তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৬
লেখনীতে-আফনান লারা
.
রিনি যখন নাস্তা বানানোই তটিনির মাকে হেল্প করছিল তখন তটিনির মায়ের অনুপস্থিতিতে আসিফ কয়েকবার এসে রিনিকে জ্বালিয়ে গেছে।তটিনি তা দেখেছে বহুবার।
এখন আর মন খারাপ হয়না।সময়ের সাথে সব সয়ে আসছে।এখন বুক পোড়ে বাপ্পির জন্য।
আসিফ নামের একটা ছেলের কারণে সে বাপ্পিকে এতটা দিন কষ্ট দিয়েছে।
বাপ্পি ঠিকই নিজেকে সংযত রেখেছে।তটিনির উপর জোরজবরদস্তি দূরে থাক সে এসব নিয়ে ভাবেওনা।কিন্তু তটিনি তো ভাবে!সে কেন ওকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে।
কাল সকালে চলে যাবার কথা থাকলেও যে তটিনি বৌভাতের দিন জেদ করে বাড়ি ফিরেছিল আজ সেই তটিনি এই রাতে শ্বশুর বাড়ি ফিরতে চায়।সকলেই অবাক হয়েছিল তার এমন চাওয়া নিয়ে।কিন্তু বাপ্পি অবাক হয়নি।কটা দিনে সে তটিনিকে বাহির ভেতর সব দিক দিয়ে চিনে গেছে।এখন আর অজানা বলে কিছুই নেই।
তটিনি যেভাবে বলেছে সেভাবেই সে রাত করে ওকে নিয়ে বের হয়ে গেছে।ওকে তটিনি নিজ থেকেই গান চালু করে গাড়ীতে।বাপ্পি তখনও নিঃশ্চুপ ছিল।ওকে চুপ থাকতে দেখে তটিনি ও আর কথা বলেনি।
বেশ কিছুদূর চলে আসার পর বাপ্পি বলে ওঠে কাল থেকে তার অফিসের চাপ বেশ বেড়ে যাবে।বলতে গেলে চোখের দেখাও অসম্ভব হয়ে উঠবে।অবশ্য এটা তটিনির জন্য ভালই হলো।সে তো বাপ্পিকে পছন্দ করেনা।এই কথা বাপ্পি খোঁচা দিয়েই বলেছে।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায় তাদের।বাড়ির সকলে তখন ঘুমে থাকলেও বকুল আপু জেগে ছিল ওদের আসার অপেক্ষায়।আপু নিজেও অবাক হলেন তটিনির এত দ্রুত মত বদলানো নিয়ে।ওরা বাড়ি ফিরতেই তিনি খাবার সাজিয়ে দিলেন ওদের সামনে।তটিনি খেলেও বাপ্পি খেলোনা।তার নাকি খিধে নেই।সে তটিনিকে বকুল আপুর কাছে রেখে চলে গেছে।
তটিনিকে আপু সহজে আসতে দেয়নি।বাপ্পি নাকি রাতে না খাওয়া মানে তার মন শরীর দুটোই খারাপ।তটিনি যেন তার মন ভাল করে দেয়।এই বলে অনেক বুদ্ধিশুদ্ধি দিয়ে অবশেষে তিনি তটিনিকে রুমে পাঠালেন। তটিনি যখন রুম আসে তখন বাপ্পি ঘুমাচ্ছিল।তটিনি আর ওকে ওঠায়নি।নিজে নিজে এসে ওর পাশে শুতেই মনে আসলো বাপ্পি ভোর তিনটা ছাড়া ঘুমায়না তবে এখন কি করে ঘুমালো?
