তোমাতেই রহিব বিলীন পর্ব-০৩

0
1089

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

অল্প সময় মৌণ থেকে আমি রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে তেজর্শিনী কন্ঠে বললাম,,

“ওকে ওকে, যেতে দিন আমায়। অয়েন্টমেন্ট এনে দিচ্ছি আমি!”

আহনাফ বাঁকা হেসে বিদ্রুপের কন্ঠে বললেন,,

“ওহো, সো স্যাড ফর ইউ মিসেস প্রভা! অবশেষে আপনাকে নাস্তানাবুদ হয়ে এই চাশমিশ আহনাফের শর্তেই রাজি হতে হলো! কেনো যে আগ বাড়িয়ে নাটক টা করতে গেলেন। গড নৌজ!”

ফট করে চোখ জোড়া খুলে আমি আহনাফের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। মুহূর্তের মধ্যেই যেনো উনার মুখ থেকে বাঁকা হাসিটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে উনি নির্বিকার নিষ্পলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন। অদ্ভুত এক মুখ ভঙ্গি নিয়ে উনি অকস্মাৎ একটু একটু করে আমার কপালের দিকে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করলেন। খড়তড় ভাবে কপাল কুঁচকে আমি উনার দিকে রাগীতে দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। আমার রাগী দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উনি এক অদ্ভুত ঘোরে ডুবে গেলেন। অকস্মাৎ উনি আমার কপালে লেপ্টে থাকা ঘামে সিক্ত চুল গুলোতে আলতো হাত স্পর্শ করতেই আমি উনাকে জোরচে এক ধাক্কা মেরে দৌঁড়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিচ্ছি আর পিছু ঘুড়ে তেজী কন্ঠে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলছি,,

“ইউ লুচু আহনাফ শেখ৷ আপনার ক্যারেক্টারে সত্যিই দোষ আছে৷ একলা একা একটা মেয়েকে পেয়ে তার সুযোগ নিতে চাইছিলেন তাই না? ছিঃ ছিঃ ছিঃ আহনাফ! আপনি এতো বেহায়া, নির্লজ্জ? আপনাকে উডবি হাজবেন্ড হিসেবে মানতেই আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!”

বিশ্বাস করুন, ননস্টপ কথা গুলো বলে দম নেওয়ার সময়টা ও পেলাম না, ছাদের দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে আমি ছাদের মেঝেতে ছিটকে পড়লাম। কোমঁড়ের সমস্ত হাড়, গোড় বোধ হয় ভেঙ্গে চূড়ে গুড় গুড় হয়ে গেছে। কোঁমড়ে হাত রেখেই আমি অসহনীয় ব্যাথায় আহ্ শব্দে আর্তনাদ করতেই আহনাফ তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন আমার কাছে। চোখ বুজে আমি ব্যাথায় আত্নচিৎকার করে চোখের জল ছাড়ছি আর আহনাফকে দোষারোপ করে বলছি,,

“আপনার জন্যই আমাকে পা পিছলে পড়তে হলো মিঃ চাশমিশ আহনাফ! এসবের জন্য আপনি দায়ী। আমার কোঁমড়টা বোধ হয় ভেঙ্গেই গেলো গো! এই লোকটার জন্য আমার কোঁমড়টা ভেঙ্গে গেলো!”

আহনাফ উদ্বিগ্নতায় ভরা মুখভঙ্গি পাল্টে তটস্থ কন্ঠে বললেন,,

“এক্সকিউজ মি! আমি কি তোমাকে বলেছিলাম? দৌঁড়োয় দৌঁড়োয়, আগে পিছে না দেখেই দৌঁড়োয়? নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্যই পা পিছলে পড়ে তুমি আঘাত পেয়েছ। ওকে?”

কোনো প্রতিত্তুর না করে আমি বিরামহীনভাবে ফুঁফিয়ে কেঁদে চলছি। যদি কোঁমড়টায় সামান্যতম আঘাত ও পেতাম না? তবে এই চাশমিশ আহনাফকে আজ আমি ছেড়ে কথা বলতাম না। ঠিক মুখে মুখে তর্ক করে যেতাম! কিন্তু আমি তো কোঁমড়টায় সাংঘাতিক আঘাত পেয়েছি। মুখে মুখে তর্ক করব কিভাবে? শক্ত নাকি আছি শরীরে?

