গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ১৬
লেখিকা- রিয়া খান
কিছু না বলে কান্নাকাটি করেই যাচ্ছে অনবরত। দ্বীপ বুঝতে পারছেনা ঠিক কি করা উচিৎ এখন। কিন্তু এই মুহুর্তে মিশানের এই অবস্থা দেখতে পারছে না। দ্বীপ মিশানের সামনে থেকে গ্লাস বোতল কেড়ে নিয়ে সরিয়ে ফেলে এরপর মিশানকে জোর করে ধরে নিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে বসায়। মিশান কোনো কথা না বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
দ্বীপ ড্রাইভ করছে মিশান পাশে বসে আছে। বেশির ভাগ রাস্তাই একদম ফাঁকা। হাইস্পীডে গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করে গাড়ি থামালো, কারণ রাস্তার মাঝখানে গাড়ি রেখে গাড়ির সামনে বসে সিগারেট টানছে তীব্র। দ্বীপ গাড়ি থেকে বের হতে যাবে তখন মিশান ওকে থামিয়ে দিলো কারণ মিশান সামনে তাকিয়েই তীব্রকে দেখে চিনে ফেলেছে।
চোখের পানি মুছতে মুছতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে তীব্রর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
মিশান নরম স্বরে বলল,
‘‘স্যার আপনি এভাবে এখানে?’’
‘‘এমনিই তোমার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’’
‘‘কিন্তু স্যার আপনি তো আমায় অন্য ডেট টাইম দিয়েছিলেন।’’
তীব্র উত্তর দিতে যাবে তখনি দ্বীপ গাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিকে আসলো দ্বীপের শব্দ পেয়ে তীব্র আড়চোখে ওর দিকে তাকায়, মিশান এই দৃশ্য দেখে ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠে,
‘‘স্যা স্যার আপনি অন্য কিছু মনে করবেন না, ও কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ড না। ও আমার ভাই হয়।’’
দ্বীপ মিশানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
‘‘মিশান কে উনি?’’
মিশান ইশারায় দ্বীপকে চুপ করতে বলল,
তীব্র রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
‘‘শুধু ভাই আর কিছু না?’’
‘‘স্যার বিশ্বাস করুন, আপনি যেরকম ভাবছেন সেরকম কিছু না। ওর সাথে আমার কোনো গোপন সম্পর্ক নেই। ও আমার মামার বড় ছেলে, আমার ভাই হয়।’’
‘‘বোন জামাইও তো হয়!’’
তীব্রর মুখে এই কথা শুনে দ্বীপ মিশান দুইজনেই সেন্টি খায়। নিশান দ্বীপের বিয়ের কথা বর্তমান পৃথিবীতে, কাজী সাহেব, দ্বীপ, নিশান, মিশান ছাড়া আর একটা পাখিও জানে না। তীব্র কি করে জানলো এটা!
ওকে কোনো এংগেল থেকে মানুষ মনে হচ্ছে না। পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। মিশান সংক্রান্ত খুঁটিনাটি সব কিছু জানে, আর মিশান কেবল এর নাম আর পেশা ছাড়া কিছুই জানে না। তীব্রর প্রতিটি কথায় রহস্য প্রকাশ পায়, এই রহস্যময় কথার মাঝেই মাথা ষোলো চক্কর দিয়ে উঠে।
‘‘স্যার আপনি কি করে জানলেন?’’
‘‘না জানার মতো কোনো গ্যারান্টি আছে কি?’’
‘‘মিশান উনি কে? কিছু বলছিস না কেনো?’’
দ্বীপের এই প্রশ্নে তীব্র মিশানের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল কি উত্তর দেয় সেটা শোনার জন্য,
মিশান থতমত খাচ্ছে, কথা বের হতে চাচ্ছে না।
‘‘দ্বী দ্বীপ! উ উনি আমার..আমার (তীব্রর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর দিকেই পলকবিহীন নজরে তাকিয়ে আছে,ঢোক গিলে উত্তর দিলো মিশান) উনি আমার সিনিয়র। স্পেশাল ব্রাঞ্চের উনি। উনার সাথে সম্পর্ক অনেক ভালো, স্যার হয়তো এখানে কোনো কাজে এসেছিলো তাই দেখা হয়ে গেল।’’
কথাগুলো মিশান একদমে বলল, কিন্তু দ্বীপের কাছে কথাগুলো সন্দেহ জনক লাগল, মিশানকে আপাততো কোনো প্রশ্ন করল না।
‘‘দ্বীপ তুই গাড়িতে বস গিয়ে। আমি আসছি স্যারের সাথে কথা বলে।’’
দ্বীপ ঘুরে গিয়ে গাড়িতে বসে রইল,
‘‘স্যার বলুন এখন, কোনো কাজ আছে কি?’’
