তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-৩০+৩১

0
349

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩০

বউ সাজানো হচ্ছে আরশি কে। পরনে হালকা গোলাপী রঙের লেহেঙ্গা, হীরার গহনা। লেহেঙ্গা আর গহনার ডিজাইন বেশ পছন্দ হয়েছে আরশির। লেহেঙ্গা মোটামোটি ভা*রী হলেও গহনাগুলো হালকা ডিজাইনের মধ্যে হওয়ায় স্বস্তিবোধ করছে আরশি। চুপচাপ মূর্তির মতো বসে আছে সে। মিসেস বন্যার নির্দেশ মতো তাকে সাজাচ্ছে পার্লারের মহিলারা। সাজানো শেষ হতেই পার্লারের মহিলারা বেরিয়ে গেলেন। মিসেস বন্যা আরশির কাছে এসে মুখ টা উঁচু করে ধরলেন। আরশি চোখ মেলে তাকালো মিসেস বন্যার দিকে। আরশির মায়া ভরা মুখ, সুন্দর টা*না টা*না চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মিসেস বন্যা। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে আসলো,

— মাশাআল্লাহ।

চোখ নামিয়ে মৃদু হাসলো আরশি। এতে যেনো আরশির সৌন্দর্য আরও কয়েক গুন বৃদ্ধি পেলো। মিসেস বন্যার ইচ্ছা হলো আরও কিছু সময় আরশির দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁ*টে খুঁ*টে দেখতে। কিছু তো একটা আছে এই শ্যামা মেয়ের মাঝে যা যে কাউকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে বা*ধ্য করবে। এই শ্যামা মেয়ে যেনো যে কাউকে আকর্ষণ করার ক্ষ*ম*তা রাখে। নাহলে তার ছেলে কোনো মেয়ের জন্য এতোটা পা*গ*ল কি করে হয়?

আহি হঠাৎ হাঁ*চি দেয়ায় ধ্যান ভা*ঙ*লো মিসেস বন্যার। কিছু টা অ*প্রস্তুত হলেন তিনি। হালকা কে*শে গলা ঝে*ড়ে মুন আর মোহনা কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— একটু পরে ওদের নিচে নিয়ে আসবে। আমি কাউকে পাঠিয়ে দিবো ডাকার জন্য। ততক্ষন অব্দি ওদের সাথেই থেকো তোমরা দুজন।

মুন আর মোহনা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। মিসেস বন্যা তা*ড়া*হু*ড়ো করে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। উনি বের হতেই হু*ড়*মু*ড় করে রুমে ঢুকলো আবির আর রাহুল। যেনো দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। ওরা ভিতরে আসতেই মোহনা গিয়ে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিলো। এক লাফ দিয়ে আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো মোহনা। মোহনা কে এভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁ*চ*কে তাকালো আরশি। মোহনা খ*প করে আরশির হাত ধরে ওকে উঠিয়ে বেডে এনে বসালো। আরশি কে বেডে বসাতেই সবাই আরশির সামনে গোল হয়ে বসলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। আরশি চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— কি স*ম*স্যা? আমাকে বুঝি বউ সেজে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে?

মোহনা মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো করে বললো,

— এই ছিলো তোর মনে? তলে তলে প্রেম করলি। আবার আমার ক্রাশ কে বিয়ে ও করে নিলি?

আহি মুখ বাঁ*কা করে বললো,

— তোরা দুইটা এমন করতে পারলি? এভাবে ধোঁ*কা দিলি? আমার ভাই আমারে এই ব্যাপারে কিছু কইলো না আর তুই আমার বান্ধুবী হইয়া ও আমারে একটু বললি না। কেন বললে কি আমি তোদের প্রেমের মাঝখানে ভি*লে*ন হতাম নাকি? কবে থেকে তোদের প্রেম চলে জলদি বল, কিভাবে প্রেম হলো সেটা বল। বল, বল যতক্ষণ না শুনমু ততক্ষন শান্তি পামু না।

হাই তুললো আরশি। বললো,

— প্রেম থাকলে তবেই না কাহিনী শুনাবো?

আরশির কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো,

— মানে?

