তোমার নামে হৃদয় পর্ব-৬০ এবং শেষ পর্ব

0
478

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৬০ এবং অন্তিম পর্ব)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
সামিরা যেন একের পর এক ভয়ানক চমক পাচ্ছেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে তাকে এভাবে হেনস্তার শিকার হতে হবে সেটা হয়তো তিনি সারাজীবনেও ভাবেননি। বললেন, ” এ বয়সে এসে এতোবড় একটা সিন্ধান্ত তুমি নিতে পারলে? ”

” হ্যাঁ পারলাম। দুষ্ট গরুর চেয়ে আমার শূন্য গোয়ালই বরং ভালো। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নেও, আজই তোমাকে তোমার ভাইয়ের বাড়ি রেখে আসবো। নাহয় নিজেই চলে যাও। তোমার জন্য আমার বাড়ির দরকার আজকের পর থেকে চিরতরে বন্ধ। ” বলে হনহনিয়ে চলে গেলেন আশফাক শিকদার।

আশফাক শিকদারের এহেন সিন্ধান্ত সাদিব মোটেও আশা করেনি। সন্তান হিসেবে কোনো ছেলেই চাইবে না বাবা মায়ের আলাদা হয়ে যাওয়াটা। সেও যদি হয় বৃদ্ধ বয়সে, সেটি তো একদমই নয়। সামিরাকে উদ্দেশ্য করে সাদিব বলল,
” সম্পর্কে আপনি আমার মা। আমি তো আপনাকে সবসময় আমার মাথার উপর তুলে রাখতে চেয়েছিলাম। দেখুন না! আপনি আমার থেকে যেভাবে আমার সহধর্মিণীকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন সেই একইভাবে আজ আপনাকে আপনার স্বামী আলাদা করে দিচ্ছেন। কেন করতে গেলেন এসব? ”

সামিরা এবার আর স্থির থাকতে পারলেন না। এযাবতকালের করে আসা সকল কর্মফলের হিসাব একদিনে চুকিয়ে গেছে। নির্বিকার হয়ে ধুপ করে মেঝেতে বসে পড়লেন। গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। নিজের দুর্দশার কথা ভেবে আঁচলে মুখ চেপে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। এই বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের করা পাপের শাস্তি হিসেবে এভাবে পরিবারচ্যুত হওয়ার চেয়ে বড় শাস্তি বোধহয় পৃথিবীতে আর একটিও নেই। নিজের ভুল একটু হলেও ঠাওর করতে পারছেন। ছেলের কাছে অনুরোধ করে বলতে লাগলেন, ” সাদিব! বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ তোর বাবাকে আটকা। দেখ এই বৃদ্ধ বয়সে আমি কোথায় যাবো বল? তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে? ”

সাদিব মা’কে কিছু বলতে যাবে হঠাৎই অনুভব করল তার ফোন ভাইব্রেট করছে। পকেট থেকে ফোন বের করতে স্ক্রিনে অচেনা নাম্বার নজরে এলো। রিসিভ করলে শুনতে পায়, ” ভাইয়া আমি তকি বলছি। তাড়াতাড়ি আপনি হসপিটালে চলে আসুন। আপুর অবস্থা বেশি ভালো না। ”
.

.
সাদিব চলে যাওয়ার পর থেকে তামান্নার মনটা কেমন উশখুশ করছিল। বিষন্ন মনে জানালার সামনে বসে বাহিরের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে। জানালার বাহিরে তাকালে খোলা আকাশটা স্পষ্ট দেখা যায়। আজকের আকাশটা পুরোপুরি মেঘ মুক্ত। তামান্নার মতো তার মনে কোনো বিষন্নতা নেই হয়তো। নেই কোনো প্রকারের শূন্যতা কিংবা হাহাকার।

নীলিমা এসে দেখে তামান্না অন্যমনস্ক হয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। এটা অবশ্য তামান্নার ছোটবেলাকার অভ্যাস, দেখতে দেখতে হুটহাট অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে মেয়েটা। অন্য সময় হলে নানান উদ্ভট চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে। এখনকার সময়টা আলাদা হওয়ার তিনি সেসবে তেমন ভ্রুক্ষেপ প্রকাশ করলেন না। ভাবলেন এসময় মেয়েদের সাথে এমনটা বেশিরভাগই হয়ে থাকে। তামান্নাকে ডেকে বললেন, ” এতো না ভেবে ধর তেল মালিশ কর। নিজেই তো মা হচ্ছিস, এখনো মনে করিয়ে দিতে হবে সব আমাকে? ” তামান্নার হাতে অলিভ অয়েলের কৌটো ধরিয়ে দিয়ে তিনি চললেন বাহিরে। বাসায় বড় জামাই ছাড়াও ছোট মেয়ের জামাইটাও যে আছে। শ্বাশুড়ির তাই সেদিকে বেশ খেয়াল।

