তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-২৯+৩০

0
923

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৯
#জুনাইনাহ_তাসনিম

অভ্র ভাইয়ের সাথে গত ৯ দিন ধরেই আমার কথা হচ্ছে।কিন্তু আমি কেন জানি না ওনার সাথে কথা বলার সময় আমি নিজে থেকে কিছু বলতেই পারিনা।আমারও ইচ্ছা হয় ওনার খোজ নিই,উনি কেমন আছেন,ওখানে দিন কেমন কাটছে,সারাদিন কি কি করেন এসব শুনি।কিন্তু কিছুই হয়ে ওঠে না।এমনকি উনি এতোদিন কল দেইনি কেন সেটাও শুনা হলো না।আজ কল দিলে অবশ্যই শুনবো।

১১:৩০টা থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছি।১২টা ২৩ এ অভ্র ভাইয়ের কল।আমি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে কলটা রিসিভ করি।সাথে সাথে রিসিভ করলে উনি যদি আবার অন্য কিছু ভাবে?

–হ্যালো পাখি।
–জি।
–কেমন আছো তুমি?
–ভালো।
–কি করো?
–উম আপনি কেমন আছেন?
–……….
–হ্যালো,হ্যালো.
–পাখি আমি কি ঠিক শুনলাম?আমি কেমন আছি এটা জানতে চাইলে তুমি?
–হ্যা।কেন কোন সমস্যা?
–না না।সমস্যা কি হবে?আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।আমি ভালো আছি।তবে আজকে একটু বেশিই।না না একটু না অনেএএএক ভালো।

আমার কেমন আছেন কথাটা শুনে ওনার গলার ভয়েজই চেঞ্জ হয়ে গেলো যেন।মনে হচ্ছে উনি যেন অনেক খুশি হয়েছেন আমার মুখে কেমন আছেন কথাটা শুনে।এরপর আমাদের বেশ কিছুক্ষন কথা হলো।কথাই কথাই উনি আজকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
–আচ্ছা তুমি আমাকে মিস করতে?
–মিস!মিস কেন করবো?
–কেন করবে না??কতোদিন আমাদের কথা হয়নি?এতে তোমার একটুও খারাপ লাগেনি? তারপর আমি গ্রামে আসার আগে তোমার বাড়ি গেলাম,দেখা হলো না।তুমি তাও একবার খোজ নিলে না।একটা কল তো পারতে।
–আর কল!(আমি মুখ শুকনো করে বলি)
–আর কল মানে?
(আমি ওনাকে নাম্বার ডিলিট হওয়ার ঘটনাটা বললাম।উনি তো হাসতে হাসতে ফ্লাট।)
-হাহহাহাহহহ..
–হাসবেন না একদম আর তাছাড়া আপনিও তো কল দিতে পারতেন।সেটাও তো করেননি।
–আসলে..
–এখন হাসি থেমে গেলো কেন?এবার বলেন…
–শুনবা তাহলে?
–হুম
–তাহলে শোনো…

*(–স্যার আমাকে কি আজকেই যেতে হবে?

–হ্যা ইশরাক।রেডি হয়ে নাও।আমি চাই তুমি আজ থেকেই আমার সাথে ইন্টারনি শুরু করবে।তুমি একজন ফিউচার ডক্টর।তোমার কাজ মানুষের সেবা করা।তাই দেরি করতে পারবে না।গট ইট?
–ইয়েস স্যার।

