তুমি শুধু আমারই হও পর্ব-৩২+৩৩

0
355

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৩২|

এর মাঝে আরো দুই দিন কেটেছে। ভার্সিটির মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে অর্নি নূর তরী এবং রুশান৷ ইচ্ছে আছে ক্লাস বাঙ্ক করে ঘুরতে যাবে। দূরে কোথাও। নূর বললো,
–“আচ্ছা অর্নি ভাইয়া জানতে পারলে আবার কিছু বলবে না তো?”

অর্নি নূরের কাঁধ চাপড়ে বেশ ভাব নিয়ে বললো,
–“আরেহ চিল কর দোস্ত, তোর ভাইয়া জানার আগেই আমরা বাড়ি ফিরে যাবো। আর যদিওবা টের পেয়ে যায় তাহলে সবটা সামলে নিবো, ম্যা হু না?”

অর্নির কথা বলার ধরনে হেসে ফেললো সবাই। রুশান বললো,
–“আচ্ছা কোথায় যাওয়া যায়?”

আসলেই তো কোথায় যাওয়া যায়? সকলেই ভাবুক হয়ে উঠলো। নূর বললো,
–“শহরের আনাচে-কানাচে তো অনেক ঘুরলাম। আজ না হয় শহর ছেড়ে অনেক দূরের কোনো গ্রামের দিকে যাই?”

সহমত প্রকাশ করলো সকলে। তরী বললো,
–“আপু, গুড আইডিয়া। গ্রামের দিকেই যাবো আমরা।”

নূর চুপসে যাওয়া মুখে বললো,
–“কিন্তু টাকা? আজ তো কোথাও যাওয়ার প্ল্যান ছিলো না। টাকা আনিনি তো বেশি।”

সবার টনক নড়লো৷ আসলেই আজ কোনো প্ল্যান করে আসেনি। আগে থেকে প্ল্যান থাকলে এক্সট্রা টাকা রাখা যায় সাথে কিন্তু এখন? রুশান নিজের ওয়ালেট চেক করে বললো,
–“আমার কাছে দু/তিন হাজারের মতো আছে। হবে এতে?”

–“নাহ, গ্রামে যদি কোনো মেলা টেলা পেয়ে যাই? গ্রামের দিকে তো মেলা লেগেই থাকে। তখন অনেক কিছু কিনতে ইচ্ছে করবে তো। এই টাকায় হবে না।”

নূরের কথায় হতাশ হলো রুশান। তরী বললো,
–“তাহলে কি আজ যাওয়া ক্যান্সেল?”

এতক্ষণ সবটা চুপচাপ শুনছিলো অর্নি। ভাবছিলো কি করা যায়। তরীর কথার জবাবে বললো,
–“উঁহু, যাবো আমরা আর সেটা আজই। আমি টাকা আনানোর ব্যবস্থা করছি।”

–“কিভাবে?”

রুশানের প্রশ্নের জবাব দিলো না অর্নি। ফোন বের করে ডায়াল করলো উৎসবের নাম্বারে। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই অর্নি প্রথমে সালাম দিয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো। তারপর বললো,
–“উৎসব, শুনুন না__”

–“শুনছি তো বলো।”

–“ইয়ে মানে___”

–“কি লাগবে?”

অর্নি চমকালো। অবাকের রেশ কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“আপনি বুঝলেন কি করে আমার কিছু লাগবে?”

–“আপনি তো আমায় এই সময়ে সচারাচর ফোন দেন না৷ আর আপনার কথার ধরণেই বুঝেছি৷ আপনার আগাগোড়া পুরোটাই তো আমার জানা।”

উৎসবের কথায় মুচকি হাসলো অর্নি। উৎসব ঘড়িতে সময় দেখে বললো,
–“অর্নি দ্রুত বলো কি লাগবে, আমি বিজি হয়ে পড়বো। আর্জেন্ট মিটিং আছে।”

–“টা্ টাকা___”

–“ক্যাশ নেই কাছে?”

–“উহুম, এখন কাছে নেই কালই ব্যাগ থেকে আলমারিতে তুলে রেখেছি। ভেবেছিলাম লাগবে না।”

–“বিকাশ___?”

–“শেষ।”

–“তোমাকে বলেছিলাম তো বিকাশে টাকা না থাকলে জানাবে আমায়৷ দিয়ে রাখবো। কখন কোন কাজে লাগে বলা যায় না।”

চুপ করে রইলো অর্নি। উৎসব বললো,
–“আচ্ছা, কত লাগবে?”

অর্নি তাকালো নূর রুশানের দিকে। ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কত চাইবে? নূর দুই হাতের দশ আঙুল দেখিয়ে দশ হাজার বোঝালো। অর্নি ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এত টাকা কেন? ওদিকে অর্নির কোনো সারা শব্দ না পেয়ে উৎসব আবারো বললো,
–“কি হলো দ্রুত বলো?”