‘আচ্ছা আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
বাপ্পির কোনো সাড়া নেই।তটিনি নিজের মনের ভুল ভেবে চুপ করে চোখ বুজে ফেললো।তাদের এই রাতে আর কথা হলোনা।পরেরদিন চোখ খুলে তটিনি তার পাশে বাপ্পিকে দেখলোনা।বাহিরে বের হয়েও দেখলোনা।বকুল আপু বলেছেন সে নাকি অফিসে চলে গেছে।তটিনিকে ঘুম থেকে তুলে ডিস্টার্ব করতে চায়নি।
তটিনি মাথা নাড়িয়ে ফোন খুঁজে বাপ্পিকে কল দেয়।বাপ্পি রিং হবার পর কলটা কেটে দিলো।হয়ত মিটিংয়ে আছে তাই সে আর ২য় বার আর কল দেয়নি।
বকুল আপু চলে গেছেন।বুশরা স্কুলে গেছে।বাবাও অফিসে।বাসায় বাপ্পির মা,দাদি আছেন শুধু।
তটিনি তাদের সাথে আধ ঘন্টা বসে থাকলেও তার সময় যে খুব ভাল কেটেছে তা হয়নি।তারা তাদের আমলের কথা বলছে আর তটিনি গালে হাত দিয়ে কেবল শুনে গেছে।
ছেলেটা কি জাদু করে দিলো কয়েকদিনে।তাকে ছাড়া সময় কাটার নামই নিচ্ছেনা।
রুমে ফিরে সে দেখে সাড়ে এগারোটা বাজে।আবারও ফোন দিলো বাপ্পিকে।এবারও বাপ্পি ধরোনি।
তটিনি সময় কাটাতে তাই বাগানে চলে আসে।আগে ফুল দেখলে মন ভাল হতো ওর।আজ আর ভাল হয়না।কেমন যেন শূন্যতা চারিদিকে বিরাজমান।
ফুলে হাত রেখে তটিনি গেইটের দিকে তাকায়।বাগান পরিষ্কার করার লোক নিজাম তটিনিকে গেট দেখতে দেখে কপালের ঘাম মুছে বলে,’ছোট সাহেব রাত ১টা ছাড়া ফিরেন না’
তটিনি অবাক হয়ে নিজামের দিকে তাকায়।তারপর গাল ফুলিয়ে বলল,’তবে সে বিয়ে করেছে কেন?’
‘সময় দিতে চাইলে সময় বের করা যায়’
এটা বলে নিজাম চলে যায়।তটিনি ভাবছে আসলেই তাই।বাপ্পির যদি টান থাকে তবে সে নিশ্চয় সময় করে আসবে।দেরি করবেনা।
এভাবে দুপুরটাও কেটে গেলো।বাপ্পির বাবা এসেছেন লাঞ্চ করতে।তটিনি তড়িগড়ি করে তার পাশে এসে দাঁড়ায়।বাপ্পির ব্যাপারে কিছু শোনার জন্য।তিনি ভাতে হাত রেখে ফোন নিয়ে বাপ্পিকে কল দিয়ে বললেন অফিসের যে কাজটা বাকি আছে সেটা পুরো করতে।
এটা শুনে তটিনি ধরেই নিলো আজ ওর আসতে অনেক দেরি হবে।কিন্তু এরপর সে মনে করে বাপ্পি তার কল কেন ধরছেনা!
তটিনি যখন দুপুরে ঘুমালো তখন বাপ্পি কল দিলো তাকে।কিন্তু ওর ফোন ছিল ডাইনিং টেবিলের উপরে।বাসায় তখন কেউ ছিল না।সবাই বাগানে আড্ডা দিতে মত্ত।ফোন বাজতে বাজতে নিভে গেলো।
তটিনি চারটার দিকে উঠে নিজের ফোন খুঁজে দেখে বাপ্পির পাঁচটা মিসড্ কল।
তার খারাপ লাগলো কলটা ধরতে না পারায়।সে আবারও কল করে ওকে,,, এবার বাপ্পি ব্যস্ত।
এমন করে আর কথা হয়নি ওদের।রাত এগারোটা,বারোটা এমন কি ১টা অবধি জেগে থাকে তটিনি।বাপ্পির গাড়ীর আওয়াজ আর কানে আসেনা।
এভাবে জীবন কিভাবে চলবে?মনে হয় যেন জামাই বিদেশ থাকে!
১টার পর আর ঘুম আটকে রাখতে পারেনি সে।ঘুমিয়ে পড়েছে।তার ঘুমিয়ে পড়ার দশ মিনিট পর দারোয়ান গেট খুলে দিলো।বাপ্পি এসেছে।
বুশরার কাল পরীক্ষা বলে সে জেগে জেগে পড়ছিল।বাপ্পিকে দেখে টেবিলে খাবার সাজা সাজাতে সে বলে,’ভাবীর শখ মিটছে তোমায় বিয়ে করে’
বাপ্পি টাইটা ঢিল দিতে দিতে বলে,’কেন রে?কি করলাম আবার?’
‘সারাদিন চাতকপাখির মতন তোমার অপেক্ষা করছিল।তুমি যদি লাইভ দেখতে গো ভাইয়া!!আমার নিজেরই খারাপ লাগছে ভাবীর জন্য।তুমি তো এরকম দেরি করোনা!’
‘সেটার কারণ আছে।পরে বলছি।তা সেই চাতক পাখি কোথায়?’
