তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-১৬

0
1044

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:১৬
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

২৪.
গতকাল বেশ রাত করেই ঘুমিয়েছি তাই সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাংলো,মারিয়া অবশ্য আমার আগেই উঠে গেছে।এপাশ ওপাশ করে নিয়ে লম্বা হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠলাম
বিছানা থেকে নেমে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে ফ্রেশ হওয়ার জন্যে।রুম থেকে বেরিয়ে হাটছি।হটাত অভ্র ভাইয়ের সাথে ধাক্কা খাই।উনি কিছুটা পড়ে যেতে যান,সোজা হয়ে দাড়িয়ে আমাকে বকা দিয়ার মতো এক্সপ্রেশন করলেও হোহহহহহোহোহহহ করে হেসে ফেলেন।হাসতে থাকেন ননস্টপ।আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকি ওনার দিকে।
–এইভাবে হাসছে কেন?আজব!(মনে মনে)
উনি এতোটাই হাসছেন যে পেট চেপে ধরা লেগেছে।হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে পারেন যেকোন সময়।আমার বেশ বিরক্ত লাগছে।আমি অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বললাম,,
–হাসছেন কেন??
–হাহহাহাহহাহাহহহহ…
–এখনো হাসছেন!আজব তো!আমি কি জোকার নাকি যে আমাকে দেখে হাসছেন?
–না তুমি জোকার হবে কেন?কিন্তু যেই সাজে আছো তাতে জোকারের মতো লাগছে কিছুটা।হাহাহহাহহাহহহহহ।
–মানে??
–মানে??ওয়েট দেখাচ্ছি।
(উনি ওনার মোবাইলটা বের করে ফট করে আমার একটা ছবি তুলে নেন)
–এই এই আমার ছবি তুললেন কেন??
–তোমার সুন্দর চেহেরাটা দেখানোর জন্যে।এই দেখো……
–আআআআআআআআ……
(ওনার ফোনে নিজের ছবি দেখে খুব জোরেই চিতকার করে উঠলাম।কারন ঘুম থেকে উঠে নিজের ওই অবস্থা দেখে যে কেউই হার্ট এট্যাক করবে।সমস্ত মুখে কালি দিয়ে গোফ আকানো,চোখের উপরে নিচে কালি লেপা।ওরকম একটা চেহারা দেখে যে কেউই তো ভয় পাবে।আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না।তাই আমিও চিতকার করে উঠলাম।কিন্তু অভ্র ভাই সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরলেন)
–আরে আরে কি করছো??এইভাবে চিতকার করলে তো সবাই এসে পড়বে।আর কেউ এসে যদি তোমাকে এইভাবে দেখে ব্যাপারটা ভালো হবে কি??হাহহাহহহহহ…
–উউউউ
–কি?
–উউউ(আমি ইশারা করে মুখের ওপর থেকে হাত সরাতে বললাম।উনি বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নিলেন)এটা কিভাবে হলো?
–আমি কিভাবে জানবো সেটা?আমি কি তোমার রুমে ছিলাম?তুমিই ভালো জানো।কিন্তু একটা কথা বলোতো আমাই।মেয়েরা একটু মেকাপ বেশি করে জানতাম।কিন্তু এটা আবার কেমন সাজ রে বাবা??বাচ্চারা হুট করে দেখলে তো ভয় পেয়ে যাবে।কিন্তু হ্যা পরে হেসে ফেলবে।হাহহাহহহহহহ…
–একদম হাসবেন না।আমি কি ইচ্ছা করে করেছি এসব?কেউ নিশ্চয় ইচ্ছা করে এই বদমায়াশিটা করেছে আমার সাথে(আমি কাঁদো কাঁদো কথাটা সুরে বলি)
–হহাহাহহাহহাহহাহাহ
(ওনার হাসি থামছে না একটুও।আমার খুব রাগ হলো)
–আপনি এখনো হাসছেন??হাসি থামান কিন্তু।তা না হলে এক ঘুষি দিয়ে সবগুলো দাত ফেলে দেবো বলে দিলাম।
–পারবে তো?হাহহাহাহহহহহ
(আমার একটু অভিমানই হলো ওনার ওপর।আমি কোন কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে মুখ ফুলিয়ে থাকলাম।আমাকে ওইভাবে দেখে উনি হাসি থামালেন।তারপর বেশ শান্ত ভাবেই কথা বললেন)
–আচ্ছা তোমার এই অবস্থা হলো কিভাবে?কেই বা এরকম করতে পারে?
–আমি কি..
(আমি কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই কারো হাসির আওয়াজ পেলাম।আমি আর অভ্র ভাই দুজনেই আমার পিছনে তাকালাম।দরজার পিছন থেকে আয়ান উকি দিয়ে হাসছে।আমাদের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কাজটা আর কারোর না,এই বাসার পাকনাটার।অভ্র ভাই আয়ানকে সামনে আসতে বলেন।আয়ান আস্তে আস্তে এক পা দু পা করে সামনে এসে দাড়ায়)
–কা তোমাকে কেমন সাজালাম?হিহিহহ…..
–আয়ান ভেরি ব্যাড।আন্টির সাথে এরকম মজা করা তোমার একদম উচিত হয়নি বাবা।আন্টি তো কষ্ট পাবে।
–কাকু আমি তো…
–চুপ করো তুমি।তোমাকে কিছু বলিনা মানে এটা না যে সব অন্যায় মেনে নেবো।তুমি এখন বড় হচ্ছো,তোমার এগুলো বোঝা উচিত।সব সময় তো আর তোমার সব দোষ বাদ দেয়া যাই না।
(অভ্র ভাই আয়ানকে আরো কিছুকথা শুনালেন।ছোট মানুষ এইভাবে বকা খেয়ে মন খারাপ করে চলে গেলো।আমি ওকে বাধা দিতে গিয়েও পারলাম না।)
–আচ্ছা ও তো এখনো বাচ্চা কিছুই বোঝে না।ওকে কি এতো গুলো কথা শুনানো খুব দরকার ছিলো।(আমি অভ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করি)
–হুম ছিলো।এখন থেকে ওকে ভালো,খারাপের শিক্ষাটা দেয়া উচিত।
–উহ!আইছে বড় শিক্ষা দিতে।নিজে যে ক্যাফে ভর্তি লোকের সামনে একটা মেয়ের গায়ে জুস ছুড়ে মারেন সেটা কি খুব ভালো শিক্ষা?নিজেরই ভালো কোন শিক্ষা নেই আবার অন্যরে বলে(আমি মুখ ভেংচে দিলাম)
–এই তুমি কি আবার ঝগড়া করবা??ভালো করে বলতে পারো না?সব সময় উল্টা বিহেভ করো শুধু।বড়দের সম্মান দিতেও জানো না।
–ও হ্যালো।আমি বড়দের অনেক সম্মান করি বুঝলেন?আমি আপনার মত…..
(আমার কথা বলার মাঝেই কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম।আমাদের এদিকেই আসছে মনে হচ্ছে।আমি তো ঘাবড়ে গেলাম,কারন আমাকে কেউ এই অবস্থাতে দেখুক তা আমি একেবারেই চাই না।তাই কি করবো ভাবছিলাম।পাশের ঘরটার দিকে চোখ পড়লো।কোন কিছু না ভেবেই ওনার হাতটা ধরে টান দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলাম দুজন।ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে দিলাম।)
–আরে দরজা দিচ্ছো কেন?
–চুপ চুপ।আস্তে কথা বলুন।কেউ একজন এদিকেই আসছে,শুনে ফেলবে তো।
–তো?(উনি ফিসফিস করে বলেন)
–আমাকে এই অবস্থাই দেখলে হাসবে তো(মন খারাপ করে বলি)
–আচ্ছা বুঝলাম।কিন্তু এখন কি করবে?কালি তো মুছা লাগবে তো।কি করা যাই?কি করা যাই?হ্যা পেয়েছি।
(উনি বাম হাত দিয়ে আমার চোয়ালটা ক্ষপ করে ধরে ডান হাত দিয়ে ওনার রুমালটা দিয়ে আমার মুখ মুছতে লাগলেন।এরকম আচমকা কাজটা হওয়ায় আমি ঘাবড়ে গেলাম।উনি খুব যত্ন সহকারে আমার মুখ মুছছেন।আমার মুখের কালি মুছে দেয়ার সময় উনি চোখ ছোট,বড় করছেন।ওনার মুখটা একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে।আমার যে কি হলো,আমি ওনার দিক থেকে আর চোখ সরাতে পারলাম না।কিছুক্ষন পর ওনার হয়ে গেলো)
-ব্যাস ডান।আর বোঝা যাচ্ছে না তেমন।
–………(আমি এখনো তাকিয়ে আছি)
(আমাক ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আমার মুখের সামনে তুড়ি বাজালেন)
–কি হলো?
–হুম?(আমার হুশ ফিরলো)
–হয়ে গেছে তো।
(আমি মুখ হাত ঘষে দেখলাম।নাহ,কোন কালি নেই।
আমি আর কোন কথা বললাম না।রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।পিছন থেকে ওনার কথা আসছিলো)
–একটা থ্যাংকস ও বলা যায় না?এইজন্যেই মানুষের হেল্প করতে নেই।
(আমি কোন কথার উত্তর দিলাম না।সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।বেসিনের আয়নার সামনে এসে দাড়ালাম।আয়নাতে নিজের মুখটা দেখে অদ্ভুত এক ফিলিংস লাগলো।কেন তা জানা নেই)

২৫.
অভ্র আয়ানকে খুজে বেড়াচ্ছে।সারাবাড়িতে কোথাও আয়ানকে পাচ্ছেনা।অভ্র তাই বাইরে এসে রহিম চাচা মানে এ বাড়ির মালিকে জিজ্ঞেস করে,
–চাচা,আয়ানকে দেখেছো?
–কুটি বাবুরে খুজতেছো ছোট বাবা?(রহিম চাচা আয়নাকে কুটি বাবা আর অভ্রকে ছোট বাবা বলে ডাকে।)
–হ্যা।অনেক্ষন ধরে খুজছি।বাড়ির মধ্যে নেই তো।
–তা থাকবো কি করে?তারে তো দেখলাম বাগানে মুখ ভার করে বসে থাকতি।
–কি?আয়ান মুড অফ করে আছে?
–হ তাই তো দেখলাম।আমি তো কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম যে কুটি বাবু তুমার কি হয়েছে?কিছুতেই বললে না।
–আচ্ছা আমি দেখছি।

*অভ্র ভাই বাগানে চলে আসে।আয়ান ঘাসের ওপরে বসে আছে।পাশে তার ফুটবলটা পড়ে আছে।অভ্র চুপিচুপি গিয়ে ফুটবলটা নিয়ে আস্তে করে আয়ানের গায়ে মারে।আয়ান অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেই।
–কি ব্যাপার আজ খেলবে না?
–…………

অয়ান কোন কথা বলে না।অভ্র বুঝতে পারে আয়ান আপসেট সকালের ঘটনাটা নিয়ে।তাই এখন হয়তো খেলবেও না।অন্য কিছু ভাবতে হবে।অভ্র আয়ানের পাশে বসে।তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুক্ষন পর বলে,
–ভাবছি আজকে হাওয়ায় মিঠাই খেতে যাবো।কেউ কি যাবে আমার সাথে?দশটা কিনে দিতাম কেউ যদি যেতো তো আমার সাথে।দশটা(হাত দিয়ে দশটা আঙুল দেখিয়ে)

আয়ান অভ্রর দিকে ঘুরে তাকায় কিন্তু কোন কথা না বলেই উঠে যেতে চায়।অভ্র হাত ধরে ফেলে।তারপর ঠোঠ উল্টিয়ে বলে,
–সরি।
আয়ান জোর করে হাত ছাড়িয়ে কোন কথা না বলেই চলে যায়।অভ্রর হয়তো নিজের ওপর রাগ হয় তাই ফুটবলটাতে খুব জোরে ঘুষি মেরে দেই।তারপর মাটিতে শুয়ে পড়ে।

আমি এতোক্ষন এসব ঘটনা বেলকনিতে দাড়িয়ে দেখছিলাম।আয়ানের মন খারাপ দেখে আমার বেশ খারাপ লাগলো।মনে মনে বললাম,
–সূচী এখন তোমাকেই কিছু করা লাগবে।চাচা ভাইপো এভাবে কেউই ভালো থাকতে পারবে না।ওদের মিল করানোই লাগবে।কিন্তু করবোটা কি??উউমমমমমমম..আইডিয়া!ইয়েস বুদ্ধি পেয়ে গেছি।এখন সব ভালোই ভালোই হলে হয়।আল্লাহ প্লিজ হেলপ করো.।

*দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বসে মামাকে বলে উঠলাম,
–মামা আমি একটা কথা ভাবছিলাম।
–কি কথা মা?(মামা খেতে খেতে বলে)
–বিয়ের তো এখনো পাঁচ দিন বাকি।তার আগে সবাই মিলে একটা পিকনিক হলে কেমন হয়?
–পিকনিক?
–হ্যা মামা পিকনিক।
–এই এখন আবার পিকনিক কিসের রে?বাড়িতে আজ বাদে কাল বিয়ে এর মধ্যে আবার পিকনিক?হবে না ওসব(মা খাবার সার্ভ করতে করতে বলে)
–মা তুমি কোন দিন স্কুল,কলেজ থেকে পিকনিকে যেতে দাওনি।পাড়ার পিকনিক ও করতে দাওনি।আমরা তো বুঝিই না পিকনিক কেমন হয়!এখন সবাই মিলে একটু করতে চাইছি তাও তুমি এরকম করছো?আমি পিকনিক করবো মানে করবোই।কারো না শুনবো না।
(আমার সাথে মারিয়া আর সৌরভও যোগ দিলো)
–আচ্ছা আচ্ছা থামো সবাই।পিকনিক করতে চাও তো হবে।সব হবে(মামা বলে ওঠে)
–ওকে তাহলে আজ রাতেই।
–আজকেই??(মামা অবাক হয়ে বলে)
–হ্যা হ্যা আমি আর দেরি করবো না।আজকেই পিকনিক করবো।
–ঠিক আছে তাই হবে।
–ইয়েএএএএএএএএ….

আমি,মারিয়া,সৌরভ চিল্লিয়ে উঠি।আর আমি মনে মনে ভাবি,
–এবার সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।ইয়েস।

সন্ধ্যা থেকেই সকলে মিলে কাজে লেগে গেলাম।স্নিগ্ধা ভাবি আর অন্তু ভাইয়ের উদ্দ্যোগে বাগানে পিকনিক করার সুযোগটা হলো।আকাশ ভাই বাগানে লাইট সেট করলো।আপু,মারিয়া,আমি,স্নিগ্ধা ভাবি এটা ওটা কাটাকাটি শুরু করে দিলাম।আজকের মেনু হলো সাদা ভাত,বেগুন ভাজি,গরুর মাংস ভুনা আর ডিমের কোরমা।অন্তু ভাই আর অভ্র ভাই চুলা বানাতে লাগলো।আয়ানও আছে পাশে।অভ্র ভাই অনেকবার ট্রাই করলো আয়ানের সাথে কথা বলার কিন্তু আয়ান কথা বললো না।আমি এগুলো খেয়লা করলাম।আমরা ছোটরাই এসব করছিলাম।মা-বাবা,মামা-মামি আর নানী বাড়ির ভিতরেই আছে।অহনাও মা আর মামির কাছে আছে।স্নিগ্ধা ভাবি অবশ্য একবার গিয়ে দেখে এসেছিলো ওরে।আমাদের সব জোগাড় করা হলে রান্নার পালা আসলো।রান্না করতে বসেছে অন্তু ভাই।অন্তু ভাইকে রান্না করতে বসা দেখে আমি,আপু,সৌরভ,মারিয়া আমরা বেশ অবাক হলাম।কিন্তু আকাশ ভাইয়া জানালো অন্তু ভাইয়া নাকি অনেক ভালো রান্না করে।আগে নাকি প্রায়ই ওনাদের রান্না করে খাওয়াতো।

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবাদ)