তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-৪৬+৪৭

0
855

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
পায়েল ছু/ড়িখানা নিয়ে রিমির দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে, রিমি অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছে না। রিমি হাত বাড়িয়ে নিজের ফোন খুঁজে অন্ধকারের মাঝে,কিন্তু ব্যর্থ হয়। রিমি হাক ছেড়ে পার্লারের স্টাফদের ডাকতে চাইলেও, পারেনা তার আগেই রিমির মুখ শক্ত করে চেপে ধরে ফেলে। রিমি ভরকে যায়। ছুটার জন্যে ছটফট করতে থাকে অনবরত কিন্তু পারেনা। অন্ধকারের জন্যে কিচ্ছু দেখার সাধ্যি নেই তার। সে বুঝতে পারছে না কে তার মুখ ধরে আছে কিন্তু, সে এইটুকু পারছে সে এক ভয়ংকর বিপদের সমখীন হয়ে পড়েছে। মনে মনে মহান আল্লাহ তায়ালাকে স্বরং করছে। পায়েল ধারালো ছু/ড়িটি রিমির গলা বরাবর ধরে। নিজের গলায় ছু/ড়ির অস্তিস্ব টের পেয়ে, রিমির বুঝতে বাকি থাকে না,রিমির হাতে সময় নেই। হয়তো এখুনি তাকে মে/রে ফেলা হবে। রিমির চোখে ভেঁসে উঠে অয়নের হাসিমাখা মুখস্রী। রিমি দু ফটো চোখের জল ফেলে। অয়নের সাথে বোধহয় তার পথ এইটুকুই ছিলো। পায়েল মনে মনে কুটিল হাসে হাসে। রিমি মৃত্যুর দারপ্রান্তে। রিমিকে মে/রে সে তার সমস্ত প্রতিশোধ নিবে। রিমিকে মে/রে ফেললেই অয়ন পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে। কথাটি ভেবেই পায়েল রিমির গলায় ছুরির আঘাত করতে নিলে, পিছন থেকে পায়েলকে কেউ টেনে নিয়ে যায় বাইরের দিকে। পায়েলের হাত থেকে ছু/ড়িটা পড়ে যায়। ঘরটা মুহুর্তেই, আলোকিত হয়ে উঠে। রিমি উঠে দাঁড়ায় তৎক্ষনাৎ। পাশে ছু/রি পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে মুখে হাত দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অয়ন এবং তার দেহরক্ষীরা উপস্হিত হয়। রিমিকে ভয় পেতে দেখে অয়ন ছুটে গিয়ে রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিমিও ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অয়নকে শক্ত করে চেপে ধরে। নেত্রকোণ বেয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। অয়নকে দেখে রিমি যেন তার ভরসার জায়গা খুঁজে পেলো। এখন তার কোন কিছুতেই ভয় নেই। রিমি খানিক্টা ফুঁপাতে ফুপাতে কম্পিত গলায়,

‘ কেউ এসেছিলো আমাকে মারতে, আমার গলায় ছু/রি বসিয়ে দিয়েছিলো একপ্রকার। কিন্তু তাকে আমি দেখতে পাইনি। আরেকটু হলে বোধহয় আমাকে মে/রেই ফেলতো। ‘

রিমির সম্পূর্ন কথা বলার পূর্বেই, রিমির মুখ হাত দিয়ে অয়ন অতি শান্ত কন্ঠে বলে,

‘ ম/রার কথা একদমি উচ্চারণ করবে না রিমিপরী। তুমিতো আমার অসিস্ত্বে বিচরণ করো, তোমাকে আমি কিছুতেই নিজের থেকে হারাতে দিবো না। ‘

অয়ন পরম যত্নে রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে রিমিকে শান্ত করার প্রচেষ্টা করে। অতঃপর শান্ত কন্ঠে অধরের কোণে বাকা হাসি ঝুলিয়ে আস্তে করে অয়ন রিমিকে বলে,

‘ যে কিংবা যারা তোমাকে আমার থেকে দূরে করার চেস্টা করে যাবে, তাদের অসিস্ত্ব আমি বিলিন করে দিবো। ‘

