তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
হাতে হাত রেখে সেই পরিচিত মাটির পথটা ধরে তারা দুজন চলছে।গন্তব্য খুব একটা কাছে নয় তাও কেন যেন দুজনে হাঁটার গতি কমিয়েই হাঁটছে।যেন তারা চাইছে আজ দেরি হোক!
পথে কোনো মানুষ নেই।দুপাশে ডোবা নয়ত ক্ষেত।এভাবেই পথটা চলছে।তারা নিশ্চুপ হয়েও বেশ মনে মনে কথা বলছে।তটিনি তার ভেজা চুলগুলোর একটা পাশে হাত রেখে বুলিয়ে বাপ্পির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছিল আর মনে মনে বলছিল ‘কোনো এক কালে যে পাঞ্জাবিওয়ালার প্রেমে হাবুডুবু খেতাম আজ সেই পাঞ্জাবিওয়ালার পাঞ্জাবি পরিহিত সয়ং আমার স্বামী আমার সঙ্গে পথ চলছে!অনুভূতি কিরুপ হওয়া উচিত!’
আর বাপ্পি তটিনির হাতটাকে আরও আগলে ধরে পথ চলতে চলতে মনে মনে বলছিল,’যাকে প্রথমে ভাল লেগেছিল সেই মানুষটার চোখে আজ নিজের প্রতি ভাললাগা দেখতে পাওয়া কতটা সৌভাগ্যের?!”
প্রকৃতি যেন তাদের দুজনের মনের কথা বুঝে গেলো।হালকা বাতাসে গাছগুলোর হলুদ,খয়েরী রঙের পাতা সব দলে দলে ছিঁড়ে হেলেদুলে পড়তে লাগলো ওদের গায়ে!
সামনে তাকালে সেই পাতার ঝরে যাওয়ার দৃশ্য অদ্ভুত সুন্দর লাগে।তাও তারা সেই অদ্ভুত সৌন্দর্য্য দেখছেনা।কারণ তারা দুজনেই সেই অদ্ভুত সৌন্দর্য্য বহন করে চলছে।
সামনে সেই মাটির পথটি শেষ।তারপর পাকা রাস্তার শুরু।মাঝে একটা সাঁকো।দুই হাতের সাঁকো।বেশি তাড়া থাকলে সাঁকোর তলা দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।নিচে খুব একটা পানি নেই।পায়ের গোড়ালি ডোবা পানি!
দুজনে তাকিয়ে অনেকক্ষণ ভাবলো!সাঁকো দেখে মনে হয় পা রাখলেই চিটপটাং হয়ে ভেঙ্গেচুরে যাবে।
অনেক ভেবে বাপ্পি বলে,’নাও নিচে নামো।এই সাঁকোর উপর ভরসা করে তোমায় চড়ানো যাবেনা।পরে হাঁড়গোড় সব ভেঙ্গে ফেলবে’
তটিনি মাথা নাড়িয়ে নিচে নামতেই হোচট খেয়ে গিয়ে পড়ে বাপ্পির বুকে।
বাপ্পি দাঁত কেলিয়ে বললো,’কেমন একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ফিলিংস্ হচ্ছে’
তটিনি মাথা তুলে কোমড়ে হাত রেখে বললো,’সিনেমাই যদি হয় তবে কোলে নিন’
‘নিচে দেখেছো?কাদা সব।তোমায় কোলে নিলে লিফটের মতন করে কাদাতে দেবে যাবো।তার চেয়ে বরং হাতটি ধরো আমি তোমায় উড়িয়ে নিয়ে যাই’
এই বলে বাপ্পি তটিনিকে নিয়ে সেই দুইহাতের সাঁকোর তলা পার হয়ে গেলো।
——
রিনির জন্য খাবার নিয়ে আসছে আসিফ।রিনি মাথা টিনের বেড়ায় লাগিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল।এই জানালার দ্বারে বসে মা কত কোরআন শরীফ পড়েছেন!ছোটকালে রিনি ততক্ষণ মায়ের পাশে বসে থাকতো যতক্ষণ মা কোরআন পাঠ করতেন।আর আজ সেই মা নেই।কোরআন শরীফ আছে আগের জায়গায়।চোখ মুছে রিনি বিছানা ছেড়ে গেলো অজু করতে।সে কোরআন শরীফ পড়বে।
অজু করে এসে বসেও গেলো।আসিফ খাবার নিয়ে এসে দেখে রিনি কোরআন শরীফ পড়ছে।তাই আর ডাকেনি।খাবারটা নিয়ে সে বাহিরে গেছে রিনির ভাইকে খুঁজতে।সে এতক্ষণ বাবাকে আগলে রাখলেও হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।তাকে খুঁজে বের করা জরুরি।এ বয়সের তরুণ!এত বড় ধাক্কা সইতে না পেরে কি না কি করে বসবে!তাছাড়া শুরু থেকেই কেমন আধমরা ছিল।যারা এ সময়ে কাঁদেনা তারাই ভুলভাল কাজ করে বসে।তাদের বিশ্বাস নেই।সেই ভয়ে আসিফ হন্ন হয়ে রিনির ভাইকে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে।
কারিম মায়ের কবরের কাছে এসে কাঁদছিল।অথচ এ ছেলেটা শুরু থেকে এক ফোটা চোখের পানিও ফেলেনি।কারিম কখনওই কাঁদেনা।আজ ও কাঁদতোনা কিন্তু কি করবে!আজ যে সে সর্বহারা হয়ে পড়েছে।যার মা হারায় সেই তো আসল সর্বহারা!সে কাঁদবেনা তো আজ কে কাঁদবে!