–“আ্ আপনি যা দিবেন তাতেই হবে।”

–“আর ইউ সিয়র?”

–“হুম।”

–“আচ্ছা, এখন রাখছি তাহলে।”

অর্নি সম্মতি জানাতেই উৎসব লাইন কেটে দিলো। নূর রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
–“তোকে না বললাম দশ হাজারের কথা বলতে? তুই ভাইয়াকে ওই কথা বললি কেন? এখন যদি বেশি টাকা না দেয়?”

–“এত টাকাই চাইলে পড়ে জিজ্ঞেস করতো না কি করবে? তার থেকে বরং অর্নি উৎসব ভাইয়ের ইচ্ছের কথা বলেই ঠিক করেছে।”

নূরের কথার জবাবে বললো রুশান। অর্নি বললো,
–“উঁহু, জিজ্ঞেস করতো না কিচ্ছু। উনাকে চিনি আমি।”

ইতিমধ্যেই অর্নির ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। অর্নি চেক করে দেখলো টাকা এসেছে। এমাউন্ট দেখে হাসি ফুটলো অর্নির মুখে। অর্নি নূর রুশান ওদের সামনে ফোন তুলে দেখালো। মৃদু হাসলো সকলেই। পনেরো হাজার পাঠিয়েছে। তৎক্ষনাৎ অর্নির ফোন বেজে উঠলো আবার। রিসিভ করতেই উৎসব বললো,
–“টাকা পেয়েছো?”

–“এত টাকা কেন? কি করবো এত টাকা দিয়ে?”

–“যা ইচ্ছে।”

–“জানতে চাইবেন না টাকা কেন লাগবে?”

–“উঁহু।”

–“কেন?”

–“এমনি।”

–“এত টাকা প্রয়োজন ছিলো না।”

–“নূর তো সাথেই আছে রাইট? কিছু পছন্দ হলে কেনাকাটা করে নিও দুজনে।”

অর্নি প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না। উৎসব আবারো বললো,
–“আচ্ছা রাখছি বউ, মিটিং শেষে কল ব্যাক করছি।”

–“হুম।”

–“ভালোবাসি বউ।”

অর্নি ক্ষানিকটা সময় নিরব থাকলো। একবার তাকালো নূর রুশান তরী ওদের দিকে। তারপর হঠাৎই বললো,
–“আমিও ভালোবাসি।”

উৎসব মুচকি হেসে লাইন কেটে দিলো। এদিকে নূর রুশান ওরা মুখ টিপে হাসছে। অর্নি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“হোয়াট?”

নূর বললো,
–“তুই আমাদের সামনে ভাইয়াকে ভালোবাসি বললি?”

–“হ্যাঁ তো? পরপুরুষকে তো আর বলিনি। নিজের বিয়ে করা বরকেই বলেছি।”

শহর ছেড়ে ঘন্টা দুইয়ের পথ পেরিয়ে এক গ্রামে এসেছে অর্নি ওরা। পুরো গ্রাম মোটামুটি ঘুরে দেখা শেষ। প্রচন্ড সুন্দর একটা গ্রাম। যেদিকেই চোখ যায় সবুজের সমারোহ। ধান ক্ষেতের মাঝ খান দিয়ে মাটির রাস্তা গেছে গ্রামের ভিতরে যাওয়ার জন্য। একটা রিকশা বা ভ্যান যাওয়া আসার মতো রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি সুপারি, খেজুর, তাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে। অর্নি ওরা এখন গ্রামটার শেষ প্রান্তে যাচ্ছে। লোকমুখে শুনেছে এই গ্রামের শেষ প্রান্তে বড় একটা মেলা বসেছে। এই মেলার স্থায়ী কাল তিনদিন। তার মাঝে দুদিন চলে গেছে। আজই শেষ দিন। অর্নি রুশান ওরা ঠিক করেছে ওরা মেলায় ঘুরবে। শহরের মেলায় তো সব এলাহি আয়োজন থাকে। চোখ ধাধানো সুন্দর হলেও তেমন তৃপ্তি মেলে না। গ্রামের মেলা নিশ্চয়ই গ্রামের মতোই সাধারণ আর অতিব সুন্দর হবে? ওরা আগে কখনো গ্রামের মেলায় আসেনি। তাই আজ এই সুযোগটা মিস করতে চাইলো না।

