারও হেসে পকেট থেকে একটা ট্যিসু পেপার বের করে অনুর হাতে দিয়ে বলল
— কপালের ঘাম মুছে ফেলো। আর শোনো আমি কিছু সময়ের জন্য বাহিরে যাচ্ছি। তুমি এই দিকটার মিটিং সামলে নিবে। কেমন
অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমি একা পারবো না।
— আরে পারবে। আজ আমার একটা মিটিং আছে। সো আমাকে যেতেই হবে।
— ওহহহহ। ঠিক আছে। তারাতাড়ি চলে আসবে। আজ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
অয়ন হেসে বলল
— তাই?
— হুম
— আচ্ছা আসছি আমি।
অয়ন ব্লাক ব্লেজারটা তুলে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অয়নের চলে যাওয়ার দিকে। অয়ন গাড়িতে বসতেই…………….
#চলবে……………….
#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ২১
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন গাড়িতে বসতেই ঈশার কল চলে এলো। অয়ন কলটা পিক করতেই ভিশন অভিমানী কন্ঠে ঈশা বলল
— মানুষ এতোটা ইরিসপ্সেবল কি করে হয়? কেউ যে তার ফোনের অপেক্ষায় থাকে সেটা কি কেউ বুঝতে পারে না?
অয়ন মৃদু হেসে বলল
— উহু আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করতে পারে সেটা আগে জানতাম না।
— কিহহহহহহ? আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি ভালো থাকবেন।
— এই শোনো ঈশা! কোথায় যাচ্ছো?
— জানি না কোথায় যাচ্ছি। তবে আপনার সাথে আর কোনো কথা নাই আমার।
— ওমা তাই নাকি? আমার সাথে কথা বলতেও হবে না। আপনি ফোনের সাথে কথা বলুন। আমি শুনছি না আপনার কথা।
অয়নের কথা শুনে ঈশার অভিমান রাগে রূপান্তরিত হলো। ঈশা রাগে গজগজ করতে করতে বলল
— মজা করো তুমি? হুম। আমার সাথে মজা করা হচ্ছে! এতো সেলফিস একটা লোক। অফিসে পৌঁছে একটা কল করা যেতো না? আপনি কি জানেন না আপনার জন্য আমার চিন্তা হয়?
— সরি গো আসলে একটু কাজের চাপ ছিলো তাই কল করা হয়নি। রাগ করে না প্লিজ।
— আচ্ছা ঠিক আছে। দুপুরের খাবার খেয়েছো?
— না। একটু পরে খাবো।
— ওকে। খেয়ে আমাকে কল করো।
— আচ্ছা। শোনো তুমিও খেয়ে নিও।
— ঠিক আছে।
অয়ন কলটা কেটে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। অয়ন চলেছে এক অজানা উদ্দেশ্য। অনুর সব সত্যি অয়নকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিছু সময় চলার পর অয়নের গাড়ি পোঁছে যায় তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। অয়ন গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো রাজ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। অয়নকে দেখতে পেয়ে রাজ দৌড়ে ছুটে আসে অয়নের কাছে। রাজ অয়নকে বিষন্ন কন্ঠে বলল
— অয়ন অনু কিছু আঁচ করতে পারেনি তো?
— উহু। পারেনি।
— যাক তা হলে ঠিক আছে। ঈশা কোথায়?
— ঈশা বাড়িতে আছে।
– ওয়াট? কার বাড়িতে?
— আমার বাড়িতে।
— অয়ন তুই এই ভূল কি করে করতে পারলি? অনু যদি বাড়িতে যায়। ঈশাকে দেখতে পায় তবে যদি কোনো ঝামেলা করে। তখন কি করবি?
— হাহাহাহা, অনুকে এমন ভাবে মোটিভেট করেছি যে ঈশাকে দেখার পরেও ওর কিছু করতে ইচ্ছে হবে না। বাই দ্যা ওয়েহ, দিব্ব কোথায়?
— আছে ভিতরে।
— চল তা হলে।
অয়নকে সাথে নিয়ে রাজ গোডাউনে প্রবেশ করে। গোডাউনে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো দিব্বর হাত পা বাঁধা। শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট। অয়ন রাজকে ঈশা করে বলল ওর হাত পা খুলে দিতে। রাজ অয়নের কথা মতো দিব্বকে মুক্ত করে দিলো। অয়ন দিব্বর মুখ বরাবর পা এর উপর পা তুলে একটা চেয়ারে বসলো। দিব্ব মুক্তি পেতেই মুখ তুলে দেখলো অয়ন বসে আছে তার সামনে। অয়নকে দেখতে পেয়ে দিব্ব এক অদ্ভুত হাসি দিলো। অয়ন দিব্বকে বাঁকে হেসে প্রশ্ন করলো
— মরার আগেও এতো হাসি কেনো তোর? তোর মতো একটা বজ্জাত আমি আর দুটো দেখিনি।
অয়নকে কথাটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিলো দিব্ব। দিব্বর এই রাক্ষুসে হাসিটা অয়নের ভিশন অপছন্দের। দিব্ব অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মরার ইচ্ছে আমার নাই। আমি তো এখন হাসছি কিন্তু তুই! তুই একটু পরে কাঁদার সময় পাবি না। তুই আমাকে কম কষ্ট দিস নাই। আমি সব হিসেব করে রেখেছি। সুদ সহ ফেরত দিবো তোকে। অয়ন চৌধুরী ইউ আর ফিনিস্ড।
অয়ন উচ্চ স্বরে হাসে ফেলল দিব্বর কথা শুনে। অয়ন ধুম করে দিব্বর চুল গুলো নিজের মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। দিব্বর উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলে
— তোদের নোংরা প্লান সম্পর্কে আমি কিছুটা অবগত আছি। সম্পূর্ণ জানার পর দেখা যাবে কে শেষ হয় আর কার শুরু হয়। যদি বেঁচে থাকতে চাস তো সবটা বলে দে আমায়। আর যদি না বলিস তো!……
অয়নকে বাকিটা বলতে দিলো না দিব্ব। দিব্ব চিৎকার করে বলতে লাগলো
— কি করবি তুই? মেরে ফেলবি আমায়? হুম ডু ইট। মেরে ফেল আমায়। এতে করে তোর মঙ্গল। যদি আমি বেঁচে থাকি তবে তুই বাঁচবি না অয়ন। তাই বলছি মেরে আমায়।
দিব্বর প্রতি অতিরিক্ত ঘৃণা আসছে অয়নের। এই নোংরা পশুটাকে মেরে ফেলা সহজ তবে ওকে মেরে নিজের হাত নোংরা করা চলবে না। অয়ন মুচকি হেসে নিজের রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে। অয়ন একটু থেমে বলল
— তুই না বললেও আমি সবটা জেনে ফেলবো। ডোন্ট ওয়ারি। অনু নিজের ইচ্ছে আমাকে সবটা বলে দিবে। কিন্তু এখন তোর কি অবস্থা হবে সেটা তুই কল্পনাও করতে পারছিস না।
— যা ইচ্ছে করে নে তুই।
* অয়ন দিব্বকে কি করবে বুঝতে পারছে না। অয়ন কোমর থেকে বেল্টা খুলে হাতে পেঁচিয়ে নিলো। রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন দিব্বর দিকে এগিয়ে গেলো। রাজ এসে অয়নকে পিছন থেকে জাপটে ধরলো। অয়নকে উদ্দেশ্য করে রাজ বলল
— প্লিজ অয়ন ওর কাছে যাস না। ও মরে যাবে ভাই।
অয়ন রাগি কন্ঠে বলল
— মরে যাক। ওকে আমার সহ্য হয় না। ছাড় আমায় প্লিজ।
— অয়ন তুই এখন যা। মাথা ঠান্ডা হলে আসিস। আমরা দেখছি এখানটা
অয়নকে অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলো। অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে অফিসে চলে আসে।
— আমাকে তুই করে বলে একটা রাস্কেল। আমার থেকে সত্যি লুকায় ও। সত্যি তো জানবোই আমি। আর আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলের শাস্তি পেতে হবে সবাই কে। অভিনয় শুধু তোমারা করতে পারো না। আমিও কোনো অংশে কম যাই না।
আপন মনে কথা গুলো বলল অয়ন। চেম্বারে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো অনু চেম্বারে বসে ফাইল গুলো দেখে নিচ্ছে। অয়নের উপস্থিতি অনুর মনে শান্তির ছায়া এনে দিলো। অনু অয়নকে দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। অনুর দিকে দৃষ্টিপাত করে অয়ন কর্কশ গলায় বলল
— এভাবে কি দেখছো?
— তেমন কিছু না। চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছি আর কি।
— ওহহহহ। তাই না!
