তোমাতেই নৈঃশব্দ্য প্রহরে পর্ব-১৩

0
110

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_১৩

‘ ছেমড়ি অ্যামন পলাই পলাই করতাছে ক্যালা? মোর চেহারা কি আচনকা ভূতের লাহান ভ’য়ঙ্কর হইয়া গেছে? ‘

অত্যধিক চিন্তার পুষ্কনীতে হাবুডুবু খাচ্ছে মুয়ীয। সে-ই ঘুম ভাঙ্গা সকাল হতে হলোটা কি তার একমাত্র বউয়ের?
.

দিনমণির আলোয় দীপ্তিময় ধরনী। অপ্রত্যাশিত এক মধুময় রাত্রি যাপন শেষে ভঙ্গ হলো গাঢ়, সুখের নিদ্রা। ঘুমকাতুরে চোখ দু’খানা মেলে তাকালো মুয়ীয। শ্যাম মুখে আদর ছুঁয়ে যাচ্ছে দিনমণির দুষ্টু রোদ্দুর। চোখের ওপর হাত রেখে রোদ্দুরের দুষ্টুমি ঠেকানোর বৃথা প্রচেষ্টা চালালো মানুষটি। তবে সফল হলো না। রোদ্দুরের দুষ্টু, অবাধ্য অ”ত্যাচারে ঘুম পালাতে বাধ্য হলো। লম্বা এক হাই তুললো মুয়ীয। অবচেতন মনে হাত পৌঁছালো বিছানার বাম পার্শ্বে। সেথায় আকাঙ্ক্ষী মানবীর অনুপস্থিতি উপলব্ধি করে চট করে ভ্র জোড়ার মাঝ বরাবর সরু এক ভাঁজের উদয় হলো। সোজা অবস্থা হতে বাম পাশে ঘুরে তাকালো সে। অনুপস্থিত উক্তি। সকাল সকাল হারালো কোথায়? দ্বিতীয়বারের মতো হাই তুলে আরামের নিদ্রা ভঙ্গ করে উঠে বসলো শ্যাম মানব। পরিহিত লুঙ্গি ঠিকঠাক করে বিছানা ছেড়ে নামলো। আলনা হতে টেনে নিলো লালচে রঙা গামছা। উদোম দেহে তা জড়িয়ে নিলো। ঘরের এ কোল, ও কোল দৃষ্টি বুলিয়ে বেরিয়ে গেল সেথা হতে।
.

গোসল সমাপ্ত করে নিজ ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে মুয়ীয। শ্যাম লোমশ বুকে বিন্দু বিন্দু জল ক্রীড়ারত। চুলগুলোয় মুক্তোর ন্যায় জ্বলজ্বল করছে পানি। অর্ধ ভেজা গামছা দিয়ে চুল মুছে যাচ্ছে মানুষটি। তার ব্যাকুল দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে আশপাশে। খুঁজে ফেরে শুধু একটি মুখ। প্রিয় মুখ। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দেখা মিললো না নি’ষ্ঠুর মনমোহিনীর। বেজার মুখে ঘরে প্রবেশ করলো মুয়ীয। প্রথমেই দৃষ্টি আটকালো বিছানায়। বিগত কিছুদিনের ন্যায় বিছানায় পরিপাটি করে রাখা তার প্রয়োজনীয় পোশাক হতে শুরু করে খুঁটিনাটি জিনিসপত্র। ওয়ালেট, রিস্ট ওয়াচ, মোবাইল, বাইকের চাবি প্রমুখ। তবে দেখা নেই সে শব্দহীন উক্তির। বিগড়ানো মনোভাবের সহিত বিছানায় গামছাটি ছুঁড়ে ফেললো মুয়ীয। খামচে ধরার মতো করে আঁকড়ে ধরলো বউয়ের নির্বাচন করে দেয়া শার্ট। হুতুম পেঁচার ন্যায় মুখশ্রী। কটমটে চক্ষু তারা। দ্রুত হস্তে শার্ট পরিধান করে চলেছে। বোতামের সঙ্গে চলছে একপ্রকার নির্বাক স্নায়ুযু’দ্ধ।
.