অভ্র স্যারের ফোন টা রেখে দিলো।তারপর বাসায় সবাইকে জানিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।বাসা থেকে বিদায় নিয়ে ভাবলো একবার সূচীর সাথে কথা বলে যাবে।ওরও তো জানানো লাগবে।অভ্র সূচীর বাসায় যায়।কিন্তু সূচী তো রুমের দরজায় খোলে না।অভ্র মন খারাপ করে চলে আসে।অভ্র ড্রাইভিং করছে।একদিকে সফট মিউজিক আর তার সাথে সূচীকে নিয়ে চিন্তা।তখনই অভ্র খেয়াল করে রাস্তার মাঝখানে কেউ একজন দাড়িয়ে,সাহায্যের জন্যে হাত উঁচু করে দাড়িয়ে।গ্রামের রাস্তা,আশেপাশে ঘন জংগল।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,রাস্তায় মানুষজনও নেয়।এর মাঝে একা একটা লোক দাড়িয়ে।অভ্রর বেশ অবাক লাগলো।সে গাড়ি থামাবে কি থামাবে না এটা নিয়ে বেশ কনফিউজড ছিলো।কিন্তু শেষ পর্যন্ত গাড়ি থামালো।রোগা পাতলা শরীর,উজ্জ্বল গায়ের রং ,পরনে সাদা শার্ট,গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ির একটা লোক অভ্রর গাড়িতে লিফট চাইলো।তার স্ত্রী নাকি হাসপাতালে ভর্তি তাই এক্ষুনি তাকে হাসপাতালে যেতে হবে।লোকটির সহজ সরল মুখের চাহনি দেখে অভ্র আর না করতে পারলো না।গাড়িতে উঠিয়ে নিল।
–ধন্যবাদ ভাই।আজ আপনি না থাকলে আমার অনেক দেরি হয়ে যেতো।
–প্লিজ ধন্যবাদ জানাবেন না।আর আপনি আমাকে আপনিও বলবেন না।আমি আপনার থেকে বেশ খানিকটা ছোটই হবো।সো আপনি আমাকে তুমি করে বললেই খুশি হবো।
–আচ্ছা
–বাই দা ওয়ে হাসপাতালটা ঠিক কোথায়?
–এই তো আর ৩ কি.লো.।

৩-৪ মিনিট পর,
–হাই রে।কি ভুল করলাম এটা?এবার আমি কি করবো?(লোকটা নিজের ওপর বেশ বিরক্ত হয়ে কথাটা বলে মনে হলো)
–কি হয়েছে ভাই?কোন সমস্যা?(অভ্র সাথে সাথে গাড়িটা থামিয়ে বলে)
–ভাই বিপদে পড়ে গেলাম গো।(উনি মাথায় হাত দিয়ে বলে)
–কেন কি হয়েছে?
–আমার স্ত্রীর বাচ্চা হবে,ইমারজেন্সি সেই কারনেই যাওয়া এতো তাড়াহুড়া করে কিন্তু আমার বাড়ির লোককে তো জানানো হইনি।আমার মোবাইলটাও বাড়িতে ভুল করে রেখে এসেছি।এখন আমি কিভাবে জানাবো?
–এতো সামান্য ব্যাপারে প্যানিক করার কিছু নেই।আপনি আমার ফোন দিয়ে কল দিতে পারেন।
–সত্যি ভাই?
–জী।
–তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানবো আমি!তুমি বারবার আমাকে সাহায্য করছো।
–না না প্লিজ ধন্যবাদ জানাবেন না।এই নিন।
(অভ্র নিজেত ফোনটা দেয় লোকটাকে।লোকটা কানে ধরে)
–ভাই বলছিলাম কি গাড়ির মধ্যে নেট পাচ্ছে না।আমি কি বাইরে গিয়ে একবার কল দেবো?ইমারজেন্সি তো..
–হ্যা শিউর।
–ওকে।

লোকটা মোবাইল নিয়ে বাইরে যায়।অভ্র ওয়েট করতে থাকে।কিন্তু বেশ খানিকক্ষন হয়ে গেছে লোকটার ফিরার কোন নামই নেয়।এদিকে রাত হয়ে গেছে তাই আশেপাশে ভালো বুঝাও যাচ্ছে না।অভ্র গাড়ি থেকে বের হয়।কিন্তু আশেপাশে কোথাও লোকটা নেয়।সে কয়েকবার ডাক দেয় তাও নেয়।অভ্রর বুঝতে বাকি থাকে না লোকটা ফ্রড ছিলো আর তার ফোনটাও গেল।)

–নাম্বার না থাকাই তোমাকে কল দেয়া হয়নি সূচী(পুরো কাহিনিটা বলার পর অভ্র এটা বলে)

–হাহহাহাহহাহহাহহ(আমি তো ওনার এই ঘটনা শুনে হাসতেই আছি)

–হাসছো কেন তুমি?

–দা ইশরাক এহসান অভ্রও তাহলে বোকা বনে গেল।হাহহাহাহহাহহহহ।।কিন্তু নাম্বারটা কে দিলো?

–ওতো তোমার জানা লাগবে না।যাও ঘুমাও,গুড নাইট।

অভ্র ভাই কল কেটে দিলো।আমি এখনো হাসছি।কিন্তু একটা ব্যাপার আমার কিছুতেই ঢুকছে না নাম্বার টা কে দিলো।
[নাম্বারটা আকাশ দিয়েছিলো]

*আমাদের এখন রোজ কথা হয়।দুজন বেশ ফ্রি হয়েছি আগের থেকে।সত্যি বলতে গেলে আমার বেশ ভালোই লাগে ওনার সাথে কথা বলতে।ওনার সিলি সিলি জোকস শুনে আমার বেশ হাসি পাই।
এই যেমন দুদিন আগেই,
–জানো একটা মেয়ে না একটু আগে আমার কাছে এসেছিল?
–মেয়ে!
–হুম মেয়ে?
–এতো রাতে কোন মেয়ে আসলো আবার আপনার কাছে?এতো রাতে কিসের বা দরকার এতো?
–দরকার কি জানি না।তবে এলো আর কিস দিয়ে চলে গেলো?
–হোয়াট?!(আমি কেন জানি না কিছুটা ক্ষেপে গেলাম)
–হুম কিন্তু ভয়ে আছি যদি ডেঙ্গু হই?
–কিসই তো দিয়েছে ডেঙ্গু হতে যাবে কেন?(আমি কিছুটা অভিমানি সূরে বলেছিলাম।উনি বুঝেছিলো কিনা কি জানি!)
–ওমা ফিমেইল মশা হোক বা জেন্টস।মশা তো মশাই তাই না?
–কি?!হাহহাহাহহাহহাহাহহ(আমি ওনার কথা শুনে হাসি থামাতে পারলাম না।হোহোহহহ করে হেসে দিলাম।লোকটা পারেও বটে)

তবে আমরা মাঝে মাঝে ঝগড়াও করি।উনিই আমাকে রাগিয়ে দেয় ইচ্ছা করে।কেমন যেন অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাচ্ছে মানুষটা।সারাদিন ওনার কথাই ভাবতে ভালো লাগে।ওনার একটা কল পাওয়ার অপেক্ষাই দিন কাটিয়ে দিই।তবে কি ভালোবেসে ফেললাম??!!

৩৮.
দু মাস কেটে গেছে।দু মাসের একটু বেশিই।ওনার রেজাল্টও বের হয়েছে।প্রতি বারের মতো এবারও জনাব টপ রেজাল্ট করেছে।এবার অফিশিয়ালি তিনি একজন ডাক্তার।যদিও ওনার ইন্টারনি করা লাগবে,কোন হাসপাতালে এজ এ অফিসিয়াল ডাক্তার হিসেবে আর কিছুদিন টাইম লাগবে।এই দুই মাসে উনি ঢাকায় আসেননি।আরো দু মাস নাকি ওই গ্রামটাতে থাকবেন তারপর একেবারে আসবেন।
এদিকে আমাদের কথা বলার সময় আর ইচ্ছা দুটোই বেড়েছে।২৪ ঘন্টায় আগে ২০-৩০ মিনিট কথা হতো এখন সেটা ১ ঘন্টা হচ্ছে।তবে ওনার একটু কষ্ট হয়ে যায়।সারাদিন ডিউটি করে রাতে মশার কামড়ে বসে থেকে আমার সাথে কথা বলে।চার থেকে বড় জোর সাড়ে চার ঘন্টা ঘুমানোর টাইম পায়।তাও মশার উত্তাপে ভালো করে হয় না।তবে খাওয়া দাওয়ার সমস্যাটা আর নেয়।গ্রামের এক মহিলা প্রতিদিন রান্না আর ঘরের টুকটাক কাজ করে দিয়ে যায়।সপ্তাহে ৫০০ করে টাকা দেয়া লাগে।

