#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পর্বঃ১৪
—সে পরিপূর্ণ কেনো জানো লিনা?
প্রশ্নবোধক চোখে তাকায় নীড়ের দিকে লিনা।নীড় হাসে।
—কারন সে তোমার মতো কাউকে ধ্বংস করার খেলায় নামেনি বরং সে ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে আপন করে নেয়।তুমি যদি এই মহূর্তে তার কাছে যায়ে ক্ষমা চাও দেখবা সে বিনা দেরিতে তোমাকে জড়ায় ধরবে। তোমার জীবন তোমার হাতে লিনা। সে জীবনকে তুমি কোনদিনে নিয়ে যাবা সেটা তোমার হাতে। হিংসা শুধু ধ্বংস বয়ে আনে।
নীড় কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে যায়।সে লিনার মনের অবস্থা বুঝেছে আজ যে আবিরের কথা গুলো তাকে মন থেকে নাড়িয়ে তুলেছে তা সে বুঝতে পেরেছে। অপরাধবোধ সবচেয়ে বড় শাস্তি।
নীড় নিজের রুমে এসে আদ্রিতার ঘুমন্ত মুখ দেখে আলতো হাসে।আদ্রি আকাবাকা হয়ে শুয়ে আছে।যা দেখে নীড়ের হাসি পায়।মেয়েটাকে তার বাচ্চা ব্যাতীত আর কিছুই মনে হয়না কিন্তু এই মহূর্তে তার আরও একটা কাজ বাকি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটা ধরে আদ্রিয়ান এর রুমের দিকে।আদ্রিয়ান এর রুমে সামনে এসে নক করে দরজায়
—আসতে পারি?
আদ্রিয়ান ল্যাপটপে কিছু কাজ করচ্ছিলো নীড়ের কন্ঠে দরজার দিকে তাকায়
—আরে তুই আয়। তুই আবার কবে থেকে পার্মিশান নেওয়া শুরু করলি।(হেসে দিয়ে)
—যেদিন থেকে তুই আমার থেকে কথা লুকাতে শুরু করলি।
—মানে(অবাক হয়ে)
—কেন বুঝিস নি তোর আর নওমির কথা বলছি আমি।
—ওহ তুই তো জানিস সেখানে আলাদা করে আবার কি বলার আছে।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
—আমার জানার বাহিরেও কথা আছে।আর তা হলো তুই নওমিকে ভালোবাসিস তাহলে ডিভোর্স কেন।
—তোর মনে হয় আমি তাকে ডিভোর্স দিবো।(বাকা হেসে)
—মানে।(ভ্রু কুচকে)
—ওর আর আমার শুধু কবুল বলা হয়েছে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি সেখানে ডিভোর্স এর প্রশ্নই আসেনা যেখানে কোন কাগজ পত্রই নেই সেখানে ডিভোর্স এর প্রশ্ন আসে কোথা থেকে।
—তাহলে তুই নাকি নওমিকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছিস।
—আরে ধুর ওকে আমি খালি বলেছি ওইটা ডিভোর্স পেপার আর ওই গাধী না দেখেই মেনে নিয়েছে এতোক্ষনেও মনে হয় খুলেও দেখেনি পেপারস টা কিসের।(হেসে দিয়ে)
—তোর বউ তোর মতোই।(বিরক্তি নিয়ে)
আদ্রিয়ান বাকা চোখে তাকায়।নীড় তা দেখে আলতো হাসে পুনরায় গম্ভির কন্ঠে বলে উঠে
—কিন্তু কাজটা কি ঠিক?
—সে আমাকে না বলে গেলো। আমাকে না বিশ্বাস করে রেস্টুরেন্টে এতোসব ঝামেলা বাজালো সেখানে এইটুকু তো কিছুই না।(গম্ভীর গলায়)
—কাল দেখলাম নওমিকে তার এক বন্ধুকে জড়ায় ধরে স্বান্তনা দিচ্ছে খুব ভালো ফ্রেন্ড তারা মনে হলো।(স্বাভাবিক কন্ঠা)
নীড়ের মুখে কথাটা শুনে খেপে গেলো আদ্রিয়ান সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে নওমির রুমের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
—কিরে কই যাস?
