তুমি বললে আজ পর্ব-২৭+২৮

0
575

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ২৭.

.
প্রিয় মানুষটার হাত ধরে পাশাপাশি চলতে পারাটা সবার ভাগ্যে হয় না। যাদের হয় তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। আর আমি? আমিও হয়তো সেই ভাগ্যবাদের কাতারে নিজের নামের একাংশ লিখে ফেলেছি। হ্যাঁ, তাসফি নামটার সাথে আজকের পর থেকে গভীরভাবে নিজের নামটা মিশিয়ে ফেলেছি। জড়িয়ে নিয়েছি নিজের সাথে।

দুপুরের কিছুটা আগেই বাসায় চলে এসেছি তাসফি ভাইয়ের সাথে। বাসার সবার ভাবভঙ্গি দেখে কিছুটা অবাকও হয়েছিলাম। কেউ কোন প্রশ্ন বা কোন কথা তুলে নি আমাদের বাইরে থাকার বিষয়টা নিয়ে। অবাকের রেশ ধরে তাসফি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই উনি নিঃশব্দে হেঁসেছিলেন। তারপর শুরু হয়েছিলো অত্যাচার, কাজিন মহলের অত্যাচার।
বড়রা কিছু না বললেও বজ্জাত কাজিন মহলের হাত থেকে কিছুতেই ছাড় পাই নি। তাসফি ভাইয়াকে কিছু না বলে, একের পর এক খোঁচা দিয়েই গিয়েছিলো আমাকে। আর মি. বজ্জাত তাসফি সবার সাথে তাল মিলিয়ে মজা নিচ্ছিলেন আমার। সবার এত এত খোঁচা দেওয়ার মাঝে কারোর নজরে না এলেও রিফাপুর ঠিকই নজরে এসেছিলো আমার গলার ভাঁজে লালচে দাগগুলো। সময় না নিয়েই তড়িৎ গতিতে তাসফি ভাই ও আমাকে উদেশ্য করে বলে উঠেছিলো,
“বনু এটা কিন্তু একদম ঠিক করলি না তোরা। আজ বাদে কাল আমার বিয়ে, অথচ তোরা বাসর সেরে আসলি? এটা কিন্তু আমার সাথে না-ইনসাফি করলি।”

রিফাপুর কথায় থমকে গিয়েছিলাম এক মুহুর্তের জন্য। চমকে উঠে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম তাসফি ভাইয়ের দিকে। বাকিরাও ততক্ষণে চুপ হয়ে গিয়েছিলো রিফাপুর কথায়। আমার তাকানো তে উনি হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন, সবার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে রিফাপুকে বলেছিলেন,
“দূর কিসব বাজে বকছিস রিফা? কিসের বাসর? বউকে তো বিয়ে করে ঘরেই তুলতে পারছি না, বাসর তো অনেক দূর। তোরা আসলেই মীরজাফরের বংশধর।”

“সেটা তো দেখতেই পারছি তাসফি ভাই। আহা্! বনুটা আমার সারা গায়ে লাল নীল ভালোবাসার চিহ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর ভাইটা আমার বউয়ের জন্য আফসোস করে ম*রছে। এটা কেন কথা?”

আরেক দফায় চমকে উঠলাম রিফাপুর কথায়। সাথে সাথে গায়ের ওড়না টেনে ভালোভাবে জড়িয়ে নিলাম গলায়। এদিকে খুক খুক করে কেশে উঠলেন তাসফি ভাই, ছোট ভাইবোনের সামনে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো যেন। বাকিরা শব্দ বিহীন হেঁসে উঠলো, যা চোখ এড়ালো না আমার। হাজারো অস্বস্তি, লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছিলো যেন। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে শ্বাস টেনে নিলাম জোরে করে, তারপরই কোন দিকে না তাকিয়ে এক ছুটে চলে আসি নিজের রুমে।

.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল এখন, কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নামবে। তখন রুমে আসার পর আর বাইরে যাওয়া হয় নি আমার। আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। রাতে ঠিকভাবে না ঘুমানোর ফলে ঘুমটাও গাড়ো হয়ে উঠেছিলো। বেশ কিছু সময় আগে ঘুমটা ভাঙলেও অলস ভঙ্গিতে শুয়ে আছি বিছানায়। ভেবে চলেছি কালকে থেকে তাসফি ভাইয়ের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্ত। হাতে হাত রেখে বহুদূর একসাথে পারি দেবার কিছু স্বপ্ন, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত একসাথে পথ চলার একমুঠো ভরসা।

