তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-৩৬

0
1835

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আদিয়াত কণাকে পিঞ্চ মেরে বলে,
শুনছিলাম বাসর রাতে স্ত্রীরা নাকি তাদের স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আমার কপালটাই পুড়া। আমার আর সেই ভাগ্য হলো না।

আমি আপনাকে সালাম করতে যায় আর আপনি সিনেমার মত ডায়লগ মারেন। তোমার স্থান আমার পায়ে নয় আমার বুকে। আপনাকে আমি ভাব নেওয়ার সুযোগই দিব না। হুহ।

আমার বউ তো একটা চিজ ভুলেই গিয়েছিলাম। ( বিড়বিড় করে)

আদিয়াত কণার সামনে বসে। কণার ঘোমটা উপরে তুলে থুতনি ধরে বলে,

মাশাল্লাহ। আমার বউয়ের উপর যেনো কারো নজর না লাগে।

আদিয়াতের কথা শুনে কণা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে কণাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে থুতনি রেখে বলে,

দুজনকে দেখে একদম পারফেক্ট কাপল মনে হচ্ছে তাই না? যেনো আমাদের দুজনের জন্ম দুজনের জন্যই হয়েছে। উই আর মেইড ফর ইচ আদার।

আমি আয়নায় পলকহীন ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আজকে একটা মেরুন রঙের শেরওয়ানী পড়েছেন। মেরুন রঙে উনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। যেনো এই রঙটা উনার জন্যই শুধু। এই রঙে অন্য কাউকে মানাবেই না। সত্যিই আমি অনেক লাকি। তাই তো উনার মত একজনকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। উনি প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন পুরুষ। প্রত্যেকটাই মেয়েই এমন একটা জীবনসঙ্গী চায়। যে ভালোবাসবে, কেয়ার করবে, বিশ্বাস করবে।

এভাবে তাকিয়ে থেকো না নজর লেগে যাবে।
যাও ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসো। নামাজ পড়ব। আজকে থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু হবে। এখন থেকে একসাথে পথ চলা শুরু।

আদিয়াত কণার সমস্ত গয়না একে একে খুলে দেয়। খুব সুন্দর করে যত্ন সহকারে চুলগুলো খোলে দেয়।
আদিয়াত কণার হাতে একটা পিংক কালার জর্জেট শাড়ি তুলে দেয়। কণা কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

অল্প কিছুক্ষণ পরেই কণা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আদিয়াত ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাতেই থমকে যায়। তার চোখ জোড়া আটকে যায় শাড়ি পরিহিতা রমনীর উপর।

কণা আঙ্গুলে শাড়ির আঁচল পেছাতে পেছাতে এসে আদিয়াতের সামনে দাঁড়ায়। কণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে লজ্জায় আদিয়াতের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। আদিয়াতের এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি কণাকে অস্বস্তি আর লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।

আদিয়াত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। সে চোখই সরাতে পারছে না তার প্রেয়সীর থেকে। শাড়িতেই নারী। বাঙালি নারীর সৌন্দর্য শাড়িতেই প্রকাশ পায়। এই কথাগুলো আগে আদিয়াত বিশ্বাস করত না। কিন্তু আজকে তার এই কথাগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। কণা আমতা আমতা করে বলে,

নামাজ পড়বেন নাহ?

হুহ।

কণা এবার চিৎকার করে বলে, নামাজ পড়বেন নাহ?

আদিয়াতের ধ্যান ভেঙে যায় কণার চিৎকারে। যে হকচকিয়ে বলে, কিছু বলছিলে?

আপনার মন কোথায় থাকে? এতক্ষণ ধরে চিৎকার করে আপনাকে আমি কী বললাম?

আমার মন তো তোমার কাছে।

হয়ছে আপনার ফাজলামো বন্ধ করুন। চলুন নামাজ পড়ি।

তারপর দুজন নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ পড়া শেষ হতেই আদিয়াত কণার সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর খুব সুন্দর করে কণার চোখে কাজল পড়িয়ে দেয়। খোপা করা চুলগুলো একটানে খোলে দেয়। ঝর ঝর করে রেশমি কালো কোমর অব্দি ঘন চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়ে। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়।

তুমি নিজেও জানো না ধূলিকণা তোমার চুলের ঘ্রাণ আমাকে কতটা এট্রাক্ট করে।

আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ করে এভাবে কোলে তুলে নেওয়ায় কণা ভয় পেয়ে যায়।

আপনি আমাকে পেয়েছেনটা কী? আটার বস্তা? কথা নাই বার্তা নাই হুট হাট কোলে তুলে নেন।

তুমি আটার বস্তা হতে যাবে কেনো? তুমি তো আমার একমাত্র মিষ্টি বউ। আর তোমার যা ওয়েট তাতে তুমি আটার বস্তা না বড় জোড় তুলোর বস্তা হতে পারবে।

আপনি আমার ওজন নিয়ে কথা শোনাচ্ছেন?

আরে না আমি আমার সুইট বউকে কথা শুনাতে পারি। আমি তো জাস্ট সত্যিটা বললাম।

আদিয়াত কথা বলতে বলতে কণাকে নিয়ে সুইমিংপুলের কাছে নিয়ে আসে। কণাকে কোল থেকে নামিয়ে আদিয়াত সুইমিংপুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে। কণাকেও তার সাথে বসিয়ে দেয়। কিন্তু কণা পানিতে পা ডুবায় নাহ।

কী হলো? পানিতে পা না ডুবিয়ে পা গুটিয়ে বসে আছ কেনো?

