#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-১৪(অন্তিম পাতা🙂)
#মেঘলা_আহমেদ
১০ মাস পর..
এলিজা থমথমে মুখে বসে আছে ঘরে। তিনি চায়না এরিক রিদিশা কে বিয়ে করুক। একটা বাংলাদেশী মেয়ে কেনো তার ছেলের বউ হবে। তার ছেলের কি টাকা পয়সার অভাব আছে? না রূপের অভাব আছে। তিনি তার ভাইয়ের মেয়েকে বউ করতে চায়। কিন্তু এলিনা ও মেহতাবের রিদিশাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আজ তাঁর রিলিজের দিন। তারা দুজনে অফিসে যাবে রিদিশা কে দেখতে। আর অফিসে আজকে একটা পার্টিও আছে। এলিজা থমথমে মুখে বলল-
-” কিসের অভাব আছে আমার ছেলের? যে তুমি ঐ বাংলাদেশী মেয়েটাকে ছেলের বউ করতে চাইছো?
মেহতাব তাহসানের মন এমনিতেই ভালো না। ইথান কে তিনি যেখানে রেখেছিলো, সেখানে সে নেই। হয়তো এরিক আর ফেলিক্স মিলে তাকে শাস্তি দিয়েছে। ছেলেটা হয়তো বেঁচে নেই। ভাবতেই বুকটা ভারী হয়ে যায়। কম তো ভালোবাসেনি ছেলেটাকে। তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায়। এলিনা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে-
-” মম শোন, আমার ভাইয়ের জীবনে হয়তো কিছুর অভাব নেই, কিন্তু তার জীবনে ভালোবাসার বড্ড অভাব। সঙ্গীনির ভালোবাসার অভাব। কারো কাঁধে মাথা রেখে জোৎস্না বিলাস করবে এমন একটা মানুষের অভাব। তুমি তো তার সে অভাব পূরণ করতে পারবেনা। সেটা কেবল রিদিশাই পারবে। ভাইয়া রিদিশা কে পাগলের মত ভালোবাসে। তুমি চলো প্লিজ আমাদের সাথে। এত সুন্দর মেয়েটা কে অবহেলা করছো পরে আর ওর সাথে কথা বলার সুযোগটাও না পেলে।
এলিনা আরো কিছু বলতো। কিন্তু তার এখন বাবার সাথে যেতে হবে। সে ঘড়ি পড়তে পড়তে চলে যায়। মিসেস এলিজা রাগে গজগজ করতে করতে এলিনার পেছনে পেছনে ছোটে। মেহতাব আগে থেকেই গাড়িতে বসে ছিলো। দুজনকে দেখে ভাবলেশহীন ভাবে সামনে তাকায়। এলিজা গজগজ করতে করতে মেহতাবের পাশের সিটে বসে। এলিজা মুচকি হেসে পেছনের সিটে বসে পড়ে। মেহতাব একবার পেছনে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
______
ফেলিক্স আর এরিক দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। এরিক সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে-
-” ব্রো সরি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। আমাকে মাফ করে দাও। ইথান কে কি করেছো?
ফেলিক্স এরিকের কাঁধে মাথা রেখে বলে-
-” ওকে আমার কাছে ছেড়ে দে। ওর উপযুক্ত শাস্তি আমি দেবো। আর রিদিশা কে যারা ট|র্চার করেছিলো তাদের সব কটাকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এরিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে –
-” আর ফিওনা?
কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে ওঠে এরিকের। ফেলিক্স এরিকের কাঁধ থেকে মাথাটা সরিয়ে নেয়। শুকনো ঢোক গিলে পলক ফেলে বলে-
-” জানিনা তুই যা ইচ্ছা করিস ওকে। ওর শাস্তি তুই দিস।
-” ওকে ক্ষমা করা যায়না কি?
ফেলিক্স রাগী চোখে এরিকের দিকে তাকায়। হালকা চেঁচিয়ে বলে-
-” খবরদার এই কথা বলবি না। ও বেইমানি করেছে। বেইমান কে ক্ষমা করা ঠিক না।
এরিক আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার জানা নেই ফিওনার কি করবে। হয়তো ফেলিক্স কোনদিন ক্ষমা করতেও পারে নাও করতে পারে। রিদিশা তখন এসে পাশে বসে। এরিক চকিতে তাকিয়ে বলে-
-” একি তুমি এখানে?