দরজায় নক করার শব্দে নিজের ভাবনা গুলো ছুটে গেল। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে দরজার দিকে তাকালাম, বোঝার চেষ্টা করলাম কে হতে পারে দরজার অপর পাশে। আমার ভাবনার মাঝে আবারও বেশ শব্দ করে দরজা ধাক্কা দিলো, ভেবে আসলো তাসফি ভাইয়ের গলা। ওনার গলা শুনে ভাবলাম কিছুতেই দরজা খুলবো না, ওনার সামনে পরে আর কিছুতেই লজ্জায় পরবো না। কিন্তু আমার ভাবনাকে দূরে ঠেলে এবার ধমকে উঠলেন যেন। উপায় না পেয়ে তড়িঘড়ি করে নেমে গেলাম বিছানা ছেড়ে, দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।

“ভাবলাম ম*রে টরে ছিলি নাকি। এতক্ষণ কি করছিলি? দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে? বেয়াদব!”

শান্ত সুরে কথাটা বললেও শেষ কথাটা বেশ জোরেই বলে উঠলেন। ওনার ধমকে চমকে উঠলাম কিছুটা। আমতা আমতা করে বললাম,
“না… মানে আমি তো….”

“কি না মনে… না মানে করছিস? সামনে থেকে সর, বেয়াদব!”

ওনার আরেক দফা ধমকে সাথে সাথে সরে গেলেন দরজার সামনে থেকে। উনি সময় না নিয়ে রুমে ঢুকে গেলে। হাতের ব্যাগ গুলো বিছানায় রাখতেই এগিয়ে এলাম। বললাম,
“কি এগুলো? এতগুলো ব্যাগ কেন? কিসের এগুলো?”

জবাব দিলেন না উনি, ব্যাগ গুলো রেখেই দরজার কাছে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। বিছানার কাছে এগিয়ে আসতেই আবারও জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হলো, বলছেন না কেন? কি আছে এতে, কার জন্য?”

“তোর জন্য সব, কি আছে নিজেই দেখে নে।”

অবাক প্রচন্ড। এতগুলো শপিং ব্যাগে আমার জন্য আবার কি থাকতে পারে? অনেকটা কৌতুহল নিয়ে একটা ব্যাগ থেকে ভেতরের থাকা জিনিসটা বের করতেই আরও অবাক হলাম। শাড়ি? আর সেটাও আমার জন্য? আরেকটা ব্যাগ খুলতেই আবারও একটা শাড়ি বেরিয়ে এলো। অবাক হয়ে তাসফি ভাইয়ের দিকে তাকালাম, পাত্তা দিলেন না উনি। ওনার থেকে চোখ ফিরিয়ে আরেকটা ব্যাগ খুললাম, এবার বেরিয়ে এলো জামা। প্রচন্ড অবাকের রেশ ধরে একে একে সবগুলো ব্যাগে রাখা জিনিসগুলো বের করলাম। এতকিছু দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলাম যেন। শাড়ি, জামা এত এত চুড়ি সহ একগাদা জিনিস দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলাম যেন। বিষ্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলাম জিনিস গুলো দিকে। তাসফি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অবাকের রেশ ধরেই বললাম,

“এগুলো আমার জন্য?”

জবার দিলেন না উনি। কিছু না বলে আমার হাত টেনে নিয়ে ছোট একটা প্যাকেট একটা ধরিয়ে দিলেন হাতে।

“এগুলো আবার কি?”

বলতে বলতেই হাতের প্যাকেটটা খুলে ফেললাম। বেরিয়ে এলো কয়েকটা ওষুধ। বুঝতে পারলাম না ঠিক কিসের ওষুধ এগুলো। ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি বললেন,
“মেডিসিন গুলো খেয়ে নে।”

“কিসের মেডিসিন এগুলো?”

“সকালে পাইনি মেডিসিন গুলো, তাই এখন নিয়ে আসলাম। জ্বরের, ব্যাথার আর….”

“কিসের?”

