#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|৯|
#শার্লিন_হাসান
🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫
রুমে এসে শার্মিলা চেঞ্জ করে নেয়। তাইজ্যিনকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। ফোন হাতে বেলকনিতে যায়। একজনকে কল দিয়ে জানায়, নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি নিয়ে আসতে সে হেডকোয়ার্টারে যাবে। বেলকনি থেকে রুমে আসতে, শার্মিলা তারিনকে দেখে। শার্মিলা কে দেখে তারিন শুধায়, “ভাইয়া আজকে লান্সে তোমার জন্য কিছু রান্না করছি। খেয়ে অবশ্যই বলবে কেমন হয়েছ।”
তারিনের কথায় তাইজ্যিন শার্মিলার দিকে তাকায়। তাকিয়েই জবাব দেয়, “তোমার রান্না অলওয়েজ ভালো হয়।”
তাইজ্যিনের কথার সাথে,সাথে শার্মিলা প্রস্থান করে। তখখন তারিন জিজ্ঞেস করে, “ভাবী কোথায় যাচ্ছে?”
“যাচ্ছে কাজে।”
হেডকোয়ার্টারে এসেই শার্মিলা ইন্সপেক্টর আরোশ খানের রুমের দরজায় নক করে। শার্মিলাকে দেখে আরোশ খান এক গাল হেঁসে বলেন, “ইন্সপেক্টর শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী কাম হেয়ার।”
“থ্যাঙ্কিউ স্যার।”
কথাটা বলে শার্মিলা আসন গ্রহণ করে। তখন আরোশ খান হাত দুটো টেবিলের উপর রেখে বলেন, “ইও আর ট্যালেন্টেড অফিসার! তোমাকে নিয়ে যত বলব ততই কম হয়ে যাবে। ইন্সপেক্টর শাহীন ইমতিয়াজ স্যারের কার্বন কপি তুমি।”
“থ্যাঙ্কিউ স্যার। তবে আমাদের নেক্সট টার্গেট কী?”
“শোন, সৈয়দ ইব্রাহিম বিডি আসছে খবর পেলাম। এখন ভাবছি ওকেই ধরে নেব।”
“কিন্তু স্যার ওকে ধরলে কিন্তু সব সমাধান হয়ে যাবে না।”
“ওকে ধরাটা সহজ নয়।”
“সে জানি। তবে আমার বাবার মৃ’ত্যুটা তো আজও রহস্যময়। আমি আগে এটার সমস্যা সমাধান করতে চাই। তারপর অন্য মিশন!”
“দুটোই কন্টিনিউ করো। তোমার উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।”
“দেখি!”
আনমনা হয়ে জবাব দেয় শার্মিলা। তখন আরোশ খান পুনরায় বলে, “রাহাতকে জব্দ করা অনেকটা কঠিন ব্যপার ছিলো। তুমি সেটা সহজে করে দিলে।”
“তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরীকে নিয়ে কিছু বলুন স্যার?”
“তাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। আমাদের যা দরকার পেয়ে গেছি।”
“মনে হয় বিয়েটা করে ভুল করেছি। প্রেমের অভিনয় করলে খারাপ হতো না।”
“দেখো আর কোন খবর পাও কীনা!”
“তবে, শহরে যতগুলো ক্রাইম হয় বা ক্রাইমের পেছনে বিশেেষ ধনী মানুষগুলোর হাত থাকে।”
“শুধু ধনী না, আইনের মানুষদের দের হাত থাকে।”
“এই সৈয়দ ইব্রাহিম, কিছু এমপি, বিজন্যাসম্যান, তাইজ্যিনের মতো এমন অনেক মাফিয়া ওর পকেটে থাকে। এসব কোন ব্যপার না ওর জন্য। সেখানে আমরা চুনোপুঁটি।”
“ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ধূলিকণা বিন্দু, বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাসাগর, পাহাড়, সমুদ্র। এটা সবসময় মাথায় রাখবে।”
“ইয়েসস্যার! আমি উঠি, আমার কিছু কাজ আছে।”
কথাটা বলে শার্মিলা উঠে আসে। করিডরে সৌরভের সাথে দেখা হয়। সৌরভ শার্মিলাকে দেখে বলে, “ম্যাম আপনি আসবেন জানানি কেন?”
