#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৫৫)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
তামান্না চলে যাওয়ার পর সাদিব বাসা ছেড়েছে, এখন বেশিরভাগ সময় তার বাহিরে নয়তো হসপিটালে কাটে। বাবার প্রতি চাপা অভিমাম আর মায়ের প্রতি জমে আছে তীব্র মনঃকষ্ট। প্রতিটি মা সন্তানের ভালো চাওয়ায় অটুট থাকে অথচ তার মা তার সেই ভালো চাওয়াতেই প্রথম এবং একমাত্র বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মা হয়েও তার সাথে কীসের এতো শত্রুতা? মনে মনে উত্তরের সন্ধানে নামে সাদিব। কিন্তু দিন শেষে সেই শূন্যের ঘরে এসে পৌছুতে হয় তাকে। কোনো জবাব খুঁজে পায় না।
অনেকদিন পর বাড়ি ফিরেছে সাদিব। তাও অনেক রাত করে। বাসার কলিং বেল চাপতে দরজার ওপাশে সাদিবের মা সামিরা দৃশ্যমান হলেন। কলিং বেলটাকে চাপার আগেও খুব করে চেয়েছে যেন দরজার ওপাশের মানুষটা তার প্রেয়সী হয়। কিন্তু এতেও হতাশ হতে হল তাকে। সাদিবকে আসতে দেখে তার হাসি মুখে ফুটল। কতদিন পরে দেখছেন ছেলেকে। আবেগে জড়িয়ে ধরতে গেলে, সাদিব হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয়। কণ্ঠে গম্ভীরতা এনে বলে উঠে, ” থাক কোনো দরকার নেই এসবের। ”
সামিরা ছেলের কথায় অবাক হলেন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, ” কেমন আছিস বাবা? তোর চেহারার এমন অবস্থা করে রেখেছিস কেন? ”
” দেখতে ভালো লাগছে না মা? ”
” এভাবে কেন বলছিস বাবা? আমি তো তোর মা। কোনো মা কি চাইবে তার সন্তান ভালো না থাকুক?”
” কোনো মা আর আপনার মধ্যে অনেক তফাৎ। আপনি খারাপটাও চাইতে পারেন। তাই অন্য মায়েদের এসবের মধ্যে টেনে অন্তত দয়া করে তাদের মাতৃত্বের অপমান করবেন না। ”
সামিরাকে পুনরায় সাফাইয়ের সুযোগ না দিয়ে চলে গেল সাদিব। শত হলেও সে তার মা। মা মা-ই হয়, ভালো হোক কিংবা মন্দই না হোক। সামনে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ ক্ষতে আঘাত হানবে।
প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটে সাদিবের। তামান্নার উপস্থিতিতে কখনো বুঝতে পারেনি তামান্না তার জীবনে কতখানি জুড়ে আছে। যখন বুঝতে পারল তখনই সৃষ্টিকর্তা তাদের আলাদা করে দিল। কাউকে ভালোবাসা কি তবে মহাপাপ? নয়তো ভালোবাসলে কাঁদতে হবে কেন? নির্ঘুম, নিস্তব্ধতা, চাপা বেদনা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে কেন? মানুষ চাইলেও কেন এর থেকে দূরে সরতে পারে না? জবাব একটাই। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষ বরাবরই আকৃষ্ট।
.
★
.
অনেকগুলো দিন বাদে তন্ময় তামান্না মুখোমুখি বসে আছে। তন্ময়ের মাঝে এখন আর আগের সেই জড়তা নেই। যা আছে তা কেবল চক্ষুলজ্জা। বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার পাশাপাশি আগে তামান্নাকে দেখলে যে হৃৎস্পন্দন তার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেত সেটি আজ স্বাভাবিক। তামান্না তাহলে ঠিক বলেছিল, এটা কেবল অল্প বয়সের আবেগ মাত্র। ক্ষণিকের আকর্ষণ। ভালোবাসা তো নয়।
তন্ময় আসার পর থেকে খেয়াল করছে তামান্না নির্বিকার। আগেকার চঞ্চলতা এখন আর তার মাঝে বিরাজমান নেই। সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে তার সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ে বলে মনে হচ্ছে। তন্ময় তামান্নাকে স্বাভাবিক করার জন্য গলা খাঁকারি দিল। বোঝা গেল কাজ হয়েছে। তামান্না চোখ তুলে একপলক তন্ময়ের দিকে তাকাল।
তন্ময় স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলে উঠে, ” কিরে, কেমন আছিস তোরা? ”
তামান্না বুঝতে পারেনি। যা তার ভ্রু কুঁচকানো দেখে বুঝতে পারল তন্ময়। তামান্না জানতে চাইল, ” কারা? ”
” কেন তুই কি এখন একজন আছিস? দু’জনে রূপান্তরিত হয়েছিস না? সব এখন ডাবল তোর বুঝলি? ”
” হুমমম বুঝলাম। ”
” কি বুঝলি? ”
” আমরা ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ”
” ভালো ছিলাম, কিন্তু এখন আর নেই। ”
” এখন কি হয়েছে? ”
তন্ময় সিরিয়াস হয়ে গেল। ” চোখের সামনে এমন এক অদ্ভুত প্রজাতির প্রাণী বসে থাকতে কেউ ভালো থাকে বল? ”
তামান্না কিঞ্চিৎ রাগত স্বরে বলল, ” আমি অদ্ভুত প্রাণী? ”
” নয়তো কি? গিয়ে আয়নায় ভালো করে দেখ একবার বুঝবি, এই বান্দা ভুল বলতেই পারে না। সত্যি ভাই তোর দিকে তাকালে এখন আমার ভয় লাগে। ” চোখে হাত দিয়ে ডাকার চেষ্টা করল তন্ময়।
তামান্না মুখ বাকিয়ে বলল, ” হ্যাঁ হ্যাঁ, কেমন বলতে পারেন জানা আছে আমার। ”
তন্ময় হাসল। কেউ চাইলেও নিজের স্বভাব সহজে বদলাতে পারে না। জীবনের কঠিন ঝড়ের কবলে পড়ে পরিস্থিতির বশে নিজেদের চঞ্চলতা হারিয়ে শান্ত প্রকৃতির রূপ ধারণ করে ঠিকই! কিন্তু ভিতরের দিক থেকে সেই পুরাতন মানুষটিই থেকে যায়। তামান্নার ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম ঘটেছে। তার মাঝে আগের পুরাতন স্বভাবটা এখনো লুকায়িত আছে। শুধু মাত্র ক্ষেত্রবিশেষে প্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছে।