তীব্র মৃদু হেসে মিশানকে বলল,
‘‘মিশান! তুমি এতো ভালো কেনো? আর এতো ইমোশনাল তুমি! তোমার সাথে ইমোশন মানায় না। তোমার অনেক কঠিন হতে হবে মিশান, নিজের জীবনে অনেক যুদ্ধ বাকি আছে।’’
‘‘আমার আবার কিসের যুদ্ধ স্যার? আমি তো বিনা যুদ্ধেই হেরে গেছি। আমার লাইফে কিছু নেই স্যার, বোনটা আছে তাই আমিও আছি, বোনটা চলে গেলে আমিও শেষ হয়ে যাবো। ডক্টর বলেছে ওকে সর্বোচ্চ আর এক বছর বাঁচানো যাবে, পৃথিবীর কোনো উন্নত চিকিৎসাই আমার বোনকে এক বছরের বেশি বাঁচাতে পারবে না, বাকিটা উপরওয়ালার হাতে। জীবনে কিচ্ছু চাই নি নিজের বোনের মঙ্গল ছাড়া, আর আমার সেই বোনটাকে একটু একটু করে মৃত্যুর শহরের দিকে ধাবিত হতে দেখছি প্রতিনিয়ত। আমি চাইলেও কিচ্ছু করতে পারবো না স্যার, আমি পারবো না কিছু করতে।’’
কথা গুলো বলতে বলতে অনেকটা জোরেই কেঁদে দিলো মিশান।
‘‘মিশান তোমার ড্রিঙ্কটা আজ কম করা হয়ে গেছে আরেকটু করলে ভালো হতো। এভাবে ভেঙে পড়লে কিচ্ছু করতে পারবে না, মরার আগেই মরে যাবে। জীবিত লাশ হয়ে চলতে হবে। যাও বাড়ি চলে যাও এখন। আমি আর রাত করাবো না বেশি।
মিশান চোখ মুছতে মুছতে মাথা নাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।’’
তীব্রও নিজের গাড়িটা সরিয়ে নিল।
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে দ্বীপ খুব কড়া করে মিশানকে চেপে ধরল, আর যাই হোক তীব্রর সাথে ওর স্বাভাবিক সম্পর্ক না।
‘‘ছোটো বেলা থেকে এক টেবিলে খেয়ে বড় হয়েছি, তাই বুঝতে পারি কে কতগুলো খাবার খেতে পারে, কার কোন আইটেম পছন্দ না। এই যে তুই বোয়াল মাছ খাস না ছোটো বেলা থেকে, এখন যদি তুই বোয়াল খাওয়ার বায়না করিস বা তোকে খেতে দেখি ব্যাপারটা কি স্বাভাবিক ভাবে নেয়া উচিৎ আমার? সাত পাঁচ কি বুঝাতে চাইছিস মিশান তুই?সত্যিটা বল, না হলে আমি নিশানকে বলে দেবো তুই ড্রিঙ্ক করিস।’’
মিশান ধমকের স্বরে বলে উঠল,
‘‘সবাই মিলে কি শুরু করলি? সারাটাপথ কেনো সবাই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করিস?কার কি ক্ষতি করেছি?’’
দ্বীপ কঠিন করে বলল,
‘‘মিশান কি হয়েছে বল। নিজের মধ্যে চাপা রাখবি না।’’
না চাইতেও মিশান দ্বীপকে সবটা খুলে বলল। সবটা শোনার পর দ্বীপ হতাশাময় নিঃশ্বাস ছাড়লো। যা কিছু হয়ে গেছে ওর সাথে তা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ ই ছিল না। মিশান দ্বীপকে বলে দিলো নিশানকে যেনো এর কিচ্ছুটি না জানায়। নাহলে নিশান বোনের চিন্তায় আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে সাথে মিশানের থেকে দ্বিগুণ হারে কষ্ট পাবে।
নিশান ভালোমতো বুঝতে পারে মিশান প্রতি মিনিটে নিশানকে হারানোর ভয় পায় আর নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিশানকে বাঁচিয়ে রাখার।
পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে তাতে নিশানের কোনো মাথা ব্যাথা নেই,
বোনকে ছেড়ে ওপারে চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে জেনে ভেতর টা খুব ছটফট করে।
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কার ই বা ইচ্ছে করে প্রিয়মানুষ গুলোকে ছাড়া থাকার অনুভূতিটা কল্পনা করতে!