আরশি সোজাসা*প্টা জবাব দিলো,

— উনি আমাকে কি*ড*ন্যা*প করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন।

আরশির জবাবে মুখ হা হয়ে গেলো সবার। আরশি ওদের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। কিভাবে আবরার তাকে বিয়ে করেছে সব টা জানালো। সব টা শুনে আহি বললো,

— আমার ভাই দেখি তোর প্রেমে পা*গল* হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে তোকে কি*ড*ন্যা*প করে বিয়ে করলো? আমার ভাই ও একটা চি*জ মানতেই হবে। রাতারাতি কি প্ল্যান টা করলো? আর দেখ তোর জন্য বিয়ের সবকিছু আগেই সে কিনে রেখেছে। বাব্বাহ কি প্রেম, কি ভালোবাসা? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। তুই আমার ভাবি হয়ে গেলি আর ইশা ডা*ই*নিটাও বিদায় হলো। আহঃ কি সুখ সুখ লাগছে।

নিশ্চুপ রইলো আরশি। কিছু একটা ভাবতে লাগলো সে। এমন সময় মুন বললো,

— তবে একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকলো না….

সবাই উৎসুক চোখে তাকালো মুনের দিকে। মুন কৌতূহল নিয়ে বললো,

— আবরার ভাইয়া তোকে কি*ড*ন্যা*প করে ভ*য় দেখিয়ে পেপারে সাইন করালো আর তুই ও ভ*য় পেয়ে সাইন করলি? এই ব্যাপার টা ঠিক হ*জ*ম হলো না। তোকে আমার খুব ভালো করে চেনা আছে। যেই মেয়ে কারোর থ্রে*টে*র তো*য়া*ক্কা করে না, কাউকে ভ*য় পায় না সে আজ ভ*য় পেয়ে সাইন করলো? আর এখনই বা তুই এতো স্বাভাবিক কি করে আছিস?

সবাই ভাবলো আসলেই তো মুনের কথা টা ঠিক। আরশি তো ভ*য় পাওয়ার মতো মেয়ে নয়। তবে আজ কিভাবে সে ভ*য় পেলো? আরশি নিরবে ভাবতে লাগলো এখন কি জবাব দিবে। তবে জবাব দেয়ার প্রয়োজন পড়লো না আরশির। সে কিছু বলার আগেই দরজায় নক করে একজন জানালো নিচে তাদের ডাকা হচ্ছে, দ্রুত যেনো সবাই নিচে আসে। ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো আরশি। মুন, মোহনা উঠে দাঁড়ালো আরশি আর আহি কে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

—–

ধীরে ধীরে আরশি আর আহি কে ধরে নিচে নিয়ে আসতে লাগলো মুন, মোহনা। ওরা সিঁড়ির কাছে আসতেই আরও কিছু মেয়েরা আশপাশে যোগ হলো। পিছন পিছন আবির আর রাহুল ও আসছে। নিচে আসতেই আরশির চোখ চলে গেলো সামনের দিকে। নিজের মা মিহি বেগম এবং রিফা কে দেখে ভীষণ অবাক হলো আরশি। তারচেয়ে বেশি অবাক হলো মিহি বেগম কে আবরারের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে। আবরার উনাকে এক হাতে আ*গ*লে নিয়ে কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। সোফার কাছে পৌঁছাতেই আবরার উনাকে যত্ন সহকারে বসিয়ে দিলো। মিহি বেগম আলতো হেসে আবরারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। চোখ জ্ব*লে উঠলো আরশির। আজ কতগুলো বছর পর সে নিজের মা কে এভাবে সুস্থ অবস্থায় হাসতে দেখলো। কি সুন্দর পরিপাটি দেখাচ্ছে মিহি বেগম কে। এই মুহূর্তে উনাকে দেখে কেউ বলবে না উনি মানসিক ভাবে দু*র্ব*ল। মিহি বেগম রিফার সাথে টু*ক*টা*ক কথা বললেও কখনো হাসেন না। আর আরশি কে তো স*হ্যই করতে পারেন না। একরাশ অ*ভি*মান হা*না দিলো আরশির মনের মাঝে। তার মা তার সাথে কথাই বলতে চায় না, দেখলেই রা*গা*রা*গি করে অথচ আবরারের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। আসলেই কি তার কোনো দো*ষ ছিলো? যার জন্য তার মা তাকে এতগুলো বছর ধরে অ*ব*হে*লা করে আসছে?

