তুমি বললে আজ পর্ব-৩৭+৩৮

0
602

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ৩৭.

.
চারদিকে হৈ-হুল্লোড় হাসি মজায় সবাই মেতে থাকলেও আমার মনে ভীষণ কালো মেঘ। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রাখলেও মনটা বিষন্নতায় ঘেরা। আজকে তাসফি ভাই ও আমার হলুদ। ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাবার তীব্র উত্তেজনা কাজ করার কথা থাকলেও তার কোনটাই আমার মাঝে নেই। শুধু জমা হয়ে আছে একরাশ অভিযোগ।
হ্যাঁ! সেদিন রাতে ওনার সাথে কথা বলার পর আবারও নতুন ভাবে অভিযোগের খাতা খুলে গেছে ওনার প্রতি। আমাদের অনাগত সন্তানের দায়িত্ব পালন করলেও আমার দ্বায়িত্ব থেকে বেড়িয়ে যেতে চান উনি। তাহলে ওনার জীবনে আমার আগমন শুধুমাত্র বাচ্চাটার জন্যই? কিন্তু আমি তো সেটা চাই নি। ওনার সাথে ভালোবাসাময় ছোট্ট একটা সংসার শুরু করার বাসনা ছিলো। কিন্তু সবকিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেল।

আমার এতকিছু ভাবনার মাঝেই রিমি আপু রিফাপু সহ অনেকেই এলো আমাকে নিয়ে যেতে। সবার সাথে হাসিমুখে আমিও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেলাম। সেদিন রাতে আমাকে কথাগুলো বলেই বেরিয়ে যান তাসফি ভাই। সবাইকে গিয়ে বলেন, উনি বিয়েটা করতে চান, আর সেটাও এক সপ্তাহের মধ্যে। তখন ওনার কথাটা মেনে নেয় সবাই, এক সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহের মাঝেই সমস্ত আয়োজন করে ফেলেন। তাসফি ভাইয়ের কথাগুলো শোনার পর এই বিয়েটা করার ইচ্ছেটা কোন কালেই ছিলো না আমার। কিন্তু পরিবারের সবার হাসিমুখ আর এত এত আয়োজন দেখে না করতে পারি নি। নতুন সদস্য আসার আগমনে সবার মুখে অন্য রকম এক তৃপ্তির হাসিটা নষ্ট করতে চাই নি।

সবার হাসি মজার মাঝেই হলুদের অনুষ্ঠান কেটে গেল। কাজিন মহলের সবাই তাসফি ভাইকে নিয়ে নানান কথায় মজা নিতে লাগলো আমার। অন্য সময় ওদের কাথায় রাগ আর লজ্জা পেলেও আজকে তার কোনটাই অনুভূত হলো না। মন ও মস্তিষ্কে সারাক্ষণ শুধু একটা কথায় ঘুরতে লাগলো, এর পর কি হবে? আমাদের অনাগত সন্তানের জন্য আমার দ্বায়িত্ব পালন করলেও, আমার প্রতি ওনার সেই আগের অনুভূতিটা ফিরে আসবে? না-কি ওনার কথা মতোই মিলিয়ে যাবে আমার প্রতি ওনার সমস্ত অনুভূতি?

.
“সাইনটা করে দে বনু, এতটা ভয় পাচ্ছিস কেন?”

হালকা মাথা তুলে তাকালাম রিফাপুর দিকে। চোখের ইশারায় বলতে চাইলাম ‘এর পর কি হবে রিফাপু? সত্যি কি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?’
আমার হাতটা চেপে ধরলো রিফাপু। আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বোঝালো, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। রিফাপুর মতোই সবাই বলতে লাগলো কাবিন নামায় সাইন করে দিতে। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সাইটা করে দিলাম। সাথে সাথে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে। আবারও তিন বার কবুল বলে নিজেকে নতুন ভাবে জুড়ে নিলাম তাসফি নামক মানুষটির সাথে।
একটু সময় নিয়ে সবাই রুম ছেড়ে চলে গেল। রিফাপু একই ভাবে আমার হাতটা ধরে সাথে রইলে। রুমটা ফাঁকা হতেই জড়িয়ে ধরলাম রিফাপুকে, ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো রিফাপু।