তন্ময় চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। শান্ত স্বরে তামান্নাকে বলল, ” তোকে এভাবে দেখতে একদমই ভালো লাগছে না দোস্ত! ”
তন্ময়ের কণ্ঠে অনেকদিন পর সম্বোধনটা শুনে তামান্না চমকাল। সম্পর্কে তারা এখন আর বন্ধু নেই। সম্পর্ক বদলে আত্নীয়তায় রূপ নিয়েছে। বন্ধুদের মুখের এই ছোট্ট সম্বোধন কখনো সখনো মানুষকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারে।
তামান্নাকে নির্বিকার থাকতে দেখে তন্ময় জানতে চাইল, ” কি ভাবছিস? বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা? ”
” তাহলে কিভাবে দেখতে ভালো লাগবে বল? ”
” আগের সেই উড়নচণ্ডী মেয়ে তামান্না হয়ে দেখা। আমার জন্য না হোক তোর ডাক্তার সাহেবের জন্য। তোর আর তোর ডাক্তার সাহেবের বাচ্চাটার জন্য হয়ে যা। দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। ”
” কিছু ঠিক হওয়ার নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্কে একবার বিচ্ছেদের সুর টানলে সেটায় কখনো জোড়া লাগে না রে! ”
” অবশ্যই লাগবে। লাগতেই হবে। সব এখন তোর হাতে। তুই চাইলে সব সম্ভব। তোর বাবা মা বা তোর শ্বশুর বাড়ির লোক কোনো বাঁধা না। সাদিব ভাইয়ার সাথে আমার কথা হয়েছে। উনিও তোকে ছাড়া ভালো নেই। ”
তামান্নার অধর দ্বয় কিঞ্চিৎ প্রসারিত হল। ” সে আমাকে ছাড়া সবচেয়ে বেশি ভালো আছে। ”
তন্ময় লম্বা শ্বাস ছাড়ল। তামান্না নাছোড়বান্দা। তাকে বোঝানো এতো সহজ হবে না, আগে থেকেই সে জানত। হাল ছেড়ে দিল তন্ময়। বলল, ” যা তোর কথাই ঠিক। বাকি সব ভুল। শেষ কথার এক কথা বলব, তোর মনকে জিজ্ঞেস কর সে কি চায়। আপাতত তাকেই নাহয় গুরুত্ব দে। পাশ্ববর্তী কারোর কথা শোনার দরকার নেই। ”
.
★
.
গভীর রাত। ঘুমন্ত পরিবেশ জুড়ে সুনশান নিরবতা। জাগ্রত কেবল একজনই, সাদিব! অন্য সব রাতের মতো আজকের রাতটাও ব্যতিক্রম নয়। বারান্দার এপাশ থেকে অন্যপাশে পায়চারি করছে সাদিব। তামান্নার পরিবর্তে তামান্নার পছন্দের জিনিসগুলোই এখন তার নিত্যদিনকার সঙ্গী। বারান্দার গাছগুলো পানিশূন্য নির্জিব হয়ে পড়ে আছে। তামান্না যদি কখনো জানতে চায় এদের কথা? কি জবাব দেবে তাকে? যদি জানতে পারে তাদের যত্ন নিতে পারেনি সে তবে খুব অভিমান করবে প্রেয়সী। গাছগুলোতে পানি দিতে গিয়ে আনমনে ভাবল সাদিব। গাছেদের বলল, ‘ চিন্তা নেই এইতো কয়েকদিনের ব্যাপার একটু সবুর কর। তোদের মালকিনকে শিগগিরই তোদের কাছে নিয়ে আসব।’ বলতে গিয়ে হেসে ফেলল। তামান্নার সাথে থাকতে গিয়ে সেও তার মতো এদের সাথে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে।
মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটিয়ে সাদিবের সেলফোনটা স্ব শব্দে বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে আসা চিরপরিচিত প্রেয়সীর নাম দেখতে পেয়ে সাদিব অবাক হল। এতো রাতে ফোন করার যথাযথ কারণ খুঁজে পেল না। দেরি না করে ফোন কাটার আগে রিসিভ করল।
ফোনের দু’পাশে পিনপতন নীরবতা। দু’জন মানুষ দুজনের অভাবে রাত জাগছে, অথচ দুজনের কেউ সেটা জানত না। নিরবতা ছাড়িয়ে সাদিব বলল, ” ঘুমাওনি? ”
” তুমি ঘুমিয়েছিলে বুঝি? ”
সাদিব সেকেন্ড দুয়েক মৌনতা বজায় রেখে বলল,
” আমার ঘুম তো কবেই তুমি সাথে করে নিয়ে গিয়েছ। ঘুমাই কি করে? ”
” প্রতিদিন রাত জাগো? ”
” হুম। ঐযে বললাম নিয়ে গেছ। ”
ফোনের ওপাশে পুনরায় নিরবতা বিরাজ করছে। সাদিব বলল, ” চুপ করে আছো কেন? কিছু বলছো না যে? ”
তামান্না আমতা আমতা করে বলল, ” আসতে পারবে একটু? ” কথাটা বলার সময় তামান্নার মাঝে জড়তা এসে ভর করেছিল। ভেবেছে এই বুঝি সাদিব মুখের ওপর বলে দেয় এতো রাতে সম্ভব না। অথচ তাকে অবাক করে দিয়ে সাদিব সাথে সাথে জবাব দিল। ” এক্ষুণি আসছি! ”
.
★
.
বাসার প্রতিটি সদস্য ঘুমিয়ে পড়েছে। তন্ময়ের বলা কথাটা গত তিন ঘন্টা যাবত তামান্নাকে ভাবিয়েছে। তার কি সত্যি উচিত হবে মনের কথা শোনা? প্রতিদিন এসময় তার ডাক্তার সাহেবকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। একবার কি আসতে বলবে? ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখল, রাত দুটো বেজে বিশ মিনিট। মন জুড়ে এলোমেলো চিন্তারা দলা পাকাচ্ছে। অবশেষে সকল চিন্তা ছাড়িয়ে সাদিবকে ফোন করেই বসল। ভেবেছে রিসিভ না করলে দ্বিতীয়বার আর বিরক্ত করবে না।
তামান্না সদর দরজার সামনে পায়চারি করছে। সাদিব কখন আসবে কখন তার দেখা পাবে! সে চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতে চাইছে না। কিয়ৎক্ষণ সময় পর পর দরজায় গোলাকৃতি ছোট্ট গ্লাসটিতে চোখ রাখে। এভাবে কয়েকবার তাকানোর পরমুহূর্তে গ্লাসে সাদিবের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে। সাদিব নিঃশব্দে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে। কালবিলম্ব না করে দরজা খুলতে দু’জন একে অপরের মুখোমুখি হয়। বহুদিন পর ডাক্তার সাহেবকে কাছে থেকে দেখে তামান্নার হৃদয়স্পন্দন বাড়ে…
#চলবে..