আসিফ ওর কাছে এসে কাঁধে হাত রাখলো।ছেলেটা সব কিছু ভুলে চিৎকার করে কাঁদছে এখন ।মায়ের কবরের কাছেই মসজিদ।হজুরেরা সেখানে বসে থেকে ওকে দেখছিলেন।
অথচ তারাই এই ছেলেটাকে আজ অবধি হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকতে দেখেছেন।সেই ছেলেটাই এখন চিৎকার করে কাঁদছে।দৃশ্যটা খুবই নতুন এবং বেদনাদায়ক তাদের কাছে।
——-
বাপ্পি আর তটিনি ফিরতেই আসিফের মা ব্যস্ত হয়ে তাদের জন্য প্লেট রেডি করছিলেন।তটিনি কাছে এসে বললো,’এত ব্যস্ত হইয়েন না। আমরা পরে খেতে পারবো’
‘আরেহ না কি বলো!’
এই কথা বলে তিনি তটিনির গায়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।তটিনি ভীষণ লজ্জা পেলো।কারণ সে তো উনারই শাড়ী পরে আছে!
বাপ্পি উঠানো হাঁটাচলা করছিল সেসময় আসিফ কারিমকে নিয়ে উঠানে আসতেই থেমে যায়।বাপ্পির গায়ের পেস্ট কালারের পাঞ্জাবিটা তার খুব চেনা মনে হলো।অনেকক্ষণ দেখার পর মনে আসলো এটা তো তারই।গলার কাছে হলুদ দাগ আছে।তার মানে এটা শতভাগ তারই পাঞ্জাবি!
আসিফকে ওরকম করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাপ্পি হেসে বলল,’আসলে হয়েছে কি!’
‘বুঝেছি!সমস্যা নেই।ভালই লাগছে তোমাকে’
এটা বলে আসিফ কারিমকে সঙ্গে করে বাড়ির ভেতর চলে যায়।বাপ্পি জিভ কামড়ে পেছনে মুড়তেই দেখে তটিনি বাড়ির একটা রুম থেকে জানালা দিয়ে ওকে ডাকছে খাওয়ার জন্য।
——-
রিনি কোরআন শরীফ রেখে বিছানা থেকে নামতেই আসিফের গলা শুনে জলদি বাহিরের রুমের দিকে গেলো।আসিফ কারিমকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সেখানে।রিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
“যে মানুষটাকে এতদিন আমি চিনতাম আর আজ শুরু থেকে যে মানুষটাকে দেখছি তাদের মাঝে কত তফাৎ।!
এই মানুষটাকি আমাকে সবসময় দূরে ঠেলে দিতো!এই মানুষটাকি জোর গলায় বলতো আমি রিনিকে পছন্দ করিনা!আমি বাধ্য হয়ে তাকে বিয়ে করেছি!বাধ্য হয়ে করা বিয়েগুলো কি এভাবে পরিণাম পায়?’
এই ভেবে রিনি ডানের খোলা রুমটার দিকে তাকায়।বাপ্পি তটিনিকে রুই মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছে আর তটিনি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
“”””আসলেই!কিছু পরিণাম খুব সুন্দর হয়।””””
আসিফ হাত ধুয়ে এসে দেখে রিনি তটিনি আর বাপ্পিকে দেখছে।
তার চোখ মুখ দেখে মনে হয় এখনই পড়ে যাবে।আসিফ দ্রুত ওর হাতটা ধরে বলে,’অনেক হয়েছে।এবার কিছু খাবি।চল”
‘খিধে নেই।আঁর কথা বাদ দেন!আন্নে নিজেও তো কিছু খান ন’
আসিফ কিছু বলেনা।রিনিকে জোর করে রুমে নিয়ে এসে বসিয়ে ওর জন্য খাবার আনতে চলে যায় তার মায়ের কাছে।তিনি সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলেন।
‘ বাবা আজ থাকবি?’