‘তোমার আশায় ঘুমিয়ে পড়েছে।গিয়ে দেখেও আসলাম মাত্র’
——-
বাপ্পি তটিনিকে দেখার জন্য উতলা হয়ে রুমে ঢোকে।তটিনি বাপ্পির গলা শুনে ঠিক উঠে বসে গেছে।দুজনের চোখে চোখ পড়তেই তটিনি মুখ ঘুরিয়ে চাদর টেনে শুয়ে পড়ে।বাপ্পি কিছু না বলে গায়ের শার্টটা খুলে আলমারি থেকে নিজের টিশার্ট বের করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এদিকে তটিনি ভেবে বসে আছে বাপ্পি তার রাগ ভাঙ্গাবে।
বাপ্পিকে চলে যেতে দেখে তটিনি অবাক হয়ে বসেই থাকলো।ও যতক্ষণ অবাক হয়ে বসে ছিল ততক্ষণে বাপ্পি ওয়াশরুম থেকে আবার বের হয়েও গেছে।
দুজনের আরও একবার চোখাচোখি হয়।তাও কেউ কিছু বলেনা।
বাপ্পি এইবারও কিছু না বলে খেতে চলে গেছে।তটিনির রাগ সীমার শেষ চূড়ায় পৌঁছে গেছে তখন।
——
‘ভাইয়া ভাবীর সাথে কথা বলেছিলা?’
‘সে চুপ,আমিও চুপ’
‘তোমার তো এত ইগো নাই!’
‘আরেহ তটিনিকে কায়দা করে নিজের প্রতি দূর্বল করতেই যত কারসাজি!’
বুশরা হাসলো।হাসি থামিয়ে বাপ্পির পাতে আরও এক চামচ ভাত ঢেলে বললো,’তবে কি জানো!কারসাজিতে তুমি ফেঁসে যাবে,তটিনি ভাবী নয়!’
‘কেনো কেনো?’
‘কারণ ভাবীকে দেখলাম বালিশ নিয়ে বকুল আপুর রুমের দিকে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেলেছে’
এই শুনে বাপ্পির খাওয়া গেলো বন্ধ হয়ে।চোখ বড় করে বললো,’সে কি বলছিস!’
বাপ্পি উঠে হাত ধুয়ে গেলো দেখতে।সত্যি তটিনি রুমে নাই।মাথায় হাত দিয়ে বকুল আপুর জন্য রাখা সেই রুমটার বাহিরে এসে বাপ্পি দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবে না বলবে ভাবছিল পরে অনেক ভেবে ওখান থেকে চলেই আসলো।
তটিনি বকুল আপুর বিছানার উপর বসে গালে হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি নক করলেই আচ্ছা করে কতগুলো ঝাড়ি দিয়ে দিবে।কি কি ঝাড়ি দিবে সেইসব লাইন মুখস্থ করে নিচ্ছে সে।
১.আপনার কমনসেন্স নাই
২.আপনি আসলেই উজবুক
৩.আপনি স্ত্রীর অধিকার জীবনে দিতে পারবেন না,বউকে সময়ই দিবেন না!আবার অধিকার!
ভেরি ফানি!’
না না এটা বলা যাবেনা।আমি নিজেই তো ওনাকে ছুঁতে দেইনা।তাহলে অধিকারের কথা কেন বলছি!
তারপর বলবো ৪.আপনি খুব বাজে একটা লোক!আপনি!!!
বারান্দায় আওয়াজ হতেই তটিনি মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়।চাঁদের আলোয় স্পষ্ট একটা পুরুষ মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে ওখানে। ভয় পেয়ে তটিনি বালিশ হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দিলো এক দৌড়।সোজা দরজার দিকে কিন্তু তার আগেই বাপ্পি ওকে ধরে ফেলে ফিসফিস করে বলে,’আমি আমি!’
চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৭
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পির ক্লান্ত চোখজোড়া দেখে তটিনির সব রাগ মুছে গেলো।হাত বাড়িয়ে ওর পরিশ্রান্ত মুখ ছুঁয়ে দেখছে তটিনি।বাপ্পি অবাক হয়ে শুধু তটিনির কাজ দেখে যাচ্ছে।
‘আপনি প্রতিদিন এমন দেরিতে আসেন?’
‘মাঝে মাঝে’
‘ আমাকে মিস করেছিলেন?’
‘সারাক্ষণ! আর তুমি?’
‘একটুও না’
এই বলে তটিনি বিছানায় এসে বসে বালিশ কোলে নিয়ে।বাপ্পি ও ওর পাশে বসে গালে হাত রেখে তার দিকে চেয়ে থেকে বললো,’বুনি যে বললো তুমি মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদছো আমার জন্য?’
তটিনি লজ্জাবতীর মতন মাথা নিচু করে বসে আছে।তার মন খারাপের কথা বুনি এভাবে বললো?নাকি উনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন?
