#তুমিময়_বসন্ত
৩১.
#writer_Mousumi_Akter
বসার ঘরে বাবা,খালু,খালামনি,আম্মু আর আয়াস বসে গল্প করছে।আমি অপেক্ষা করছি আয়াসের জন্য।ও রুমে আসলে খুব করে সরি বলে দিবো।কিন্তু আমি কিভাবে বলবো সরি।সিনেমার মতো আবেগঘন মুহুর্তের যদি সৃষ্টি করতে পারতাম নিশ্চয়ই ওর রাগ এক মিনিটে পড়ে যেতো।কিন্তু বাস্তব জীবনে অনেক কিছুই বলা যায় না
মনে মনে ভেবে রাখা অনেক কিছুই মুখে আমরা প্রকাশ করতে পারিনা।আমি বাইরে থেকে উঁকি মেরে দেখছি বারবার।আয়াস স্বাভাবিক ভাবেই গল্প করছে।
এমন সময়ে খালু আমাকে ডেকে বললো,
“মা মুগ্ধ একটা পান নিয়ে আয় তো।সাথে মিষ্টি জর্দা ও দিস।”
কথাটা শুনেই মারাত্মক খুশি হয়ে গেলাম আমি।আমিও অনেক্ষণ ধরে ওখানে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না।কিভাবেই বা যেতাম। তারা তাদের জামাই নিয়ে গল্প করছে।আমি নির্লজ্জের মতো কি ওখানে গিয়ে বসতে পারি।বাই এনি চান্স বাবা,খালু কেউ যদি ভাবতো মেয়ে এখন জামাই কে চোখে হারাচ্ছে।ইস কি লজ্জাকর হবে ব্যাপার টা।ভয়ংকর লজ্জার হবে সে ভাবনাটা।বাবার ঘরে গিয়ে পান গোছাতে গোছাতে ভাবছি আয়াস কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।আমি কি খুব বেশী মিসবিহেভ করে ফেলেছি।কিভাবে ওর রাগ ভাঙাবো আমি।
এমন সময় আরহী এলো বাবার ঘরে।আমার মন খারাপ দেখে বললো,
“কি হয়েছে মুগ্ধ,মন খারাপ কেনো?”
“মিসবিহ্যাভ করে ফেলেছি আয়াসের সাথে।”
“যা গিয়ে একটা সরি বলে দে।”
“সাহস পাচ্ছি না।”
“কেনো?”
“খুব বেশী মিসবিহ্যাভ করে ফেলেছি।আয়াস রাগ করেছে।”
“কিন্তু কি নিয়ে।”
“অভির ছবি আমি পোড়ানোর জন্য বের করেছিলাম ঠিক তখন ই আয়াস গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।অজান্তেই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।আমি চাই নি অভি আর আমার ছবি ওর সামনে আসুক।”
“এটা কোনো ব্যাপার ই নাহ।তুই দুলাভাই কে একবার জড়িয়ে ধরলেই হয়ে যাবে।”
“আরে বাবাহ ধরবো তো।বাট পাবো কোথায়।দেখছিস না সবার সাথে বসে আছে।”
“চল আমরা সবাই যাচ্ছি।কিছু একটা বলে দুলাভাই কে তুলে আনবো।”
দরজা দিয়ে বেরোনোর সময় আরহী আয়নের সাথে মারাত্মক একটা ধাক্কা খেলো।অয়ন এ ঘরের দিকেই আসছিলো।অয়ন ফোন চাপতে চাপতে নিচু দিকে তাকিয়ে ঢুকছিলো।তখন ই আরহীর প্রচন্ড গতিবেগের যাত্রায় পড়ে যায় অয়ন।অয়নের বুকের উপর আরহী কে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।অয়ন এইবার ই শে;ষ লজ্জায়।যে লজ্জা ছেলেটার।
অয়ন লাফ মেরে উঠে বললো,
“ভাবি তোমার বোন ইচ্ছা করেই ধাক্কা মারলো নাকি।”
“আরহী মুখ বাঁকিয়ে বললো,মনে হচ্ছে সিনেমার নায়ক বাপ্পারাজ তাই আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দিবো।”
“দুঃখিত আমি বাপ্পারাজ হতে চাই না।তার থেকে ভিলেন ই বেটার।আমি ভিলেন হতে চাই।”
“আই লাইক ভিলেন।”
“ইনডিরেক্ট কি আমায় লাইকের কথা বলছো।”