*প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছি ওনার ফোনের অপেক্ষাই।কিন্তু আজ উনি কল দিচ্ছেন না।আমি ঘড়ির কাটার দিকে তাকালাম ১২ টা ৩৮ বাজে।উনি প্রতিদিন ১২টাই কল দেন।আজ এখনো দিচ্ছে না তাই আমিই কল দিলাম ৩ বার।রিং হলো কিন্তু উনি রিসিভ করলেন না।আমার খুব খারাপ লাগলো।কথা হয়নি এর জন্যে যতোটা না খারাপ লাগছে তার থেকে বেশি খারাপ লাগছে আজকে ৮ এপ্রিল তাই।৮ এপ্রিল মানে আমার জন্মদিন।আজকের দিনেই উনি কল দিলেন না?আমাকে উইশও করলেন না?আমার খুব খারাপ লাগলো।মোবাইলটা রেখে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলাম কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।হটাত মোবাইল বেজে উঠলো।আমি ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম অভ্র ভাই বলে।তাড়তাড়ি মোবাইলটা হাতে নিলাম,দেখি অভ্র ভাইয়েরই কল।আমি রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো।টাইম দেখি ৩টা ২১।উনি আবার কল দিলেন আমি রিসিভ করলাম।
–হ্যালো..
–নিচে আসো।
–মানে?(অভ্র ভাইয়ের মুখে নিচে আসো কথাটা শুনে আমার বেশ অবাক লাগলো)
–মানে আমি আপনার বাসার নিচে দাড়িয়ে।হাতে সময় কম তাড়াতাড়ি নিচে আসো।
–ইয়ারকি মারবেন না তো।
–ইয়ারকি???সূচী আমি সিরিয়াস।
–হুম অনেক জানা আছে আপনি সিরিয়াস কি অন্য কিছু।
–বেলকনতি আসো,নিজেই দেখে নাও।
–আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না যে এতো রাতে বেলকনিতে যাবো?আর আমি বোকা না বুঝলেন?যে আপনার ইয়ারকি বিশ্বাস করে নেবো।
–এসোই তো আগে।
(হটাত কি মনে হলো গেলাম বেলকনিতে।আমি তো পুরো থ মেরে গেছি।জনাব সত্যিই এসেছেন আর একে হাতে কানে মোবাইল ধরে অন্য হাত উঁচু করে নাড়াচ্ছে)
–আপনি?আপনি সত্যিই এসেছেন?
–জী ম্যাডাম।এবার তো আসবেন না কি?
–কিন্তু বাসার কেউ যদি জেনে যায়?
–এইটুকুও ম্যানেজ করতে পারবে না??
–আচ্ছা আসছি।৫ মিনিট ওয়েট করুন।
–ওকে পাখি।

আমি মাথাই ওড়না দিয়ে খুব সাবধানে বাড়ির গেট পর্যন্ত এলাম।তারপর খুব আস্তে করে গেট খুলে বাড়ির বাইরে চলে গেলাম।বাড়ির মেইন গেইটে ত তালা মারা।তাই বাধ্য বয়ে পিছনের গেট দিয়ে বের হওয়া লাগলো।তারপর একটু হেটেই ওনার কাছে গিয়ে দাড়ালাম।উনি সিগারেট খাচ্ছিলেন,আমাকে দেখে হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিলো।
–ওহ তুমি এসে গেছো??তাড়াতাড়ি বাইকে ওঠো?
–বাইকে উঠবো মানে?
–কথা বলার সময় নেই ওঠো তাড়াতাড়ি।
–কিন্তু?
–কোন কিন্তু না ওঠো…

উনি আমার হাত ধরে বাইকের দিকে টান দিলেন।জোর করেই বাইকে উঠালেন।আমিও উঠে বসলাম।
–আমাকে ধরে বসো পাখি।না হলে পড়ে যাবে।
–উম থা থা থাক।
–আচ্ছা।
–আমরা যাচ্ছি কোথায়?
–সারপ্রাইজ।

উনি কথাটা বলেই বাইকের ব্রেক কষেন আর আমি সাথে সাথে ওনাকে জড়িয়ে ধরি।উনি হেসে ফেলেন।তারপর আমি ওনার কাধে হাত রাখলাম।আর মনে মনে খুব রাগ হলো।সাদা বাদরটা ইচ্ছা করেই এটা করলো।ফাজিল একটা…