“তাসফি ভাই তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে রূপা। সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝি তে সেটা কখনোই শেষ হয়ে যাবে না। তাসফি ভাই তোর প্রতি রেগে আছে, কিন্তু তোর প্রতি তাসফি ভাইয়ের অনুভূতি গুলো কখনোই হারিয়ে যাবে না। কারণ তোর প্রতি তাসফি ভাইয়ের সমস্ত অনুভূতির সাক্ষী আমি নিজেই। সেগুলো কখনোই মিথ্যে হতে পারে না রূপা।”

“উনি তো এই বিয়েটাও করতে চায় নি রিফাপু, শুধু মাত্র বাচ্চাটার জন্য….”

“বাচ্চাটা তো একটা উসিলা মাত্র। তাসফি ভাই তোকে কখনোই নিজের থেকে দূরে যেতে দিতো না। বাচ্চাটার জন্য শুধু তাড়াতাড়ি এক হয়েছিস সেটাই শুধু।”

“কিন্তু উনি….”

“রিফা কি রূপা কে নিয়ে নিচে আয়, সবাই অপেক্ষা করছে ওর জন্য।”

সামিরা ফুপি এসে কথাটা বলেই চলে গেল। আমিও রিফাপুকে ছেড়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। আলতো করে গালের ভিজে থাকা পানি গুলো মুছে দিলো রিফাপু। বললো,

“একদম চিন্তা করিস না বনু, এখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। দুজনে একসাথে থাক, সময় কাটা, সংসারটা গুছিয়ে নে, দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তাসফি ভাইও সব অভিমান ভুলে আবারও তার রুপু কে কাছে টেনে নিবে।”

আরও একবার চেষ্টা করতে হবে আমাকে। ওনার কাছে গিয়ে ওনার অভিমানগুলো ভেঙে দিতে হবে আমার। মাথা ঝাঁকালাম আমি। হালকা হাসলো রিফাপু। তারপর আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম ছেড়ে।

.
একমাত্র ফুপির বাড়িতে এর আগেও অসংখ্য বার আগমন হলেও আজকের দিনটার সাথে রয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। দুরুদুরু বুকে অসংখ্য অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়ে নতুন রুপে প্রবেশ করলাম আজকে। আমাদের বিয়েটা অনেক আগে হলেও আজকের অনুভূতিটা একেবারেই ভিন্ন। বউ রুপে এত এত আত্মীয় স্বজনের মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়ে প্রবেশ করলাম বাসায়। বিভিন্ন নিয়ম পালন করেই আমাকে ভেতরে ঢুকালো ফুপি। আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আজ থেকে আমার দ্বায়িত্বের অবসান। তোর সংসারে দ্বায়িত্ব এবার তুই বুঝে নে।”

ফুপির কথায় বুকের টিপটিপ শব্দের প্রতিধ্বনি দ্বিগুণ হয়ে উঠলো যেন। ধরে থাকা রিফাপুর হাতটা আর চেপে ধরলাম। পাশে তাসফি ভাইয়ের থাকার কথা থাকলেও সেই মানুষটা নেই। আসার পর এক ঝলক দেখা দিয়েই চলে গেছেন উনি।
নতুন বউ হিসেবে হাজারো উত্তেজনা কাজ করার কথা থাকলেও তার কোনটাই আমার মাঝে হচ্ছে না। শুধু মন ও মস্তিষ্কে এসে জমা হচ্ছে একরাশ চিন্তা। সত্যিই কি রিফাপুর বলা কথাগুলো সত্যি হবে? উনি কি সবকিছু ভুলে আবারও আমাকে আগের মতো ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন?

