তোমার আসক্তিতে আসি আসক্ত পর্ব-১২

0
296

#তোমার_আসক্তিতে_আসি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

রাতের আকাশে সূর্যের আগমন জানান দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে এখন রাএির শেষ প্রহর চলছে। বিছানায় বসে জানালার সাথে হেলান দিয়ে চায়ের প্রতিটি চুমুকে তৃপ্তি বাহিকায় চোখ বন্ধ করছে আর ভাবছে সায়ানের করা হঠাৎ আক্রমণের কথা । ভাবতেও পারেনি নুশা সায়ান যে এমন হটাৎ করে এসে এমন কিছু একটা করবে । চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দিয়েই চোখ বন্ধ সেই মুহূর্ত গুলো ভাবতে লাগলো –

ফ্লাসবেক,,,

ঘোর লেখা কন্ঠে কেউ একজন কানের কাছে বলে উঠলো,

”ব্লাক ডায়মন্ড কেনো আমাকে এতো পুরাও তুমি….!

চমকে উঠে মাথা ঘুরিয়ে শব্দের উৎসের দিকে মুখ করতেই কেউ একজন গলার কাছে হাত ডুবিয়ে ঘাড় চেপে কাছে আনলো । রুম এখনো অন্ধকারে আচ্ছন্ন তাই লোকটার মুখ দেখতে না পারলেও তার বলা কথা একেবারে মস্তিষ্কের মধ্যে গিয়ে বলে উঠছে সে যে সায়ান , ডক্টর সায়ান চৌধুরী তাকে আগে জমের মতো ভয় পেলোও এখন কেনো জানি ভয় কাজ করে না । সায়ান এক হাত দিয়ে নুশার মুখ চেপে আছে আরেক হাত দিয়ে ঘাড় । নুশা কথা বলতে পারছে না মুখ থেকে শুধু ওম ওম শব্দ তুলছে সায়ান বুঝতে পেরে হাতটা সরিয়ে নিজেও নুশার থেকে সরে দাঁড়ালো আর রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো মূহুর্তের মধ্যেই অন্ধকার রুম আলোকিত হয়ে গেলো । সায়ান লাইট জ্বালিয়ে পিছনে ফিরে নুশাকে দেখতে গেলে তারাতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নেয় কারন নুশা শাড়ী পরে থাকায় তার পেট থেকে শাড়ী টা সরে গেছে যার ফলে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে । আর এদিকে নুশা এখনোও উপরের সিলিং ফ্যানের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে তার শরীর যেন এখনো ভারী লাগছে নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে । ছেলদের এতো কাছে কখনো গিয়েছে কিনা মনে নাই তার। কিশোরী জীবনে এই প্রথম কোনো ছেলের এতো কাছে গিয়েছে তার জানামতে। নিজের ভেতরে কেমন একটা অদ্ভুত ফিল অনুভব করছে নুশা।
নুশাকে এমন স্টেচু হয়ে চুপচাপ থাকতে দেখে সায়ান নুশার দিকে না ফিরেই বলে উঠলো ,

– মেম শাড়ী টা একটু ঠিক করেন তা না হলে নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্ট সাধ্য হয়ে যাবে।

সায়ানের এমন কথা শুনে মূহুর্তেই কল্পনা জগৎ থেকে ফিরে এসে শুয়া থেকে উঠে বসে তাড়াতাড়ি শাড়ী ঠিক করে সায়ানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো,,

-আপনি,, আপনি কখন আসলেন । আপনি না বলেছেন আপুর বিয়েতে থাকবেন না তাহলে,,,

আর কিছু বলার আগেই সায়ান পিছনে ফিরে নুশার চোখের দিকে চোখ রেখে বলে উঠলো,
-আমি আসাতে বুঝি তোমার অসুবিধা হচ্ছে ।

সায়ানের চোখের সাথে চোখ পরতেই নুশা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো আর বলে উঠলো,,

-অসুবিধা ,, আমার কেনো অসুবিধা হবে…..!
সায়ান এবার নুশার কাছে গিয়ে নুশার পাশে বসে বললো,
-তাহলে,,,
-তাহলে কি ,, তাহলে কিছু না । মামি বলছে আপনার নাকি খুব জরুরি কাজ আছে আপনি আসতে পারবেন না তাই আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি এখানে আমার কি অসুবিধা থাকবে। আমার কেনো অসুবিধা নেই আপনি আসাতে কারন আপনি আসলেই আমার কি না আসলেই আমার কি ।।

-তুমার কিছু না।
-নাহ আমার কিছু না আমার আবার কি হতে যাবে।
-ওমা আমি আসলে তো তুমি অন্য ছেলেদের সাথে মন মতো কথা বলতে পারবে না ।

নুশা এবার সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে রাগী গলায় বলে উঠলো,

-এই একদম আজাইরা কথা বলবেন না। কারন আমার যদি কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলার ইচ্ছেই থাকে তাহলে আপনি সামনে দাড়িয়ে থাকলেও আমি কথা বলতে পারবো।

-অহ তাই না (মুচকি একটা হাসি দিয়ে) তা আসো দেখি তুমি কেমনে আমার সামনে কোনো ছেলের সাথে কথা বলো।