[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]
#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৫৬)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
মস্তিষ্কের সমগ্র চিন্তা চেতনাকে পাশে ঠেলে সাদিবের হাত চেপে ধরল তামান্না। দরজা লাগিয়ে শব্দহীন পায়ে তাড়াহুড়োর বশে এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে। আচমকা কিছু বুঝে উঠার আগেই তামান্নার এহেন আচরণে সাদিব বিরক্ত হলো। ভারী শরীরে তাকে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে কেন? পড়ে গেলে? রুমে এসে হাত ছেড়ে দিয়ে অভিমানে অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে নিল তামান্না। দু’হাত বুকে গুঁজে সাদিবের দিকে পিঠ ঠেকিয়ে অন্যপাশ ফিরে দাঁড়ালো।
” ওপাশ ফিরে আছো কেন? ” সাদিবের শাসানোর স্বর।
তামান্না কোনো কথা বলছে না। অভিমানে এ মুহুর্তে মনে হচ্ছে কান্না করে দেবে। তবুও ডাক্তার সাহেব যতক্ষণ অভিমান ভাঙ্গাবে না ততক্ষণ দরকার পড়লে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। সাদিব তামান্নার অভিমানের ভাষা বুঝল বোধহয়। সাদিবের কণ্ঠস্বর আগের চেয়ে কোমল হলো। এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তামান্নার কাঁধে থুতনি রাখে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ” প্রেয়সী মন খারাপ করেছে? ”
সাদিবের ফিসফিসানি সাথে প্রথমবারের মতো প্রেয়সী সম্বোধন শুনে তামান্নার শরীর বেয়ে এক প্রকার হিম করা শীতল অনুভুতি বয়ে গেল। নারীজাতি ভালোবাসার ভাষায় আহ্লাদী হয়ে যায় আরো একবার প্রমাণিত হলো। কণ্ঠে অনুযোগ মিশিয়ে বলল, ” না। আমার কোনো মন খারাপ করেনি। ” বলে তামান্না সাদিবের কাছ থেকে সরে গেল।
” আরে বাপরে ডেকে এনে বললেই হলো কিছু হয়নি? এটা তো ঠিক হচ্ছে না ম্যাম! ”
” এসেছো কেন? যাও চলে যাও। থাকতে হবে না। ” মৃদু রাগ ঝেড়ে শব্দদ্বয় উচ্চারণ করতে গিয়ে তামান্নার গলা ভেঙে আসতে চাইল।
সাদিব বুঝতে পারল তামান্নার মানসিক অবস্থা। প্রতিটি মেয়ে চাইবে এমন কঠিন সময়ে স্বামীকে পাশে পেতে। সেদিক থেকে তামান্না ব্যতিক্রম তো নয়! অন্য সবার মতো তারও তদ্রুপ ইচ্ছে থাকাটা স্বাভাবিক। শুধু পারিপার্শ্বিকের কারণে তাকে কঠিন পরিস্থিতির শিকার হতে হলো। যার বেশিরভাগের জন্য দায়ী সাদিব স্বয়ং নিজে। সাদিব আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
সাদিব মৃদু হেসে বলল, ” সত্যি চলে যাবো? ”
সাদিবের কথাটা তামান্নার জন্য অসুখের প্রতিশোধক হিসেবে কাজে দিল। কড়া চাহনিতে তামান্না তাকাল। ” এই তোমাকে কেউ থাকতে বলেছে? যাও না যাও, বাঁধা দিয়েছি? ”
” তুমি এভাবে পিঠ ঠেকিয়ে বসে থাকলে এছাড়া কোনো উপায় আছে কি? ”
তামান্নার তরফ থেকে কোনো জবাব আসেনি। সাদিব উঠে তামান্নার সামনে এসে বসল। চোখের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল, ” এখনো রাগ করে থাকবে? ”
তামান্না অভিমানী কণ্ঠে জবাব চাইল, ” আমার জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে? ”
” তুমি যা করছো তাই-ই। আমাকে মিস করেছিলে বুঝি? ”
কোনো জবাব দিতে পারেনি তামান্না। সাদিবের বুকে হামলে পড়ল নিমিষে। ঠোঁট বাকিয়ে হু হু করে কেঁদে দিল। সাদিব বাঁধা দিল না। তামান্নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। তারও যে চোখের কোণে পানি জমেছে। শুধুমাত্র তামান্নার মতো শব্দ করে কেঁদে দেখাতে পারছে না। তামান্নাকে সেভাবে বুকে আঁকড়ে ধরে বিছানায় শায়িত হলো। তামান্নাও সেভাবে রইল। বাঁধা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। গত কয়েকদিনে সেও উক্ত আশ্রয়স্থলের অভাব বোধ করেছিল যে। কিছু সময় পর তামান্না নিজেকে সামলে মুখ তুলে তাকাল। সাদিবের গালের খোচাখোচা দাঁড়িগুলো দেখতে তার কাছে মন্দ লাগল না। যদিও সেসব সাদিবের নিজের প্রতি অযত্নের ফলস্বরূপ। চোখের নিচেও কালো দাগ বসে গেছে। তামান্না বলে উঠে, ” নিজের একটুও যত্ন নেও নি তাই না? ”
” কি জানি। তুমি চলে আসার পর সেসবে নজর দেইনি কখনো। ”
” রাতেও তো ঠিক মতো ঘুমাওনি মনে হচ্ছে। যদি অসুখ করতো? ”
সাদিব তামান্নার খোলা চুলে বিলি কাটছিল। বলল, ” মনের অসুখের কাছে শরীরের অসুখ কিছুই না। ”
তামান্না বুঝল, দু’জনকে ছাড়া দু’জন ভালো নেই।
” তাহলে মনের অসুখের প্রতিশোধক কি? ”
সাদিব তামান্নাকে ইশারা করে বলে, ” এইযে আমার বুকে। ”
তামান্না মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে সাদিবের হৃৎস্পন্দনের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। সাদিবও পরম যত্নে প্রেয়সীকে কাছে টেনে নিল।
.
★
.
