#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:১৭+বোনাস
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা
অন্তু ভাইয়া পিকনিকের রান্না করছেন।চারিদিকে বেশ সুন্দর স্মেল পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু এদিকে অভ্র ভাই আর আয়ান এখনো কথা বলছে না।আমার বেশ খারাপও লাগছে।যাদের জন্যে এতো কিছু প্লান করলাম তারাই যদি না মেলে সব মাটি হয়ে যাবে।
–সূচী,এবার তোরে কিছু একটা করতে হবেই।অনেক হয়ছে এবার তো কিছু একটা কর(মনে মনে ভাবলাম)
সবাই কম বেশি বসে নানারকম গল্প করছে আয়ান ও আছে আকাশ ভাইয়ের কোলে আর অভ্র ভাই পাশে বসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে।আয়ান বার বার মুখ ঘুরিয়ে ফেলছে।কি করবো ভেবে ভেবে অবশেষে একটা আইডিয়া আসলো মাথাই।
রান্না প্রায় শেষের দিকে আমাদের।আমি সবাইকে ডেকে ঘাসের ওপরে বসলাম গোল করে।সবাই জিজ্ঞেস করছে হটাত এসব করছি কেন।
–আচ্ছা সূচী কি করবি বলবি তো?(আপু বলে)
–আরে আপু আগে বসবি তো।এই তো গুড গার্ল বসে পড়েছিস।আচ্ছা সবাই যখন বসে পড়েছো এবার বলি।
–হ্যা দয়া করে বল রে শাঁকচুন্নি(সৌরভ বলে)
–এই তুই আমাকে শাঁকচুন্নি বলবি না বলে দিলাম।শাঁকচুন্নি বললে তোর মুখ ভেঙে ফেলবো।
–আরে সূচী,সৌরভ তোরা আবার ঝগড়া করো না সোনা,প্লিজ(স্নিগ্ধা ভাবি হাসতে হাসতে বলে)
–ওই তো আগে শুরু করলো।যাই হোক যা বলছিলাম।বলছিলাম যে পিকনিকটা কেমন শুকনা শুকনা না?
–শুকনা মানে?
–আরে আপু শুকনা মানে বোরিং টাইপস।পিকনিকে কোন গেম না থাকলে মজা হয় নাকি?গেম খেলবো হাসি,মজা করবো তাহলেই তো মজা আসবে আরো বেশি।
–হ্যা সূচী কিন্তু ঠিক কথায় বলেছে(মারিয়া বলে)
–আচ্ছা তাহলে কি গেম হবে?(আকাশ ভাই বলে)
–ওকে সো গেম টা হলো আমরা সবাই দুজন করে টিম বানাবো তারপর একটা বোল থেকে কিছু এক্টিভিটিসের কাগজ তুলবো।এই যেমন অভিনয়,গান,নাচ এসবই।
–হ্যা ভালো আইডিয়া তো।ওকে লেটস প্লে(অন্তু ভাইয়া বলে)
