#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:৩৯
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষেধ]
–তোমাকে না কালকে বলেছি, বেলকনির দরজা বন্ধ করে ঘুমোতে। আর তুমি বন্ধ করনি ! পুচকি হয়েও তোমার বিন্দু পরিমাণে ভয় নেই, তাই তো?
সমুদ্রের বলা বাক্যের প্রেক্ষিতে মেহের বোকার মতো কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলো,
–আপনি তো বোধহয় রাতে কিছু খাননি!
মেহেরের কথার জবাবে সমুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল,
–আমাকে কেউ খাইয়ে দেইনি। তাহলে খাবো কি করে!
সমুদ্রের প্রত্ত্যুরে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে মেহের। আকস্মিক সমুদ্রের থেকে এমন সোজা জবাবের মোটেও প্রত্যাশা করেনি সে। ফলে অস্বস্তি যেন তাকে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ধরেছে! তার গাল যুগলে স্বল্প রক্তিম আভার আবির্ভাব ঘটেছে। শুধু লজ্জা নয় তার সঙ্গে মেহেরের হৃদয় বড্ড ব্যাথিত। ইশ! লোকটা সারাদিন না খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার উপর নিজে না খেয়েও ঠিকই তাকে সযত্নে খাইয়ে দিয়েছে।
মেহেরকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সমুদ্র ভ্রূ জোড়া কুঁচকে ফেললো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে, ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। পকেটে থেকে ফোন বের করলো। মোবাইল স্ক্রিনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর কন্ঠে মেহেরের উদ্দেশ্যে বললো,
–তোমাকে কিছুই করতে হবে না। পুচকি, পুচকির মতো থাকো। বাই দা ওয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
সমুদ্রের বলা বাক্যটা মেহেরের কর্ণপাত হতেই খারাপ অনুভূতি যেন আরো দ্বিগুন বৃদ্ধি পেলো। কন্ঠে যেন অভিমান নামক অনুভূতির ছাপ একেবারে স্পষ্ট! মেহের চোখ জোড়া নিচু করে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো সে। কী করবে কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। সমুদ্র মেহেরকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ফোনে কারো সঙ্গে কথা বললো। প্রায় মিনিট পাঁচেক এভাবেই কেটে গেলো। অতঃপর সে দ্রুত গতিতে টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেটটা বিছানায় উপর রাখলো। সমুদ্র থেকে দূরত্ব বজায় রেখে এক কোণে বসে পড়লো।
মেহেরের পরিস্থিতি দেখে ফোন রেখে সোজা মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করে বসলো সমুদ্র। খাবারের প্লেট দেখে শীতল কন্ঠে বলল,
–খাবার পেলে কোথায়! তুমি এখনো খাওনি?