— হুম গো তাই। কোথায় ছিলো তুমি? জানো আমি একা একা করেছি সব কাজ।
— হুম জানি। তুমি সব কাজ একা একা করতে পছন্দ করো।
— একদমই না। আমি একা কখনও কোনো কাজ করিনি। সর্বদা কেউ না কেউ আমাকে সাহায্য করেছে। যেমন তুমি।
অনুর চোখের দিকে তাকালো অয়ন। অনুর চোখে স্পষ্ট তার মনের মধ্যে চলা অনুভূতি। অয়ন বাঁকা হেঁসে বলল
— অনেক ক্ষেত্রে শুধু আমি না। অন্য কেউও তোমার প্রয়োজন হয়ে পরে।
অনু একটু চমকে যায়। অয়ন কার কথা বলছে। অনু কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো
— কার সাহায্যের কথা বলছো?
অয়ন আবারও রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে
— তেমন কেউ না। আমি তোমার শাড়ি পরিয়ে দেয়ার কথা বলছি।
— ওহহহ, হ্যাঁ মাসি কিন্তু খুব ভালো করে শাড়ি পরাতে পারে।
— হুম।
— আচ্ছা অয়ন বাদ দাও এসব কথা। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করেছে। যা শুনে তুমি আমাকে বুকে জরিয়ে ধরবে। গালে চুমু খেতে চাইবে! আর বলবে অনু আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে নিজের করে চাই।
— ওয়াট? কি সব পাগলের মতো উল্টা পাল্টা বকছো?
— হিহিহি, আমি পাগল না পাগলি তাও তোমার।
* অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— আমার পাগলি তুমি নও।
অয়নের কথাতে অনু একটু থমকে যায়। অয়ন পরক্ষনে চিন্তা করে হায় আল্লাহ এটা কি বললাম? নিজের হাতে নিজের খেলা শেষ করে দিলাম!
অয়ন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলল
— তুমি কি আমার পাগলি? তুমি তো আমার বিশেষ কেউ। অনেক কাছের মানুষ।
অয়নের কথায় অনু খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
— তাই গো?
অয়ন লাজুক হাসি দিয়ে বলল
— বোর্ড মিটিং এরেঞ্জ করো এখনি। আমার ইম্পটেন্ট কথা আছে।
— কি কথা?
— কেউ একজন আমার অবর্তমানে আমাকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে। এই অফিসের সব কাগজ পত্র, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, ফাইল, সব কিছু কপি করে নিয়েছে। তাই মিটিং ডেকে সব ক্যান্সেল করে। নতুন করে সব শুরু করতে হবে।
অয়নের কথাতে অনু ঠিক বুঝতে পারলো তার কাজ অয়নের চোখে পরেছে। অনু নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অনুর কাঁধের উপর দুহাত রেখে একটু শান্ত গলায় বলল
— তোমার টেনশন করতে হবে না। একটা বার যদি জানতে পারি কে এই কাজ করেছে। তাকে আমি নিজের হাতে খুন করবো। তুমি চাপ নিও না। প্লিজ
অনু অয়নের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল
— মিটিং লাগবে না। অয়ন আমি কপি করেছিলাম। তবে বিশ্বাস করো আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি এমনিতেই দেখতে চেয়েছিলাম এই আর কি।
অয়ন নম্ন কন্ঠে অনু কে বলল
— এটা কি করলে নটি গার্ল। আমাকে বলা উচিত ছিলো না বলো। তুমি তো জানোই আমার কোমরে সব সময় একটা পিস্তল থাকে। যেটা সব সময় কারো পরম স্পর্শ চায়। আমি কত আশা করে বসে আছি কারো উপর নিজের বুলেটের ও নিশানার প্রক্টিস করবো। তুমি তা হতে দিলে না।
অনু ছলছল চোখে বললো
— তা হলে করে ফেলো আমার উপর। তোমার জন্য জীবন নিতে যেমন পারি ঠিক তেমন দিতেও পারি। আমার ভয় নেই।
অয়ন বাঁকা হেঁসে বলল
— আহহহহ ধূর পাগলি তোমার কিছু হতে দিতে আমি কি পারি? তুমি তো আমার বুকে থাকো। তুমি ছাড়া আমি কি করে থাকবো হুম।
অনু কিছু বলল না। অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে। অয়নের চরম বিরক্ত লাগছে অনুর স্পর্শ। তবে কিছু করার নেই তার। এই নাটকটা না করলে সব সত্যি জানা হবে না তার।
* অনু পরম আবেশে অয়নকে জরিয়ে রেখেছে নিজের বুকের পাঁজরে। এমন সময় হঠাৎ করে অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন অনুকে সরিয়ে দিয়ে বলল
— যাস্ট টু মিনিট প্লিজ।
অনু কিছু বলল না। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে কেবিনের দিকে চলে যায়। ঈশা কল করেছে। এই সময় ঈশা কেনো কল করলো? অয়ন ফোনটা পিক করতেই………………
#চলবে…………………….