রিদিশা মৃদু হেসে বলে-
-” আমার সব কাজ করা শেষ জনাব। আপনি নিজের কেবিন ফেলে এখনে এসে কেন বসে আছেন? কিছুক্ষণ পর আপনার বাবা মা চলে আসবে। তখন বলবেন রিদিশা এটা, রিদিশা ওটা। বিরক্তিকর। শুনুন আমার ছোটবোনের ছেলে হয়েছে।
এরিক অবাক চোখে তাকিয়ে বলে-
-” ছোটবোনের সাথে তো কথা বলো না। তাহলে জানলে কিভাবে?
রিদিশা চমৎকার করে হাসে। দুই ভ্রু নাচিয়ে বলে-
-” ওরা আমার খোঁজ নাই বা রাখতে পারে। ওদের প্রতি দিনের খবর আমি রাখি। এই বেবি নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছিল। কিন্তু এইবার বেবি এসে গেছে। বেবিকে দেখার ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু আমার সেই কপাল নেই। ও নিশ্চয়ই এবার সুখী হবে। আমার ভালো লাগছে না আমি একটু বাইরে থেকে হাওয়া খেয়ে আসি।
রিদিশা সামনের দিকে হাঁটা দেয়। এরিক খপ করে হাত ধরে ফেলে। রিদিশা বিরক্ত চোখে এরিকের দিকে তাকায়। এরিক দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে-
-” আমি তোমার সাথে নিচে যাবো চলো। ফেলিক্স ভাইয়া তুমি প্লিজ একটু সামলে নাও। আমরা যাবো আর আসবো।
ফেলিক্স চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে চলে যায়। এরিক রিদিশা কে হাত ধরে নিচে নামায়। রিদিশা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে-
-” যখন তখন ছোয়ার বাহানা খোজো কেন? হাত ছাড় আমি একাই চলতে পারি। এখন আমি পুরোপুরি ফিট।
এরিক রিদিশার আগামাথা নিরীক্ষণ করে মুখ বাঁকিয়ে বলে-
-” এহ উনি ফিট। কপালের উপরে এখনো টেপ লাগানো উনি ফিট। বাসায় চলো আঠা লাগিয়ে দেবো।
রিদিশা মুখ বাঁকিয়ে আগে আগে চ্ছ যায়। এরিক আর রিদিশা রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ায়। রিদিশার চোখ যায় সামনের দিকে। আইসক্রিম দেখে চোখ চকচক করে ওঠে। যদিও এই ঠান্ডায় আইসক্রিম খাওয়া উচিত নয় তবুও তার ভীষণ খেতে ইচ্ছা করছে। রিদিশা এরিকের হাত ছাড়িয়ে সামনের দিকে ভো দৌড় দেয়। উদ্দেশ্যে রাস্তার ওপারে। কিন্তু তখনি একটা গাড়ি রাস্তার অপর পাশ হতে শা শা করে ছুটে আসে। মূহুর্তের মধ্যে ধা|ক্কা লাগে রিদিশার। রিদিশার মনে হচ্ছে সে হাওয়ার উপরে উড়ছে। আচ্ছা মাটিতে পড়লে কি বেশি ব্যাথা পাবে। তাকে হয়তো আর বাঁ|চানো যাবেনা। তার শরীরে যে কঠিন রোগ বাসা বেঁধে আছে। তার উপরে এই এ|ক্সি|ডেন্ট। চোখ বুজে শেষবারের মতো সকলের মুখটা দেখে নেয়। আরিশার ছেলের কথা মনে করতেই বলে- বাবা খালামনিকে ক্ষমা করে দিস। তুই খুব ভালো বাচ্চা হয়ে থাকিস। তারপর এরিকের মুখটা ভেসে ওঠে। ছেলেটা কিভাবে সইবে। শরীরটা রাস্তার সাথে পড়তেই আরেকটা গাড়ি ছুটে এসে পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। রিদিশা ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠে। মাথা ফে|টে ফি|নকি দিয়ে র|ক্ত বেরোচ্ছে। শরীরের অনেক জায়গায় হয়তো ছিলে গেছে। রাস্তার ওপাশ থেকে এরিক চেঁচিয়ে ওঠে –
-” রিদিশাআআআ।
তার পুরো পৃথিবী ঘুরছে। সে ছুটে যায় রিদিশার কাছে। হাত পা অজানা ভয়ে কাঁপছে। রিদিশার মাথাটা নিজের হাঁটুর উপরে উঠিয়ে নেয় এরিক। দু হাতে ধা|ক্কা দিয়ে ডাকে –
-” এই রিদিমনি ওঠো প্লিজ। আজকে তোমার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ পার্টি রেখেছি। আমার কুইন। রিদিমনি ওঠোনা। এই তুমি যাবেনা। কোথাও যাবেনা। ওহ তোমাকে তো আমি উইশ ই করিনি। তাই রাগ করলে? হ্যাপি বার্থডে মা কুইন! কথা বলো।
