#তুমি_আমার (পর্ব ১৬)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
রাফিন আর রেহান দুজনে একি বাড়িতে থাকলেও তেমন দেখা হয় না ওদের। রাফিন নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। দরজাটা খোলাই ছিলো রেহান দরজায় দাড়িয়ে বললো
– রাফিন আসবো?
রাফিন ঘাড় ঘুড়িয়ে রেহানকে দেখে একটু হেসে বললো
– হুম আয় নিজের বাড়িতে কোনো রুমে আসতে অনুমতি নিতে হয় নাকি।
– এটা তোর ও বাড়ি রাফিন। রিফাত ভাইয়ার যতটা অধিকার আছে আমি মনে করি তোর ও ততটাই অধিকার আছে।
রাফিন হাসলো কিছুই বললো না,রেহান রাফিনের পাশে বসে বললো
– রাফিন আমি জানি তুই মেঘাকে ভালোবাসিস কিন্তু…….
রেহানকে থামিয়ে রাফিন বললো
– থাকনা রেহান বাদ দে ওসব কথা। তোরা সুখে থাক এটাই চাই আমি।
– রাফিন তুই এত ভালো কেনো বলতো! জানিস তুই যখন মেঘার সাথে কথা বলতি তখন খুব রাগ হতো তোর ওপর ভালো চোখে দেখতাম না তোকে। রাফিন তুই কি পারিস না আগের মত স্বাভাবিক হতে?
– রেহান আমিও খুব করে চাই মনের ভেতরকার জড়তা টা কাঁটিয়ে উঠতে কিন্তু পারছি নারে। আমি জানি তুই মেঘাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসিস,আমার কষ্ট হলেও দেখ ওকে ছেড়ে থাকতে পারছি হয়তো ভুলেও যাবো এক সময়। তুই ওকে এখন যেমন ভালোবাসিস সারাজীবন এভাবেই ওকে ভালোবাসবি কেমন।
কথা গুলো বলার সময় রাফিনের চোখে পানি চিকচিক করছিলো,রেহান ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
– আমার ওপর তুই রেগে নেই তো?
– কিযে বলিস না ভাই এর ওপর ভাই কখনো রেগে থাকে নাকি।
রেহান রাফিনকে জড়িয়ে ধরে বললো
– মেঘা আমার আত্মার সাথে মিশে গিয়েছে ওকে ছাড়া আমি এক মুহুর্ত চলতে পারবো না। তুই আমাকে ভাই বলছিস তোর কষ্টটাও যে আমি সহ্য করতে পারছি না।
– রেহান এভাবে বলিস না,আমি একদম ঠিক আছি আর থাকবো। তুই মেঘাকে ভালো রাখিস ব্যাস এতেই আমি খুশি থাকবো।
বড়মা রাফিনের রুমে এসে দুভাইয়ের সব কথা শুনে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
– রাফিন যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে রেহানকে ভাই বলে আপন করে নিলো এতেই আমি খুশি,এখন বাকীটা মিতুর কাজ আমার ছেলেকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনতে ওই পারবে।
.
🌿
.
রেহানের বাড়ির সবাই মেঘাদের বাড়িতে এসেছে। সবাই বসার রুমে বসে আছে মেঘাদের বাড়িটা ছোট হলেও খুব পরিপাটি করে গুছানো সব কিছু। মেঘা নিজের রুমেই বসে ছিলো, তানিশা ওকে জোর করে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে সাজাতে চাইলে মেঘা না করলো ওর সাজ গোজ পছন্দ নয়। তানিশা মেঘাকে নিজের সামনে দাড় করিয়ে বললো
– মেঘা তোকে শাড়িতে যা লাগছে না,রেহান ভাইয়া তোকে দেখেই ফিট হয়ে পড়বে।
রাইসা রুমে এসে বললো
– হুম একদম ঠিক কথা আমার ভাইয়া এমনি পাগল হয়েছে আজ আরো হবে।
মেঘা কিছুটা লজ্জার ভঙ্গিতে বললো
– কি যে বলো না রাইসা।
– ভাবি তোমাকে কোনো সাজ ছাড়াই খুব সুন্দর লাগছে।
মেঘাকে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। রেহানের বড়মা আর ওর মায়ের মাঝে ওকে বসানো হলো। মেঘা নিচে তাকিয়ে বসে আছে আর রেহান মেঘার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিয়েছে।
সবাই কথা বলে ঠিক করে নিয়েছে আজই মেঘাকে আংটি পড়িয়ে দেবে। মেঘাকে রেহানের পাশে বসানো হলো। রেহান মেঘার দিকে না তাকিয়ে ওকে আংটি পড়িয়ে দিলো। মেঘার বাবা মেঘার হাতে একটা আংটি দিলো রেহানকে পড়ানোর জন্য,মেঘাও রেহানকে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।
মেঘা খেয়াল করলো রেহান ওর দিকে তাকাচ্ছে না কেনো তাকাচ্ছে না এটাই বুঝতে পারছে না।
তানিশা মেঘাকে রুমে নিয়ে গেলো।
রেহান মিথিলার কানে কানে বললো
– ভাবি আমি মেঘার সাথে দেখা করবো একটা ব্যবস্থা করো।
মিথিলা মুখ টিপে হেসে বললো
– হবু বউকে কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝি?
– ভাবি মজা করো না তো কিছু একটা করো।
– ওকে বসো আমি দেখছি।
.
🌿
.
মিথিলা সবাইকে কিছু একটা বলে রেহানকে মেঘার রুমে নিয়ে আসলো। রেহানকে রেখে মিথিলা তানিশাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো,যাওয়ার রেহানকে আস্তে করে বললো
– ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসো,আমরা রুমের বাইরে আছি।
মেঘা জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে রেহান দরজাটা চাপিয়ে মেঘার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রেহান মেঘার দিকে এগিয়ে গেলো। মেঘা সামনে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে রেহান মেঘাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মেঘার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো,রেহান মেঘার ঘাড়ে মুখ গুজে ঘোর লাগা কন্ঠে বলতে লাগলো
– মেঘা তুমি শাড়ি কেনো পড়েছো হুম? তুমি যানো একদম পুতুলের মত লাগছে তোমাকে আমার মাথাটাই খারাপ করে দিয়েছো তুমি। ইচ্ছে করছে সারাক্ষণ আমার পুতুল বউটাকে সামনে বসিয়ে রাখি।
মেঘা কিছুই বলতে পারছে না এমনিতে রেহান ওকে জাপটে ধরে আছে তার ওপর রেহানের ঠোঁট জোড়া বার বার মেঘার ঘাড়ে স্পর্শ করছে।
মেঘা কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলো
– আ আমাকে ছাড়ুন প্লিজজ দম আটকে আসছে আমার।
– উহু ছাড়বো না। রেহান আরো গভীর ভাবে মেঘাকে জড়িয়ে নিলো।
মেঘা আর না পেরে জোর করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু নিজেকে কোনো ভাবেই ছাড়াতে পারলো না,রেহান কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো
– ঠিকআছে ছেড়ে দিবো তুমি যদি আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলো তাহলেই ছাড়বো। তুমি করে না বললে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই কেউ আসলেও এভাবে জড়িয়ে রাখবো তোমাকে।
– পারবো না তুমি করে বলতে ছাড়ুন আমায়।
– পারবে না তো ঠিকআছে আমার কি আমার তো ভালোই লাগছে। তাহলে এখন তোমাকে একটু আদর করে দেই কি বলো করবো?
– খুব খারাপ তো আপনি!!
– আবারো আপনি? দেখো কি করি।
রেহান মেঘাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুষ্টু হেসে আস্তে আস্তে নিজের মুখটা মেঘার মুখের দিকে আগাতে লাগলো। মেঘা চোখ খিচে বন্ধ করে বলে উঠলো
– ঠিকআছে ঠিকআছে আআমি তুমি করেই বলবো।
– এইতো লাইনে এসেছো,তো এখন থেকেই শুরু করো।
– এখনি কিভাবে একটু সময় তো দিবেন।
– ওকে দিলাম পরে যেনো মনে করিয়ে দিতে না হয়।
– হুম এখন ছাড়ুন তো।
রেহান মেঘার কপালে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো ওকে।
মেঘা ছাড়া পেয়ে টেবিলে বোতলে পানি রাখা ছিলো সে পানি ঢকঢক করে খেতে লাগলো।
রেহান হেসে বললো
– শুধু জড়িয়ে ধরতেই তোমার গলা শুকিয়ে গেছে বিয়ের পর বাকী কাজ……..
– খুব খারাপ তো আপনি আর একটা কথাও বলবেন না।
রেহান জোরে হেসে বললো
– বাহ আমার মেঘপরীকে রাগলে খুব সুন্দর লাগে তো।
রেহানকে ওর মা ডাকছে তাই বেড়িয়ে গেলো এদিকে মেঘা হেসে বললো
– আমি ভাবি নি কখনো রেহানের মত কাউকে পাবো উনার ভালোবাসা উনার প্রতিটি কথা যে আমাকে উনার প্রেমে পড়তে আরো বেশি বাধ্য করে।
·
·
·
চলবে……………………….