“হ্যাঁ বলছি।আমার অত টা লজ্জা নেই।ডিরেক্ট ই বলছি আই লাইক ইউ।”
অয়ন খুব জোরে কেশে দিলো।বেচারা ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।এইভাবে বোধহয় কোনো তাকে আগে বলেনি।আরহী হাত বাড়িয়ে বললো,
অয়ন ভাইয়া নিজে তো উঠলেন আমাকে তুলবেন না।প্লিজ হেল্প নি।
অয়ন সেদিকে হাত বাড়ালো না।আমার ইশারা করলো আরহী কে তোলার জন্য।বেচারা আরহী বোধহয় অয়নের হাত ধরে উঠবে বলেই না উঠতে পারার ভান করছিলো।
আমি আরহীকে টেনে তুকে বললাম,
“এসব লাইক করাকরি পরে দেখবো।আমার সাথে চলো তোমরা।”
“অয়ন বললো,কোথায় ভাবি”
“তোমার ভাইয়া রাগ করেছে।ভুল বোঝাবুঝি টা মিটিয়ে দাও।”
“ভাইয়া রাগ করে থাকতে পারবে না।আমি তাকে চিনি।বিশেষ করে ভাবির প্রতি না।”
“ভাবির প্রতি ই রাগ করেছে।শোনো ও ঘরে গিয়ে যে কোনো ভাবে তোমার ভাইয়াকে রুমের বাইরে আনার চেষ্টা করবা।”
“ওকে ভাবি।”
আমরা তিনজন প্রবেশ করতেই আয়াস একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো।আয়াস এর পাশেই খালু বসে আছে।
আমি একটু নিচু দিকে ঝুঁকেখালুর হাতে পান দেওয়ার সময় আয়াসের দিকে তাকালাম।আয়াস দেখছে আমি তাকিয়েছি তবুও খেয়াল করছেনা।আমি বারবার আয়াসের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ও একবার ও তাকাচ্ছে না।ইচ্ছা করেই তাকাচ্ছে না সেটা বুঝতে পারছি।এটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি না।আয়াস এমন করছে কেনো?যার তাকানোর জন্য আমি বিরক্ত হয়ে যায় সে এখন তাকাচ্ছেই না
।বিরহ এত ই যন্ত্রণার আগে তো বুঝি নি।এক্ষুনি আয়াস কথা না বললে দম বন্ধ হয়ে মা/রা যাবো আমি।মানুষ বিচ্ছেদ কিভাবে মেনে নেয় সত্যিকারের ভালবাসার।আমার তো এতটুকুতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।বার বার আরহী আর অয়নের দিকে তাকাচ্ছি আমি।এর মানে কিছ একটা করো।
এর ই মাঝে অয়ন বললো, “আমার ঘুম পাচ্ছে আঙ্কেল।বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।”
“বাবা বললো,তাইতো অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমোতে যাও।সকালে কথা হবে।”
“আরহী বললো,দুলাভাই চলুন ঘুমোতে হবে।”
আয়াস আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আম্মা মুগ্ধতা আপনার কাছে ঘুমোক।মা মেয়ে সারারাত গল্প করবেন। আমাকে বাড়ি থেকে বলেই এসছে সে আপনার সাথে ঘুমোবে।আমি কিছুই মনে করবো না। বরং আমার আরো ভালো লাগবে।”
আয়াসের এমন কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এটা কি বলছে সে।আম্মু কেনো পৃথিবীর কোথাও আমার ঘুম হবে না। সে রাগ করে থাকলে।তাছাড়া এতদিনে আমার অভ্যাস হয়েছে তার সাথে ঘুমোনোর।সে ছাড়া আমি কিছুতেই ঘুমোতেই পারবো না।হঠাত মন খারাপ তীব্র বেগে ভর করলো। আমার মুখ টা কালো ফ্যাকাসে রংহীন হয়ে গেলো।
“খালামনি বললো, তা কি করে হয় বাবা।তোমাদের ঘরে তোমরা যাও।”
“না না আন্টি,কোনো সমস্যা নেই।আবার কবে আসবে এখানে ঠিক নেই।আপনাদের কাছেই ও ঘুমোক।”