ছোট বড় সকলেই মেলায় ঘুরাঘুরি করছে। নাগরদোলায় উঠে বাচ্চা এবং বড়রা হই হুল্লোড় করছে। প্রতিটা দোকানেই ভীর। বিশেষ করে চুড়ির দোকানে। পা ফেলার জায়গা নেই একদমই। অর্নি নূর আর তরী ভীর ঠেলে চুড়ির দোকানেই গেলো চুড়ি দেখতে। এমন কোনো মেয়ে নেই যার চুড়ি পছন্দ না, যে চুড়ি দেখলে কিনতে না চাইবে। নূর তরী অর্নিও এর ব্যতিক্রম না৷ রুশান কালো রঙের রেশমি চুড়ি তুলে খুব যত্নসহকারে তরীর হাতে পড়িয়ে দিচ্ছে। তরী একধ্যানে রুশানের দিকে তাকানো। অর্নি মূহুর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখতে দ্রুত ব্যগ থেকে ফোন বের করে ছবি তুলে নিলো। নূরও একমুঠো চুড়ি নিয়ে হাতে পড়ছে৷ অর্নি হাতে তুলে নিলো নীল রঙা রেশমি চুড়ি৷ চুড়ি পেয়ে তিনজনেই বেশ খুশি৷ অর্নির চোখ আটকায় একমুঠো কালো চুড়িতে। কালো স্টিলের উপর ডার্ক সিলভার কালার কিছুটা কারুকাজ করা তারপর আবার বেশ কটা কুচকুচে কালো পুথি বসানো। পুরো চুড়িটা ঘুরেই এভাবে কাজ করা। অর্নি রেশমি চুড়িগুলো হাত থেকে খুলে প্যাক করে দিতে বললো। তারপর কালো চুড়ি হাতে পড়লো। আরো কিছু কেনাকাটা করে দাম দিয়ে সরে এলো চুড়ির দোকান থেকে।

এবার ফুচকা স্টলে বসেছে ওরা। এখানে অনেক ভীর৷ অর্ডারের জন্য লাইন লাগিয়েছে অনেকেই৷ নূর বললো,
–“এই চল না এতক্ষণে আমরা নাগরদোলায় চড়ে আসি?”

–“ওয়াহ আপু গ্রেট! তুমি আমার মনের কথাটা বলছো।”

খুশি হয়ে বললো তরী৷ অর্নি নাকোচ করে বললো,
–“আমি উঠবো না।”

রুশান ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“কেন?”

–“ভয় লাগে আমার, তোরা যা। আমি এখানেই বসছি।”

–“চল না দোস্ত। তুই ছাড়া জমবে না।”

অনুরোধের কন্ঠে বললো নূর৷ রুশান তরীও অনেক জোরাজোরি করলো। শেষে বাধ্য হয়েই রাজি হলো অর্নি। নাগরদোলা ঘুরতে শুরু করলো। রুশান তরী একপাশে অর্নি নূর একপাশে বসেছে। রুশান একহাতে তরীকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এবং অন্যহাতে অর্নির হাত ধরে আছে শক্ত করে। নাগরদোলা উপড়ে উঠতেই অর্নি ভয়ে নূরের কাঁধে মুখ গুজে নূরের জামা খামচে ধরলো। এবং যে হাত রুশান ধরে রেখেছে সেই হাত দিয়েই রুশানের হাত খামছে ধরেছে। ভয়ে চিৎকার করছে। আর নূর তরী আনন্দে চিল্লিয়ে উঠছে। রুশান বললো,
–“ভয় পাস কেন অর্নি? আমরা আছি তো। ভয় না পেয়ে ওদের মতো তুইও এঞ্জয় কর।”

নূর ফোন বের করে ছবি তুললো চারজনের। ভিডিও করলো। অতঃপর বেশ কিছু সময় নাগরদোলায় চড়ে নেমে গেলো ওরা। ফুচকা স্টলে গিয়ে ফুচকা অর্ডার করলো। ফুচকা খেয়ে আরো একবার পুরো মেলা চক্কর দিলো চারজনে। তারপর বাসায় ফেরার জন্য উদ্যত হলো।

বাসায় ফিরতে ফিরতে মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়। আজানের দশ মিনিট বাদে বাসায় ঢুকে অর্নি আর নূর। চিল মুডেই বাড়িতে ঢুকছে দুজনে। কারণ উৎসব তো আর আটটার আগে বাড়ি ফেরে না৷ তাই উৎসবের বকুনি, ধমকি নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই৷ তবে ক্ষানিকটা চিন্তিত শায়লা বেগমকে নিয়ে৷ কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো শায়লা বেগম। অবাক করা বিষয় হলো কোনো কিছু না বলে কোনরূপ প্রশ্ন না করেই দরজা খুলে দিয়ে কিচেনে চলে গেলো। যেন সবটা স্বাভাবিক। ওদের দুজনের এসময় বাড়ি ফেরাটাও স্বাভাবিক। অর্নি নূর দুজনেই ক্ষানিকটা অবাক হলো। পরে আবার হাসি ফুটলো এই ভেবে, যাক শায়লা বেগমও কিছু বলেনি। তারমানে আজ কারো বকুনিই খেতে হবে না। এই ভেবে দুজনেই নাচতে নাচতে উপরে চলে গেলো। অর্নি নিজেদের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। গুনগুন করে গান গাইছিলো ও। পেছনে ঘুরতেই গান বন্ধ করে ভয় পেয়ে ক্ষানিকটা পিছিয়ে গেলো। ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। উৎসব ঘরে? একপলক ঘড়ির দিকে তাকালো। আটটা বাজতে এখনো ঘন্টা দেড়েক সময় বাকী। আজ এত তাড়াতাড়ি বাসায় কেন? আজ আর রক্ষে নেই। উৎসব বিছানায় আয়েশ করে বসে বললো,
–“আসুন ম্যাডাম, আমার কাছে আসুন। আপনার জন্যই তো গত এক ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছি আমি। দাঁড়িয়ে পড়লেন যে? পা কি আর চলছে না আমাকে এখন বাসায় দেখে?”

অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“না মানে হইছে কি___”

উৎসব দুই হাটুতে ভর রেখে দুই হাতে নিজের গাল ধরে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ বলো, কি হইছে?”

অর্নি কি বলবে ভেবে না পেয়ে চট করেই বললো,
–“আ্ আমাদের বাসায় গেছিলাম। আম্মু ছাড়তে চাইছিলো না কিছুতেই। আমিই জোর করে চলে এলাম। আপনি তো আবার আমাকে ছাড়া থাকতে পারেন না৷ আ্ আমাকে জ্ জড়িয়ে ধরে না শুলে তো আপনার আবার ঘুমই হয় না, তাই তো চলে আসলাম।”

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে শ্বাস ফেললো অর্নি। ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে উৎসবের দিকে তাকালো৷ যেন এই মূহুর্তে অর্নির বলা এই কথাগুলোই একমাত্র সত্যি। উৎসব বেশ মনোযোগ সহকারে সবটা শুনলো। তারপর উঠে অর্নির দিকে এগিয়ে গিয়ে একটানে অর্নিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো৷ অর্নি এক হাতে নিজের জামা খামচে ধরে আছে৷ উৎসব দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“তোমার ফোনের লোকেশন অন করা, আর সেটা যে আমার ফোনের সাথে কানেক্টেড তা মেবি তুমি ভুলে গেছিলে।”

অর্নি এবার শুকনো ঢোক গিললো। আসলেই ভুলে গেছিলো। উৎসব বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে বললো,
–“মিথ্যে বলা পছন্দ করি না আমি, জানো না তুমি? জেনেও বারবার মিথ্যেটা কেন বলো?”

–“না মানে___”

–“আমার অনুমতি ছাড়া বাসা টু ভার্সিটি বাদে অন্য কোথাও যেতে বারণ করেছিলাম তো আমি। মনে নেই সেই কথা?”

–“আ্ আমি___”

–“চুপ, একদম চুপ। এত সাহস হয় কোত্থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে শহর ছেড়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার? এত সাহস কোত্থেকে পাও তুমি? তোমার ভার্সিটি যাওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছি আমি ওয়েট।”

কেঁপে উঠলো অর্নি। লোকটা ভীষণ চটে আছে। এই মূহুর্তে কিছু বললেই হিতে বিপরীত হবে৷ অর্নি আমতা আমতা করতেই উৎসব শক্ত হাতে অর্নির দুই বাহু চেপে ধরে বললো,
–“কাল থেকে আমি ভার্সিটি দিয়ে আসবো এবং ক্লাস শেষে নিয়ে আসবো৷ দুজনে একদমই পাকনামি করার চেষ্টা করবে না। নয়তো গার্ড রাখতে বাধ্য হবো।”

কথাগুলো বলেই অর্নিকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো৷ টুপ করে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো অর্নির গাল বেয়ে৷ যা উৎসবের চোখ এড়ালো না৷ তড়িৎ গতিতে অর্নির সামনে গিয়ে আবারো চেপে ধরলো অর্নির বাহু। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“ডোন্ট ক্রাই৷ তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার চোখের পানি সহ্য হয় না আমার৷ চুপচাপ কান্না অফ করে শাওয়ার নিয়ে আসো। চোখ দিয়ে আর এক ফোঁটা পানি পড়লে খুব খারাপ হবে৷”

কথাটা বলে অর্নিকে ছেড়ে দিলো। বিড়বিড় করে বললো,
–“দোষ করবে নিজে আবার বকলে তখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলে৷ ভালো করেই জানে কিনা ম্যাডামের চোখের জল সহ্য হয় না আমার৷ তাই বারবার এটাকে হাতিয়ার করেই পার পেয়ে যায়৷ কিন্তু এখন থেকে আর এমনটা একদম হবে না।”