তটিনিকে চুপ করে থাকতে দেখে বাপ্পি একটু কাছে ঘেঁষে বসে বলে, ‘আমার অফিসের কাছে একটা ১২তলার দালান আছে।কোম্পানির নিজস্ব সেই দালানটি।আজ বস থেকে শুনলাম আমাদের সবাইকে একটি করে ফ্ল্যাট দেয়া হবে।যতদিন কাজ করবো ততদিনের জন্য।ভাবছি বউ নিয়ে সেখানে সেটেল হয়ে যাবো।তখন দিনে একবার নয় চৌদ্দবার দেখা হতে পারে’
তটিনি হা করে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি কি তার মন গলাতে এইসব বলছে!
বাপ্পি তটিনিকে অবাক হতে দেখে আবার বললো,’তুমি জানলে অবাক হবে!বাবা নিজেও একটা ফ্ল্যাট পাচ্ছে!’
‘এত খরচ কেন করবে কোম্পানি?’
‘তাদের লাভ আছে।আর সেটা হলো আমাদের বেতন কাটবে’
‘তো যাবেন?’
‘আমি যাবো এটা সিওর।কারণ এতদূর থেকে অফিস যাওয়া আসাতে আমার সমস্যা হয়।আর তোমার তো আরও বেশি সমস্যা হয়!একদিক দিয়ে আমাকে দেখতে পারোনা অপর দিক দিয়ে আমাকে চোখে হারাও!’
তটিনি ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।বাপ্পি ওর পাশেই শুয়ে পড়ে বলে,’বাবা হয়ত যাবেনা!’
‘তো আমাদের আলাদা থাকা কি সবাই মানবে?’
‘আমরা আলাদা হবার কথা বাবাই বলেছে আমায়।সব সুযোগ সুবিধা দেখেই বাবা বলেছেন তটিনিকে নিয়ে থাকতে পারিস!’
‘তো আমি সেখানে গেলে কত টাইম দিতে পারবেন?’
‘ফ্ল্যাট থেকে অফিস দেখা যায়।তুমি বললে গ্লাসে গাল লাগিয়ে সারাদিন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো!’
তটিনি ফিক করে হেসে ফেললো।ওকে হাসতে দেখে বাপ্পি হঠাৎ ওর হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের পাশে শুইয়ে দেয়।
তটিনি বাপ্পির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে বালিশে মাথা রেখে।বাপ্পি তটিনির মাথার চুলগুলোকে ধরে পিঠের পেছনে নিয়ে বললো,’ভাল লাগে!’
‘কি ভাল লাগে?’
‘এই পুরো মানুষটাকেই!’
———
রিনির মায়ের ভীষণ অসুখ।হঠাৎ হয়নি।কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। কিন্তু আজই অসুখটা বেশি হয়ে গেলো।রিনিকে তাই তার বাবা আর্জেন্ট আসতে বললেন।আসিফ তখন ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিচ্ছে।তাকে ফোন দিয়েও পাওয়া যাবেনা।এদিকে রিনির যাওয়া খুব দরকার।মা নাকি অনেক বেশি অসুস্থ। আসিফের পরীক্ষা শেষ হবে সেই বিকাল পাঁচটায়।আসতে আসতে ওর আরও এক দুই ঘন্টা লেগে যাবে।রিনি আর না ভেবে একাই চলে গেলো।যাবার সময় ঐশীর মাকে বলে গেলো তিনি যেহ আসিফকে সবটা খুলে বলেন।
রিনি চলে যাবার পর পুরো ঘরটা যেন তাদের শূন্য হয়ে গেছে।তটিনি যতগুলো বছর ছিল এ বাড়িতে সেও এতটা মাতিয়ে রাখতে পারেনি যতটা রিনি মাতিয়ে রেখোছিল।ঐশীর সাথে সাথে ওর মায়েরও মনটা খারাপ হলো।রিনি একা যেতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও ভাবছে তারা।এদিকে আসিফ রিনির একা যাওয়াকে কি চোখে দেখবে সেটাও ভাববার বিষয়।ওর স্ত্রীকে তো তাদের ভরসাতেই সে রেখে যায় প্রতিদিন!তটিনির বাবা অতটাও সুস্থ নন যে রিনিকে সাথে করে নোয়াখালী দিয়ে আসবেন।আসিফ সব বুঝলেই মঙ্গল!
———-
আসিফ বাড়ি ফিরে রিনির যাবার কথা শুনে রিনিকে কল দেয় বাড়িতে।সে ধরলোনা,এমন কি বাড়ির কেউই ধরছেনা।
আসিফের চিন্তায় পড়ায় মন বসছেনা।কাল বাদে পরশু তার আরেকটা পরীক্ষা আছে।
শেষে বাধ্য হয়ে তার বাবার নাম্বারেই কল দেয় সে।
বাবা যে সংবাদ জানালো তাতে আসিফের হাত পা সব নিথর হয়ে উঠলো।রিনির মা নাকি আধা ঘন্টা হলো মারা গেছেন।
এ কথা শুনে আসিফ আর দেরি করলোনা।দ্রুত ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।
রিনি দুবার জ্ঞান হারিয়েছে।মা হারার শোকে কাতর সে।এটা কখনওই কল্পনাও করতে পারেনি, মা তাকে না বলে এভাবে হারিয়ে যাবে!