‘হ্যাঁ।আরও দুই/তিনদিন থাকবো’
‘তোর পরীক্ষা না?’
‘ওসব পরে হবে।আমার এখানে থাকা জরুরি’
‘রিনির খেয়াল রাখিস!যাবার সময় ওরে নিবি?’
‘না নিলে এখানে থেকে নিজের খেয়াল রাখা ভুলে যাবে।নিয়ে যাব ভাবছি।সে যাবে কিনা এটাও তো কথা’
——
আসিফ প্লেট নিয়ে নিজে লোকমা বানাতে বানাতে বললো,’আমি পরশুদিন চলে যাবো।তুই যাবি নাকি থাকবি এখানে?’
‘বাবা তো একা!কেমনে যাই?’
আসিফ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে লোকমা তুলে ধরে রিনির মুখে।আসিফ চলে যাবার কথা ওঠায় রিনির চোখ ছলছল করে উঠলো।সব রেখে আসিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে।ওর বুকে মাথা ঠেকিয়ে ধীর গলায় বললো,’আঁরে থুই যাইয়েন না।’
আসিফ প্লেট রেখে বাম হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,’পরীক্ষা যাক!গেলাম না!’
——–
বাপ্পি আর তটিনি রাত হতেই চলে এসেছে ঢাকায়।সকলে বলেছিল একদিন থাকতে কিন্তু সেখানে জায়গার অভাব বলে তারা থাকেনি।এত এত মানুষ তারাই বা থাকবে কই!আসিফদের বাড়িও ভর্তি রিনির ফুফু,মামিদের দিয়ে।
তাই ওরা দুপুরে খাবার খেয়েই রওনা হয়েছিল।আসতে আসতে রাত বারোটা বেজে গেছে।বুশরা জেগে ছিল দরজা খুলে দেবে বলে।ওরা আসায় সে দরজা খুলে হাই তুলতে তুলতে চলে গেছে।
তটিনী রুমে ঢুকা ধরতেই বাপ্পি বলে ওঠে’তটিনি আমার খুব খিধে পেয়েছে!’
তটিনি সঙ্গে সঙ্গে থেমে পেছনে তাকায়।সে কি করবে সেটাই ভাবছিল হঠাৎ মনে হলো ফ্রিজে খাবার থাকতে পারে।তাই ছুটে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখে কিছু নাই।বাপ্পি সেসময় চেয়ার টেনে বসে বললো,’আজকে শনিবার!এই দিনে খাবার থাকেনা ফ্রিজে।রাতের শেষ খাবারটা দারোয়ান নিয়ে যায়।তার বউ শনিবার বাপের বাড়িতে থাকে বলে রাতে খাবার পাঠায়না’
তটিনি ফ্রিজ বন্ধ করে কোমড়ে আঁচল গুজে বলে,’কি খাবেন বলুন’
‘শুনলাম তুমি শুধু ম্যাগী নুডুলস বানাতে পারো’
‘এই কথা কে বললো?’
‘আসিফ’
এই বলে বাপ্পি হাসছে মিট মিট করে।তটিনি মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।বাপ্পি ও সেখানে এসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বলে,’আমি কিন্তু নুডুলস কম খাই।তবে তুমি বানালে বেশি খেতে পারবো’
‘থাক কষ্ট করতে হবেনা’
‘তাহলে কি বানাচ্ছো?’
‘খুব মজাদার!খেলে খুশির ঠেলায় পাগল হয়ে যাবেন’
চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪০
লেখনীতে-আফনান লারা
.
রাতটা রিনির যেন আরও খারাপ যাচ্ছে এবং যাবেও।চোখ বুজলেই মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে।রুমে থাকা তার জন্য জঘন্যতম কাজ বলে মনে হচ্ছে এখন।কোনো কিছু করেও শান্তি খুঁজে পাচ্ছেনা রিনি।
আসিফ সারাদিন পাগলের মতন ছুটেছে বলে এখন ক্লান্তিতে একসের হয়ে ঘুমাচ্ছে রিনির পাশেই।রিনি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসেই আছে,কোনো আওয়াজ করছেনা,আসিফকে ডাকার সাহস এবং ইচ্ছা তার নেই।চোখের সামনে ছেলেটাকে ব্যস্ত দেখেছে আজ সারাটাদিন।
মা একদিন বলেছিল,’শুন রে রিনি!জামাই যেমনই হোক!সে তোর জামাই।খুব আদরে রাখবি।আর আসিফ বাবাকে তো আমি চিনি।সে ছাড়ার মতন ছেলেনা।একটু আলাদা কিন্তু খুব করে ধরে রাখতে জানে।তার হাত শক্ত!মন শক্ত।ছোটকাল থেকে চিনি তো!’
আজ মায়ের কথাগুলো কেমন টেপ রেকর্ডারের মতন বেজে যাচ্ছে।চোখের পানি মুছে আসিফের পিঠে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে রিনি।
ওরা যে বিছানায় শুয়ে আছে সেটা বেশ পুরোনো খাটের বলে অনেক নড়ছিল।
আসিফ অল্পতেই জেগে গেছিলো কিন্তু কিছুই বলেনি।রিনি বলছেনা তাহলে সে কি বলবে!
এখন যখন রিনি ওর পিঠে মাথা ঠেকালো তখন সে মনে মনে স্বস্তি অনুভব করলো।এতক্ষণ নেহাত ভাবছিল রিনি আসলে বসে কি করে!
———
তটিনি নুডুলসের একটা পাকোড়া তৈরি করে দিচ্ছে বাপ্পিকে। বাপ্পি তাকের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তটিনির রান্না করা দেখছিল।তটিনি চুলে খোঁপাই করেছিল কিন্তু কাঠি দিতে ভুলে গেছে।আর তাই তার মাথা নাড়াচাড়ার কারণে খোঁপাটা খুব সহজে খুলে গেলো।এবার শুরু হলো ঝামেলা।এদিকে সে এক হাত দিয়ে চুল সামলাতে পারছেনা।মনে মনে ভেবেছিল সিনেমার মতন করে বাপ্পি বুঝি তার চুল সামলে দিবে।এই ভেবে তটিনি মিটমিট করে হাসছিল।
কিন্তু বাপ্পি কি করলো! সে তটিনির খোলা চুলকে আরও এলোমেলো করে দিয়ে পালিয়ে গেছে।
ওর মা একবার বলেছিল বাপ্পি ঝাল খেতে পারেনা।বাপ্পির এরুপ কাজে তটিনির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। সে ইচ্ছামত ঝাল দিয়ে পাকোড়াটা বানিয়ে নিয়ে সামনে রেখেছে বাপ্পির।
বাপ্পি খিধায় বসেছিল অনেকক্ষণ। গরম গরম পাকোড়া আর তার সাথে টমেটো সস দেখে আর লোভ সামলাতে না পেরে গোটা একটা মুখে পুরে চিবানো শুরু করে সে।
তটিনি দাঁত কেলিয়ে আছে বাপ্পির রিয়েকশান দেখার জন্য।কিন্তু বাপ্পি সবটা পাকোড়াই খেয়ে নিয়েছে চুপচাপ।কোনো রিয়েকশান তার নেই।তটিনি হা করে তাকিয়ে থেকে ধপ করে ওর সামনে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ঝাল নেই?’
বাপ্পি মুচকি হাসলো,ওমনি তার চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়লো তটিনির হাতে।সে হেসে বললো ‘বাবা বলেছে নতুন বউয়ের হাতের প্রথম রান্না যাই হোক!খুব আনন্দ করে খাবি।তুমি তো জানো আমি বাবার কথা শোনা ছেলে’
তটিনি হাত দিয়ে বাপ্পির চোখ মুছে দিয়ে বললো,’আপনার বাবা বলেছে বলে এটা করেননি আপনি!আমায় পাগলের মতন ভালবাসেন বলেই এখন এই ঝাল দেয়া পাকোড়া সবটা খেলেন’
বাপ্পির চোখ সেই আবারও ভিজে গেলো।তটিনি ঠিক তার মনের কথা জেনে গেছে আজ,পড়তে পেরেছে।আসলেই বাবা এই কথা বলেননি!সে বানিয়ে বললো।
তটিনি হঠাৎ এগিয়ে এসে বাপ্পির গলা জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।এরপর চোখ বুজে বললো,’আই এম সরি!আর কোনোদিন ঝাল দিব না’
‘ঝাল দিবে!অবশ্যই দিবে,তা নাহলে যে এই জড়িয়ে ধরার দেখা মিলবেনা’
তটিনি আরও আবেশে বাপ্পির খুব গভীরে চলে গেলো।বাপ্পি ডাইনিংয়ের চেয়ারে বসা ছিল।তটিনির ভারে চেয়ার পিছিয়ে পড়ে যাওয়া ধরলো ওমনি বাপ্পি এক হাতে দেয়াল ধরে ফেলে তাকে এবং তটিনিকে আটকে ফেলে পড়ে যাওয়া থেকে।
সেইদিন সন্ধ্যাবেলা বকুল আপু এসেছিলেন।মাকে নিয়ে ডায়াবেটিস হসপিটালে যাবার জন্য।আপুর ও ডায়াবেটিস। দুজনে একসাথেই যান প্রতিবার।হাসপাতালের কাজ শেষে এ বাসাতেই থেকে যান তিনি।
রাত করে খুব পিপাসা লাগলো বলে তিনি পানি নিতে রুম ছেড়ে বের হতেই দেখেন ফ্রিজের উপরে জ্বলা সবুজ ড্রিম লাইটের আলোয় দুজন মানুষ এক চেয়ারে হেল দিয়ে বসা।বকুল আপু একটু এগিয়ে আলো জ্বালাতেই বাপ্পি ভয় পেয়ে দেয়াল থেকে হাত ছেড়ে দিলো আর ওমনি দুজনে ঠাস করে মেঝেতে পড়ে যায়।
আপু কোমড়ে হাত রেখে বললেন,’এইসব করিস রাতদুপুরে??তোদের জন্য রুম নাই?গোটা এক ডিসিমের মতন দেখতে একটা রুম বাবা তোকে বানিয়ে দিয়েছে।সাউন্ডপ্রুপ দরজা আছে তাও তোরা এগুলা করিস!আমার ছোট ছেলেটা এইসব দেখলে কি শিখতো?’