“খেতে বলছি খা, এত কথা বলছিস কেন? বেয়াদব!”

“আজব তো, এমন ধমকাচ্ছেন কেন? বললেই তো হয়।”

“বললেও তোর এই মস্তিষ্ক বিহীন মোটা মাথায় কিচ্ছুটি ঢুকবে না। কথা না বলে মেডিসিন গুলো খেয়ে নে, কোন রিক্স নিতে চাইছি না।”

এবার আর কথা বাড়ালাম না, কিছুটা আন্দাজ করে নিলাম বাকি ওষুধটা ঠিক কিসের হতে পারে। কিছু না বলে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেলাম, পানির বোতল নেবার জন্য। যেখানে সেখানে জিনিস পত্র রাখা আমার বদঅভ্যেস বলা যা। ঠিক তেমনি পানির বোতলটাও রেখেছি ড্রেসিং টেবিলের উপর।
হাতের প্যাকেটটা রেখে পানির বোতল হাতে নিতেই পিছনে অনুভব করলাম কারোর অস্তিত্ব। সেই কেউটা যে কে, সেটা বলার ইয়ত্তা রইলো না। কিছুটা অবাক হয়ে ‘কি হয়েছে’ বলে পিছন ফিরতে নিলাম, তার আগেই উনি হাতের বাহু ধরে আঁটকে দিলেন। বেনি করা চুলটা সামনে দিয়ে কিছু একটা পড়িয়ে দিতে লাগলেন গলায়। সামনের আয়নায় তাকাতেই বুঝতে পারলাম ছোট একটা লকেট। ওনার পড়ানো শেষ হলে লকেটে হত রেখে পিছন ফিরে ওনার দিকে তাকালাম। বললাম,

“এটা কি? জানেন তো এসব আমার ভালো লাগে না, কি সব লাভ সেপের লকেট আনছেন। এসব লাভ টাভ আমি গলায় ঝুলিয়ে রাখবো?”

কপাল কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“চোখ খুলে দেখ আগে, বেয়াদব!”

“কি দেখবে? এটা তো আ….”

লকেটটা ভালোভাবে দেখে আবারও অবাক হলাম। যেটা ভেবেছিলাম সেই ধারণাটা যেন মুহুর্তেই পাল্টে গেল আমার। ছোট্ট একটা লকেটে ‘RT’ শব্দে অসাধারণ একটা ডিজাইন করা। যা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে সহসায় কেউ ধরতে পারবে না। অবাকের রেশ ধরে ওনার দিকে তাকালাম। উনি গলায় হাত বারিয়ে বললেন,
“খুলবি? দে আমাকে দে, আমি খুলে দিচ্ছি।”

“না…. খুলবেন কে?”

“বাহ্ রে, তোর না পছন্দ হয় নি? এসব গলায় ঝুলে রাখতে পারবি না, তাহলে? আয় এদিকে।”

“কে বলছে আপনাকে? বেশ পারবো। একদম খোলার চেষ্টা করবেন না বলছি।”

হেঁসে উঠলেন তাসফি ভাই। আমার দিকে আরও একটু এগিয়ে এসে দূরত্বটা ঘুচিয়ে দিলেন। বললেন,
“নিজেও করবি না। একদম চেষ্টা করবি না আমার নামের বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্তি করতে।”

“উহুঁ!”

বলেই ফট করে জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। চোখ দুটো সহসায় ভিজে উঠলো। চার বছরের এতএত অভিমানের পাহাড় ডিঙিয়ে এই অবাধ্য ভালোবাসার অনুভূতি কি আমার সত্যিই আমার কপালে ছিলো? না-কি এ সবটাই গত চার বছরের প্রতিটি রাত দিনের মতো শুধুই মাত্র স্বপ্ন?
মিনিট দুয়েক পর সরে আসলাম ওনার থেকে। আস্তে করে বললাম,

“কবে এনেছেন এটা? দেখে তো স্বর্ণের বলে মনে হচ্ছে।”

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালেন, বোঝালেন যেটা বলছি সেটাই। বললেন,
“ফ্লোরিডায় থাকাকালীন বানিয়ে নিয়েছি। শুধুমাত্র আমার রুপুসোনার জন্য।”

“আর ওগুলো?”