আমার কান্নার ঢেউ দেখে আহনাফ তাৎক্ষণিক আমাকে পাজাকোলে তুলে শান্ত কন্ঠে বললেন,,

“হেই প্রভা, ডোন্ট ক্রাই। কিচ্ছু হবে না। কোমঁড়ে সামন্য একটু ব্যাথা পেয়েছ। আই থিংক ব্যাথা যুক্ত জায়গাটায় একটু বরফ ঘঁষলেই ঠিক হয়ে যাবে।”

ব্যাথায় চোখ, মুখ খিঁচে আমি নিরুপায় হয়ে আহনাফের গলায় দুহাত ঝুলিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বললাম,,

“আমার কোঁমড়টা হয়তো ভেঙ্গে গেছে আহনাফ। প্লিজ আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে চলুন।”

আহনাফ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছেন আর ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমায় বলছেন,,

“কোঁমড় ভাঙ্গার মতো কোনো আঘাতই পাও নি তুমি। ডক্টর নয়, তোমাকে আমার রুমেই নিয়ে যাচ্ছি। কান্না থামাও, চুপ থেকে ব্যাথাটা একটু সহ্য করে নাও।”

আহনাফের বুকের পাজরের সাথে একাত্ন হয়ে মিশে আছি আমি। ব্যাথায় যতোটা না ছটফট করছি তার’চে অধিক উনার কম্পায়মান হার্টবিটের স্পন্দনে মুর্ছে যাচ্ছি আমি। দ্রুত বেগে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন বলেই কি উনার হার্টবিট এতোটা দ্রুত গতিতে কম্পিত হচ্ছে নাকি আমার ব্যাথায় উনি ও অত্যধিক ব্যথিত হচ্ছেন বলে বুকটা উত্তেজনায় কাঁপছে? যদি ও সঠিক উত্তরটা জানা নেই আমার, তবে এটা জানি, আমার চোখে উনার ক্যারেক্টারে হাজার দোষ থাকলে ও উনি মানুষ হিসেবে ততোটা ও খারাপ নন। উনি যদি সত্যিই খারাপ হতেন তাহলে নিশ্চয়ই এতো অপমান সহ্য করার পরে ও আমাকে সাহায্য করতে ছুটে আসতেন না। উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে কোলে ও তুলে নিতেন না! আমার ব্যাথা উপসম করার জন্য এতোটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতেন না। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখ দুটো আমার মিইয়ে এলো। প্রচন্ড ব্যাথায় শরীরটা অসাড় হয়ে এলো। একটু একটু করে আমার মস্তিষ্কের বিকিরণ সমতা লোপের পথে এগিয়ে এলো। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এক পর্যায়ে আমি সেন্সলেস হয়ে পড়লাম!

,
,

জানি না এভাবে কতোটা সময় অজ্ঞান ছিলাম আমি। আধ খোলা চোখে নিজেকে আহনাফ শেখের রুমে আবিষ্কার করলাম। কোঁমড়ের যন্ত্রণাটা যেনো অনেকটাই কমে গেছে। ব্যাথা যুক্ত জায়গাটাতে ও আমি নির্দ্বিধায় হাত ছোঁয়াতে পারছি৷ স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে আমি কপাল কুঁচকে পুরো রুমটায় চোখ বুলাতেই রুমের ঠিক ডান পাশের সোফা সেটটায় আহনাফ শেখকে দেখলাম। ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকে উনি খুব মনযোগ দিয়ে হয়তোবা অফিসিয়াল কোনো কাজ করছেন। উনার সমস্ত ধ্যান, জ্ঞান জুড়ে শুধু গম্ভীরতা এবং খুব ব্যস্ততা উপলব্ধি করতে পারছি আমি৷ দেয়ালের ডান পাশে লম্বভাবে ডেকোরেট করা নীল রঙ্গের ঝাড়বাতির রোশনাইয়ে আহনাফের শুভ্র মুখের আদলটা ও নীলে নীলে ছেঁয়ে গেছে। কালো চুল গুলো ও গাঢ় নীল রঙ্গে অনেকটা ঝিলমিলিয়ে গ্লো করছে। কেনো জানি না, উনাকে দেখতে ভীষণ স্নিগ্ধ, সুন্দর, অমায়িক লাগছে। চোখ যেনো কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না। অপর দিকে, জানালা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করা রাতের স্নিগ্ধ হিমেল বাতাসটা বরাবরই উনার কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ভেবেছিলাম উনি বড্ড বেসামাল হয়ে পড়বেন, বিরক্তিতে কপাল কুঁচকাবেন, অবাধ্য চুলদের সাথে উনি ও অবাধ্যতার পরিচয় দিবেন। কিন্তু না, উনি আমার সমস্ত ধারনা গুলোকে পাল্টে দিয়ে কোনো রকম বিরক্তিবোধ ছাড়াই চুল গুলো বেহায়া হাত দিয়ে ডান দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মানতে হবে, এই লোকটার ভীষণ ধৈর্য্য আছে! আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন? এই প্রথম বার আমি উনাকে এতোটা নিঁখুতভাবে লক্ষ্য করছি। অগোচড়ে উনাকে লুকিয়ে দেখতে দেখতে বিরক্তিকর লোকটা ও ভালো লাগার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! অস্বস্তি বোধ তো মোটে ও হচ্ছে না বরং প্রতিটা মুহূর্তকে আমি ভীষণভাবে এন্জ্ঞয় করছি। কোথাও একটা ভীষণ ভালো লাগা খুঁজে পাচ্ছি!