কি থেকে কি হয়ে গেলো!পাশে বাবা আর ভাই থাকলেও আসিফের অনুপস্থিতি তাকে আরও ভীষণ একা বোধ করাচ্ছে।বারবার সে আসিফকে খুঁজছে চারপাশে।তার নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে এখন।
মা কাল ও ঠিক ছিল।ওর সাথে কথাও বলেছিলেন!আর সেই মা আজ নেই!বিশ্বাস করতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়।
—
আসিফ যখন পৌঁছায় তখন রিনির মাকে কবর দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।রিনি মাটিতে বসে কাঁদছিল চিৎকার করে।কাঁদতে কাঁদতে তার গলা ফেটে গেছে।গলার স্বর বদলে গেছে।
আসিফ এসেই রিনির পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলো।আসিফকে পেয়ে রিনির যেন কান্নার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।সে ওকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
আসিফের কথামতন তটিনির বাবা,মা,ঐশী এমন কি তটিনি আর বাপ্পি ও এসেছে এখানে।সবাই দূর থেকে ওদের দেখছিল। রিনি আবারও জ্ঞান হারায়।
সবার সামনো থেকে আসিফ ওকে কোলে তুলে ভেতরের রুমে নিয়ে আসে।
তটিনী রিনির মায়ের কবরটা দেখছিল।কবরে একটি গাছ লাগিয়ে দেয়া হলো।এরপর সবাই চলে গেছে।তটিনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছে,দেখলো বাপ্পি পুকুর ঘাট থেকে।তাই উঠে এসে ওর হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে এসে বললো,’ওখানে সব পুরুষ মানুষ!তোমার থাকা ঠিক না’
তটিনি বাপ্পির দিকে তাকিয়ে থেকে ওর পিছু পিছু রিনিদের বাড়িতে ফিরে আসো।রিনির নাকি এখনও জ্ঞান ফেরেনি।আসিফ ডাক্তার আনতে ছুটেছে।
বাপ্পি, তটিনিকে আশেপাশের সব মানুষ দেখছিল আর গল্প গুজব করছিল। বাপ্পির গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর তটিনির গায়ে সাদা থ্রি পিস।দুজনকে এখানে থাকা সকলের চাইতে আলাদা দেখাচ্ছিল বলে সবার নজর ওদের উপরই ছিল
তটিনি রিনির পাশে এসে বসে।ওর মাথায় হাত বুলাতে যেতেই আসিফ একজন ডাক্তার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।সেটা দেখে তটিনি সরে দাঁড়ালো।
ডাক্তার দেখে জানালেন ভয়ের কিছু নেই।সব ঠিক হয়ে যাবে এই বলে কিছু ঔষুধ লিখে দিয়ে চলে গেছেন।আসিফ চিন্তিত হয়ে রিনির বাবার কাছে যাওয়া ধরতেই তটিনি ওকে আটকালো।ওর সামনে এসে বলল,’আপনি রিনির কাছে থাকুন!রিনির আপনাকে প্রয়োজন!আমি আঙ্কেলের কাছে যাচ্ছি’
এই বলে তটিনি বেরিয়ে আসলো রুম থেকে।তখন সে রিনির বাবাকে খুঁজতে গিয়ে বাপ্পির সাথে ধাক্কা খেলো আচমকা।বাপ্পি ওকে খুঁজতেই এদিকটায় আসছিল।
‘কি ব্যাপার!কই যাচ্ছিলে এত দ্রুত!’
‘রিনির বাবার খবর নেয়ার জন্য’
‘আমি দেখে আসলাম।শুয়ে আছেন।তার ও শরীর ও ভাল না’
তটিনি মাথা নাড়িয়ে চলে যাওয়া ধরতেই বাপ্পি ওর হাতটা আবার ধরে বলে,’একটা জায়গায় যাবে??
‘কোথায়?’