চলবে…

(দুদিন আগে বলেছিলাম ১০ তারিখে কিছু শেয়ার করবো সবার সাথে।আজকে তাই কিছু বলবো।আমার লাইফেও একজন অভ্র আছে,যদিও তার নাম অভ্র না।অবশ্য আমার আইডির নামটাও রিয়েল না।আমার রিয়েল আইডি দিয়ে গল্প দিলে প্রবলেম ছিলো কিছু তাই এই ফেক আইডির আশ্রয় নেয়া।অনেকেরই তো ব্যাপারটা ভালো লাগবে না।কিন্তু এছাড়া আমার উপায় ছিলো না।তো যেটা বলবো আর কি,আজকে আমার আর অভ্রর(আমার রিয়েল লাইফ ভালোবাসার মানুষ) সম্পর্কের ১১১১তম দিন।৩ বছর আগে এক দোকানে পরিচয় হয়েছিলো দুজনের।সেখানেই জানতে পারি দুজন সেম কলেজ তবে আলদা গ্রুপে।সে সাইন্স আর আমি কমার্স।ওইভাবেই জার্নিটা শুরু।দেখতে দেখতে ৩ বছর হয়ে গেছে।সেইম এইজের রিলেশন তাই বাড়িতেও ঝামেলা হয়েছে।কিন্তু দুজন চেষ্টা করে যাচ্ছি সম্পর্কটাকে যেন বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি সেই জন্যে।সে বুয়েটে ভর্তির প্রিপারেশন নিচ্ছে আর আমি যেকোন পাবলিক ভার্সিটিতে।দোয়া করবেন সবাই আমাদের জন্যে,আমরা যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসাথে থাকতে পারি।

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩০
#জুনাইনাহ_তাসনিম

সেই কখন থেকে তো খালি বাইকেই বসেই।যাচ্ছি কোথায়?

আমার কথাটা শুনে অভ্র বললো,
–সারপ্রাইজ বললাম তো।আর তা ছাড়া এক ঘন্টাও তো হয়নি আছো।তাহলে কখন থেকে কিভাবে হলো?

আমি উত্তর দিতে গিয়েও গেলাম না।কারন উনি যে মানুষ তাতে তর্কে না যাওয়াই ভালো।আমি চুপচাপ বসে রইলাম।এদিকে আরেকটু পরেই ভোর হবে।আধা ঘন্টা বা তার আরেকটু সময় বাকি আছে সূর্যদয়ের।ওনার মনে যে কি চলছে আল্লাহই জানে।ওদিকে বাসায়ও কেউ যদি একবার জানে আমি বাসায় নেই কি যে হবে!ভেবেই তো আমার বুক কেঁপে উঠছে।না ওনার কাছে শুনতে হবে উনি চাচ্ছে টা কি?কিন্তু আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি বাইক থামিয়ে দিলেন।আর বললেন,
–নামো
–জী?
–নামোওও..
–কেন?
–আরে নামতে বলছি নামো।এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি হুম?তাড়াতাড়ি নামো।হাতে সময় কম।

আমি আর কিছু না বলে নামলাম বাইক থেকে।নেমে দেখি রাস্তার ওপারে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান।এখনো ভোর হয়নি তাও দোকানটা খোলা।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–সারারাত ঘুম হয়নি।হালকা মাথা ধরেছে।চা খাওয়া যাক?

এখন চা খাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই তাও আমি না করলাম না।রাস্তা পার হয়ে দোকানের ওখানে গেলাম।কিন্তু অবাক করা বিষয় দোকানওয়ালা অভ্রকে দেখেই দোকানের মধ্য থেকে বেরিয়ে এলো এক গাল হাসি নিয়ে,
–হিরো যে!কত্তোদিন পর আইছো..এত্তোগুলান দিন আসো নায় যে?আমি তো ভাবছিলাম আমার চায়ের স্বাদ তোমার বুঝি আর ভাল লাগে না।(দোকানদারের কথা শুনে তো আমি শকড)

–রহিম চাচা তোমার হাতের চায়ের স্বাদ যদি ভুলে যাই তাহলে তো পুরো দুনিয়ার সবকিছুই আমি ভুলে যাবো।কেমন আছো বলো?(অভ্র ভাই দোকানদারের কাধে হাত রেখে বলে)

–ভালা আছি গো।তুমি কেমন আছো?কত্তোদিন দেখি না তোমায়।ডাক্তারি পড়া ভালা হচ্ছে তো?

