#তোমাতে_সূচনা_তোমাতেই_সমাপ্তি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#সূচনা_পর্ব
‘ আপনি যে গু’ণ্ডা সেটা আমার এ কদিনে ভালোই বোঝা হয়ে গেছে, তা যখনই এভাবে জ’খ’ম হন তখনি কি আপনার লোকেরা এভাবে ডাক্তার ধরে এনে আটকে রেখে আপনার সেবা করায় যেভাবে আমায় ধরে এনেছেন?’
রোজার কথা শুনে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকা পুরুষটি কেমন এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো, পুরুষটির পেটের ডানপাশের ক্ষতস্থানটা ড্রেসিং করতে করতে রোজার চোখ পড়লো তার চোখে। তৎক্ষণাৎ চোখ ঘুরিয়ে নিলো লোকটি, রোজা বুঝলো প্রশ্নের উত্তর সে পাবে না। গত তিনদিনে এমন অনেক প্রশ্নই করেছে, কিন্তু উত্তর পায়নি। রোজার আর ইচ্ছেও নেই কিছু জানার, এই বন্দীমহল থেকে আজই বের হয়ে যাবে বলে ঠিক করেছে ও। ড্রেসিং শেষে ব্যান্ডেজ করে দাঁড়ালো রোজা, কাঠ কাঠ কণ্ঠে জানালো…
‘ আপনি এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন, যদিও আপনার মতো মানুষদের সুস্থতা কামনা করা উচিত নয় তবুও ডাক্তার হিসেবে বলছি। ওষুধগুলো সময় করে খাবেন আর বিশ্রাম করবেন সাতদিন, সুস্থ হয়ে যাবেন ‘
কথাগুলো বলে দ্রুত বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যে দরজার কাছে আসতেই রোজার রাস্তা আটকে দাঁড়ায় সেই লোকটি যে ওকে ধরে এনেছিলো…
‘ ওর কী অবস্থা এখন?’
‘ যা বলার আপনার বন্ধুকে বলে দিয়েছি, তার থেকে শুনে নেবেন। এবার আমাকে বাড়ি যেতে দিন ‘
রোজার কথা শুনেও লোকটি সরলো না, এবার ভীষন রেগে গেলো রোজা। গত তিনদিন ধরে এখানে আটকে রাখা হয়েছে ওকে, বাড়িতেও কিছু জানাতে পারেনি…
‘ আজব তো, আপনার বন্ধু এখন ঠিক আছে তাহলে আমাকে আবার কেনো আটকাচ্ছেন?’
এবার লোকটি সরে দাঁড়ালো, রোজা আর দেরী না করে দ্রুত বের হলো। ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো ওই বাড়ি থেকে, যেখানে প্রায় বাহাত্তর ঘন্টা দমবন্ধ অবস্থায় কেটেছে মেয়েটার। রোজা বেরিয়ে যাওয়ার পর তানভীর এগিয়ে এসে বললো…
‘ আদনান, তুই এখনি ওই ডাক্তারকে যাওয়ার অনুমতি কেনো দিলি? যদি আবার কোনো দরকার হয়?’
চেয়ার থেকে উঠে আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো আদনান, এসির ভোল্টেজ পূর্বের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়ে বললো…
‘ আমি ঠিক আছি এখন, আর এইটুকু ক্ষততে কিছুই হতো না আমার। এত কাহিনী না করলেও হতো ‘
‘ কাহিনী করেছি? আদনান, তোর কি খারাপ অবস্থা হয়েছিলো সেটা জানিস? কতটা ব্লা’ড লস হয়েছে তোর! যদি এই মেয়েটাকে সময়মতো না এনে তোর গু’লি বের করা হতো তাহলে আরো ক্ষতি হতে পারতো ‘
‘ কিচ্ছু হতো না বলছি তো ‘
‘ এমনভাবে বলছিস যেনো আগেও কতোবার গু’লি খেয়েছিস? সবকিছু এতো হালকাভাবে নিস না’
‘ এতো ড্রামাটিক ভাবে বর্ণনা করার মতো কিছুই হয়নি তানভীর, ঠিক আছি আমি ‘
‘ ঠিক আছিস এটাই বড় স্বস্তির বিষয়, কিন্তু তোর সঙ্গে এরকম কে করার সাহস কে পাবে সেটাই তো আমার মাথায় আসছে না। ধীরে সুস্থে পরিকল্পনা করে তোকে টার্গেট করা হয়েছে ‘
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আদনান…
‘ যেনো আমার কোনো শত্রু নেই? ভুলে যাস না আমার বাড়িতেই আমার শত্রুর বিচরণ ‘
‘ ফারহান? তোর মনে হয় ও তোর সঙ্গে এমন…’
‘ মেয়েটা কোন হাসপাতালের ডাক্তার?’