“ওগুলোও! আসার পর তো কেউ একজন আমাকে পাত্তা দিতো না। সারাক্ষণ পালাই পালাই করতো। অভিযোগ নিয়ে থাকা অভিমানী মেয়েটাকে তখন তার ভালোলাগার জিনিস গুলো দিতে পারি নি। তাই আজকে দিলাম।”

আবারও একদল আপরাধের বাসা বাঁধলো মনে। ওনার দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বললাম,
“সরি! তখন তো আপনার প্রতি রাগ করে….”

“উহুঁ! এসব সরি টরি তে আমার চলবে না। অন্য কিছু লাগবে।”

“কি…”

ফট করে কোমরে এক হাত দিয়ে আমাকে টেনে নিলেন। মাথা ঝুঁকিয়ে এনে বললেন,

“উহুঁ! বলবো না, দেখাবো।”

.
হৈ হুল্লোড়, আড্ডা, হাজারো কাজের ব্যাস্ততার মধ্য দিয়েই কেটে গেল আরও দু’টো দিন। এগিয়ে এলো রিফাপুর হলুদের দিন। বাকি দিনগুলোর থেকে আজকের ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়ে গেছে। সকাল থেকেই সবাই নিজেদের দ্বায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আত্মীয় স্বজনে বাসায় পা রাখার জো নেই যেন। বিরক্তিতে ঘিরে ধরলোও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রাখতে হচ্ছে।

বহু কষ্টে পড়নের শাড়িটা সামলে নিচে নেমে আসলাম। রিফাপুকে বেশকিছু সময় আগেই হলুদ দেবার জন্য বসানো হয়েছে। তখন থেকেই চলছে একের পর এক ফটোসেশান। টেজের কাছে যেতে যেতে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে চাইলাম। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম সেই কেউটা মি. বজ্জাত তাসফি নামক ব্যাক্তি। ভেবেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোণে। আবারও তাকিয়ে ওনাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। হাসি মুখটা কালো মেঘের মতো ঘন ঘটায় ঢেকে গেল। সকাল থেকে মানুষটাকে একটা নজর দেখতে পাইনি, কথাটা ভেবে আরও চুপসে গেল মুখটা। এত কষ্টে যার জন্য একটু সাজলাম, ওনার দেওয়া শাড়িটা গায়ে জড়ালাম তাকেই এতক্ষণে দেখাতে পারলাম না, আর না সেই মানুষটার এক নজর দেখা পেলাম।
অভিমানী স্বত্বা আবারও বাসা বেঁধে উঠলো মনে। অভিমানী কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘একদম ভাববি না তার কথা, মাথাতেও আনবি না। সে তো একটিবার দেখা দিলো না, সারাদিনে খোঁজও নিলো না। তাহলে তুই কেন খুঁজছিস তাকে?’

মনের কথাগুলোকে সায় দিলাম, আবারও দু’হাতে শাড়িটা সামলে এগিয়ে যেতে লাগলাম সামনের দিকে। হঠাৎই বাঁধ প্রাপ্ত হলো আমার হাতে শক্তপোক্ত হাতের বাঁধনে। পিছন ফিরে তাকানোর আগেই ভেসে আসলো তাসফি ভাইয়ের কণ্ঠস্বর।

“তুমি আমার প্রতিটা ভাবনার একমুঠো সুখ। তুমি আমার আঁধার রাতের ভালোবাসার অসুখ।”

বলার মাঝেই নিজের কাছে টেনে নিলেন আমাকে, বুকের সাথে আমার পিঠ ঠেকিয়ে নিলেন কিছুটা। ঈষৎ কেঁপে উঠলাম আমি, কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই উনি আবারও বলে উঠলেন,

“সেদিনের করা ভুলটা আবারও হয়ে যাবে বউ, এমতাবস্থায় তোমাকে দেখে নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পরেছে আমার জন্য। অ্যাই এম ফিনিশ রুপুসোনা, অ্যাই এম ফিনিশ!”

.
.
চলবে…..

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ২৮

.
“তাসফি ভাইয়া… আরে, কি হলো আপনার? এভাবে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন?”