মাঝের ঘরটিতে মেঝেতে বিছানো মাদুর। সকলে খেতে বসেছে। বসেছে জনাব হাসান সাহেব-ও। উনি খেতে বসেছেন ঠিকই। তবে ওনার ইতিউতি চক্ষু দু’টো সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশি ঘুরতে হলো না। অবশেষে কৃপা হলো রমণীর। দিলো আপাদমস্তক ধরা। কমলাটে হলুদাভ বর্ণের শাড়ি পরিহিতা তার সঙ্গিনী। মাথায় টেনে আঁচল। মুখ জুড়ে দৃষ্টি শীতল করার মতো সুপ্ত সৌন্দর্য! এক আলাদাই উজ্জ্বলতা। অন্য দিনের চেয়ে কেমন ভিন্নতা। সাধারণের মাঝেও লাগছে অসাধারণ! উক্তি তরকারির কড়াই হাতে উপস্থিত হলো। রাখলো মাদুরের মধ্যিখানে। একে একে সকলকে খাবার পরিবেশন করে দিলো। পুরোটা সময় জুড়েই তার দৃষ্টি ছিল নত। লজ্জা মাখা। মুয়ীয দেখলো। ভাত চিবোতে চিবোতে আনমনে বোকা প্রেমিক পুরুষের ন্যায় ভেবে ফেললো,

‘ ছেমড়ি অ্যামন পলাই পলাই করতাছে ক্যালা? মোর চেহারা কি আচনকা ভূতের লাহান ভ’য়ঙ্কর হইয়া গেছে? ‘

অত্যধিক চিন্তার পুষ্কনীতে হাবুডুবু খাচ্ছে মুয়ীয। সে-ই ঘুম ভাঙ্গা সকাল হতে হলোটা কি তার একমাত্র বউয়ের? এমন পালাই পালাই করছে কেন! হাওয়ারা যেন কানে কানে… বলে গেল চুপিচুপি,

‘ ওহে, বোকা পুরুষ!
তুমি সব বুঝেও কেন এত অবুঝ! ‘

সময়ের চলন্ত গতি রোধ করা শুধু অসম্ভব নয়। অত্যধিক জটিল বটে। দেখতে দেখতে মুয়ীয, উক্তি দম্পতির বিবাহিত জীবনের এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। মুয়ীযের নিশ্চুপ উক্তি আজও একই রকমে রয়েছে। সরলতা, কোমলতা যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে। তবে একচুল পরিমাণ হলেও পরিবর্তন এসেছে আচরণে। আগের সে-ই অবহেলিত, লাঞ্চিত মেয়েটি এখন নিজের স্বপক্ষে একটু হলেও কিছু জানাতে শিখেছে। তার এই শব্দহীন প্রতিবাদ অপর পক্ষ বুঝতে অপারগ। তবুও তাদের শরীরে আগুন জ্ব’লে ওঠে। দাউদাউ করে আগুন জ্ব’লে ওঠে। বোবার প্রতিবাদেই এমন ঝাঁজ! না জানি মুখ ফুটে প্রতিবাদের দু’টো শব্দ খরচ করতে পারলে, কি হতো এদের।
.

কোনো এক গোধূলি লগ্ন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, শুক্রবার। আকাশ হতে মুছে যাচ্ছে লালচে রঙের আলপনা। ঘন আঁধার ঘনিয়ে আসছে চারিধার। মাগরিবের নামাজ আদায় করে সূরা ওয়াক্বিয়াহ পাঠ সম্পন্ন করলো উক্তি। পবিত্র কুরআন বুকে আঁকড়ে ধরে যথাস্থানে সম্মানের সহিত রেখে দিলো। হিজাব খুলে মাথায় টেনে নিলো শাড়ির আঁচল। বিছানায় বসে হাসান সাহেব। হাতে চায়ের শুভ্র রঙা কাপ। দৃষ্টি নিবদ্ধ জানালা গলিয়ে আঁধারিয়া বাহিরে। চায়ের কাপে শব্দ করে এক চুমুক বসিয়ে সরস অথচ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

” পড়ালেহা গোল্লায় পাডাইয়া, ডজন ডজন ক্যাসেটের মা হওনের ইচ্ছা জাগছে নি? ”