আরশির ভাবনা চি*ন্তা*র মাঝে সোফার কাছে চলে আসলো তারা। আরশি কে বসিয়ে দেয়া হলো সোফায়। আহি কে বসানো হলো রাদিফের পাশে। আরশি কে দেখেই রিফা এগিয়ে আসলো। আরশির পাশে বসে তাকে আনন্দের সাথে জড়িয়ে ধরলো। এই মেয়ের হাসি দেখলে কেউ বলবে না তাকে কিছুক্ষন আগে মা*রা*র হু*ম*কি দেয়া হয়েছিলো। স*ন্দি*হান চোখে একবার রিফার দিকে তাকালো আরশি। আরশি কে এভাবে তাকাতে দেখে হালকা কা*শি দিলো রিফা। হাসি বন্ধ করে মুখ ফিরিয়ে আশপাশ দেখতে লাগলো। আরশি সামনে তাকাতেই দেখলো তার মা কেমন যেনো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছ*ল*ছ*ল করছে উনার। আরশি ও অ*ভি*মানী চোখে তাকিয়ে রইলো নিজের মায়ের দিকে। যেনো চোখ দিয়েই বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে সে অনেক অ*ভি*মান করেছে।

পাশে কেউ একজন ধ*প করে বসায় ধ্যান ভ*ঙ্গ হলো আরশির। চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকাতেই আবরারের শান্ত, গম্ভীর চেহারা নজরে আসলো। আবরার একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না খেয়াল করলো আরশি। মনের মাঝে খা*রা*প লাগা যেনো আরও বেড়ে গেলো তার। তাকে কি এতোটাই বা*জে দেখাচ্ছে যে লোকটা একবারও তার দিকে তাকালো না? তবে কি সে ভু*ল বুঝলো?

কাজী সাহেবের আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকালো আরশি। কাজী সাহেব রাদিফ আর আহির বিয়ে পড়াচ্ছেন। আহি কিছু টা সময় নিয়ে কবুল বললো। কিন্তু রাদিফ কে বলমাত্র সে ঝ*ট*ফ*ট কবুল বলে ফেললো। সবাই হাসলো রাদিফের তা*ড়া*হু*ড়ো দেখে। আহিও হাসা শুরু করলো। কোনোরকমে হাসি থামিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আচ্ছা আপনি আবার বাইরে কবে যাবেন?

চোখ বড় বড় করে তাকালো রাদিফ। অবাক কণ্ঠে বললো,

— বিয়েও শেষ হতে পারলো না আর তার আগেই তুমি আমাকে ভা*গা*নোর প্ল্যান করছো? তুমি কি চাচ্ছ আমি তোমাকে রেখে আজই আবার চলে যাই?

আহি মিটমিট করে হেসে বললো,

— আপাতত এটাই চাচ্ছি। আপনি বাইরে গেলে আমার তো ফা*য়*দা। বাপের বাড়ি চলে আসবো। এরপর দুই বান্ধুবী একসাথে রাজত্ব করবো। দেখছেন না আমার বান্ধুবী আমার ভাবি হয়ে গেলো। আমি তার উপর হু*কু*ম না খাঁ*টি*য়েই শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো। এটা কি মানা যায়? আমার তো এখন আ*ফ*সোস হচ্ছে আমার ভাই আগে কেন ওকে বিয়ে করলো না?

দু*স্টু হাসি হাসলো রাদিফ। আহির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আপনার আশা পূরণ হচ্ছে না প্রিয়তমা। আগামী ছয় মাসেও আমি কোথাও যাচ্ছি না। এই ছয় মাস বউয়ের সাথে শুধু রোমান্স চলবে। তাই আপনার আর আপনার ভাবির উপর হু*কু*ম চালানো হবে না।

লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসলো আহির। সে লজ্জা লু*কা*নোর চেষ্টা করে চোখ রা*ঙি*য়ে তাকালো রাদিফের দিকে।