বাপ্পি কিছু না বলে তটিনিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।মাটির কাঁচা পথ টা ধরে অনেকদূর চলে আসে দুজনে।এদিকে আসার পথে এই সুন্দর পথটা বাপ্পি দেখেছিল।মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল তটিনিকে নিয়ে একবার হলেও সে এখানে আসবে।তাই হলো। তটিনি তার চোখে দূর দূরান্ত অবধি সব সরষে ক্ষেত দেখছে।মুগ্ধতায় আরকে ক্ষেতের কিণারায় পা দুলিয়ে বসলো, তারপর বাপ্পির দিকে চেয়ে বললো,’আপনিও বসুন।গ্রামে আসলে এমন মাটি লাগেই গায়ে।এটা ব্যাপার না’
তটিনির আশ্বাসে বাপ্পি বসে ওর পাশে।হঠাৎ তটিনি বাপ্পির কাঁধে মাথা রেখে বলে,’জীবনসঙ্গী যেমনটাই হোক,দুঃসময়ে সবার আগে সেই মানুষটাই পাশে দাঁড়ায় তাই না?এই যে আসিফ ভাইয়ার রিনির প্রতি কেয়ারের কথা বাদ দিলাম।সে বাড়িতে আমার মন খারাপ ছিল বলেই তো আমায় এখানে নিয়ে আসলেন আপনি!
‘চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৮
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ রিনির মাথায় পানি দিয়েছে তিনবারের মতন।ওর খালা ফুফুরা অবাক হয়ে আসিফের দায়িত্ববোধ দেখছেন ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে।অথচ এতদিন রিনির মায়ের মুখে শুনে এসেছেন আসিফ ছেলেটা অন্যরকম!রিনিকে চোখে হারায় না!রিনিকে পছন্দ করেনা।ওর মুখ দেখলে সবাই বলতো ওদের বিয়েটা জোর করেই হয়েছে!যার কারণে এতগুলো বছর আসিফ কতদূরে ছিল।ছেলে মানুষ বিয়ে করলে একদিন ও অপেক্ষা করেনা।বউকে সাথে নিয়ে যায় আর নয়ত শ্বশুর বাড়ি এসে বউকে দেখে যায় আর সেই আসিফ কিনা এত গুলো বছর বউহীনা থেকে গেলো!!সে যাই হোক!
আজ তার ব্যবহার অন্য কথা বলছে।সকলকে আশ্চর্যের শেষ প্রান্তে নিয়ে ঘুরিয়ে এনেছে সে।রিনির হাত ছাড়ছেনা কিছুতেই।রিনি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।কিছু খায়নি এখন অবধি।
কথাটা চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে!রিনির জামাই রিনি পাগল!!
গ্রামের দিকে নতুন বরের এরুপ কার্যালাপ আশানুরূপ হলেও দৃষ্টিকটু!লোকলজ্জার ও একটা ব্যাপার আছে!
ফিসফিস শুনেও আসিফ উপেক্ষা করে রিনির মাথায় হাত বুলাচ্ছিল।
রিনির জ্ঞান ফেরার পর তাদের রুমে চাচাতো বোন রিনতি আর কুয়াশাকে দেখে সে উঠে বসলো তারপর ওদের বললো রুম থেকে যেতে।ওরা তাই চলে আসলো ওখান থেকে।রিনি আসিফের দিকে ফিরে তাকায়,আসিফের মুখ ও শুকিয়ে আছে।
‘আন্নের হরীক্ষা নাই?’
‘এসবের চেয়ে জরুরি না’
‘চলে যান।আঁই ঠিক আছি’
এটা বলেই রিনির বুক ফেটে কান্না এসে যায়।আসিফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে চিৎকার করে।আসিফ জানে রিনি এখনও নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি।রিনির মাথায় হাত রেখে চুপ করে থাকে সে।
আসিফের মা বাবা খাবারের বন্দবস্ত করছেন রিনিদের বাড়ির সকলের জন্য।সকলে না খেয়ে আছে।আজ চুলা চলবেনা!এটা নিয়ম!
——–
বাপ্পি দূর ক্ষেতের আইল দেখতে দেখতে বললো,’একটা কঠিন সময় না আসলে আমরা প্রিয়জনকে প্রিয়জন হিসেবে বুঝতে পারিনা!সেই সময়টা আসলে সহজেই বুঝে যাই মানুষটা আমাদের কত প্রিয়!’
তটিনি বাপ্পির কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে তাকায়।এরপর বাপ্পির ঘামে ভেজা চাপা দাঁড়িতে হাত দিয়ে ঘাম মুছে বলে,’এত রোদে বসে আছি কেন আমরা?’
‘কারণ এরপর পুকুরে নেমে গোসল করবো’
‘আমি সাঁতার জানিনা’
‘আমি জানি!’
এই বলে বাপ্পি উঠে দাঁড়িয়ে তটিনিকে নিয়ে রিনিদের বাড়িতে না গিয়ে আসিফদের বাড়ির দিকে চললো।ঠিকানা একটা ছোট বাচ্চা ছোলেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছে।
তটিনি ওর হাত ধরে যেতে যেতে বলে,’আমরা ঐ বাড়িতে কেন যাচ্ছি?ওখানে তো এখন কেউ থাকার কথানা।বাড়ি ফাঁকা’
‘ফাঁকা বলেই যাচ্ছি!আসিফদের পুকুরে গোসল করে তারপর চলে আসবো রিনিদের বাড়ি’
‘আমরা একজনের মৃত্যুতে এসেছি!এরকম না করলেও হয়!’