গুরুতর এক আলোচনার মধ্যে হুট করেই আদনান অন্য প্রসঙ্গ তোলায় ভ্রু কুঁচকে নিলো তানভীর…
‘ একটু আগেই তো মেয়েটা গেলো, আবার কেনো ওর কথা জিজ্ঞাসা করছিস? ‘
‘ দরকার আছে, যেখান থেকে ওকে এনেছিলি সেটা কোথায়?’
‘ এই পাশেই এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, সম্ভবত গাইনি বিভাগের। ওই মুহূর্তে হাসপাতালে ওই মেয়েটাকেই পাওয়া গেছিলো, হয়তো রাতে কোনো কাজে হাসপাতালে রয়ে গেছিলো ‘
‘ তুলে এনেছিলি ওকে?’
‘ আদনান, এখন এসব আলোচনা করে লাভ কি? যা হবার হয়ে গেছে। আর হ্যাঁ, মেয়েটাকে আমি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি। আশা করি, এখানকার কোনো কথা বাইরে তুলবে না ‘
তানভীরের কথাগুলো শুনে খানিকক্ষণ চুপ রইলো আদনান, তিনদিন রোজা এখানে ছিলো। ছিলো বলতে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিলো, মেয়েটা শুধু দরকারের সময় এসে আদনানকে দেখে গেছে এছাড়া ওদের মধ্যে কোনো কথপোকথন হয়নি। তাই রোজা সম্পর্কে আদনান কিছুই জানেনা। মিনিট পাঁচেক কিছু একটা ভাবার পর আদনান বললো…
‘ মেয়েটা আমার হেল্প করেছে, তাকে পারিশ্রমিক হিসেবে আমার কিছু দেওয়া উচিত। কালকে হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটাকে তার পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিয়ে আসবি, আমি কারো কাছে ঋণী থাকতে চাইনা ‘
‘ ফাইন, আমি দিয়ে আসবো তবে তুই চুপচাপ বিশ্রাম করবি। আর হ্যাঁ, তোর বাড়ি থেকে কল আসছে। তোর সেক্রেটারি আর আমি মিলে তোর বাবাকে হ্যান্ডেল করেছি, তুই কি আংকেলের সঙ্গে কথা বলবি?’
‘ না, আর তুইও বাড়ি চলে যা। অনেক হেল্প করেছিস আমার, এবার নিজের দিকে একটু খেয়াল দে’
‘ ওকে ব্রো, দরকার হলে ফোন করিস ‘
বেরিয়ে গেলো তানভীর, তিনদিন আগে একটা জরুরী মিটিং শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি দ্বারা গু’লি’বি’দ্ধ হয় আদনান। পেটে গুলি লাগায় জ্ঞান কিছুটা ছিলো, কোনরকম বন্ধু তানভীরকে ফোন করেছিলো। মিটিং শেষে তানভীরের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিলো আদনানের, ফোন পেতেই তানভীর এসে আদনানকে নিয়ে আসে বাড়িতে। এ বাড়িতে আদনান একাই থাকে, তানভীর হসপিটালে নিতে চেয়েছিল কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আদনান রাজি হয়নি। পরে উপায় না পেয়ে তানভীর রোজাকে তুলে এনেছিলো, ধমকি দিয়ে ওকে দিয়েই আদনানের সেবা করিয়েছে। কিন্তু সবটা জানার পর আদনানের রোজার কথা ভেবে একটু চিন্তা হয়েছে বটে তবে পরক্ষনেই আদনানের ব্যবসায়ী মস্তিষ্ক জেগে উঠে ওকে বোঝালো, এতো ভাবার কিছু নেই। ডাক্তার হিসেবে সে তার দায়িত্ব পালন করেছে, এবার মেয়েটার পরিশ্রমের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিলেই সব হিসেব মিটে যাবে!