তালিব আবসারের সাথে নাস্তার টেবিলে সবাই উপস্থিত রয়েছে, কেবল তামান্না ছাড়া। তালিব আবসারের খেয়াল হলে তিনি নীলিমার কাছে জানতে চাইলেন, ” নীলিমা তামান্না আসেনি কেন.?ওকে ডাকো। ”
নীলিমা বিরক্ত হলেন। গত রাতে তার ঘুম ভাঙলে তিনি পানি খেতে ডাইনিং এর দিকে আসেন। কারোর ছায়া মূতি লক্ষ্য করে সেদিকে তিনি এগিয়ে গেলে তামান্নাকে দেখতে পান। তামান্না উঁচু হয়ে দরজায় বারবার চোখ রেখে বাহিরে দেখার চেষ্টা করছে। আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে গিয়ে কিয়ৎক্ষণ পর সাদিবকে দেখতে পান৷ সাদিবের আসার প্রতিক্ষা করছিল তাহলে এতোক্ষণ সে। বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তালিব আবসার তাকে সবটা জানিয়েছেন তা সত্ত্বেও বাঁধা দেবেন না বলে সিন্ধান্ত নিলেন। প্রয়োজনে তালিব আবসারকেও বোঝাবেন। এভাবে আর কত কষ্ট পাবে ছেলেমেয়ে দু’টো। এবার অন্তত তামান্না স্বাভাবিক হোক এটাই তার একান্ত কামনা।
নীলিমা তালিব আবসারকে বললেন, ” থাক ওদের ডাকতে হবে না। রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছে। ”
তনিমা এবং তন্ময় কিছুটা আন্দাজ করেছে। তনিমা মাকে বলল, ” মামনি ভাইয়া এসেছে নাকি? ”
নীলিমা তালিব আবসারের দিকে তাকাল। তালিব আবসার খাওয়ার মনোযোগ দিচ্ছিলেন। বললেন, ” হ্যাঁ। ”
তালিব আবসার খাওয়া থামিয়ে দিলেন। নীলিমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, ” সাদিব এসেছে? কই আশফাক তো আমায় কিছু জানালো না? ” বলে উঠে যাচ্ছিলেন।
নীলিমা বাঁধা দিলেন৷ ” সব জানাতে হবে কেন? ওরা স্বামী স্ত্রী, যখন খুশি একসাথে থাকতেই পারে। তোমরা বাঁধা দেবে না বলছি। অনেক সহ্য করেছি আর না। এবার তো থামো দু’জন। ”
তন্ময় চুপচাপ বসে শুনছিল। বোঝানোর তাগিদে শ্বশুরকে উদ্দেশ্য করে বলল, ” উনি ঠিকই বলছেন। আমার সেদিন সাদিব ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল। উনিও সমানতালে কষ্ট পাচ্ছেন। যদিও উনি নিজে থেকে কিছু বলেননি। বরং কথার প্যাচে আঁচ করতে পেরেছি। ”
সবার মতামত শুনে তালিব আবসার কোনো প্রতিত্তোর করলেন না।
.
★
.
অনেকদিন পর সাদিবের নির্ঘুম রাতের অবসান ঘটেছে। সকাল সকাল উঠার অভ্যাস করা মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আজ অনেক লম্বা সময় নিয়ে বিছানা ছাড়তে হলো তাকে। ঘড়িতে তখন দশটা বাজার উপক্রম। তামান্না তখনো তার বুকে তাকে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। সাদিব সাবধানে তামান্নাকে বুক থেকে সরিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
সাদিব চলে যাওয়ার পর তামান্নার ঘুম ভাঙে। আশেপাশে সাদিবকে নজরে না পড়াতে ভেবেছিল সাদিব তাকে না জানিয়ে চলে গেছে। সাদিবের উপর পুনরায় অভিমানের উদ্ভব হতে শুধু করবে, পরক্ষণে ওয়াশরুম থেকে ভেসে আসা পানির শব্দে বুঝতে পারে সাদিব যায়নি।
সাদিবকে আসতে দেখে তামান্না মুচকি হাসে। খেয়াল গেলে সাদিবও প্রতিত্তোরে হাসে। তামান্না জানতে চায়, ” ঘুম ঠিকঠাক হয়েছে জনাব? ”
” হবে না আবার! একেবারে কার্যকরী মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়েছি না? ”
তামান্না ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সাদিব বের হচ্ছে। নিমিষে তামান্নার মন খারাপ হয়ে যায়। এতো কম সময়ের জন্য ডাক্তার সাহেবকে পাবে বুঝতে পারেনি সে। মনমরা হয়ে বসে থেকে সাদিবকে দেখছিল। আয়নায় সাদিব সবটা লক্ষ্য করে। বলে উঠে, ” রেডি হয়ে নেও বের হব। ”
তামান্না নিজের দিকে একবার তাকায়। বের হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও চট জলদি জবাব দেয়, ” আমি এ অবস্থায় কোথাও যাবো না। তোমার থাকতে মন না চাইলে যাও। ”
সাদিবের হাত থেমে যায়। ” এ অবস্থায় মানে? ”
” তুমি খেয়াল করেছো আমাকে একবারো? ”
” আসার পরই কয়েকবার করেছি। ”
” দেখেছো কত মুটি হয়ে গেছি। দেখতেও কেমন কুমড়ো পটাসের মতো লাগছে। আমি বের হবো না, তুমি যাও। ”
সাদিব কিংকর্তব্য বিমুঢ় হলো। তামান্নার আহাম্মকের মতো কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে বলল,
” ডাক্তারের কাছে যেতে বলেছি, ঘুরতে যেতে না। ”
তামান্না মনমরা হয়ে বলল, ” ও। যাই হোক আমি যাবো না। ”
সাদিব চুপসে গেল। কিয়ৎক্ষণ ভাবনায় পড়ে গেল। ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে তামান্নাকে বোঝালো, ” তুমি কি বুঝতে পারছো তোমাকে ঠিক কতটা সুন্দর লাগছে? ”
তামান্না ভীষণ অবাক হলো। সাদিবের কথার মর্মার্থ ধরতে নিজের দিকে আরো একবার তাকাল। কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারল না। নাক কুঁচকে বলল, ” সুন্দর না ছাঁই। হসপিটালে গেলে সবাই বলবে একটা কুমড়ো পটাস আকৃতির বউ তোমার। আমারই তো কেমন বিদঘুটে লাগছে। ”
সাদিব বুঝতে পারল তামান্না কি বোঝাতে চাইল। তামান্নার পেটে হাত রাখল। বোঝানোর চেষ্টা থেকে বলল, ” একজন মেয়ের জন্য সবথেকে বড় প্রাপ্তি কি জানো? মাতৃত্ব! শুধু তাই নয় মাতৃত্ব একটি দম্পতির জীবনে পূর্ণতার সুখ বয়ে নিয়ে আসে। একবার ভেবে দেখ তো, যখন ওর গুটিগুটি পায়ে হেঁটে তোমার কাছে আসতে চাইবে, আদো কণ্ঠে প্রথমবারের মতো তোমাকে মা এবং আমাকে বাবা বলে ডাকবে, সদ্য মাড়ি ভেদ করে গজানো নতুন দাঁতে খিলখিল করে হাসবে! সেসব দৃশ্যপট তোমার সামনে প্রকাশ পেলে কেমন লাগবে? ”
তামান্না যেন সত্যি সত্যি হারিয়ে গেল। আনমনে বলে উঠে, ” এক কথায় অসাধারণ! ”
” তাকে ভালো রাখার পাশাপাশি নিজেকে ভালো রাখা, সে সাথে আগে থেকে তাকে দেখার ইচ্ছে নেই? ”
তামান্না মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল। সাদিব হাত সরিয়ে নিলে তামান্না পুনরায় সাদিবের হাত নিজের পেটে রাখল। সাদিবের থেকে জানতে চাইল, ” কি বুঝলে? ”
সাদিবের ঠোঁটের কোণে প্রাপ্তির হাসি লেগে থাকল। জবাব দিল, ” পা ছুড়ে আমাদের কথায় তারাও সাড়া দিয়েছে। ”
তামান্না ভ্রু কুঁচকালো। ” তারা? ”
সাদিব প্রশস্ত হেসে বলল, ” হুম। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে একজন নয়, দু’জন আসতে চলেছে…”
#চলবে….