হুট করে হলুদের জায়গা থেকে কোথাও টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন উনি। চমকে উঠলাম কিছুটা। জিজ্ঞেস করলেও কোন উত্তর পেলাম না ওনার থেকে। কোন ভাবান্তর হলো না ওনার, প্রতিত্তোরেও কিছু বললেন না। অনেকেই আড়চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ওনাকে আবারও বললাম,

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা তো বলবেন নাকি? সবাই তাকিয়ে আছে তো তাসফি ভাইয়া।”

“চুপ, বলছি না তোকে, ভাই ডাকার অভ্যস চেঞ্জ করতে। গাধীর মতো ভাই ভাই ডেকে মুখর ফেনা তুলছিস কেন? বেয়াদব!”

কিছুটা ধমক দিয়েই বললেন উনি। চুপ হয়ে গেলাম ওনার ধমকে। একহাতে শাড়ি সামলিয়ে হাঁটতে লাগলাম ওনার সাথে তাল মিলিয়ে, কিন্তু পারলাম না। বারংবার মনে হতে লাগলো এই বুঝি শাড়িটা খুলে একাকার হয়ে গেল। আরও দু’কদম পা বাড়াতেই নিজের হাতটা টেনে নিলাম। বললাম,

“এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? শাড়িটা এখুনি খুলে যাবে হয়তো, প্লিজ ছাড়েন না।”

থেমে গেলেন এবার তাসফি ভাই। আমাকে একবার দেখে নিলেন। বললেন,
“আস্তে আস্তে চল।”

“এতক্ষণ আসামিদের মতো টেনে নিয়ে আসলেন, আর এখন বলছেন আস্তে চল? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে, বলতে পারছেন না?”

“কোথাও না, এখানেই।”

চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। অর্ধ চাঁদের আবছায়া আলোয় বুঝতে পারলাম বাসার আশেপাশে ছেড়ে বাসার উল্টো পাশের রাস্তায় নিয়ে এসেছেন এতক্ষণে। সন্ধ্যা রাত হলেও মানুষের আনাগোনা একদমই নেই উল্টো পাশের রাস্তা হওয়ায়। চারপাশটা একদম নির্জীব শুনশানে পরিণত হয়ে আছে। এখানে নিয়ে আসায় অবাক হলাম কিছুটা। বললাম,
“এ..এখানে কেন এসেছেন? রিফাপুর হলুদ শুরু হয়ে যাবে তো এখুনি, আপুকে হলুদ দিবো না? চলেন।”

এক পা বাড়াতেই হাত টেনে কাছে টেনে নিলেন আমাকে। ওনার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত চোখে চোখ দু’টো নিবদ্ধ করলেন আমার দিকে। বেশ কিছুটা সময় একই ভাবে তাকিয়ে থাকায় কেমন যানি অস্বস্তি হতে লাগলো। এলোমেলো ভালে চোখের পলক ফেলে মিনমিনে গলায় বললাম,
“কিক্…কি হয়েছে? কি দেখছেন এভাবে?”

“তোমাকে!”

“এভাবে দেখার কি আছে?”

প্রতিত্তোরে কিছু না বলে একই ভাবে তাকিয়ে রইলেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে এলোমেলো ভাবে পলক ফেলতে লাগলাম শুধু। ওনাকে ছাড়িয়ে চলে আসতে চাইলে আবারও আঁটকে দিলেন। দু’হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলেন।
এবার কিছুটা বিরক্ত হলাম ওনার কাজে। কথা নাই বার্তা নাই হুট করে এখানে নিয়ে এসে তখন থেকে শুধু তাকিয়েই আছেন। এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি? প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে উঠলাম,

“জানি তো আমাকে সুন্দর লাগছে, তাতে এভাবে দেখার কি আছে? এত সুন্দর করে সেজেছি, শাড়ি পরেছি সুন্দর তো লাগবেই।”

“কে বলেছে, তোকে সুন্দর লাগছে?”

“কেন? আপনি! এভাবে তাকিয়ে আছেন সুন্দর লাগছে বলেই তো।”

“কখন বললাম সুন্দর লাগছে? তোকে দেখতে একদমই সুন্দর লাগছে না রুপু।”

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললেন। ওনার কথায় আরও অবাক হলাম আমি। সাথে কিছুটা অভিমানও ভীর জমালো মনে। কপাল কুঁচকে চাঁদের আবছায়া আলোয় তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। বললাম,
“সুন্দর লাগছে না?”

“উহুঁ! লাগছে না।”

“এত কষ্ট করে সাজলাম আপনার জন্য, আর আপনি বলছেন সুন্দর লাগছে না?”

ওনার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা আরও প্রসস্ত হলো আমার কথায়। একহাতে গাল ও কানের পিছে রেখে মুখটা তুলে নিলেন ওনার দিকে। আস্তে করে বললেন,
“আমার জন্য সেজেছো?”

কিছুটা অভিমানী হয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে না বললাম। উনি এবার কিছুটা শব্দ করে হাসলেন। একটু ঝুঁকে এলেন আমার দিকে।

“সুন্দরের সংজ্ঞা হয়, বর্ণনা হয়, বৈশিষ্ট্য হয়। কিন্তু কিউট…. কিউটনেসের কোন সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য বা বর্ণনা হয় না রুপু। তাহলে আমার রুপুসোনা কে কিভাবে সুন্দর বলবো?”

বলেই একটু থামলেন। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বললেন,
“আমার রুপুকে তো কিউট লাগছে, যার কোন সংজ্ঞা নাই, বর্ণনা নাই। শুধু এক কথায় যাকে কিউট বলে। যে কিউটনেসে শুধু আদর আদর পায়, বেহিসেবী চুমু খেতে মন চায়, সারাক্ষণ শুধু এভাবেই নিজের মাঝে বেঁধে রাখতে ইচ্ছে হয়।”

এতটুকু সময় নষ্ট না করে জড়িয়ে ধরলেন নিজের সাথে। আচমকা জড়িয়ে ধরায় কেঁপে উঠলো আমার শরীর। বুকের টিপটিপ শব্দের প্রতিধ্বনি হয়ে উঠলো। সবকিছু মিলিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি হতে লাগলো যেন, মাথায় ঘুরতে লাগলো ওনার বলা কথাগুলো। এভাবেও যে অনুভূতির প্রকাশ হয় সেটা জানা ছিলো না আমার। এই মানুষটা আসলেই অদ্ভুত, তার ভালোবাসার ধরণটাও অদ্ভুত, আর ভালোবাসি না বলেও তা প্রকাশ করাও অদ্ভুত।
.
.
তাসফি ভাইয়ের দেওয়া জিনিসগুলো বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। একবার শাড়ি, একবার জামাগুলো নেড়ে নেড়ে দেখে চলেছি তখন থেকে। দেখছি না, বোঝার চেষ্টা করছি কি পড়বো, শাড়ি না-কি জামা। পড়লেও কোনটা পড়বো?
রিফাপুকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয় নি, পার্লারের আপুদের কেই বাসায় আনা হয়েছে। যেন রিফাপুর সাথে বাসার বাকিরাও সাজতে পারে। রিফাপুকে সাজানোর পর বাসার ছোট বড় সবার সাজার সিরিয়াল পরে গেছে যেন। একমাত্র আমিই চলে এসেছি নিজের রুমে। কেন জানি ওসব কৃত্রিম জিনিস দিয়ে নিজের চেহারা ও চুলের প্রতি অত্যাচার করতে মন সায় দেয় না। ভাবলাম যদি শাড়ি পড়ি তবেই পার্লারের আপুদের থেকে শাড়িটা শুধু পড়ে নিবো।
তাসফি ভাই দুইটা শাড়ি আনলেও জামা এনেছেন একাধিক। সাথের চুড়ি ও কানের ঝুমকো গুলোও একদম ম্যাচিং ম্যাচিং, সেই সাথে হরেক রকমের একগাদা চকলেট। আপাতত সেগুলো নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। সমস্যা হলো কি পড়বো সেটা নিয়ে। কাজিন মহলের সবার শাড়ি পড়তে দেখে শাড়ি পড়ার ইচ্ছেটা তীব্র হচ্ছে, আবার কালকে রাতে শাড়ি পরেছি বলে এখন জামা পরার লোভ সামলাতে পারছি না।