আমরা গেম শুরু করি।ফার্স্ট পেয়ার হয় আপু আর আকাশ ভাইয়া।দুজনের টাস্ক পড়ে ডান্স,প্রথমে তো দুজনের একজন ও রাজি হলো না কিন্তু পরে বাধ্য হয়ে নাচা লাগলো।আপু মোটামুটি নাচতে পারলেও আকাশ ভাইয়ার ডান্স দেখে আমরা হাসতে হাসতে ফ্লাট।শেষ পর্যন্ত আপু আকাশ ভাইয়ের হাত ধরে বসিয়ে দিলো।সেকেন্ড পেয়ার হলাম আমি আর মারিয়া আমাদের টাস্ক ছিলো অভিনয় করে সিনেমার নাম বোঝানো।মারিয়া অভিনয় করবে আর আমাকে বুঝতে হবে।১.৫ মিনিটের মধ্যে আমিও মারিয়ার অভিনয় বুঝে সিনামের নাম বলে দিলাম “Pyar Ka Punchnama”..এরপর অন্তু ভাইয়া আর স্নিগ্ধা ভাবি অনেক সুন্দর একটা হিন্দি গান গাইলো,”Ye raate yee mousam,nadika kinara ye chanchal hawaa”..অন্তু ভাইয়া আর স্নিগ্ধা ভাবি এতো সুন্দর করে রোমান্টিক্যালি গান টা গাইলো যে সবারই অনেক ভালো লাগলো দুজনকে।এবার বাকি আছে ৩ জন।সৌরভ,অভ্র ভাই আর আয়ান।এর মধ্যে যেকনো একজনকে একা পারফম করা লাগবে।অভ্র ভাই চুপচাপ বসে ছিলো।আমি ওনাকে ইশারা করছি তাও খেয়াল করছে না।বেশকিছুক্ষন পর উনি আমার দিকে খেয়াল করেন।আমি ওনাকে ইশারা করে বোঝাতে চাইছি যেন উনি আয়ানের সাথে টিম করেন তা উনি আমার ইশারা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।এর মধ্যে আকাশ ভাই বলে উঠলো
–অভ্র আর আয়ান নিশ্চয় টিম হবে?দুজন আবার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা।ভাই সৌরভ তুমি কিছু মনে করো না যেন,তোমাকে একা একাই কিছু করা লাগবে।তা অভ্র যা তোর পার্টনারের কাছে চলে যা।দেখি তোদের কপালে কি আসে!
আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে অভ্র ভাই নিজের জায়গা থেকে উঠতে গেলো আয়ানের কাছে যাওয়ার জন্যে কিন্তু আয়ান চিতকার করে উঠলো,,
–না আমি সৌরভ চাচ্চুর সাথেই টিম বানাবো।
–কিন্তু আয়ান..
–না মা,আমি সৌরভ চাচ্চুর সাথেই খেলবো,খেলবো খেলবো।
–আয়ান তুমি তো তোমার ছোট কাকুর সাথেই বেশি মজা করো সেটা ভেবেই তো তোমার মেজো কাকু বললো কথাটা।(স্নিগ্ধা ভাবি বলে)
–কিন্তু এখন আমার মুড নেই।আমাকে যদি সৌরভ চাচ্চুর সাথে খেলতে না দাও আমি খেলবোই না বলে দিলাম।
–আচ্ছা ভাবি বাদ দাও,ওর যেটা ভালো লাগে সেটাই করুক(অভ্র ভাই জোর করে হাসি দিয়ে কথাটা বলে)
আয়ান সৌরভের সাথেই খেলে।আর অভ্র ভাই কিছুই করে দেখায় না।আমার প্লানটাই মাটি হয়ে গেলো।নিজের ওপর খুব রাগ হলো এতো কিছু করেও কোন লাভ হবে না তাহলে?