আয়াস উঠে আমার রুমে চলে গেলো।খালামনি আমাকে বলছে আয় তবে মুগ্ধ।আয়াস যখন এত করে বলছে। আমরা গল্প করবো সারারাত।অয়ন আর আরহী দুজন দুজনের দিকে তাকালো।এটা কি হলো।তারা কি ভাবলো আর কি হলো।আমিও তো খালামনির মুখের উপর বলতে পারছি না আমি আয়াসের পাশেই ঘুমোবো।শাড়ির আঁচল কচলাতে কচলাতে খালামির সাথে গেলাম।কিন্তু মন পড়ে আছে আয়াসের কাছে।আমি জানি ওর ও ঘুম হবেনা।
কিছুক্ষণের মাঝে আরহী রুমে প্রবেশ করে বললো,
” আম্মু দুলাভাই এর গ্যাস্ট্রিক প্রব্লেম হয়েছে।মুগ্ধকে পাঠিয়ে দাও।দুলাভাই মুগ্ধকে ডাকছে।”
“খালামনি অতিব্যাস্ত হয়ে বললো,কি হয়েছে চলতো দেখে আসি।”
“আম্মু এত রাতে তুমি কেনো যাবে।গ্যাস সামান্য একটু প্রব্লেম।মুগ্ধ যাক।”
খালামনির দিকে তাকিয়ে বললাম,
“যায় খালামনি।”
“দ্রুত যা।”
আরহী আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো।আমি মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলাম।নিজের রুমে গিয়ে দেখি আয়াস ঘুমোচ্ছে।আসলেই কি ঘুমোচ্ছে নাকি ঘুমের ভান ধরেছে।লাইট অন করেতো সে ঘুমোয় না।আমি আয়াসের কানের কাছে গিয়ে বললাম,
“না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান ধরা হয়েছে তাইনা?”
আয়াস কোনো উত্তর দিলো না।বুঝতে পারলাম এইভাবে হবেনা।নিজেকে অন্যভাবে উপস্হাপন করতে হবে।আয়াসের একটা নীল গেঞ্জি বের করে পরলাম।ঠোঁটে গাড় লাল লিপিস্টিক পরে হাত ভর্তি চুড়ি পরে আয়াসের সামনে গিয়ে বাজিয়ে যাচ্ছি।চুল গুলো খুলে রেখেছি।আমি জানি ও ঘুমোয় নি।শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম,
“একজন এর গেঞ্জি পরেছি সে কি তাকিয়ে দেখবে না। নাকি গেঞ্জি খুলে ফেলবো।”
আয়াস চোখ অফ করেই আছে।
“আবার ও বললাম,একজন কি আর কথা বলবে না।তার জন্য মধ্যরাতে সাজুগুজু করেছি।”
তবুও সে চুপ আছে।
“আবার ও বললাম,দেখুন আপনার গেঞ্জিতে আপনার থেকে আমাকে বেশী কিউট লাগছে।”
আয়াস কোনো কথায় বলছে না।আয়াসের দুই গালে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে গালে দাগ লাগিয়ে দিলাম।হুবহু আমার ঠোঁটের মতো দেখাচ্ছে লিপিস্টিক এর দাগ।
আয়াস এখনো চুপ আছে।
এভাবে কেটে গেলো অনেক সময়।আয়াস ইচ্ছা করেই কথা বলছে না।রাত প্রায় দুইটা বাজে।আমার চোখে ঘুম নেই।চেষ্টা করেও আয়াসের চোখ খোলাতে পারলাম না।
আমি এবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
“ওকে চলে যাচ্ছি বুঝেছি কেউ কথা বলবে না।ভেবেছিলাম আজ একজনের সাথে প্রচুর প্রেম করবো।একজনের বউ আজ প্রচন্ড রোমান্টিক মুডে আছে।তার বউ ভেবেছিলো আজ কিছু একটা হলে হোক।কিন্তু আফসোস তার বর ঘুমিয়ে পড়েছে।ওকে গুড নাইট আম্মুর পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।এটুকু বলে আমি পেছনে ঘুরে হাঁটা দিতেই আয়াস আমার হাত টেনে ধরলো।”