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো সবাই যেহেতু ব্যস্ত আছে, তাহলে তাসফি ভাইকে তো জিজ্ঞেস করা যেতেই পারে। তাহলেই তো একটা সমাধান পেয়ে যাবো। পরক্ষণেই ভাবলাম না থাক, তার কোন প্রয়োজন নেই। দেখা যাচ্ছে ওনার থেকে জনাতে গিয়ে ধমকে ধামকে শেষ করে ফেলছেন আমাকে, সেই সাথে ওনার বজ্জাত মার্কা কথাবার্তা গুলো কিছুতেই হজম করতে পারবো না। বজ্জাত লোকটাকে কোন ভাবেই বিশ্বাস নেই। তার চেয়ে বরং আমি নিজেই ভেবে নেই।
আরও আধা ঘন্টা সময় নিয়ে শাড়ি না পড়ে জামা পড়ে নিলাম। গত রাতের কথাটা হঠাৎ মাথায় আসতেই জামা পড়তেই মনকে সায় জানালাম। কোন মতোই ওনাকে বিশ্বাস নেই, দেখা যাচ্ছে গত রাতের মতো হুট করে কোথাও টেনে নিয়ে গিয়ে অর্ধেক অনুষ্ঠান শেষ হলে তবেই ফিরে আসছে।

সময় না নিয়ে পুরোপুরি রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম রুম ছেড়ে। রুম ছেড়ে বেড়িয়ে রিফাপুর রুমে উঁকি দিলাম। এখনো আমার কয়েকটা কাজিন সাজগোজে ব্যস্ত। রিফাপুর পাশে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে হতাশার নিশ্বাস ছাড়লাম। ওদের দেখে কেন জানি নিজেরই বিরক্ত লাগছে এখন। আমার সাজতে বরাবরই ভালো লাগলেও এত হাবিজাবি সাজটা ভীষণ বিরক্তির। আমার বিরক্তি ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হেঁসে উঠলো রিফাপু। কপাল কুঁচকে রিফাপুকে বললাম,

“হাসছো কেন তুমি? ওদের দেখে ভীষণ বিরক্ত লাগছে আমার। মনে হচ্ছে তোমার নয় ওদের বিয়ে। হু!”

“তোর তো না সাজলেও চলে রূপা। এমনিতেই সুন্দরী, তারপর উপর একজন তো তোর পিছনে লেগেই আছে, সারাক্ষণ চোখে হারাচ্ছে। তোর আর কি? সুন্দরী মানুষ, যত চিন্তা তো আমাদের।”

চাচাতো বোন কথাটা বলতেই সবাই হেঁসে উঠলো। তাসফি কথাটা উঠতেই কিছুটা লজ্জা পেলাম যেন।পার্লারের আপুরা তাকিয়ে থাকায় কিছুটা বৃদ্ধি পেল। কথা পাল্টে বলে উঠলাম,
“হু! থাম তোরা, তাড়াতাড়ি সাজটা শেষ কর। ভাইয়ারা কিন্তু এখুনি চলে আসবে।”

দুপুর গড়িয়ে প্রায় দুপুর ও বিকেলের মাঝামাঝি এখন। মিনিট পনেরো যেতেই খবর এলো সাদিক ভাইয়ারা চলে এসেছেন। রিফাপুকে রুমে রেখেই সবাই নিচে চলে আসলাম।
নিচে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম তাসফি ভাইকে। সকালের পর একবার শুধু দেখা হয়েছিলো ওনার সাথে। কথা বলতে গেলে বলেছিলেন ‘ভীষণ ব্যস্ত আছি রুপু, তুই রিফার সাথে থাক এখন কথা বলারও সময় নেই।’
তারপরই আবারও ব্যস্ত হয়ে পরেছিলেন নিজের কাজে। আমিও আর ওনাকে বিরক্ত করি নি। কিন্তু এখন? মানুষটা কি রেডি হয়েছেন কি না, সেটাও জানি না। নিচে আসার আগে ওনার রুমেও উকি দিয়ে পাই নি।
আবারও এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে দেখতেই গত রাতের ওনার করা কর্মকাণ্ডের কথা মনে পরে গেল। সাথে সাথে নিজের চোখ দুটো সামলে নিলাম। বাকিদের সাথে এগিয়ে গেলাম নতুন জামাইকে আপ্যায়ন করতে, সাথে গেইট আঁটকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে।