রিমি থমকে যায়। অয়নের কথার মূল ভাবটি বুঝার প্রয়াস করার আগ মুহুর্তে, অয়ন রিমিকে সামনে থাক চেয়ায়ে বসিয়ে দেয়। অয়নের চোখ যায় রিমির গলায় দাঁগের দিকে। পায়েল ছু/ড়ি যখন রিমির গলায় ধরেছিলো, তখন রিমির গলায় ছু/ড়ির সামান্য ধারে রিমির গলার নীচের দিকে সামান্য চামড়া ছিলে গিয়ে, র/ক্তখনন হয়। রিমির র/ক্ত দেখে মাথা বিগড়ে যায় অয়নের। অয়ন রিমির গলার দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে স্টাফদের ডাকতে শুরু করে। অয়নের ডাকে সকলে তৎক্ষনাৎ ছুটে আসে। অয়ন রাগে গর্জাতে গর্জাতে জিজ্ঞাসা করে,

‘ এতোক্ষন লাগে কেন? একটা কাজ যদি ঠিক মতো হয়। আমার রিমিপরীর খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলাম, পেরেছিলে তোমরা? ব্লাডি অল। ‘

সব স্টাফরা নীচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন তাদের দিয়ে ওষুধ আনিয়ে, রিমির ক্ষ/ত স্হানে ওষুধ লাগিয়ে দেয়। অয়নের চোখ ছলছল করছে রিমির সামান্য ব্যাথায়,যেন ব্যাথা রিমির নয় তার লেগেছে। রিমি প্রাপ্তির হাসি হাসে। সে সত্যি ভাগ্যবতী। সে জানে এসব নতুন কিছু নয়, কিন্তু মাঝে মাঝে সে অবাক হয় বটে। একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতোটা ভালোবাসতে পারে?

অতঃপর রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,

‘ ভয় পেয়ো না, আমি আছি তো। ‘

রিমির স্মিত হেসে,অয়নের বলিষ্ট হাতজোড়া নিজেত গালের সাথে আলতো করে মিশিয়ে, অয়নের আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আপনি শুধু আমার ভালোবাসার মানুষ নন, আপনি আমার বিশাল এক ভরসার জায়গায়। ভালোবাসি। ‘

অয়ন হেসে উঠে তার রিমিপরীর কথায়। অয়নও রিমির কথার বিপরীতে, রিমির ললাটে অধর ছুইয়ে দেয় শুধু।

‘ আমি তাহলে উঠি। তুমি রেডি হয়ে নাও। দেখা হচ্ছে সন্ধ্যায়। ‘

কথাটি বলে অয়ন তার পড়নে তার সাদা পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে চলে যেতে যায়,কিন্তু বাধা দেয় রিমি। হাত পেচিয়ে অয়নের হাত ধরে। নেত্রপল্লবে স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে অভিমান। তার ভালোবাসি কথার উত্তর না পাওয়ার গভীর অভিমান। অয়ন রিমির হাত নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে,অত্যান্ত শীতল ভালোবাসার সহিত বলে,

‘ মনে রয়ে যায় অনেক কথা, সেসব কথাগুলোর প্রতিটি মালায় গেঁথে রয়েছে ভালোবাসি শব্দের প্রতিটি গভীর শব্দ। তুমি কি অনুভব করতে পারছো রিমিপরী? ‘

রিমি উত্তর দেয় না। মুচকি হেসে আখিজোড়া বুজে রাখে।

____________________

পায়েলকে মুখ-হাত পা বেধে টেনে হিচড়ে কিছু মহিলা দেহরক্ষীগন ফেলে দেয় সেই বিশাল কক্ষটিতে। পায়েল পড়ে যায়। মহিলা গুলো পায়েলের আখিজোড়া খুলে দেয়। সামনে শশরীরে অয়নকে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে ছিটকে দূরে যেতে নিলে, অয়ন পায়েলের হাত ধরে নিজের দিকে টেনে, পায়েলের দিকে ঝুঁকে যায়। অতঃপর সেই ধারালো ছু/ড়িটি পায়েলের সমস্ত মুখস্রীতে ছুঁইয়ে দিতে দিতে বলে,

‘ এই ছু/ড়ি দিয়ে তুমি আমার রিমিপরীকে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলে, তাইনা পায়েল ডার্নিং! ‘

পায়েল অয়নের কথার উত্তর দেয় না। ভয়ে কাঁপতে থাকে, কেননা সে বুঝে গিয়েছে, তা কতটা ভয়ংকর পরিনতি হতে পারে!