অন্যদিকে, কাজী সাহেব কবুল বলতে বললো আরশি কে। এতক্ষন স্বাভাবিক থাকলেও এখন বুক ধ*ড়*ফ*ড় করছে আরশির। মনের মাঝে ভ*য় জা*গছে এই বিয়ে যদি তার জন্য সুখকর না হয়? আবার যদি তাকে নতুন ভাবে ভে*ঙে দিয়ে যায়? সে কি পারবে স*হ্য করতে? আরশির উ*ল্টো*পা*ল্টা ভাবনার মাঝে কেউ তার হাত টা আঁ*ক*ড়ে ধরলো। চ*ম*কে তাকালো আরশি। দেখলো আবরার তার হাত টা নিজের মুঠোয় পুরে নিয়েছে। কিন্তু তার দিকে তাকাচ্ছে না। তবুও কেমন যেনো ভরসা পেলো আরশি। একবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জো*রে একটা শ্বাস টে*নে কবুল বলে ফেললো। আবরার কে কবুল বলতে বলা হলে সেও কিছু টা সময় নিয়ে কবুল বললো। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো আবরার, আরশি। আরশি মাথা উঁচু করে তাকালো আবরারের দিকে। আজ থেকে সে এই মানুষটার অর্ধাঙ্গিনী, এই মানুষটার সম্পদ। আর এই মানুষটাও সম্পূর্ণরূপে তার, শুধুমাত্র তার। কথাগুলো ভেবে ঈ*ষ*ৎ কেঁ*পে উঠলো আরশি।

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩১

ফুলে সজ্জিত কক্ষে বসে আছে আরশি। হাঁ*স*ফাঁ*স অবস্থা তার। পাঁচ মিনিট আগেই কয়েকটা মেয়ে তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে। তারপর থেকেই হাঁ*স*ফাঁ*স করছে সে। হৃৎপিণ্ড জো*রে জো*রে লা*ফা*চ্ছে। সে বুঝতে পারছে না কেনো এমন লাগছে তার। এই অনুভূতির সাথে সে মোটেও পরিচিত নয়। আরশি বুঁকে হাত রেখে জো*রে একটা শ্বাস টা*নলো। বিড়বিড় করে বললো,

— এমন কেনো হচ্ছে? মনে হচ্ছে হৃদযন্ত্র টা লা*ফাতে লা*ফাতে বাইরেই বেরিয়ে আসবে। আমি কি ম*রে ট*রে যাবো নাকি? মাত্রই তো বিয়ে টা হলো। এখনই ম*রে গেলে কি করে চলবে? এখনো তো এমপি সাহেবের লাইফ টা ভা*জা ভা*জা করা বাকি, তার মাথার চুল ছে*ড়া বাকি, খা*ম*চি দিয়ে তার মাং*স তো*লা বাকি, বুড়ো বয়সে তাকে জ্বা*লা*নো বাকি। আরও কতো কিছু বাকি। এসব না করে আমি কি করে ম*র*তে পারি? রিল্যাক্স আরশি। তোর এখনো কতো কিছু করা বাকি। এতো জলদি তোর কিছু হতে পারে না, তুই ম*র*তে পারিস না। সো রিল্যাক্স।

আরশি নিজেকে কিছুক্ষন উ*ল্টা*পা*ল্টা বুঝ দিলো। তারপরও তার হৃদযন্ত্র টা নিজের কাজ করেই চলেছে। বি*র*ক্ত হলো আরশি। নিজের মনোযোগ অন্যদিকে নেয়ার জন্য ধীর পায়ে বেড থেকে নামলো। লেহেঙ্গা একটু উঁচু করে আবরারের রুম টা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো। লেহেঙ্গা পড়ায় হাঁটতে খুব একটা অ*সুবিধা হচ্ছে না আরশির। সে ধীরে ধীরে রুমের সবকিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। বিশাল বড় রুম আবরারের এবং খুব পরিপাটি। দেয়ালে আবরারের বেশ কিছু ছবি লাগানো। আরশি কিছু সময় নিয়ে ছবিগুলো খুঁটে খুঁটে দেখলো। তারপর রুমের জানালার দিকে চোখ যেতেই সেদিকে চলে গেলো আরশি। বন্ধ জানালা এক টা*নে খুলে ফেললো। অমনি বাইরের হাওয়া এসে বা*রি খেলো আরশির চোখে মুখে। নাকে এসে ঠে*ক*লো ফুলের সুবাস। চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত টা উপভোগ করতে লাগলো আরশি। এমন সময় খ*ট করে দরজা খোলার শব্দে চম*কে তাকালো আরশি। দেখলো আবরার ভেতরে প্রবেশ করছে। শান্ত হওয়া হৃদযন্ত্র টা আবারও অ*স্বাভাবিক হয়ে উঠলো।