[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]
#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৫৭)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
দেখতে দেখতে আরো কিছুদিন কেটে গেছে। তামান্না বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সাদিব প্রতিদিন তামান্নাকে সময় দিতে না পারলেও প্রায় সময়টা সে তামান্নার সাথেই কাটায়। তার যথেষ্ট খেয়াল রাখার চেষ্টা করে। আশফাক শিকদার মাঝে মাঝে এসে তামান্নার সাথে দেখা করে যান। শরীরের বিষয়আশয় সম্পর্কে খেয়াল রাখার তাগিদে হুশিয়ারি বার্তা দিতেও ভুল করেন না। এদিকে কিছুদিন হলো সাদিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে, এক ইতালি প্রবাসী ছেলের সাথে। বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছে, সেটাও আশফাক শিকদারের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে। সামিরা এবার আর কোনো আপত্তি করেননি। তার যত মন্দ লাগা সব তামান্নাকে নিয়েই। যেমনটা কিছু মানুষ শত চাইলেও কারোর আপন হতে পারে না কিংবা মন মানিয়ে নিতে সক্ষম হতে পারে না, তদ্রূপ তামান্নাও পারেনি সামিরার মনের মতো হতে। এ নিয়ে সাদিব অভিমানে মায়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তামান্না সুস্থ হলে তাকে নিয়ে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করবে বলে সিন্ধান্ত নিয়েছে। তবুও স্ত্রী সন্তান নিয়ে মায়ের মুখোমুখি দ্বিতীয়বার আর হবে না। আশফাক শিকদারকে জানালে তিনি দ্বিমত পোষণ করলেন না। যার ভালো সে বোঝার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে বলে তিনি মনে করেন। অন্যথায় কারোর দায় পড়েনি তাকে বাচ্চাদের মতো ধরে বোঝাবার।
সাদিয়ার বিয়েতে সবাই উপস্থিত হলেও সাদিব তামান্নাকে ও-বাড়ির মুখো দর্শন করতে দেয়নি। সংশয় আছে মায়ের সামনে পড়লে মা না এবার বড় ধরনের কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে। একে তো তামান্না বেশি অসুস্থ তারওপর সামান্য দুর্ঘটনায় না বড় ধরনের বিপদে পড়তে হয়। অসুখের আগে ভালো প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তামান্নাকে সে হারাতে চায় না। সে যে কোনো মূল্যেই হোক না কেন!
.
★
.
পুরো বাসায় এখন আশফাক শিকদার এবং সামিরা একাই থাকছেন। বিয়ের পর একবার এসে দু’দিন থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে সাদিয়া। দুই ছেলে মেয়েকে হারিয়ে সামিরা কাঁদতে বসেছেন। আশফাক শিকদার সেসবে পাত্তা দেন না। মেয়ে বড় হয়েছে আজ না হোক একদিন পরে হলেও পরের বাড়ি যেতে হতো। ছেলেকে সে ইচ্ছে করে খুইয়েছে তাতে কারোর কিছুই করার নেই।
সামিরা মৃদু শব্দ তুলে কান্না করছেন। আশফাক শিকদারকে কিছু বলতে চাইলে আশফাক শিকদার এড়িয়ে গিয়ে নিজের কাজে মনোনিবেশ করেন। স্বামীর থেকে কোনো প্রকারের পাত্তা না পাওয়ায় সামিরার কণ্ঠে রাগ প্রকাশ পেল। বলল, ” আমি যে তখন থেকে তোমাকে কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছো না? ”
আশফাক শিকদার ব্যবসায়ের হিসাব পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন। কাজের এক ফাঁকে জানতে চাইলেন, ” আরে হ্যাঁ, কি যেন বলছিলে? ”
স্বামীর মনোযোগ আকর্ষন করতে পেরে সামিরার কর্কশ কণ্ঠ স্বাভাবিক হলো। জবাবে বলল, ” বলছিলাম মেয়েটাকে বড্ড মিস করছি। ”
” মিস করলে কিছু করার নেই সামিরা। মেয়ে হয়েছে যখন আজ নাহয় কাল তাকে পরের বাড়ি যেতে হতো। ”
” সেটা অবশ্য তুমি ঠিক বলেছ। ”
” তাহলে চুপচাপ শুয়ে পড়ো। ” আশফাক শিকদার পুনরায় কাজে মনোযোগ দিলেন।
সামিরা বলল, ” আরেকটা কথা বলছিলাম….