উৎসব কথাগুলো বিড়বিড়িয়ে বললেও তা অর্নির কর্ণগোচর হলো। চোখ মুছে চুপচাপ কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে৷ বুঝলো তার সাহেব ভালোই রেগে আছে৷ এখন বেশি ঘাটানো যাবে না৷ পরে ঠিক রাগ ভাঙিয়ে নিবে। অর্নি শব্দ করে ওয়াসরুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। উৎসব সেদিকে তাকালো একবার। এই মেয়েটাকে একটু বকাও যায় না। অমনি রাগে অভিমানে গাল ফুলাবে। উৎসব তপ্ত শ্বাস ফেলে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। অফিসের কিছু কাজ পেন্ডিং হয়ে আছে৷ অর্নি শাওয়ার নিতে নিতে সেগুলো ক্ষানিকটা এগিয়ে রাখা যাক।

চলবে~

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৩৩|

শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে অর্নি সোজা নিচে চলে গেলো। উৎসব এক পলক তাকালো ওর দিকে। কিছু বললো না। ও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো আবারো। শায়লা বেগমের সাথে সবকিছু হাতে হাতে করছে অর্নি। রাতের খাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। হাতের কাজ শেষ করে নূরের ঘরের দিকে পা বাড়ালো অর্নি। পথিমধ্যে দেখা হলো ইশার সাথে। ইশা অর্নিকে আগাগোড়া দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
–“কিভাবে বশ করেছো আমার উৎসবকে? তোমার থেকে তো কোনো অংশে কম সুন্দরী না আমি। বরং একটু বেশিই। তাহলে উৎসব আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট না করে তোমায় বিয়ে করলো কি করে? তাবিজ টাবিজ করছো? নাকি বিয়ের আগেই সোজা বিছানায় নিয়ে____”

ইশা কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই সজোরে চ/ড় বসালো ওর গালে। ইশা গালে হাত দিয়ে রাগী চোখে তাকালো অর্নির দিকে৷ অর্নিকে বললো,
–“হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হলো কি করে আমায় চ/ড় মারার?”

কথাগুলো বলে ইশা হাত উঠালো অর্নিকে মারার জন্য। অর্নি ইশার হাত মুচড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“আপনি আমার থেকে বয়সে অনেকটাই বড় এটা আমি জানি। কিন্তু আপনি যতবার আমাকে আর আমার হাজবেন্ডকে নিয়ে নোংরা কথা বলবেন ঠিক ততবারই আমার হাত উঠবে আপনার উপর।”

বলেই ইশার হাত ছেড়ে দিলো। ইশা আবারো কিছু বলতে গেলে অর্নি বলে,
–“কি যেন বললেন? আপনি আমার থেকে বেশি সুন্দরী তবুও উৎসব কেন আপনাকে ভালো না বেসে আমার কাছে আসলো? জানতে চান এইটা? বাহ্যিক সৌন্দর্যই সবকিছু না। আপনি বাইরে থেকে অনেক সুন্দরী হলেও আপনার ভিতরটা একদম কুৎসিত, নোংরায় ভরা। যার কারণে আপনি আজ এসব নোংরা ওয়ার্ডস ইউজ করেছেন। ভালোবাসাটা বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে হয় না। মনের মিল লাগে। সুন্দর মন মানসিকতা লাগে যা আপনার মাঝে নেই।”

কথাগুলো বলে অর্নি চলে আসতে নিলেও আবারো পিছিয়ে ইশার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইশাকে বললো,
–“নেক্সট আপনাকে যেন একদম আমার বরের পাশে না দেখি। নয়তো এর ফল আরো খারাপ হবে। মাইন্ড ইট।”

কথাগুলো বলে হনহনিয়ে নূরের ঘরে চলে গেলো অর্নি। রাগে ফুঁসছে ও। ইশার এরকম বাজে ওয়ার্ডস শুনে অর্নির রাগে শরীর রিঁ রিঁ করছে৷ ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে খুন করে ফেলতে। নূর অর্নির কাঁধে হাত রাখতেই অর্নি বললো,
–“দেখ ইশার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না আমি। এই টপিক ভুলে থাকতে চাই। তোর কাজিনের ওসব নোংরা ওয়ার্ডস মনে রাখতে চাই না আমি।”

নূর কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো অর্নিকে৷ নূরের সান্নিধ্য পেয়ে অর্নি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। নূর অর্নির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
–“কাঁদিস না দোস্ত। ইশা আপুর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি৷ প্লিজ মন খারাপ করিস না।”

অর্নি চোখের পানি মুছে বললো,
–“সব দোষ তোর ভাইয়ের। উনি কেন আমাদের বিয়ের বিষয়টা জানায়নি সকলকে? আর সেদিন ইশা উনাকে প্রপোজ করার পর উনি কোনো কিছু না বলে ঝুলিয়ে রেখেছিলো? কেন সেদিনই এক্সেপ্ট বা রিজেক্ট করে দিলো না সরাসরি? তাহলে তো আজ এসব শুনতে হতো না আমার।”

