তুলির সংসার পর্ব-০২

0
41

#তুলির_সংসার
পর্ব-২

ফুল নিবেন ফুল?
ভাইজান এমন পরীর লাহান ভাবীরে একটা ফুল কিন্না দেন না।

বললাম না ফুল লাগবে না
তুলির ধমকে বাচ্চা মেয়েটা ঘাবড়ে গেছে।

আফা আপনার বুঝি মন খারাপ
ভাইজানের সাথে ঝগড়া হইসে

ভাইজান ফুল দিলেই আফার রাগ ভাইঙ্গা যাইবো
আরে কি আশ্চর্য এই মেয়ে দেখি নাছোড়বান্দা,
না আমাদের ফুল টুল লাগবে না তুমি যাও।

সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে শুভ্র তাড়াতাড়ি ওর পকেট থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে মেয়েটাকে দিলো।
ফুল লাগবে না টাকাটা রাখো।

ফুল না নিলে টাকা নিমুনা।
বলেই লাল টকটকে অনেক গুলো গোলাপ শুভ্রর হাতে ধরিয়ে দিলো মেয়েটি।

আপনি কেনো ফুলগুলো কিনলেন
ওই পুচকে মেয়ের কথায় আপনি আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে ফুল কিনবেন..? আশ্চর্য

কথা কিন্তু মেয়েটা খারাপ বলেনি সকাল থেকে দেখছি আপনি কেমন খিটখিটে মেজাজ করছেন।তবে ফুল আমি আপনার জন্যে কিনেনি ফুলগুলো না কিনলে মেয়েটা কষ্ট পেতো তাই কিনেছি
আচ্ছা আজ আপনি এতো রাগ করছেন কেনো বলুনতো..?

ড্রাইভার যেনো না শুনে তাই প্রায় ফিসফিস করে তুলি বললো, আসলে বিয়ের পর প্রথম বাসায় যাচ্ছি জহির মামাকে দেখে ঠিক কি করে রিয়্যাক্ট করবো বুঝতে পারছিনা।

কথাটা শুনে এমন ভাবে হাসলো শুভ্র যে তুলির রাগ আরো বেড়ে গেলো। আপনি এভাবে হাসছেন কেনো। এখানে হাসির কি হলো।

আমি আমার জীবনে এতো কাছ থেকে কাউকে ভালবাসায় দিশেহারা হতে দেখিনি। মানব চরিত্রের এই বিচিত্র দিকটি আমি দারুন ভাবে উপভোগ করছি।

আপনি তো আজব মানুষ, আপনার বউ অন্য কারো ভালবাসায় দিশেহারা আর সেটা আপনি উপভোগ করছেন। আপনার রাগ হচ্ছেনা আমাকে গালিগালাজ করতে ইচ্ছা করছেনা।

রাগা রাগি করা আমার কাজ নয়। আমি শান্তিতে বিশ্বাস করি। যেটা যেমন চলছে তেমনই যদি চলতে দেয়া হয় কোনো অভিযোগ না করে তাহলে আর কোনো ঝগড়া বিরোধ হানাহানির প্রশ্নই আসেনা।

ভালো, এখন না হলে আপনি জানেন আমার মনের কথা, এমন যদি হতো আমরা বিয়ের পর সুখের সংসার করছি আর হঠাৎ একদিন আপনি জানতে পারলেন আমি আমার পুরোনো প্রেমিকের সাথে পরকিয়া করছি, তখনও আপনার রাগ হবেনা..?

অবশ্যই হবে মিথ্যা কথা আর কথা লুকানো আমি পছন্দ করিনা কিন্তু আমাকে বলে করলে সমস্যা নেই

আপনাকে বললে আপনি মেনে নিবেন?

অনেক দিন ধরে সুখে সংসার করা মানুষও ভেতরে ভেতরে অসুখী থাকতে পারে, তখন যদি সে অন্য কাউকে ভালবেসে সুখ পায় তাতে আমি বাধা দেবার কে..?
আমি ডিভোর্স দিয়ে সরে যাবো..

জীবনটা কি এতো সহজ…

সহজে গ্রহন করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ

শুভ্র সাহেব

হুম

আপনাকে আজ শেষ বারের মতো বলছি আমার সাথে জ্ঞানের কথা বলবেন না। আপনার জ্ঞানের কথা শুনলে আমার মাথা ধরে যায়।

আপনার ব্যাগে টাইগার বাম নেই

কেনো?

মাথা ধরলে লাগিয়ে নিতে পারেন

আপনি আমার সাথে ফান করছেন
আপনার সাহসতো কম না

শুভ্র হো হো করে হাসছে, ড্রাইভার সাহেব বার বার পেছনে ফিরে দেখছেন। নিজের অজান্তেই ওনার দুই চোখ বেয়ে টপ টপ করে অশ্রু ঝরছে। এ অশ্রু কষ্টের না চরম আনন্দের।

শুভ্র যখন ক্লাস ফাইভে পরে তখন থেকে শুভ্রদের গাড়ি চালান উনি। শুভ্রকে নিজের ছেলের মতোই ভালবাসেন।এমন ভালো ছেলে পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। এতো বড়লোকের ছেলে কোনো অহংকার নেই। চাচা ছাড়া জীবনে কোনোদিন নাম ধরে সম্বোধন করেনি। সেই ছোটবেলা থেকেই ছেলেটাকে সব সময় মন মরা হয়ে থাকতে দেখেছেন। আজ ওকে এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে কিছুতেই অশ্রু সংবরন করতে পারলেন না।

#
আপা বলোনা

কি শুরু করলি

কখন থেকে ডিজ্ঞেস করছি, তোমার শশুর বাড়ি নাকি প্রাসাদের মতো। কি কি আছে একটু বলোনা

আমি বলতে পারবোনা।শুভ্রর মা বলেছে তোদের দাওয়াত করবে তখন যেয়ে দেখিস। তোমাদের নাকি ঘরের ভেতরে লিফট। তোমরা কি শোবার ঘর থেকে বসার ঘরে যাওয়ার সময় লিফটে নামো..?

লিফট আছে কিন্তু আমি সিড়ি দিয়েই নামি।

আর হোম মুভি থিয়েটার…। সেখানে মুভি দেখতে কেমন লাগে আপা..?

তোয়া তুইতো ভালো যন্ত্রনা শুরু করলি।
আমি আর কিচ্ছু বলতে পারবো না তুই যা এখান থেকে।

আপা তুমি কি আমার কাছে কিছু জানতে চায়।
কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে করতে পারো।

আমি আবার কি জিজ্ঞেস করবো।

কারো কথা..?

বেশী পাকনামো করিস না যা এখান থেকে।

সকালে শুভ্র নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রায় বিকেল হতে চললো। জহির মামাকে কোথাও দেখছে না। কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছেনা। ওনার রুমের দরজা বন্ধ। কয়েকবার ভেবেছে ঢুকে দেখবে কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। আর সেই সুযোগও পায়নি। মা আর তোয়া তুলির সাথে সাথেই ঘুরছে। শুভ্রদের বাড়ির প্রশ্ন করে করে কান ঝালাপালা করে ফেলেছে।

দুপুরে খাবার পর মা শুতে গেলো। তোয়াও মনে হয় কথা বলতে বলতে টায়ার্ড হয়ে পড়তে বসেছে। তুলি ভয়ে ভয়ে টোকা দিলো জহির মামার রুমে।

কে তোয়া

জ্বী না আমি

আরে তুলি দেখি

নাইওর আসছেন বুঝি
কখন আসলেন
জামাই বাবাজি কোথায়

এমন অভিনয় করেন কেনো যা মানুষ সহজে বুঝে যায়

কিসের অভিনয়..?

আপনি কি সত্যি সত্যি আমাকে আপনার বোনের মেয়ের মতো স্নেহ করেন..? সরাসরি জহিরের দিকে তাকিয়ে বললো তুলি

অবশ্যই কেনো করবো না আপনি আর তোয়াতো…

তাহলে চোখ নামিয়ে রেখেছেন কেনো..?
আমার দিকে তাকিয়ে বলুন,

কি বলবো..?

আপনি কোনোদিনও… একমূহুর্তের জন্যেও… আমাকে ভালবাসেন নি।

আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছিনা।

আপনি খুব ভালো করেই বুঝেছেন
আপনি নিজেতো অভিনয় করছেনই, আমি যে আপনাকে ভালবাসি সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করেছেন।

সব কিছু জানার পর ও কেনো আপনি এই বিয়েটা হতে দিলেন।একবার আমার কথা ভাবলেন না।আর শুভ্র ওই বেচারা কি দোষ করেছে। আপনার জন্যে ওকে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে হলো যে কোনোদিন ও ওকে ভালবাসবে না।

জহির চোখ তুলতে পারছে না। কি করে তুলবে।ওর চোখে জল টলমল করছে। যে নিষিদ্ধ প্রেম ওর ভেতরে দানা বেধেছে, যাকে আজ পর্যন্ত হাজার বাহানায় লুকিয়ে রেখেছে আজ কিছুতেই সে অনুভূতি… ও তুলিকে দেখতে দিতে চায়না।কিছুতেইনা…।

চলবে…