আশফাক শিকদার তাড়া দেখালেন। বললেন, ” যা বলবে তাড়াতাড়ি বলো, হাতে অনেক কাজ বাকি আছে। ”
” আমার ছেলেটাকে একবার আসতে বল। কতদিন তাকে দেখি না। নিজের বাড়ি রেখে বেহায়ার মতো এভাবে কতদিন ও-বাড়িটায় গিয়ে পড়ে থাকবে? তোমার কি একটুও খারাপ লাগে না নাকি? ”
আশফাক শিকদার ভণিতা ছাড়া সরাসরি মুখের ওপর জবাব দিলেন,” বেহায়ার মতো গিয়ে পড়ে থাকছে বলে নাকি ওর বউয়ের কাছে যাওয়াটা তোমার সহ্য হচ্ছে না। ”
” কথা একই হলো। ওকে এক্ষুনি আসতে বলো। ”
” কীসের জন্য বলতে হবে? ”
রাগে বিরক্তিতে ফুঁসতে ফুঁসতে সামিরা বলতে লাগলেন, ” বলবে আমি বলেছি, ওর মা ওকে আসতে বলেছে। সেদিন রাতেও দেখলাম ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে গেছে। অনেক চুপ করে থেকেছি আর না। পেয়েছেটা কী ওরা আমার ছেলেকে? ”
সামিরা এতোদিন চুপ থাকায় আশফাক শিকদার ভেবেছিলেন সাদিবের অভাবে সামিরার অহংকারী পাথুরে মন ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হবে। এখন দেখছে এতটুকুও শোধরাবার মহিলা সামিরা নন। স্ত্রী-য়ের আচরণে তাৎক্ষণিক আশফাক শিকদারের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। কড়া গলায় জানিয়ে দেয়, ” বেশ করেছে সাদিব। দরকার পড়লে আরো করবে। স্বামী হিসেবে ওর এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। ”
সামিরা চমকিত হলেন। স্বামীর মুখ থেকে এহেন কথা তিনি ইহকালেও আশা করেননি। ” বেশ করেছে মানে? আগেও বলেছি তোমার বন্ধুর মেয়েকে আমি ছেলের বউ হিসেবে মানি না আর কখনো মানবো না। ”
” মানলাম মানো না। তাহলে এবার এটাও দয়া করে বলে দেও কেন মানো না! ওকে নিয়ে তোমার এতো সমস্যা ঠিক কোন জায়গায়? এতটুকু বলে অন্তত উদ্ধার কর আমায়! ”
সামিরা তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, ” ও স্যরি ভুল বলেছি বোধহয়, তোমার বন্ধুর মেয়ে কেন বলছি? গিয়ে দেখ সেটাও না। আরে ওর তো বাবা মায়েরই ঠিক ঠিকানা নেই! এমন একটা পরিচয়হীন মেয়েকে কে মানবে? ”
আশফাক শিকদারের মনে হলো কেউ তার কানে গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে। স্বভাবে তিনি অত্যন্ত শান্তশিষ্ট একজন মানুষ। সহজে রাগেন না৷ কিন্তু এবার আর ঠিক থাকতে পারলেন না। বৃদ্ধ বয়সে সামিরার বুদ্ধি লোপ পেতে দেখে নিজেকে নিজে কিছুক্ষণ ধিক্কার জানালেন। হাত আপনাআপনি চড় মারতে উদ্যত হলেও সেটা মারলেন না। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ” তোমার মতো এতোটা নিচু মানসিকতার মানুষ আমার হইজন্মে কখনো দেখিনি। তোমাকে ওর সম্পর্কে বলাটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে। মাঝখান থেকে নির্দোষ মেয়েটাকে বে**জন্মা গালিটা শুনতে হলো। ”
” তাই বলে চড় তুলবে তুমি আমাকে? এতো বড় সাহস তোমার! ”
” এবার তো চড়টা তুলতে দেখেছো। পরেরবার এসব উল্টোপাল্টা কথা শুনলে মেরে দিতেও বাধ্য হব। এবারের মতো সাবধান করে দিলাম তোমাকে। ”
কয়েকটা কড়া ভাষায় কথা শুনিয়ে আশফাক শিকদার সামিরার সামনে থেকে প্রস্থান করলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলে, ” যাওয়ার আগে স্পষ্ট করে বলে দিয়ে যাচ্ছি, ” ভুলেও সাদিবকে কল করার চেষ্টা করবে না। নাহলে তোমার নিচুমানের কথাবার্তা সম্পর্কে ওকে জানাতে দ্বিতীয়বার আমি ভাববো না। ”
.
★
.
সাদিবের কথাই ঠিক হয়েছে। ডাক্তারের রিপোর্ট এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাফি সাদিবের সাথে বলছে তামান্না জমজ সন্তান প্রসব করতে চলেছে। এজন্য যত দিন যায় তামান্নার ভয় ততো বাড়তে থাকে। শরীরটা আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ভারী হয়েছে। ভারী শরীর বহন করে চলতেও আজকাল ভীষণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। কারোর সাহায্য ছাড়া চলাটা যেন দুঃসাধ্য ব্যাপার।
সাদিয়া এসেছে তামান্নাকে দেখতে। বিয়েতে তামান্নাকে দেখতে না পেয়ে সাদিবকে জিজ্ঞেস করলে সাদিব তামান্নার বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানায়।
সাদিয়া আসার পর থেকে নিজের ভাবীকে খুঁটে খুঁটে দেখছে। এ নিয়ে প্রায় কয়েকবার একইভাবে দেখা শেষ। তামান্নার কাছে সাদিয়ার তাকানোটা ভীষণ অস্বস্তিদায়ক মনে হচ্ছে। মনে মনে সে ভাবে, ” এভাবে দেখার কি আছে? মনে হয় আমি তার ভাবী না বরং ভিনগ্রহ থেকে আগত কোনো এক এলিয়েন। ”
সাদিয়া তামান্নার মনের কথা বুঝলো কিনা কে জানে! তামান্নার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। তামান্না অস্বস্তি কাটিয়ে জানতে চাইল,
” এভাবে কি দেখছো? ”
” আমার ভাইয়ের বাবুদের মা’কে। ভাবী তুমি জানো না আমার কতটা খুশি লাগছে। বিয়েতে যাওনি তার জন্য মন খারাপ হয়েছে কিন্তু এখন তোমাকে দেখে একবারে ফুরফুরে লাগছে। ইশ ওরা আমাকে ফুপি বলে কবে যে ডাকবে? আমার তো আর তর সইছে না। ”
মৃদু হেসে বলল, ” ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ডাকবে। ”
তামান্না জানে সাদিব তাকে কেন নিতে চায়নি। তবুও সে এ ব্যাপারে কিচ্ছুটি বুঝতে দিল না সাদিয়াকে। বলল, ” সাদিয়া তুমি তো দেখছো আমার শরীরের অবস্থা। এজন্যই আমি যেতে চাইলেও তোমার ভাইয়া আমাকে নেয়নি। ”
সাদিয়ার উল্লাস ভরা কণ্ঠ হুট করে বিষন্ন শোনাল। বলল, ” সত্যি কি তাই? নাকি তুমি চাওনি মায়ের মুখোমুখি হতে? ”
ঠোঁটের কোণের মৃদু হাসি মিলিয়ে যেতে তামান্না চুপসে গেল। প্রতিত্তোরে কিছু জানাতে পারল না। শত হলেও ওদের মা। কারোর ভালো লাগবে না নিজের মায়ের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য শুনতে। সাদিয়া পুনরায় বলল, ” আমি জানি ভাবি তুমি এ মুহুর্তে কি ভাবছো? ”
” কি ভাবছি? ”