‘এভাবে বলতে হয়না তটিনি!গ্রামে আমরা বারবার আসিনা।’
তটিনি আবারও বললো,’ভিজে জামাকাপড় বদলে পরবোটা কি?’
‘সব ভেবে রেখেছি!আসিফের পাঞ্জাবি পরবো আমি,আর তুমি আসিফের বোনের শাড়ী কিংবা জামা পরে নিবা’
এই বলে দুজনে আসিফদের টিনের গেট সরিয়ে ভেতরে ঢোকে।পুরো বাড়িটা নিশ্চুপ হয়ে আছে।কোথাও কোনো শব্দ নেই।
বাপ্পি মুখে হাসি ফুটিয়ে তটিনিকে নিয়ে সোজা পুকুরপাড়ে চলে আসে।পুকুরটাও ফাঁকা।তটিনি ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।
বাপ্পি শেষ সিঁড়িতে পা রেখে তটিনিকেও বললো পা রাখতে।তটিনি ধীরে ধীরে পা রাখে এরপর জয়ের হাসি দিয়ে বাপ্পির দিকে তাকায়।
‘শোনো!এখন আমার হাত ধরে এক পা এক পা করে নামবা।ভয় পেও না।নিচে আরও সিঁড়ি আছে!’
এই বলে বাপ্পি তটিনিকে টেনে নিচে নিয়ে আসে।একটু পর তটিনি হঠাৎ বাপ্পির হাত খাঁমছে ধরে দাঁড়িয়ে যায়।
‘কি হলো?ভয় পেলে?’
‘নিচে তো মাটি!সিঁড়ি নাই দেখছি!’
‘মাটি হলো আসল!কাদা মাটিতে পা রাখতে ভীষণ মজা।পা রাখো।কিছু হবেনা’
‘না না!যদি পোকা বের হয় ওটা থেকে?’
‘হবেনা।দেখোইনা ট্রাই করে’
বাপ্পির কথায় তটিনি চোখ বন্ধ করে পুকুরের মাটিতে পা রাখে।তার হাত পা কাঁপছে ভয়ে।বাপ্পি ওকে আরেকটু জ্বালাতে বললো,’সাপ!’
এটা শুনে তটিনি চট করে কাছে এসে বাপ্পির পায়ের উপর পা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলো ভয়ে।
বাপ্পি এটা কল্পনাও করেনি,সে ভাবলো তটিনি হয়ত উঠে চলে যাবে।
বাপ্পির ভেজা জামার উপর দিয়ে মুখ রাখতেই তটিনির শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো কিঞ্চিত। এর আগে এমনটা হয়নি।
বাপ্পি নিজেও তটিনিকে আগলে রেখেছে।অনেকক্ষণ এভাবে কেটে যাবার পর বাপ্পি তটিনিকে ধীরে বললো,’দম বন্ধ করো।ডুব দিব একসাথে’
এই বলে সে তটিনির হাত ধরে ১,২,৩ বলে একসাথে দুজনে ডুব দেয়।তটিনি ডুবে পানি খেয়ে নিছে অনেকটা।তার অভ্যাস নেই।তবে বাপ্পির আছে কারণ সে তার নানুর বাড়িতে গেলে গোসল পুকুরেই করতো।
দুই তিনটা ডুব দিয়ে কাশি দিতে দিতে তটিনি বাপ্পির হাত ধরে পুকুর ঘাটের উপরে চলে আসে অবশেষে।দুজনে সোজা আসিফদের বাড়িতে ঢোকে।গ্রামের দিকে এই একটা বিষয়!তারা ভাবে চোরে চুরি করবেনা।তাই শুধু ছিটকিনি দিয়ে আরেক বাড়িতে দৌড় দেয়।বাপ্পি মুচকি হেসে ছিটকিনি খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।
অনেক খুঁজে আসিফোর রুম পায় বাপ্পি,তটিনিও আসিফের বোনের রুমটা খুঁজে পেলো।দুজনে দুই রুমে ঢুকে এখন চেঞ্জ করছে।আসিফের বোন ছোট।তারা একটা জামাও তটিনির গায়ে লাগছেনা।মনে হয় জোর করেও পরা যাবেনা, এত টাইট!শেষে ভেজা জামায় সে রুম থেকে বেরিয়ে আসিফের মায়ের রুমে এসে হাজির হয়।উদ্দেশ্য সেখান থেকে একটা শাড়ী নিয়ে পরবে।এসে দেখে খাটের উপরে দড়ি টানানো টিনের চাল বরাবর। সেখানে সব জামাকাপড় টাঙানো।
তটিনি এই ভেজা শরীর নিয়ে খাটে উঠবেই বা কি করে!আর শাড়ী নিবেই বা কি করে!এইসব ভাবছিল আর শীতে কাঁপছিল।
ততক্ষণ বাপ্পির পাঞ্জাবি বদলানো হয়ে গেছিলো।সে তটিনিকে খুঁজতে এসে দেখে সে এই রুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে।
‘কি হলো তটিনি?এখনও জামা বদলালে না?’
