তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-৩৪

0
1313

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_৩৪
#Anika_Fahmida

অনু আজ প্রথম তার শ্বাশুড়ি মায়ের রুমে যাওয়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হয়। এতোদিন ভয়ে অনু ভুলেও রেহেনা পারভিনের আশেপাশে যায় নি। কারণ যখনই তিনি অনুকে চোখের সামনে দেখছেন তখনই রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন। আদ্র এবং আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন এখন অফিসে। বাড়িতে অনু এবং রেহেনা পারভিন আর কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই। অনু তার শ্বাশুড়ি মায়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘মা আসবো?’

রেহেনা পারভিন চোখে মোটা কালো চশমা লাগিয়ে বই পড়ছিলেন। অনুকে দরজার সামনে দেখে তিনি অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন। অনু কাঁপা স্বরে বলল,

‘মা আমি আসলে আপনার রুমে আসতাম না। কিন্তু আমার মন যে কিছুতেই আর মানছিল না। বাসায় কারও সাথেই কথা বলতে পারি না। সারাদিন নিজেকে খুব একা লাগে। আমার আম্মু আব্বুও এতোদিনে আমার সাথে কোনো কথা বলে না। মা আপনিও যদি আমার সাথে কথা না বলেন তাহলে খুব খারাপ লাগবে।’

অনুর চোখে জল চলে আসলো। রেহেনা পারভিন কিছুক্ষণ অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেহেনা পারভিন আবারও চোখ মেলে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘ভিতরে আসো।’

অনুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল। তাড়াতাড়ি রুমে পা ফেলে অনু রেহেনা পারভিনের পাশে সোফায় বসলো। রেহেনা পারভিন শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

‘অনু তুমি যদি আগেই আমার ছেলেকে মন থেকে মেনে নিতে তাহলে আমি তোমার উপর কোনো রাগ করে থাকতাম না। এমনকি আদ্রের বাবাও তোমার উপর কোনো রাগ করতো না। সব যে তোমার ভুলের কারণে এমন হয়েছে নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পারছো।’

অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,

‘হ্যা মা আমি বুঝতে পারছি। আমি এর জন্য সত্যিই খুব অনুতপ্ত। আজ আমার ভুলের জন্য এমন হয়েছে।’

রেহেনা পারভিন অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আদ্র তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে অনু। আমার ছেলেটাকে কখনও কষ্ট দিও না।’

অনু মাথা নেড়ে রেহেনা পারভিনকে বলল,

‘মা আমি কখনও আদ্রকে কষ্ট দিবো না।’

অনুর কথা শুনে রেহেনা পারভিনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। অনু যে আসলেই কিছুটা বাচ্চা ধরনের মেয়ে তা বুঝতে রেহেনা পারভিনের বাকি রইল না। কেমন বাচ্চাদের মতো কথা বলে মেয়েটা। একটু বেশি অবুঝ।

শ্বাশুড়িকে এই প্রথম হাসতে দেখে অনুর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। বিভিন্ন গল্প করতে লাগলো শ্বাশুড়ি বৌমা।

অনু শাশুড়ির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে চলে আসলো। আজ আকাশে কিছুটা মেঘ জমেছে। হয়তো একটু পড়েই বৃষ্টি নামবে। আদ্র নিজের বিজনেসের কাজে এতো ব্যস্ত যে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেল। অনু সোফায় বসে বসে চিপস খাচ্ছিল। আদ্র রুমে ঢুকেই হেসে অনুকে বলল,

‘তোমার জন্য বড় একটা সারপ্রাইজ আছে অনু।’

অনু বসা থেকে উঠে আদ্রকে বলল,

‘কি সারপ্রাইজ আদ্র?’

আদ্র অনুর কাছে এসে অনুর গালে আলতো ছুঁয়ে বলল,

‘অনু আগামীকাল তুমি এবং আমি হানিমুনের জন্য সুইজারল্যান্ড ঘুরতে যাচ্ছি।’

অনু ভীষণ অবাক হলো। আদ্র হানিমুনে নিয়ে যাবে তাও আবার সুইজারল্যান্ডে। অনুর পুরনো কথাগুলো মনে পড়ে গেল। অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

‘আদ্র সুইজারল্যান্ড না গেলে হয় না? আমরা অন্য কোথাও ঘুরতে যাই। তাও সুইজারল্যান্ড না। আগেরবার তুমি আমাকে যেভাবে জোর করে সুইজারল্যান্ড নিয়ে গিয়েছিলে এখন আমার যেতে ভয় লাগে।

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘তুমি আবারও মত পাল্টে ফেলছো অনু? এটা তো ঠিক নয়। আমাদের বিয়ের আগেই আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলে আবারও আমি তোমাকে হানিমুনের জন্য সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে নিয়ে যাবো। তুমিও তো তখন বেশ লাফিয়ে রাজী হয়েছিলে। এখন তাহলে না করছো কেন?’

অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,

‘প্লেনে উঠতে আমার ভয় লাগে আদ্র।’

অনুর কথা শুনে আদ্র হেসে ফেললো। আদ্র অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে অনু কেঁপে উঠে। অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে আদ্র বলল,

‘এতো ভয় পেলে হয় অনু? আমি আছি তো তোমার পাশে। দরকার পড়লে পুরোটা প্লেন জার্নিতে তোমাকে আমি জড়িয়ে ধরে রাখবো। তাহলেও কি ভয় লাগবে?’

অনু লজ্জা পেয়ে হেসে আদ্রকে বলল,

‘একটুও ভয় লাগবে না।’

আদ্র এবং অনু সুইজারল্যান্ডে প্রায় তিন মাসের জন্য ঘুরতে গেল। এই তিনমাসেই আদ্র অনুকে সুইজারল্যান্ডের সব সুন্দর জায়গাগুলোতে নিয়ে যায়। অনু মুগ্ধ নয়নে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে। ঠিক তিন মাস পড়েই আদ্র এবং অনু আবারও দেশে ফিরে আসে। এরই মাঝে অনুর বাবা-মা অনুকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। কিন্তু অনু তাদের ফোন ধরে নি। মা-বাবার প্রতি অনুর ভীষণ অভিমান জমেছে। অনুর শ্বশুর আনোয়ার হোসেনও ধীরে ধীরে অনুকে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কারণ রেহেনা পারভিন আনোয়ার হোসেনকে বুঝিয়েছেন অনু মেয়েটা গম্ভীর হলেও মনের দিক দিয়ে খুবই ভালো। আনোয়ার হোসেনও রেহেনা পারভিনের কথা মেনে নিয়েছেন।

আজ সোমবার। অনু এবং রেহেনা পারভিন সোফায় বসে টিভি দেখছিল। সেই যে দুপুরে শ্বাশুড়ি বৌমা মিলে টিভি দেখতে বসেছে তো বসেছেই। রাত দশটা বাজে এখনও টিভি দেখা তারা দুজনে বন্ধ করে নি। আনোয়ার হোসেন নিজের রুমে বসে বই পড়ছেন। তিনি টিভি দেখেন না। এদিকে আদ্র নিজের রুমে বসে অনুর জন্য অপেক্ষা করছে। কখন যে অনু রুমে আসবে সেই আশায় আদ্র বসে আছে। কিন্তু অনু তো রুমেই আসছে না। আদ্র তাই রাগে জ্বলে যাচ্ছে। আদ্র রুমে এদিক ওদিক হাঁটছে এবং মনে মনে বলছে,

‘অনুর রুমে আসতে এতো দেড়ি হচ্ছে কেন? আমি যে কখন থেকে ওর জন্য অপেক্ষা করছি অনু কি বুঝে না? মায়ের সাথে বসে অনু টিভিতে এতো কি এমন দেখছে?’

আদ্র সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে দেখে অনু এবং রেহেনা পারভিন দুজনে মিলে ভূতের মুভি দেখছে আর ভয়ে কাঁপছে। তবুও দুজন মুভি দেখছে। ওদের কান্ড দেখে আদ্র নিঃশব্দে হাসলো। এমন সময় আদ্রের বাসায় আরমান রহমান এবং আমেনা বেগম প্রবেশ করেন। দারোয়ানরা অনুর মা-বাবাকে চিনে। তাই অনুর মা-বাবাকে বাসায় ঢুকতে তারা বাঁধা দেয় নি। আরমান রহমান শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

‘মা অনু নিজের বাবা-মাকে তুই ভুলে গেলি?’

বাবার কন্ঠ শুনে অনু পেছন ফিরে তাকালো। এতোদিন পর নিজের মা-বাবাকে চোখের সামনে দেখে অনুর দুচোখে জল চলে আসে। অনু কাঁপা স্বরে বলল,

‘আব্বু আম্মু তোমরা এসেছো?’

আমেনা বেগম অনুর সামনে এসে শান্ত স্বরে বলল,

‘এখনও কি আমাদের উপর রেগে থাকবি অনু?’

অনু আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘না আম্মু তোমাদের উপর আমার একটুও রাগ নেই।’

আমেনা বেগম অভিমানী স্বরে অনুকে বলল,

‘তাহলে আমাদের ফোন ধরিস নি কেন?’

অনু কাঁদো কাঁদো গলায় আমেনা বেগমকে বলল,

‘তোমাদের উপর তখন রাগ হয়েছিল। এখন রাগ নেই।’

আরমান রহমান অনুকে হতাশ গলায় বলল,

‘এতোদিন আমরা তোর সাথে রেগে কোনো কথা বলি নি। আমাকে আর তোর মাকে ক্ষমা করে দিস মা।’

অনু কান্না জড়িত কন্ঠে আরমান রহমানকে বলল,

‘তোমরা তো কোনো অন্যায় করো নি আব্বু। সব আমার দোষ। আমি যদি তোমাদের কথামতো আগেই আদ্রকে মেনে নিয়ে বিয়ে করতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না।’

আনোয়ার হোসেন নিজের রুম থেকে বের হয়ে তার বন্ধু আরমান রহমানকে দেখে হেসে বলল,

‘আরে বন্ধু কেমন আছো?’

আরমান রহমান শান্ত স্বরে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

‘কিভাবে ভালো থাকি বলো বন্ধু? আমার মেয়েটাকে ভুল বুঝে আমরা কত বকাঝকা দিয়েছি।’

আরমান রহমান হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

‘এখন থেকে নিজের মেয়েকে আর বকা দিও না তাহলেই হয়। কি বলো আরমান?’

আরমান রহমান হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

‘হ্যা বন্ধু তুমি ঠিকই বলেছো।’

রেহেনা পারভিন এগিয়ে গিয়ে আমেনা বেগমকে বলল,

‘আপা আপনাদেরকে কিন্তু আজ আমাদের বাসা থেকে কোথাও যেতে দিচ্ছি না।’

আমেনা বেগম রেহেনা পারভিনকে বলল,

‘কিন্তু আপা…

রেহেনা পারভিন শান্ত স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,

‘কোনো কিন্তু না আপা।’

আদ্র দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সবটা দেখছিল। আদ্র এগিয়ে এসে আরমান রহমান এবং আমেনা বেগমের পায়ে দ্রুত সালাম করে হেসে বলল,

‘হাই, মা-বাবা আপনারা কেমন আছেন?’

আদ্রের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে ফেললো। আরমান রহমান এবং আমেনা বেগম হেসে বলল,

‘আমরা ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?’

আদ্র নিজের মাথা চুলকে হেসে বলল,

‘আমি তো ভীষণ ভালো আছি। বিশেষ করে অনুর জন্য খুবই ভালো আছি। অনু আমাকে একটুও খারাপ থাকতে দেয় না। থেংকিউ শ্বশুর বাবা এবং শ্বাশুড়ি মা।আপনাদের জন্যই আমি আমার অনুকে পেয়েছি।’

অনু লজ্জা পেয়ে রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আদ্র তুমি এসব কি বলছো?’

আদ্র না বুঝার ভান ধরে অনুকে বলল,

‘আমি কি কিছু ভুল বললাম?’

অনু মুখ ফুলিয়ে আদ্রের দিকে তাকাল। সবাই হাসতে লাগলো। সেই সাথে আদ্র এবং অনুর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। সব দুঃখের যেন অবসান ঘটলো।

পল্লব আজও অনুকে ভুলতে পারছে না। এদিকে পল্লবের বোন রিনির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রিনিও এখনো আদ্রকে ভুলতে পারে নি। পল্লব মন খারাপ করে জানালায় দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। রিনি পল্লবের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘ভাইয়া আসবো? তোকে একটা কথা বলার ছিল।’

পল্লব রিনিকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘হ্যা আয়। কি কথা বল?’

রিনি মন খারাপের মাঝেই জোর করে হেসে বলল,

‘একতরফা ভালোবাসা খুব খারাপ তাই না ভাইয়া?’

পল্লব পেছন ফিরে রিনিকে জিজ্ঞেস করল,

‘হঠাৎ এমন কথা জানতে চাস কেন?’

রিনি মাথানিচু করে পল্লবকে বলল,

‘এমনি। বল নারে ভাইয়া?’

পল্লব রিনির দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলল,

‘একতরফা ভালোবাসা খারাপ না। তবে একতরফা ভালোবাসা খুব কষ্টের। কোনোদিন কাউকে একতরফা ভালোবাসবি না বোন। কখনোই না।’

রিনি হেসে শান্ত স্বরে পল্লবকে বলল,

‘তবুও ভালোবাসার মাঝে তো আমাদের কোনো হাত নেই ভাইয়া। কার কখন কাকে ভালো লেগে যায় কেউ বলতে পারে না। আর যাকে একবার মনে ধরে যায় তাকে কখনো ভুলেও যাওয়া যায় না। যেমন আমার বান্ধবী সুমি এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে মানসিক হাসপাতালে আছে।’

পল্লব অবাক হয়ে রিনিকে বলল,

‘এসব তুই কি বলছিস রিনি? সুমি পাগল হয়ে গেছে?’

রিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পল্লবকে বলল,

‘হ্যা ভাইয়া আমি ঠিকই বলছি। সুমি পাগল হয়ে গেছে। সুমি আদ্রকে ভীষণ ভালোবাসতো। কিন্তু আদ্র তো সুমির ভালোবাসাকে বুঝতো না। কারণ আদ্র অনুকে ভালোবাসতো। সুমি এসব সহ্য করতে পারে নি।’

অনুর নামটা আবারও শুনে পল্লবের বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। পল্লব যে অনুকে ভীষণ ভালোবাসে। মাথানিচু করে চোখ বন্ধ করে পল্লব শুধু রিনির কথা শুনতে লাগলো। কিছু বললো না। পল্লব চুপ করে গম্ভীর হয়ে আছে দেখে রিনি আবারও বলল,

‘ভাইয়া তুই আজকাল বড়ই গম্ভীর হয়ে গেছিস। তোর মাঝে আগের মতো সেই চঞ্চল ভাবটা নেই। তুই এমন হয়ে গেলি কেন ভাইয়া?’

পল্লব জোর করে হেসে রিনিকে বলল,

‘মাঝে মাঝে গম্ভীরতা আমাকে ঘিরে ফেলে বোন। তুই ওসব বুঝবি না। যা ঘুমিয়ে পড় গিয়ে।’

রিনি হেসে পল্লবকে বলল,

‘আমি সবই বুঝি ভাইয়া। আমাকে অবুঝ ভাবিস না। আচ্ছা আমি গেলাম তাহলে।’

পল্লব রিনির কথা শুনে অবাক হলেও আর কিছু বললো না। তার বোনের কি হয়েছে কে জানে? কখনো জিজ্ঞেস করলেও তো কিছু বলে না। রিনি খুব চাপা স্বভাবের। পল্লবের রুম থেকে রিনি চলে গেল। নিজের রুমে এসেই রিনি চোখের জল মুছলো। আদ্রকে রিনিও খুব ভালোবাসতো। কিন্তু আদ্র যে অনুকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারে না। রিনি মনে মনে বলল,

‘ভালো থেকো তুমি আদ্র। হয়তো অনুকে নিয়ে তুমি খুব সুখে আছো। আমি তো তোমার এক তুচ্ছ বন্ধু ছিলাম। আমার ভালোবাসার কোনো দাম তোমার কাছে নেই। সুমিটা বিয়ে ভাঙার পর কেমন যেন পাগল হয়ে গেল। হয়তো আদ্রকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরণ হয় নি তাই। কিন্তু সবার স্বপ্ন যে সত্যি হয় না। আদ্র তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি কখনো মন থেকে যাবে না। আমি আজীবন তোমাকে ভালোবেসে যাবো।’

মানসিক হাসপাতালের বেডে চিৎকার করছে সুমি। আদ্র এখন অন্য কারও স্বামী তা সুমি কিছুতেই যেন মানতে পারছে না। আদ্র অন্য কাউকে ভালোবাসে ভাবতেই সুমির বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুমি মাথায় দুই হাত দিয়ে বলতে লাগলো,

‘আমার আদ্রকে তোমরা এনে দাও। আমি আদ্রকে চাই। আমার ভালোবাসা অন্য কারও হতে পারে না।’

হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সরা সুমির পাগলামো দেখে মনে মনে খুব হতাশ হলো। কিছু ভালোবাসার পরিণতি এতো ভয়ংকর কেন? তাই ভেবেই তারা ভয় পাচ্ছে। সুমির মা-বাবা তার মেয়ের এমন পাগল অবস্থা দেখে নিরবে চোখের জল ফেলছেন। তাদের যে কিছু করার নেই। অন্যের স্বামীকে তো আর তারা নিজের মেয়ের কাছে জোর করে এনে দিতে পারে না। সুমি দুচোখের জল ফেলে বলতে লাগলো,

‘আদ্র আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি কেন আমাকে ভালোবাসলে না? তুমি কেন অনুকে ভালোবেসে বিয়ে করলে? তোমার সাথে তো আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আমি তোমাকে নিয়ে মনের মাঝে স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম। আমার অনুভূতি কি তোমার কাছে কোনো দাম নেই? আমি যে তোমাকে ভুলতে পারছি না আদ্র। কি করে ভুলি বলো? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। তোমরা কেউ আমার আদ্রকে এনে দাও। আমার বুকের ভিতরে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

#চলবে…