দেখতে দেখতে রান্নাবান্না শেষ।এবার খাওয়া দাওয়ার পালা।সবাই খেতে বসেছে,মামারা সবাই ও এসে গেছে আর নানী অনেক আগেই খেয়ে শুয়ে পাড়েছে।সবাই মাটিতেই খেতে বসেছে আর বড়রা চেয়ারে,নিচে বসতে পারবে না তো তারা।স্নিগ্ধা ভাবি সার্ভ করতে গেলো কিন্তু একা একা সবটা করা একটু কষ্ট হয়ে যাবে।আপু হেল্প করতে চাইলো কিন্তু আমি দিলাম না।সবাইকে বলে দিলাম যে আজ আমি হেল্প করবো স্নিগ্ধা ভাবিকে।দুজন মিলে খাবার দিচ্ছি।সবাই খাচ্ছে এরকম সময় আমি গরম ধোয়া ওঠা মাংস সার্ভ করছিলাম।সবাইকে দিতে দিতে এবার অভ্র ভাইকে দেয়ার পালা।আমি ওনাকে মাংস দিতে গিয়ে ভুল করে চামচ ভর্তি মাংস আর ঝোল ওনার হাতের ওপর ঢেলে দিই।উনি সাথে সাথেই উঠে পড়েন হাত ঝাকাতে ঝাকাতে।ওনাকে এইভাবে উঠতে দেখে সবাই উঠে গেছে।ওনার রিয়াকশন দেখে বোঝা যাচ্ছে ভালোমতোই পুড়েছে।আমি তো সরি বলছি একাধারে।আমি তাড়াতাড়ি ঠান্ডা পানি নিয়ে ওনার কাছে গিয়ে হাতটা ধরতে যাবো তখনি কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।আমি কোনমতে নিজেকে সামলালাম পড়ার হাত থেকে।কিন্তু ধাক্কা মারা ব্যক্তিকে দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো।কারন মানুষটা আয়ান।আমার দিক খুব রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–আমার কাকুর হাত পুড়িয়ে আবার ঢং করছো?তুমি খুব পচা,খুব বাজে।চলে যাও তুমি এখান থেকে।
আয়ানের এরকম বিহেভিয়ারে স্নিগ্ধা ভাবি ওকে ধমক দিল,
–আয়ান এক চড় মারবো তোমাকে আর উল্টাপাল্টা কোন কথা বললে।ও কি ওটা ইচ্ছা করে করেছে?তুমি কোন সাহসে এসব বলো?সরি বলো আন্টিকে।
–না বলবো না(আয়ান জিদ করে বলে)
–আয়ান!
(স্নিগ্ধা ভাবি আয়ানকে থাপ্পড় মারতে যায়,কিন্তু আমি ওনার হাত ধরে ফেলি)
–ভাবি এই সময়টা আয়ানের বিহেভিয়ার নিয়ে ভাবার সময় না।ওনার হাতটা পুড়ে গেছে সেদিকে আগে খেয়াল করা উচিত।
আয়ান তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে অভ্র ভাইয়ের হাত ধুইয়ে দিলো।তারপর ওষুধ লাগিয়ে দিলো।আয়ান খুব কাঁদছে।অভ্র ভাইয়কে অনেক বেশিই ভালোবাসে হয়তো ছেলেটা তাই অভ্র ভাইয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না।অভ্র ভাই তো আয়ানকে অনেকবার বললো যে তিনি ঠিক আছে কিন্তু আয়ান শুনলোই না।৬ বছরের বাচ্চা ছেলেটা নিজে হাতে অভ্র ভাইকে খাইয়ে দিলো।ওই দৃশ্য দেখে আমার চোখে কখন পানি চলে এসেছে টেরই পাইনি।আমি সবাইকে লুকিয়ে চোখের পানি মুছে নিলাম।ফাইনালি চাচা ভাইপো আবার মিলে গেলো।আমার খুব আনন্দ হতে লাগলো।খাওয়া দাওয়া শেষে এবার ঘুমানোর পালা।আয়ান অভ্র ভাইয়ের সাথে ঘুমাতে চাইলো,অভ্র ভাইও না করলো না।
*চাচা ভাইপো নিজেদের ঘরে শুয়ে আছে।কিন্তু চাচাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ভাইপো নিজেই ঘুমিয়ে গেছে।অভ্র ভাই আয়ানের কপালে চুমু খেয়ে ঘুমানোর ট্রাই করলো কিন্তু ঘুম কিছুতেই এলো না।অনেক্ষন চেষ্টার পরও যখন ঘুম এলো না।উনি উঠে বসলেন।মোবাইল নিয়ে কিছু একটা করছে কিন্তু সেটাও ভালো লাগছে না।বাধ্য হয়ে উঠে গেলো বিছানা থেকে।আয়ানের গায়ে চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।আয়ান সাধারণত এই টাইমে ঘুম থেকে ওঠে না তেমন তাই তিনি নিশ্চিন্তে ছাদে চলে গেলেন।ছাদে এসে পকেট থেকে সিগারেট বের করে আগুন ধরালেন।এক টান দিয়েছিলো হয়তো কিন্তু আর পারলো না কারন আমি পিছন থেকে আওয়াজ দিলাম।
–আপনি সিগারেটও খান??(আমি বেশ আশ্চর্য হয়ে বলি)
উনি পিছন ঘুরে আমাকে দেখেই তাড়াতাড়ি হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দেয়।তারপর আমতা আমতা করে বলে,
–তুমি এখানে কখন এলে?