রিদিশার চোখমুখে আঁধার নেমে আসে। র|ক্তমাখা হাতটা কোনরকমে উঠিয়ে এরিকের গালে রেখে ভাঙা গলায় বলে-
-” আই লাভ ইউ।
হাতটা রাস্তায় পড়ে যায়। এরিকের দু চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এই ভালোবাসার কথা শোনার জন্য কতই না পাগলামী করেছে। সেই কথা রিদিশা আজ বলেছে তবে কেন চলে যাবে। এরিক রিদিশা কে পাগলের মতো চিৎকার করে ডাকে –
-” রিদি ওঠো। প্লিজ। আজ আমাদের এংগেজমেন্ট। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো। তোমার জন্য আমি আংটি এনেছি। প্লিজ কথা বলো।
রিদিশার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ১০ মাসের ব্যবধানে মাথায় আবারো আঘাত নিতে পারেনি। এরিক কোলে তুলে নেয় রিদিশাকে। সামনেই হসপিটাল। মানুষের ভীড় ঠেলে পাগলের মতো হসপিটালে ছুটে যায়। চেঁচিয়ে ডক্টর কে ডাকতে থাকে। কেবিনে রিদিশা কে রেখে সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে। ফেলিক্স মুহূর্তে ছুটে এসেছে। পেছনে এসেছে এলিনা, এলিজা, মেহতাব। সকলের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। এরিক স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর একজন ডক্টর বেরিয়ে আসে। এরিক উঠে যায় ডক্টরের কাছে। তাড়াতাড়ি করে বলে-
-” কোন ফর্মালিটিজ করবেন না। আমার রিদি কেমন আছে? তাড়াতাড়ি বলুন।
ডক্টর এরিকের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” তার জ্ঞান ফিরেছে দেখা করতে চায়। এরিক ডক্টর কে রেখেই ছুটে যায় রিদিশার কেবিনে। রিদিশার হাত ধরে বলে-
-” কেন কেন তুমি ওভাবে দৌড়ালে? আমি তোমাকে খুব বকবো সুস্থ হয়ে নাও।
রিদিশা অক্সিজেন মাস্ক টা খোলে। এরিক বাঁধা দেয় তবুও খোলে। কষ্টের মধ্যেও মৃদু হেসে বলে-
-” এরিক! তোমার জন্য একটা ডায়েরি রাখা আছে তোমার গ্র্যান্ড মায়ের বাড়িতে। ওটা পড়ে দেখবে। এই দশটা মাস আমার কাছে স্বপ্নের মত ছিলো। আমি তোমাকে খুব মিস করবো। তোমাকে খুব ভালোবাসি। আজ এই কথাগুলো অর্থহীন। আমাকে একটু তোমার বুকে ঘুমাতে দেবে।
এরিক বলার মত কিছু পাচ্ছে না। সিটের একপাশে উঠে নিজের বুকের উপর রিদিশা কে টেনে নেয়। রিদিশা চোখ বুজে এরিকের বুকে শুয়ে পড়ে। এরিক চমকে রিদিশা কে বলে-
-” তুমি আমাকে মিস করবে কেন। আজ আমাদের এংগেজমেন্ট পার্টি। আমরা একসাথে থাকবো তো।
রিদিশা বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলে-
-” উফ ঘুমাতে দাও।
এরিক মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর টের পায় রিদিশার নিঃশ্বাস আর বুকের উপর পড়ছে না। বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। এক লাফে উঠে চিৎকার করে বলে-
-” ডাক্তার ডাক্তার।
ডক্টর দৌড়ে ভেতরে আসে। তিনি সব জানেন। রিদিশার পালস চেক করে বলে-
-” সরি সি ইউ নো মোর।
এরিক নির্বাক হয়ে ডাক্তারের মুখের দিকে তাকায়। তারপর রেগে ডাক্তারের কলার চেপে ধরে। চেঁচিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে-
-” এই আপনি মশকরা করছেন আমার সাথে।
এরিকের চিৎকারে সবাই কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করে। ফেলিক্স রিদিশার নিথর হয়ে পড়ে থাকার দিকে তাকিয়ে থাকে। এলিনা রিদিশার কাছে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এই মেয়েটা তার ভাইকে ভালো রেখেছিলো। এখন তার ভাইয়ের কি হবে? ফেলিক্স দ্রুত এরিক কে ডাক্তারের থেকে সরিয়ে আনে। এরিক কে বলে-
-” তুমি এমন করছো কেন ওনার সাথে?