সমুদ্রের বলা বাক্য হাল্কা কেঁপে উঠলো মেহের। মূলত সে রাতে ডিনার করেনি। দুপুরে সমুদ্র যে খাবার গুলো তাকে খাইয়ে ওগুলো যেন এখনো তার পেটে অবশিষ্ট রয়েছে। তাই রাতের খাবার অহনা রুমে দিয়ে গিয়েছে। তাই নিয়ে বেশ ভয়ে রয়েছে মেহের। এখন যদি সমুদ্র একবার টের পাই সে খাইনি। তাহলে নিশ্চয়ই নিজে খাবে না! তাই মেহের মিনমিন গলায় বলে উঠলো,
–খেয়েছি তো। আপনি খান।
মেহেরের প্রত্ত্যুরে পেয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়ল সমুদ্র। অবশেষে মেহেরের নিকটবর্তী এসে পড়লো। মেহের দ্বিধা সংকোচ ঝেড়ে ফেলে চামচে খাবার তুলে সমুদ্র মুখের সামনে ধরলো।
মেহেরের কম্পমান হাত জোড়ার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সমুদ্র। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে! লজ্জা, সংকোচ, দ্বিধা সঙ্গে বড্ড ভয় পাচ্ছে সে। সমুদ্র পরাপর কয়েকটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, টান দিয়ে মেহেরের হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে নিলো। কন্ঠে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে উঠলো,
–কুল মেহের, ভয় পাচ্ছ! আমাকে দেখে ভয়ের কিছু নেই। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে না। এখানে স্পুন আছে। আমি খেয়ে নিতে পারব। তুমি বরং ঘুমিয়ে পড়ো। ওয়েট আমি খাচ্ছি তুমি বসে থাকো।
সমুদ্রের বলা বাক্য গুলো শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মেহের। কথাগুলো সাধারণ হলেও এর মধ্যে মিশ্রিত ছিলো অধিক পরিসরে অভিমান। সে অভিমান বুঝতে হলো মেহেরকে যে সমুদ্র নামক অনুভূতিতে গভীরভাবে আক্রান্ত হতে হবে! সে বিষয়টা খুব বেশি একটা গুরুত্ব দিলো না। চুপচাপ সমুদ্রের সামনে নতজানু হয়ে বসে রইলো। সমুদ্রে খাবারের দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো। বেশ মার্জিত ভাবে পরিপাটি করে খাচ্ছে সে। তৎক্ষণাৎ খাবার চিবুতে চিবুতে বলতে লাগলো,
— কালকে কিন্তু বাসায় ফিরতে হবে তোমাকে। এখান থেকে একদম স্কুলে যাবে।
সমুদ্রের কথার প্রত্ত্যুরে মেহের মুখ বন্ধ করে নিম্ন স্বরে উত্তর দিলো।
–হুম।
সমুদ্র হঠাৎ সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেহেরের মুখশ্রীতে। সিরিয়াস হয়ে বলে উঠলো,
–পুচকি, আমি তো তোমার পড়ালেখা সম্বোধন জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছে। মনে আছে সেদিন পড়া দিতে পারো নি ম্যাথ ক্লাসে। নাইনে বাসায় প্রাইভেট পড়তে?
সমুদ্রের কথাগুলো শুনে মন খারাপ করে বসলো মেহের। সেদিন অংক গুলো সলভ করতে না পেরে অত্যধিক লজ্জিত সে। তাই নিম্ন কন্ঠে বললো,
–আমার তো প্রাইভেট সেভাবে পড়া হয়নি। অনেক স্বপ্ন করে মা আমাকে সাইন্স বিভাগে ভর্তি করে দিয়েছে। কিন্তু বাবার সামর্থ্য নেই সাইন্সের প্রাইভেটের খরচ বহন করা। তাই পড়া হয়নি কিন্তু পাশে বাসায় একটা আপু ছিলেন, সমস্যা হলে তার কাছে গিয়ে পড়তাম।
এই প্রথম মেহেরের কন্ঠে এতো গুলো বাক্য শুনে আনন্দে আত্মহারা সমুদ্র। বাহ্, বেশ মিষ্টি করে কথা বলতে পারে তার পুচকি! তা সে জানত না। আস্তে আস্তে মেয়েটার ভয় কেটে যাচ্ছে। কারণ মেহের ছোটবেলা থেকেই শান্ত,নিরব, নিশ্চুপ প্রকৃতি। একা থাকতে ভীষণ ভালোবাসে। তাই অত্যধিক জড়তা তার মধ্যে বিদ্যমান। বিশেষ করে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার স্বভাব তার একদমই নেই। এককথাই ভীষণ অপছন্দ। সমুদ্র মেহেরের কথাগুলো মনোযোগ সহকারে কর্ণপাত করলো। বাক্য গুলোর মাঝে অত্যন্ত বেদনা খুঁজে পেলো সে। অতঃপর শান্ত গলায় বলল,
–ওহহ্,নো টেনশন। সামনে পরীক্ষা। আই থিংক তোমার পড়ালেখার অবস্থা বেগতিক। তাই প্রিপারেশন নেও। কাল থেকে বাসায় টিচার আসবে। তোমার নতুন শিক্ষক।
সমুদ্রের বলা বাক্যটা মেহেরের হৃদয় গহীনে আশার আলোর উৎপত্তি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। আনন্দের তার চোখ জোড়া ছলছল হয়ে উঠেছে। তার মানে সমুদ্র তাকে আর বাড়িতে পাঠাবে না। সে এখন থেকে এখানেই থাকবে সমুদ্রের কাছে! খুশিতে বিভোর হয়ে মেহের অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
–আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন না?