পানিতে পা ডুবালে শাড়ি ভিজে যাবে তো।

ভিজতে দাও।

কণাও সুইমিংপুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে। আদিয়াত কণাকে ইশারায় আকাশের দিকে তাকাতে বলে। আজকে পূর্ণিমা। আজকে আকাশে গোলাকার রুটির মতো পূর্ণ চাঁদ ওঠেছে। চাঁদের আলো পানিতে পড়ায় পানি ঝলমল করছে। পানিতে চাঁদের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।
কণা আদিয়াতের এক হাত জড়িয়ে ধরে আদিয়াতের কাধে মাথা রাখে। কণা তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আদিয়াত তাকিয়ে আছে কণার দিকে।

__________

আদিয়াত বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে কণাকেও দাঁড় করায়। কণার চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দেয়।

আরে কী করছেন? চোখ কেনো বাধছেন?

সারপ্রাইজ।

কণা আদিয়াতের হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। একটা জায়গায় গিয়ে আদিয়াত কণার হাত ছেড়ে দেয়। কণা চোখের ওপর থেকে কালো কাপড়টা সরিয়ে দেয়। কণা অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত রিং হাতে কণার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।

হয়নি বলা কোনোদিন ভালোবাসি। বলবও না আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু বলব পাশে থাকব সারাজীবন। এই হাত দুটি যখন একবার ধরেছি যত বাধা বিপদ আসুক কখনই ছাড়ব না। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দিব না। থাকবে তো আমার পাশে? যাবে না তো কখন আমাকে ছেড়ে?

সারাজীবন আপনার পাশে থাকব। কখন আপনাকে ছেড়ে যাব না।

কণা হাত বাড়িয়ে দেয়। কণার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। এটা খুশির কান্না। আদিয়াত কণার হাতে রিংটা পড়িয়ে দেয়। হাতের পিঠে একটা কিস করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে কণার চোখের পানি মুছে দেয়।

আমি এত কষ্ট করে সবকিছু এরেন্জ করলাম। আর তুমি তা না দেখে কান্না করছ।

কণা এবার ভালো করে চারপাশে চোখ বুলায়। এখন তারা যেখানে আছে কুঁডেঘর টাইপ। ছোট লাইট দিয়ে ঘরটা সুন্দর করে সাজানো। একটা বিছানাও পাতা আছে। সাদা বেড সিটের ওপর লাল রঙের গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লাভের ভিতর A+K লেখা। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,

আরেকটু কাছে আসতে চাই তোমার, আরও কাছে;নিশ্বাস ছোঁয়া দূরত্বে- তাকাতে চাই তোমার চোখে।আমি কি আছি! চোখের তারায় মুগ্ধতার আবেশে।তোমার হৃদয় মণিকোঠায় আঁকা আছে কি-আমার অবয়ব! হৃদয় বর্ণালীর আস্তরণের তুলিতে।তোমাকে বুঝতে চাই, হৃদয়ের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে,অনুধাবন করতে চাই, ভালবাসার মর্মার্থ -ঐ চোখে চেয়ে।তোমার গভীর কালো মায়া মায়া চোখে হারিয়ে গেছি,প্রেমে পড়ে গেছি একেবারে- কাছে পাবার ব্যাকুলতায়।

কণা পিছন ঘুরে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত হালকা হেসে কণাকে কোলে তুলে নেয়। বেডে সুইয়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।

৭৬

এখন বাজে সকাল ৮ টা। হেলাল রহমান আভিয়ান আর ছোঁয়ার বিয়ের ব্যাপারে তিশান আহম্মেদের সাথে কথা বলতে এসেছে। হেলাল আহম্মেদের সামনে সোফায় বসে আছে তিশান আহম্মেদ। গম্ভীর হয়ে বসে আছে। বাইরে থেকে গম্ভীর হয়ে থাকলেও ভিতর থেকে রাগে ফুসছে।

তিশান আহম্মেদ বুঝতে পারছেন নাহ হেলাল রহমানের কান্ড ঙ্গান। মানুষ কতটা গর্দভ হলে এই সময় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। তিশান আহম্মেদের মেয়ের এই অবস্থা আর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আর উনি ধুমধাম করে এখন উনার ছেলের বিয়ে দিবে। তিশান আহম্মেদের ইচ্ছে করছে হেলাল রহমানকে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে তিনি সেটা পারছেন নাহ।

আভিয়ান চুপচাপ সোফার এক পাশে বসে ফোনের মাঝে ডুবে আছে। যেনো এই মুহূর্তে তার একমাত্র কাজ ফোন স্ক্রল করা। তাই সে দিন দুনিয়া ভুলে ফোনের ভিতর ডুবে আছে। আভিয়ানের ড্রয়িংরুমে বসে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু মহুয়া জাহানের জন্য ওঠতেও পারছে না। মহুয়া জাহান আভিয়ানের এক হাত ধরে সোফায় বসে আছে। এটার জন্য আভিয়ান ভীষণ বিরক্ত। সে বাচ্চা নাকি যে তার হাত ধরে বসে থাকতে হবে।

তিশান ভাই আমি চাইছিলাম বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে। বয়স হচ্ছে। আজ আছি কাল নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাওয়া ভালো। আমিও নিশ্চিন্ত হতে পারব মেয়েটাকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলে। ছোঁয়ার জন্য আভিয়ানের থেকে যোগ্য আর কেউ হতেই পারে না।

কিন্তু…….

তিশান ভাই এখানে কিন্তু আসছে কেনো? এখানে চেনা জানার তো কিছু নেই। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। আমার মেয়েকে আপনারা ছোটবেলা থেকে দেখছেন আমারও আপনার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। আর ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। তাই এখানে কিন্তুর কোনো প্রশ্নই আসে না।

চলবে…………..