সায়ানের হাসি দেখে যেনো এখন রাগ বেশি করে হচ্ছে নুশার তাই নুশা এখন সায়ানের থেকে মুখ সরিয়ে বলে উঠলো,

-আমি সে রকম মেয়ে না যেমন টা আপনি ভাবেন। আমি অন্য সব মেয়ে দের মতো ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য পাগল না ।
কিছুক্ষণ থেমে তাচ্ছিল্যের সূরে আবার বলে উঠলো ,
– হাহ’ তারপরও আমার আপনার কাছ থেকে শুনতে হয়েছে আমি দশ বারো প্রেম করি৷। তা বলি কি ভাই আপনি কি কোনো দিন আমাকে নিশাত ভাই ছাড়া আর কোনো ছেলের সাথে ঘুরতে দেখেছেন । আর না আপনি আমার কোনো প্রেমিক খোঁজে এনে আমার সামনে দাড় করাতে পারবেন।

নুশার এমন তাচ্ছিল্য সূরে বলা কথা শুনে সায়ানের মুখের হাসি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় আর মিন মিন সূরে অভিযোগ নিয়ে বলে উঠলো,

-শুধু কি আমি নিজেই একা মিথ্যা কথা বলেছি তুমি বলোনি
তুমিও অতো বলেছো আমি নাকি মাফিয়া । তুমিই বলো আমাকে কখনো মারধর করতে দেখেছো মাফিয়ারা তো খুনখারাপি করে আমি কয়টা খুন করেছি বলো ।

নুশা এবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি ছবি দেখেছি আবার আমি শুনেছি তাই বলেছি।
-তাহলে আমার ক্ষেত্রে অতো সেরকম টা হতে পারে তাই না তোমার মতো আমিও তোমাকে ভুল বুঝেছি । তোমার মতো কেউ একজন আমাকেও তোমাকে ভুল বুঝতে বাধ্য করেছে।

-তাই বলে আপনি একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না সত্যি টা ।

-তুমি নিজে একবারো আমাকে জিজ্ঞেস করছো সত্যি টা কি..? সত্যি টা না জেনেই তো সবাই কে বলে বেড়িয়েছো আমি মাফিয়া । কিন্তু আমি তো শুরু ফেমেলীর সামনে বলেছি তুমি রিলেশন করো এখানে অন্যায় টা কার বেশি বলো তুমার নাকি আমার।

-অবশ্যই আপনার “কারন আপনি বড়” ।

সায়ান এবার নুশার কথা শুনে মুখের সেই হাসিটা আবার ফিরিয়ে এনে এক হাত দিয়ে চুলে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে খুবই ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,

-হুম সব দোষ বড়দের দোষ ।
সায়ানের এমন কথা শুনে নুশাও মনে মনে হেসে উঠলো কিন্তু তার হাসিটা সায়ানের সামনে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না তাই বিছানা থেকে নেমে রুমের দরজা খুলে বাহিরে চলে এলো । বাহিরে এসে বুঝতে পারলো জামাইয়ের বাড়ির সবাই চলে গেছে তাই নুশা হাটতে হাটতে স্টেজের কাছে গিয়ে দেখতে পেলো নিশির পাশে ইমা বসে নিশির এক হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে আর কয়েকজন মিলে কব কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। হঠাৎ করেই নিশির চোখ যায় তার ছোট বোন নুশার দিকে দাঁড়িয়ে আছে একা আর তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই নিশি আরেক হাত দিয়ে নুশাকে ইশারা করে ডেকে বলে উঠলো এদিকে আসতে। নিশির মুখে নুশার কথা শুনে ইমাও নুশার দিকে তাকায় তখন নুশার আর ইমার দুইজনের দুইজনের দিকে চোখ পরে আর সাথে সাথেই দুইজন চোখ ফিরিয়ে নেয়। নুশা নিশির ডাকে নিশির কাছে গেলে নিশি তাকে৷ মেহেদী পরিয়ে দিতে বললে নুশা বলে,,
-আপু আমি তো সুন্দর করে মেহেদী পরাতে পারি না তুমি তো জানোই।
– যেমন পারিস তেমনই দে তো বেশি কথা না বলে।

নুশাও আর কথা না বলে নিশির পাশে বসে নিশির হাতে মেহেদী দিতে লাগলো। মেহেদী পরানো শেষ হলে কিছুক্ষণ আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার মতো ঘুমিয়ে পরলো। সবার চোখে ঘুম আসলেও নুশার চোখে ঘুম ধরা দেয় না চোখ বন্ধ করলেই তখনকার কথা মনে পরে যায় ।

কল্পনা জগৎ থেকে ফিরে আসলো বাড়িতে মেহমান বাচ্চাদের কান্নায় । বাহিরেও সূর্যের আলো ফুটেছে পৃথিবী সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে । আজ আপুর বিয়ে , বিয়েটা আনন্দ হলেও কনে বিদায় টা খুবই দুঃখ জনক । নুশার এখই ভাবতে কান্না পাচ্ছে তার বোন তার থেকে দূরে চলে যাবে আরেক বাড়িতে থাকবে ।

#চলবে,,?