উক্তি ঘর হতে প্রস্থান করতে যাচ্ছিল। চকিতে চমকালো! ঘুরে দাঁড়ালো স্বামীর পানে। চোখেমুখে জিজ্ঞাসু ভাব। কিছু মস্তিষ্কে ঠিকমতো বোধগম্য হলো না যে। মুয়ীয চায়ের কাপে ঠোঁট বসিয়ে লহু স্বরে বললো,

” ধারে আয়। ”

ছোট্ট দু’টো শব্দ। বুকের ভেতর র ক্ত ছলাৎ করে উঠলো। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো উক্তি। বসলো স্বামীর পাশে। কিছুটা কাছাকাছি বসলো। এ নগণ্য পরিবর্তন ঠিক মানুষটির চোখে বন্দী হলো। সে কি স্ত্রীর অগোচরে কিঞ্চিৎ অদৃশ্য এক মুচকি হাসি উপহার দিলো!

” ইন্টার পরীক্ষা দিছোছ বিয়ার দশ বারো দিন আগে। বিয়া হইছে এক মাসের বেশি। ভুল কইরাও তো কহনো পড়ালেহার নাম মুহে নিতে দেখলাম না। ব্যাবাক ভুইল্লা গেছোছ নি? আর পড়তি না? ”

উক্তি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এই প্রশ্নে বরফের ন্যায় জমে গেল। চোখে নদীর মতো থৈ থৈ জল। চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ! বিয়ের পর, এমন পরিবেশে সে সত্যিই পড়ালেখা করতে পারবে! মানুষটি তার পড়ালেখার খোঁজখবর নিচ্ছে! সে যে দুঃখে কষ্টে সকল আশা জলাঞ্জলি দিয়েছিল। ভেবেছিল এক জীবনে বিদ্যাপিঠে আর যাওয়া হবে না। হবে না বইয়ের শুভ্র-সতেজ পাতায় মুখ ডুবিয়ে সুঘ্রাণ নেয়া। হবে না শিমুর সঙ্গে শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করা। তবে কি তার সুপ্ত আশা পূরণ হতে চলেছে! নাকি এক বুক স্বপ্ন দেখে, আচমকা সব ভেঙ্গে যাবে?

স্ত্রীর আবেগঘন মুখশ্রী দেখেই, মুয়ীয তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেল। ওকে বললো,

” যা। টেবিলের পাশ থে ওই ব্যাগডা লইয়া আয়। ”

উক্তি স্বামীর আদেশ শুনে, কাঠের টেবিলের দিকে তাকালো। টেবিলের বাম পাশ বরাবর মেঝে ঘেঁষে একটি টিস্যু কাপড়ের ব্যাগ রাখা। বিকেলে মানুষটি বাইরে গিয়েছিল। ফিরেছে এ ব্যাগ এবং নাস্তার সামগ্রী হাতে। উক্তি দেখেছে ব্যাগটি। তবে সাহস করে জিজ্ঞেস করা কিংবা দেখার কথা ভুলেও ভাবেনি। কৌতূহল জন্মেছিল শুধু। মুয়ীযের কথামতো বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো উক্তি। এগিয়ে গেল টেবিলের কাছে। হলুদাভ টিস্যু কাপড়ের ব্যাগটি হাতে নিলো। ভারী ঠেকলো কিছুটা। ব্যাগ হাতে ফিরে এলো স্বামীর কাছে। মুয়ীয চোখের ইশারায় বোঝালো ব্যাগটি খুলতে। কথামতো ব্যাগটি বিছানায় রাখলো উক্তি। আবরণ মুক্ত করলো ভেতরে রাখা জিনিস। অতীব চমকপ্রদ ভাব ফুটে উঠলো মেয়েটির চোখেমুখে। কয়েক ফোঁটা নোনাজল একদম অবাধ্য রূপে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। উক্তি তাকালো স্বামীর পানে। কৃতজ্ঞতা উপড়ে পড়ছে তার চোখেমুখে। এ প্রথমবারের মতো অকল্পনীয় দৃশ্যটুকু ধরা দিলো উক্তির চক্ষু তারায়। এক চিলতে মুচকি হাসির রেখা ফুটে, তার হালাল পুরুষটির ঠোঁটের কোণে! উক্তি নিজেকে দমিয়ে রাখতে চরমভাবে ব্যর্থ হলো। বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে দুরন্ত-চঞ্চল পায়ে ছুটে গেল। অস্থির, ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসের ন্যায় আছড়ে পড়লো স্বামীর শক্ত, প্রশস্ত বক্ষপটে। পেলব হাত দু’টো আঁকড়ে ধরলো পিঠ। মাথা ঠেকলো বুকের ডান পাশে। অঝোরে কাঁদছে উক্তি। মুয়ীয সস্নেহে আগলে নিলো তার একান্ত সঙ্গিনীকে। বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো যথাসম্ভব। বক্ষ খাঁচায় চিরবন্দিনী করে ফেলবে কি?! বন্ধ দু’জনার চক্ষু। এ নীরব, একান্ত, নৈঃশব্দ্য প্রহরে নিজেতে মত্ত এক জোড়া হালাল দম্পতি!