‘ আচ্ছা তুমি আমাকে কতটা বোকা মনে করো পায়েল বেবস? তুমি আমার রিমিপরীকে মে/রে ফেলতে চাইবে, অথচ আমি অয়ন চৌধুরী বসে থাকবো। এতোটা সাহস তোমার হয় কী করে? এন্সার মি! ড্যাট ইট। ‘

অয়নের হুংকারে হৃদয় কেঁপে উঠে পায়েলের। অয়ন রিমির প্রতিটা কাজে নজর রেখে দিয়েছিলো। এমনকি রিমি যেখানেই যায়, সেখানেই সিটি টিভি ক্যামেরা রেখে রিমির সমস্ত কাজ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছিলো অয়ন, তাই পায়েল যখন রিমিকে মা/রতে যায় পার্লারে, সেই ঘটনাটি এড়ায় নি অয়নের চোখে। তখন পায়েলের স্পর্ধা দেখে রেগে গেলেও, শান্ত থাকে অয়ন। মনে মনে নানা কষ কষতে থাকে। অতঃপর বাঁকা হাসি দেয়।

পায়েলর আর্তনাদে অতীত থেকে ফিরে আসে অয়ন। পায়েল অয়নের পা ধরে, অনুরোধ করে বলে,

‘ এইবারের মতো ছেড়ে দাও অয়ন। আমি কখনো তোমাদের মাঝে আসবো না। ‘

‘ সেই সুযোগ দিলে তো। তুমি এখন চাইলেও আমাদের মাঝে কখনো ঢুকতে পারবে না। সেই ব্যবস্হা আমি করে দিবো। ‘

অয়ন কথাটি বলেই, সিগারেটের প্যাকেট বের করে, তা ঠোট চেপে ধরে, অতঃপর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে,

‘ আগের বার বেঁচে গিয়েছিলে পায়েল, কিন্তু এইবার তুমি পার পাবে না। তুমি আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছো, তার বিনিময়ে এইবার তোমাকে নিজের জানকে কোরবানী দিতে হবে। ‘

পায়েল কাঁদতে কাঁদতে অয়নের পা ধরে পুনরায় মিনতির সুরে বলে,

‘ আমাকে মে/রো না অয়ন। আমি বাঁচতে চাই। ‘

অয়ন পা দিয়ে পায়েলকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেলে। অতঃপর মহিলা গার্ডদের কিছু একটা ইশারা করে, মহিলা গার্ডরা পায়েলকে ধরে পিছনের ঘরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। সেখানে খাঁচায় এক ক্ষুধার্ত বাঘ বন্দী আছে। তাকে দেখে ভয়ে হাত -পা ঘামতে শুরু করে পায়েলের। অয়ন ছু/ড়িটা ফেলে, পায়েলের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

‘ তুমি আমার কাছে বরাবরই স্পেশাল। তাই তোমার মৃ/ত্যু টাও একটু স্পেশাল হয়ে যাক! কি বলো? ‘

পায়েল অয়নকে কিছু বলার পূর্বেই, মহিলা দেহরক্ষীগুলো পায়েলকে খাঁচায় ফেলে ছুড়ে দেয়। ক্ষুধার্ত বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়েলের উপর। অয়ন গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। পায়েলের আর্তনাদ চারপাশেই সীমাবদ্ধ থাকে। অয়ন ঘাড় কাত করে বাঁকা হেসে বলে,

‘ পায়েলের গেইম ইজ ওভার নাও! নাও নেক্সট ইজ। ‘

অয়ন উচ্চস্বরে হেসে উঠে। পায়েলের দেহ বাঘটা খুবলে খুবলে ছি/ড়ে খেতে থাকে। অয়ন সিগারেট ধোঁয়া ছাড়তে থাকে।

……..চলবে কী?