অন্যদিকে আরশি কে এভাবে চ*ম*কে তাকাতে দেখে বাঁ*কা হাসলো আবরার। মনে পরে গেলো আরশির ত্যা*ড়া কথাগুলো। সুন্দর মতো দরজা বন্ধ করলো সে। বাঁ*কা হেসে ধীরে ধীরে আরশির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আবরার কে নিজের দিকে আসতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি, শু*ক*নো ঢোক গি*লতে লাগলো। গলা টা ভীষণ শুকিয়ে গেছে তার। আরশি মনে মনে নিজেকে বলতে লাগলো,

— তুই এই অ*সভ্য এমপি কে ভ*য় পাচ্ছিস কেনো আরশি? ভ*য় পেলে চলবে না, মোটেও চলবে না। একবার উ*ল্টা*পা*ল্টা কিছু করতে আসুক, একেবারে খা*ম*চে রেখে দিবো হুমম।

আরশি নিজের ভাবনা চি*ন্তা থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলো আবরার তার অতি সন্নিকটে চলে এসেছে। আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। হুট করে আরশির দিকে ঝুঁ*কে আসলো আবরার। ফিসফিস করে বললো,

— তা কি যেনো বলছিলে? তুমি আমার বউ লাগো না তাই আমি যখন তখন তোমার কাছে আসতে পারি না, যখন তখন কল, মেসেজ করতে পারি না। তা এখন তো তুমি আমার বউ লাগো। এখন নিশ্চয় সবকিছু করতে পারি?

আবরার কথাগুলো বলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। সেই দৃষ্টিতে যেনো একরাশ মুগ্ধতা বিরাজ করছে। আবরারের চোখের দিকে তাকিয়ে আরশি ও কেমন এক ঘো*রে*র মাঝে ডু*বে গেলো। জবাব দেয়ার কথাটাও মাথায় রইলো না। এই সুযোগটাই কাজে লাগালো আবরার। হুট করে কোলে তু*লে নিলো আরশি কে। আবরার কোলে তু*লতেই হুস ফিরলো আরশির। সে মোটেও এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কিছুক্ষন থম মে*রে থেকে আবরারের কোল থেকে নামার জন্য মো*চ*ড়া*মু*চ*ড়ি করতে লাগলো আরশি। বলতে লাগলো,

— অ*সভ্য, লু*চু এমপি একটা। নামান আমাকে। নামান বলছি নাহলে, নাহলে…

আরশি কথাগুলো বলতে বলতে উ*ত্তে*জিত হয়ে আবরারের গলায় একটা খা*ম*চি বসিয়ে দিলো। ধবধবে ফর্সা হওয়ায় মুহূর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করলো জায়গা টা। জ্ব*ল*ন হলেও পাত্তা দিলো না আবরার। আরও শ*ক্ত করে আরশি কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। খা*ম*চি দেয়া জায়গা টা নজরে আসতেই মো*চ*ড়া*মু*চ*ড়ি থামিয়ে দিলো আরশি। জায়গা টা লাল হয়ে ফু*লে উঠেছে। দেখে আরশির নিজেরই আ*ফ*সোস লাগলো। সে সব কিছু ভু*লে কাঁ*পা কাঁ*পা হাত টা এগিয়ে নিয়ে গেলো আবরারের গলার কাছে। আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো জায়গা টা। আরশির অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসলো আবরার। আরশির এসব কর্মকা*ন্ডে*র মাঝেই বেডে এসে বসে পড়লো আবরার। তবে আরশি কে ছাড়লো না। হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বের করলো সে।

ড্রয়ার লাগানোর শব্দে চ*ম*কে উঠলো আরশি। এতক্ষন কি করছিলো ভেবেই লজ্জায় কান গরম হয়ে আসলো তার। কিন্তু আবরারের হাতে নেইল কা*টার দেখে সব লজ্জা ছুঁ*টে পা*লা*লো আরশির। চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে তাকালো সে। মনে পড়ে গেলো আবরারের সেই বিখ্যাত বাণী।

— “তোমার জামাই কবুল বলেই আগে তোমার নখ কা*ট*বে দেখে নিও।”