” তুমি ভাবছো আমি কি তবে মায়ের হয়ে সাফাই গাইতে এসেছি? না ভাবী সেরকমটা মোটেও নয়। আমি জানি ভাইয়া মাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। কিন্তু মায়ের তোমার সাথে করা খারাপ আচরণ আর খারাপ পরিকল্পনার জন্য ভাইয়া মনে কতটা আঘাত পেয়েছে! মায়ের তোমাকে কেন পছন্দ নয় সেটা আমি জানি না এবং জানতেও চাই না। শুধু এতটুকু বলবো আমার তোমাকে সেই শুরু থেকেই ভালো লাগত। এটাও আবার ঠিক ভাইয়ার তোমাকে মেনে নিতে অনেক সময় লেগে গেছে। তবুও শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে পেরেছে এটাই অনেক। জানো ভাইয়া প্রথম প্রথম প্রিয়ন্তির কথা ভেবে মন খারাপ করতো। কিন্তু সে এটা একবারো ভাবতো না তার অবহেলার জন্য তুমি কতটা কষ্ট পাচ্ছিলে। সেসব দেখলে আমার অনেক খারাপ লাগতো। সব সময় চাইতাম ভাইয়া তোমাকে বুঝুক মেনে নিক। এটলাস্ট মেনে নিতে সক্ষমও হলো। ”
” এমন কোনো ব্যাপার নয় সাদিয়া। তুমি ভুল বুঝছো। ”
” আমি ভুল বুঝছি না ভাবী। যা বুঝেছি সেটা একদম হান্ড্রেড পার্সেন্ট ট্রুথ! এটা আমার চেয়ে ভালো তুমি জানো। ”
” শোন তোমাকে কয়েকটা কথা বলি। আচ্ছা তুমি আগে আমায় বলতো, তোমার যে বিয়ে হয়েছে এ বিয়েটা কি হুট করে হয়েছিল নাকি অনেকদিন থেকে দেখেশুনে তারপর হয়েছে? ”
” অফকোর্স দেখেশুনে। ”
” আমাদেরটা কিন্তু হুট করে মানে এক্সিডেন্টলি হয়েছিল মনে আছে? একটা সম্পর্কে থাকতে গেলে এডজাস্টমেন্টের ব্যাপার স্যাপার থাকে। নতুন বিয়ে হয়েছে তো তাই তোমার এমন লাগছে। কয়েকদিন কাটুক তখন সবটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে আশা করছি। ”
তামান্নার কথাগুলো সাদিয়ার কাছে যুক্তিসংঘত বলে মনে হওয়ার সে চুপচাপ সবগুলো কথা শুনে গেল।
#চলবে….
#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৫৮)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
তুমি আমায় কোথায় রাখো প্রিয়!
কল্পনাতে, গল্প করে নাকি অবহেলাতে?
আমার মাঝে সর্বত্র যে তোমারি বসবাস!
চোখের তারায়, প্রিয় সব বইয়ের ভাঁজে
কিংবা পাশ বালিশে, খুব যত্নে এবং নালিশে।
রাত গভীর একলা জেগে রাত্রি যাপনের কালে।
তুমি আমায় কোথায় রাখো প্রিয়?
ভুল বিরহে, যন্ত্রণাতে!
আমি কি দেই তাগাদা হৃদয় পোড়াবার যন্ত্রণাতে?
তুমি আমায় কোথায় রাখো?
সে যে আমার একদমই জানা নেই!
~ফাহমিদা মুশাররাত
তামান্না অনেকদিন পর লিখতে বসেছে। গত কয়েকদিনে সেভাবে লেখার মানসিকতা জন্মায়নি। শেষবার লিখেছিল সাদিবের সাথে যেদিন তার সব অভিমানের ইতি ঘটেছিল সেদিন সন্ধ্যায়। সেদিন নোটবুকটি লেখার সময়েও ভেবেছিল হয়তো ডাক্তার সাহেবের সাথে আর কখনো কিছু ঠিক হবার নয়। যা ছিল সৃষ্টিকর্তা বুঝি সে পবিত্র সম্পর্কের ইতি টানলেন! যেমন করে হয়েছিল সম্পর্কের শুরুটা, ঠিক সেরকমই।
সেদিন একমাত্র তন্ময় তার মনের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছিল। অন্যথায় বাকিরা কারোর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ প্রকাশ করেনি। মনে মনে বন্ধুর প্রতি আরেকবার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করল তামান্না। তন্ময় সেদিনও প্রমাণ করে দিয়েছে, কখনো সখনো রক্তের সম্পর্কের চাইতে বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো অনেকটা আপন হয়ে যায়। মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত হলে সবার আগে তারাই এগিয়ে আসে।
সাদিব ফিরে এসে আবদার জুড়ে বসল, তামান্নার লেখা নোটবুকটা সে তার মুখ থেকে শুনতে চায়। কিন্তু তামান্না চায় পুরোটা নোটবুক সাদিব নিজে পড়ুক। তামান্নার কল্পনালোককে অবলোকন করুক। নোটবুকের মধ্যিখানে থাকা নিজের সৃষ্টিশীল একটি কবিতা পাঠ করে শোনাল সে। সাদিব সবটা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে আর এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তম প্রেয়সীর পানে। সবটা জুড়ে একরাশ মুগ্ধতা এসে ঘিরে ধরেছে তাকে। অনুভব করতে চাইছে প্রেয়সীর আবেগ মিশ্রিত লেখা কবিতার প্রতিটি লাইনের। তামান্না এক হাতে নোটবুকটি ধরে রেখেছে অন্যহাতে সাদিবের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
তামান্নার হাতের আবেশে সাদিবের ঘুমে চোখ লেগে যাওয়ার উপক্রম। তামান্না তাকিয়ে দেখল তার ডাক্তার সাহেবের চোখ জোড়া বন্ধ। তামান্না মুচকি হাসল। উঁচু হয়ে থাকা পেটের কারণে নিচু হতে অনেকটা কষ্ট সাধ্য হলেও সে সেই কষ্টকে সাধরে বরণ করে নিল। খানিকটা ঝুঁকে সাদিবের কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল। নরম ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করতে সাদিব চোখ মেলে তাকাল। তামান্নাকে কষ্ট করে ঝুঁকতে দেখে কপালের মাঝে ভাঁজ পরিলক্ষিত হলো। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সাথে সাথে উঠে বসল। তামান্নাকে কিছু বলতে না দিয়ে উল্টো শুইয়ে দিয়ে সেও তার পাশে শুয়ে পড়ল। তামান্নার পেটে আলতো হাত বুলিয়ে তামান্নার ভেতরে বেড়ে ওঠা দু’টো প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করতে চাইল।
সাদিবের এহেন কান্ডে তামান্না বিস্মিত হলো না। কারণ কয়েকদিন সাদিব এটি নিয়মিত করে থাকে আর নিজে নিজে বাচ্চাদের সাথে কথা বলে। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পূর্বে থেকেই বাবাদের বুঝি প্রথম সন্তানের প্রতি সত্যি এতোটা মধুর আবেগ কাজ করে? সচক্ষে সে তার ডাক্তার সাহেবকে না দেখলে হয়তো কখনো ভালোভাবে বুঝতে পারত না।
সাদিবকে ফিসফিস করে বলতে শোনা গেল, ” দু’জন মিলে কি করছো হ্যাঁ? একদম দুষ্টমি করবে না কেমন! বরং তোমরা তাড়াতাড়ি চলে এসো, তোমাদের বাবা মা তোমাদের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে। ”
সাদিবের বাচ্চামো দেখে তামান্না খিলখিল করে হাসে। চার দেয়ালের মাঝে সে হাসি প্রতিধ্বনি তুলছে। সাদিব চোখ তুলে তাকায়। কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ” তুমি হাসছো? ”
” হাসবো না বলো? তুমি যা বলছো ওরা শুনতে পাচ্ছে? ”
” পাচ্ছে পাচ্ছে। সব শুনতে পাচ্ছে। ”
” হ্যাঁ তোমাকে বলেছে। এভাবে কিছু শোনা যাবেও না বুঝেছ? ”
.
