তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব-১৪+১৫

0
853

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:14
#Suraiya_Aayat

নূরের হাত ধরে বসে আছে আয়াশ, নূরের হাতের আঙুল গুলোকে মুঠিবদ্ধ করে রেখেছে৷ নূরের দিকে তাকিয়ে আছে আয়াশ এক পলকে ৷ আজ ওর একটু অসাবধানতায় নূরের এই অবস্থা ৷ কিছুখন আগের কথা আয়াশের বারবার মনে পড়ছে , মেয়েটা হাওয়াই মিঠাই খেতে চেয়েছিলো তাও হলো না ৷ যে এই কাজটা করেছে আয়াশ তাকে ছাড়বে না যেকোনো মূল্যে তকে সাজা পেতেই হবে ৷ নূরের কপালের কাটা অংশটার দিকে তাকালো আয়াশ, সেখানে সাদা পট্টি দিয়ে ব্যন্ডেড করা আর চার টে সেলাই পড়েছে সেখানে, প্রতিবার সুচ বিধাতেই নূরের শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো, তবে একটা মুহুর্তর জন্যও আয়াশ ওর হাত ছাড়েনি ৷ কিন্তু আয়াশের এতো ভালোবাসার এক অংশও নূর না দেখতে পেয়েছে আর না অনুভব করতে পেরেছে ৷ নূরের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আয়াশের বাম চোখ থেকেই আচমকা টপ করে জল গড়িয়ে পড়তেই আয়াশ চমকে গেল ৷ আয়াশের জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আয়াশ কেবল একবার ই কেঁদেছিলো, যখন ওর মা মারা গিয়েছিলো সেই খবর শুনে আর আজ নূরের এই অবস্থা দেখে ওর চোখ থেকে জল গড়ালো ৷ আয়াশ চটপট জলটা মুছে নিলো , মনে মনে বলল
” কুল ডাউন আয়াশ সি ইজ ইউরস , ওনলি ইউরস ৷”

পাশ থেকে ডক্টরের কন্ঠস্বর ভেসে এলো
” মিস্টার আয়াশ আপনার ওয়াইফ মাথায় আর কোমরে আঘাত পেয়েছে ৷ ঠিক হতে কয়েকদিন সময় লাগবে, ওনাকে বেশি হাটাচলা করতে দেবেন না, আর ওনাকে দিয়ে কোন কাজ করাবেন না, আর মেন্টালি কোন প্রেশার দেবেন না , এন্ড নাও ইটস আপ টু ইউ ৷”

আয়াশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, আপাতত কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না ওর , তবুও মনে জোর নিয়ে বলল
” ওর জ্ঞান ফিরবে কখন?”

” জ্বি, ওনার আর এক দুই ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে ৷”

” আমি কি তাহলে এখন বাসায় নিয়ে যেতে পারি ?”

” জ্বি অবশ্যই পারেন কিন্তু যা যা বললাম একটু খেয়াল রাখবেন ৷”

আয়াশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, আজ আয়াশ নূরের এই অজ্ঞানতায় যেন নিজেকে সবচেয়ে বেশী দূর্বল অনুভব করছে, নিজেকে আগে কখনো এতোটা লো ফিল হয়নি ৷ নূরের সাথে ভালো ব্যাবহার করুক আর না করুক নূর ওর সাথে থাকলে অদ্ভুত ভাবে ওর মনোবল বাড়ে ৷ আয়াশ নূরকে বেড থেকে তুলে কোলে নিলো , মেয়েটা সজ্ঞানে থাকলে হয়তো এতখনে ব্যাথায় কুঁকড়ে যেতো কথাটা ভাবতেই আয়াশের বুকের ভিতর ধুকধুক করছে ৷ ইফাও আয়াশ আর নূরের পিছন পিছন আসলো , ইফা এতখন বহু কান্নাকাটি করেছে , যতই হোক নূরকে ও নিজের বোনের মতো ভাবে ৷