এবার বোধহয় একটা সুযোগ পেলাম আয়াস কে সরি বলার।আয়াসের দিকে তাকিয়ে দেখি ও চোখ বন্ধ করেই আমার হাত টেনে ধরে রেখেছে।আমি খুব মলিন কন্ঠে বললাম,
“আর কি কথা বলবেন না আমার সাথে।আর কতক্ষণ আমার সাথে কথা না বলে থাকবেন।দেখুন আপনি কিন্তু এমন করতে পারেন না।আপনি আমাকে অন্য যা শাস্তি দিবেন দিন কিন্তু কথা না বলে থেকে এমন ভয়ংকর শাস্তি দিবেন না।সরি!ভীষণ সরি।আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন।আপনি আমাকে ইগনোর করলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।আমার তখন ওইভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিত হয়নি।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।আসলে আমার হাতে অভির চিঠি ছিলো।আমি ওগুলো পুড়য়ে ফেলার জন্য বের করেছিলাম।আপনি দেখলে যদি ভুল বুঝতেন।তাই ভয়ে ওইভাবে রিয়্যাক্ট করে ফেলেছিলাম।কথাগুলো বলে কেঁদে দিলাম।”
আয়াস এবার চোখ মেলে তাকালো।আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো।
চলবে…?
#তুমিময়_বসন্ত
৩২.
#writer_Mousumi_Akter
আয়াস আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সেই চোখে আছে শিথলতা।তার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার প্রভাব পড়ছে নিজের ভেতরে।সে কি আমায় ক্ষমা করেছে নাকি করে নি।ঠিক বুঝতে পারছি না।আয়াস কি এখন হেসে দিয়ে কথা বলবে নাকি গম্ভীর মুডে বলবে আমাকে বিরক্ত করো না।
আমি চোখ দিয়ে পানি ফেলে বললাম,
“এখনো?এখনো চুপ করে থাকবেন?”
আয়াস এবার কপাল টানটান করে তাকালো আমার দিকে।
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় অভিমানী সুরে বললাম,
“আপনি কি বুঝতে পারছেন না আপনার এ চুপ থাকায় আমি কেমন ভয়ানক যন্ত্রণায় ছটফট করছি।পৃথিবীতে চুপ থাকার থেকে ভয়ঙ্কর শাস্তি আর নেই।আমি আপনাকে এতদিন এত বড় শাস্তি দিতে পারিনি যা আজ আপনি আমাকে দিয়েছেন।আমি দিয়েছি বলুন দিয়েছি।আপনাকে এত শাস্তি দিয়েছি বলুন।”
আয়াস আমাকে আরেক টু টান দিয়ে কাছে নিয়ে বললো,
“দিয়েছো প্রিয়তমা।”
আমার হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেলো।দীর্ঘক্ষণ পর সে আমার সাথে কথা বলেছে। আমার অনুভূতি টা এমন যেনো তাকে হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছি।জীবনের সব সুখ শান্তি হারিয়ে যাবার পরে যেনো এক চিলতে সুখ পাওয়ার মতো আনন্দ আমার মনের মাঝে।মন থেকে ভালবাসলে সে ভালবাসার অনুভূতি কি দারুণ তাইনা।এই পৃথিবীর সব দুঃখের কারণ সে আবার সেই পৃথিবীর সব সুখের কারণ সে।সে পারে জীবন টা সুখ থেকে এক সাগর দুঃখে পরিণত করতে আবার সেই পারে জীবন টা দুঃখ থেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট সুখী মানুষ করতে।এই অনুভূতি গুলো জীবনে সত্যিকারে ভালবেসেছে প্রত্যোকেই পেয়েছে।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গিয়েছে আমার।
হেচকি উঠা অবস্থায় বললাম,
