তুমিময় বসন্ত পর্ব-৩০

0
513

#তুমিময়_বসন্ত
৩০.
#writer_Mousumi_Akter

দীর্ঘদিন পরে নিজের রুমে প্রবেশ করলাম।আলাদা একটা প্রশান্তি ফিরে পেলাম এ রুমে প্রবেশ করে।সব কিছু আগের মতোই গোছানো আছে।আমার পড়ার টেবিল আগের মতোই গোছানো আছে।আমার একুরিয়াম এর মাছ গুলোর অনেক গুলা বাচ্চা হয়েছে।একুরিয়াম ভরে গিয়েছে মাছে।আমি চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি।এলোভেরার যে চারা গাছ টা লাগিয়েছিলাম তার থেকে আরো সাত টা চারা গজিয়েছে।গোলাপ গাছে কড়ি এসেছে।বেলি গাছেও ফুল ফুটেছে।বরং আগের থেকে সব আরো ভালোই হয়েছে।আশে পাশের বাড়ি থেকে অনেক মানুষ এসে ভীড় করেছে আয়াস কে দেখার জন্য।সবাই আমার সাথে দুই এক মিনিট কথা বলে আয়াস কে ঘিরে দাঁড়িয়েছে।বেচারা উঠানে দাঁড়িয়ে ভালো আছি বলতে বলতে গাল ব্যাথা করে ফেললো।স্রুতি তো আয়াসের হাত ই ছাড়ছে না।যে আসছে সে এসে বলছে জামাই এর মিষ্টি খাবো।আম্মু সবাইকে প্যাকেট খুলে খুলে মিষ্টি দিয়ে যাচ্ছে।শুধু যে নতুন বউ এর ই অস্বস্তিতে পড়তে হয় তা নয় নতুন জামাই কেও দেখছি ভালোই অস্বস্তিতে পড়তে হয়।আজ বুঝুক আয়াস কেমন লাগে।বাড়িতে মানুষ গিজ গিজ করছে।আমাদের বংশের যত মানুষ আছে সব এসে ভীড় করেছে।আমার বিয়ে যেহেতু খালামনিদের বাসায় হয়েছিলো তাই আমার বংশের কেউ বিয়েতে উপস্হিত হতে পেরেছিলো না।কিন্তু আজ এ বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।রঙিন কাগজ দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়েছে।বাইরে বাবুর্চি রান্না করছে।আজ বাবা সবাই কে খাওয়াবেন।ও পাশে চাচাতো ভাইয়েরা খাসি জ/বা/ই করছে।গরুর মাংস এক মণ কিনে এনেছে।রোস্ট,পোলাও,ডিম,ডাল,ভাজি সব ই হচ্ছে।বাড়িতে সবার মাঝে ভীষন আনন্দ আর ছোটাছুটি দেখছি।আম্মু আয়াসের গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিলো।এটা কি তার জামাই বরণ হলো।দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে এসেও দেখছি আমার থেকে আয়াসের গুরুত্ব বেশী এ বাড়িতে।সবাই আমার থেকে বেশী আয়াসের আপ্যায়ন করছে।পাড়া থেকে যে আসছে সে ও আয়াস কে ঘিরে রেখেছে।আম্মু আর বাবা জামাই অন্ত প্রাণ।শুধু জামাই জামাই করছে।যে আসছে তাকে পরিচয় করাচ্ছে।আম্মু আর বাবার মুখে এত আনন্দ আমি আগে কখনো দেখিনি।এত সুখ অনুভব করছেন তারা যা দেখে আমিও ভীষণ মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি।কিছুক্ষণের মাঝে আরহী আর অয়ন খালামনি আর খালুর সাথে হাজির।মামাদের বাড়ি থেকে ও লোকজন এসেছে।আজ বোধহয় সবাই ই ভীষণ খুশী।

আম্মুকে পাশের বাসার এক দাদী বলছে,

” বউমা এবার তো একটা বাচ্চা নাও।একটা মাত্র মেয়ে তোমার।আর একটা সন্তান না হলে কি হয়।ছেলে না হলে কে দেখবে তোমাদের।”

বুড়ির কথা শুনে রাগ আমার চরম পর্যায়ে চলে গেলো।আম্মু এখন জামাই এর সামনে বাচ্চা নিবে।আর একটা মাত্র মেয়ে মানে।আমি কি বানের জলে ভেষে এসেছি।একটা মাত্র মেয়ে উনি কাকে বোঝালেন।আমি নাকি শ্রুতি।আম্মুর যদি বাচ্চার শখ হয় নিতেই পারে।তাই বলে ছেলে নেই কে দেখবে এই কথার উপর ভিত্তি করে কেনো নিবে।আমি দেখবো আমার আম্মু আর বাবাকে।

আম্মু বললো,

“আস্তে চাচীআম্মা।জামাই শুনতে পাবে।আমার বাচ্চার দরকার নেই।আমার দুই মেয়েই আমার সব।”

আম্মু কে খালামনি ডাকলো আর আম্মু চলে গেলো।

আর দুইজন মহিলা বলাবলি করছে এই মেয়েকে বিয়ের দিন সাথে করে নিয়ে এসেছিলো।সেই মেয়ের জন্য দেখো কত কি করছে।মানুষ জানাজানি হবে বলে সারাজীবন বাসায় বাসায় বেড়িয়েছে।একবারে মেয়ে বড় হলে বাড়িতে এসেছে।মেয়েকে এখানে রেখে মানুষ করেনি মেয়ে যাতে কিছু জানতে না পারে।

কথাগুলো শুনেই ভীষণ খারাপ লাগলো আমার।আমার আম্মু আমাকে তার বিয়ের দিন সাথে করে নিয়ে এসেছিলো।এমন কিছু কথা আগেও শুনেছি।আচ্ছা এই কথা যদি সত্যি হয়েও থাকে তাহলে আয়াসদের এলাকার মানুষ কিভাবে জানে।আয়াসদের বাসার পাশের ওই মহিলা কিভাবে জানলো।আমাকে খুজে বের করতেই হবে কি সেই ঘটনা।বাসার পাশের এক চাচীআম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম গল্পে গল্পে। চাচীআম্মা আম্মু আর বাবার বিয়ে হয়েছিলো কত সাথে তুমি জানো।খুব কৌশলে জিজ্ঞেস করলাম। চাচীআম্মা বললো ২০০৪ সালে।আমি আমার শিশুকার্ড আমার নানুর বাক্সে একদিন দেখেছিলাম আমার জন্ম ২০০৩ সাথে।কিন্তু জন্মনিবন্ধনে ২০০৪ সাল ই আছে।শুনেছি বাবা -মায়ের লাভ ম্যারেজ ছিলো।হতেই পারে তারা গোপনে বিয়ে করেছিলো পরে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।নাকি তাদের কোনো ভুলে আমার জন্ম হয়েছিলো।ছিঃছি এসব কি ভাবছি আমি।যে কোনো সন্তানের কাছে মা-বাবার অতীতের এমন ঘটনা কষ্ট দিবে,ভাবাবে। কিন্তু আমি এসব ভাবতেই চাই না।আর কিছু জানতেও চাই না। আমি যে এসব জেনেছি আম্মু আর বাবাকে কখনো বুঝতে দেওয়া যাবেনা।আমি চাইনা মা বাবার অতীত ঘেটে তাদের কোনো লজ্জা দিতে।কিন্তু আয়াস যদি কখনো জানতে পারে ও কিভাবে নিবে ব্যাপার টা।আয়াসের কথা ভেবে দুঃচিন্তা হচ্ছে।না,না আয়াস খুব ভালো ছেলে। আয়াস সব জানলেও আমাকে ভুল বুঝবে না।মাথাটা কয়েকবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে মাথা থেকে এসব আজে বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিলাম।

নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছি কি ভাবছি জানিনা।এমন সময় বাবা এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।বাবার দিকে অসহায় চোখে তাকালাম।বাবা আমাকে বললেন,

“মা তুমি কি আয়াসের সাথে ভালো আছো।তোমার বিয়ে আসলে ওভাবে দেওয়া আমাদের উচিত ছিলো না।এই আড়াই টা মাস আমি আর তোমার আম্মু ঠিকভাবে ঘুমোতে পারিনি।তুমি ভালো আছো কিনা এটা ভেবে।’

আমি যে আয়াসের সাথে ভীষণ ভালো আছি সেটা বলতে আমার একটু বাঁধলো না।সাথে সাথে হেসে দিয়ে বললাম,

“বাবা আমি ভীষণ ভালো আছি।কতটা ভালো আছি তোমার কল্পনার বাইরে।”

“সত্যি তো মা।”

“হ্যাঁ বাবা সত্যি।আমি ভীষণ ভালো আছি।সেদিনের জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ বাবা।আসলে মা বাবার থেকে বেশী ভালো কেউ সন্তান কে বাসতে পারেনা।”

বাবা আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

“আয়তো আমি তোর চুলে বিলি কেটে দেই।”

“বাবা আমার চুলে অনেকদিন তুমি তেল লাগিয়ে দাও না।আজ আমার চুলে তেল লাগিয়ে বেঁধে দাও। ” @

বাবা আমার চুলে তেল লাগিয়ে দিতে দিতে অনেক গল্প করছেন।

ছোট বেলা থেকে বাবা আমাকে ভীষণ আদর করেন।চুল বেঁধে দেন,তেল লাগিয়ে দিতেন।আমি ভীষণ তৃপ্তি পায় বাবার এ যত্ন গুলাতে।

বাইরে খাওয়া দাওয়া শেষ।সবাই শাড়ি হাতে নিয়ে খেতে এসেছে।অনেক গুলা শাড়ি হয়ে গেলো এক সন্ধ্যায়।কেউ কেউ রাইস কুকার বা প্রেসার কুকার ও নিয়ে এসেছেন।আস্তে আস্তে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেলো।সবাই খেয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেলো।

হঠাত আমার মনে পড়লো আমার ঘরে অভি আর আমার কিছু ছবি আর চিঠি আছে।আয়াস যদি দেখে ফেলে অন্য কারো সাথে আমার ছবি আছে ও ভীষণ কষ্ট পাবে।আমি রুমে গিয়ে ড্রেসিন টেবিল খুলে কাপড়ের ভাজ থেকে ছবি গুলো বের করলাম।শরীরের মাঝে ঘিনঘিন করছে অভির সাথে নিজের ছবি দেখে।এমন সময় আয়াস এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম আমি ভ*য়ে।আয়াস যদি আমার হাতের ছবি গুলো দেখে ফেলে। আমি চাইনা আয়াস দেখুক সেগুলা।আয়াস দূর থেকে শুনেছে আমার রিলেশন এর কথা কিন্তু সেটা আমার অতীত আর সেই অতিত আমি আয়াসের সামনে এনে কষ্ট দিতে চাইনা।কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।আয়াস আমার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে মৃদু মৃদু কন্ঠে বলছে,

“আমার বউটা এখানে বসে কি করছে।এ বাড়িতে আসার পর আর বউ এর মুখ টা একটা বার ও দেখতে পেলাম।আহা!কি সুগন্ধি তেল লাগিয়েছো চুলে।ঘ্রাণে সারা শরীর ময় ময় করছে।”

আমি জানি আয়াস ইজিলি আমাকে ছাড়বে না।সহযে যাবে ও না।টেনশনে খুব জোরে রিয়্যাক্ত করে ফেললাম।আয়াস কে খুব জোরে ঝাড়ি মেরে ফেলে দিলাম।ভীষণ রেগে আর বিরক্ত হয়ে বললাম,

“সব সময় এসব ভালো লাগেনা।আপনাকেও বুঝতে হবে আমার সব সময় এসব রোমান্টিকতা পছন্দ নয়।”

আয়াস কিছুই না বলে মন খারাপ করে চুপচপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আয়াস রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি সমস্ত ছবি আর চিঠিগুলো পু* ড়িয়ে ফেললাম।মনে হলো অনেক বড় একটা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেলাম।তবে আয়াস এর সাথে কি খুব বেশী রিয়্যাক্ট করে ফেললাম।

চলবে,,