বাপ্পি গলায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে মেঝেতে শুয়ে আছে।তটিনি ব্যাথা পায়নি, সে বাপ্পির বুকের উপরই ছিল।বকুল আপুর কথায় লজ্জায় লাল হয়ে সে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে।বকুল আপু কাছে এসে হাতের বোতলটা টেবিলে ঠাস করে রেখে বললেন,’আপনাকে কি নিমন্ত্রণ করতে হবে উঠার জন্য?’
‘আহঃ বুবু গলায় ব্যাথা পেয়েছি।তোমাদের নতুন বউকে বলো টেনে তুলতে।কাল মনে হয় অফিস যেতে পারবোনা’
বকুল আপু তটিনির দিকে তাকাতেই তটিনি ব্যস্ত হয়ে বাপ্পিকে উঠতে সাহায্য করলো।
দুজনেই এখন চোরের মতন তাকিয়ে আছে আপুর দিকে।বকুল আপু পানি ঢেলে বোতল ভর্তি করে যাবার সময় লাইটের সুইচে হাত রেখে বললেন,’কিহ যাচ্ছ না কেন?যাও রুমে যাও দুজন!বিয়েরদিন আলাদা ঘুমায় আর বিয়ের কয়েকদিন পর একেবারে ডাইনিং রুমেই!!!’
বাপ্পি মাথায় হাত দিয়ে চলে গেছে।তটিনি লজ্জায় একেবারে ফ্রিজ হই গেছে। এত লজ্জা এর আগে কোনোদিন পায়নি।রুমে এসে বাপ্পি যখন দরজা লাগালো, তটিনি ওর সামনে এসে বললো,’আপুকে দেখে ধপাস করে পড়লেন কেন শুনি?’
‘নিজের ভার,তোমার ভার,চেয়ারের ভার সব একসাথে ধরতে পারা কঠিন ছিল!তাছাড়া না পড়লেও বুবু তো আমাদের ঐ অবস্থায় দেখলোই’
তখনই আবারও দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ আসলো।বাপ্পি এসে দরজা খুলতেই বুবু ওর হাতে গরম তেলের বাটি ধরিয়ে দিলেন। তারপর বললেন,’তটিনি!স্বামীর গলায় মালিশ করো!তোমার জন্য আজ সে এত ব্যাথা পেলো’
তটিনি মাথা নাড়ায়।উনি চলে যাবার পর বাপ্পি বাটিটা টেবিলের উপর রেখে আবার দরজা লাগাতে লাগাতে বলে,’তুমি ঘুমাও।অনেক রাত হয়েছে।আমি পারবো তেল লাগাতে’
তটিনি বাটিটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে বললো,’দিন!আজ আমার ইচ্ছে আর মন দুটোই আছে।আজকের মন আর বিয়ের পরেরদিনের মনে তফাৎ প্রচুর’
বাপ্পির মুখে হাসি ফোটে।গায়ের আসিফের সেই পাঞ্জাবিটা খুলে তটিনির সামনে বসে সে।তটিনি হাতে গরম তেল ঘঁষে বাপ্পির গলায় মালিশ করছে আর বাপ্পি মাথা নিচু করে বসে পা দোলাচ্ছে।
‘আচ্ছা তখন জড়িয়ে ধরলে কেন?’
‘কেউ কাঁদলে তারে জড়িয়ে ধরতে হয় এতে করে তার কান্না থামে’
‘আর কাকে ধরছিলা?’