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এসব কথা শুনে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো উৎসব। অর্নিকে ইশা এত বাজে বাজে কথা শুনিয়েছে জেনে রাগে ওর ইশাকে এই মূহুর্তে খুন করতে ইচ্ছে করছে। রেগেমেগে সরে গেলো ওখান থেকে। ইশার ঘরে গিয়ে দেখলো ইশা উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে। উৎসব একটানে ইশাকে দাঁড় করালো। ইশা উৎসবকে দেখতে পেয়ে হামলে পড়লো উৎসবের বুকে। উৎসবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“উৎসব জানো? ওই মেয়েটা, ওই মেয়েটা মেরেছে আমাকে।”

উৎসব ধাক্কা দিয়ে ইশাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। চিৎকার করে বললো,
–“যাকে তুই ওই মেয়েটা ওই মেয়েটা বলছিস সে আমার বিয়ে করা বউ। ভাবী হয় তোর। সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারলে বলবি নয়তো কথা বলার দরকার নেই তোর।”

–“উৎসব তুমি___”

উৎসব ইশার গাল চেপে ধরে বললো,
–“তোর সাহস হয় কি করে অর্নিকে ওসব বলার? ভালোবেসে বিয়ে করেছি ওকে আমি। তুই আমার ভালোবাসাকে অপমান করিস কিভাবে? হাউ?”

উৎসবের ধমকে কেঁপে উঠলো ইশা৷ উৎসব আবারো বললো,
–“তুই থাকবি না এ বাড়িতে। কাল ঘুম থেকে উঠে যেন তোকে আর এ বাড়িতে না দেখি আমি। এখনই ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখবি সকাল হলেই কেটে পড়বি এখান থেকে।”

কথাটা বলে দরজা অব্দি গিয়ে আবারো থেমে গেলো উৎসব৷ ইশার কাছে এসে বললো,
–“না যাবি না। অনেক কিছু দেখার আছে তো তোর তাই না? আমাদের হলুদ, বিয়ে, বাসর সেসবের কিছুই তো দেখিসনি। শুধু আমাকে আর অর্নিকে একঘরে থাকতে দেখেছিস। এখন সবকিছু দেখাবো তোকে। হলুদ বিয়ে বাসর সবকিছুর আয়োজন তুই নিজ হাতে করবি নূর ওদের সাথে। তারপর সব মিটে গেলেই বিদায় হবি এখান থেকে।”

উৎসব যেতেই ইশা দরজা আটকে দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। কাঁদছে ও। ও তো সত্যিই ভালোবেসেছে উৎসবকে৷ তাই তো হুট করেই উৎসবের বিয়ের কথাটা মানতে না পারে যা-তা বলে ফেলেছে অর্নিকে। কিন্তু ও কি করবে? ও উৎসবকে ভালোবাসে, অনেকটা ভালোবাসে।

অর্নি রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। উৎসব ওর সাথে কথা বলতে চাইলেও বলতে পারলো না। অর্নি কথা বলার কোনো স্কোপই দেয়নি। উৎসব অর্নিকে টেনে নিজের দিকে ঘুরালো। দুহাতে অর্নির গাল স্পর্শ করে নরম স্বরে বললো,
–“কথা বলছো না কেন? অন্যের কথায় কেন মন খারাপ করছো? তুমি প্রতিবাদ করেছো তো, সাথে আমিও। তাহলে এরপরও আমার উপর রেগে থাকার কোনো মানে হয়?”

অর্নি কিচ্ছু বললো না। উৎসব অর্নির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
–“আমায় কষ্ট দিচ্ছো কেন? আমি তো ভালোবাসি তোমায়।”

–“আমি কাউকে কষ্ট দিচ্ছি না। সব দোষ আপনার। আপনি কেন সবাইকে জানাননি আমাদের বিয়ের কথা? কেন? সেদিন বিয়ের জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন করেছিলেন? কথা ছিলো তো পরে অনুষ্ঠান করে এ বাড়িতে পা রাখবো আমি। নিজের জেদে আমাকে তার আগেই কেন এই বাড়িতে নিয়ে এলেন আপনি? আর সব যেহেতু করেছেনই তাহলে জানাননি কেন সবাইকে? সবাইকে জানানোর ব্যাপারটা কেন বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য রেখে দিয়েছিলেন? আর সেদিন ইশার প্রপোজাল এক্সেপ্ট বা রিজেক্ট না করে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন কেন আপনি? আপনি ওর থেকে সময় কেন নিয়েছিলেন? ও তো ভেবেই বসেছে আপনি ওকে ভালোবাসেন বলেই সময় নিয়েছেন। কেন করেছেন এমন? আমায় জেলাস ফিল করানোর জন্য? করে লাভ হলো কি? সেদিন যদি সরাসরি সবটা ওকে বলে দিতেন তাহলে আজকে এসবের কিছুই হতো না। আপনার জন্য, শুধুমাত্র আপনার জন্য আমায় আজ এসব নোংরা কথা শুনতে হয়েছে।”

–“আমি এতকিছু ভাবিনি অর্নি। ইশার বাবা মা সবাই জানে, আমি ভেবেছি ইশা নিজেও জানে আমাদের বিয়ের কথা, আমি সেদিন সামনাসামনি ওকে বলিনি এই কারনে ও কষ্ট পাবে৷ আর তোমাকেও দেখানোর ছিলো কিছুটা৷ ভেবেছিলাম পরে সময় করে বলে দিবো৷ কিন্তু ও তার আগেই চলে যায়৷ আর তোমার সবকিছু মেনে নিয়েও হঠাৎ পালটে যাওয়াতে ওই কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো আমার। আমি তো তোমায় ভালোবাসি তাহলে___”

অর্নি এবার ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। উৎসবের কলার চেপে ধরে বললো,
–“ভালোবাসেন? কি দেখে ভালোবাসেন? আমি তো ইশার মতো অত সুন্দরী না। ইশাকে রিজেক্ট করে আমাকেই কেন ভালোবাসলেন? আমার জানামতে তো আমি না আপনাকে শরীর দেখিয়েছি আর না বিয়ের আগে বিছানায়___যান না যান, ইশার কাছে যান আপনি। ও আপনাকে ভালোবাসে। ওকেই বিয়ে করুন, ছেড়ে দিন আমা___”

উৎসব রেগে গিয়ে থাপ্পড় মারলো অর্নিকে। অর্নি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে দেখছে উৎসবকে। উৎসবের চোখজোড়া ভীষণ লাল হয়ে আছে। রাগে রীতিমতো থরথর করে কাঁপছে ছেলেটা৷ উৎসব দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে অর্নির দিকে। এই প্রথম উৎসব ওর গায়ে হাত তুললো। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অর্নি কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
–“আপ্ আপনি আমাকে মা্ মারলেন?”

–“হ্যাঁ মারলাম তোমাকে। ইশার মতো একই ওয়ার্ডস তো এখন তুমি নিজেও ইউজ করছো। আমি একবারো বলেছি বিয়ের আগে তোমার___ইশা নোংরা কথা শুনিয়েছে তোমায়, এতে তুমি হার্ট হয়েছে আই নো৷ কিন্তু তুমি বা আমি কেউ-ই তো ছেড়ে দেইনি ওকে। এখন ওর উপর রাগ দেখিয়ে আবার এসব ফালতু কথা কেন তুলছো তুমি? আমার ভালোবাসা চোখে পড়ছে না, না? ওর নোংরা কথাগুলোই মাথায় ঘুরছে? আর কি বললে তুমি? তোমায় ছেড়ে দেওয়ার কথা? ইহকালে কেন? পরকালেও যদি আমার ক্ষমতা থাকে তো তোমায় ছাড়বো না আমি। ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভালোবাসিনি, বিয়ে করিনি। সাহস হয় কি করে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলার? আর একদিন যদি এই কথা শুনেছি তো একদম মেরে ফেলবো।”

অর্নি কিছু না বলে উঠে চলে যাচ্ছিলো দরজা খুলে। উৎসব দ্রুত উঠে গিয়ে অর্নিকে ভেতরে এনে দরজা আটকে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে। অর্নি বারবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। উৎসব অর্নির ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
–“বউ, স্যরি তো৷ মাথা ঠিক ছিলো না। তোমার ওসব কথা শুনে মাথায় রক্ত চেপে গেছিলো৷ প্লিজ রাগ করো না৷”

অর্নি তখনো চুপ করেই আছে৷ উৎসব অর্নির দুই গাল ধরলো। উৎসবের চোখদুটো লাল হয়ে আছে৷ চোখে পানি টলমল করছে। নরম স্বরে বললো,
–“স্যরি বউ, আমি তোমায় আঘাত করেছি রাইট? ওয়েট।”

এই বলে উৎসব দেয়ালে নিজের হাত পাঞ্চ মারতে লাগলো। অর্নি ছুটে গিয়ে উৎসবের হাত ধরে বললো,
–“পাগল হইছেন? কিসব করছেন?”

–“এই হাত দিয়ে মেরেছি না তোমায়? আয়নায় দেখো নিজেকে, গালে আমার থাপ্পড়ের দাগ বসে গেছে। তোমাকে আঘাত করেছি আমি।”

বলে আবারো পাঞ্চ মারতে গেলে অর্নি গিয়ে দাঁড়ায় দেয়ালের সামনে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে অর্নি। উৎসব অর্নি কপাল বরাবর হাত নিয়ে থেমে গেলো। হাত নিচে নামিয়ে অর্নিকে একটানে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরলো। অর্নি দুইহাতে উৎসবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পিঠের শার্ট খামচে ধরে কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“আপনি থাপ্পড় মারাতে আমার কষ্ট হয়নি উৎসব কিন্তু ইশা, ইশা আমাকে ওসব___”

–“আ’ম স্যরি বউ, আমার জন্য তোমায় ওসব শুনতে হয়েছে৷ প্লিজ ফরগিভ মি।”

অর্নি কিছু বললো না৷ নাক টানছে শুধু। উৎসব অর্নির মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
–“এবার সবাইকে জানানোর পালা। পুরো শহর জানবে আমাদের বিয়ের কথা। আমি চাইনা আর কেউ আমার বউকে আঘাত করে কোনো কথা বলুক। কারো কটু কথার জন্য আমার বউয়ের চোখের পানি পড়বে তা চাই না আমি৷ আর ওরকমটা কখনো হতেও দিবো না আমি।”

কথাগুলো বলে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো অর্নিকে নিজের সাথে৷ অর্নি উৎসবের বুকের সাথে লেপ্টে থেকে হেঁচকি তুলছে বারবার।

পরদিন সবাই একসাথে টেবিলে বসেছে নাস্তা করার জন্য। ইশা আসেনি এখনো৷ নূর গিয়ে ডেকে আনলো ওকে৷ ইশার চোখমুখের বেহাল অবস্থা। কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। উৎসব একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। নূর, শায়লা বেগম, নিলয় আবরার সকলেই চুপ। কাল রাতে ওদের উৎসব আর অর্নির ঘর থেকে আসা চিৎকার চেঁচামেচি সবই শুনেছে উনারা। তাই মোটামুটি আন্দাজ করে নিয়েছে কি হয়েছিলো আর ইশার এই অবস্থা কেন। উনারা কেউ-ই এই বিষয়ে কোনরূপ কথা তুললেন না। চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। অর্নি বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ইশার দিকে৷ এবার অর্নির ইশার জন্য বড্ড খারাপ লাগছে৷ রাতে বলা ইশার কথাগুলো মূহুর্তেই ভুলে গেলো সব। মেয়েটা কেঁদে কি অবস্থা করেছে নিজের। উৎসবকে সত্যিই বোধহয় বড্ড ভালোবাসে৷ নয়তো এরকম অবস্থা হওয়ার কথা না৷ ভাবলো ও না থাকলে বোধহয় আজ ওর জায়গায় ইশা থাকতো। ইশা উৎসবের বউ হতো। কিন্তু কিছু করার নেই তো। অর্নিও উৎসবকে বড্ড ভালোবাসে। সবথেকে বড় কথা উৎসব অর্নি বলতে পাগল। ও কিছুতেই উৎসবকে ছাড়তে পারবে না৷ তাই অর্নির ইশার জন্য খারাপ লাগা স্বত্তেও সেটা নিয়ে বেশি ভাবলো না। ভেবে তো আর কিছু হবে না। উৎসব খেতে নিলয় আবরারকে বললো,
–“আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলতে চাই আব্বু। যত দ্রুত সম্ভব অর্নব আর আন্টির সাথে কথা বলে বিয়ের আয়োজন করো।”

উৎসবের কথায় সবাই বেশ অবাক হলো। পরবর্তীতেই অবাকের রেশ কাটিয়ে ফেললো কাল রাতে উৎসব অর্নির ঘর থেকে আসা কথোপকথন শুনে। নূর তো প্রচন্ড খুশি৷ অর্নি অবাক চোখে দেখছে উৎসবকে। এদিকে ইশা ছলছলে চোখে তাকালো উৎসবের দিকে৷ উৎসব চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। শায়লা বেগম বললো,
–“অর্নবের বিয়ের সময় না একইসাথে অনুষ্ঠান করার কথা ছিলো? এখন হুট করে বললে কেমন দেখায় না?”

–“সেটা আমার 000প0দেখার বিষয় না। তোমরা কথা বলো ওদের সাথে। অর্নবও বিয়ে এখুনি করবে মেয়ে তো ঠিক করাই আছে সমস্যা কোথায়? আর যদি অর্নব এখন বিয়ে করতে না পারে তাহলে আমার আর অর্নির বিয়ের অনুষ্ঠানটাই হবে।”

–“কিন্তু___”

শায়লা বেগমকে সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে থামিয়ে দিলে নিলয় আবরার। ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–“আমি কথা বলবো বেয়ানের সাথে। কবে অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছো তুমি?”

–“যত দ্রুত সম্ভব।”

কথাটা বলেই খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ালো৷ অর্নিকে বললো,
–“নাস্তা শেষ করে দ্রুত ঘরে আসো, অফিস যাবো আমি।”

এই বলে চলে গেলো উৎসব। ওর যাওয়ার দিকে অর্নি তাকিয়ে রইলো ক্ষানিকটা সময়। তারপর আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

চলবে~