আয়াশ নূরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বসলো, ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে, ইফা সামনের সিটে বসেছে আর আয়াশ ব্যাক সিটে নূরকে ওর কোলের মাঝে নিয়ে বসে আছে ৷ লাল রঙের শাড়িটায় ধুলো লেগে আছে, কিছু কিছু জায়গায় রক্তের ছাপ ৷ আয়াশ নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে যেন কোন বাচ্চাকে আগলে আগলে রাখছে ও ৷ নূরের দিকে তাকালেই বুকের ভিতর চিনচিন অনুভব করছে আয়াশ ৷

🎀

নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আয়াশ ৷ আশেপাশে সবাই ওকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ইফার চোখ কেঁদে কেঁদে ফুলে গেছে, আয়াশের খালাম্মু মানে ইফার মা নূরের পাশে বসে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ওনার চোখেও জল , মেয়েটাকে কে এমন ভাবে ধক্কা মারলো কেউ বুঝতে পারছে না, ইফা দেখেছিলো একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে যখন নূর মাটিতে পড়ে গেছে, তার মুখটা ঢাকা ছিলো তাই ইফা ওনার মুখটা দেখতে পাইনি ৷ আহান ও দূরে দাঁড়িয়ে আছে ৷অয়াশের বাবা তিনি আজ এতো বছর পর নূরের জন্য ঘর থেকে বার হয়ে এসেছেন ৷ উনি বসে আছেন সোফাতে, মেয়েটার প্রতি ওনার মনে মায়ার পাহাড় গড়ে উঠেছে, নূর প্রতিদিন সকাল বিকাল ওনার ঘরে গিয়ে ওনার খাবার দিয়ে আসত , খুব ব্যাস্ত না থাকলে মাঝেমাঝে ওনার সাথে গল্পও করতো ৷ উনিও কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে আছেন নূরের দিকে ৷ আয়াশ এখনো নূরের হাত ধরে আছে ৷ হঠাৎ আয়াশ কিছু বলতে যাবে তখনই আহান বলল
” ওই তো নূরের জ্ঞান ফিরেছে ৷ ”
কথাটা শুনে আয়াশ নূরের দিকে তাকালো, নূরের চোখ দুটো পিটপিট করছে ৷ আহান ছুটে যেতে গেলেও আয়াশের আফু সোনা ডাক শুনে পিছিয়ে গেল ‌৷ আয়াশ উত্তেজিত হয়ে বলল
” এই আফু সোনা ঠিক আছো তুমি ? আফু সোনা !”
নুর কিছুখন সবকিছু ঝাপসা দেখলো তারপর আস্তে আস্তে সবার মুখ ওর কাছে স্পষ্ট হতে লাগলো, আয়াশের গলার আওয়াজ ওর কানের কাছে এসে বাজছে ৷ নূর কথা বলতে পারছে না চুপ করে আছে ৷ আয়াশ এবার নুরকে বিছানা থেকে তুলে নিজের বুকের মাঝে আগলে নিলো , নূরের শরীরের তীব্র ব্যাথার কথা ওর হয়তো মনে নেই ৷ নূর আয়াশের বুকে মাথা রাখতেই আয়াশের হৃদস্পন্দন শুনতে পেল, মানুষের হৃদগতি যতো থাকে তার তুলনায় অতি দ্রুত হারে হৃদস্পন্দন চলছে ৷ হঠাৎ নূর শরীরে তীব্র ব্যাথার অনুভব করায় জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো ৷
নূরের কান্নার আওয়াজ শুনে আয়াশের মনে হলো যে নূরের সমগ্র শরীর জুড়ে ব্যাথা তাই দ্রুত নুরকে বিছানায় শুইয়ে দিলো , নূর গলা ছেলে কাঁদছে , আয়াশ হয়তো ওর শরীরের যন্ত্রনাটাকে আরো দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷
নূরকে এমন কাঁদতে দেখে আহান বলে উঠলো
” কি করছিসটা কি ওর অবস্থা কি তুই ভুলে গেছিস ? এমনিই শরীরের অবস্থা খারাপ তার ওপর তুই !”