★
.
তামান্নার ফোন বাজছে। প্রতিদিন এসময় একমাত্র সাদিব ছাড়া কেউ তাকে ফোন করে না। তবে তনিমা তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করে। যথেষ্ট সম্ভব দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ফোন তুলে নেয়। কিন্তু অপরিচিত নাম্বার দেখে একটু দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। পরক্ষণে কারোর প্রয়োজনীয় কল ভেবে রিসিভ করে নেয়।
তামান্না সালাম বিনিময় শেষে জানতে চাইল,
” কে বলছেন? ”
” শ্বাশুড়ি মা বলছি। ”
শ্বাশুড়ির হঠাৎ কলে তামান্না ঘাবড়ে গেল। শ্বাশুড়ি তার যথেষ্ট বদ মহিলা এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই শ্বাশুড়ির উক্ত কথার পর তামান্না কিছুসময় ভেবে নিল। পুনরায় নতুন ধাক্কার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিল। অপর পাশ থেকে সামিরা বলে উঠে, ” কেমন আছো? ”
তামান্না মৃদু স্বরে বলল, ” আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কেমন আছেন? ”
ফোনের অপর পাশে সামিরার দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ার শব্দ তামান্নার কানে এসে ঠেকল। বলল, ” আর ভালো। ছেলেমেয়ে দু’জনকে ছাড়া কোন মা ভালো থাকবে বলো? ”
তামান্না কোনো প্রতিত্তোর খুঁজে পেল না। শুধু মনে মনে বলল, আপনি যা করেছেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার কর্মফল। প্রকৃতির প্রতিশোধটাই এমন। আপনি আমাকে চিরতরে সন্তানহারা করতে চেয়েছিলেন এখন আল্লাহ আপনার কাছ থেকে আপনার সন্তানদের দূরে নিয়ে গেছে।
তামান্নাকে চুপ থাকতে দেখে সামিরা বললেন, ” যাকগে তোমাকে যা বলছিলাম, সাদিব কি আছে তোমার আশেপাশে? ”
” না, হসপিটালে বেরিয়েছে সেই সাতসকালে। ”
সামিরা আপসোসের সাথে বললেন, ” ওহ্। অনেকক্ষণ যাবত কল করে যাচ্ছি তুলছে না। তাই ভাবলাম তোমাকে ফোন করলে তাকেও পাবো। কিন্তু কি আর করার। ” পরক্ষণে বললেন, ” তো তোমাকে যে জন্য ফোন করা। ”
তামান্না চুপ করে থাকতে পারল না। সরাসরি জিজ্ঞেস করল, ” হুম বলুন নতুনভাবে কি পরিকল্পনা করেছেন? ”
” পরিকল্পনা বল আর যাই বল না কেন? এখানে সম্পূর্ণ রূপে ভাগিদার তোমার স্বামী। তোমাকে তো আমি শুধু জানাতে এলাম। ”
” কি বলবেন ভণিতা ছাড়াই বলে ফেলুন। ”
” এইযে সাদিব রোজ রোজ তোমার কাছে যাচ্ছে তুমি কি তার কারণ জানো? মানে তোমাকে কি সব জানিয়েছে? ”
” কি জানাবে? ”
” শোন তোমার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পর পরই সাদিব তাদের নিয়ে চলে আসবে। ”
” এ ব্যাপার? তো তার সন্তানেরা তার কাছে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই নয় কি? বাবা মা ছাড়া কোনো সন্তানকে দেখেছেন থাকতে? আপনার ছেলেমেয়েরা থেকেছে? ”
” তা থাকেনি। কিন্তু একা বাবা কিংবা মায়ের কাছে মানুষ হয় এমন অনেক ছেলেমেয়েই এ যুগে আছে। সেরকমই বলছি, সাদিব ওদের নিয়ে আসবে। তাও সে তাদের মা ছাড়াই একা বাবা হয়ে তাদের পালন করবে। ওদের জন্মের পরপর ও তোমাকে চিরতরে মুক্তি দিয়ে দেবে। ”
সামিরার কথায় তামান্না পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম হলো। হতভম্ব হয়ে চুপ করে রইল কিছু সময়। চোখের কোণে জমলো নোনাপানি। সামিরা বললেন, ” কি হলো চুপ করে রইলে যে? আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? ”
” আমি মানি না আপনার কথা। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। আপনি কেমন মা হ্যাঁ? যে নিজের ছেলের পথের কাঁটা হচ্ছেন বারবার? ”
” বাহ্ রে! তুমি তো দেখি হাইপার হয়ে যাচ্ছো। তোমাকে সত্যিটা বলাতে একেবারে পথের কাঁটা হয়ে গেলাম? শোন মেয়ে আমি যা বলছি তার একফোঁটাও মিথ্যে কথা নয়। বিশ্বাস না হলে নিজে পরখ করে দেখ! ” কথা শেষ হতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন সামিরা।
তামান্নার সারা শরীরে কম্পন হতে লাগল। সামিরার বলা কথাগুলো এখনো তার কানে বারবার করে ঝঙ্কার তুলছে। তবে কি সাদিব সত্যি তাকে এতো বড় ধোঁকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে? সত্যি কি সবটা তার সাজানো নাটক…
#চলবে…
[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]