.
মধ্যরাত পেরিয়ে ঠিক কতটা সময় হয়েছে জানা নেই আমার। গুটিশুটি হয়ে বসে আছি তাসফি ভাইয়ের বিছানায়। ঘুমে দু’ চোখ জর্জরিত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ বেশ বন্ধ করে দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলাম কিছুটা। দ্রুতই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম। বুঝতে পারলাম ঠিক কে হতে পারে। ক্লান্ত শরীরে তাসফি ভাই রুমে ঢুকেই ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় আমার দিকে একবার তাকালেন। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলেন। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বেরিয়ে এলেন ওয়াশরুম থেকে। এবারও তাকালেন আমার দিকে। উনি রুমে প্রবেশ করার পর চোখের ঘুমটা হঠাৎই গায়েব হয়ে গেছে। চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। উনি গায়ের শার্ট পাল্টে টি-শার্ট পড়ে বারান্দায় চলে গেলেন। একটা বাক্যও ব্যায় করলেন না আমার সাথে।
হতাশার নিশ্বাস ছাড়লাম আমি। আজকের রাতটা তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না। প্রতিটি বিবাহিত দম্পত্তির এই দিন, এই মুহুর্ত নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা থাকে। রিফাপুর বিয়ের সময় আমারও হাজারো আকাঙ্খা ছিলো আজকের দিনটা নিয়ে। কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে সবকিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেল।

প্রায় আধা ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পর রুমে আসলেন তাসফি ভাই। আমাকে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকালেন। রুমে কিছুটা সময় নিয়ে পায়চারী করতে লাগলেন। একটু সময় নিয়ে এগিয়ে এলেন খাটের কাছে। ধমকে উঠে বললেন,

“না ঘুমিয়ে এভাবে বসে আছিস কেন? বেয়াদব! তোর ঘুমানোর প্রয়োজন না হতে পারে কিন্তু আমার বাচ্চা…. আমার বাচ্চার ঘুমানোর প্রয়োজন।”

কেঁপে উঠলাম কিছুটা। মাথা তুলে ছলছল চোখে তাকালাম ওনার দিকে। একটু থেকে জোরে শ্বাস টেনে নিলেন। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বললেন,

“তোর জন্য যদি আমার আমার বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

“আজকে অন্তত সবকিছু ভুলে যান, আমাকে ক্ষমা করে দিন। প্লিজ!”

“এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করিস না রূপা, ঘুমিয়ে পর।”

বলেই আর দাঁড়ালেন না উনি। পাশ কেটে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লেন। ছলছল করা চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। আঁটকে রাখা কান্নাগুলে বেরিয়ে আসলো হঠাৎই। দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। মিনিট দুয়েক অতিক্রম হবার পর নড়েচড়ে উঠলেন তাসফি ভাই। গম্ভীর গলায় বললেন,

“এতরাতে কান্নাকাটি করে কি প্রমাণ করতে চাইছিস? বললাম না ঘুমিয়ে পড়তে।”

.
বিষন্ন মনে উদাসীনতায় ঘিরে বসে আছি বারান্দায়। জনমানবহীন এই ফাঁকা বাসায় কয়েক মাস কাটিয়ে দেবার পর নিজের অস্তিত্বটাও যেন ভারী আসবাবপত্রের সাথে মিশে গেছে। আমাদের বিয়ের প্রায় এক মাস পরিয়ে যেতেই যখন তাসফি ভাইয়ের দেখা পেলাম না, তখনই বাসায় এক প্রকার জেদ দেখিয়ে ঢাকায় চলে আসি। ফুপা ফুপি আসলেও বেশ কিছুদিন থেকে চলে যেতে হয়। একলা বাসা তে সাবিনা আন্টি বাসার সমস্ত কাজ করে আমাকে সময় নিয়ে গেছেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। ঢাকায় আসার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তাসফি ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কের কোন উন্নতির রেশ পর্যন্ত দেখা দেয় নি। অভিমান ভাঙাতে পারি নি ওনার। সেই সুযোগটাই উনি দেন নি আমাকে। প্রয়োজন ব্যাতীত কোন কথায় বলেন নি আমার সাথে, কিন্তু বাচ্চার জন্য পুরো দমে কেয়ার করে গেছেন আমার। ওনার এত শত অবহেলায় এবার ভীষণ হাঁপিয়ে উঠেছি আমি।
ছয় মাসে অনেকটা ফুলে ফেঁপে উঠছে পেটটা। হাঁটা চলায় কিছুটা কষ্ট হলেও মা হবার আনন্দটা তীব্রভাবে অনুভব হতে শুরু করেছে। বারংবার মনে উঁকি দেয়, এই তো আর তিন চার মাস সময়। তারপরই আমার কোলে ছোট ছোট হাত পা নিয়ে কেউ দখল করে রাখবে। ভেবেই সব কষ্টগুলো নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়।