মেহের বলা বাক্যটা শুনে খাবারের প্লেটটা জোরে করে টেবিলের উপর রাখলো। এখনো অবধি খাবার খানিকটা অবশিষ্ট রয়েছে। লহমায় কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেহেরের মুখশ্রীতে। কটকট করে বলে উঠলো,
–আসলে পুচকিদের নিয়ে এক মহা সমস্যা। তারা কখনো অন্তরালের অনুভূতির বুঝে উঠতে পারে না। আমার সেদিনের বলা কথাগুলো জাস্ট তুচ্ছ। যাইহোক আই উইশ আমার হৃদয়ে যে বাজে অনুভূতিটা গ্রাস করে আমাকে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। যা আমাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছে তুমি হীনা আমি অসহায়! তোমার থেকে দূরে গেলে, খানিকক্ষণ তোমাকে না দেখলে অনুভূতিটা আমার হৃদয় রক্তক্ষরণে ভাসিয়ে দেয়। সেই বাজে অনুভূতিটা যেন খুবই শীঘ্রই তোমাকে আক্রান্ত করে নেই নিজের মায়াজালে।আমি প্রার্থনা করি তুমি নামক অনুভূতিতে আমার হৃদয় যতটুকু রক্ত ঝড়িয়েছে, আমার অন্তরলার যে ব্যাপক পরিমাণে বিষিয়ে তুলেছে। আমি চাই সে অন্তত বাজে অনুভূতিটাতে তোমার হৃদয় থেকে দ্বিগুণ রক্ত ঝড়িয়ে আমাকে শান্তি দেই। আমি চাই প্রশান্তি! আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো আমার চাওয়াটা যেন শেষ চাওয়া হিসেবে পূর্ণ করে দেয়। জান এতো দিনে আমার হৃদয় থেকে কতবার টপটপ করে রক্ত ঝড়েছে! হয়তো তুমি অনুভব করতে পারলে আমার মস্তিষ্কের অবস্থা বুঝতে পারতে। মস্তিষ্ক যে দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সমুদ্র। মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো।
মেহের শিউরে উঠেছে সমুদ্রের বলা প্রতিটি শব্দ শুনে। কথাগুলো তার ছোট্ট মস্তিষ্ককে বোধগম্য না হলেও তার হৃদয়ে অস্তিত্ব হচ্ছে ফলে তার স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটছে। বারংবার শুকনো ঢোক গিলছে সে। অসম্ভব অস্থিরতার স্বীকার মেহের। তৎক্ষণাৎ তার লক্ষ্য হলো সমুদ্র সম্পূর্ণ খাবার খাইনি! মুহূর্তেই তার মস্তিষ্ক কর্ম ক্ষমতা হারাতে বসেছে। সারাদিন না খেয়ে রয়েছে লোকটা। বাক্যটা বারবার তার কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনি তুলছে। অতঃপর মেহের হুট করে কম্পিত গলায় বলে উঠলো,
–আপনি খাবার শেষ করেন নি কেন? আপনার হাতে কী খুব বেশি ব্যাথা করছে?