‘যদি বলি আসিফ ভাইয়াকে ধরছিলাম?’
‘বিশ্বাস করিনা।কারণ তুমি আজ যে জড়িয়ে ধরলে আমায় তার আগাগোড়া কিছুই হয়নি।জড়িয়ে ধরা জানতে হয়।আর যতদূর বুঝলাম মানুষ এসব বোকামি প্রথমবারই করে।তুমি সেই বোকামিটা আমাকে দিয়ে শুরু করেছো’
তটিনি মিটনিট করে হাসছে আর মালিশ করছে।বাপ্পি পা দোলাতে দোলাতে বললো,’আবার যদি কাঁদি।ধরবে?’
——–
‘রিনি?’
‘জাগি রইছেন?’
‘কাউকে মন ভাঙ্গা নিয়ে বসে থাকতে দেখে নিজে কি করে ঘুমাই?’
‘আঁই এককারি হত্তে হই গেছি’
[আমি বড্ড একা হয়ে গেছি]
‘আমি আছি রিনি!সবসময়।আজ থেকে মন খারাপ হলেই আমার কাছে বলবি।শেয়ার করবি।আমি চট করে ভাল করে দিবো।এতদিন যত কিছু বলে থাকিনা কেন ওসব মনে নিস না।আমি তোকে সেইসব দিবো যা তোর প্রাপ্য তাও নিজেকে একা মনে করিস না কখনও’
রিনির চোখ ভিজে গেলো আরও একবার।আসিফ টের পাচ্ছে বেশ তাও কিছু বলেনি।কাঁদতে দিলো রিনিকে।কাঁদুক।এরপর আর কখনও সে রিনিকে কোনো কিছুতে কাঁদতে দেবেনা।শপথ করেছে।
——-
তটিনি বাটি নিয়ে অন্ধকারে আসলো রাখতে এরপর রান্নাঘরের ভেসিনে হাত ধুয়ে রুমে ফিরবে।তটিনির দেরি হচ্ছে বলে বাপ্পি নিজে গেলো দেখতে সে কোথায়।
তটিনি তখন ফিরছিল। ওমনি অন্ধকারে দুজনের জোরেশোরে ধাক্কা লেগে গেলো।বকুল আপু তখনও জেগে ছিলেন।এত জোরে আওয়াজ শুনে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে আলো জ্বালাতেই দেখেন বাপ্পি আর তটিনি একজন আরেকজনকে ধরে উঠাচ্ছে।
‘এই তোমাদের আজ কি হলো বলো তো!কি শুরু করছো এসব??’
চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪১
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বকুল আপুর কথা শুনে তারা দুজন বোবা হয়ে গেলো। কোনো কথা নেই শুধু ড্যাবড্যাব করে আপুকে দেখে চলেছে।যেন এর আগে এই মানবীকে তারা দেখেনি।
মাথায় মোটা বেনি করা,গায়ে সুতির শাড়ী।কানে ছোট্ট সোনার কানের দুল।গলায় চিকন একটা সোনার হার আর হাতে দু জোড়া বালা।যেন বাপ্পির মায়ের জোয়ান ভার্সন।
বাপ্পি বকুল আপুর ছায়ায় মাকে দেখছিল আর তটিনি দেখছিল তার মাকে।তার মাও এরকম রণচন্ডী রুপ ধারণ করতেন।
ওদের দুজনকে এরকম চুপ থাকতে দেখে বকুল আপু চলে গেলেন,যাবার সময় কেবল বলে গেলেন আর একবার এরকম কান্ড দেখলে দুটোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়া হবে।
আপু যেতেই তটিনি বাপ্পিকে ধীরে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,’আপনার জন্য আমাকে কতবার করে লজ্জা পেতে হলো।আমি এসেছি একটা কাজে আবার আপনি আসতে গেলেন কেন?’