এরিক আহত বাঘের মতো গর্জন করে বলে-
-” ছাড়ো আমায়। আমি ছাড়বোনা ওনাকে। আমার রিদিশা তো আমরা বুকে ঘুমিয়েছিলো। কে বলেছে ও নেই।
ডাক্তার এরিকের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” প্রেশেন্টের ডায়াবেটিস, হার্টে প্রবলেম, এছাড়াও কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ওনার যখন জ্ঞান ফিরে উনি আপনার সাথে কথা বলতে চায়। আর ওনার মাথায় আরো একবার আঘাত লেগেছিলো তার এবারেও প্রচুর র|ক্তক্ষরণ হয়েছে। বাঁচানো পসিবল ছিলো না। তাই আমরা আপনার সাথে কথা বলতে দিয়েছি। ওনার অনুরোধে। ওনার রোগের কথা উনি জানতেন। তাহলে চিকিৎসা করায়নি কেন?
সবটা শুনে সবাই নির্বাক হয়ে যায়। এভাবে নিজেকে ইচ্ছা করেই মৃ|ত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে রিদিশা। এরিক কলের পুতুলের মতো রিদিশার পাশে যায়। কপালে উষ্ণ পরশ দিয়ে পকেট থেকে একটা আংটি বের করে। আংটিটা অনামিকায় পড়িয়ে দিয়ে বলে-
-” তুমি কেন ঘুমিয়ে আছো? আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠো। এখন না উঠলে কিন্তু আর বুকে নিবো না। এই যে এংগেজমেন্ট হয়ে গেছে। ওঠো এখন আমরা বিয়ে করবো। রিদি ওঠো তোমার সাথে আমার জোৎস্না বিলাস করা হয়নি। তোমার হাত ধরে রাতের রাস্তায় হাঁটা হয়নি। তুমি তো বলেছিলে বাংলাদেশে গিয়ে দুজন রিকশায় ঘুরবো। প্লিজ ওঠো। প্লিজ ওঠো।
এরিকের বিশ্বাস হচ্ছে না। এলিনার কান্না দেখে এরিক জোড়ে ধমক দিলো।
-” এই কাঁদছিস কেন। কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? এটা হসপিটাল। ডক্টর মজা করেছে। মা বাবা তোমারা এখনে কেন? সরো সবাই আমার রিদিমনির ঘুম ভেঙ্গে যাবে। একটু আগেও অনেক কাজ করেছে। তোমরা দাঁড়াও আমি ওর জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসি।
এলিনা তবুও থামছে না। এরিকের বুকটা আর্তনাদ করে ওঠে। ভয়ে শরীর কাঁপছে। এই এক দৃশ্য কেন বারবার দেখা লাগবে। গতবার ও রিদিশা হসপিটালে করুন অবস্থায় ছিলো। এরিক পাগলের মতো সব ছুঁড়ে ফেললো। রিদিশার পাশে গিয়ে আবারো বসলো। ওর মুখের দিকে তাকালেই কলিজা টা পু|ড়ে যাচ্ছে। এত সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। একদম পরীর মতো লাগছে। এরিক ধরা গলায় বলল-
-” তুমি তো আইসক্রিম খাবে আমি জানতাম। একটু কি অপেক্ষা করা যেতো না। আমি নাহয় তোমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যেতাম। এত অধৈর্য কেন তুমি?