“কিভাবে দিয়েছি?আগে আপনার সাথে যা করেছি তা ভাবলেও নিজেকে ছোট মনে হয়। আপনার অযোগ্য মনে হয় নিজেকে।”
“প্লিজ প্রিয়তমা,পাষ্টের কথা তুলবে না।আমি তখন কোনো কষ্ট পাইনি।বরং ইনজয় করতাম ব্যাপার টা।কারো ভালবাসা আদায় করে নেওয়াটা বিশ্বজয় এর মতো।এইযে চোখের পানি ফেলে আমাকে কষ্ট দিলে কেনো?তুমি নারী তবে অসাধারণ নারী তুমি।যে নারী দূরে ঠেলে দিতে পারে,আবার নিমিষেই কেঁদে কেঁদে কাছে টেনে নিতে পারো।খুব জানতে ইচ্ছা করে সৃষ্টিকর্তা নারীর মাঝে কি বিশেষ পাওয়ার দিয়েছেন।যার হাসি ভয়ংকর মায়াবী,কাঁন্না ও ভয়ংকর মায়াবী।এই নারী শুধু তার কাছেই টানে দূরে যেতে দেয়না। এত নিঁখুত সৃষ্টি নারীকে করেছেন যার সৌন্দর্য আজীবন দেখলেও ফুরাবেনা।আমার জন্য সৃষ্টি করা নারীটা একটু বেশী সুন্দর তাইনা?বড় চুল,টানা চোখ,দুধে আলতা শরীর,পাতলা ঠোঁট একটু বেশী সুন্দর না।”
বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে বললাম,
“আপনি কি আর রেগে নেই।’
“আমি রাগ করেছিলাম কে বললো।”
“তাহলে কথা বলছিলেন না কেনো?”
“দেখছিলাম।”
“কি?”
“আমার বউ এর আমার জন্য কতটা টান।”
“শুধু এটা দেখার জন্য আমাকে এত কষ্ট দেওয়া।”
“না আরেক টু কাছে পাওয়ার জন্য ও।আমি জানতাম আজ তুমি আমার কাছে আসবেই।কিন্তু মধ্যরাতে যে এইভাবে আমাকে স্ট্রোক করানো লুকে হাজির হবে ভাবতেই পারিনি।আজ কিন্তু অন্য রকম কিছু হলেও হতে পারে।আর ইউ রেডি প্রিয়তামা।বলেই আয়াস হাতে চুমু দিলো।”
এইবার সত্যি সত্যি লজ্জা পেলাম।আয়াসের হাত ঝাড়ি মেরে খানিক টা দূরে সরে দাঁড়ালাম।ইস কি ভয়ানক লজ্জা।তার রাগ ভাঙাতে আমি গেঞ্জি পরে তার সামনে চলে এসেছি।তখন তো এসব কোনো হুঁশ ই ছিলো না।কিন্ত এখন তো ভীষণ লজ্জা করছে।লজ্জায় সম্পূর্ণ মিহিয়ে যাচ্ছি আমি।
আয়াস বিছানা ছেড়ে উঠে এলো আমার কাছে।পেছন থেকে দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,
“বেবিডল আজ তোমায় পুরাই বেবিডল লাগছে।আচ্ছা তুমি এত সুন্দর কেনো বলোতো।যখন শাড়ি পরতে মনে হতো শাড়ি পরলে তোমাকে বিশ্বসুন্দরী মনে হয়।থ্রি পিছ পরলেও বিশ্বসুন্দরী মনে হয়।এখন গেঞ্জিতেও বিশ্বসুন্দরী মনে হচ্ছে।আচ্ছা এখন আমি কি করবো বলোতো।নিজেকে তোমার থেকে এই মুহুর্তে কিছুতেই দূরে রাখতে পারবো না।যদি কোনো বড় ধরনের অনর্থ হয়ে যায় আমাকে দোষ দিও না প্লিজ মুগ্ধতা।আমি হারিয়ে যেতে চাই তোমার মাঝে।”
আয়াসের হাত ছড়িয়ে আয়াসের দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি।চোখে মুখে পৃথিবীর সব লজ্জা নিয়ে দাঁড়ালাম আয়াসের সামনে।
আয়াস আমার মুখের সামনে পড়া চুল গুলো হাত দিয়ে কানের নিচে গুজে দিয়ে ওষ্ট ডুবালো গালে।আমি কয়েক হাজার গতিবেগে কেঁপে উঠলাম বিদ্যুৎ তরঙ্গের ন্যায়।লজ্জায় আবার ও তুফানের গতিরে আয়াসের হাত ছড়িয়ে ছুটে গিয়ে ওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালাম।লজ্জায় শরীর কাঁপছে আমার।আয়াসের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।ওর চোখে ভয়ানক নেশা।আয়াস আস্তে ধীরে আমার কাছে এসে ওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়ালো নেশাক্ত কন্ঠে বললো,
“আচ্ছা প্রিয়তাম এভাবে দূরে পালাচ্ছো কেনো?যদি কিছু ভুল হয় তো হোক না।কোনো ক্ষতি নেই তো।”
দুরু দুরু করছে বুকের মাঝে।স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি ওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে।আয়াস ক্রমশ ও এগিয়ে আসছে।আয়াসের ওষ্টে ভীষণ নেশা।আমার মুখের কাছে সম্পূর্ণ এগিয়ে আসতেই সম্পূর্ণ চোখ বন্ধ করে প্লাজু খামচে ধরে মুখ কাত করে রইলাম।আয়াস আমার দুই হাত ধরে আঙুলের ভাজে ভাজ রেখে ঘাড়ে ওষ্ট স্পর্শ করলো।বিদ্যুতের গতিতে কেঁপে উঠলাম আমি।হৃদপিন্ড এ হাতুড়ির বাড়ি দুরুম দুরুম করে দিচ্ছে।নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসছে।আয়াসের তপ্ত নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে আমার মুখে।অনুভূতিতে মিশে ছিলো লজ্জা আর ভালবাসা।কিছু অনুভূতি লজ্জার হলেও ভীষণ ভাললাগার হয়।আয়াস ও দুই ওষ্ট আমার ওষ্টে মিলিয়ে কতক্ষণ ছিলো আমার খেয়াল নেই।আমিও ডুবে গিয়েছি ওর সাথেই।কিছুক্ষণ পরে লজ্জায় আমি ওর দিকে তাকাতেই পারছি না।লজ্জায় এক ভাবে তাকিয়ে আছি ফ্লোরের দিকে।কোনদিকে তাকাতে পারছি না।মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাকে ভ্যানিশ করে দিক।নহলে আমাকে অদৃশ্য করে দিক।এত লজ্জা কই রাখি।এই লজ্জাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে দিলো আয়াস। পাজা কোলে বিছানায় তুলে নিলো।আয়াসের আদর আর ভালবাসা আমার ও ভালো লাগছিলো।নিজের ভার হওয়া শরীরের ভার আয়াসের উপর ছেড়ে দিলাম।ছন্দে আনন্দে ভালবাসার নতুন অধ্যায় শুরু হলো।এটা ছিলো ভালবাসার নতুন অভিজ্ঞতা।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠ দেখি আমার পাশে আয়াস নেই।আয়াস কোথায় গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৯ টা বাজে।ছিঃছিঃ বাড়ির সবাই কি ভাববে।গতরাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জা লাগছে আবার এত বেলা করে উঠেছি তার জন্য ও লজ্জা লাগছে।বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে শাড়ি পরে বাইরে গেলাম।এদিক ওদিক কোথাও আয়াস নেই।আম্মু আর খালামনি ডায়নিং টেবিল জুড়ে খাবার রেখেছে।আমি ঘুম থেকে উঠে আসতেই আম্মু বললো,
“উঠেছিস মা,আয় পিঠা খেয়ে নে।”
আমাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে আম্মু বললো,
“তোর খালামনি,খালু,বাবা, আয়াস,স্রুতি,অয়ন,অহনা সবাই আমাদের আমবাগানে গিয়েছে ঘুরতে।”
আমি একটা পিঠা খেতে খেতে বললাম,
“আমাকে নিলো না আম্মু।”
“তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে কিভাবে নিবে।আয়াস বললো তোমার নাকি মাথায় পেইন হয়েছিলো তাই কাল রাতে ঘুমোও নি।এইজন্য আর ডাকিনি।”
মনে মনে বললাম ভালোই কথা ঘুরাতে পারে।নিজে ঘুমোতে দেয় নি তা না।আমার মাথায় যন্ত্রণা হয়েছিলো।আম্মুকে বললাম,
“আয়াস কখন উঠেছিলো আম্মু।”
“আয়াস তো ভোর ছয়টায় উঠেছে। সবার আগে দেখি উঠেছে।”
উফ বাঁচলাম আয়াস তাহলে আর আমার মতো দেরি করে নি।আয়াস দেরি করলে ভীষণ লজ্জার হতো ব্যাপার টা।
সকাল দশটার দিকে সবাই ঘুরাঘুরি করে বাড়িতে ফিরলে আম্মু সবাইকে খাবার খেতে দিলো।আয়াস বারবার ইশারা করছে ওর পাশে বসার জন্য কিন্তু আমি লজায় বসছি না।আমি,আয়াস,অয়ন স্রুতি আর আরহী এক টেবিলে বসেছি।বাবা, আর খালুকে রুমে খেতে দিয়েছে।বাবা আর খালু আমাদের সাথে খাবেনা। তাছাড়া চেয়ার ও ছয়টা।আয়াসের ইশারা দেখেও আমি না দেখার ভান করে আছি।আরহী ব্যাপার টা বুঝতে পেরে আমাকে ধরে নিয়ে আয়াসের পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো।আমি আয়াসের দিকে লজ্জায় তাকাচ্ছি না।আয়াসের বাম পাশে শ্রুতি বসা।আয়াস খাওয়ার মাঝে প্রায় শ্রুতির গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।অয়ন আরহী যে যার মতো খাচ্ছে আর গল্প করছে।আয়াস সবার অগোচরে আমার হাত চেপে ধরে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
“তোমার হাতে খেতে মন চাইছে। ”
আমি হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বললাম,
“ছাড়ুন ওরা দেখবে।”
হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।অয়ন উঠে এসে শ্রুতির গালে এক টুক রো মাংশ দিয়ে বললো,
“মাই পিয়ারী বিয়াইন সাহেবা এক টুকরো মাংশ নাও।”
“শ্রুতি মাংশ নিয়ে বললো থ্যাংকিউ ভাইয়া।”
“অয়ন বললো খুব কিউট করে কথা বলোতো তুমি পিচ্চি।”
“আমি আর পিচ্চি নেই।আমার বন্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড আছে।খালি আমার ই নেই।”
“কি সাংঘাতিক কথা। তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই কেনো?কেউ প্রপোজ করে নি।”
“আমার এসব প্যারা লাগে।কত প্রপোজ পেলাম জীবনে।সেদিন ক্লাসের এইটের এক ভাইয়া আমাকে বলেছে তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।আমাদের বেবি হলে তার নাম রাখবো পুতুল।”
“আমিও তোমাকে প্রপোজ করতে চাই।আমাকেও কি রিজেক্ট করবে।আমাদের বেবি হলে আমিও নাম রাখবো প*রী।”
“আমার এখন প্রেম করার সময় নেই।”
“আয়াস প্রচন্ড জোরে হেসে দিলো।আমিও হাসলাম।আরহী বলছে তুই এত পেকেছিস কেনো রে।আল্লাহ জানে কয়টা প্রেম করবি বড় হয়ে।”
“আমি এখন ই যথেষ্ট বড় আপু।”
“শ্রুতিকে বললাম,আজ আম্মকে যদি না বলেছি দেখিস।”
“আয়াস বললো,আমার শালিকার নামে কোনো নালিস হবেনা। আমি আছিনা।তোমার আপু তোমার বিরুদ্ধে কিছু বললে আমাকে বলবে সোজা।”
আমি খাওয়া শেষে রুমে চলে এলাম হাসতে হাসতে।আয়াস আমার পিছ পিছ এসে আমার গালে চুমু দিয়ে বললো,
“খাইয়ে তো দিলে না আমার হাতেও খেলে না নাও চুমু খাও।”
চলবে..?