“সব কিছু জানাতে হয় না সৌরভ।”
“আচ্ছা, কী খাবেন সেটা বলেন?”
“লান্স করবো।
শার্মিলা, সৌরভ একসাথে লান্স করে নেয়। শার্মিলার রুমে বসে তারা কিছু প্লান করে। বিকেলের দিকে হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে পড়ে। গাড়িতে বসে ভাবছে তাইজ্যিনের সাথে পরিচয়,পিছু নেওয়ার কাহিনি। যখন শার্মিলা পোস্টিং হয় সেদিন তার বাবা ভীষণ খুশি হয়েছিলো। বাবাকে কথা দিয়েছিল দেশ সেবা তার লক্ষ্য। নিজের দেশ থেকে ক্রাইম মুছে দেওয়ার জন্য সবসময় আছে। কী সুন্দর ছিলো দিনগুলো। বাবা মেয়ে একসাথে হেডকোয়ার্টারে আসত। মেয়ে বাবাকে স্যালুট করত। তারপর দুবাই ট্রেনিং পড়ে শার্মিলার।তারপর এসে দু’টো কবর পায়। শার্মিলা আসার আগের দিন রাত তারা খু’ন হয়। শাহীন ইমতিয়াজ শার্মিলার রুমের টেবিলের উপর কিছু বেলীর মালা,গোলাপ রাখেন। ছোট্ট চিরকুটে লেখা ছিলো, ” আসার পথে দেখে শখ হয়েছিলো। এবার আমার মেয়ের জন্যই নিয়ে আসলাম,তার মা এবার বাদ!”
সেদিন ফুল চিরকুট হাতে অনেক কেঁদেছিলো শার্মিলা। অনেক ভে’ঙে পড়েছিলো। তখন, সৌরভ,আরোশ খান তাকে অনেকটা মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছিলো। কিছুদিন বিরতীর পর কাজে জয়েন করে শার্মিলা। তখন তার লক্ষ্য হয়ে যায়, সৈয়দ ইব্রাহিম! তবে তাইজ্যিন এই লিস্টে থাকলেও সে তার মতো ছিলো। তাকে ধরার তেমন কোন প্লান এখন ছিলো না। তবে খোঁজ খবর নেওয়ার পর জানতে পারে তাইজ্যিনের মতো মাফিয়া এর সাথে সংযুক্ত। তাইজ্যিনের মাধ্যমে সৈয়দ ইব্রাহিমের কাছে পৌছাতে পারবে। সেজন্য ফুটপাতে হাঁটা কন্টিনিউ করে। কখনো মেইন রোড,কিংবা ব্রিজের উপর। আবার রাস্তার পাশের বড় বিল্ডিংয়ের ছাঁদ থেকেও খেয়াল রাখত। তার সাথে সৌরভ ও থাকত। বিশেষ করে তাইজ্যিনের মুভমেন্ট ফলো করা তাদের লক্ষ্য ছিলো। একদিন সন্ধ্যায় ফুটপাতে হাঁটছিলো শার্মিলা। তাইজ্যিনের গাড়ী ফলো করত সে। হুট করে ফুটপাতে
তাইজ্যিন গাড়ী থামায়। শার্মিলা তাকে খেয়াল করতে দেখে একটা বাচ্চার থেকে তার ফুলগুলো কিনে নিচ্ছে তাইজ্যিন। কৌতূহল বশত তাইজ্যিনের থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও কীভাবে জেনো তাইজ্যিনের চোখে পড়ে তাকে। তবে নির্দ্বিধার তার কাছে যায় শার্মিলা। মুখে তার কালো মাস্ক! বেশভূষা বলতে গায়ে ব্লাক টিশার্ট, তার উপর একটা ব্লাক কালারের শার্ট গিট্টু দিয়ে উদর অব্দি উঠানো। সাথে ব্লাক জিন্স, পায়ে শু! একবারে চেনার উপায় নেই তাকে। তার উপর আবছা আলোয় মুখ বুঝা যায় না। তাইজ্যিনের মুখোমুখি হতে, তাইজ্যিন শার্মিলার দিকে সূক্ষ্ম বৃষ্টি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। শার্মিলা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করে, “ডেকেছেন?”
“জ্বী!”
কথাটা বলে অনেকগুলো ফুল এগিয়ে দেয় শার্মিলার দিকে। শার্মিলা হতভম্ব হয়ে যায়। ব্রু জোড়া প্রসারিত করে জিজ্ঞেস করে, “এগুলো আমায় কেন দিচ্ছেন?”
“আসলে মিস, আমি প্রায় ফুল কিনি এখান থেকে। রাতের বেলায়! তখন কাউকে না কাউকে ফুলগুলো উপহার দিয়ে যাই। আজকে আপনাকে দিতে মন চাইল।”
“আরো মানুষ আছে তো আশেপাশে।”
কথাটা বলে শার্মিলা এদিক-ওদিক তাকায়। তখন তাইজ্যিন হেঁসে বলে, “বলেছিলাম আপনাকে ফুল দিতে মন চাইল।”
সন্দেহ করবে ভেবে শার্মিলা ফুল হাতে নেয়। কাজের জন্য নিজের জেদ দমিয়ে নেয়। নিজের প্রমিস নিজেই ভেঙে দেয়। অনেকটা কাঁপা কাঁপা হাতে ফুল নেয় শার্মিলা। তবে তাইজ্যিনকে গা’লি দিতে ভুলেনি। একজন স্নিগ্ধ ফুল উপহার দিচ্ছে তার বিনিময় তাকে গা’লি দান করছে। তাদের মাঝে সবই উল্টো। তখন তাইজ্যিন বলে, “স্নিগ্ধ ফুল ভালোবাসার প্রতীক।”
শার্মিলা ফুলগুলো হাতে নেয়। মাথা নাড়িয়ে প্রস্থান করে। একটা ব্রিজের উপর আসে সে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ফুলগুলো দেখে। ‘ফুল ভালোবাসার প্রতীক।’
কথাটা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু তাকে ভালোবাসার কেউ নেই। যারা ছিলো তারা হারিয়ে গেছে। কেড়ে নিয়েছে তাহলে ভালোবাসার প্রতীক দিয়ে কী হবে? ভেবে ফুলগুলো নিচে ফেলে চলে আসে শার্মিলা।
গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে চৌধুরী
বাড়ীর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে চোখ যায় তাইজ্যিন আর তারিনের দিকে। দুজনে বসে কথা বলছে। শার্মিলাকে দেখে তারিন বলে, “সারাদিন তো বাইরে,বাইরে থাকো। ভাইয়ার খেয়াল রাখবে কে?”
“তার জন্য তো তোমাকে রেখেছি। তুমি থাকতে আমার আবার কী প্রয়োজন?”
কথাগুলো হিট লাগিয়েই বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন, তারিন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। শার্মিলা ভেতরে প্রবেশ করতে তিথিয়া চৌধুরী তেতে বলেন, “সারাদিন বাইরে,বাইরে ঘুরছ। খাওয়া দাওয়া কিছু করতে হবে তো নাকী?”