________________________________
এক রাত একটি মেয়ের বাড়ির বাইরে থাকাটা স্বাভাবিকভাবেই সমাজ এবং মেয়ের পরিবার কুদৃষ্টিতে দেখে, সেখানে তিনরাত বাড়ির বাইরে থাকায় রোজাকেও পরিবারের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই বাবার কাছে দুটো চ’ড় খেয়েছে মেয়েটা, রোজার বাবা এনায়েত সাহেব বরাবরই কড়া মেজাজের ছিলেন কিন্তু মেয়ের গায়ে কোনোদিন হাত তোলেননি কিন্তু আজ উনি এতোটাই রেগে গেছেন যে এতবছর যা করেননি তা আজ করেছেন…
‘ তোর মতো মেয়ের বাবা হওয়ার থেকে না হওয়াই উত্তম ছিলো আমার জন্যে, আমাদের বংশের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিস রোজা ‘
বাবার কথা শুনে গাল গড়িয়ে পানি পড়ছে রোজার, যদিও রোজা জানতো তিনদিন পর বাড়ি ফেরাটা ওর জন্যে সুখকর হবেনা কিন্তু ওর পরিবার যে কিছু না শুনেই ওকে দোষী বানিয়ে দেবে ভাবেনি…
‘ বাবা প্লিজ, এইসব বলো না! তুমি আমাকে ভুল বুঝছো, আমি তোমাদের সবটা বলছি প্লিজ তোমরা আমার কথাটা একটু শোনো ‘
মেয়ের কথা শুনে রোজার মা ওর বাবাকে বললেন..
‘ মেয়ের কথাটা একবার শুনে দেখলে…’
‘ একটা কথা বলবে না তুমি, কি বলবে ও হ্যাঁ? এখানে আর কিচ্ছু শোনার নেই, যেখান থেকে এসেছিস সেখানে চলে যা। এ বাড়িতে তোর জায়গা হবেনা ‘
স্বামীর ধমক শুনে চুপ করে গেলেন রোজার মা, রোজার বাবার রাগের সামনে আজ অব্দি কিছু টিকতে পারেনি। একবার উনি যেটা বলেন সেটাই এই বাড়ির শেষ সিদ্ধান্ত…
‘ বাবা, আমি..’
‘ সামনের সপ্তাহে বিয়ে ছিলো না তোর? তোর বাড়ি না থাকার খবর পাত্রপক্ষের কানে পৌঁছে গেছে, বিয়ে ভেঙে দিয়েছে তারা বুঝেছিস?’
বাবার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো রোজা, বিয়ের সব কেনাকাটা শেষ। সেই বিয়েটা ভেঙে গেছে শুনে রোজার অনেক খারাপ লাগলো। চুপচাপ ফোঁপাচ্ছে মেয়েটা, রোজার বাবা বললেন…
‘ নিজের কথা না ভাবলি ঠিক আছে, অন্তত তোর বোনের কথাটা তো একটু ভাববি। তোর কুকর্মের জন্য না এখন ভবিষ্যতে ওকে পস্তাতে হয় ‘
‘ বাবা, দয়া করে এসব মিথ্যে দায় আমার ওপর দিও না। আমি কোনো দোষ করিনি আর না আমার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। কিভাবে তোমাদের বিশ্বাস করাবো আমি বলো!’
‘ তিনদিন তিন রাত বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ থাকা মেয়েকে আর কি বলবো? ওইদিন সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেছিলি, কি বলে গেলি যে তিন চার ঘণ্টার জন্য যাচ্ছিস। আর ফিরলি কবে? তিনদিন পর? এরপরও আবার বড় বড় কথা বলছিস?’
‘ বাবা, আমি ইচ্ছে করে করিনি। আমাকে আটকে রাখা হয়েছিলো, সেখান থেকে আজকে…’
এ কথা শুনে ভরকে গেলেন রোজার মা, ভয়ার্ত কন্ঠে মেয়ের গায়ে হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করলেন…
‘ আটকে রেখেছিল মানে? তু..তুই ঠিক আছিস তো হ্যা? তোর কোনো ক্ষতি…’
‘ মা আমি একদম ঠিক আছি, আমার কোনো ক্ষতি হয়নি কিন্তু..’