বাড়ি পৌঁছে মিশান বেশি করে আদা লেবুর রসের চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ নিশানের পাশে শুয়ে পড়লো।
মনে মনে নিয়ত করলো দেশে থাকা কালীন ড্রিঙ্ক করা যাবে না, যতোই কষ্ট হোক, কারণ আজ না হয় ড্রিঙ্ক কম করায় নেশা ধরে নি কিন্তু কোনো রাতে বেশি ড্রিঙ্ক করলে নিশান বুঝে যাবে।
নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছিলো এ কয়টা দিন সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে সময় কাটাতে।
মিশান দেশে আসার পর মামী সারাক্ষণ এটা সেটা খাবার বানিয়ে মুখের সামনে তুলে দেয়।
মিশানের বিয়ের কথাটা নিশানের থেকে লুকিয়ে রাখাটা খুব কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু ব্যাপারটা কিভাবে নিশানকে জানাবে সেটা বুঝতে পারছে না। কারণ যদি নিশানের মনে একশো একটা প্রশ্ন জাগে, সেগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাবে মিশান।
একটা পূর্ণিমা রাতে নিশানকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো মিশান, দ্বীপ ছিল না সাথে, ও একটা কাজে ঢাকার বাইরে ছিল।
নিশান আর মিশান রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল গল্প দুষ্টুমি করছিল, রাত খুব একটা ছিল না বলে টুকটুকি, লাল্লু ওদের পুরো গ্যাং ছিল, ওদের সাথে দুই বোনের অনেক ভালো সময় কাটে, মনটা ভেতর থেকে হাল্কা হয়ে যায়, ওদের সবাইকে নিয়ে নিশানের পছন্দের সব রকম স্ট্রিট ফুড খায়।
ঘুরাঘুরি শেষ দুই বোন খুনসুটি করতে করতে বাড়ির দিকে ফেরে,
এমন সময় মাঝ রাস্তায় তীব্র এসে দাঁড়ায়।
গাড়ি থেকে নেমেই ওদের দুই বোনের পথ আটকে দাঁড়িয়ে নিশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘‘হাই নিশান!’’
নিশান একটু অবাক হয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
‘‘হ্যালো!’’
মিশান তীব্রকে দেখে একটুও অবাক হয়নি, বরং স্বাভাবিক ই থাকে। যতবার তীব্রর সাথে দেখা হয়েছে ততোবারই মিশানের পক্ষ থেকে আনফরচুনেটলি তীব্রর পক্ষ থেকে আগেই প্ল্যান করা।কারণ তীব্র মিশানকে দেখা করার জন্য যে ডেট বলে হয় সেই ডেটের আগেই হুট করে সামনে দাঁড়াবে, নয়তো ডেটের পরে, আবার এমনও করে যেদিন বলে সেদিন ই সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘‘আসসালামু আলাইকুম স্যার!’’
‘‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। ঘুরতে বেরিয়েছিলে?’’
‘‘হ্যাঁ স্যার, সামনের সপ্তাহেই তো চলে যাবো। তাই কাছে পিঠেই ঘুরাঘুরি যতদূর করা যায়।’’
তীব্র নিশানের দিকে তাকিয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘‘নিশান তোমার শরীর কেমন আছে বোন?’’
‘‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।’’
‘‘ওষুধ ঠিক মতো খাওয়া হয় তো?’’
‘‘জি ভাইয়া।’’
নিশান তীব্রকে না চিনেই উত্তর দিলো নরমাল ভাবে। নিশানের সাথে তীব্রর এমন মৃদু ব্যবহারে অনেকটা অবাক হয় মিশান, আজ অব্ধি তীব্রকে মিশানের সাথে কখনো বিনয়ী ভাবে কথা বলতে দেখেনি।
‘‘রাত খুব একটা হয় নি, তোমরা চাইলে আমি তোমাদের ছোট্ট একটা ট্রিপ দিতে পারি।’’
মিশান ফরমাল হাসি দিয়ে উত্তর দিলো,
‘‘না স্যার দরকার নেই, আমাদের ঘুরাঘুরি হয়ে গেছে অনেক।’’
‘‘আরে চলো টাইম লাগবে না।’’
মিশান উত্তর দিতে গিয়েও থেমে গেল কারণ এই মৃদু ভাষার আড়ালেও ওর ফাঁদ থাকতে পারে, তাই আর বাহানা না করে তীব্রর সাথে ঘুরতে রাজি হয়ে যায়।
নিশান তো কিছুই বুঝতে পারছে না, একবার তীব্রর দিকে তাকায় আরেকবার মিশানের দিকে।
তীব্র ড্রাইভারের পাশে বসে আর পেছনে নিশান মিশান বসে।
নিশান মিশানের কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘‘এই আপিইই। এই লোকটা কে?’’