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসার মানুষটি অন্যকারো জানা সত্ত্বেও,তার প্রতি ভালোবাসার স্হানটি আজীবন রয়ে যায়। আমানের বেলাও তা হয়েছে। আজ রিমির মেহেংদী অনুষ্টানে লুকিয়ে এসেছে সে। পরশুদিন রিমির বিয়ে,সেদিনই দেশ ছেড়ে দিবে আমান,কিন্তু নিজের প্রিয়তমার মেহেদী রাঙ্গা হাতটুকু দেখার লোভটুকুও সামলাতে পারলো না আমান। তাই এতোটা কড়া পাহারের মাঝেও,প্রেয়সীকে এক ঝলক দেখতে ছুটে এসেছে চৌধূরী বাড়িতে। কিছুক্ষন এর মাঝেই, বিশাল এক গাড়ি থেমে যায়। সেই গাড়ি থেকে এক এক পা করে রিমি বেড়িয়ে যায়। সামনে বিশাল কার্পেটে তার পা বাড়িয়ে হাটতে থাকে সামনে। পিছনে রয়েছে মহিলা দেহরক্ষীগণ! আমান আড়াল থেকেই দেখতে পায়, তার রিমিপাখিকে আজ কতটা মোহনীয় লাগছে। লাল টুকটুকে লেহেংগা যার ভার আনুমানিক বেশ হবে। লাইট হাল্কা ম্যাকেপের সঙ্গে রিমিকে মানিয়েছে সবলিমিয়ে। উপর থেকে গোলাপ ফুলের বর্ষন করা হচ্ছে,রিমির উপর।চারিদিকে সাংবাদিকের ছড়াছড়ি ডক্টর এয়ারসি অর্থাৎ রুহানা চৌধুরীর একমাত্র নাতীর মেহেংদী সন্ধ্যা বলে কথা।এতো মানুষের মাঝে রিমির আখিজোড়া শুধু তার ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে চলেছে। রুহানা চৌধুরী এবং রুজা চৌধুরী ততক্ষনে চলে আসেন। রুহানা চৌধুরী রাজকীয় ভাবে উপস্হিত হয়। সমস্ত মিডিয়ার ক্যামেরা রুহানা চৌধুরীর দিকে চলে যায়। চারদিকে এতো আলো, এতো ক্যামেরার মাঝে রিমির বেশ অস্বস্হি হচ্ছে। রিমির পরানপাখি তো শুধু অয়নকে খুঁজে চলেছে প্রতিক্ষন।হুট করে রিমির গাঁয়ে সাদা সিল্ক কাপড় উপর থেকে ফেলে হয়। রিমিকে অবাক করে দিয়ে, অয়ন রিমিকে পিছন থেকে এসে কোলে তুলে নেয়।৷
অয়নকে দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও, সামলে নেয় রিমি নিজেকে। অয়নের পড়নে রিমির সাথে মেচিং করে ডায়মন্ড স্টনের পাঞ্জাবি, সাথে কালো কোর্ট। অয়নের ফর্সা মুখস্রীতে আলতো হাসি, অয়নকে প্রতিক্ষনে সুদর্শন পুরুষে পরিনত করে তুলছে। অয়ন রিমির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

‘ আমার রিমিপরীকে শুধুমাত্র আমিই দেখবো। কোনপ্রকার দুনিয়ার আঁচ আমার পরীর গাঁয়ে লাগতে দিবো না। আমার বউ একান্তাই আমার। ‘

রিমি অয়নের গলা জড়িয়ে ধরে, মুচকি হাসে। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে, তাদের উপর বর্ষিত হতে থাকে ফুলের বর্ষন। আমান দূর থেকে দেখে যাচ্ছে সবকিছু। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। আহা কি বেদনাদায়ক দৃশ্য! ভালোবাসার মানুষ অন্য কেউ ভাবতেই বুকটা ভারি হয়ে উঠে আমানের।

মেঘ ও দৌড়ে ছুটে আসে। সকলে মুগ্ধ হয়ে দেখতে রিমি এবং অয়নকে। মেঘ রুহানা চৌধুরীর কাছে গিয়ে, উৎফল্ল হয়ে বলে,

‘ দেখো গ্রেন্ডমা! কত্ত কিউট লাগছে দুজনকে। ‘

মেঘের কথায় মুচকি হেসে রুহানা চৌধুরী অয়ন এবং রিমির কাছে যায়। ইশাও মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। অয়ন রিমিকে কোলে করে স্টেজের নীচে নামায়। রুহানা চৌধুরী রিমির থুত্নি উচু করে, হেসে বললেন,

‘ মাশা-আলাহ। দুটিকে কি সুন্দর মানিয়েছে। দোয়া করি যেন,কারো নজর যেন না লাগে। ‘

রুহানা চৌধুরীর কথার প্রতিউত্তর অয়ন রিমির হাতজোড়া শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে,