রোজা আর কিছু বলার সময়টুকু পেলো না, তার আগেই ওর বাবা হাত ধরে টেনে ওকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে বলেন…
‘ তোর মতো মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই, আমাদের সম্মানের যদি বিন্দুমাত্র খেয়াল থাকে তাহলে এই বাড়িতে আর কখনও আসবি না ‘
‘ বাবা..!! প্লিজ আমাকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দাও ‘
মেয়ের অনুরোধ অনুনয় কিছুই কানে তুললেন না রোজার বাবা,পুরোনো চিন্তাধারার এনায়েত সাহেব নিজের সম্মানের জন্যে মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে দু দণ্ড ভাবেননি। রোজা সেদিন বাধ্য হয়েই চলে এসেছিলো, আসার সময় আশেপাশের মানুষের ফিসফিসানি শুনেই বুঝেছিলো কেনো ওর বাবা ওর সঙ্গে এমন আচরণ করলো, পুরো পাড়ায় যে এ খবর ছড়িয়ে গেছে যে মেয়ে তিন রাত বাড়ি ফেরেনি! ওখান থেকে আসার পর রোজা নিজের এক কলিগের সঙ্গে রুম শেয়ার করে থাকতে শুরু করে। বাসায় অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি, এসবের মাঝেও বিধ্বস্ত মন নিয়ে না চাইতেও ডিউটি করতে হচ্ছে। ডাক্তারিটা রোজার স্বপ্ন ছিলো, বাবার বাঁধা দেওয়া সত্ত্বেও অনেক কষ্টে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি পেয়েছে। চাকরি পাওয়ার পর প্রথম বেতনটা বাবার হাতেই তুলে দিয়েছিলো, সেদিন থেকে এনায়েত সাহেব কিছুটা নরম হয়েছিলেন। রোজা ভেবেছিলো এখন থেকে সব স্বাভাবিকভাবেই চলবে কিন্তু হুট করেই যে এমন এক দমকা ঝড়ে সব ওলোট পালোট হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি! প্রেসারের ওষুধটা খেয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসলেন সিদ্দিকী সাহেব, প্রেসারটা অনেক বেড়েছে। অনেকগুলো দিন ধরে ঠিকঠাক ঘুমাতে পারছেন না, কারণ তার মেজো ছেলে আদনানের হুট করেই কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। উনি লোক লাগিয়েছেন কিন্তু তারাও আদনানের খোঁজ দিতে পারছে না। পাশের সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়তে ব্যস্ত ফারহান, সিদ্দিকী সাহেব বড় ছেলেকে প্রশ্ন করলেন…
‘ আদনান কোথায় কিছু জানিস?’
বাবার কথায় যেনো বিশেষ পাত্তা দিলো না ফারহান, ছেলের উত্তর না পেয়ে সিদ্দিকী সাহেব আবারো প্রশ্ন করলেন…
‘ তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি আমি ‘
‘ তোমার বড় ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন জানো, তারপরও এই প্রশ্ন আমাকে কেনো করছো?’
‘ অদ্ভুত! বড় ভাই কোথায় আছে সেটা ছোটো ভাই হিসেবে খোঁজ নেওয়া কি তোর দায়িত্ব নয়?’
‘ বাবা, আমার কোনো কথা আদনানের সহ্য হয় না। আমি কিছু বললেই তো দোষ হয়ে যায়। ওর খবর কেনো রাখতে যাবো আমি?’
বড় ছেলের কাছে কোনো উত্তর পাবে না বুঝে আরো চিন্তিত হয়ে পড়লেন সিদ্দিকী সাহেব, তখনই বাজলো কলিংবেল। কাজের লোকটি গিয়ে দরজা খুলে দেয়, আদনান এসেছে! আদনানকে দেখে চমকে উঠলেন সিদ্দিকী সাহেব, ফারহানও কিছুটা অবাক হয়েছে! তবে তা প্রকাশ করেনি!