‘তুমি এসেই হারিয়ে গেছো তাই দেখতে এলাম কিছু হলো কিনা’
তটিনি বিড়বিড় করতে করতে রুমে ফিরে আসে। বাপ্পি ও পিছু পিছু আসলেও বিয়ের আগের তটিনির সেই অগ্নি রুপ দেখে সে আর কোনো কথা বলেনি।শুধু কানিয়ে কানিয়ে দেখছিল তটিনি করে টা কি।
সে দেখলো তটিনি বিছানায় হাত বুলিয়ে উঠে বসে আছে কিন্তু ঘুমাচ্ছেনা।অথচ তখন রাত আড়াইটা বাজে।এর মানে দাঁড়ায় সে কিছু বলবে আর নয়ত কিছু একটা করতে চায়।
বাপ্পি রুমের আলো নিভিয়ে ওর পাশে এসে নিজেও বসে থাকে।
নিরবতা বিধ্যমান।বাপ্পি তার হাতটা নিয়ে তটিনির পিঠের উপর দিয়ে খাটের যে স্ট্যান্ড আছে তাতে লাগালো।তটিনি টের পেয়েছে তাও কিছুই বলেনি শুধু একটু নড়ে উঠেছে সে।
বাপ্পি কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু সে বলার আগেই তটিনি একটু একটু করে ওর সাথে লেগে বসে পড়ে।বাপ্পি মাথা ঘুরাতেই তটিনির মাথার সাথে ধাক্কা খায়।তটিনি লম্বা করে পা দিয়ে বাপ্পির পায়ে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বলে,’মন ছুঁয়েও কিছু মানুষ শরীর ছুঁতে পারেনা….
আর কেউ!মন ছুৃয়েই শরীরটা ছোঁয়ার অধিকার নিয়ে নিতে পারে!
তাহলে কিছু যারা মন ছোঁয় তারা কেন শরীর ছুঁতে পারেনা?’
বাপ্পি নিজের পা দিয়ে তটিনির পায়ে এবার নিজেও একটা খোঁচা দিয়ে বললো,’যার মন ছোঁয় সে মানুষটির মন অন্য কোথাও বেঁধে থাকলে সেই মন ছুঁয়েও শরীর ছোঁয়া যায়না!মন বলে দেয় এই সেই শরীরটা যাকে তুমি মনে জায়গা দিচ্ছো ! কিংবা নিয়তি বলে দেয় ‘
তটিনির চোখের কোণায় পানি এসে জমে যায় বাপ্পির কথায়।কোনো কিছু আর না ভেবে সে উঠে বাপ্পিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তার চোখ দুটো বাপ্পির খালি গলায় গিয়ে ঠেকে।তার চোখের ফোটা ফোটা অশ্রু বাপ্পির গলা ভিজিয়ে দেয়।বাপ্পি নিজেও শক্ত করে ধরে তটিনিকে।
‘আর আপনি সেই মানুষ যার জন্য আমি যাকে মনে ধরেছিলাম তাকে ছুঁতে পারিনি!কারণ আপনি…’
‘হ্যাঁ!’
———–
সকাল সকাল বকুল আপু বাপ্পির রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,’সাতদিনের বেশি হয়ে গেছে।এখন আর তোমরা নতুন না!একটু হলেও পুরাতন।সুতরাং পড়ে পড়ে এত ঘুমাতে হবেনা।বিশেষত নতুন বউকে এত ঘুমাতে হবেনা।বের হও!বাপ্পি অফিস যাবিনা?’
বকুল আপুর চেঁচামেচি শুনে তটিনি লাফ দিয়ে উঠে বসে।বাপ্পি অন্যদিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে।তটিনি দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে গিয়ে দরজা খোলে।বকুল আপু ভেতরে বাপ্পিকে ঘুমাতে দেখে নিয়ে এইবার তটিনিকে দেখলেন।
তটিনি দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।
বকুল আপু ভ্রু কুঁচকে বললেন,’যাও গোসল করে আসো।আর এই উজবুকটাকেও গোসলে পাঠাও’
তটিনি কপাল কুঁচকে বললো,’এত সকালে গোসলের কি দরকার!দুপুরে করলে হবেনা?’
‘হাসবেন্ড ওয়াইফকে সকাল সকাল গোসল করতে হয়। এটা আর কয়বার শেখালে তোমার মাথায় ঢুকবে?’
তটিনি জিভ কামড়ে পেছনে মুড়লো।তারপর মনে করলো কাল রাতে শুধু জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল দুজন।এইসব বকুল আপুকে কে বোঝাবে!
——–
বেশ কিছু সময় পর বাপ্পির অফিসের বসের কল আসায় বাপ্পির ঘুম ভাঙ্গলো।ঝাপসা চোখে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরতেই বসের এক ঝাড়িতে তার ঝাপসা চোখ পরিষ্কার হয়ে গেলো।চট করে উঠে বসে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সাড়ে দশটা বাজে।থতমত খেয়ে গলায় হাত দিয়ে সে বললো,’সরি বস!আসলে আমি না কাল পড়ে গিয়ে গলায় ব্যাথা পেয়েছি।আজ অফিসে আসা যাবেনা’
‘পড়ে গিয়ে মানুষ হাতে পায়ে ব্যাথা পায়।আর তুমি গলায় ব্যাথা পেয়েছো?’
‘ঐ আসলে এলোমেলো হয়ে পড়েছি তো!’