নিচ থেকে কারোর কণ্ঠস্বর ভেসে আসতেই নিজের করা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। কিছুটা কৌতুহল নিয়ে বেরিয়ে এলাম রুম ছেড়ে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই স্পষ্ট হলো ফুপির গলা। নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে আসতেই ফুপা ফুপি ও তাসফি ভাইকে চোখে পড়লো। বেশ অবাক হলেও ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ফুপিকে। এতদিন পর আপন জনের দেখা পেয়ে সামলাতে পারলাম না নিজেকে। ফুপিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। ফুপিও আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। বললো,

“আরে আরে… কাঁদছিস কেন মা? আমাকে দেখে কি খুশি হোস নি?”

“এত…এতদিন পর আমার কথা মনে পড়লো তোমাদের? জানো, এখানে একা একা আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। সাবিনা আন্টি ছাড়া কথা বলার মতো কাউকেই পাই না।”

“কেন মা? আমার ছেলেটা আছে তো। তাসফি থাকতে তোর কথা বলার মানুষের অভাব হবে কেন?”

“তোমার ছেলে অনেক খারাপ ফুপি, অনেক খারাপ। উনি আমার সাথে…. ”

চুপ হয়ে গেলাম হঠাৎই। নিজেকে সামলে নিয়ে ফুপিকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালাম। আড় চোখে তাসফি ভাইয়ের দিকে তাকালাম। গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। দু’হাতে আলতো করে চোখের পানি গুলো মুছে দিলো ফুপি। বললো,

“হয়ছে হয়ছে, আর কান্না করতে হবে না। এত কান্না করলে শরীর খারাপ করবে তো। আমি তো আমি চলে এসেছি মা, এবার তো একটু হাস।”

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলাম। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে আনলাম ফুপির কথায়। আস্তে করে বললাম,

“তোমরা যে আজকে আসবে, আমাকে জানাও কি কেন?”

“কেন? তাসফি তোকে কিছু বলে নি? ও তো জানতো আমাদের আসবার কথা। কি রে তাসফি, রূপা কে কিছু বলিস নি?”

মাথা তুলে তাকালাম ওনার দিকে। ফুপিদের আসবার কথা আমাকে জানান নি, এতে মোটেও অবাক হলাম না। উনি ফুপির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
“আসলে আম্মু, আমি তো ওকে….”

“অবশ্য ভালোই করেছিস, এই সুযোগে রূপাকে সারপ্রাইজ তো দিতে পারলাম। কি রে মা, সারপ্রাইজড হোস নি?”

“হুম! ভীষণ হয়েছি।”

আলতো করে হেঁসে বললাম ফুপিকে। এতক্ষণে রুমে চলে গেছেন ফুপা। তাসফি ভাইও ‘ফ্রেশ হয়ে আসছি’ বলে চলে গেলেন উপরে। আরও দু’একটা কথা বলে ফুপিও চলে গেল নিজের রুমে। যাবার আগে আমাকে বলে গেল উপরে যেতে, ওনার হয়তো কিছু লাগবে। ফুপি রুমে যাবার পরও আমি একই ভাবে সোফায় বসে রইলাম। উপরে গেলেও আমার কোন কাজ থাকবে না সেটা নিশ্চিত।

হতাশার নিশ্বাস ছাড়লাম। মাসের পর মাস ওনার করা এই অবহেলা আর সহ্য করতে পারছি না যেন। না… আর সম্ভবও নয়। ওনাকে মানানোর, ওনার অভিমান ভাঙার চেষ্টাও আর করবো না আমি। অনেক হয়েছে, আর না। উনি আমেরিকা যাবার পর গত চার বছরে ওনার থেকে যেভাবে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলাম, ঠিক সেভাবেই পূনরায় ওনার থেকে নিজেকে আড়াল করে নিবো। চলে যাবো এখান থেকে। উনি যখন আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না, ভালোবেসে আমার অধিকার দিতে পারবেন না, তখন আমিও থাকবো না ওনার সাথে। আমার বাচ্চার দ্বায়িত্ব আমি একই নিতে পারবো। হ্যাঁ! আজ বা কালকেই ফুপা ফুপির সাথে কথা বলতে হবে আমার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবো এখান থেকে।

.
.
চলবে…..