‘ আদনান, কোথায় ছিলি তুই?’
‘ ট্যুরে গেছিলাম বাবা, কাজকর্ম থেকে কিছুদিনের ছুটি দরকার ছিলো। মুড ফ্রেশ করারও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি?’
‘ আরে, তো এইভাবে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যুরে কে যায়? আমি আরো ভাবলাম তুই…’
‘ কি ভেবেছিলে বাবা? কেউ মে’রে আমাকে গায়েব করে দিয়েছে? আদনানকে মা’রা এত্ত সহজ নাকি?’
কথাগুলো বলেই ফারহানের দিকে তাকালো আদনান। তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে ফারহান, আদনানের মুখে বাঁকা হাসি কারণ এবারও ফারহানকে নিজের উদ্দেশ্যে সফল হতে দেয়নি সে!!
__________________________________
রিসিপশনের সামনে দাড়িয়ে আছে রোজা, একটু পরেই রোগী দেখতে যাবে রোজা। তার আগেও একবার বাড়িতে ফোন করে দেখলো কিন্তু রোজকার মতো আজকেও হতাশ হতে হলো। ওর রুমমেট সুজানাও এই হসপিটালেরই অন্য বিভাগের ডাক্তার সে। রোজার সম্পর্কে সব জানে ও, রোজাকে দেখেই প্রশ্ন করলো…
‘ বাসায় কথা বলতে পেরেছিস?’
‘ ফোনই ধরেনা কেউ, মনে হয় আমাকে ব্লক করে দিয়েছে ‘
‘ চিন্তা করিস না, ঠিক হয়ে যাবে সব। আঙ্কেল রেগে আছে তো এখন, ওনার রাগ ভাঙলেই দেখবি ‘
মলিন হাসলো জারা…
‘ না রে, বাবাকে চিনিস না তুই। ওনার রাগের সামনে কেউ টিকতে পারবে না। আমার বোধহয় আর ও বাড়ি যাওয়া হবেনা ‘
‘ আহা, সবাইকে পজিটিভ কথা ভাবতে বলিস আর নিজে নেগেটিভ ভাবছিস? দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই তো কোনো দোষ করিসনি! তাহলে দেখবি তোর কোনো শাস্তিও হবেনা ‘
‘ অনেকসময় নির্দোষ ব্যক্তিরাও বিনা কারনে শাস্তি পায় রে সুজানা, নিজেকে দিয়ে বেশ বুঝতে পারছি। ওই লোকটা আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে, আমি তাকে কখনো ক্ষমা করবো না। কোনোদিন না ‘
বাসার ওই ঘটনার পর আদনানের প্রতি তীব্র ঘৃ’না জমে গেছে রোজার মনে, লোকটাকে কোনো বড়সড় শাস্তি দিতে পারলে যেনো রোজা একটু স্বস্তি পেতো। ঘন্টা দুয়েক পর…নিজের কেবিনে বসে রোগী দেখছিলো রোজা, লাঞ্চের আগে এটাই শেষ রোগী ছিলো। রোগীটি যাওয়ার পর রোজা অ্যাপ্রোন খুলে কিছুটা স্বস্তিতে বসলো, তখনই একজন নার্স এসে রোজার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো…
‘ এটা আপনার জন্যে ‘
রোজা খামটা দেখে একটু অবাক হলো বটে, সাধারণত লোকেরা কিছু দেওয়ার হলে সাদা খামে দেয় কিন্তু এটা কালো রংয়ের খাম। খামের ভেতর একটা সাইন করা ব্ল্যাঙ্ক চেক পেলো রোজা…
‘ কে দিয়ে গেছে?’
‘ উনি নিজের পরিচয় বলেননি, শুধু এইটা আপনার হাতে দিতে বললো আর একটা কার্ডও দিয়ে গেছে ‘
নার্স কার্ড এগিয়ে দিলো, ওই পার্সোনাল কার্ডে “আদনান সিদ্দিকী ” নামটা দেখেই মেজাজ চটে গেলো রোজার! খামটা হাতের মুঠোয় পিষে ধরলো, রাগে কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। লোকটার এতো বড় সাহস হলো কিভাবে!!
চলবে….
[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন!!]