‘অদ্ভুত!তোমার মতন দেখি রাতুলের ও এক অবস্থা।নতুন বিয়ে করেছে পাঁচদিন হলো।কাল এসে বলছে হাতের তালুতে ব্যাথা পেয়েছে মশা মারতে গিয়ে,, বুঝি বুঝি!তোমাদের এই সময় আমিও পার করে এসেছি।বিয়ের পর এরকম উল্টা পাল্টা জায়গায় ব্যাথা হওয়াটাই স্বাভাবিক।যাই হোক!রেস্ট নাও।কাল মিস দিতে পারবেনা ‘
বাপ্পি ফোন রেখে আবার শুয়ে পড়তেই তটিনি রুমে আসলো।তার ভেজা চুল।গোসল করেনি। শুধু শুধু পানিতে চুল চুবিয়ে নিয়েছে।বাপ্পির কাছে এসে ভেজা চুলের ঝাঁকুনি দিয়ে বাপ্পিকে জ্বালিয়ে বললো,’বকুল আপুর অর্ডার। শুধু জড়িয়ে ধরলেও গোসল করতে হবে’
বাপ্পি মাথা তুলে হাত দিয়ে নিজের পিঠের উপর তটিনির ভেজা চুলের পানি মুছতে মুছতে বললো,’তুমিও গোসল করেছো?এই সকালে?’
‘চুল ভিজিয়ে গোসেলের একটিং করতেছি। আপনি চাইলে আমার এইই টিপস ফলো করতে পারেন”
বাপ্পি উঠে বসে তটিনির হাত টেনে উল্টে পাল্টে বললো, ‘কেমনে পারে এত ভাঁওতাবাজি ‘
——–
কাল যে বাড়িটা কান্নায় হাহাকারে ভর্তি ছিল আজ সেই বাড়িটা একেবারে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।মাঝে মাঝে ঘরের একেক কোণা থেকে হুহু করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
রিনি আজ আর কাঁদেনি,মনমরা হয়ে ফুফুদের জন্য চা বানাচ্ছে।ওর ফুফু তিনজন।তিনজনেই বেশ বৃদ্ধা।একেবারে পানিটাও ঢেলে দিতে হয়।আর সেই ফুফুদের জন্যই সে চা বানাচ্ছে।আসিফ সকাল সকাল তার বাড়িতে গেছে।কাল বাবা মায়ের সাথে একটা কথাও বলা হয়নি এত ব্যস্ততায়।তাই সকালে সময় পেয়ে সে ওদিকে গেছে।বাড়ি তো বেশি দূরেনা।যাবার সময় অবশ্য রিনিকে বলেও গেছে।বলার পরই রিনির মনটা কেমন যেন আরও বেশি উদাস হয়ে গেলো।
যা চুপচাপ ছিল,এখন আরও বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে।মন বলছে একটিবার আসিফ ফিরে আসুক,আর কোনোদিন তাকে চোখের বাহিরে হতে দিবেনা
———
বাপ্পি তটিনির মতন করে শুধু চুল ভিজিয়ে নাস্তা করতে এসেছে।বকুল আপু ওর চুল দেখলেন এরপর ওর হাতটা ধরে বললেন,’গোসল করেছো?’
‘হ্যাঁ।দেখোনা ভেজা চুল?’
‘তাহলে তোমার হাত ওমন শুকনো ক্যাকটাসের মতন হয়ে আছে কেন?গোসল করলে শরীর যেমন ঠাণ্ডা থাকে,নরম থাকে,সেরকম না কেন?’
বাপ্পি থতমত খেয়ে এদিক সেদিক চেয়ে তটিনিকে খুঁজলো।ওমনি বকুল আপু বললেন,’তাকে খুঁজোনা!সেও তোমার মতন বাটপারি করে শুধু চুল ভিজিয়ে এসেছিল।আমি ঠিক ধরে ফেলেছি, যেমনটা তোমায় ধরলাম!’
‘আপু তুমি তুমি করতেছো কেন?’
‘তো কি করবো?আর মুখ রেখেছিস?বউ জামাই সকালে গোসল করেনা?এই তোরা এত খবিশ কেন রে?’
বাপ্পি চোরের মতন নাস্তা খেতে বসা ধরলো ওমনি বকুল আপু এক ধমকে ওকেও পাঠিয়ে দিলেন রুমে, তটিনি সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছে।সত্যিকারের গোসল।বাপ্পিকে দেখে রাগে ক্ষোভে বললো,’কিছু না করেও এই সকাল সকাল!!’
‘আমাকে রাগ দেখিয়ে লাভ কি!আমিও এসেছি গোসল করতে।আমিও ভুক্তভোগী ‘
চলবে♥