‘কত উপরে শাড়ী।নাগাল পাচ্ছিনা তো!খাটে উঠলে তোষক ভিজে যাবে’
বাপ্পি দ্রুত বিছানায় উঠে দড়ি থেকে শাড়ী, ব্লাউজ সব নামিয়ে দিয়ে বললো,’আসিফের মা মাশাল্লাহ দিলে যে স্বাস্থ্যবান দেখলাম!ওনার ব্লাউজ তোমার গায়ে থাকবে তো?’
তটিনি ব্রু কুঁচকে বললো,’ঠাট্টা না করে আসিফের বোনের রুম থেকে সেফটিপিন খুঁজে আনুন!খুব তো বলছিলেন সব ম্যানেজ হবে!এখন আমি তো কোনো কিছুরই বিহিত দেখছিনা’
বাপ্পি মিটমিট করে হাসতে হাসতে আসিফের বোনের রুম খুঁজে বের করে সেখানে পিন খুঁজতে থাকে।বেশ অনেকক্ষণ পর সে পিন খুঁজে পায়!এরপর ছুটে এসে দেখে তটিনি শাড়ী পরে এখন পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
‘নিন ম্যাম,আপনার পিন’
‘যান এখন!’
বাপ্পি মুচকি হাসি দিয়ে বের হলো রুম থেকে।ওখান থেকে উঠানের দিকে যাবার পথে তটিনি তাকে ডাক দেয় আবার।সে থেমে আবারও আসলো ওখানে।তটিনি অসহায় মুখ নিয়ে চেয়ে বলে,’আমি পারছিনা পিন লাগাতে’
‘জানতাম!কিন্তু তুমিই তো বের করে দিলে’
এই বলে বাপ্পি কাছে এসে তটিনির পিঠে সেফটিপিনটা ঠিক করে লাগিয়ে দিলো।তটিনির ভেজা চুলগুলো ওর হাতে লাগছিল বারবার।বাপ্পির জন্য কাজটা এত সহজ ছিল না মোটেও।কাঁপা হাতেই কাজটা সারছে সে।এরপর দুজনেই বের হয়ে যায় ঘর থেকে।আগের মতন ছিটকিনি লাগিয়ে গেটের দিকে যাওয়া ধরতেই লিচু গাছটার তলা থেকে একজন বৃদ্ধার গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
ভয় পেয়ে ওরা দুজন থেমে যায়।ভয়ে ভয়ে বামে তাকায়।লিচু গাছ তলায় আসিফের দাদি বসে আছেন,এর আগেও ছিলেন।কিন্তু ওরা দুজনের একজনেও খেয়াল করেনি।দাদু ওদের হাত দিয়ে কাছে ডাকলেন।
বাপ্পি ভয়ে ভয়ে তটিনিকে সাথে নিয়ে ওনার সামনে এসে দাঁড়ায়।
বাপ্পিকে এতক্ষণ দেখে এবার তিনি তটিনিকে দেখছেন।
‘এই লম্বা করে ধলা হোলারে আঁই চিনি না তবে এই গোলগাল মেয়েটারে চিনছি।তুমি তটিনি না? ‘
‘জ্বী।আমাকে চিনলেন কি করে?’
‘সে অনেক কথা!এই ধলা ছেলেটা কে হয় তোমার?’
‘স্বামী’
‘ওহ তাহলে ঠিক আছে।আমি তো ভাবতাছি যুবক যুবতী দুইটা একা ঘরে ঢুকে এতক্ষণ কি করে!পায়ের ব্যাথা না থাকলে উঁকি দিয়ে দেখতাম।যাই হোক!তোমরা রিনিগো বাড়িত যাও নাই?’
‘গেছিলাম।গোসল করার জন্য এখানে এসেছি’
দাদি চশমা মুছতে মুছতে বললেন,’হ বুঝছি!জামাই বউ একসাথে গোসল করতে এতদূর আসলে!তোমাগোই সময়!এখন কত কি মন চাইবো!
কয়েক বছর পর একসাথে ভাত ও খাইতে মন চাইবোনা!যাই হোক যাও যাও।ঐ বাড়িতে এখন খাবার দিবে।দুপুরের খাবার খাইতে দেরি করিওনা’
চলবে♥