#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৪
ইমার রাগী গলায় এমন কথায় ইয়াদ চমকে উঠে তাকালো ইমার দিকে।
ইয়াদ রেগে বললো, তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। তুমি আমার সাথে উচু গলায় কথা বললো ?
ইয়াদের রাগী গলায় ইমার কলিজা কেঁপে উঠে। ইমা কখনোই অন্যায় মুখ বুজে সয্য করে না, নিজের ওপর কেউ মিথ্যা অপবাদ দিলে সেটা আরো বেশী সয্য হয় না তার। প্রতিবাদ করতে না পারলেও নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা অবশ্যই সে করে। কিন্তু ইমা বুঝতে পারেনি ইয়াদের কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রামণ করতে হলে মুখের বলাতে কাজ হবে না বরং প্রামণ জোগাড় করতে হবে।
ইয়াদ ইমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো, আর একটা আওয়াজ যদি আমার কানে আসে তাহলে সেটাই করবো যেটা একটু আগে বলেছি।
ইয়াদ আগের মতো শুয়ে পড়লো আর ইমা তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কত কত স্বপ্ন ছিলো ইমার নিজের বিয়ে নিয়ে। এক নিমিষে স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো তার। ফ্লোর থেকে উঠে টলতে টলতে ইমা বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। বেলকনির চেয়ারটাতে বসে আকাশের দিকে তাকালো। কী সুন্দর আর স্বচ্ছ আজকের আকাশ। তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে যেনো ইমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
ইমা আনমনে বলে উঠলো, বাবা তুমি থাকলে কী আমার জীবনটা এমন হতো ? সয্য করতে পারতে তোমার ইমা মায়ের এতো কষ্ট ?
ইমা চোখ বন্ধ করে নিলো আর চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। ইমা হঠাৎ অনুভব করলো তার গালের পানিটা কেউ স্বযত্নে মুছে দিলো আর তাতে ইমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফোটে উঠলো। কী অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ইমার এখন, চোখের কোণে পানি আবার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
ইমা হাসিটা বজায় রেখে বললো, বাবা
ইমরুল বললো, হ্যাঁ মা বল ?
ইমা চোখ খুললো না কারণ চোখ খুললে আর সে খুঁজে পাবে না তার বাবাকে। কারণ আর বাবা কেবলই তার অনুভুতি, কল্পনা।
ইমা বললো, আমার চোখের কোণে পানি দেখে তোমার কষ্ট হয় না ?
ইমরুল ভেজা গলায় বললো, হয় রে মা খুব বেশি কষ্ট হয়, কলিজাটা ছিঁড়ে যায়। আমার তো সবসময় তোর হাসি মুখটা দেখতে ইচ্ছে করে। সেই পিচ্চি ইমার মতো যার হাঁসির শব্দে আমার বাড়িটা মুখরিত হয়ে থাকতো।
ইমা এবার আর হাসিটা বজায় রাখতে পারলো না ডুকরে কেঁদে উঠে বললো, তাহলে আমায় একা রেখে চলে গেলে কেনো আর মাও আমার কথা একবার ভাবলো না।
এবার আর ইমরুলের কোনো উত্তর নেই। ইমা চোখ খুললো কোথায় তার বাবা ? কেউ নেই তার পাশে সে নিষঙ্গ একা, কেউ নেই তার পাশে, কেউ না।
ইমা আবার চোখ বন্ধ করে নিলো কাঁদতে লাগলো নিশ্বাসে যাতে তার কান্নার শব্দ কাউকে বিরক্ত করতে না পারে। অনেকটা সময় পর ইমার হালকা শীত লাগতে শুরু করলো। উঠে রুমের দিকে পা বাড়ালো। সোফায় শুয়ে পড়লো গুটিশুটি মেরে, সোফা আকাড়ে বড় হওয়ায় সমস্যা হলো না ঘুমাতে।
১৮.
আরমান বেলকনিতে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে যাচ্ছে। মাত্র একদিনে তার চেহারার রঙ বদলে গেছে। সে ইমাকে হারিয়ে ইমার মর্ম বুঝতে পেরেছে। তার জীবনের কতটা জায়গা জুড়ে ইমার বসবাস ছিলো সেটা ইমার একদিনের অনুপস্থিতি তাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। গ্রাম বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্ম বুঝতে পারে না যখন হারিয়ে ফেলে তখনই সে বুঝতে পারে কী হারিয়েছে। আরমানের অবস্থাও তাই হয়েছে। যখন ইমা ছিলো তার এক বিন্দু মূল্য সে দেয়নি, শুধু দিয়েছে অপমান অবহেলা আর মায়ের কাছে শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে। একদিনে আরমানের চেহারা বদলে গেছে স্টাইলিশ চুল, অ্যাটিটিউড নিয়ে চলাফেরা, কিছুই নেই তার। ইমার নিষ্পাপ মুখ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। উসকো চুল, কুঁচকানো শার্ট, না ঘুমানোর জন্য চোখগুলো রক্তলাল বর্ণ ধারণ করেছে। আরমানকে দেখে ক্রাশ খাওয়া মেয়েগুলো এই অবস্থায় তাকে দেখলে ক্রাশ খাবে না বরং পাগল ভেবে ভয় পাবে। আরমান আজ ভার্সিটি যায়নি। বলেছে সে অসুস্থ যেতে পারবে না।
ভাইয়া আসবো ?