” ও মাই আল্লাহ্! দোস্ত আই অ্যাম সো হ্যাপি পর ইয়্যু! বিশ্বাস কর আমি ভাবিনি এই আনএক্সপেক্টেড আশাটা সত্যিই পূরণ হবে। ”

দিবাবসুর উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত বসূধা। খুশিতে বাক বাকুম পায়রা শিমু নামক মেয়েটি। ভিডিও কলের মাধ্যমে সংযুক্ত দু প্রান্তে অবস্থিত দুই সখী। উক্তির মুখেও খুশির ঝলকানি। আশা পূরণের উচ্ছ্বাস।

” হ্যাঁ রে দোস্ত। বলছি যে তাহলে আমাদের ভার্সিটি যাত্রা শুরু হতে চলেছে? ”

উক্তি বিছানায় বসে। ইতিবাচক মাথা নাড়লো। হাতের ইশারায় বললো,

‘ ইনশাআল্লাহ্। ‘

” ইনশাআল্লাহ্ ইনশাআল্লাহ্! জানিস আমিও না ভার্সিটি অ্যাডমিশনের বই কিনেছি। ভাবছি প্যারাগন কিংবা অন্য কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হবো। অলরেডি অনেকটা দেরি করে ফেলেছি। এরপর দেরি করলে পাড়ার ভটভটি কলেজেই ভর্তি হতে হবে। ”

বান্ধবীর মুখভঙ্গি এবং করুণ ভবিষ্যৎ বাণী শুনে উক্তি নিঃশব্দে হেসে উঠলো। শিমু চোখ ছোট ছোট করে বললো,

” তুই হাসছিস? আরে সত্যি বলছি। আমি তো আর তোর মতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট না। যে একবেলা পড়লেই দশবেলা কভার হয়ে যাবে। আমি হলাম লেডি আদু ভাই। থুরি আদু আপা। হাজার বছর ধরে পড়লেও পড়া মনে থাকে না। খালি ভুলে যাই। এই ব্রেইন নিয়ে ক্যামনে চান্স পাবো ইয়ার? বল।”

দুঃখে শোকে মুহ্যমান শিমু। ওর এই নাটুকেপনা দেখে হাসছে উক্তি। শিমু চট করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,

” আচ্ছা। বান্ধবী, তুই কোচিংয়ে ভর্তি হবি না? ”

লহমায় উক্তির হাসিমুখ হতে পালালো হাসি। অন্ধকার ছাপিয়ে গেল বদন জুড়ে। কোচিংয়ে ভর্তি! সে যে ব্যয়বহুল। রীতিমতো অসম্ভব। ধরাছোঁয়ার বাইরে ইচ্ছেটা। এমন ইচ্ছে কি এবার বামন হয়ে চাঁদ ধরার মতো দুষ্কর হয়ে উঠবে না?!

” কিরে? চুপ করে গেলি কেন দোস্ত? ভাইয়া ভর্তি করবেন না? ”

উক্তি কি বলবে ভেবে যাচ্ছিল। শিমু বললো,

” ভাবীর কাছে যা শুনলাম। মুয়ীয ভাইয়া নাকি বেশ ভালো। উন্নত মন মানসিকতা নিয়ে চলেন। আমার যা মনে হয়, ওনাকে বললে উনি নিশ্চয়ই ভর্তি করিয়ে দেবেন। কি? দেবেন না? ”

উক্তি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে বললো,

” হয়তো দেবেন। কিন্তু আমিই ভর্তি হতে চাইছি না রে। হাতে সময় কম। এরমধ্যে ছোটাছুটি করে সময় নষ্ট না করে ঘরে বসেই যা পারি, পড়বো। ”

” কিন্তু এতে একটু কষ্ট হয়ে যাবে না? জানিস তো। এটা ভার্সিটি অ্যাডমিশন দোস্ত। ”

” ইনশাআল্লাহ্ হয়ে যাবে। তাকদীরে যা আছে, তা-ই হবে রে। চিন্তা করে লাভ নেই। ”

শিমু মুচকি হেসে বলল,

” হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্। আমার বিল্ডিং দোস্ত না! তুই জাস্ট ফাটিয়ে দিবি। সে বিশ্বাস আছে আমার। ”

” দোয়া করিস। ” উক্তির কোমল মুখভঙ্গি।

শিমু হাসিমুখে দোয়ারত ভঙ্গিমায় বললো,

” নিশ্চয়ই আফা। সদা সুখী থাকুন। আর শত আণ্ডার জননী হোন। আমিন! ”

উক্তি চোখ পাকিয়ে তাকালো, এমনতর দোয়ায়। হা হা করে সশব্দে হেসে উঠলো শিমু। ঠিক সে মুহূর্তে উক্তির মোবাইলে ভিন্ন নম্বর হতে কল এলো। সহসা হুঁশ ফিরলো মেয়েটির। এতক্ষণ ধরে সে কথা বলছে। এটা যে স্বামীর মোবাইল। ওনার হয়তো দরকার পড়তে পারে। কি ভাবছেন উনি, হা?

” আচ্ছা দোস্ত। পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ্। ফোন আসছে ওনার। রাখছি তাহলে। আল্লাহ্ হাফিজ। ” হাতের ইশারায় তড়িঘড়ি করে বললো উক্তি।

শিমু মন দিয়ে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ভাষা লক্ষ্য করলো। পড়লো। বুঝে বললো,

” আচ্ছা ঠিক আছে। পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ হাফিজ। ”

উক্তি চট করে ভিডিও কল কেটে দিলো। দ্রুত পায়ে নামলো বিছানা হতে। ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই ঘরে উপস্থিত হলো মুয়ীয। হাত বাড়িয়ে শুধালো,

” কেডা কল দিতাছে? দেহি। ”

উক্তি মোবাইল বাড়িয়ে দিলো। মুয়ীয হাতে নিয়ে কলার আইডি দেখে বললো,

” বান্ধবীর লগে ঠিকমতো কথা হইছে? ”

উক্তি ইতিবাচক সাড়া দিলো। মুয়ীয মাথা নাড়িয়ে কল রিসিভ করলো।

” হ্যালো আসসালামু আ’লাইকুম। ”

কথা বলতে বলতে ঘর হতে বেরিয়ে গেল মানুষটি। তার গমন পথে ভালো লাগার চোখে তাকিয়ে মিসেস উক্তি।

অন্ধকার রাত। আকাশের বুকে জ্বলজ্বলে শশাঙ্কের উপস্থিতি। গভীর নিদ্রায় শায়িত মুয়ীয। রাতের শেষ প্রহর তখন। শয্যাসঙ্গিনী পাশে অনুপস্থিত। ঘুমে মগ্ন মানুষটি জানেও না এত রাতে তার অগোচরে কি হচ্ছে। কোথায়, কোন অবস্থায়, কি করে বেড়াচ্ছে তার স্ত্রী। সে কি অকল্পনীয়, অভাবনীয় কিছু করে চলেছে! সে-ই সত্যি কি জনাব হাসানের জানা উচিত নয়? এই ভিন্ন রূপটি, অবাক দৃশ্যটি আর কত রইবে অজানা?

চলবে।