–আমি অনেক ভালো আছি চাচা।আর ডাক্তারি পাশ করে গেছি গো চাচা।গত একবছর অনেক ব্যস্ত ছিলাম গো তাই আসা হয়নি।এখন কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি তোমার স্পেশাল মালাই চা দাও দু কাপ।

–তা না হয় দিচ্চি।কিন্তু তার আগে একখান কথা কও দেখি,সাথে এইডা ক্যাডা?নতুন মুখ মনে হচ্ছে।আগে তো দেখিনি।

–চাচা এইটা হলো তোমার হিরোর হিরোইন।(অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে)

–হিরো কও কি এইডা সত্যি?মাহশাআল্লাহ,মাহশাআল্লাহ।একদম পরীর মতো,তোমার পছন্দ মন্দ না বটে হিরো।অনেক সুখী হও মা।দুয়া করি তোমাদের জন্যে(লোকটা আমার মাথায় হাত রেখে বলেন।আমার প্রথমে কিছুটা অকওয়ার্ড লাগলেও লোকটার সরলতা,অপরিচিত মানুষকে দোয়া করা দেখে আমি আর কিছু বললাম না।আর অভ্র ভাইও দেখি হাসিমুখ নিয়ে আছেন।লোকটার কথা বা কাজ উনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলেন।তাই আমিও হালকা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালাম)

–আচ্ছা চাচা এবার চা দাও।তা না হলে দেরি হয়ে যাবে।গল্প অন্যদিন হবে।

–হ হ বসো তোমরা।আমি এক্ষুনি চা দিচ্ছি।বসো বসো

*আমি আর অভ্র ভাই দোকানের সামনে থাকা ছোট একটা বেঞ্চে বসি।
–জানো সূচী,আমি ইন্টার লাইফ থেকেই এখানে আসি।ইন্টারে তো আমি হোস্টেলে থাকতাম ইভেন মেডিকেল লাইফেও।লাস্ট এক ইয়ার বাড়ি আছি তাও বাধ্য হয়ে।যাই হোক সে কথা বাদ।যা বলছিলাম,ইন্টারে আমাদের বন্ধুদের কাছে বাইক ছিলো না।আমরা ৩ ঘন্টা ধরে সাইকেলিং করে এখানে আসতাম চা খেতে।চাচার হাতের চা একবার যে খাবে সে সারাজীবনেও ভুলতে পারবে না।তারপর মেডিকেল লাইফে তো বাইক হয়ে গেলো সবাই মিলে প্রায় প্রতিদিনই আসতাম।মাঝে মাঝে মেয়েরাও আসতো।
–মেয়ে?
–আরে জাস্ট ফ্রেন্ডরে বাবা।এই তো চা এসে গেছে,চা খাও।

উনি হাতে চা নিয়েই অন্যদিকে ঘুরে যান।আমি হাতে চা নিয়ে সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থাকি।উনি আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে হাসি দিয়ে বলেন,
–সত্যি রে বাবা,জাস্ট ফ্রেন্ড।এবার চা টা খাও..

আমার সন্দেহ না কাটলেও কিছু বললাম না।আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।আমি তো পুরো শকড।এরকম মজাদার চা আমি লাইফে কোনদিন খাইনি।অভ্র ভাই ঠিক কথাই বলেছিলো যে,চাচার বানানো চা সত্যিই অসাধারণ।একবার খেলে আবার খেতে ইচ্ছে করবে।রহিম চাচা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
–মা ভালা লাগছে তোমার?আমার হিরোর তো বরাবরই ভালা লাগে।তুমি তো আগে কখনো খাও নাই তাই তুমিই কও।
–চাচা অনেক মজা।
–সত্তি?
–৩ সত্যি(আমি মিষ্টি হাসি দিলাম)
–ঠিকাছে।আর কিছু খাবা?বিস্কুটও আছে।
–না না চাচা আমার আর কিছু লাগবে না।
–আচ্ছা মা।
–চাচা আমাকে একটা পাউরুটি দাও।(অভ্র ভাই বলে ওঠেন)
–দিচ্চি দাড়াও..

রহিম চাচা অভ্র ভাইকে ৫টাকা দামের একটা পাউরুটি এনে দেয়।উনি মালাই চায়ে ডুবিয়ে খায় পাউরুটিটা।মালাই চায়ে পাউরুটি ডুবিয়ে খেতে আমি কাউকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।কিন্তু উনি খুবই এঞ্জয় করে খাচ্ছেন।আমিও চা খাচ্ছি।উনি হটাত বলে ওঠেন,
–চাচা জানো আজকে হিরোইনের জন্মদিন।(আমি তো অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে অবাক।উনি তার মানে জানেন আমার জন্মদিন আজকে।কিন্তু কেমন লোজ একবার আমাকে উইশও করলেন না।আবার রহিম চাচাকে বলছেন)
–ওমা তাই নাকি?(রহিম চাচা অনেক আগ্রহ নিয়ে বলেন)
–হ্যা গো।
–তা হলে তো ছেলি ছেলিবে বেট করা লাগবে তো।
–হাহহাহাহহহহ চাচা ওইটা সেলিব্রেট।
–ওই হলো।আমি না হয় বাপু বুজি কম আর তুমি তো বুঝেছো না কি?ওতেই হবে।
–আচ্ছা আচ্ছা বাবা।ঠিক আছে আর হাসছি না।কিন্তু কি সেলিব্রেট করবে শুনি?
–দেকোই না কি করি।

রহিম চাচা দোকানের মধ্যে চলে যায়।তারপর একটা স্টিলের থালাই ছোট্ট একটা বেকারির কেক আনে আর সাথে একটা ছুরি।আমি আর অভ্র তো কিছুই বুঝতে পারছি না।একে অপরের দিকে ইশারা করলাম যে হচ্ছে টা কি?রহিম চাচা এসে আমার আর অভ্র ভাই আর আমার মাঝখানে এসে ওটা রাখেন।তারপর মিষ্টি হেসে বলেন,
–মা কাটো কেকখান।(আমি তো ওনার কথায় শকড)কি হলো মা কাটো,জানি কেকটা অনেক ছোট।দাম ও কম।তোমার কি পছন্দ হয় নায়?আমি কি নিয়া যাবো?
–না না চাচা।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।আমি কেকটা অবশ্যয় কাটবো।
(আমি কেক কাটবো শুনে রহিম চাচার মুখের হাসিটা বেড়ে যায়।আমারও কেন জানি না নিজেকে খুব স্পেশাল মনে হয়।)
–তাকায় আছো ক্যান মা?কাটো?
–হুম চাচা।(আমি ছুরিটা নিয়ে কেক কাটতে গেলাম)
–এই দাড়াও দাড়াও..
–আবার কি হল চাচা?(অভ্র ভাই বলে)
–মোমবাতি জলবে না?টিভিতে তো দেখিছি।
–চাচা এখানে আর মোমবাতি কয় পাবো?এমনিই কেটে দিচ্ছি।(আমি বলি)
–এক মিনিট সূচী।মোমবাতি নেই তো কি হয়েছে?আগুন তো আছেই?(অভ্র ভাই বলে আর আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই।)এই যে এটা..
–গ্যাস লাইট?
–হুম।গ্যাস লাইট।এই নাও ফু দাও
(উনি গ্যাস লাইট জ্বেলে আমার সামনে ধরেন)
–কি হলো ফু দাও..

আমি ফু দিই।তারপর কেক কাটার জন্যে ছুরি হাতে নিই।অভ্র ভাই বার্থডে সং গাইতে থাকে আর ওনাএ ফোনে ছবি তুলতে থাকে।আর রহিম চাচাও হাত তালি দিতে থাকেন।এই মুহুর্তটাই আমার এখন খুবই ভালো লাগছে।আমি আনন্দে কেদেই ফেলবো হয়তো।এরকম সুন্দর মুহুর্ত আমার জীবনে আগে কোনদিন আসিনি।আমি কেকটা কেটে রহিম চাচার মুখের সামনে ধরি।উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
–কি হলো চাচা?খান।
–আমি!??
–হুম আপনি।কেন কোন সমস্যা?
–হিরো রইছে এইখানে আর তুমি আগে আমার মুখে দিচ্ছো কেক?আর আমি তো সামান্য এক চায়ের দোকানি।
–চাচা আমার জন্মদিনটা আপনি এতোটা স্পেশাল করে তুলেছেন তাই সবার আগে তো আপনারই অধিকার।আর তা ছাড়া আপনি মোটেও সামান্য কেউ নন।যে এতোটা মজার চা বানাতে পারে সে সামান্য কেউ হতে পারেই না।আর তা ছাড়া আপনার হিরো একটুও রাগ করবে না।নিন তো খান..