কথার গলা শুনলো বেলকনি থেকেই, আরমান সিগারেট ফেলে দিলো হাত থেকে। কথা তার রুমে আসে না বললেই চলে, তাহলে আজ কী মনে করে তাও আবার এতো রাতে ?
কথাগুলো চিন্তা করতে করতে আরমান বললো, হ্যাঁ আয় কিছু বলবি ?
কথা রুমে এসে দেখে আরমান রুমে নেই তাই এদিক ওদিক তাকালো আওয়াজ কোথা থেকে আসছে জানার জন্য। বেলকনির দিকে চোখ গেলে দেখতে পেলো আরমানকে।
সেদিকে পা বাড়িয়ে বললো, সরি ভাইয়া এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য।
বেলকনিতে পা রাখতেই কথার নাকে তীব্র সিগারেটের গন্ধ ধাক্কা খেলো। বমি চলে এলো কথার, তাই বেলকনি থেকে কয়েক পা পিছিয়ে রুমে অবস্থান করলো।
আরমান বললো, না ঠিক আছে কী দরকার সেটা বল এখন।
কথা মাথা নিচু করে বললো, আসলে ভাইয়া ইমা আপুর বিয়ের জন্য তিনদিন কলেজ মিস করেছি। অনেক পড়া জমা হয়ে গেছে, ফ্রেন্ডের কাছে থেকে সব জেনে নিয়ে সেগুলো কমপ্লিট করছিলাম আগামীকাল কলেজের জন্য। কিন্তু ইংরেজিতে নতুন একটা অধ্যায় শুরু করেছে গতকাল আর আমি সেটার কিছুই বুঝতে পারছি না। নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করেছি শেষে না পেরে বাধ্য হয় তোমার কাছে আসলাম।
আরমান বোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাইয়ার কাছে আসতে হলেও কথাকে বাধ্য হয়ে আসতে হয়৷ না আসার কোনো উপায় যখন পায় না তখন আসে। এমনটা না হয়ে আর পাঁচটা ভাইবোনের মতো তাদের সম্পর্কে ভালোবাসা, মানঅভিমান, ঝগড়া খুনসুটি মিলে একটা মিষ্টি সম্পর্ক হতে পারতো। আরমান চাইলেই সম্পর্কটা তেমন হতো। কথা যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সে এই পরিবারের অন্য সবার মতো সাদা চামড়ার মানুষ নয়। তাকে পদে পদে বৈষম্যটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে আর তাই একটা সময়ের পর সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সবার থেকে। যেমন শামুক খোলসের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কথা আরমানের সাথে দুরত্ব তৈরি করতে থাকে আর আরমানও কখনো চেষ্টা করেনি সেই দুরত্ব মিটিয়ে নেওয়ার। যার ফলস্বরূপ তাদের সম্পর্কটা আজ এখানে এসে দাড়িয়েছে।
আরমান মনে মনে বললো, নিজের বোনের কষ্টটা কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি সেখানে তোমার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করবো কী করে ? আমি আসলে মানুষটাই ভালো না তাই ভালো ভাইও হতে পারিনি আর না পেরেছি ভালো,,,,
আরমান বললো, তুই বেডে বস আমি আসছি।
কথা চুপচাপ গিয়ে আরমানের বেডে বসে পড়লো। আরমান তখন কথার পিছিয়ে যাওয়া দেখেই বুঝতে পেরেছিলো সে সিগারেটের গন্ধে পিছিয়ে গিয়েছে। তাই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্রাশ করে তারপর রুমে এলো। কথাকে বই বের করতে বলে হাতমুখ মুছে পরে সামনে এসে বসলো। কথা একবারের জন্যও চোখ তুলে তাকায়নি। তাকালে হয়তো দেখতে পেতো নিজের ভাইয়ের বিধস্ত অবস্থা। কথা অনেক ভালো স্টুডেন্ট তাই আরমান অল্প বুঝাতেই সব বুঝে গেলো।
পড়া শেষে আরমান বললো, অনেক রাত হয়ে গেছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
কথাও বাধ্য মেয়ের মতো বই গুছিয়ে উঠে সামনের দিকে পা বাড়ালো তখনই আরমান আবার পেছন থেকে বললো, কথা শুন ?