‘আমি থাকতে,কাউকে নজর লাগতে দিবো না। তুমি চিন্তা করো না গ্রেন্ডমা। ‘

অয়ন রিমির হাত ধরেই, স্টেজে গিয়ে বসিয়ে দেয়। রিমিও বসে পড়ে। শহরের নামি দামি মানুষেরা উপস্হিত হয়েছে অয়ন এবং রিমির মেহেংদী উৎসবে। চারদিক থেকে ছবি তুলে যাচ্ছে সাংবাদিকগন। রিমির মাথায় লম্বা করে অয়নের দেওয়া সাদা ঘোমটি। রিমির মায়াবী মুখস্রী পর্দার আড়াল থেকে আড়চোখে দেখে যাচ্ছে অয়ন এবং মুচকি মুচকি হাসছে। অয়নের হৃদয়কাঁপানো হাসিত বুকটা ধরফর করছে রিমির।লোকটা এতো সুন্দর করে হাসে কেন? লোকটা হাসলে মনে হয় স্বয়ং এক ফালি চাঁদ এসে কিরণ ছড়াচ্ছে চারদিকে। রিমিকে মেহেদী পড়ানোর জন্যে মেয়েরা রিমির কাছে আসতে চাইলে বাঁধা দেয় অয়ন। কিছুটা কঠোর স্বরে বলে,

‘ আপনারা রিমিপরীকে মেহেংদী পড়াবেন না। ‘

অয়নের এমন কঠোর কথায়, রুজা চৌধুরী অবাক হয়ে অয়নকে প্রশ্ন করে,

‘ তাহলে? উনারা না পড়ালে কে পড়াবে? উনারা শহরের বেস্ট মেহেংদী ডিজাইনার। তাইতো উনাদের হাইয়ার করা হয়েছে। ‘

অয়ন কিছুক্ষন চুপ থেকে উঠে চলে যায়। রিমি অবাক হয়ে হতবাক দৃষ্টিতে অয়নের কার্যকলাপ লক্ষ্য করে, আসলে অয়ন চাইছে টা কী?

________________

সানা জেলের এক অন্ধকার রুমে ঠায় বসে আছে। নেত্রকোনে বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে অনাবরত। সে জানে না এই অন্ধকার কুঠির থেকে তার আদোও মুক্তি আছে? যদিও সে নিজেই এই অন্ধকার কুঠিরকে বেঁছে নিয়েছে। পুলিশ যখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো, তখন জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে অভিমানে, রাগে, জেদে সানা বলে দেয়, সে সুমাইয়াকে মারতে সেদিন হসপিটালে গিয়েছিলো।
সানার সিকারক্তিতে, পুলিশ তার যথাযথ স্টেপ নেয়। সানাকে তৎক্ষনাৎ গ্রেফতার করা হয়। সায়েদ বর্তমানে টিয়ারপি থানার নতুন ইয়াং ইন্সপেক্টর! সদ্য জয়েনিং হয়েছে তার। বেশ বিচক্ষন তিনি। তার বিচক্ষনতার জন্যে প্রশংসায়িত হয়েছেন বহুবার। সানার ক্যাসটি তিনি দেখছেন। সানার ঘটনাটি শুনে, তার মনে হচ্ছে সানা মিথ্যে কথা বলছে। তিনি বিষয়টি খুটিয়ে দেখার জন্যে, সানার কাছে যায়। সানা মাথা নিচু করে বসে ছিলো। কারো পায়ের শব্দে মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখে, পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিত একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে কিছুটা তাচ্ছিল্য সুরেই প্রশ্ন করে সানা,

‘ আমি তো সবকিছু স্বীকার করেছি, আর কি জানার জন্যে এসেছেন আপনি? ‘

সায়েদ কিছুটা নড়েচড়ে উঠে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে সানার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ আপনি আমাকে আগে বলুন, আপনি কি আদোও কাজটি করেছেন? দেখুন এইটা কিন্তু অনেক সেন্সিটিভ ইস্যু, যে অন্যায় করেছে সে কিন্তু আপনার একটা ভুলের জন্যে বেঁচে যাবে। ‘