আরশি ভ*য়া*র্ত দৃষ্টিতে একবার নিজের নখ আর একবার আবরার কে দেখতে লাগলো। আরশির এক্সপ্রেশন দেখে ভীষণ হাসি পেলো আবরারের। তবুও হাসলো না সে। আরশির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

— মনে আছে তো কি বলেছিলাম? তোমার জামাই কবুল বলেই আগে তোমার নখ কাটবে? আর দু*র্ভা*গ্যবসত অথবা সৌভাগ্যবসত আমিই তোমার জামাই। কবুল বলে নখ কা*টতে পারলাম না তাতে কি? এখন বাসর ঘরে বসে আরামসে তোমার নখ কা*টবো।

আবরারের কথাগুলো শুনে দুই হাত মুঠ করে পুনরায় ছ*ট*ফ*ট করতে লাগলো আরশি। হঠাৎ এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলো আবরার। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছ*ট*ফ*ট করতে থাকা আরশির দুই গালে ট*পা*ট*প দুটো চু*মু খেলো। ছ*ট*ফ*ট করা বন্ধ করে মূর্তি রূপ ধারণ করলো আরশি। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার বাঁকা হেসে আরশির ঠোঁটের দিকে ইশারা করে স্লো ভয়েসে বললো,

— আর একবার ন*ড়া*চ*ড়া করলে গালে না অন্য কোথাও চু*মু খাবো। সো ভদ্র মেয়ের মতো বসে থাকো।

কথাটা বলেই আরশির হাত টে*নে ঝ*ট*ফ*ট নখ কা*ট*তে লাগলো আবরার। আরশি অ*স*হায় চোখে নিজের কিউট নখগুলোর মৃ*ত্যু দেখতে লাগলো। ভিতরে ভিতরে রা*গে, দুঃ*খে ফু*স*তে লাগলো সে। এর প্র*তি*শো*ধ সে নিবে এবং অবশ্যই অবশ্যই নিবে। এখন তো লেহেঙ্গা পড়ে থাকার কারণে তেমন একটা সুবিধা করতে পারলো না। আবরার কি ভেবেছে? তার নখ কি আর বড় হবে না নাকি? তার নখ এক সপ্তাহ পর আবার বড় হবে। সে এবার আরও বড় নখ রাখবে আর তিন বেলা খাবারের সাথে একটা করে খা*ম*চি দিবে আবরার কে।

আরশির সবগুলো নখ মনমতো কে*টে বিশ্ব জয় করা হাসি দিলো আবরার। আবরারের হাসি দেখে গা জ্ব*লে উঠলো আরশির। সে ধা*রা*লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আরশি কে এভাবে তাকাতে দেখে আবরার আরশির চোখে চোখ রেখে বললো,

— এভাবে তাকিও না মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তোমার অদ্ভুত চোখের এই ধা*রা*লো দৃষ্টি দিয়ে আর কতবার ঘা*য়ে*ল করবে আমায়? ওই চোখের দিকে তাকিয়ে আগের সেই আমিটাকে তো হা*রি*য়েই ফেলেছি। আর কি চাও বলো তো?

‘মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি’ ডাক টা শুনে এক মুহূর্তের জন্য থ*ম*কে গেলো আরশি। হ্যা সে এখন মিসেস। আবরারের ‘মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি’। বাকি কথাগুলো শ্রবণ হতেই আরশির দৃষ্টি নরম হয়ে আসলো। আবরার আরশি কে বেডে বসিয়ে একটা প্যাকেট নিয়ে আসলো। আরশির পাশে রেখে বললো,

— এতে তোমার পড়ার জন্য কাপড় আছে। বাকিগুলো কাল সকালে পেয়ে যাবে। আপাতত এটা পড়ো। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। ততক্ষনে তুমি গহনাগুলো খুলে রাখো।

আবরার কথা শেষ করে নিজের কাপড় নিয়ে চলে গেলো ফ্রেস হতে। আরশি তাকিয়ে রইলো আবরারের যাওয়ার পানে। লোকটা এই ভালো, এই খা*রা*প। আরশি বুঝে না লোকটা আসলে ভালো না খা*রা*প? আরশি বিড়বিড় করে বললো,

— এমপি সাহেব ভালো কিনা খা*রা*প জানি না তবে সে একটা লু*চু লোক হুহ।

চলবে?