আমি রহিম চাচাকে কেক খাইয়ে দিই।তারপর উনিও আমাকে ওই ছোট্ট কেকের এক টুকরো কেটে খাইয়ে দেন।এটা দেখে অভ্র ভাই বলেন,
–আমি খাবো না?
–না আপনি পাবেন না।
–বললেই হলো।আমি তো খাবোই।(উনি ক্ষপ করে বাকি কেকটা নিয়ে গালে পুরে নেন)হুম মজা।আচ্ছা সবাই মিলে একটা সেল্ফি হোক?
–না না আর কোন ছবি না।
–দেখলে তো চাচা তোমার হিরোইন তোমার সাথে ছবি তুললো কিন্তু আমার বেলায় না না।(উনি অনেক ঢং করে বলেন।নিজেই একটা ড্রামা বাজ আবার আমাকে বলে)
–ও মা।তোল না একটা ছবি।(রহিম চাচা বলে)
–চাচা?
–আমার জন্যি না হই?
–ওকে।

অভ্র ভাই,আমি আর রহিম চাচা তিনজন মিলে একটা সেলফি তুলি।তারপর অভ্র ভাই বলে,
–চাচা এইবার উঠি?
–এখুনি যাবা?
–হ্যা চাচা।তা না হলে দেরি হয়ে যাবে।
–আবার আসবা কিন্তু তুমরা দুজন।
আমরা রহিম চাচার থেকে বিদায় নিয়ে বাইকের কাছে আসি।উনি ওনার হেলমেটটা নিয়ে আমাকে দেন,
–নাও পরো।
–আমি??
–হ্যা তুমি।
–কিন্তু কেন?আপনার হেলমেট আমি কেন পরবো?
–কারন এখন তোমার প্রয়োজন।আমি একটু স্পীডে চালাবো বাইকটা।তাই তোমার পরা লাগবে।
–না পরবো না।
–পরো বলছি
(উনি ধমক দিয়ে উঠলেন।আমি ভয়ে আর কোন কথা না বলে পরে নিলাম।উনি বাইক চালানো শুরু করলেন কিন্তু বাসার দিকে না উল্টো দিকে)
–এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?এটা তো বাসার রাস্তা না।
–হ্যা তো আমরা তো বাসায় যাচ্ছি না।
–বাসায় যাচ্ছি না মানে?বাসায় যাচ্ছি না তো কোথায় যাচ্ছি?
–বললাম তো সারপ্রাইজ।চুপচাপ বসো।
–কিন্তু..

আমি আর কোন কথা বলবো তার আগেই উনি বাইকের স্পীড বাড়িয়ে দেন।আমি তো ভয় পেয়ে যায়।কারন উনি বাইক চালাচ্ছেন না উড়াচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না।সত্যিই বুঝতে পারছি না।আমি তো ভয়ে অর্ধেক শেষ ওনাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরি।মিনিট ৭-৮ পর উনি বাইক থামিয়ে দেন।
–নামো
–এখানে?
–হুম।কিন্তু কেন?আশেপাশে তো কিছুই নেই।
–উফফ!এতো কথা না বলে নামো তো..

আমি নেমে দাড়াই।উনিও বাইকটা সাইড করে বলে,
–চলো
–কোথায়?
–আগে চলোই তো।

উনি হাটতে থাকে।চারিপাশে বেশ গাছগাছালি।উনি তার মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছে,আমিও ওনার পিছু পিছু এরকম একটা জায়াগায় এই সময়ে আমাকে নিয়ে এলেন।কেমন একটা লাগছে!কিন্তু উনি আর যাই হোক উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবে না,এটুকু বিশ্বাস আমার আছে ওনার প্রতি।

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন।কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)