সানার পুনরায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

_________________

ফারহান সুমাইয়ার কেবিনে বসে আছে। নিষ্পলক চেয়ে রয়েছে সুমাইয়ার ঘুমন্ত মুখের পানে। ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও সুমাইয়ার জ্ঞান ফিরছে না। তা নিয়ে ডক্টরসহ, ফারহান সবাই বেশ চিন্তিত। ফারহানের ফোন হুট করে বেজে উঠে। ফোন হাতড়ে তাকিয়ে দেখে রুহানা চৌধুরীর ফোন। রুহানার নাম দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় ফারহানের। আজ রুহানার চৌধুরীর জন্যেই তার সুমু এতোটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। পুনরায় ফোন বেজে উঠলে, কিছুটা তিক্ততা নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে ফারহান। ফোনের অপাশ থেকে রুহানা চৌধুরী বলেন,

‘ আজ তোমার ছোট ভাইয়ের মেহেংদী অনুষ্টান। আজ অন্তত তুমি বাইরে থেকো না ফারহান। ‘

‘ আমি কি করবো না করবো তা তুমি ঠিক করে দিবে না, গ্রেন্ডমা! রাখছি আমি। ‘

কথাটি বলেই ফোন বন্ধ করে দেয় ফারহান। রুহানা চৌধুরী আশাহত হয়।

___________

অপরদিকে, অয়ন তার হাতে মেহেদীর প্যাকেট নিয়ে আসে। অতঃপর হাটু গেড়ে রিমির কাছে বসে। রিমির হাতজোড়া নিজের হাটুতে রেখে, রুজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আমার রিমিপরীকে মেহেদী আমি পরিয়ে দিবো, অন্য কেউ নয়। ‘

‘ কিন্তু তুমি কি পারবে অয়ন? ‘

রুজা চৌধুরীর কথার মাঝেই, রিমি তাকে থামিয়ে দিয়ে স্মিত হেসে বললেন,

‘ উনি যা চাইছেন তাই হোক। আমি হাতে আমার স্বামী মেহেদী পরিয়ে দিবে, এর থেকে সৌভাগ্য আর কি হতে পারে বলুন? ‘

রুজা চৌধুরী থেমে যায়। অয়ন রিমির হাত ধরে পরম যত্নের সাথে মেহেদী পড়িয়ে দিতে থাকে। রিমিসহ সবাই অয়নের হাতের নিপুন কাজ দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়। কেননা অয়ন একজন প্রফেশন ডিজাইনারের মতো রিমির হাতে মেহেদীর ডিজাইন করে দিচ্ছে। রিমিকে অবাক হতে দেখে, অয়ন মুচকি হেসে বলে,

‘ আমার রিমিপরীকে নিজ হাতে মেহেদীর রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তুলবো আমি। সেই অধিকার শুধুমাত্র আমার। তাইতো আগে থেকেই ইউটিউব দেখে শিখে রেখেছিলাম। ‘

রিমি মুগ্ধ হয় অয়নের কথা শুনে। লোকটার ভালোবাসা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। অয়ন রিমির হাতে সুন্দর করে ‘ অয়ন ‘ নামটি লিখে দেয়। রিমি নিজের হাত দেখে মুচকি হাসে। অয়ন রিমির পাশে বসে বলতে থাকে,

‘ আমার নামটি তোমার হাতে লিপিবদ্ধ করে দিলাম, এই নাম কখনো মুছতে পারবে না তুমি রিমিপরী। ‘

প্রতিউত্তরে রিমি উত্তর দেয়,
‘ আমি কখনো মুছতে চাইও না। ‘

কিন্তু হুট করে রিমির হাত পাশে থাকা সোফার কাপড়ে লেগে লেপ্টে যায়। রুজা চৌধুরী হায় হুতাশ করে বললেন,

‘ একি হলো? বিয়ের আগে বরের নামটাই মুছে গেলো। এতো ভালো লক্ষন নয়, তাহলে কী বিয়েতে কোনপ্রকার বাঁধা আসবে? ‘

অয়ন কথাটি রাগে গজরে উঠে একপ্রকার। রাগে চিৎকার করে বলে,

‘ জাস্ট স্টপ ইট রুজা চৌধুরী। এইসব কিচ্ছু হবে না। আমাদের বিয়েতে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না, কেউ না। ‘

কথাটি বলেই অয়ন রিমির হাত ধরে একপ্রকার টেনে উপরের দিকে নিয়ে যায়।

চলবে….কী?