–এই তো একটু আগেই যখন আপনি পকেট থেকে সিগারেট বের করলেন।আপনি যে সিগারেট খান জানা ছিলো না।আচ্ছা আপনার এই হ্যাবিটের কথা বাসার সবাই জানে??
–উম ভাইয়ারা,ভাবি টুকটাক জানে।মা বাবা জানে না।তবে জিজ্ঞেসও করেনি কোনদিন।তবে জিজ্ঞেস করলে মিথ্যা বলবো না।কিন্তু তুমি একটা কথা বলো তো,এতো রাতে ছাদে কি তোমার?আমি যতোদূর জানি তুমি ভুতে ভয় পাও খুব তাও ছাদে আসলে।
(ওনার প্রশ্ন শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম।কারন সত্যিটা তো ওনাকে বলা যাবে না যে ওনাকে ছাদে আসতে দেখে আমিও এসেছি।কথাটা ভালো শোনাবে না।তাই অন্য কোন বাহানা খুজা লাগবে যেটা উনি বিশ্বাস করবে)
–একচুয়্যালি ঘুম আসছিলো না তাই আসলাম।
–ঘুম আসছিলো না বলে ছাদে আসলে?কথাটা ঠিক হজম হলো না।কেসটা কি?
–কেস?কিসের কেস?(আম এদিক ওদিক ঘুরে ওনার চোখ এড়িয়ে কথাগুলো বলছি)
–তোমাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে মিথ্যা বলছো।সত্যিটা কি হুম?
–সত্যিই তো ব…
–সূচী(উনি গম্ভীর হয়ে বলেন)
–ঠিকাছে বাবা বলছি।আসলে আমি পানি খেতে উঠেছিলাম।নিজের রুমে তাড়াতাড়ি যাচ্ছিলাম দেখি আপনি সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠছেন।এতো রাতে আপনাকে ছাদে উঠতে দেখে আমি ভেবেছিলাম হয়তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে উঠছেন।কিন্তু এসে দেখি সিগারেট খাচ্ছেন।
আমার কথাগুলো শুনে উনি চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইলেন।আমি ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে তাকালাম।উনি সাথে সাথে হেসে উঠলেন।
–হাহাহহাহহাহহহহহহ হোহহহহাহহহোহহহহ…
বেশ শব্দ করেই হেসে ফেলেছিলেন তাই তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিলেন।যেন বেশি জোরে শব্দ না হয়।আমি বুঝলাম না কি শুনে ওতো হাসলেন উনি,
–কি ব্যাপার এতো হাসি পাচ্ছে কেন??
–হাহহাহাহহাহহহহ
–হাসছেন কেন এতো?
–তুমি শেষমেশ এই কারনে ছাদে উঠলে?(উনি হাসি থামিয়ে বলেন)
–হুম হতেও তো পারে এটা।
–হায় রে।তা আমার জিএফ আছে কি নেই তা নিয়ে তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেন??কি ব্যাপার?
–মাথা ব্যাথা না ইচ্ছা হলো তাই।আর জিএফ তো থাকতেই পারে।এখনকার যুগে সবারই থাকে।মানে কম বেশি সবার।
–আচ্ছা।তা তুমি কোনটার মধ্যে?কমে না বেশিতে?
–মানে?
–মানে তোমারো কেউ আছে নাকি?