আহনের কথাটাএই মুহূর্তে যেন আয়াশের সহ্য হলো না, আয়াশ চিৎকার করে বললো
“ওর সাথে যা করার আমি করবো, ওর ক্ষতি করতে হলেও আমি করবো, ওর ভালো করতে হলেও আমি করবো, তোমরা আমাকে বোঝাতে এসো না, ও আমার বউ আমার দায়িত্ব ৷ যাও এখান থেকে, ওর অবস্থা আমাকে বুঝে নিতে দাও ৷”

আহানের গলা ধরে এলো, ও খুব সাধারন ভাবে বলেছিলো আর তাতে আয়াশ এভাবে রিয়্যাক্ট করবে তা ও ভাবেনি ৷ ইফার মা আহানের অছে এসে বলল
” আহান বাবা থেমে যা তুই তো জানিস আয়াশ তোকে কতোটা ভালোবাসে, আসলে নূরের অবস্থা খারপ বলে ওর মাথার ঠিক নেই , তুই রাগ করিস না,চল এখান থেকে, আমরা ওকে বরং কিছুখনের জন্য একা থকতে দিই ৷”
আহান হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ইফা বেরিয়ে যেতেই ইফার মা আয়াশের মা কে ডাকলেন
” ভাইজান ৷”
আয়াশের বাবার কোন সাড়া শব্দ নেই, উনি কিছু একটা ভাবছেন ৷ ওনার ভাবনা ভঙাতে উনি আবার বললেন
” ভাইজান ৷ এই যে ভাইজান , চলেন আমরা না হয় পরে আসি ৷”

আয়াশের বাবা যেন একটু চমকে উঠলেন হঠাৎ ডাক শোনায়, উনি অবাক হয়ে বললেন
” কিছু বললে ?”

” জ্বী, আয়াশ আর নূর না হয় একটু একা থাকুক আমরা পরে আসি ৷”

উনি উঠে বললেন
” হ্যাঁ , ঠিক বলেছ, তুমি যাও আমি আসছি ৷”
উনি নূরের দিকে তাকালেন, নূর কাঁদছে , আয়াশ নূরের হাতটা মুঠিবদ্ধ করে মাথা নীচু করে বসে আছে, আয়াশের চোখের কোনে জল জমা হয়ে আছে শুধু গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা ৷উনি ওনার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে আয়াশকে বললেন
” আমার নূর মায়ের খেয়াল রাখিস বাবা ৷”
আয়াশ কেবলমাত্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানালো, কথা বলতে গেলেও একটু শক্তির প্রয়োজন হয় যা আয়াশের মাঝে নেই ৷
উনি বেরিয়ে গেলেন ৷ নূর এখন জোর জোরে কাঁদছে, থামার নাম নেই, ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ওর ওপর তীব্র অত্যাচার করা হয়েছে তাই এমন কান্না করছে ৷ আয়াশ মুখ উঠিয়ে নূরের দিকে তাকালো ,নূরের চোখের কোনা বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভিজছে ৷ আয়াশ হালকা কন্ঠ বলল
” এই আফু সোনা চুপ করো না প্লিজ , আমার বুকের মাঝে কেমন জানি হচ্ছে , তা তুমি কি বোঝোনা ৷”
নূরের কান্নার মাত্রা তীব্রতর হলো ৷ আয়াশ আর সহ্য না করতে পেরে জোরে ধমক দিয়ে বলল
” এই মেয়ে থামছো না কেন ! চুপ করতে বলেছি না ? আমার এই কান্না সহ্য হচ্ছে না তা কি বুঝতে পারছো না ? তখন থেকে বলছি না যে চুপ করো ! শুরূ করেছে তো থামার নাম নেই ৷”

নূর আয়াশের ধমক শুনে চুপ করে গেল ৷ অবাক চাহনিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ নূর থেকে যেতেই আয়াশ নূরের গলায় মুখ ডুবিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদে দিলো যার কোন সীমা নেই ৷নূর কখনো ভবেনি যে আয়াশ কখনো ওর জন্য কাঁদবে ৷ আয়াশের শরীরের কিছুটা ভার নূরের শরীরের ওপর পড়ছে ,নূর ব্যাথা অনুভব করলেও মুখ বুজে সহ্য করে নিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে বলল,,,
” আপনি খুব খারাপ !”

” আমি তো জানি আমি খারপ, তোমাকে ভালো রাখতে পারি না, ভালোবাসতে পারি না, কেবল কষ্ট দিতে পারি , তাই তো আমি খারাপ আফু সোনা ৷”
আয়াশ কেঁদেই চলেছে যার থামার নাম নেই ৷

#চলবে,,,,

#তুমি_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:15
#Suraiya_Aayat

বিছানার সাথে হালান দিয়ে বসে আছে নূর ৷ মুখটা শুকনো, চোখ মুখ ফোলা ফোলা, ক্ষনে ক্ষনে কোমরের আর মাথার ব্যাথাটা বেড়ে উঠতেই কেঁদে উঠছে নূর, আর যাই হোক এত ব্যাথা মুখ বুজে সহ্য করার মতো ক্ষমতা ওর নিজের মাঝে নেই ৷ চোখটা ঘুরিয়ে দেখলো আয়াশ সবে গোসল সেরে বেরিয়ে এসেছে, আয়াশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো নুর , রাত 2.55 বাজে আর এত রাতে আয়াশ গোসল করেছে ৷ নূর কিছু বলবে না আয়াশকে তাই চোখ বন্ধ করে নিলো ৷ আয়াশ গায়ে টি শার্টটা পরে নিয়ে নূরকে বলল
” আফু সোনা আইসক্রিম খাবে ?”

আয়াশের হঠাৎ এমন উদ্ভট কথা শুনে নূর অবাক হলেও চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইলো ৷ আয়াশ ওর মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল
” চকলেট খাবে ?”

আয়াশের এতো আরদার শুনেও নূরের মাঝে কোন পরিবর্তন নেই দেখে আয়াশ নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷ বেশ কিছুখন ধরে আয়াশের কন্ঠস্বর কানে না আসায় নূর চোখ খুলে তাকালো ঘরের মাঝে আয়াশ কোথাও নেই , নূর মাথাটা হালকা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে খানিকখন আয়াশকে খোঁজার চেষ্টায় ব্যার্থ হলো ৷ খুঁজে না পেয়ে পুনরায় চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো ৷ প্রায় ত্রিশ মিনিট পর শরীরে ঠান্ডা কিছু অনুভব হওয়াই নূর চমকে গেল, আচমকাই চোখ খুলতেই দেখলো আয়াশ ওর কোলের ওপর দুটো আইসক্রিমের বক্স আর 5টা চকলেট রেখে দিয়েছে ৷ নূর আয়াশের দিকে তাকাতেই দেখলো আয়াশ মাথা নীচু করে আছে আর মুখটা থমথমে ,চোখ দুটো লাল ৷ একটা মানুষ অতিরিক্ত কান্না করলে যেমনটা হয় ঠিক তেমনই ৷ নূর আরো গভীরভাবে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো, আয়াশ মাথা তুলছে না, চোখ জোড়া লেন্স বিহীন আর বদামী চোখে লাল আভা , নূর আয়াশের এমন অবস্থা দেখে খানিকটা শিউরে উঠলো, কই মানুষটা তো এতখন ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ কি হলো ? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আয়াশ আইসক্রিম আর চকলেট গুলো নূরের কোলের ওপর রেখে কন্ঠটা বেশ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল
” আফু সোনা আমি এই রুমে থাকলে তোমার হয়তো অসুবিধা হবে, আমি পাশের রুমে আছি তোমার কোন দরকার থাকলে আমাকে কল করে নিও ৷”

আয়াশের কথা শুনে নূরের মনে এক অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি হলো , তাহলে ওর ধারনটাই কি ঠিক ! মানুষটা কি ওর থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে তাই জন্যই কি ওর এই অবস্থায় ওকে একা ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে ! নূর খুব ভালোভাবেই জানে যে ওর সাথে যা হয়েছে তাতে আয়াশের কোন দোষ নেই এমনকি ওকে যে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে তার মুখটা নূর সম্পূর্ণ রুপে দেখতে না পেলেও অল্প অল্প দেখতে পেয়েছে, তার মুখটা একটা রুমাল দিয়ে বাধা ছিলো ৷নূর সহজে আয়াশের কাছে ধরা দেবে না, আয়াশের জন্য ওর মনে সুপ্ত অভিমানের সৃষ্টি হয়েছে আর তা হয়তো আয়াশকে সেরিনার সাথে দেখেই হয়েছে ৷ সেরিনার সাথে নূর আয়াশকে কল্পনা করতে পারে না, ওর মনে এই কয়েকদিনে আয়াশের জন্য আলাদা এক অনুভূতি নর আগমন ঘটেছে, আয়াশ নামক মানুষটা এখন প্রিয় মানুষের তালিকায় নাম লিখিয়েছে তাই প্রিয় মানুষদের কে অন্য কারোর সাথে সহ্য করা বড্ড কষ্টকর একটা কাজ ৷

আয়াশ ওর পকেট থেকে একটা ফোন বার করে নূরকে দিয়ে বলল
” এই নাও এটা তোমার ফোন, আগেরটা তো আমি ভেঙে দিয়েছিলাম, এটা তোমার জন্য , এতে আমার নাম্বার সেভ করা আছে আয়াশ বলে তাই কোন দরকার হলে আমাকে কল করে নিও আমি পাশের রুমে আছি ৷ ”

কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও আয়াশ আর দেরি না করে বেরিয়ে গেল ‌৷ নূরের বারবার বলতে ইচ্ছা করছিলো যে ” একটা বার থেকে যান না !”

নূরের গলা ধরে এলো, বহু কষ্টে ঢোক গিলে ফোনটা হাতে নিলো,ওয়াল পেপারে নূরের একটা সুন্দর ছবি দেওয়া , ফোনটা আনলক করে কনট্য৷ক্ট এ গিয়ে আয়াশের নামটা ডেভিল বলে সেভ করে নিলো আর পাশে একটা 😈 ইমোজি ৷ নূর চকলেট আর আইসক্রিম গুলোর দিকে তাকালো , এতো রাতে আয়াশ এগুলো কোথা থেকে আনলো নূর জানে না তবে এগুলো খাওয়ার আশা ওর মাটি হয়ে গেছে , এই মুহূর্তে আয়াশকে ও পাশে চেয়েছিলো , কিন্তু কতো সহজেই আয়াশ ওর হাতে একটা ফোন ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল ৷

💔

বয়স 45 এর মহিলাটার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আয়াশ, চোখ দিয়ে টুপিয়ে টুপিয়ে জল পড়ছে ৷ আজ নিজের চোখের জলটাকে বড্ড সস্তা বলে মনে হচ্ছে , আগে চোখের জলটাকে অতি মূল্যবান বলে মনে হতো কারন আয়াশ কখনো কাঁদতো না ৷ আয়াশের চোখের জলে মহিলার শাড়ির আঁচল ভিজছে , ওনার চোখেও জল , উনি কখনো আয়াশকে এতো ভেঙে পড়তে দেখননি ৷ উনি নিজের চোখের জলটা মুছে বলল
” কাঁদে না আয়াশ , তুই না আমার লক্ষী ছেলে ৷”

আয়াশ চোখের জলটা মুছে বলল
” কাঁদছি না আমি ৷ আই এম ওকে ৷”

উনি আয়াশকে বললেন
” দেখ ভালোবাসা নামক জিনিসটা কখনো অপরাধের নয় কিন্তু ভুল মানুষটাকে ভালোবাসা অপরাধের ৷ তুই সঠিক মানুষটাকেই ভালোবেসেছিস আর আমি এমন তো নয় যে তুই কেবল আমার কথা শুনে নূরকে বিয়ে করেছিস ! তুই তো নূরকে ভালোবাসিস তাইনা ? কি ঠিক বলিনি আমি বল ?”

আয়াশ একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল
” আমার ভালোবাসায় আর কি যাই এসে যাই আমি তো কখনোই কারোর প্রিয় হতে পারলাম না, কারোর না আর না কাউকে ভালোবাসতে পারলাম ৷ ”

উনি আয়াশের কপালে চুমু দিয়ে বললেন
” ধূর পাগল , তোর ভালোবাসা হলো খাঁটি , আর তুই যা করেছিস তা অন্যায় না, আমি কখনো চাইনি নূর তুই ব্যাতিত অন্য কারোর জীবনসঙ্গী হোক আর আমি মনে করি নূরের জীবনের ওপর এটুকু অধিকার আমার না থাকলে আর কারোর নেই ৷ আহান নূরকে ভালোবাসে সেটা ভুল নয় কিন্তু তাকে এখনো দূর থেকে ভালোবাসার কল্পনা করতে চাওয়া ভুল ৷”

আয়াশ মুচকি হাসছে আর মাঝে মাঝে চোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, অদ্ভুত মায়াজালে আটকে গেছে, সম্পর্কের মায়াজাল ‌৷

উনি আয়াশের চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন
” আহানের ফ্লাইট কবে ?”

আয়াশ নির্লিপ্ত ভাবে বলল
” সকাল 8টাই ৷”

” যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করতে বলিস ‌৷”

আয়াশ মাথা নাড়ালো ৷ উনি আয়াশকে আশস্ত করতে বললেন
” তা আহান কি তোর কাছে এসে বলেছে আজ কখনো যে সে তোকে ভালোবাসে ?”

” নাহ, ভাইয়া আমাকে কখনোই বলেনি এমনকি তার কথায় কখনো আমাকে বুঝতেও দেইনি ৷ আমি যখন ভাইয়াকে প্রথম বলেছিলাম যে আমি নূরকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু আমার সাথে নূরের বিয়ে করার কথা নূরের বাবা কখনোই মানবে না তাই আহান ভাইয়াকে নূরের সাথে বিয়ের অভিনয় করতে হবে তখনও ভাইয়া নূরকে ভালোবাসতো না, নূরের জীবনে আমি প্রথম এসেছি তবুও সেটা বড়ো কথা নয় , বড়ো কথা হলো ভাইয়া নূরকে ভালোবাসতো সেটা কখনো আমাকে বুঝতে দেইনি ৷ আজ একটা জিনিস বুঝলাম আমি হয়তো ভাইয়াকে ভালোই বাসতে পারিনি, ভাইয়া নিজের সব ভালোবাসা আমার প্রতি উজাড় করে দিয়েছে কিন্তু আমি পারিনি ৷ আমার কথা রখতে একবার ও অমত করেনি, নিজের ভালোবাসা নূরকে আমার কাছে তুলে দিয়েছে আমার একবার চাওয়াতেই কিন্তু আমি তার জায়গায় থাকলে নূরকে তার হতেই দিতাম না কখনো , আমি মানুষটা বড্ড স্বার্থপর ৷”

উনি আয়াশের কথা শুনে কান্না করে দিলেন আর আয়াশের গালে হাত রেখে বললেন
” নাহ, আমার আয়াশ স্বার্থপর হতেই পারে না , আমার আয়াশ আমার নূরকে ভালোবাসে আর নূর এই পৃথিবীতে এসেছে শুধুমাত্র আয়াশের জীবনসঙ্গী হিসাবে অন্য কারোর জন্য না, আল্লাহ আহানের জন্য অন্য কাউকে রেখেছেন ৷”

আয়াশ থমথমে গলায় বলল
” আমি হয়তো নুরকে জোর করে পাওয়ার চেষ্টা করেছি ৷”

“এটা তোর ভুল ধারনা আয়াশ , সৃষ্টিকর্তা যাকে যার জন্য সৃষ্টি করে সে কেবল তারই হয় ৷ সৃষ্টিকর্তা ব্যাতিত কারোর সাধ্য নেই তাদের আলাদা করার ‌৷”

আয়াশ মাথা নীচু করে আছে, মনের মাঝে কাজ করছে একরাশ অপরাধবোধ ৷
আয়াশ এবার উঠে দাঁড়ালো ৷ ওকে দেখে মহিলাটি বললেন
” কোথায় যাচ্ছিস?”

” ভাইয়ার কাছে, প্লিজ তুমি আমাকে আটকিও না ৷”

কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷ উনি ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন
” সেদিন যদি তোমার সেই সুপ্ত লোভটাকে আটকাতে পারতাম তাহলে আজ কারোর জীবনে এতো জটিলতা আসতো না, কোনদিনও ক্ষমা করবো না তোমাকে ৷”

রাত 4.25,,,,,

দরজার দিকে চেয়ে আছে নূর , বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি আয়াশ আসবে , এই বুঝি আয়াশ আসবে ,কিন্তু প্রায় 1 ঘন্টা হয়ে গেল তবুও আয়াশ আসলো না , নূরের ভীষনরকম কান্না পাচ্ছে, আজ শারীরিক অবনতির জন্য জড় বস্তুর মতো বসে আছে ও ৷ আইসক্রিম চকলেট কোনটা ছুঁয়ে অবধি দেখেনি ৷হঠাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ পেয়ে নূর চোখটা মুছে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকার ভান করতেই আয়াশ রুমে ঢুকলো ৷ নূরকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আয়াশ আর ওকে ডাকলো না , সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়লো ৷ নুর এক চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করলো , আয়াশ শুয়ে আছে ৷ হঠাৎ নুর আহহ করে চেঁচিয়ে উঠতেই আয়াশ ছুটে এসে বলল
” কি হয়েছে আফু সোনা ব্যাথা পেয়েছ?

নুর আয়াশের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
” আমি ওয়াশরুম যাবো ৷”
আয়াশ নূরকে কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল ‌ ৷
ওয়াশরুম থেকে ফিরে নুরকে খাটে শুইয়ে দিয়ে আয়াশ ওর পাশে বসতেই নুর জিজ্ঞেস করলো
” বসে রইলেন যে যাবেন না অন্য রুমে নাকি প্রেমিকা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই এখন আর তার সাথে কথা বলতে পারবেন না ?”

আয়াশ নূরের প্রশ্ন উপেক্ষা করে বলল
” তুমি কাউকে ভালোবাসো আফু সোনা ?”
নূর খানিকখন আয়াশের দিকে চেয়ে রইলো ৷ তারপর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে নিলেই আয়াশ আবার বলল
” বলো কাউকে ভালোবাসো কি ! ইয়েস অর নো ?”

নূর চুপ করে আছে, আয়াশ একটু রাগ দেখিয়ে বলল
“নিরবতা সম্মতির লক্ষন ৷ হ্যাঁ কি না? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে তুমি তার !”

নুর চোখটা খুলে বিরক্তি নিয়ে বলল
” যদি বলি হ্যাঁ !”

কথাটা শুনে আয়াশ দরজার দিকে হেটে যেতে গেলেই নূর ভাবলো আয়াশ হয়তো চলে যাচ্ছে ! কিন্তু নাহ , আয়াশ দরজা বন্ধ করে নূরের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
” আমি ব্যাতিত তুমি কারোর না মনে থাকবে ৷”

নূরের পাশে গিয়ে শুয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” তুমি শুধু আমার আর আমি শুধু তোমার, মাঝে কোন তৃতীয় ব্যাক্তি আসলে,,,,,!”

আয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগে নূর আয়াশের চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে এনে আয়াশের ঠোঁটে কামড়ে দিয়ে সরে এলো ৷ আয়াশ তো অবাক ৷ অবাক হয়ে বলল
” এটা কি হলো !”

নূর নড়চড়ে বলল
” বিরক্ত হচ্ছিলাম বড্ড , আপনাকে থামানোর প্রয়োজন ছিলো ৷”

আয়াশ নূরের কাছে গিয়ে বলল
” থামানোর জন্য আরো অনেক পথ আছে সেগুলো এপ্লাই করতে , যদিও জানি তুমি পারোনা তাই আমার শিখিয়ে দিতে দোষ কি ?”
কথাটা বলে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিতেই নুর আয়াশের টি শার্ট খামচি মেরে ধরলো ৷ আসলে আয়াশকে কাঁদো কাঁদো হয়ে রোমিও আশিকদের মতো মানায় না সে যে ডেভিল, তার ভালোবাসা ইউনিক , আর পাঁচ জনের মতো সে নয় ৷ তার ভালোবাসার ধরনটা যে অন্য , আর হাজারো কষ্টের মাঝে সেই আয়াশেকেই বারবার পেতে চাই নুর ৷

#চলবে,,,,