(চলবে)
#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:৪০
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষেধ]
কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সমুদ্র।মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো।
মেহের শিউরে উঠেছে সমুদ্রের বলা প্রতিটি শব্দ শুনে। কথাগুলো তার ছোট্ট মস্তিষ্ককে বোধগম্য না হলেও তার হৃদয়ে ভীষণ অস্তিত্ব হচ্ছে ফলে তার স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটছে। বারংবার শুকনো ঢোক গিলছে সে। অসম্ভব অস্থিরতার স্বীকার মেহের। তৎক্ষণাৎ তার লক্ষ্য হলো সমুদ্র সম্পূর্ণ খাবার খাইনি! মুহূর্তেই তার মস্তিষ্ক কর্ম ক্ষমতা হারাতে বসেছে। সারাদিন না খেয়ে রয়েছে লোকটা। বাক্যটা বারবার তার কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনি তুলছে। অতঃপর মেহের হুট করে কম্পিত গলায় বলে উঠলো,
–আপনি খাবার শেষ করেন নি কেন? আপনার হাতে কী খুব বেশি ব্যাথা করছে? আচ্ছা হাত কাটলো কী করে?
মেহেরের বলা শেষোক্ত বাক্যটা কর্ণপাত হতেই সমুদ্রের ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে পড়লো সে। দেয়ালের সঙ্গে লাগানো জানালার সঙ্গে ঘেসে দাঁড়াল। অতঃপর মেহেরের প্রত্ত্যতুরে দাঁতে দাঁত চেপে অর্থাৎ কটমট করে বলে উঠলো,
–তুমি কী সত্যিই জানো না! এই হাতটা দিয়ে আমি আমার নিঃশ্বাসকে আঘাত করেছি। তাই শাস্তি দিয়েছি হাতটাকে।
সমুদ্রের কথাগুলো শুনে ছিট্টে উঠলো মেহের। লোকটা ভীষণ আত্মগ্লানি সহিত বাক্য গুলো বলেছে! কতোটা ক্রোধ মিশে থাকলে মানুষ নিজের হাতকে বাজে ভাবে ক্ষত বিক্ষত করে তুলতে পারে তা সমুদ্রের কথার মধ্যে স্পষ্ট! তৎক্ষণাৎ মেহের কেঁপে কেঁপে বলে উঠলো,
–এটা ঠিক করেন নি কিন্তু! আমি খাইয়ে দেই।
মেহেরের বলা বাক্যটা শুনে, উল্টো হতে সোজা হয়ে মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সমুদ্র। তার চোখে মুখে গম্ভীরতা স্পষ্ট! মুহূর্তেই সমুদ্রের গম্ভীর কন্ঠে ভেসে উঠলো মেহেরের কর্ণকুহরে। হঠাৎ সমুদ্র বলল,
–যেদিন আমার পুচকি বড় হবে। যেদিন আমাকে খাইয়ে দিতে গিয়ে তার হাত কাঁপবে না। সে স্বেচ্ছায় আমার ওডার ব্যতিত আমাকে ভালোবাসে খাইয়ে দিবে। সেদিন তার হাতে খাবো আমি।এখন না হয় আমি সুযোগটা মিস করি নিজ ইচ্ছেয়। আজ থেকে চাতক পাখির ন্যায় আমি অপেক্ষা করবো।
ভৎসনা নয় এ যেন এক ভিন্ন রকম আবেদন! সমুদ্র মেহেরকে বকা দিচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তার কথাগুলো অত্যধিক কঠোর। একটু স্নেহের সহিত কি সে বলতে পারে না? মেহেরের মস্তিষ্ক বর্তমানে কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এই সমুদ্র নামক লোকটা দিন যাচ্ছে আর তার মস্তিষ্কে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ফেলছে। প্রকাশ না করলেই এখনো মেহেরের হৃদয় স্পন্দন অবাধ্য হয়ে উঠেছে। সমুদ্রকে দেখলে, সমুদ্রের কন্ঠস্বর শুনলেই যেন স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটতে আরম্ভ করে। সমুদ্রের কথাগুলো তার শান্ত হৃদয়ে অশান্তর আবির্ভাব ঘটায়। তার হৃদয় মনেই সুক্ষ্ম বালুর কণার নেয় অনুভূতি জাগ্রত হয়। কেন সমুদ্র বুঝে না তার এই উদ্ভট কথাগুলোর প্রভাব যে মেহেরের অন্তরালে পড়ে!
_________
ঘড়ির কাঁটাতে ছুঁই ছুঁই একটা। রাতের অন্ধকার ডুবে রয়েছে কুয়াশার সরু চাদরে। নিকোটিনের প্যাকেট শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইয়াদ। এই ভীষণ বাজে জিনিসটা কখনো আলোতো করে ছুঁয়ে দেখেনি সে। কিন্তু আজ সে পুরো এক প্যাকেট নিকোটিনের ধোঁয়ার সঙ্গে নিজের দুঃখগুলো ওই দূর আকাশে উড়িয়ে দেবার প্রয়াস চালাচ্ছে। আচ্ছা এমন কেন হয়, কাউকে একতরফা ভালোবাসা বুঝি এতোটা কষ্টের? আচ্ছা তার সঙ্গে এমনটা কেন হলো? সে তো মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসাতো তার জেবুকে । তাহলে কেন বারংবার তার জেবু তাকে আঘাত করেছে? বাহ্যিক আঘাত হলে সে হয়তো মুখ বুজে সহ্য করতে নিতে পারতো। কিন্তু এই আঘাত তো অন্ত আঘাত। যে আঘাত কাউকে দেখানো যায় না,কাউকে বলা যায় না, আবার গলা ছেড়ে কারো সামনে কান্না করাও যায় না। এ আঘাত যে ক্ষত বিক্ষত করে তুলে বক্ষ পিঞ্জরের হৃদয় মনকে। এ আঘাত মহা বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটার ন্যায় টপটপ করে রক্ত ঝরায় হৃদয় থেকে। সে যদি কাউকে খোলসা করে বলে তাহলে লোক হাসে বেড়াবে। দুনিয়ার কোন চিৎসকের কাছেও এর রোগের উপশম নেই। এই ভীষণ মারাত্মক আঘাতটা যে লোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহকারে দেখে। এতে করে তারা আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয়। এই ব্যাথার কোন মূল্য নেই পৃথিবীর স্বার্থপর মানুষদের কাছে।
ইয়াদ আজ উন্মাদ পাগলে পরিনত হয়েছে। মধ্যে রাতে নিকোটিনের ধোঁয়ার ডুবে রয়েছে সে। কিন্তু এতে করতেও তার কষ্ট কমছে না। তার স্বল্প লালাভ বর্ণের ঠোঁট যুগল যেন এক রাতেই নিকোটিনের আয়ত্তে চলে এসেছে। ঠোঁট জোড়া পুরে গিয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করে উঠছে। তাও ইয়াদ একের পর এক নিকোটিনের আগুন জ্বালিয়ে মনের জ্বালা মেটাচ্ছে। আগুনের লালচে আলোকচ্ছটা যেমন ধীরে ধীরে পুরো নিকোটিন গ্রাস করে দহন ক্রিয়াতে যুক্ত হয়েছে ঠিক তার সঙ্গে দ্বিগুণ তাপে দহন ক্রিয়াতে যুক্ত হয়েছে ইয়াদের হৃদয়। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার। সহ্য করতে পারছে না ইয়াদ। তাই সে বিরবির করে জারাকে বলছে,
–তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ জারা। তুমি আমাকে তোমার ঠকিয়েছ। তুমি বিশ্বাস ঘাতক। সামন্য ভালোবাসা চেয়েছিলাম তোমার কাছে। চেয়েছিলাম জীবনের বাকিটা পথ তোমার সঙ্গে পারি। তোমাকে তো আমি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আবারও আমার মন নিয়ে খেলতে শুরু করলে। কি আছে তোমার প্রেমিকের মধ্যে। কী দিয়েছে সে তোমাকে? যা আমি দিতে পারি নি! আমার ভালোবাসায় কী খাদ ছিলো? তোমার পুরাতন প্রেমিক কী আমার থেকেও তোমাকে অধিক ভালোবাসে!