“আমারটা আমি বুঝে নেব। আপনি বরং আপনার নাতির ঠিকঠাক সেবাযত্ন হচ্ছে কীনা সেটা খেয়াল রাখুন। পারলে তারিনের মতো আরো কয়েকজনকে রেখে দিন।”
কথাটা বলে শার্মিলা চলে আসে। সে জানে রুড বিহেভ করেছে। কিন্তু তাইজ্যিনকে সহ্য হয়না তারুপর তার পরিবার। সব জেনো দু চোখের বিষ লাগে। লম্বা শাওয়ার নিয়ে, রেডি হয়ে নিচের দিকে পা বাড়ায়। শাড়ী আঁচল ঠিক করতে,করতে সোফায় বসে শার্মিলা। তখন তিথিয়া চৌধুরী বলেন, “তারিন তাইজ্যিনের জন্য রান্না করেছে, রাতে তুমি ওর জন্য কিছু রান্না করো?”
“ঠিক আছে।”
সহজে রাজী হয়ে যায় শার্মিলা। রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ফ্রিজ খুলে বিফ বের করে। তখন কাজের বুয়া বলে, “ছোট মেডাম, ছোট স্যার তো বিফ খায় না। ওনার এলার্জি আছে।”
“ওহ তাই নাকী?”
“জ্বী মেডাম।”
“শোন, আমাকে ওর জন্য রান্না করতে বলা হয়েছে আমার যা ইচ্ছে আমি রান্না করব। ওর এলার্জিতে আমার কিছু যায় আসে না।
থেমে,
” কথা না বাড়িয়ে আমায় হেল্প করো।”
বুয়া মাথা নাড়ায়। শার্মিলার কথাবার্তা গুলো খুব হার্ড। কোন কোমলতা নেই এই কথায়। খুব মনোযোগ সহকারে, ঝাল দিয়ে রান্নাটা করে শার্মিলা। সে জানে তাইজ্যিন ঝাল পছন্দ করে না। তাতে তার কিছুই যায় আসেনা।
রাতে সবাই ডিনার করতে বসলে শার্মিলা তার রান্না করা বিফ সেখানে রাখে। তখন তারিন বলে, “ভাইয়া বিফ খায় না। এলার্জির প্রব্লেম আছে। আমি দুপুরে মাটন রান্না করেছি।”
“ঠিক আছে তাহলে ফেলে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে শার্মিলা বাটি নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখন তিথিয়া চৌধুরী বলেন, “ও বিফ খাবো না আমরা খাবো। নতুন বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে দেখি।”
“ইয়াহ্! শিওর!”
শার্মিলা বাটি এগিয়ে দিতে মোটামুটি সবাই বিফ নেয়।তখন তাইজ্যিন ও নিতে যাবে তারিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “ভাইয়া এটা খেতে হবে না। এলার্জি তোমার কী অবস্থা হয়ে ভুলে গেছ?”
তাইজ্যিন নিতে গিয়েও নেয়না। একটু করে খেয়ে ঝালে তাদের সবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শার্মিলা বুয়াকে বলে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি আনায়। সবার সামনে মিষ্টি বলে, “আমি জেনো ঝালে মুখ পুড়িয়ে দিতে পারি আবার মিষ্টি দিয়ে সব ঠিক ও করতে পারি। শুধু মানুষ ভেদে কাজটা করি।”
সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হয়। তাইজ্যিন সোফায় বসতে তারিন কফির মগ আনে। তাইজ্যিন কফির মগ নিয়তে তারিন বলে, “আমি বানিয়েছি, খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে।”
পাশে শার্মিলা বসা ছিলো। ওদের দেখে তেমন কিছু বলেনি। চুপচাপ প্রস্থান করেছে। কিছুক্ষণ পর তাইজ্যিন রুমে যেতে শার্মিলাকে দেখেনি। রুম অন্ধকার করে রেখেছে। বেলকনিতে আসতেই দেখে শার্মিলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন তাইজ্যিন শার্মিলাকে বলে, “ঘুমাবে না?”
শার্মিলা কোন কথা না বলে বালিশ নিয়ে কাউচের উপর চলে যায়। শার্মিলার কাজে তাইজ্যিন হতভম্ব হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, “খাটে ঘুমাবে না?”
“ওটা তারিনের জন্য রাখা। ওকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসুন!”
#চলবে