এবার কথা ঘুরে তাকালো আরমানের দিকে কিন্তু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কথার বুক কেঁপে উঠলো। এ কোন ভাইকে দেখছে সে, তার সামনে বসা মানুষটা তার ভাইয়া আরমানই তো নাকি অন্যকেউ সেই চিন্তায় পরে গেলো কথা।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে কথা বললো, ক,,কী হয়েছে ভাইয়া ?
আরমান অনেকটা ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ইমা কেমন আছে ?
কথা যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার ভাইয়া জিজ্ঞেস করছে ইমা আপু কেমন আছে ? আরমানের আচরণে সবসময় মনে হয়েছে ইমা তার সামনে মরে গেলেও সে ছুঁয়ে দেখবে না আর আজ সেই মানুষের মুখে ইমার খবর জানতে চাওয়া স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি অবাক করলো কথাকে।
আরমান উত্তর না পেয়ে আবার বললো, কী হলো কথা বলছিস না কেনো ?
কথা বললো, আপু ভালো আছে অনেক ভালো আছে এই নরক থেকে চলে গিয়ে।
কথার উত্তর আরমানের বুকে তীরের মতো বিঁধল সত্যি কী ইমার জন্য এই বাড়ি নরকে পরিনত করেছিলো সে।
কথা আবার বললো, আজকে ইমা আপুকে একদম প্রিন্সেস মনে হচ্ছিলো কী যে সুন্দর লাগছিলো বলে বুঝতে পারবো না ভাইয়া।
কথা কী বলছে সেটা আরমানের কানে আঘাত করলেও মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারছে না। বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে ইমা ভালো আসে এই নরকের চেয়ে অনেক ভালো।
আরমান আনমনে বলে উঠলো, ঠিক আছে তুই এখন যা।
কথা চলে গেলো আরমানের কী হয়েছে সেটা চিন্তা করতে করতে আর আরমান বেডে গা এলিয়ে দিলো। তার চিন্তা ভাবনা এখন সব একজনকে ঘিরেই আর সেটা ইমা।
১৯
একই স্বপ্নে ঘুম ভাঙলো ইয়াদের, কিছু সময় মাথাটা চেপে ধরে বসে রইলো। এই স্বপ্ন থেকে সে কবে মুক্তি পাবে তার জানা নেই। ইয়াদ নিজেও এখন চায় না এই স্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতে কারণ এই স্বপ্ন প্রতিদিন তার প্রতিশোধের নেশা আরো বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন। দূর থেকে ভেসে এলো আযানের ধ্বনি। ইয়াদ বেড থেকে নামতে গেলে তার চোখ পড়ে সোফায়। গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে ইমা শাড়ীটা গায়ে ভালো করে পেঁচিয়ে রেখেছে তবু মৃদু কাঁপছে শীতে। রুমে এসি চলছে শীত লাগারই কথা। শীতে ইমার গোলাপি ঠোঁট থেমে থেমে কেঁপে উঠছে। ইয়াদের চোখ আঁটকে গেলো ইমার কাঁপা ঠোঁটে। ইয়াদ শুধু ইমার চোখই খেয়াল করেছে আগে কিন্তু আজ পুরো মুখটা স্ক্যান করছে সে। মৃদু কাপা গোলাপি ঠোঁট, সরু নাক, ঘন পাপড়িতে ঘেরা গোলগাল চোখ, দুধে আলতা গায়ের রং এক কথায় ইয়াদের চোখের সামনে কোনো মানবী নয় বরং জান্নাতের হুর শুয়ে আছে এটাই মনে হচ্ছে ইয়াদের। এতো সুন্দর আর নিক্ষুত একটা মানুষ কী করে হতে পারে ? নিজের অজান্তে ইয়াদ পা বাড়ালো সোফার দিকে ইমার সামনে গিয়ে ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসলো। ইয়াদের ইচ্ছে করছে এটা হুর নাকি কোনো মানবী সেটা ছুঁয়ে দেখতে কী নিষ্পাপ মুখ। ইয়াদ নিজের হাতটা ইমার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো। ইমার ঠোঁটে ছুঁই ছুঁই করছে ইয়াদের হাত। মুহুর্তে ইয়াদ ছিটকে দূরে সরে এলো এটা সে কী করছিলো ? ভাবতেই ইয়াদের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। ইয়াদ উঠে তৎক্ষনাৎ ওয়াশরুমে চলে গেলো ইচ্ছে মতো চোখেমুখে পানি দিতে লাগলো। এমন একটা ভুল সে কী করে করছিলো ভেবে পাচ্ছে না ইয়াদ। এটা কী তার বিপরীত জেন্ডারের প্রতি আকর্ষণ নাকি অন্যকিছু,,, না না ইয়াদ এর অন্য কোন নাম দিতে চায় না, এটা তার বিপরীত জেন্ডারের প্রতি আকর্ষণ মাত্র। যতোই হোক সে একজন পুরুষ মানুষ তার সামনে এতো আবেদনময়ী নারী অবস্থান করলে এটুকু হয়তো স্বাভাবিক। ইয়াদ নিজেকে অনেক উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে শান্ত করলো। ওযু করে রুমে এসে জায়নামাজে দাড়িয়ে গেলো। আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেছে ইমার তবে উঠতে ইচ্ছে করছে না একদমই আর চোখও খুলতে ইচ্ছে করছে না। রাতে ভালো ঘুম হয়নি কারণ রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাখা ছিলো সারারাত। ইয়াদ ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাই ইমা লাইট অফ করবে কী করবে না দিধায় পড়ে গিয়েছিলো পড়ে লাইট অন রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে। আলসেমি বাদ দিয়ে চোখ মেলে তাকালো সে তবে চোখের সামনে যা দেখছে তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তার। সাদা পাজামা পাঞ্জাবি আর টুপি পরে নামাজ আদায় করছে ইয়াদ। ইমা ভালো করে নিজের চোখ কচলে আবার তাকালো না সে ভুল দেখছে না। তবে ইয়াদকে এই পোশাকে যেনো আরো বেশী সুন্দর লাগছে। মুখ থেকে শুভ্র আভা বের হচ্ছে ইমার মনে হচ্ছে। না চাইতেও ইমা বারবার মানুষটার প্রেমে পড়ছে তবে ইমা জানে এই প্রেম হালাল তাই নিজেকে বাঁধাও দিচ্ছে না। সবকিছু সময়ের উপর ছেড়ে সে প্রেমে পড়ছে নিজের স্বামীর। ইমার চিন্তা ভাবনার মাঝেই ইয়াদের নামাজ শেষ হয়ে গেলো।
উঠে জায়নামাজ ভাজ করতে গেলে ইমা বলে উঠে, তুলতে হবে না আমি নামাজ পড়বো।
ইয়াদ হঠাৎ ইমার কথা শুনে চমকে তার দিকে তাকালো আবার মুহুর্তেই কপাল কুঁচকে ফেললো এই মেয়ে আবার নামাজও পড়ে ? প্রশ্নটা জাগলো ইয়াদের মনে তবে প্রকাশ করলো না। জায়নামাজ রেখে চলে গেলো কাবার্ডের দিকে। ইমা ততক্ষণে ওয়াশরুমে চলে গেছে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হলো। ইমা নামাজে দাঁড়ালে ইয়াদ একটা টাউজার আর সাদা রঙের সেন্ডো গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চেঞ্জ করে মিনি ছাঁদে এসে ট্রেডমিলে দৌড়াতে লাগলো আর ইমার তখনকার মুখটা মনে পড়তে লাগলো। ইমা নামাজ শেষ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে ইয়াদকে দেখতে পেলো না দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভেতর থেকে বন্ধ মানে বাইরে যায়নি। জায়নামাজ ভাজ করে ছাঁদে এসে দেখলো ইয়াদ ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছে ইমা একটু আগের ইয়াদ আর এই ইয়াদের মধ্যে মিল খুঁজে পেলো না। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমে এলো সব গুছিয়ে নিতে। সব কাজ শেষ করে ইমা ছাঁদে এসে ইয়াদের এক্সারসাইজ দেখতে লাগলো তবে একটু আড়াল থেকে যাতে ইয়াদ জানতে না পারে। ইমা আবার প্রেমে পড়লো ইয়াদের নতুন রুপে। এই একা একজন লোক আর কতো রুপ লুকিয়ে রেখেছে নিজের মধ্যে ভেবে পায়না ইমা। ইয়াদের এক্সারসাইজের সময় শেষ হলে সে একটু বসে রেস্ট নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালে ইমা দ্রুত সরে এসে সোফায় বসে পড়লো একটা ম্যাগাজিন হাত নিয়ে। ইয়াদ নিজের জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যেতেই রুমের দরজায় কেউ নক করে। ইমা দরজা খোলে দেখে ইয়ানা দাড়িয়ে আছে ধোঁয়া উঠা কফির মগ হাতে নিয়ে।
ইয়ানা মুচকি হেঁসে বললো, গুড মর্নিং ভাবি।
ইমাও হেঁসে উত্তর দিলো, গুড মর্নিং।
ইয়ানা কফিটা এগিয়ে দিয়ে বললো, ওয়াশরুম থেকে বের হলে ভাইয়ার এটা প্রয়োজন হবে। সবসময় আমি দেই আজ তুমি দাও ভাইয়ার ভালো লাগবে।
ইয়ানা ইমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো আর ইমা কফির মগটা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার হাত থেকে ইয়াদ কফি খেয়েই পারে না ইমা সেটা জানে। কী হবে এবার ?
চলবে।