#তুমিময়_বসন্ত
২৪.
#writer_Mousumi_Akter
আয়াস এর বুকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে তার হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করছি।কোথাও কেউ নেই, আয়াস আর আমি ছাড়া।চারদিকে ঝুম বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে।হালকা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে শরীরে।ঠান্ডা অনুভব, ঝুম বৃষ্টির শব্দে আয়াস কে জড়িয়ে ধরে রেখে শরীর আর মন উভয় ই প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট।কিছু আবহাওয়া বোধহয় প্রেম নিয়েই হাজির হয়।আজকের আবহাওয়া ও এসেছে প্রেমের আগমন হয়ে।আমি অনুভব করছি আয়াস কে কাছে পাওয়ার আরো গভীর ভাবে ভালবাসার।কিন্তু কিছু অনুভূতি যে মুখে প্রকাশ করা যায় না।মন চাইলেও লজ্জায় প্রকাশ করা যায় না।মন চাইছে চিৎকার করে বলি ভালবাসি আয়াস তোমাকে এখন আর আপনি নয় তুমি বলতে খুব ইচ্ছা করে।এই আপনি শব্দটা বড়ই বিরক্ত লাগে এখন আমার।তুমি বলে ডাকতে ইচ্ছা করে।রাত দিন ভালবাসি বলে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু লজ্জায় মুখে এসে আটকে যায়।সারাদিন মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি আমি।সারাদিন তোমার রোমান্টিক কথার রোমান্টিক রিপ্লাই করি কিন্তু তুমি শুনতে পাও না।তুমি কেনো আমায় জোর করোনা।তুমি একটু জোর করলেই তো পারো।তুমি তো জিদ ধরতে পারো মুগ্ধতা আমাকে আর আপনি করে বললে কথা বলবোনা।আমাকে কেনো আপনি আপনি করো।আমাকে তুমি করে বলতে পারো না।আমাকে তুমি করে বলতেই হবে।বলতে হবে মানে বলতেই হবে।তুমি জোর করলেই তো আমি একটু ইজি হয়ে তুমি করে বলতে পারি।তোমার প্রতি আমার মনে মনে ভীষণ অভিমান কেনো জোর করোনা আমাকে তুমি।কেনো জোর করে বলোনা আমাকে ভালবাসি বলতেই হবে।তুমি জোর করলেই তো ভালবাসি বলতে পারি।তাকে জড়িয়ে ধরে যেনো অজানা অনুভূতি শরীরে তরঙ্গের মতো ঢেউ তুলছে।তবুও নিজেকে সামলে নিলাম আমি।
এমন সময় আয়াস এর ঠোঁটজোড়া আমার কানে স্পর্শ করলো।খুব আস্তে আমাকে বললো,
“মুগ্ধতা বাসায় চলো আর ভেজা যাবে না।তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।কয়েকদিন পরেই এডমিশন।”
জোরালো অধিকার নিয়েই বললাম,
“না আমি ভিজবো।বছরের প্রথম বৃষ্টি ভীষণ ভালো লাগছে।”
আয়াসের বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি,আমার মাথার উপর আয়াসের হাত।
“আয়াস কে বললাম আপনি হাত দিয়ে রেখেছেন কেনো?”
“তোমার মাথায় পানি পড়ছে তাই?”
“কিন্তু আমিতো ভিজেই গিয়েছি আপনার হাত পারে নি কিন্তু ভেজা থেকে আটকাতে।”
“আমার দু’হাত তোমাকে আগলে রাখার জন্য।যতটুক সম্ভব চেষ্টা করেই যাবে।”
আয়াস কে ধাক্কা মেরে খানিক টা দূরে সরে গেলাম আমি।আয়াস থুতনি তে হাত ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি দুই হাত আকাশে মেলে ঘুরছি। পৃথিবী টা ভীষণ সুন্দর মনে হচ্ছে।নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ বলে মনে হচ্ছে।সহসায় হেসে যাচ্ছি আমি।ভালবাসার মানুষ টা যদি পারফেক্ট আর পারমানেন্ট হয় তাহলে তার থেকে সুখি মানুষ আর কেউ হতে পারেনা।একজন মানুষ ঠিক বলে পৃথিবীর সব ই যেনো সুন্দর মনে হচ্ছে আমার।দিনশেষে একটা মানুষের উপর ই নির্ভর করে ভাল থাকা।মানুষ টা যদি মানুষের মতো হয়।
আয়াস রোড থেকে ছাতা টা তুলে নিয়ে আমাকে বললো,
” চলো এইবার।প*রীর মতো বউ আমার।এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে, মন খুলে হাসছে এইদিকে আমার অবস্থা ইন্না-লিল্লাহ হয়ে যাচ্ছে।”
“কেনো?”
“কি থেকে কি হয়ে যাবে তার ঠিক নেই।এক্ষুনি বউ আমাকে চরম অসভ্য উপাধী দিয়ে দিবে।”
“আজ আর অসভ্য উপাধী দিবোনা।”
“সিওর।”
“হুম।”
“আচ্ছা শোনো।”
“হুম।”
“একটা চুমু খেতে পারি প্লিজ।জাস্ট একটা।ওয়েদার টায় এমন চুমু খেতেই হবে।না হলে প্রেমিক হৃদয় বড্ড বেশী ছটফট করবে।”
বলেই ওষ্ট ডুবিয়ে দিলেন ডান গালে ডান গাল থেকে বাম গালে।বাম গাল থেকে কপাল, কপাল থেকে ওষ্ট।তার আলতো পরশের ভালোবাসা আমার ভীষণ ভালো লাগছিলো।বিদ্যুৎ এর মতো কেঁপে ওঠা শরীর ভাল লাগা খুজে পেয়েছিলো।
আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“পারমিশন চেয়েছেন বাট আমি কি পারমিশন দিয়েছি।”
“তুমি দিতে আমি জানি।আর জেনেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ টা সেরে ফেললাম।”
“না পারমিশন দিতাম না।”
“তুমি দিতে।”
“বললাম তো না।”
“ওকে এখন আমাকে চুমু দিলে আমি বিলিভ করবো যে তুমি অনুমতি দিতে নাহ।”
“মানে,এটা আবার কেমন শর্ত।”
“পারবে না তাইনা?এইজন্য তো বললাম যে তুমি অনুমতি দিতে।”
“সাথে সাথে আয়াসের গালে চুমু দিয়ে বললাম এই যে প্রুভ করেছি আমি পারমিশন দিতাম না।”
মনে মনে বললাম আপনি এত রোমান্টিক কেনো?আসলেই অনুমতি দিতাম।আর এখন আমার আপনাকে চুমু দিতে ইচ্ছা করছিলো তাই দিলাম।এক ঢিলে দুই পাখি মা* র *লা*ম আরকি।
আয়াস এবার খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললো,
“এতেও লাভ আমার ই হলো।এমন ডেয়ার নিও মাঝে মাঝে।”
“আমি জাস্ট প্রুভ করেছি বুঝলেন।”
“প্রুভ ট্রুভ সব মিথ্যা।আমি জানতাম তোমার আমাকে চুমু দিতে ভীষণ ইচ্ছা করছিলো।বিকজ আমি ভিজলে আমার গাল মারাত্মক সুন্দর লাগে।আর সে গালে চুমু দেওয়ার ইচ্ছা মুগ্ধতার খুব করে হচ্ছিলো।শুধু লজ্জায় বলতে পারছিলো না।”
“কি বাজে কথা।”
“কোনো বাজে কথা নয়।তোমার চোখ মুখ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি।”
ওর সাথে কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।তাই আমি চুপ করে গেলাম।দুজনে হাঁটছি। শহরে লোড শোডিং হয়েছে।আলো নেই কোথাও।এদিক টা মেইন শহর না তাই রাস্তার দুই সাইড দিয়ে দোকান পাট নেই।তবে মানুষের বসতি আছে খুব।বসবাসের জন্য অত্যান্ত নিরিবিলি এই সাইডের পরিবেশ।হঠাত আয়াস শার্টের বোতাম খোলা শুরু করেছে আমার দিকে তাকিয়ে।আয়াসের শার্ট খোলা দেখে আমার ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে।
আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কি ব্যাপার আপনি শার্ট খুলছেন কেনো এই মাঝরাস্তায়।”
আয়াস শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো,
“প্রয়োজন আছে।”
আমি আরো বেশী ঘাবড়ে গেলাম।ও আবার উল্টা পাল্টা করবে নাতো।ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“কি প্রয়োজন।”
“প্রয়োজন টা তোমাকে ঘিরেই।”
“আমাকে ঘিরেই মানে।দেখুন এটা কিন্তু আমাদের বেডরুম না।এটা রাস্তা।এখানে একদম উল্টা পাল্টা কিছু করার কথা ভুলেও ভাববেন না বলে দিচ্ছি।আমি কিন্তু এটা এলাউ করবো না।”
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে।শার্ট টা আমার কোমরে বেঁধে দিয়ে বললো,
“ওড়না পিঠের দিকে ভালো ভাবে জড়িয়ে নাও।সামনেই আমাদের বাসা আর বাসার সামনে কয়েক টা দোকান আছে।ওখানে মানুষ জন আছে।ভিজে শরীরের ভাজ বোঝা যাচ্ছে।সো আমি চাইছি না কেউ আমার বউ কে অন্তত এইভাবে দেখুক।”
ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।আমি কি ভাবলাম ছিঃএবার নিজের ই লজ্জা লাগছে।লজ্জায় আয়াসের দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে বললাম, হুম।
আয়াস আবার আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
“এটা বেডরুম না মানে বুঝলাম নাতো প্রিয়তমা।কি বলছিলে তখন।”
আয়াস যে কথাটা আবার ও তুলবে আমি তখন ই বুঝতে পেরেছিলাম।সে প্রতিটা কথার পয়েন্ট মনে রাখে।আমি আসলে কিভাবে কথাটা এড়িয়ে যাবো বুঝতে পারছিনা।আমি কি বলবো ভাবছি তখন ই আয়াস বললো,
” কি মিথ্যা বলবা সেটা ভাবছো তাইনা?মাথায় এখনো কোনো আইডিয়া আসেনি বুঝতে পারছি।আচ্ছা ভাবো ভেবে দেখো কি বলা যায়।।”
“কি ভাববো কিছুই ভাবছিলাম না।আমি জাস্ট বলছিলাম এটা আমাদের রুম না।আপনি এখানে চেঞ্জ করছেন কাপড় কোথায় পাবেন।সেটা কে টেনে টুনে এত বড় করার কি প্রয়োজন।”
“ওওওওওও তাই। তুমি আসলে এটা বলছিলে তাইতো।আমি আসলে গালতিছে মিসটেক করে ফেলছি প্রিয়তমা।”
দুজনে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরে এলাম।বাসায় প্রবেশ করেই ফুল গুলো জগের ভেতরে পানি দিয়ে রেখে দিলাম।দুজনেই চেঞ্জ করে নিলাম।আরহী কুসুম ভাবির সাথে গল্প করছিলো।আমি ঘর ঝাড়ু দিলাম।পুরা ঘর ধুলায় ভরে গিয়েছে।সবার বিছানা ঠিক ঠাক করে দিয়ে ডায়নিং এ খাবার দিলাম।
আরহী এগিয়ে এসে বললো,”দুলাভাই বউ নিয়েই ভিজলেন,শা*লিকে ডাকলেন না।”
আয়াস হেসে বললো,”শা*লির জন্য পাত্র খুজছি।যেনো এভাবেই ভিজতে পারে।”
অয়ন ও এসে ডায়নিং এ বসলো।চারজনে গল্প করতে করতে খাবার খাওয়া শেষ করলাম।বেড রুমে গিয়ে আমি ফোনে শাড়ি আর পাঞ্জাবী দেখছি।আয়াসের মা আর আয়াস অয়নের জন্য ড্রেস দেখছি।এরই মাঝে আমার ছোট বোন শ্রুতি ফোন দিয়েছে।ওর সাথে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে দেখি আয়াস আর আরহী কথা বলছে।তাদের মাঝে অদ্ভুত কিছু কথা হচ্ছে।কথা গুলো শুনে থমকে গেলাম আমি।
চলবে?..
#তুমিময়_বসন্ত
২৫.
#writer_Mousumi_Akter
“আরহী আমি ভীষণ দুঃচিন্তায় আছি।আমি সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি না জানি কবে মুগ্ধতা সত্যটা জেনে যায়।আর মুগ্ধতা এই সত্যটা জেনে গেলে সেদিন ও কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে আমি সত্যি জানিনা।আমি কোনো কিছুর বিনিময়ে মুগ্ধতার চোখের পানি দেখতে পারবোনা।মুগ্ধতা এই ভয়ংকর সত্য টা জানলে কষ্ট পাবে ভীষণ কষ্ট পাবে।এখন ও এক জীবনে আছে আর সব সত্য জানলে ওর জীবন টা অন্যদিকে চলে যাবে।ওর চিন্তা ভাবনা সব বদলে যাবে।তাই আমি চাইছি মুগ্ধতা এখন যেমন চিন্তামুক্ত হাসি খুশি জীবনে আছে তেমন ই থাকুক।”
“মুগ্ধতা কিভাবে জানবে সব সত্য।আর কি প্রয়োজন মুগ্ধতাকে এসব বলার।আমরা যদি না বলি কে বলবে? ”
“সেদিন আমাদের এলাকা থেকে একজন মহিলা এসে প্রায় বলেই দিচ্ছিলো।মুগ্ধতার জন্মের ব্যাপারে।সিরিয়াসলি আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো।যে সত্য মুগ্ধতা থেকে এতগুলো বছর আমরা লুকিয়ে রেখেছিলাম সেই সত্য ওই মহিলা বলে ফেলছিলো।আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম।মুগ্ধতা আমাকে না আটকালে আমি ওই মহিলাকে কি না কি বলতাম নিজেই জানিনা।”
“মুগ্ধতার জীবনের এই অতীত কোন দিন না কোনদিন মুগ্ধতার সামনে আসবে। কি হবে সেদিন, মুগ্ধতা কিভাবে সহ্য করবে সেটা।মুগ্ধতার কাছে দুই দুইটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা লুকিয়ে গিয়েছি।ভীষণ ভয় হয় মাঝে মধ্য।দুইটা বিষয় ই অনেক সিরিয়াস।সব সত্য জানলে যদি মুগ্ধতা আমাদের ভুল বোঝে।বা নিজের কোনো ক্ষতি করে।অল রেডি মুগ্ধতা আমাকে প্রশ্ন করেছে আমার বিএফ কে ছিলো।আমি এড়িয়ে গিয়েছি মুগ্ধতার থেকে। মুগ্ধতার জীবনের সুখ শান্তির জন্য আমি অনেক নাটক করেছি অনেক মিথ্যা বলেছি।”
“আমি সব থেকে বেশী ভয় পায় মুগ্ধতা যেনো কোনভাবে কষ্ট না পায়।আমাকে ভুল বুঝুক, গা*লি দিক সব মেনে নিবো।ও যেনো কষ্ট না পায় এটুকুই চাওয়া আমার।”
“মুগ্ধতা কত ভাগ্যবতী দেখেছেন।ভালবাসায় পরিপূর্ণ ওর জীবন।আজ আমার জীবন টাও এমন হতে পারতো।”
“প্লিজ আরহী মুভ অন করো।অতীত কে ভুলতে হবে তোমাকে।”
“পারবো না আমি।আমি পারছি না সব কিছু মেনে নিতে।নিজেকে শে*ষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।”
“তুমি কখনোই এমন কিছু ভাববে না আরহী।বিলিভ মি আমি সব সময় তোমাকে নিয়ে ভাবি।তোমার কষ্ট টা আমি সব সময় ফিল করি।যে কোনো কিছুর বিনিময়ে যদি তোমাকে একটু সুখ কিনে এনে দিতে পারতাম।”
“আমি কষ্ট পেলেও আমার ও একটায় চাওয়া মুগ্ধতা যেনো কষ্ট না পায়।সে উইশ টা পূর্ণ হয়েছে। ”
“তুমি সত্যি খুব ভালো মেয়ে আরহী।”
আয়াস আর আরহীর কথা শুনে আমি থমকে গেলাম।কি বলছে ওরা এসব।কিসের সত্য আমি জানিনা।ওই মহিলা কি বলে ফেলছিলো।আমি সত্যি আমার মা বাবার বিয়ের আগে হয়েছিলাম।মানে কি?এসবের কি মানে।ওদের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ওই মহিলা সত্য বলেছিলো।ওহ নো এটা কিভাবে সম্ভব।এমন টা হতেই পারেনা।ওই মহিলার বিষয় বাদেও আয়াস আর আরহী অন্য কোনো কিছু লুকাচ্ছে।কি লুকাচ্ছে ওরা।কেনো লুকাচ্ছে।ওদের কি কোনো রিলেশন ছিলো।না কি ছিলো।আরহীর তো কারো সাথে রিলেশন ছিলো।যার কথা আমার কাছে কখনোই প্রকাশ করে নি।আমি কি এক্ষুনি গিয়ে ওদের কাছে জিজ্ঞেস করবো।ওরা কি আমাকে সবটা বলবে।এর আগেও আরহীকে জিজ্ঞেস করেছি আমাকে এড়িয়ে গিয়েছে আর যা বলেছে তা পুরা সত্য মনে হয়নি।আমাকে নিজের মতো করে খুজতে হবে এই রহস্য।আমাকেই খুজে বের করতে হবে।সব টা খুজে বের করে তারপর না হয় সবাইকে বলবো।মা -বাবার ব্যাপার টা মোটেও ক্লিয়ার হতে পারলাম না।হতেই পারে মা বাবার বিয়ের আগে কোনভাবে আমার জন্ম হয়েছে মেনে নিলাম কিন্তু সেটা এভাবে লুকানোর কি আছে।মা বাবার তো বিয়ে হয়েছে।পরিবারে তো কখনো এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে দেখিনি।আয়াস আর আরহীর কি রিলেশন ছিলো।আয়াস এর কথায় এটুকু ক্লিয়ার হতে পেরেছি সে আমাকে ভালবাসে।তাহলে কি লুকাচ্ছে আরহীর সাথে রিলেশন লুকাচ্ছে।আয়াস ই কি তাহলে আরহীর কষ্টের কারণ।না কিছুই মিলছে না।কোনো সমীকরণ মেলাতে পারছি না।হঠাত শরীরে জেলাসি জুড়ে বসলো।সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরছে সত্যি আরহী আর আয়াসের মধ্য কিছু ছিলো।রাগ হচ্ছে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার আরহীর প্রতি।আরহী কে নিজের প্রতিদ্বন্দী বলে মনে হচ্ছে আমার।আরহী আয়াসের সাথে কথা বলছে ভেতরে জ্বলে যাচ্ছে আমার।আয়াসের লাইফে আমি আসার আগে কারো সাথে রিলেশন ছিলো এটা ভেবেই রাগ হচ্ছে।কেনো থাকবে ওর রিলেশন। আয়াস এর কিসের এত টান আরহীর প্রতি।আয়াস এত মায়া মমতা নিয়ে কেনো কথা বলছে আরহীর সাথে।তারমানে আয়াস এর এখনো আরহীর প্রতি টান রয়েছে।আমি থাকতেও কেনো আয়াসের অন্য মেয়ের প্রতি টান।আমি তো বিয়ের পরে সবটা ভুলে গিয়েছি।তাহলে আয়াস কেনো তার অতীত কে ভুলতে পারেনি।তাছাড়া আমিতো আরহী কে ভীষণ ভালবাসি কিন্তু কেনো এটা বলতে পারছিনা যে আরহী আয়াস যদি তোর ভালবাসার মানুষ হয়ে থাকে আমি আয়াস কে ফিরিয়ে দিবো তোর জীবনে।এমন কিছু আমি ভাবতেও পারছিনা।আমি বড্ড সেল্ফিস হয়ে গিয়েছি।আমি তো এমন ছিলাম না।মা -বাবার চিন্তা আর আরহী-আয়াসের চিন্তা দুটোই ঘিরে ধরেছে আমাকে চিন্তায় অস্হির লাগছে।কেনো আমার সাথেই বারবার এমন হয়।কেনো হয় এমন?আমি কি পাপ করেছিলাম বারবার আমার স্বপ্ন ভেঙে যায়।কেনো বারবার প্রতারিত হয় ভালবাসা থেকে।কত সময় দমবন্ধ করে বসে থেকে ধৈর্যহারা হয়ে গেলাম আমি।ক্রমশ কাঁন্নার মাত্রা বাড়তে শুরু হলো।হাতের চুড়ি গুলো খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলাম খুব জোরে।ঝন ঝন শব্দে চুড়ি গুলো এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো।কানের দুল,গলার চেইন,সব খুলে ফেলে দিলাম।ড্রেসিন টেবিলের উপরে রাখা জিনিস গুলো সব এক ধাক্কায় ফেলে দিলাম।সব ফ্লোরে ঠাস ঠুস শব্দ করে পড়লো।সব ভেঙে ফেলতে মন চাইছে।নিজেকে নিজের সব থেকে বেশী বিরক্তিকর লাগছে।ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে।আবার ও বেসামাল কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম আমি।সাথে সাথেই আয়াস,অয়ন আর আরহী চলে এলো।আমার কাঁন্নার কোনো কারণ ই কেউ জানেনা।ওরা সবাই ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।ঘরের এলোমেলো জিনিস দেখে বুঝতে পারলো আমি সব এলোমেলো করেছি।অয়ন চুপ করে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে।
‘আয়াস সাথে সাথে বসে পড়ে আমার কাঁধে হাত দিয়ে আমার নাম ধরে ডাকলো মুগ্ধতা।’
আমি আয়াস কে খুব জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বললাম,
‘ডোন্ট টাচ মি!’
আয়াস এবার একটু বেশী অবাক হলো।আমার এমন ব্যবহার বিয়ের পরে সে দেখে নি।আয়াসের প্রতি তীব্র বিরক্তি,রাগ,ঘৃণা সব এক সাথে আজ ই প্রথম আয়াস দেখলো।আয়াস আমার রাগ দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলো।আবার ও আয়াস আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রাখলো।আমি আবার ও ধাক্কা মেরে বললাম,
‘বলেছি না আমাকে স্পর্শ করবেন না।’
‘কিন্তু কেনো মুগ্ধতা।’
এবার আরহী আমাকে বললো,
‘কি হয়েছে মুগ্ধ কাঁদছিস কেনো?’
‘প্লিজ বেরিয়ে যা আরহী আমার রুম থেকে। প্লিজ বেরিয়ে যা।আমার ভালো লাগছেনা কিছুই।’
এতটুকু বলে সবাই কে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে বসে শব্দ করে কেঁদেই যাচ্ছি।
আরহী আমার এ রাগের কারণ কিছুই বুঝতে পারলো না।ভীষণ মন খারাপ হলো আরহীর।অয়ন এই প্রথমবার নিজ থেকে আরহীর সাথে কথা বললো।আরহী কে বললো,
‘আরহী আমার সাথে এসো।ভাইয়া ভাবিকে সামলে নিবে।’
এটুকু বলেই অয়ন আরহীর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।আরহী কোনো কথা বলছে না।অয়ন আরহীর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘মন খারাপ তোমার?’
‘মুগ্ধ হঠাত এমন করছে কেনো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।’
‘ভাবিকে ভাইয়া ম্যানেজ করবে।বাট ভাবির ওভাবে চিল্লাচিল্লিতে তোমার মন খারাপ হয়েছে তাইনা?’
‘না তেমন কিছু নয়।’
‘আমি চোখ দেখলে বুঝতে পারি।’
‘আজ আপনি ভালোই কথা বলছেন কিন্তু।’
‘আজ তোমার মন খারাপ এজন্য।একটা লবন যুক্ত চা খাওয়াবে প্লিজ।’
‘চা খাবেন।’
‘আজ তুমি খাওয়ালে খাবো।
চা খেতে খেতে তোমার একটা ছবি আঁকবো।’
‘রিয়েলি।’
‘হুম। আর এরই মাঝে ভাবির মন ভালো হয়ে যাবে আর ভাবি তোমার কাছে চলে আসবে রাগ করেছো কিনা জিজ্ঞেস করতে।ভাইয়া ভাবির মন ভালো করেই ছাড়বে।’
আয়াস উত্তেজিত হয়ে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর আমাকে ডাকছে,
‘মুগ্ধতা প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।প্লিজ মুগ্ধতা।’
আমি নিশ্চুপ আছি।আয়াস আবার বলছে,
‘আমি কি করেছি মুগ্ধতা।প্লিজ আমাকে বলো।’
আমি চুপ করে আছি কোনো কথা বলছি না।
‘আমার অপরাধ টা কি বলো।আমি কি অন্যায় করেছি সত্যি বুঝতে পারছিনা।তুমি চাইলে আমি আমি পুরা ক্যান্টনমেন্ট এর মাঝে একশ বার কান ধরে ঘুরবো।তবুও বলো আমি কি করেছি।’
আমি এবার ও কোনো উত্তর দিলাম না।আয়াস আবার ও বললো,
‘তুমি কি দরজা খুলবে না।আমাকে টেনশন দিও না প্লিজ মুগ্ধ।আমার সামনে থেকে যা খুশি বলো।বাট দরজা বন্ধ করে থেকোনা।’
আমি চুপ করে কেঁদেই যাচ্ছি।আয়াস এবার কঠিন সুরে বললো,
‘তুমি খুলবে নাতো।ওকে ফাইন বাইরে এসে আমাকে আর পাবে না।আমার মুখ আর দেখতে হবেনা তোমাকে।’
আয়াসের এই কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম আমি।দ্রুত দরজা খুলে দিলাম।আয়াস অত্যান্ত মন খারাপ করে অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আয়াসের অসহায় মুখ দেখে নিজেকে সামলাতে পারলাম না।আয়াস কে জড়িয়ে ধরে ভীষণ জোরে কেঁদে দিয়ে বললাম,
‘আমার ভাগ্য এত খারাপ কেনো আয়াস।কেনো সত্যিকারের ভালবাসা আমার ভাগ্য নেই।আমার অপরাধ টা কি আয়াস।আমি কি খুব খারাপ যে কেউ ভালবাসে না আমাকে।’
‘মুগ্ধতা, মুগ্ধতা এমন কোনো ব্যাপার নেই।কে বলেছে তুমি খারাপ আর তোমার ভাগ্য খারাপ।আর কে বলেছে তোমাকে কেউ ভালবাসে না।’
‘কেউ ভালবাসে না আমাকে।আপনিও আমাকে ভালবাসেন না।কেনো ভালবাসেন না আয়াস।কেনো কেনো কেনো?আমি এখনো ভালো বউ হতে পারিনি এইজন্য।নাকি আমি আপনার বউ হবার যোগ্য না।আমি মানছি আমার লাইফে কেউ ছিলো আমি আপনাকে অনেক কিছু বলেছিলাম কিন্তু আমি ভালো মন্দ ভেবে বলিনি।ওই একটা ভুল ছাড়া আমি কি ভুল করেছি।বিয়ের পর কি আর আমি অতীত নিয়ে ভেবেছি।আমি তো সব অতীর ভুলে গিয়েছি আপনি কেনো আপনার অতীত কে ভুলতে পারছেন না।’
‘কোন অতীত, কিসের অতীত।আর কি বললে আমি তোমাকে ভালবাসিনা।জানতে চাও তোমাকে ভালবেসে পাবার জন্য কত কি করেছি।’
‘আপনার আর আরহীর অতীত।আমি সব বুঝতে পেরেছি।আপনার আর আরহীর রিলেশন ছিলো।কেনো আরহীকে কষ্ট দিয়ে আমাকে গ্রহন করলেন।কেনো এট নাটক।দুজনের যদি রিলেশন ই ছিলো কেনো দুজনে বিয়েটা করলেন।আপনাদের কোন নাটকে আমাকে জড়ালেন।কি শত্রুতা আমার সাথে।আরহীর কিসের প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো। সব আপনি জানেন।’
‘মুগ্ধতা তোমার সব প্রশ্নের উত্তর এক্ষুনি দিচ্ছি আমি।বাট তার আগে আমি এটা জানতে চাই তোমার চোখে পানি কেনো?কিসের কষ্ট মুগ্ধতা।কেনো কাঁদছো, কেনো কষ্ট পাচ্ছো।আরহী, সারিকা যার সাথেই আমার রিলেশন থাকুক তোমার তো কষ্ট পাবার কথা নয়।তুমি তো ভালবাসো না আমায়।’
কাঁদতে কাঁদতে আয়াসের গেঞ্জি বুকের কাছে খামচে ধরে বললাম,
‘ভালবাসি, ভীষণ ভালবাসি।নিজের থেকেও বেশী ভালবাসি।’
আমার বলা ভালবাসি শব্দ টা আয়াসের কান ভেদ করে মস্তিস্কে প্রবেশ করে নিউরন নিউরণে ছড়িয়ে পড়লো।আয়াস আমাকে এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
‘পৃথিবীর সব থেকে দামি কথাটা শোনার সৌভ্যগ্য আজ হলো।আজ আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ। আমার এই জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই।’
চলবে.?