তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব-০৩

0
492

#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_৩

জ্ঞান ফিরে আসলেও চোখ খোলার সাধ্য হচ্ছে না তাকানোটা মুশকিল হয়ে পরছে । ঘুম চোখেই অনুভব করলাম আমি কোথাও শুয়ে আছি কিন্তু আমার জানা মতে তো আমি বাসের ছিটে হেলান দিয়ে ছিলাম কিন্তু আমার এমন মনে হচ্ছে কেনো আমি বিছানায় শুয়ে আছে। তার মানে কি,, আর ভাবতে পারলাম না তারাতাড়ি চোখ খুলে ফেলাম তাকিয়ে দেখি মাথার উপর সিলিং ফ্যান আর গায়ে একটা ব্লাংকেট জড়ানো মাথা টা হটাৎ করেই এক পাশে পেইন হতে লাগলো,তাই আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলাম, আর চিন্তা করতে লাগলাম আমি কোথায় ভয় হচ্ছে সায়ান ভাইয়ার কাছে এসে পরেছি নাতো। তাহলে আমি শেষ এসব ভাবছিলাম তখনই বাহির থেকে একটা ছোট বাচ্চার কান্নার শব্দ আসছে টিবির শব্দ আসছে আর একটা মহিলার । কন্ঠ টা আমার চেনা চেনা লাগছে সালমা ভাবির মতো, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব আমি তো মরিয়মের আপু আর দুলাভাইকে বশির ভাইয়ের ফ্ল্যাটের কথা বলি নাই শুধু বলছি সিলেট কেন্টরমেন্টের পাশেই হবে সিলেট যাওয়ার পর বশির ভাই কে ফোন দিয়ে মরিয়মের দুলাভাইের সাথে কথা বলাতাম এটাই আমার প্লেন ছিলো কিন্তু এখন চিন্তা হচ্ছে আমি এখানে পৌছালাম কেমনে তারা জানলো কেমনে আমি এখানে আসতে চাই। তাই শিওর হওয়ার জন্য গা থেকে ব্লাংকেট টা সরিয়ে নিচে রাখলাম টাইলস করা প্রচুর ঠান্ডা এতোক্ষণ পা টা গরম ছিলো নিচে রাখতেই যেন সারা শরীর কেপে উঠলো । পাশে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদর টা রাখা আছে তার পাশে মোবাইল টা । মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি দুইটা ছাব্বিশ বাজে আল্লাহ আমি এতোক্ষণ কেমনে ঘুমাইলাম কেউ একবার ডাকও দেই নাই মোবাইলের লক স্কিনে একটা মেসেজ জ্বলজ্বল করছে এম.এস. বি.নাম দিয়ে সেভ করা এই নামের পূর্ন রূপ মাফিয়া সায়ান ভাই । তার মানে সায়ান ভাইয়ের আরেকটা মেসেজ । কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলের লক টা খুলে মেসেজটা পরতে লাগলাম ,

– A surprise is waiting for you,,,

মানে কি সায়ান ভাইয়া আবার কি সার্রপ্রাইজ দিবে উনার সার্রপ্রাইজ মানেই তো আমার কাছে ভয়ংকর কোনো কিছু। কারন সায়ান ভাই সবার কাছে ভালো হলেও আমার কাছে একটা সাইকো। সবার চোখে মানুষ কে জীবন দিলেও আমার কাছে মনে হয় সে মানুষের জিবন নেয় যে কথাটা আজ পর্যন্ত আসি কাউকে বলতে পারি নাই। যাক গে এসব কথা বাদ দিয়ে এখন আমাকে আগে শিওর হতে হবে আমি কিভাবে এখানে আসলাম তাই রুমের দরজাটা খোলে যেই বাহিরে বের হলাম চোখে পরলো সাদিয়া সোয়াদ সোফায় বসে টিবিতে কার্টন দেখছে তাদের দেখে তো আমার আরো সন্দেহ হচ্ছে বিশেষ করে মরিয়রের আপুর আর দুলাভাইের উপর কারন তারা ছাড়া তো আর কেউ জানে না আমি সিলেট কেনো এসেছি। সবই কেমন যেনো তালগোল পাকিয়ে গেছে কোনো কিছুই মিলাতে পারছি না অংকের সূত্রের মতো অংকতে যেমন সূএ না মিললে সব তাল গোল পাকিয়ে যায় সেই অবস্থা এখন আমার কোনো দিক দিয়েই মিলতেছে না। সামনে এগিয়ে সাদিয়া কে বললাম,
-সাদিয়া ,,
হটাৎ নুশার ডাকে সাদিয়া পাশে ফিরে তাকিয়ে বললো,
-নুশা ফুপ্পি ঘুম থেকে উঠে গেছো ঘুম ভাংলো তবে তোমার।
সাদিয়ার কথায় সোয়াদও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-নুশা ফুপ্পি তুমি এতো ঘুম ঘুমাও কেমনে আমি তো রাতেই বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারিনা আর দিনের বেলাতেও না।
আমি তাদের কাছে তাদের দুইজনের মাঝে বসে বললাম,
-আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই বলে তোমরা আমাকে ডাক দিবে না। আমি হয়তো একটু বেশি ক্লান্ত বলে বেশি ঘুমিয়েছি আচ্ছা সোয়াদ আমাকে এখানে কে নিয়ে আসছে।
-আব্বু আর একটা ভাইয়া,, না না ভাইয়া না আংকেল । আংকেল তোমাকে কোলে নিয়ে দিয়ে গেছে।
-মানে , বশির ভাইয়ের সাথে আবার কে আসলো আর আমাকে কোলে নিলো । মরিয়মের দুলাভাই না তো,,,
নুশার কথা শুনে সাদিয়া বললো,
-মরিয়মের দুলাভাই কে ফুপ্পি,,?
-আমার বান্ধবীর দুলাভাই ।
-অহ।
-হুম আচ্ছা লোকটা কেমন ছিলো।
-কেমন আবার লম্বা ছিলো,আর অনেক সুন্দর ছিলো আব্বুর মতো ফর্সা আর আব্বুর থেকেও লম্বা ।
-মানে মরিয়মের দুলাভাই তো বশির ভাইয়ের থেকে লম্বা হবে না সমান সমান হতে পারে আর তাছাড়া মরিয়মের দুলাভাই তো শ্যামলা । আচ্ছা সাদিয়া লোকটা কি রংঙের কাপড় পড়া ছিলো,
-ভিতরে কি পরা ছিলো তা জানি না কিন্তু কালো কালার জেকেট পরা ছিলো।
আমি হতাশ আর কিছুটা অসুস্তি কন্ঠে বললাম
-মরিয়মের দুলাভাইও তো কালো কালার জেকেট পরা ছিলো।
আমাদের কথার মাঝেই ভাবি কোলে একটা পিচ্চি কে নিয়ে রুম থেকে হাসি মুখে বের হতে হতে বললো,

-নুশার তাহলে ঘুম ভাংলো , কেমন ঘুম হইছে তোমার নুশা।
-ভাবি আর শরম দিয়েন না । আমি নিজেও অবাক এতোক্ষণ এখানে ঘুমালাম কেমনে পাক্কা তেরো ঘন্টা কেমনে ঘুমাইলাম ।
আমার বলতে দেরি সোয়াদ আর সাদিয়া চিৎকার করে বললো,
-কিহ,,, নুশা ফুপ্পি তুমি তেরো ঘন্টা ঘুমিয়েছো আমরা তো ভাবছি দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছো ।

ভাবি অবাক হয়ে বললো,
-নুশা আল্লাহ তুমাকে হায়াত দেক কেমনো ঘুমাইলা এতোক্ষণ তোমার কানে কি আমাদের কোনো শব্দই যায় নাই।
– নাহ ভাবি।
-আসার সময় ঘুমের বরি টরি খেয়ে আসছো নাকি।
-আমার জানা মতে তো আমি বাসে উঠে কিছুই খাইনি তাহলে,,
-জানি না কি ঘুম দিছো তুমি এক আল্লাহ আর তুমি জানো তুমার এই ঘুমের রহস্য।
– আমিও জানি না আমার এই ঘুমের রহস্য । আচ্ছা ভাবি আমাকে কে দিয়ে গেছে ?
-কেনো তুমি যার সাথে এসেছো তোমার মামাতো ভাই।
-মানে মামাতো ভাই মানে।
-হুম সাদিয়ার আব্বু তো তাই বললো,
– নাম বলে নাই।
-হে বলছে তো, সায়ান নাকি কি যেনো নাম।
-এএ,,,,সায়ান ভাইয়া,
-কি হলো,
-যার কাছ থেকে বাঁচার জন্য এখানে আসছি সেই আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে গেলো।
-মানে কি বলতাছো।
-ভাবি সায়ান ভাইয়া কি আর কিছু বলছে?
-না, তুমাকে এখানে নিয়ে আসার পর সোয়াদ সাদিয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেছিলো আমি সায়ানের সামনে যাইনি আমি রুমে ছিলাম, রুম থেকেই একবার দেখছি । আর সাদিয়ার আব্বু তো তোমাদের এখানে নিয়ে এসে তুমাকে রুমে শুয়ে দিয়ে আমার কাছে তোমার পরিচয় দিয়ে আবার চলে গেছে৷ তার বিশ এিশ মিনিট পরই সায়ান আমাকে না বলেই চলে গেছে কিন্তু যাওয়ার আগে সোয়াদ সাদিয়া কে বলে গেছে আমাকে বলতে যে সে চলে গেছে।

ভাবির কথা শুনে আমার অবস্থা শেষ কি বলে ভাবি এসব আমি তে শেষ যার জন্য এতো কিছু এতো লুকোচুরি সেই আমাকে এখানে এসে দিয়ে গেলো । এটাই কি তার সার্রপ্রাইজ । আমি শেষ তাহলে কি গেম খেলছে আমার সাথে সায়ান ভাইয়া কি চায় কিছুই বুঝতে পারছি না ।

আমার ভাবনার মাঝেই ভাবি বলে উঠলো,
-কি ভাবতেছো নুশা,,,।
-ভাবি কিছু না, ভাবি প্লিজ আমাকে এখন এমন কোনো জায়গায় পাটান যেখানে গেলে সায়ান ভাইয়া আমাকে পাবে না।
-মানে কি বলতে চাও তুমি নিজেই তো সায়ানের সাথে আসলা আর এখন আবার বলতাছো এমন যায়গায় পাঠাতাম যেখানে সায়ান তুমাকে না পায় এসবের মানে কি, কাকা কাকি কি জানে এই বিষয়ে,,,?

ভাবির কথায় আমি ভাবি কে সব বললাম । ভাবি প্রথমে অবাক হলেও পরে হাসি দিয়ে বললো,
-এতে সমস্যা কি ,,,? দেখতে তো ভালোই আর তুমি তো বললা ডাক্তারি পরছে তাও আবার হার্ট সার্জনের তাহলে তো আরো ভালো, তুমি রাজি হচ্ছো না কেনো যেখানে তোমার পরিবারের সবাই রাজি। আর এমন ছেলে পাওয়া তো ভাগ্যের বেপার সেপার।
-ভাবি আপনি বুঝবেন না আমি কেনো রাজি না । যেখানে আমার পরিবারেরই কেউ বুঝে যায় সেখানে আপনি কিভাবে বুঝবেন বলেন ।
-সমস্যা কি সেটা না বললে সবাই বুঝবে কেমনে বলো,
-সমস্যা বললে আপনি বিশ্বাস করবেন না ভাবি।
-শুনি তোমার সমস্যার কথা ।
আমি পাশে তাকিয়ে দেখি সোয়াদ সাদিয়া আমার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেছে দু’জনই ছোট সাদিয়া এবার ষষ্ঠ শ্রেনিতে আর সোয়াদ এবার প্রথম শ্রেনীতে আর আমার কোলে সাফওয়ান মাএ দুই মাস হইছে কথা বলার মাঝেই আমি সাফওয়ান কে কোলে নিছিলাম। জন্মের পর এই প্রথম তাকে সামনাসামনি দেখছি আর কোলে নিছে মোবাইলে ছবি দেখছি । আমার সাদিয়াদের দিকে তাকানো দেখে ভাবি সাদিয়া আর সোয়াদকে বললো,
-সাদিয়া সোয়াদ ছাদে কাপড় দেওয়া আছে তোমরা এখনো আনো নাই যাও এখনি দুই জন গিয়ে কাপড় গুলো নিয়ে আসো।
সাদিয়া সোয়াদও ভাবির কথা মতো চলে গেলো তখন আমি বলতে লাগলাম,
-ভাবি সায়ান ভাইয়া একটা মাফিয়া ।
-মানে, ডাক্তার হলে মাফিয়া হয় কেমনে আবার। আর বয়স ওতো তেমন না।
-ভাবি মাফিয়া হতে কি বয়স লাগে। আর কিছু বলতে যাবো তখনই মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দ আসলো সাইট থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে মেসেজ টা দেখে আর কিছু বললাম না ভাবি কে ভাবি তো এক লাগারে প্রশ্ন করাতেই আছে আমি অবাক হয়ে বসে আছি সে জানলো কেমনে আমি এখন এসব কথা ভাবি কে বলছি।
-কি হলো নুশা বলছো না কেনো।
-ভাবি আপনি শুধু এই টুকুই জেনে রাখেন সায়ান ভাইয়া উপরে অনেক ভালো হলেও নিচে তেমন ভালো না।
-মানে৷ বুঝিয়ে বলো,
-ভাবি প্লিজ আপনি আমাকে আর একটু সাহায্য করেন দয়া করে আমাকে এখান থেকে সরিয়ে এমন এক জায়গায় রাখার ব্যবস্তা করেন সেখানে সায়ান ভাইয়া আমাকে পাবে না।
-কতো দিন এভাবে লুকিয়ে থাকবে তাও আবার একই দেশে৷ ধরা তো কোনো এক সময় তাই না ।
-পরের টা পরে দেখা যাবে, এখন আপাতত এখনের ব্যবস্তা টা করেন।
-আচ্ছা আমি দেখতেছি।
-আচ্ছা , বলে সাফওয়ান কে ভাবির কোলে দিয়ে রুমের দিকে চলে এলাম রুমে এসে দেখি মোবাইলে চার্জ নাই তাই ভাবির কাছে গিয়ে চার্জার নিয়ে এসে মোবাইল চার্জে দিয়ে ভাবতে লাগলাম সব৷। মাথা এমন ধরা ধরেছে আর প্রচুর খিদা লাগছে খিদার কথা ভাবতেই দেখি সোয়াদ রুমে খাবার নিয়ে আসলো আর বললো,
– নুশা ফুপ্পি আম্মু খাবার টা দিয়েছে খেয়ে নেও ।
আমিও আর কথা না বলে হাত ধুয়ে এখানে বসেই খাওয়া শুরু করে দিলাম প্রচন্ড খিদা লাগছে। খেতে খেতে ভাবছি আয়ান ভাইয়া যেহেতু জেনেই গেছে এখন তাহলে আম্মু আব্বু ফোন দিতেই পারি । খাওয়ার মাঝেই সোয়াদ বললো,
-নুশা ফুপ্পি তুমি ঐ আংকেল কে বিয়ে করবা।
-না শোনা ।
-কেনো ফুপ্পি ।
-তোমার ঐআংকেল টা ভালো না।
-কে বলেছে ভালো না। আংকেল টাতো অনেক ভালো আমাকে আর সাদিয়া আপু কে অনেক আদর করেছে বলছে কালকে আবার আসলে আমার আর সাদিয়ার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবে।

সোয়াদের কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম না কি বলবো,
সোয়াদ সাদিয়া কে আমি ছোট থেকেই আদর করে আসছি । সাদিয়ার থেকে সোয়াদ বেশি আমার প্রতি পাগল৷। দুই বছর হবে কয়েকদিন পর যে তারা আমাদের নরসিংদী শহর ছেড়ে এখানে সিলেট শহরে এসেছে।

#চলবে,,,,।