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ৩৮.

.
ফুপির সাথে এতদিনের জমানো কথা শেষ করে, বেশ রাত করেই উপরে আসলাম। রুমে ঢুকে রুমের লাইট জ্বলে থাকা অবস্থায় পেলাম। পুরো রুমে নজর বুলিয়েও তাসফি ভাইকে দেখতে পেলাম না। রুমে ঢুকবার আধা মিনিটের মধ্যেই বারান্দার থাই গ্লাস ঠেলে রুমে ঢুকলেন উনি। আলমারির কাছে যেতে যেতে বললেন,

“রাতের মেডিসিন গুলো নিয়েছিস?”

প্রতিদিন ওনার করা একই প্রশ্নে অভস্ত্য হয়ে গেলেও আজকে কেন জানি বিরক্ত লাগলো ওনার কথায়। সবকিছুই তো বাচ্চার জন্য, আমার বাচ্চার যত্ন কি আমি নিতে পারি না? অবশ্যই পারবো। এরপর থেকে আমার বাচ্চার যত্ন আমি নিজেই নিবো। ওনার কথায় ত্যারা ভাবে উত্তর দিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু সামলে নিলাম নিজেকে। আস্তে করে জবাব দিলাম,

“না!”

“মধ্য রাত পর্যন্ত আড্ডা দেওয়ার সময় পাস, আর মেডিসিন গুলো খাওয়ার সময় পাস না? তাড়াতাড়ি মেডিসিন আর টেবিলে দুধের গ্লাস রাখা আছে, খেয়ে শুয়ে পড়।”

“খাবো না আমি, শুনবো না আপনার কোন কথা। কি পেয়েছেন আপনি আমাকে? যখন যেটা বলবেন তখন সেটাই করতে হবে আমার?”

বিরক্তির পাশাপাশি এবার রাগ এসে ভর করলো। ওনার কথাটা মানতে একদমই ইচ্ছে হলো না আমার। কিছুটা চেঁচিয়ে কথাটা বলতেই রাগী চোখে তাকালেন আমার দিকে। জানি, এবার উনি ঠিক কি বলবেন। আমার সব কিছুতেই বাচ্চার কথা দিয়েই শেষ করবেন। আমার জন্য বাচ্চার কোন ক্ষতি চান না সেটাই বলবেন।

“হ্যাঁ! হবে। আমি যেটা বলবো সেটাই করতে হবে তোর….”

“কেন? কেন শুনবো আপনার কথা? আপনি যেটা বলবেন সেটা কেন করতে হবে আমার?”

“আমাকে একদম রাগাবি না রূপা। তোর জন্য আমার বাচ্চার কোন ক্ষতি হোক সেটা মেনে নিবো না।”

বলেই টেবিলে রাখা ওষুধের প্যাকেট দিয়ে খুলতে লাগলেন। দুধের গ্লাস সহ ওষুধগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন,

“তাড়াতারি খেয়ে নে, গ্লাসটাও যেন ফাঁকা থাকে। তা না হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।”

রাগী চোখে তাকিয়ে সরে গেলেন সামনে থেকে। ওয়াশরুমে ঢুকে বেশ শব্দ করেই দরজা আঁটকে দিলেন। ওনার এই কথাগুলোই আগের চেয়েও অধিক জেদ চেপে গেল আমার মাঝে। প্রচন্ড রাগ ও জেদের বসে বারান্দায় এলাম। হাতে থাকা ওষুধ গুলো আর দুধের গ্লাসটা নিয়ে ফেলে দিলাম বারান্দা দিয়ে। তারপর রুমে এসে বেশ শব্দ করেই গ্লাসটা টেবিলে রাখলাম। আধা মিনিট সময় অতিক্রম হতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন তাসফি ভাই। আমার রাগী রাগী চেহারায় কপাল কুঁচকে তাকালেন উনি। বললেন,

“খেয়েছিস মেডিসিন গুলো? আর দুধের গ্লাসটা….”

“না… খাই নি। ফেলে দিয়েছি সবকিছু, শান্তি আপনার?”

কিছুটা চেঁচিয়ে কথাটা বলেই রাগে গজগজ করতে করতে বিছানায় চলে এলাম। একবার তাকালাম ওনার দিকে। আমাকে তাকাতে দেখেই হঠাৎ চোখ মুখে গম্ভীর ভাবটা ফুটিয়ে আনলেন। কেন জানি মনে হলো হাসছিলেন উনি, আমি তাকাতেই ওনার সেই হাসিটা মিলিয়ে গেল। অবাক হলাম কিছুটা। কিন্তু অতটা মাথা না ঘামিয়ে শুয়ে পড়লাম। মিনিট দুয়েক পর তাসফি ভাইও লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।

.
গভীর রাত। নিজের শরীরের সাথে ভারী কিছুর অনুভব হতেই ভেঙে গেল গারো ঘুমটা। মনে হলো ঘন্টা খানিকও ঠিকঠাক ভাবে ঘুমটা হয় নি। প্রতিদিন গারো ঘুমে সারারাত কেটে গেলেও আজকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাবার কারণটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।

একটু নড়েচড়ে উঠতেই নিজের শরীরে ভারী অস্তিত্বের অনুভব গভীর ভাবে ধরা দিলো। হঠাৎই নিশ্বাস নিয়ে কষ্ট হতে লাগলো। টেনে টেনে বার কয়েক নিশ্বাস নিয়েও ঠিক ভাবে নিতে পারলাম না। জোরে জোরে হাত পা ছুটাতে শুরু করলাম। দু’ হাতে সেই ভারী অস্তিত্বকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিতে লাগলাম। মুখ ফুটে কোন শব্দ বের করার চেষ্টা করেও পারলাম না। আধা মিনিটের মতো সময় অতিক্রম হতেই মুক্ত করে পেলাম নিজেকে, ভেসে আসলো তাসফি ভাইয়ের কণ্ঠস্বর।

“কি হয়েছে? রুপু! এই রুপু, কি হয়েছে তোর?”

বলার সাথেই রুমের আলো জ্বালিয়ে দিলেন। দু’হাতে আমাকে আগলে ধরে আবারও বললেন,
“কি হয়েছে রুপু? কষ্ট হচ্ছে, কোথায় কষ্ট হচ্ছে? বল আমাকে। পেটে ব্যাথা হচ্ছে?”

কোন জবাব দিতে পারলাম না ওনার কথার। নিশ্বাস টেনে টেনে নেওয়ায় এবার হয়তো বুঝতে পারলেন উনি। পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে আমার মুখে ধরলেন। বললেন,

“নিশ্বাস নিয়ে কষ্ট হচ্ছে? রিলাক্স! এতটা হাইপার হচ্ছিস কেন? পানিটা খেয়ে নে, ধীরে ধীরে নিশ্বাস টান।”

ওনার কথা অনুযায়ী একটুখানি পানি খেয়ে নিলাম। তারপর ওনার বলা মতো ধীরে ধীরে নিশ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করতে লাগলাম। মিনিট পাঁচেক অতিক্রম হবার পর কিছুটা স্বস্তির দেখা পেলাম। আমাকে স্বাভাবিক হতে দেখেই দু’হাত আলতো করে আমার গালে রাখলেন তাসফি ভাই। বললেন,

“এখন? এখন ঠিক লাগছে?”

ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম ওনার দিকে। মাথা ঝাঁকিয়ে ‘হ্যাঁ’ বললাম। উনি বলে উঠলেন,
“হঠাৎ এমন হলো কেন? মেডিসিন গুলো ঠিকঠাক ভাবে নিয়েছিস তো?”

“জানি না।”

“আজকে হঠাৎ কি হলো? কই? এর আগে তো এমন কিছু হয় নি, তাহলে? প্রতিদিনই তো এভাবে জড়িয়ে রাখি….”

কথাটা শেষ না করেই চুপ হয়ে গেলেন উনি। আমাকে আলগোছে ছেড়ে দিয়ে সরে গেলেন কিছুটা। অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। বুঝতে পারলাম না ওনার আধো কথার মানে। প্রতিদিন এভাবে জড়িয়ে রাখি মানে? কি বলতে চাইছিলেন উনি? উনি বিছানা ছেড়ে নামার উদ্যোগ হতেই আস্তে করে বললাম,

“মা..মানে?”

“মানে কিছু না, ঘুমানোর চেষ্টা কর। তা না হলে শরীর খারাপ করবে।”

.
একাকিত্ব সময় কাটানোর পর আপনজন দের সঙ্গ পেয়ে অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ছেয়ে গেছে মনে। সকালের মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে উঠেছে যেন। রাতে ঘুম না হবার ফলে বেশ সকাল করেই ঘুমটা ভাঙে আজকে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসতেই ফুপিকে নজরে আসে। ফুপিকে দেখে ঠোঁটের হাসিটা প্রসস্থ হয়ে উঠলো আমার। কাছে যেতে দু’একটা কথা বলে টেবিলে বসতে বললো। এর মাঝেই ফুপাও চলে আসলো। আমার দিকে হালকা একটা হাসি দিলো। বললো,

“কি অবস্থা আমার মামুনির? শরীর ঠিক আছে তো?”

“একদম।”

বলতেই হাসলেন ফুপা। ফুপিও টেবিলে খাবার দিয়ে বসে পড়লো। ভাবলাম, বাসায় যাবার কথাটা এখনি বলা উচিত। বজ্জাত লোকটার এতটা অবহেলা নিয়ে আর এখানে থাকবো না আমি। নিজের ভাবনার মাঝেই ডেকে উঠলাম ফুপিকে।

“ফুপি!”

“হু! বল মা, কি হয়েছে?”

“ফুপি! আসলে আমি…”

“কি হয়েছে? কিছু লাগবে মা? তাসফি কে বলবো কিছু?”

“না মানে, ফুপি আমি বাসায়….”

“ওই তো তাসফি এসেছে।”

ফুপির কথাটা শেষ হতেই পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন তাসফি ভাইয়া। প্লেট নিয়ে খাবার নিতেই ফুপি বললো,

“ভার্সিটিতে যাবি না? রেডি হয়ে আসিস নি কেন?”

“যাবো না আজকে।”

“কেন বাবা? শরীর ঠিক আছে তো?”

ছোট করে ‘হুম’ বলে আমার দিকে তাকালেন উনি। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ওনার থেকে। মনোযোগ দিলাম খাওয়ায়। একটু খাবার মুখে দিতেই বরাবরের মতোই গা গুলিয়ে উঠলো। সেগুলো আমলে না এনে খাওয়ার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। একটু চুপ থেকে তাসফি ভাই বলে উঠলেন,

“আম্মু, তোমার ভাতিজী কে রেডি হয়ে থাকতে বলো।”

“কেন? কোথায় যাবি ওকে নিয়ে?”

আবারও আমার দিকে তাকালেন উনি। ঘাড় ঘুরিয়ে ফুপির দিকে তাকিয়ে বললেন,

“হসপিটালে! চেক-আপ করাতে নিয়ে যাবে। আম্মু! জিজ্ঞেস করো ওকে, রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো কেন?”

শেষের কথাটা একটু জোরেই বললেন উনি। একটু থেমে বেশ জোরে শ্বাস টেনে নিলেন। আবারও বলে উঠলেন,
“ওকে ভালোভাবে বলে দিয় আম্মু। ওর জন্য যেন আমার সন্তানের কিছু না হয়।”

আমাকে উদ্দেশ্য করে ফুপা বললেন,
“কি হয়েছে মামুনি? একটু আগে না বললে শরীর ঠিক আছে, তাহলে তাসফি এসব কি বলছে?”