দু’পক্ষের বেশ হৈচৈ–য়ের মধ্যেই গেইট আঁটকানোর কার্যক্রম শেষ হলো। সাদিক ভাইয়াকে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো। সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো বরপক্ষের সবাইকে আপ্যায়ন করতে। এতকিছুর মাঝে তাসফি ভাই কে নজরে এলো না আমার। কাউকে জিজ্ঞেস করারও সাহস করতে পেলাম না। কাউকে ওনার কথা জানতে চাইলেই খোঁচানো শুরু হয়ে যাবে। নিজের এদিক ওদিক খুঁজলেও পেলাম বা ওনাকে। অবাক হলাম কিছুটা। মানুষটা গেল কোথায়? কই কোথাও তো নেই। প্রায় সব জায়গাতেই তো দেখা শেষ।

এতকিছুর মাঝে হঠাৎ ওনাকে ফোন করার কথা মাথায় এলো। সময় নষ্ট না করে কল দিলাম ওনাকে। দু’বার রিং হবার পরেও রিসিভ করলেন না। তৃতীয়বারে আবারও কল দিলপ কেটে দিলেন উনি। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেই কল দিলেন। রিভিউ করেই সময় নিলাম না আমি। সাথে সাথেই বলে উঠলাম,
“হ্যালো! কোথায় আপনি? কি করছেন?”

“আমি সাদিকের এখানে আছি রুপু। কেন, কিছু লাগবে?”

“হু! লাগবে তো, আপনাকে লাগবে।”
বলতে চেয়েও বললাম না। বরং কিছুটা অবাক হলাম। একটু আগেই তো সাদিক ভাইয়ার ওখানে দেখে আসলাম। কই? তখন তো ছিলেন না উনি। ওনাকে বললাম,
“একটু আগেই তো ওখানে দেখলাম, তখন তো ছিলেন না?”

“বন্ধুরা আসছে ওদের সাথেই আছি। ওরা ডাকছে আমাকে রুপু। ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলছি। রাখলাম।”

“কিন্তু আপনি…. ”

আমার কথাটা শেষ না হতেই ফোন রেখে দিলেন তাসফি ভাই। কি এতটা ব্যস্ত আছেন যে কথা শেষ না হতেই ফোন রেখে দিলেন? মনে মনে কিছুটা অভিমান এসে ভীড় জমাতে চাইলেও তা আমলে নিলাম না। বরং এগিয়ে যেতে লাগলাম সাদিক ভাইয়ার ওখানে। মানুষটা সেই সকাল থেকে কাজ করেই যাচ্ছেন, সাহিল ভাইয়ারা ঠিক কি করছে সেটাই বুঝতে পারলাম না। ওরা সবাই থাকতে ওনাকেই বা এত ঝামেলা নিতে হবে কেন?

মনে মনে বজ্জাত লোকটাকে হাজারো বকা দিতে দিতে এগিয়ে এলাম। টেইজের দিকে চোখ পরতেই নজরে এলো সাদিক ভাইয়াকে ঘিরে অনেক কয়েকজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ গল্পে মসগুল হয়ে আছে সবাই। তাসফি ভাইয়ের দিকে চোখ পরছেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। একটু আগে ওনাকে বকা দেওয়ার কথাগুলোও বেমালুম ভুলে গেলাম। সময় নিয়ে যে এতএত কাজের মাঝেও উনি রেডি হয়েছেন এটাই অনেক।

হাসি মুখে এগিয়ে যেতে লাগলাম সামনের দিকে। কিছুটা এগিয়ে যেতেই হঠাৎ পা দু’টো থমকে গেল যেন, মিলিয়ে গেল ঠোঁটের হাসিটা। বিস্মিত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম তাসফি ভাইয়ের হাত জড়িয়ে রেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানবী–টাকে। সামনে তাকিয়েই মুখ ফুটে অজান্তেই বেরিয়ে এলো আমার জীবনের সেই অপ্রিয় ‘কিয়ানা’ নামটি। এই মানুষটাকে আজকে এভাবে, এখানে কিছুতেই প্রত্যাশা করি নি আমি। প্রত্যাশা করি নি তাসফি ভাইয়ের হাত ধরে তার সাথেই হেঁসে হেঁসে কথা বলাটা।
হঠাৎ বুকের বা পাশে কেমন জানি চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো চার বছর আগের কিছু অপ্রিয় ঘটনা।

.
.
চলবে…..

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।