উনাকে চুপিচুপি দেখার এক পর্যায়ে হঠাৎই উনি ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে আমার দিকে তাকালেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন। আচ্ছা? এই লোকটা বুঝল কিভাবে? আমি চুপিচুপি উনাকে দেখছি? বুঝার তো কোনো সম্ভাবনা ছিলো না! চোখ তো আর কথা বলতে পারে না… যে চোখের কথা শব্দে আশেপাশের লোকজন চোখ তুলে তাকাবে!

যাই হোক, তড়িঘড়ি করে আমি উনার থেকে চোখ দুটো সরিয়ে চরম বিচলিত হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। শাড়ির আঁচলের দিকটা কোনো রকমে ঠিক করে আমি হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতেই উনি ল্যাপটপটা উচ্চ শব্দে বন্ধ করে বাতাসের বেগে আমার একদম মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। শুকনো মুখে আমি উনার দিকে চেয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কিকিকি হলো? এএএভাবে পথ আগলে দাঁড়ালেন কেনো?”

আহনাফ চশমাটা খানিক উঁচিয়ে ভাবশূণ্য কন্ঠে বললেন,,

“কারণ, এই রুম থেকে তোমার কোথাও যাওয়া হবে না তাই!”

“মানে কি? আমি বাড়ি যাবো না?”

উনি আশেপাশ তাকিয়ে গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বললেন,,

“নো। আজ যাওয়া হবে না। বাবা অর্ডার করেছেন, কাল সকালেই তোমরা বাড়ি ফিরবে!”

পরক্ষণে আহনাফ কিছু একটা মনে করে ডেস্কের দু নম্বর ড্রয়ার থেকে একটা অয়েন্টমেন্ট হাতে নিয়ে খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। অয়েন্টমেন্টটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,,

“কি ভুলে গেছো শর্তটার কথা? শর্তটা কিন্তু এখনো পুরো হয় নি!”

থতমত খেয়ে আমি নাক, মুখ অসহনীয়ভাবে কুঁচকে মাথায় শয়তানী বুদ্ধি এঁটে কোমঁড়ে হাত দিয়ে ব্যথিত কন্ঠে বললাম,,

“উফফফফ মা, কোঁমড়টা এখনো ব্যাথা করছে! কি অসহ্য এই ব্যাথা!”

আহনাফ ভ্রু যুগল কুঁচকে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললেন,,

“ওহ্ রিয়েলি? এখনো তোমার কোঁমড় ব্যাথা করছে?”

আমি অতিশয় বিপাকে পড়ে অযথাই ডানে, বায়ে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানালাম। আহনাফ আমার মুখের দিকে খানিক ঝুঁকে এসে বাঁকা হেসে বললেন,,

“আসলে আমি বুঝতে পেরেছি, কেনো তোমার কোমঁড়টা আবারো ব্যাথা করছে!”

এই লোক আবার বুঝে গেলো নাকি আমার শয়তানী বুদ্ধি? শঙ্কা ভুলে আমি কম্পিত চোখে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কেকেকেনো?”

“ঐ যে। আবারো আমার উষ্ণ হাতের স্পর্শ পেতে! বরফ এবং নিক্স দুটোই তো আমি ঘঁষে দিয়েছিলাম তাই না?”

চোখ যেনো আমার মুহূর্তের মধ্যেই চড়কগাছ হয়ে গেলো৷ কোঁমড় থেকে হাতটা সরিয়ে আমি চোখে, মুখে বিপুল তেজ ফুটিয়ে আহনাফের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বললাম,,

“আপনাকে এই অধিকার কে দিয়েছে হুম? আমার শরীরে স্পর্শ করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আমার অনুমতি ব্যতীত আপনি কোন সাহসে আমার গাঁয়ে টাচ করলেন? বলুন কেনো টাচ করলেন?”

আহনাফ সরল, সোজা এবং সাবলীল কন্ঠে বললেন,

“আমি যদি বলি, তোমার ও কোনো অধিকার নেই ছেলেদের ফিলিংস নিয়ে ছিনিমিনি খেলার, তখন তুমি কি উত্তর দিবে? আছে এর কোনো যুক্তিযুক্ত জবাব তোমার কাছে?”

আহনাফের শার্টের কলারটা ছেড়ে আমি একদম তব্দিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উনার এক কথায় আমার বাকশক্তি রুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতায় রূপ নিয়েছে। অপমানে, লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার। প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি মাথা নিচু করে ভীষণ ইতস্তত বোধ করে বললাম,,

“আআম্মু, আব্বু কোথায়?”

উনি পাঞ্জাবির কলারটা ঠিক করে ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,,

“পাশের রুমে।”

“আম্মু, আব্বু হঠাৎ থেকে গেলেন কেনো? এনগেজমেন্টটা এ বাড়ি থেকে হওয়ার কথা ছিলো আমি মানছি, তবে আজ রাতটা ও কেনো এই বাড়িতে থাকতে হবে? যদি আমি বেশিই অসুস্থ হয়ে থাকতাম তাহলে আম্মু, আব্বু আমাকে জোর করে ডেকে বাড়ি ফিরে গেলো না কেনো?”

আহনাফ সন্দিহান কন্ঠে বললেন,,

“তুমি কি সত্যিই এখনি বাড়ি ফিরতে চাও প্রভা?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালাম। উনি পুনরায় ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,

“রাত ক’টা বাজছে দেখেছ?”

আগ্রহ নিয়ে আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই আকস্মিকতায় চোখ দুটো প্রকান্ড করে বললাম,,

“রাত ১২ টা?”

আহনাফ আমার দিকে খানিক ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললেন,,

“ইয়েস। রাত ১২ টা। এখন ডিসিশান নাও, কি করবে? এই মধ্য রাতে বাড়ি ফিরে যাবে নাকি এই আহনাফ শেখের সাথে একই রুমে রাত কাটাবে?”

“হোয়াট? আপনার সাথে রাত কাটাবো মানে?”

উনি পাঞ্জাবির কলারটা উঁচিয়ে বিস্তর ভাব নিয়ে বললেন,,

“উডবি হাজবেন্ড হই, ডিমান্ড তো থাকতেই পারে!”

আমি কপাল চাঁপড়ে তেজী কন্ঠে উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“ইসসস কিছুক্ষন আগে ও আপনাকে কতো মহানটাই না ভাবছিলাম আমি। অথচ আমার সেন্সলেসের সুযোগ নিয়ে আপনি আমার গোপন অঙ্গে তো হাত দিলেনই সাথে এখন পুনরায় নিজের ফর্মে ফিরে এলেন! আচ্ছা? এতোটা অসভ্য, নির্লজ্জ কেনো আপনি? বিয়ে না হতেই উডবি ওয়াইফের সাথে রাত কাটাতে চাইছেন?”

আহনাফ আচমকা আমার কোমড়ের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“কি করব বলো? যে হারে তুমি নিজের লোভনীয় অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলোকে আমার সামনে প্রেজেন্ট করছ। বিশ্বাস করো? না চাইতে ও নজরটা বেসামাল হয়ে ঐ দিকেই চলে যাচ্ছে। ভুলভাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনাটা ও অসম্ভব কিছু না।”

ফটাফট আমি উনার থেকে চোখ হাটিয়ে কোঁমড়ের দিকটায় নজর দিতেই দেখলাম কোমঁড় থেকে সম্পূর্ণ শাড়িটা অনেকখানি সরে গেছে। যেকোনো ব্যক্তির এই দিকে নজর পড়বেই। হম্বিতম্বি হয়ে আমি শাড়ি দিয়ে কোঁমড়ের অংশটা ঢেকে আহনাফের দিকে ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,

“নজরটা একটু সামলে রাখতে পারেন না? সবদিকেই নজর থাকতে হবে আপনার? বিদেশ থেকে এসব শিখে এসেছেন?”

আহনাফ পাঞ্জাবির হাতা দুটো ফোল্ড করতে করতে বললেন,,

“ধ্যাত, বিদেশে এসব শিখতে হয় নাকি? বিদেশীনিরা এমনিতেই সব খোলসা করে রাখতেন। যাদের ইচ্ছে হতো তারা দেখে নিতো। যদি ও আমি এসব দিকে কখনো নজর দেই নি তেমন। তবে তোমার দিকে নজর পড়ে গেলো! নিষিদ্ধ জিনিসগুলোতে নজর পড়ে বেশি। অদ্ভুত না?”

আমি উনার দিকে তেড়ে এসে উনাকে শাসিয়ে বললাম,,

“আপনি চূড়ান্ত, লুচু টাইপের একটা লোক বুঝেছেন? আপনার সাথে থাকা, আপনাকে বিয়ে করা সত্যি বলছি, সম্ভব না আমার!”

উনি আমার দিকে রুখে এসে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,

“সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলেছি তো তাই মুখ দিয়ে খুব পটর পটর কথা বের হচ্ছে তাই না? তোমার সাথে থাকা, তোমাকে বিয়ে করার বিন্দুমাএ ইচ্ছে আমার ও নেই বুঝতে পেরেছ? শোধ বুঝো তো শোধ? সেই শোধ নেওয়ার জন্যই আমি তোমাকে বিয়ে করছি। তোমার উপর সামান্যতম দয়া মায়া দেখানোটা ও আমার ঘোর পাপ ছিলো।”

“কে বলেছিলো আপনাকে দয়া মায়া দেখাতে? আমি বলেছিলাম? আমি বলেছিলাম আমাকে কোলে তুলে নিতে? সেবা যত্ন করে সারিয়ে তুলতে?”

ফুসফুসে শ্বাস সঞ্চার করে আমি আহনাফের মুখের কাছে তুড়ি মেরে পুনরায় প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললাম,,

“এক সেকেন্ড, এক সেকেন্ড। আমার উপর আপনার কিসের শোধ হুম? কিসের শোধ? কি করেছি আমি?”

রাগে গজগজ করে আহনাফ উনার চশমাটা চোখ থেকে খুলে বেডের উপর ছুড়ে মারলেন। বেডের কর্ণারে জোরে এক লাথ মেরে উনি চোয়াল শক্ত করে জোরে চেঁচিয়ে বললেন,,

“তোমার উপর মায়া দেখানোটাই আমার সব’চে বড় ভুল ছিলো। আসলে তুমি কারো দয়া, মায়ার যোগ্যই না।”

পরমুহূর্তে উনি রাগটা কিঞ্চিৎ শান্ত করে সামনের চুল খুব জোরালো টেনে আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“ওকে, কোনো ব্যাপার না। ফিরিয়ে নিচ্ছি আমি সেই দয়া, মায়া। এক্ষনি তোমাকে আবারো আগের জায়গায় নিক্ষেপ করে আসছি!”

কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে উনি দমটা পর্যন্ত নিলেন কিনা সন্দেহ হচ্ছে৷ এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে রুম থেকে প্রস্থান নিতে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। শুকনো ঢোক গিলে আমি হাত, পা ছুড়াছুড়ি করে অধৈর্য্য কন্ঠে বললাম,,

“আহনাফ ছাড়ুন আমায়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? আর এভাবে আমাকে হুটহাট কোলে তুলে নেওয়াটা আপনার কোন অভ্যাস?”

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে ঘাড়ের রগ গুলো টান টান করে বললেন,,

“যখন বিপদে পড়েছিলে, তখন তো খুব আহনাফ আহনাফ করেছিলে। আহনাফ আমাকে এখানে নিয়ে যান, আহনাফ আমাকে ওখানে নিয়ে যান, আহনাফ আমাকে ডক্টর দেখান, বলে বলে আমার মাথা খেয়ে নিচ্ছিলে। আর এখন? বিপদ থেকে যখন উদ্ধার হয়ে গেলে তখন সামান্য কোলে তোলা নিয়ে খুব অভিযোগ দেখাচ্ছ তাই না? জাস্ট ওয়েট এ্যা মিনিট মিসেস প্রভা। তোমাকে পুনরায় বিপদে ছাড়তে যাচ্ছি আমি। এবার দেখব কে তোমাকে উদ্ধার করে! কার সাহায্য তুমি চাও।”

আমি বিচলিত হয়ে কম্পিত কন্ঠে বললাম,,

“এএএএই। কিকিকি বলছেন আপনি? কোকোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?”

আহনাফ আলুথালু ভাবে হেঁটে খালি চোখে যতোটা ঠাওর করতে পারছেন আমাকে কোলে নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে এলেন! যে স্থানটায় পড়ে আমার কোঁমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম, উনি ঠিক সেই স্থানটায় আমাকে ধপ করে ফেলে ছাদের দরজা টা বাহির থেকে লক করে জল্লাদের মতো চলে গেলেন!

#চলবে…?