এরিক ঘুমন্ত মুখটার দিকে হাত বাড়ালো। কাঁপছে হাত। আবারো সরিয়ে নিলো। যদি রিদির ঘুম ভেঙ্গে যায়। এরিক পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে রিদি কে। ডাক্তার আর ফেলিক্স টেনেও সরাতে পারছে না। এরিক রিদিশার কানে কানে বলে-
-” তুমি আবারো সুস্থ হবে। তোমার মাথা তো আগের বারও ফেটেছিলো। কিছুই হয়নি। তুমি আমার রানী। তোমার কিছুই হবেনা। আজই আমরা বিয়ে করবো চলো। প্লিজ ওঠো আমি তোমার সাথে বাংলাদেশে গিয়ে ফুসকা নামের খাবার খাবো। তুমি শুনতে পাচ্ছো? ওঠো। আমার কষ্ট হচ্ছে। আমার বুকটা পুড়ে যাচ্ছে। আমি দম নিতে পারছিনা। তুমি আমার অক্সিজেন ওঠোনা।
রিদিশার নিথর দেহটা আগলে নেয় এরিক। কেন উঠছে না। তার ভালোবাসা কেন পেয়েও পেলোনা। দুটো বছর একাই ভালোবাসলো, যখন দিদি তার কাছে আসলো আল্লাহ এভাবে কেড়ে নিলো? এরিক রিদিকে নাড়িয়ে বলল-
-” একটু দয়া করো। উঠো না। প্লিজ, দেখো আমি কিন্তু অফিসের কলিগদের সাথে সেল্ফি তুলবো। তুমি লাগলেও শুনবো না। ওঠো না ওঠো।
এরিকের মা এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। তার নিজের চোখেও জল। এরিক একটুও কাঁদছে না। সে এখন রিদিকে উঠাবেই। আচ্ছা রিদি কি এসব শুনতে পাচ্ছে? তার কানে কথা তো আর যাবেনা। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যে বন্ধ হয়ে গেছে চিরতরে। এরিক শব্দ করে কেঁদে ওঠে। আবার গিয়ে রিদির কপালে চুমু দিয়ে বলে-
-” আমার ভাগ্য এতো খারাপ কেন? আমার ভালোবাসার ছোট ভাইটাকে কেড়ে নিলো, ছোটবেলা থেকে মা আমায় ভালোবাসলো না, আমার বড় ভাইয়ের মত ইথান বেইমানি করলো, এখন তুমি ও নিষ্ঠুরের মতো চলে গেলে। তুমি এতো খারাপ হলে কেন? তুমি কি জানো না বিচ্ছেদ এর ব্যাথা কি কষ্টের। তুমি এত পাষান হলে কেন রিদিমনি? আম্মু ও আম্মু ও যে বলল একটু ঘুমাবো। ও কেমন ঘুম ঘুমালো। আম্মু পানি আনো, পানি ছিটিয়ে ওরে উঠাও। ওরে নিয়ে পার্টিতে যাবো তো ।
এরিক মা কে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। তার তিনবছরের সাজানো ভালোবাসার পৃথিবী মুহূর্তেই চুরমার হয়ে গেলো। ভাগ্য এতো খেলা খেললো তার সাথে? এরিক কাঁদতে কাঁদতে হেসে দিলো আবারো। তাকালো রিদিশার দিকে। আজকে পার্টি উপলক্ষে কি সুন্দর করে সেজে এসেছিলো মেয়েটা।
-” তোমাকে খূব সুন্দর লাগছে রিদিমনি। মাই কুইন এতো সুন্দর লাগছে কি বলবো। হে মানুষ সে পৃথিবী শুনে রাখো আমি কর কাউকে ভালোবাসবো না। আমি আর কখনো প্রেমে পড়বো না। আমি আর কারো টানে ছুটে যাবো না। কাউকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসা অন্যায়। আমি সেই অন্যায় করেছি। শাস্তি আমার এটাই।
__________
এরিক তার দাদির বুকে মাথা দিয়ে তাকিয়ে আছে রিদিশার কবরের দিকে। তাদের নিজস্ব জায়গাতেই কবর করা হয়েছে। বাংলাদেশে নিতে চেয়েছিল, তবে এরিক কিছুতেই রিদিশা কে যেতে দেবে না। হাতে রিদিশা ডায়েরি টা। সারা ডায়েরি জুড়ে এরিকের নামে ভালোবাসার অনুভূতি লেখা। রিদিশা তো ধাক্কা খেয়েই এরিকের প্রেমে পড়েছিলো। এরিক ডায়েরিটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে-
-” রিদি তুমি খুব পাষান। আমাকে শূন্য করে দিয়ে গেছো। তোমাকে আমি ক্ষমা করবো না। তুমিও বেইমানি করলে। ছেড়ে গেলে।
মিসেস ময়ূরী থামালেন না তিনি নিজেও কাঁদছে। এই বয়সে এসে নাতির ভালোবাসার পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার কষ্ট হচ্ছে খুব। এরিক কি কখনো পাবে সত্যিকারের ভালোবাসা। সে হয়তো রিদিশার স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই থাকবে। এরিকের মন মানেনা সে চিৎকার করে বলে-
-” রিদি আমি অপেক্ষা করবো। আমরা রাতে একসাথে ঘুরবো। তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরবো। জানো আমার মন কি বলে?
– মন আজো পথ চেয়ে রয়, তুমি আসবে বলেছে হৃদয়!
#সমাপ্ত