‘‘ভাইয়া হয়। ’’
‘‘তোমার?’’
‘‘না।’’
‘‘আমার?’’
‘‘হুম।’’
‘‘কেমন ভাইয়া?’’
‘‘পরে বলছি?’’
‘‘ভাইয়াটা দেখতে অনেক সুন্দর তাই না?নায়কের মতো দেখতে কিন্তু এন্ট্রি নিল ভিলেনের মতো।’’
‘‘চুপ শুনবে তো।’’
‘‘শুনলে কি রাগ করবে?’’
‘‘হতে পারে।’’
মিশান একটু আতংকে ছিল কিন্তু নিশানকে বুঝতে দেয়া যাবে না ভেবে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিল, তীব্র নিশানের সাথে বেশ ভালোই সুন্দর মতো কথা বলছিলো। মিশানের আপাততো তীব্রর উপর রাগ হচ্ছে না, কারণ ওর আসল রূপটা নিশানের সামনে সুপ্ত অবস্থায় আছে। নিশানকে বেশ হাসাচ্ছিলো কথায় কথায়, তীব্রকে ভালোই লেগে যায় নিশানের কাছে।
একটা সুন্দর জায়গায় ওদের ঘুরতে নিয়ে যায়, পরিবেশটাকে খুব সুন্দর মতো উপভোগ করে ওরা, মিশান চুপচাপ নিশানের হাসির শব্দগুলো নিজের কানের মধ্যে রেকর্ড করে রাখছিলো যেনো আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকে এই হাসি গুলো। জোনাকি পোকা নিয়ে নিশান এতো মাতামাতি করে বাচ্চাদের মতো মিশান দুচোখ ভরে দেখে নিশানের এই খেলার দৃশ্য। আইসক্রিম চকলেট খাওয়ার সময় ঠোঁটের কোণে কোনো অংশ লেগে গেলে টিস্যু ব্যবহার না করে নিজের হাত দিয়ে আলতো করে মুছে দেয়।
এই ভালোবাসা গুলো অমর। বাকি জীবন বেঁচে থাকার জন্য এই স্মৃতি গুলোই যথেষ্ট।
সেদিনে রাতে খুব ভালো সময় কাটে ওদের। তীব্র নিশান মিশানকে বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যায়। এই একরাত মিশানের তীব্রর উপর কোনো ক্ষোভ হচ্ছিল না, কারণ তীব্র নিশানকে একটা সুন্দর সময় উপহার দিয়েছে।
মিশানের কুয়েতে চলে যাওয়ার সময় চলে আসে, আগের দিন প্যাকিং করছে । এবার মন খারাপ করে থাকলেও কান্না করছে না। আর ছয়টা মাস পেরুতে পারলেই নিশানের কাছে চলে আসবে।
ব্যাগ গোছাচ্ছে এমন সময় নিশান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিশানকে।
আহ্লাদী কন্ঠে ডেকে উঠে,
‘‘আপিইইইইই’’
‘‘বলো।’’
‘‘আমি রাগ করেছি।’’
‘‘কেনো?’’
‘‘আমি শুধু এতোদিন দেখলাম তোমার সার্কাস। দ্বীপ না বললে জানতাম ই না।’’
‘‘দ্বীপ কি বলেছে?’’
‘‘এইযে একটা মিথ্যে অভিনয় করছো আমার সামনে, নিজের বুকে পাথর চাপা দিয়ে।’’
‘‘আমি কি অভিনয় করলাম?’’
নিশান মিশানের গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে বলল,
‘‘আমি কষ্ট পাবো বলে তুমি নিজের সাথে ঘটা দুর্ঘটনা টা আমায় না বলে দ্বীপকে বলেছো। কিন্তু আপি আমি কষ্ট পাই নি।
জানি আপি তোমার এই সময় বিয়ে হওয়াটা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিলো তোমার কাছে, ভেতরে ভেতরে অশান্তিতে ভূগছো। এই সময় তোমার সাথে এমনটা হওয়া উচিৎ হয় নি, তবুও আমার সাজেশন হলো তুমি নিজেকে কষ্ট করে হলেও আপাততো মানিয়ে নাও, দেখবে একটা সময় সুখ আসবে তোমার। আবার এটাও সত্যি, এই সময় তোমার পাশে একটা তীব্র ভাইয়া প্রয়োজন ছিল, তীব্র ভাইয়ার সাথে কথা বলে যতোটুকু বুঝেছি উনি খুব ভাল মানুষ, দেখতেও যেমন সুন্দর ব্যবহারও তেমন সুন্দর। আমি সব সময় আল্লাহর কাছে বলি আমার আপির জন্য একটা ঢাল পাঠাও যে ঢালটা আমার মতো বাকিদের মতো আমার আপিকে ছেড়ে যাবে না। আজীবন আমার আপির ছায়া হয়ে থাকবে।’’
মিশান মলিন হেসে বলল,
‘‘হুমহ! সারাজীবন মানিয়ে নেয়ার জন্যই তো মিশানের জন্ম। আর সুখের কথা বললি? শালা এই ‘সুখ’ শব্দটাই স্বার্থপর।
শুধু স্বার্থপর না বিশ্বাসঘাতকও।
এই শব্দটাকে আমি ঘৃণা করি নিশান। যদি সুখ আমার মান ভাঙাতে চায় তবে যেন তোকে আমার কাছে সারাজীবনের জন্য ফিরিয়ে দেয়, তা না হলে আমি কখনো এই শব্দটাকে নিজের জীবনে বরণ করব না।’’
‘‘এমন করে বলো না আপি।’’
মিশান চোখের জল মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
জীবনটাকে সহ্য হচ্ছে না কোনোভাবেই।জীবনের প্রতি অবস্বাদ ক্লান্তি ভর করেছে।
পরদিন ফ্লাইটে কুয়েতে ফিরে গেল।
দম ধরে দিনের পর দিন গণনা করছে কবে ফিরে যাবে।
ড্রিঙ্ক করাও বাদ দিয়ে দেয় টোটালি । কারণ এতে রক্ত নষ্ট হয়ে যাবে।এবার দেশে গিয়ে নিশানকে ব্ল্যাড দেয় নি এটা ভেবে ওর ব্ল্যাডে হয়তো এলকোহল মিশে গেছে। কুয়েত আসার পর ব্ল্যাড চেক আপ করায় ভালো মতো, এলকোহল এখনো পুরোপুরি মিশে যায় নি রক্তে। যদি ড্রিঙ্ক করা বাদ দেয় তাহলে ব্ল্যাড আগের মতো ক্লিন হবে।
কিছু মেডিসিনও নেয়া শুরু করে নিজের ব্ল্যাড আগের মতো স্বাভাবিক করার জন্য। সময় কখনো নষ্ট ঘড়ির কাঁটার মতো থেমে থাকে তো আবার কখনো নদীর ঢেউয়ের বেগের মতো অতিক্রম করে চলে।
প্রায় ছয়মাস শেষের দিকে, লাস্ট মাসের লাস্ট মিশনের পর ই পুরো টিমের কুয়েত থেকে বিদায় নিতে হবে।
মিশান কড় ধরে দিন গণনা করছে।
এদিকে নিশান এতোদিন ধরে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারলেও এখন সে ক্লান্ত হয়ে গেছে।মিশানের সাথে যতবার কথা হয় ততোবারই এক কথা বলে।
‘‘অই আপিইই তুমি কবে ফিরবে? আমার রোজ রোজ ভিডিও কল ভালো লাগে না, দেখো আমি মরে গেলে তখন তোমার ঠিকি সময় হবে। আচ্ছা আপি তুমি এটা বলো, তোমার কাছে আমি বড় নাকি তোমার জব বড়?’’
‘‘অবশ্যই তুই বড়। কিন্তু জবটা তো তুই ই নিতে বলেছিলিস।’’
‘‘মানলাম এই পেশাটা আমিই তোমাকে বেছে নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি তো জানো আপিই আমার সময়ের স্কেল কতটা নিচে নেমে এসেছে, কোনো একদিন দেখবে আমি আর ঘুম থেকে উঠছি না। আমি বলে দিলাম তোমায় দেখো, মৃত্যুর আগে আমি যদি তোমায় দেখতে না পাই, তাহলে তুমিও আমাকে শেষ দেখা দেখতে পারবে না, আমার জানাজার শেষে তুমি ফ্লাইটের টিকিট পাবে। আমি বলছি আপি তুমি জব ওটা ছেড়ে দাও দেশে এসে অন্য একটা চাকরি নাও যেটাতে আমি তোমার সাথে থাকবো সব সময়।
তুমি তো বলেছিলে আপি একটা সুন্দর দিনে আমার মৃত্যু হবে। কিন্তু তুমি যদি না থাকো সে দিন বা রাত সুন্দর হবে কি করে?’’
‘‘নিশান! বোন আমার আর কয়টা দিন ই বাকি, আপি এসে পড়বে। দেখবি একটা রাতের ঘুমের ব্যাবধানে এসে গেছি।
প্লিজ বোন, আর একটু কষ্ট কর!’’
তিন ঘন্টার ডিফারেন্সে কুয়েতে সন্ধ্যা ৭ টা বাজলেও বাংলাদেশে তখন রাত দশটা।
একদিকে লাস্ট মিশনের জন্য কনফারেন্স মিটিং চলছে, মিশান সেই কনফারেন্স রুমে বসে আছে।
আরেক দিকে ঢাকার বাইরে নিশান একটা রাস্তা দিয়ে প্রচন্ড বেগে ছুটছে, পেছনে কতগুলো ছেলে ওকে ধাওয়া করছে, নিশানের সঙ্গী দ্বীপ অচেতন হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়।
নিশান এভাবে ছুটতে চায় নি, দ্বীপ ওকে বার বার রিকুয়েস্ট করেছে, দ্বীপের কথামতো নিশান ছুটছে, কারণ ছেলেগুলো নিশানকেই মারতে এসেছে দ্বীপকে নয়। দ্বীপ বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল বলেই ওর মাথায় আঘাত করা হয়েছে।
দুর্বল শরীর নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে যখন শরীর অসাড় হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে না এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে, তবুও ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস রাখার প্রচেষ্টা ছিল, বোনের জন্য হলেও নিজেকে বাঁচাতে হবে।
শেষ বারের মতো মিশানের সাথে কথা বলতে মন চাইলে ছুটন্ত অবস্থায় ই ফোন বের করে নিশান মিশানকে কল করে,
যেখানে প্রত্যেকের ফোন সাইলেন্ট থাকা বাধ্যতা মূলক
সেখানে মিশানের ফোন ভাইব্রেশন করা ছিল।
একজন সিনিয়র লাস্ট মিশনের প্রজেক্ট সম্পর্কে বুঝাচ্ছে, প্রত্যেকেই মন দিয়ে শুনছে। মিশানও তাদের মাঝে একজন, গভীর মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছে এরকম পর্যায়ে মিশানের ফোন ভাইব্রেট করে উঠে। ফোন সাইলেন্ট করার জন্য সবার নজরের আড়ালে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে নিশান কল করেছে।
নিশান কখনো কল দিলে মিশান ভুলেও কল কেটে দেয় না।
কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে কল টা কেটে দিলো।
কল কাটার পর সাইলেন্ট করে পকেটে রাখতে যাবে তখন আবারও ফোন আসে, এবার আর মিশান থাকতে পারলো না।
উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো, সবাই ওর দিকে তাকালো এভাবে হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ার জন্য। সিনিয়রকে বলল ইমারজেন্সি একটা কল এসেছে, এটা বলেই পারমিশনের অপেক্ষা না করে মিশান কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে কল রিসিভ করল,
ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলার আগেই, ওপাশ থেকে নিশান হাঁপাতে হাঁপাতে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
‘‘আপিইইইইই! আপিইই! আপিইই!’’
নিশানের এইরকম ডাক শুনে মিশানের কলিজায় কাঁপুনি উঠে যায়,
‘‘নিশান কি হয়েছে?’’
‘‘আপিইইইইই বাঁচাও, ওরা আমাকে মারলো, আপিইইইইই! ………আপিইইইইই! মৃ’’(পুরোটা বলার আগেই কয়েকটা বিকট আওয়াজ এলো ওপাশ থেকে)
মিশান থমকে গেল।
‘‘নিশান!’’
ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসছে না।
মিশান উচ্চস্বরে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে নিশানকে ডাক দিলো,
‘‘নিশান!’’
নিশান কথা বল, এই নিশান! নিশান!
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশানের কলটা কেটে গেছে, মিশান সাথে সাথে
কল দিলো, কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না, অনবরত রিং হচ্ছে তবুও রিসিভ হচ্ছে না।
মিশান পাগলের মতো চিৎকার শুরু করে দিয়েছে নিশান নিশান ডেকে।
নিশানকে না পেয়ে দ্বীপকে কল করলো,
কিন্তু দ্বীপের ফোন রিং হলেও রিসিভ না হওয়াই শেষে তীব্রকে কল করে,
তীব্র কলটা নগদেই রিসিভ করে,
‘‘হ্যালো স্যার স্যার নিশানকে বাঁচান স্যার, ওর খুব বিপদ স্যার প্লিজ নিশানকে বাঁচান। স্যার প্লিজ স্যার আপনার পায়ে পড়ি আমার বোনকে বাঁচান, বিনিময়ে আপনি যা করতে বলবেন আমায় আমি তাই ই করবো।’’
‘‘মিশান শান্ত হও কি হয়েছে নিশানের? ও কোথায় আছে?’’
‘‘জানি না স্যার, নিশান কোথায় আছে স্যার আপনি যে করেই হোক ওকে খুঁজে বের করুন। আমার বোনকে বাঁচান স্যার।’’
‘‘ওকে আমি দেখছি তুমি শান্ত হও।’’
মিশান হাঁটু গেড়ে বসে অনবরত নিশান নিশান করে চিৎকার করেই যাচ্ছে, সবাই ওর চিৎকার আর্তনাদ দেখছে, ওর টিমের মেম্বার রা মিশানকে শান্ত করে জানার চেষ্টা করছে কি হয়েছে।
মিশানের আর্তনাদ থামছেই না ।
তীব্র মিশানের কল কেটে দিয়ে নিশানের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে সেখানে গিয়ে কেবলই নিশানের মৃত দেহটা মিলে, কি করে মিশানকে নিশানের মৃত্যুর খবর দেবে বুঝে উঠতে পারে না। তীব্র নিশানকে পাওয়ার পরপরই গাড়িতে তুলে নিয়ে নিকটবর্তী হসপিটালে নিয়ে যায়।
গায়ে বেশ কিছু আঁচড়ের দাগ, মাথায় হয়তো আঘাত করা হয়েছে যার জন্য অবাধ রক্তক্ষরণ হয়েছে, এরপর দেহে বেশ কয়েকটা গুলি।
কি কারণ এই মৃত্যুর তা সম্পূর্ণ অজানা।
হসপিটালে নেয়ার পর মিশানের মামাকে খবর দেয়া হয়, এরপর দ্বিপকে খুঁজে পেয়ে ওকেও হসপিটালে এডমিট করা হয়, নিশানের বডিটাকে ডাক্তার রা ডেড বডি বলে ঘোষণা দেয়।
কেউ বুঝতে পারছিলো না, মিশানকে কিভাবে বলবে এই খবর।
মিশান তীব্রকে ফোন দিলে তীব্র রিসিভ করে না, কারণ রিসিভ করলেই কৈফিয়ত দিতে হবে।
মিশান এতো বেশি কান্নাকাটি করে সিনিয়ররা অব্ধি ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, মিশান তখন শুধু একটা উত্তর ই দেয়, ও দেশে ফিরবে। যেভাবেই হোক আজই দেশে ফিরবে কিন্তু কেউ ওর কথায় সহমত হয় না। মিশান অবশেষে ডিসিশন জানায় ও জব করবে না, সরকারি প্লেনের টিকেটও লাগবে না, ও নিজেই টিকেট কিনে চলে যাবে। যদি নিশানের কিছু হয়ে যায় তবে আজীবন নিজেকে অপরাধী ধরে নেবে, কারণ ও দেশে থাকলে হয়তো নিশানের সাথে এতো কিছু হতেই দিতো না।
মিশানের মামা মিশানকে কল দিয়ে জানায় নিশান অসুস্থ হয়েছে অনেক, হসপিটালে ভর্তি, মিশান কথা বলতে চাইলে জানায়, নিশান কথা বলতে পারে না, আই সি ইউ তে আছে। কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না ভেতরে।
মিশানের মাথা পুরো এলোমেলো হয়ে যায় নিশানের কথা শুনে, কোনো ভাবেই ওর পক্ষে থাকা সম্ভব না এখানে।
সিনিয়ররা বাঁধা দেয়া সত্ত্বেও কুয়েত থেকেই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দেয়।
মিশানের কাকুতিমিনতি দেখে কুয়েত থেকে ওকে সেনাবাহিনীদের হেলিকপ্টারে পাঠানো হয় দেশে।
এতোগুলো সময়ে ওর কান্না এক সেকেন্ডের জন্যও থামে নি, মামা জানায় নিশান সিএমএইচে ভর্তি,
হেলিকপ্টার সিএমএইচের হেলিপ্যাডে ল্যান্ড করার পর, মিশান হসপিটালের ভেতর ছুটে যায়।
সেখানে যাওয়ার পর যখন নিজের চোখের সামনে নিশানের ডেড বডিটা দেখতে পায়, মিশান সে ধাক্কাটা নিতে পারে না, যে হারানোর ভয়টা এতো বছর ধরে পাচ্ছিল সেটা আজ মিটে গেল একটা মৃত্যু দিয়ে, বোনকে কথা দিয়েছিলো ওর মৃত্যুর সময় পাশে থাকবে, একটা সুন্দর দিনকে সাক্ষী রেখে সুন্দর মৃত্যু হবে নিশানের। ওর শেষ নিশ্বাস টা পাশে বসে বসে গুনবে।
নিশানের সে স্বপ্ন হলো না পূরণ। উল্টো মৃত্যুটা হয়েছে একটা বাজে রাতকে সাক্ষী করে, ভয়াবহ কঠিন যন্ত্রণাময় মৃত্যু দিয়ে।
যে মৃত্যুর প্রত্যাশা ছিল অপ্রস্তুত।
মিশান ধীর পায়ে নিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কাছে ঘেঁষে দাঁড়াল, আলতো হাতে গাল ছুঁয়ে নিশানকে ডাকতে লাগল,
‘‘নিশান! এই নিশান! বোন তুই ঘুমিয়ে আছিস তাই না? বোন উঠ। দেখ আপি এসেছে। তুই তো আমার মাথা খেয়ে ফেলেছিলিস, দেশে আসার জন্য। একটা মাস তোর তর সইলো না, এতো জেদ তোর! আপিকে চাকরী ছেড়েই তোর কাছে আসতে হলো। কিরে নিশান রাগ করেছিস? আসতে দেরি করেছি বলে?আমি কি করবো বল ওরা আমায় আসতে না দিলে? জানিস আমি তোর জন্য চাকরি টা ছেড়ে দিয়ে এসে পড়েছি, আগে যদি মাথায় আসতো চাকরি টা ছেড়ে আসা যাবে নিশানের কাছে, তবে আমি আসতাম। আমার সত্যিই মাথায় আসে নি ব্যাপারাটা। একদিন তোর জন্যই আমি এই চাকরিতে ঢুকেছিলাম আজ তোর জন্যই ছেড়ে দিয়েছি।
নিশান এবার তুই খুশি হবি তো! যা বলেছিলি তাই ই করেছি, মানলাম একটু লেট হয়েছে কিন্তু এসেছি তো!
নিশান উঠ, চোখ খোল, আপির সাথে কথা বল। আহ্লাদী কন্ঠে আপিইইই বলে ডাক দে! নিশানরে! এই নিশান! নিশান!
নিশান উঠ!’’
মিশানের ভাঙা গলার আওয়াজ পর্যায়ক্রমে উচ্চস্বর থেকে চিৎকারে ধাবিত হয়, নিশানের হাত জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো। সহ্য হচ্ছে না এ যন্ত্রণা, মেনে নিতে পারছে না নিশানের এই ভয়াবহ মৃত্যুটাকে। ভাবতে পারছে না এখন থেকে নিশান আর আহ্লাদী স্বরে মিশানকে ডাকবে না, আর কখনো কোনো বায়না নিয়ে হাজির হবে না। সামনে থেকে জড়িয়ে ধরবে না। নিশানের হলুদ ফরশা গায়ের রং রক্তশুন্য হয়ে ফ্যাঁকাসে রূপ ধারণ করে আছে, একটা রাতের ব্যাবধানে জীবিত মানুষটা মৃত হয়ে গেছে, চেহারাতেও লাশ লাশ ছাপ।
গতকালও নিশান এই সময়টাতে বাড়িতে ছিল, মিশানের সাথে ঠিক এই সময় ভিডিও কলে কথা বলছিলো
কত হাসি খুশি ছিল, কাল এই সময়টাতেও ভাবতে পারেনি আজকের এই সময়ে ওর লাশের পাশে বসে থাকতে হবে।
বেঁচে থাকার মতো কোনো কারণ ই পাচ্ছে না, যদি আত্মহত্যা ছাড়া স্ব ইচ্ছায় মৃত্যুটাকে বরণ করে নেয়া যেতো তবে মিশান আজ সে মৃত্যুকে প্রার্থনা করে নিজের জন্য বরণ করে নিতো,
নিশানের মৃত লাশের সামনে মিশানের আর্তনাদ চোখে দেখার মতো না।
ওর কান্না দেখে আশেপাশের সবাই চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
নিশানের মৃত্যুর খবর শোনে মামী বেশ কয়েকবার সেন্সলেস হয়ে গেছে, দ্বীপ পাথরের মতো হয়ে আছে, মামা তাপসিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। মিশানে কান্না দেখে তাদের কান্নার বেগ বেড়ে যায়।
(চলবে)