“আ..আসলে ফুপা, রাতে হঠাৎই নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো, তাই…. এখন একদম ঠিক আছি।”

ফুপা কিছু বলার আগেই ফুপি বলে উঠলো,

“কেমন ঠি আছিস, সেটা তো চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রেডি হয়ে থাকিস, তাসফি চেক-আপ করিয়ে আনবে। এখন পুরো খাবারটা একদমে শেষ কর।”

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলাম ফুপির কথায়। এখন আমার কোন কথায় কেউ শুনবে না সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। তাই আর দ্বিমত প্রেরণ করলাম না। মনোযোগ দিলাম খাওয়ায়। বার কয়েক মুখে দিতেই আবারও গা গুলিয়ে আসলো। এবার আর আটকাতে পারলাম না। দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। কোন রকম ভাবে বেসিনের গিয়ে গড়গড় করে বমি করে বের করে দিতে লাগলাম সমস্ত কিছু। এক হাত পেটে রেখে অপর হতে নিজেকে সামলাতে গিয়েও যখন পারলাম না, ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ আঁকড়ে ধরলো। তাসফি ভাইয়ের উপস্থিতি বুঝতে পারলেই আলগোছে নিজের ভর ছেড়ে দিলাম ওনার উপর, চোখ দু’টোও বন্ধ করে নিলাম। দেখতে না পারলেও ভেসে আসলো উত্তেজিত কণ্ঠে রাগী গলায় তাসফি ভাইয়ের কথাগুলো।

“দেখছো? এই নাকি একদম ঠিক আছে তোমাদের মেয়ে। ঠিক থাকার এই নমুনা? নিয়ম করে খাওয়া দাওয়ার কথা বললেও গায়ে লাগায় না। এখন জিজ্ঞেস করো ওকে, ঠিক আছে কি না?”

“আহ্! তাসফি। দেখছিস তো মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তবুও এভাবে বকাবকি করে চলেছিস? ওকে বসার রুমে নিয়ে শুইয়ে দে আগে।”

ফুপির কথায় চুপ হয়ে গেলেন উনি। পুরো মুখে পানি ছিটিয়ে মুছে দিলেন। আলগোছে কোলে তুলে নিলেন আমাকে। দূর্বল হাতে ওনাকে ধরার চেষ্টা করে মিটমিটিয়ে চোখ মেলে তাকালাম তাসফি ভাইয়ের দিকে। উনিও আমার চোখে চোখ রেখে তাকালেন। এতগুলো দিন পর ওনাকে এতটা কাছে পেয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতিতে আঁকড়ে ধরলো যেন। সহসায় চোখের কোণে ভীড় জমালো একদল নোনাজল। চোখের পলক ফেলতেই টুপ করে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলেন উনি। সোজা বসার ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিলেন। আমাকে শুইয়ে দিতেই ফুপা ফুপি এগিয়ে আসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ফুপি বললো,

“শরীরটা কি বেশি খারাপ লাগছে মা?”

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে আনলাম ফুপির কথায়। আমার একটুখানি অসুস্থ হওয়ায় এই মানুষটার চিন্তিত মুখখানা ভীষণ পীড়া দেয় আমায়। কিছুটা খারাপ লাগলেও মাথা ঝাঁকালাম। বোঝালাম খারাপ লাগছে না আর। এর মাঝেই গ্লাস হাতে এসে দাঁড়ালেন তাসফি ভাই। ফুপিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

“তোমার এই মাথা মোটা গাধী ভাতিজী কখনোই বলবে না খারাপ লাগছে। তাহলে এই গাধীকে জিজ্ঞেস করে কোন লাভ আছে কি আম্মু? এত কথা না বলে এই স্যালাইনের পানিটা খাইয়ে দাও ওকে। বিকেলে রেডি করে দিও। হসপিটালে নিও যাবো।”

হাতের গ্লাসটা ফুপির হাতে দিয়ে সরে গেলেন। ফুপাও একই ভাবে বলে চলে গেলেন বসার রুম ছেড়ে। স্যালাইনের পানিটা খাইয়ে দিতে লাগলো ফুপি। একটু খেয়ে যখন ‘আর খেতে পারবো না’ বললাম, সাথে সাথে ধমকে উঠলেন তাসফি ভাই। ফুপিও ওনার সাথে বকা দিতে লাগলো। উপায় না পেয়ে অতি কষ্টে পানিটা শেষ করে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম যেন।

.
.
চলবে……

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।🖤