আমি বোধহয় কোন সাংঘাতিক পাপ করছিলাম,তাই বোধহয় আজ আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা তুমি তো পারতে, বিয়েটা ভেঙে দিয়ে নিজের প্রেমিক পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে যেতে! কেন গেলে না? কেন আমার মনে কোণে আশার আলো জ্বালিয়ে তা এক মুহুর্তেই নিভিয়ে দিলে? তোমাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না জারা। আই হেইট ইউ। আমি ভীষণ ঘৃণা করি তোমাকে। ভীষণ ভীষণ ভীষণ,,,,
—————
দরজায় কড়া ঘাতের আওয়াজ মেহেরের কণকুহরে পৌঁছানো মেহেরের নিদ্রা ভেঙে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে ঘুমান্ত চোখ জোড়া উন্মুক্ত করে ধরফড়িয়ে উঠে বসলো সে। মুহূর্তেই তার কানে ভেসে উঠলো অহনার মৃদু আওয়াজ। তৎক্ষণাৎ তার দৃষ্টি পড়ল সমুদ্রের ঘুমে আচ্ছন্ন মুখশ্রীতে। জানালা কাঁচ ভেদ করে একরাশ মিষ্টি আলোকচ্ছটা প্রতিফলিত হচ্ছে তার মুখের উপর। কিন্তু তাও সমুদ্রের ঘুম ভাঙার নাম গন্ধ নেই। বোধহয় কাল সারা দিন হতে মধ্য রাত অবধি পরিশ্রম করে বেশ ক্লান্ত সে। রাতের মেহেরের পূর্বে ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েছিল সমুদ্র। উল্টো পাল্টা কথা বলে মেহেরের চোখ জোড়া হতে নিদ্রা কেড়ে নিয়ে আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিল সমুদ্র। চোখের পাতা ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত মেহেরের মস্তিষ্ককে বারংবার প্রতিধ্বনি তুলছে। না চাইতেই সমুদ্রের কথাগুলো মেহেরের কীশরী মনে অজান্তেই গেঁথে গিয়েছে।
বর্তমানে লজ্জা, সংকোচ ত্যাগ করে ফিসফিস করে সমুদ্রের ডেকে চলেছে মেহের। তার বড্ড ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজ অহনা ইচ্ছে মতো সমুদ্রকে কথা শুনাবে সঙ্গে হয়তোবা তাকেই।
–অহনা আপু এসে পড়েছে। আপনি উঠবেন না।
মেহেরের কম্পমান কন্ঠেসর শুনে বেশ বিরক্তের সহিত ঘুম থেকে উঠে পড়ে সমুদ্র। অতঃপর বিছানায় সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— ওপেন দা ডোর।
সমুদ্রের কথা শুনে মেহের থতমত হয়ে পড়ে। অহনা এসে নিশ্চিত তাকে খারাপ ভাববে। তাই মেহের নিম্ন কন্ঠে সমুদ্রকে বলে উঠে,
–আপু কী ভাববে?
মেহেরের বলা বাক্যটা সমুদ্রের কর্ণপাত হতেই তার মুখ হাতে বিরক্তির ‘চ’ শব্দ নির্গত হয়। অতঃপর সমুদ্র পুনরায় বলে উঠে,
–পুচকি তোমাকে আমি বেশি ভাবতে নিষেধ করেছি। গো,,
তৎক্ষণাৎ মেহেরের ধীরগতিতে,,,
(চলবে)
[রিচেক দেইনি। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]