—নওমির রুমে।(রেগে)
—কিন্তু কেন (অবাক হওয়ার ভান করে)
—তুই কেন জিজ্ঞেস করিস কেন ওর সাহস হয় কি করে অন্যকোন ছেলেকে জড়য়ে ধরার বেশি পাখা গজায়েছে ওর। কিসের এতো শান্তনা।
—আরে ওইটা ওর ফ্রেন্ড সামান্য জড়ায় ধরে শান্তনাই তো দিয়েছে এখানে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে।
—আরে আজব আমার স্ত্রী অন্যকাউকে কেন জড়ায় ধরবে যতোই ফ্রেন্ড হোক।(রেগে চিল্লিয়ে)
—তাহলে যখন তুই তোর ফ্রেন্ডকে জড়ায় ধরেছিলি তখন তুইও ওর স্বামিই ছিলি। তাহলে তার রাগ হওয়াই শাস্তি কিসের। (আদ্রিয়ানের কাধে হাত দিয়ে)
আদ্রিয়ান এবার বুঝে নীড়ের কথা আসলেই তো এইভাবে তার মাথাতে আসেনি।
—আসলে বেপারটা কি জানিস আদ্রিয়ান আমরা ছেলেরা নিজেদের দোষ জেস্টি ফাই করে ফেলি খুব স্বাভাবিক ভাবে।কিন্তু মেয়েরা একই কাজ করলে তাদের চরিত্রে দাগ বসিয়ে দেয়।
আদ্রিয়ান মাথাটা নিচু করে ফেলে আসলেই সে এভাবে ভেবে দেখেনি।নীড় আদ্রিয়ান এর কাধে হাত রেখে সেখান থেকে চলে যায়।
নীড় নিজের রুমে যেতেই দেখে আদ্রিতা খাটের উপর বসে আছে।
—তুমি কখন উঠলে
—যখন আপনি ভাইয়ার রুমে যাওয়ার জন্য দরজা লাগিয়েছিলেন তখন।(স্বাভাবিক কন্ঠে)
— তোমার পিছে থাকার দ্বায়িত্ব আমার
তোমাকে সঠিক রাস্তা দেখানোর দ্বায়িত্ব আমারই
তোমার সব দুঃখ গুলোও আমার নামেই
শুধু আমার নামেই তোমার ভালোবাসা
তোমার চোখের মায়া তোমার হাসি তোমার বেদনা
—প্রেম নামক সম্পর্কে আমি বিশ্বাসী নয়। ভালোবাসেন তো আমার আব্বু আম্মু এই বাসাতেই আছে চেয়ে নিয়েন আমার হাত।
—উনাদের কাছে তো অনেক আগেই চেয়ে রেখেছিলাম আমার নামে তোমাকে করার অনুমতি।
—সে অনুমতি কি তারা দেন নাই?
—দিয়েছিলো কিন্তু তুমি আমার হতে রাজি ছিলা কই।তাই তো তার ছল করেই আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার ফন্দি এটেছিলো তোমার খুশি ভেবে আমিও দূরে সরে গেছিলাম আর তাতেই।
—আবার চান,,,
কথাটা বলেই আদ্রিতা হাটা ধরে।
—ভালোবাসো আমাকে??
নীড়ের প্রশ্নে থমকে যায় আদ্রির পা। পিছনে না ঘুরেই বলে উঠে
—প্রশ্নের উত্তর আমিও জানি আর আপনিও জানেন তবুও প্রশ্ন করাটা বৃথা বলেই মনে করি কিন্তু হ্যা শুনেছি ভালোবাসার শক্তি অনেক। সত্যি ভালোবাসা হলে নাকি ভালোবাসতে বাধ্য করে দেয় সামনে জনাকে। আমার ভালোবাসা তো পাপ ছিলো।কিন্তু কবুলের জোড় অনেক।
কথাটা বলেই আদ্রিতা সেখান থেকে চলে যায়।নীড় হাসে। তার উত্তর সে পেয়েছে।সে জানে আদ্রিতার মনে তার জন্য হালকা মায়া জন্ম নিলেও ভালোবাসা জন্ম নেইনি হয়তো নিবে একদিন। নীড় ফোন বের করে নিজের বাবা মাকে আসতে বলে।এমনিতেও আজ তারা আসতো বাড়ির মেয়ের এনগেজমেন্ট আর তারা আসবেনা তা তো হয়না।
***
সন্ধ্যা ৭টা পুরা বাড়িটা অত্যান্ত সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে লাইটিং এর ফুলের মাধ্যমে।উঠানে স্টেজ করে বসার জায়গাও করেছে বড় করে।এক পাশে রান্না বান্নার কাজ চলছে।আর তা তদরকরী করছে নীড়। বাড়ির বড় ছেলে হওয়াই তার দ্বায়িত্বও বেশি অবশ্য আবির আর আদ্রিয়ান ও ডেকোরেশন এর দ্বায়িত্ব দেখেছে।সব কাজ শেষ করে নীড় রেডি হওয়ার জন্য বাড়ির দিকে পা বারাতেই চোখ যায় আদ্রিতার দিকে।মেজেন্ডা কালারের শাড়ি পড়ে স্টেজের দিকেই আসছে।শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে সামনে দিকে এগুতে নিলেই নীড়ের সাথে ধাক্কা খায়।আদ্রি নিচে দেখে শাড়ি ঠিক করচ্ছিলো আর নীড় তো তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।ব্যাস দুইজন মিলেই নিচে।এই মহূর্তে এই সাইডে কেউ না থাকায় তাদের এই অবস্থায় কেউ দেখলোনা।নীড় ঘোরের মাঝেই আদ্রিতার চুল কানের পিঠে গুজে দিলো। নীড়ে স্পর্শ শরীর পেতেই আদ্রিতা কেপে উঠলো।কখন নীড়ের ঘামে ভিজা শার্টের কলার চেপে ধরেছে টের পেলোনা।নীড় আদ্রির কাপতে থাকা ঠোঁটের দিকে এগুতে নিলেই কানে আসে পায়ের শব্দ সাথে সাথেই আদ্রিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।হঠাৎ এমনে উঠানোর কারনে হচকচিয়ে যায় আদ্রি।আশেপাশে মানুষ কে দেখে বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে ভীতরে চলে যেতে নিলেই নীড় আদ্রির হাত ধরে ফেলে নিজের দিকে টেনে নেয়। ওর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে এসে বলে উঠে
— চোখে কাজল কেন দিতে গেলা আদরপাখি,,
—ভালো লাগছেনা(অবাক হয়ে)
—একদম না।(নেশাক্ত কন্ঠে)
—আপনার চোখ খারাপ আমার কাজল ঠিক ই আছে।(ভেংচি কেটে)
কথাটা বলে কআদ্রিতা নীড়ের দিকে একপলক তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।নীড় আদ্রিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
— কাজল টানা চোখে নিজের সর্বনাশের সূচনা দেখেছিলাম
কাজল ব্যাতীত চোখে শূন্যতা অনুভব করেছিলাম
পায়েলের শব্দে নিজেকে স্বর্গে পেয়েছিলাম
তোমার ঘ্রাণে বাতাসেও আমাকে জানান দিয়েছিলো
তোমার উপস্থিতিতে আমার মন জানায়েছিলো
আমার শান্তি #তোমাতেই_বসবাস করে আদরপাখি।
চলবে?