–আরে না।এসব ফালতু কাজ করার টাইম বা মুড কোনটাই আমার নেই।
–তাই নাকি?
–হুম।আচ্ছা আমি ঘরে যাচ্ছি,এখানে যে কারনে এসেছিলাম তা তো কিছুই হলো না তাই থেকে আর কি হবে!গুড নাইট।
আমি চলেই আসছিলাম কিন্তু অভ্র ভাই ডাক দিলেন।
–সূচী_
ওনার ডাক শুনে আমি দাড়িয়ে গেলাম তারপর ওনার দিকে ঘুরে বললাম,
–কিছু বলবেন?
–হ্যা আসলে….সরি এন্ড থ্যাংক ইউ।
–সরি এন্ড থ্যাঙ্কু ফর হোয়াট?
–তখন আয়ানের রুড বিহেভিয়ারের জন্যে সরি আর আমাদের দুজনের মিসআন্ডার স্ট্যান্ডিং মিটিয়ে দেয়ার জন্যে থ্যাংকস।
–…………..
–কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছো যে?কিছু বলছোও না।
–আপনি কবে থেকে এতো ইজিলি সরি আর থ্যাংক ইউ বলা শিখলেন?আগে তো সারাদিন হয় রুড বিহেব অর মানুষকে জালানো।
–কিহ?(উনি হেসে দিলেন)
–হ্যা আগে তো কোনদিন ভালো করে কথা বলতেন না।কি এমন হলো যে এতো ভালো বিহেভিয়ার?
–তোমার সাথে আর কি রুড বিহেভ করা যাই?এতে তো আমারই বেশি কষ্ট হয় পাখি।
(কথাটা বলেই উনি,নিজের মুখ চেপে ধরেন এদিকে আমিও তো ওনার কথা শুনে অবাক।উনি কি বললেন এটা।আমাকে পাখিই বা কেন বললেন?আমার মাথাই তো কিছু ঢুকছে না)
–আপনি আমাকে পাখি…
(আমার কথা শেষ হতে পারলো না।উনি তাড়াতাড়ি চিলেকোঠার দিকে যেতে লাগলেন)
–ঘুম আসছে।গুড নাইট।
কথাটা বলেই চলে গেলেন।আমিও ওনার পিছু পিছু চলে আসলাম।রুমে এসে এখনো ভাবছি আর বোঝার চেষ্টা করছি উনি কি বুঝাতে চায়লেন ওটা দিয়ে।মারিয়া নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে তাই ওকেও বলতে পারছি না।ঘুমও আসছে না।বারবার ওনার কথাটা মনে পড়ছে।কি বুঝাতে চাইলো ওই কথা দিয়ে?এসব ভাবতে ভাবতেই রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
চলবে…….
[আগেই বলি,আমি গতকাল থেকে নিজের আইডিতে লগ ইন করতে পারছিলাম না।তাই গল্পও দিতে পারিনি।কেন যে এরকম হচ্ছিলো বুঝলাম না।রাতে বোনাস পার্ট দিয়ে দিবো এর কারনে।ধন্যবাদ।]
#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:১৭+(বোনাস পর্ব)
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা
২৬.
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তাকাতেই দেখলাম মারিয়া পাশে নেই।তারমানে আজকেও আমি লেট হয়ে গেছি উঠতে।যাক ও ব্যাপার না।আমি আরাম করে উঠে বসে আড়মোড়া কাটতে কাটতে বেকে গেছি।মানে ওই অবস্থায় স্ট্যাচু হয়ে গেছি।চাচা ভাইপো দুজন আমার পায়ের কাছে খাটের সামনে দাড়িয়ে।দুজনেই থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট,হাফ হাতা টি-শার্ট আর এলোমেলো চুলে দাড়িয়ে,মুখে লম্বা হাসি।সকাল সকাল দুইটারে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আজ আবার কোন অকাম করিনি তো দুইজন।দুজনের হাসি দেখেয় তো আমার ভয় লাগে,দুষ্টু দুষ্টু হাসি।আমি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে চলে গেলাম।নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম।না কোন ঝামেলা নেই তো তাহলে হাসছে কেন দুজন এভাবে?!!আমি ওনার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–কি ব্যাপার?
–কা,এই নাও।এটা তোমার।
(আয়ান হাত বাড়িয়ে সদ্য ফোটা কিছু সাদা গোলাপ এগিয়ে দিলো।আয়ানের হাতে ফুলগুলো দেখে আমার খুব অবাক লাগলো)
–হটাত ফুল কেন?(আমি চোখ ছোট ছোট করে আয়ানকে জিজ্ঞেস করি)
–কালকে তোমার সাথে দুষ্টুমি করলাম আবার পরে বকা দিলাম তাই এনেছি তোমার জন্যে।এই নাও।কা ফুলগুলো কিন্তু আমাদের গাছের।নাও
(আয়ানের এরকম কিউট আচারনে আমার খুব ভালো লাগলো।আমি হাত বাড়িয়ে ফুলগুলো নিলাম,তারপর মুচকি হেসে আয়ানের চোয়ালটা টেনে দিলাম)
–থ্যাংক ইউ আয়ান।ফুলগুলো অনেক সুন্দর।
–তাহলে তুমি আর রেগে নেই তো?
–না তো।একদমি না।
–কা আরেকটা জিনিস আছে?
–আরেকটা জিনিস??কি জিনিস?
–একটু নিচু হও কানে কানে বলছি।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
–কি এমন কথা যে কানে কানে বলা লাগবে?(আমি ভ্রু কুঁচকে বলি)
–আরে হও না একটু নিচু
(আমি বাধ্য হয়ে একটু নিচু হয়ে ওর দিকে ঝুকে যায়।ও আমার কানের কাছে আসলেও কোন কথা বলে না।আমার গালে হুট করে চুমু খেয়ে দেয়।আমি সাথে সাথে দাড়িয়ে পড়ি।)
–এটা কি হলো?(আমি অবাক হয়ে বলি)
–কাকু বলেছে চুমু খেলে ভালোবাসা বাড়ে।তাই চুমু খেলাম।
আয়ান কথাটা বলেই দৌড় দেয়।আর আমি চোখ বড় বড় করে অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাই।
–চুমু খেলে ভালোবাসা বাড়ে তাই না?কিসব লজিক।বাচ্চাদের এসব আলতু ফালতু কথা শেখানো হচ্ছে?
–এই না না।আমি এসব বলিনি সত্যি(অভ্র ভাই ভ্যাবলা হাসি আর মাথা চুলকাতে বলে)
–সত্যি কি মিথ্যা তা বোঝায় যাচ্ছে।এট লিস্ট বাচ্চাদেরকে তো একটু ভালো কিছু বলা যায়।না কি??
–হুম।কিন্তু আমি সত্যিই বলিনি।আচ্ছা সে যাই হোক।আমারো না কিছু দেয়ার ছিলো।
–আপনার আবার কি দেয়ার আছে?(আমি আড়চোখে তাকাই)
–আছে কিন্তু তার জন্যে চোখ বন্ধ করো।
–চোখ বন্ধ করবো কেন?
–আমি বলছি তাই।
–না করবো না।যা বলার এইভাবেই বলেন।
–ঠিক আছে।আল্লাহ ভুত!
উনি ভুত বলেই সাইডে তাকান।আমিও সাথে সাথে ওদিকে তাকায় আর সেই সুযোগেই সাদা বাদর টা আমার গালে চুমু খেয়ে দেয়।আমি তো ফ্রিজড একদম,চোখ গুলো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে যাই।গালে হাত দিয়ে ওনার দিকে স্ট্যাচুর মতো তাকাই।উনি মুচকি হেসে বলেন,
–চুমু খেলে ভালোবাসা বাড়ে।ভাইপো কথাটা বললো তাই আর কি।
ওনার কথাটা শুনে কি রিয়াক্ট করবো জানি না।উনি একদম আমার কানের কাছে এসে বলেন,
–বাচ্চা মেয়ে,কুল।রিলাক্স,এতো প্রেশার নিয়ার কিছু নেই।আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।
আমি আরো শকড হলাম।উনি মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।কিন্তু তার আগে থেকেই মারিয়া ওখানে হা করে দাড়িয়ে ছিলো।মারিয়াকে দেখে অভ্র ভাই হেসে বলেন,
–সাইড প্লিজ,আমার ভাইপোর কা এর মিষ্টি বান্ধবী।
মারিয়া সাইড দিয়ে দিয়ে উনি চলে যায়।আমি ওইভাবেই গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি এখনো।মারিয়া আমার কাছে এসে বলে,
–এটা কি হলো?
–…………..
–এই সূচী(ও আমার গায়ে হাত দিয়ে ঝাকি দেয়।আমি কেঁপে উঠি)
–হ্যা?কিছু বলছিস?
–সূচী,অভ্র ভাই তোকে চুমু খেলো কেন?
–আমি কিভাবে জানবো সেটা?
–ও আবার তোকে ভালো টালো বাসে না তো?
–কি??
–হ্যা,সিনেমাতে তো দেখেছি।ভালোবেসেই ছেলেরা ওইভাবে চুমু খায়।আর তুই শুনলি না উনি তো বললো আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।আমি শিউর উনি তোকে ভালোবাসে।
–হাট!ফাও কথার জায়গা পাচ্ছিস না।ওসব ভালোবাসা টাসা কিচ্ছু না।সর তো,আমি ফ্রেশ হবো…
আমি মারিয়াকে সরিয়ে বের হয়ে যাই রুম থেকে।কিন্তু সত্যি বলতে মারিয়াকে বকা দিলেও আমার নিজেরও খুব অদ্ভুত লাগছে ওনার বিহেভিয়ারে।
–কাল রাতে একবার ওরকম পাখি বললো,আজ আবার চুমু খেলো।হচ্ছেটা?সত্যি কি উনি আমাই…না না তা কি করে হবে?ধুর আমি ভুল ভাবছি।বেশি বেশি না ভাবাই ভালো(ওয়াশরুমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মনে মনে বললাম)
*সকালে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা সবাই মিলে মিটিং এ বসেছি।হলুদ প্রোগ্রামের ডান্সিং,সিংগিং পারফরমেন্স নিয়ে।আপু আর আকাশ ভাইয়াকে একটা কাপল ডান্স করতে বলা হলো।কিন্তু আকাশ ভাইয়ের নাচের কথা শুনেই মুখ শুকিয়ে গেলো,সে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।স্নিগ্ধা ভাবি তো অনেক চেষ্টার পর অবশেষে রাজি করালো।আমি আর মারিয়াও গান চুজ করে ফেলেছি ডান্স এর জন্যে।সবাই যার যার মতো কিছু না কিছু করছে।কিন্তু এই বৈঠকে সাদা বাদরটা নেয়।আমাদের সব প্লানিং প্রায় শেষ তখন জনাব আসলেন।এসেই সবার মাঝে বসে পড়লেন।
–আমাকে বাদ দিয়ে কি প্লানিং হচ্ছে এতো?
–তার আগে বলো তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষন?(স্নিগ্ধা ভাবি জিজ্ঞেস করে)
–একটু কাজে ছিলাম।সে বাদ দাও কিসের প্লান হচ্ছে সেটা তো বলো।
–সুমনা আর আকাশের হলুদের দিন কে কি পারফম করবে সেটার।
–তাই নাকি?তা কে কি করবে?
–সবাই কম বেশি নাচবে।আকাশ আর সুমনা কাপল ডান্স।মারিয়া আর সূচীও গ্রুপ ডান্স।
–ওয়েট,ওয়েট,ওয়েট।কে নাচবে?সূচী?হাহাহহাহাহহহহহহ…..
–হ্যা সূচী।কিন্তু তোর এতো হাসি পাচ্ছে কেন অভ্র?(অন্তু ভাইয়া জিজ্ঞেস করে)
–ও আবার নাচতেও পারে বুঝি ঝগড়া করা ছাড়া?আর ওর যে চেহারার অবস্থা,বাতাসে তো উড়ে যাবে নাচতে গিয়ে।ওরে দিয়ে এসব নাচ টাচ করাতে যেও না বাবা।শেষে আমার ফুপিকে মেয়েটাই না হারানো লাগে।হাহহাহহহাহহহ…
–ও হ্যালো ঝগড়া করা ছাড়া মানে কি??আর আমি অনেক ভালো ডান্সার ওকে?সব প্রতিযোগিতাতে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছি আমি।না জেনে কমেন্ট করেন কেন?আর আমি হাওয়ায় উড়ে যাবো না?
–এই এই দেখো।তোমরায় দেখো আবার ঝগড়া করছে।খালি ঝগড়া করতেই জানে এই মেয়ে নাচ টাচ হবে না ওর দিয়ে।
–কি?আমি ঝগড়া করছি আমি??ঠিক আছে আমি নাচ পারি কি পারি না সময় হলেই জানা যাবে সেটা।তা আমাকে যে এতো কথা শুনাচ্ছেন।নিজে পারেন নাচতে??
–হাহ!আমি নাচতে পারি কিনা জানতে চাচ্ছো?আরে আমাদের এলাকাই সব অনুষ্ঠানে আমাকে নাচার জন্যে ভাড়া করে নিতে আসে লোক বুঝলে??
–কিন্তু অভ্র তুই তো….(আকাশ ভাই কিছু একটা বলতে যায় কিন্তু অভ্র ভাই থামিয়ে দেয়)
–কিন্তু আমি যায়না।এটাই বলতে চাস তো।কি করবো বল আমার টাইমটা কি এতোটাই ভ্যালুলেস যে এসব করে বেড়াবো।
–হুম সেটাই।
আকাশ ভাই বলে আর মুচকি হাসে।অন্তু ভাই স্নিগ্ধা ভাবিও হেসে দেয়।ওনাদের হাসি দেখে ভালো মতোই বোঝা যাচ্ছে যে সাদা বাদরটা সত্যিই কেমন নাচে।আমরা এইভাবেই কথা বলছিলাম তার মাঝেই মামা আর মামি আসে।মামা বলে,
–যাক সবাই আছিস ভালো হয়ছে।শোন আজ রাতে আমার বন্ধু আসলামের বাড়িতে তোদের ছোটদের সবার দাওয়াত।
–আসলাম চাচার বাড়ি??কেন বাবা?(অন্তু ভাই জিজ্ঞেস করে)
–ওই যে আইবুড়ো ভাত খাওয়াবে নতুন বর কনেকে।তোরা আছিস তাই তোরাও ফ্রি।
–যাক ভালোই হবে।মজা করে দাওয়াত খাওয়া হবে(অন্তু ভাইয়া বলে)
–খালি খাওয়া আর খাওয়া।এতো খেওয়ো হয় না তোমার?(ভাবি বিরক্ত হয়ে বলে)
–আরে নিজের বাড়িতে খাওয়া আর মানুষের বাড়িতে খাওয়া এক না।বুঝলে??বাবা আমরা রাতে চলে যাবো সময়মতো।টেনশন নিও না।
*সন্ধ্যার পর পর আমরা সবাই গুছিয়ে নিই মামার বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার জন্যে।অহনাকে নিয়ে স্নিগ্ধা ভাবি আর যায় না।আমরা তিন ভাইবোন,মারিয়া,অন্তু ভাইরা তিন ভাই আর আয়ান যায় ২টা গাড়ি নিয়ে।
চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবাদ)