#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২১
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
এই মেসেজটা দেখে কণার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে। ছেলেটিকে কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কণার কোনো গালি মনে পড়ছে না। এখন কণার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেনো যে বন্যার কাছ থেকে কিছু গালি শিখে রাখলো না। মানুষ বলে, জীবনে সবকিছু শিখে রাখতে হয়। কারণ সময় মতো সবকিছু কাজে লাগে।
বন্যার কাছ থেকে গালি শিখে রাখলে তো এখন ঐ বজ্জাত ছেলেরে গালিগুলো দিতে পারতো। কণার এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে আমার মেসেজ আসে।
কী গো হবে না আমার গার্লফ্রেন্ড? তুমি আমাকে সব সময় সময় দিবে। আমার সাথে ফোনে কথা বলবে। আমার সাথে ঘুরাঘুরি করবে। আর আমার বউ সারাদিন বাসায় থাকবে আমাদের মাঝে কোনোদিন ইন্টারফেয়ার করতে আসবে না। আচ্ছা যাও বেশি দিন না মাত্র ২ মাসের জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড হও।
এবার কণার কান্না আসছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। তখনি কণার ফোন বেজে ওঠলো। কণা ফোনের দিকে না তাকিয়েই কলটা রিসিভ করলো।
কী হবে না আমার গার্লফ্রেন্ড? আমার সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর সেখানে আমি নিজে থেকে তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অফার দিচ্ছি। ভাবতে পারছো তুমি কত লাকি?
লোকটার কন্ঠ শুনেই কণা হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়। কণার কান্নার শব্দ শুনে লোকটার বুকের ভিতর মোচর দিয়ে ওঠে। সে হয়তো ভাবেনি কণা এভাবে কেঁদে দিবে।
আপনি খুব খারাপ। আপনি আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছেন। যেই আপনাকে ভালো লাগতে শুরু করলো অমনি আপনিও আপনার রূপ পাল্টে ফেললেন। সবাই এক। সবাই শুধু আমাকে কষ্ট দিতে জানে। আপনিও আমাকে কষ্ট দিলেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্যদের থেকে আলাদা কিন্তু না আপনিও সবার মতো। ফোন দিবেন নাহ আপনি আর আমাকে।
কান্না করতে করতে কথাগুলো বললো কণা। কান্না করার জন্য কণার কথা বার বার জড়িয়ে যাচ্ছিলো। ওপাশ থেকে ব্যস্ত কন্ঠে বলে,
ধূলিকণা কান্না থামাও। বাবুইপাখি আমার প্লিজ কান্না থামাও। আমি তো জাস্ট মজা করে কথাগুলো বলেছি। আমি ভাবিনি তুমি কথাগুলো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবে আর এভাবে কেঁদে দিবে। আই’ম সরি বাবুইপাখি।
বদ লোক শুধু আমাকে কষ্ট দেওয়ার ধান্ধা তাই না? আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না। আপনি যদি আমাকে আরেক বার ফোন দিছেন তো আপনার খবর আছে। আপনার সাথে আড়ি। ( নাক টেনে টেনে )
কণার এমন নাক টেনে টেনে বাচ্চাদের মতো কথা শুনে হেসে দেয় ওপাশের লোকটি। লোকটির হাসির শব্দ শুনে কণা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
আরেকবার হাসলে আমি আপনার দাঁত ভেঙে ফেলবো। আমি কাঁদছি আর আপনি হাসছেন
পঁচা লোক আপনার সাথে কথা নাই। আমাকে আর একদম ফোন দিবেন নাহ।
আচ্ছা যাও আর ফোন দিবো নাহ যদি তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।
আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
যতক্ষণ না প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো ততক্ষণ আমি ফোন দিতেই থাকবো।
আপনি তো আমাকে ফোন দিতেই পারবেন নাহ। কারণ আমি ফোন বন্ধ করে রাখবো।
তুমি ফোন বন্ধ করে রাখলে আমি তোমার বাসায় চলে যাবো।
তাতে আমার কী?
তোমারই তো সব। তোমার কী মনে হয় আমি ভীতু প্রেমিকদের মতো পাইপ বেয়ে বেলকনি দিয়ে তোমার রুমে যাবো? তাহলে একদমই ভুল ভাবছো। আমি এরকম কিছু করবো না। আমি তোমাদের বাসার মেইন ডোর দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করবো আর সবাইকে বলবো আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড। তুমি আমার সাথে রাগ করে আমার ফোন ধরছো না। তাই
বাসায় চলে এসেছি।
আপনি খুব ডেন্জারাস লোক। আপনার আশেপাশে থাকায় বিপদজনক। এখন তাড়াতাড়ি বলুন আপনার কী প্রশ্ন করার আছে আমাকে? প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার পরে আপনি আর কোনোদিন আমাকে ফোন দিবেন নাহ।
”ঐ পোলা তোর লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে আমার সাথে লুতুপুতু করতে চাইছিস।” তুমি এই কথাটা কেনো বলেছিলে।
আপনার জন্যই তো বলেছি। আপনি একটা লুচ্চা ব্যাটা। বিশ্ব বিখ্যাত লুচ্চা।
আমি লুচ্চা। কিছু না করেও এতো ভয়ানক একটা উপাধি পায়ে গেলাম। তাও আবার বিশ্ব বিখ্যাত লুচ্চার উপাধি। তা ম্যাডাম আপনার কোন দিকে আমাকে লুচ্চা মনে হয় বা আমি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছি?
অসভ্যতামি তো করেছেনই। আমার কপালে কিস করেছেন। আবার বলেছেন, ”আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।”
তো ম্যাডামের রাগটা এখানে। ওহ না এটা রাগ না জেলাসি। আমার তো নিজেকে ভাগ্যমান মনে হচ্ছে আমার ধূলিকণা আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছে। আমার ধূলিকণা আমার মতো তুমিও প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে।
একদমই না।
একদমই হ্যাঁ। প্রেমে পড়লে মানুষ বোকা হয়ে যায়। আর তুমিও বোকা হয়ে গেছো। সামান্য একটা কথার মানে বুঝতে পারোনি। আমার সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা আমার মায়ের। আমার মা না থাকলে হয় তো আমি নামক ব্যক্তিটির কোনো অস্তিত্বই থাকতো না।
কণার আর বুঝতে বাকি থাকে না। কেনো লোকটি বলেছিল, ”আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।” তাই কণা লজ্জায় কথা বলার মাঝখানে ফট করে ফোন কেটে দেয়। সে কতকিছু ভাবছিলো লোকটি সম্পর্কে। এখন তার লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।
কণা ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে আকাশের দিকে তাকায়। অবশেষে তারও নিজের কেউ হলো একান্ত নিজের। যে শুধু তাকেই ভালোবাসে।
৪৭
সাফাত ভাইয়ার দুইটা চোখ
যেনো দুই নালা বন্দুক
গুল্লি মাইরা ভাঙলো
অহির মনেরই সিন্দুক রে
মনেরই সিন্দুক।
আমি অহির কাধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে গানের লাইনগুলো গাইছি।
উফ কণা থামবি।
কেনো?
আমি লজ্জা পাচ্ছি।
আপনি এতো লজ্জা কেনো পাচ্ছেন?
কণা বেশি বেশি কিন্তু হয়ে যাচ্ছে।
বেশি বেশি কোথায় হলো? তোদের জন্য এতকিছু করলাম। আর তুই এটা বলছিস না সাফাত ভাইয়া তোকে কেমনে প্রোপোজ করছে।
আমি তোকে বলেছিলাম এতকিছু করতে। তোরা এমন প্লেন করলি যে, আমি শুধু একটুর জন্য হার্ট এ্যাটাক করি নাই।
আচ্ছা শুন নাহ। সাফাত ভাইয়া কী তোকে এভাবে ( অহিকে পিছন জড়িয়ে ধরে বললাম ) জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলেছিল অহি বেবি আমি তোমাকে ভালোবাসি। নাকি ঠোঁটে ঠাস করে চুমু খেয়ে বলেছিল, আমার ফিউচার বেবিদের আম্মু আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অহি লজ্জা পেয়ে নিজেকে আমার থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আমি রেডি হয়ে নিলাম ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।
৪৮
অতি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছি না। না না মনোযোগী হওয়ার ভান করছি। আমরা তো ক্লাসে বসে আড্ডা মারছি। কারণ এই স্যারের ক্লাসটা একদমই ভালো লাগে না। এক লাইন বোঝায় আর বলে ঠিক আছে। যেটা একদমই বিরক্তিকর। এই স্যারের ক্লাস কোনোদিন মনোযোগ দিয়ে করছি নাকি বলে মনে পড়ে না।
আমি, অহি আর বন্যা যখন আমাদের কথা বলায় ব্যস্ত তখন আমাদের ক্লাসে কিছু টিচারসহ সিনিয়র সিটিজেনরা প্রবেশ করেন। মানে ভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্টরা। এক স্যার আমাদের উদ্দেশ্যে বলে,
ডিয়ার স্টুডেন্ট আমাদের ভার্সিটিতে ২৬ তারিখ একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। যেটা প্রত্যেক বছরই হয়। এই অনুষ্ঠানে অন্য ভার্সিটির স্টুডেন্টরাও আসবে। চিপ গেস্ট হিসেবে আসবে বিজন্যাসম্যান আদিয়াত আয়মান। তিনি এই প্রথম আমাদের ভার্সিটিতে আসছেন। তাই আমরা চাই আমাদের বেস্টটা দিতে। তোমরা যে যেটাতে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। সেটার নাম লিখিয়ে আসবে সিনিয়রদের কাছে। আর হ্যাঁ ড্রেস কোড ঠিক করে দিবে সিনিয়ররা।
কথাগুলো বলে স্যার সিনিয়রদের নিয়ে চলে যায়। স্যার চলে যেতেই বন্যা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
২৬ তারিখ হতে আর তিন দিন বাকি। আর তিন দিন পরে আমি আমার ক্রাশকে সরাসরি দেখতে পাবো।
তোর তো কতো ক্রাশই আছে। তুই কাকে দেখার কথা বলছিস?
আদিয়াত আয়মানকে। উনি দেখতে কি হ্যান্ডসাম আর হট। কিন্তু মেয়েদের একদমই সহ্য করতে পারে না।
ব্যাটা মনে হয় ছ্যাকা খাইছিলো তাই মেয়েদের সহ্য করতে পারে না।
৪৯
আমি আর অহি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি। দুজন রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি। আমি হর হর মুভি দেখবো। কিন্তু অহি দেখবে না কারণ সে ভয়। হঠাৎ একটা নিউস দেখে আমি আর অহি থামকে যাই। আমার হাত থেকে রিমোট পড়ে যায়। অহি চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
চলবে……