তামান্না পেটে অলিভ অয়েল মাসাজ করছিল। এতোকিছু করছে তবুও অস্থিরতা কাটাতে পারছে না। সাদিব গেছে বেশিক্ষণ হয়নি অথচ তার মনে হচ্ছে অনেকসময় পেরিয়ে গেছে। এ মুহুর্তে মনে হচ্ছে অপেক্ষা জিনিসটা ভীষণ কঠিন। যেন শেষ হতেই চাইছে না। তামান্না ফোন হাতে তুলে নেয়। সাদিবের নাম্বারে বার কয়েক ডায়াল করলে প্রতিবার মহিলা কণ্ঠে শুনতে পায়, ” ইউ ডু নট হ্যাভ সাফিসিয়েন্ট ব্যালেন্স! ” তামান্নার মাঝে বিরক্তি এসে ভর করে। ডাটা অন করলেও সাদিবের প্রোফাইল নিস্ক্রিয় দেখাল। তবুও মেসেঞ্জারে কয়েকটা মেসেজ পাঠাল। এই ভেবে যেন তার ডাটা অন থাকলে সে বার্তাগুলো দেখে তাড়াতাড়ি ফিরে আসে।

এতো চিন্তার মাঝে তামান্না খেয়াল করেনি বিছানার ওপর থেকে তেলের বাটি থেকে কখন তেল নিচে পড়েছে। বসা ছেড়ে উঠলে নিজের ভারী শরীর খানি সামলে নিতে পারেনি তামান্না। তাৎক্ষণিক পা পিছলে পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিলেরর সাথে ধাক্কা খায়। তাতেও যে শেষ রক্ষা হলো না, উল্টো মেঝেতে পড়ে যায়। যাকে বলে মরার উপর খাঁড়া ঘা! মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে মা বলে তীব্র আর্তনাদ।

তন্ময় সেসময় তামান্নার সাথে দেখা করতে এদিকটায় আসছিল। তামান্নার আর্তনাদ শুনে সাথে সাথে দৌড়ে ছুটে আসে। দেখতে পায় মেঝেতে রক্তের ফোয়ারা বইছে যেন। সেসাথে তামান্না মেঝেতে পড়ে পেটে হাত দিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। হাঁক ডেকে তনিমাকে একবার ডেকে দ্রুত এগিয়ে যায় তামান্নার কাছে। কোনো কিছু না ভেবে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। তন্ময় দাঁড়াতে গেলে সেও পিছলে পড়ে যায়। তবে যথাসাধ্য মতো তামান্নাকে আগলে নেয়। রওয়ানা দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। নীলিমা সহ বাকিরা এসে দেখতে পায় সবটা। নীলিমা মেয়ের অবস্থায় সাথে সাথে আঁতকে উঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক এক করে পেছন পেছন ছোটে বাসার অন্যসব সদস্যরাও। এতো কিছুর মাঝে সেসময় সাদিবকে জানানোর মতো সময় কিংবা সুযোগ কোনোটাই ছিল না তাদের হাতে। তামান্নাকে নিয়ে আসার পথে যতক্ষণ পর্যন্ত তার জ্ঞান ছিল ততক্ষণ শুধু সে তার ডাক্তার সাহেবকেই খুঁজে গেছে।
.

.
সাদিবের পুরো পৃথিবী ওলটপালট বলে মনে হলো। কোনো কিছু না ভেবেই সাদিব দ্রুত ছুটে গেল হসপিটালের দিকে। হসপিটালে যেতে বাসার সবাইকে উপস্থিত দেখা গেল। সাদিবের পেছন পেছন সাদিবের বাবা আশফাক শিকদারও চলে আসেন। সবার চোখে মুখে ভয়ভীতি। তন্ময়কে দেখা গেল অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে। পরণের শার্টটি তামান্নার রক্তে মাখামাখি অবস্থা। ছুটে গিয়ে তন্ময়ের শার্টে রক্তের কারণ জানতে চাইলে তন্ময় সবটা জানায়।

প্রিয় মানুষ হারানোর ভয়ে সাদিবের হাত পা অসাড় হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পেশায় সে নিজেও একজন ডাক্তার। আজ অব্ধি অনেক গুরুতর রোগীদের নিজের হাতে চিকিৎসা দিয়ে এসেছে। মানুষকে সমবেদনা জানানো ছাড়া কখনো সেভাবে কারোর কষ্ট বুঝেনি। অথচ আজ এরূপ সমস্যার সমুখে সে নিজেই। সৃষ্টিকর্তার কাছে বিনীত প্রার্থনা তিনি যেন তার স্ত্রী সন্তানদের সহিসালামতে তার কাছে ফিরিয়ে দেন।

ইতিমধ্যে ডাক্তার মনিরা সুলতানা অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এলে সাদিব দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। জানতে চায়, ” ডক্টর এনি প্রবলেম? ”

” পেসেন্টের প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে, তারওপর টুইন বেবি। যার দরুন এক বাচ্চাকে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। মা এবং বাকি জনেরও কন্ডিশন খুব একটা ভালো না। যত দ্রুত সম্ভব দুই ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করুণ। ”

তালিব আবসারের সাথে তামান্নার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে। কিন্তু তার বয়স পঞ্চাশোর্ধ হওয়ায় ডাক্তার নিতে অস্বীকার করলেন। কারণ এতে তিনি নিজেও অসুস্থ হওয়ার যথেষ্ঠ ঝুঁকি রয়েছে।

তালিব আবসার অনুরোধের সহিত বললেন, ” ডক্টর আপনি আমার শরীরের সবটা নিয়ে নিন। তবুও আমার মেয়েকে বাঁচান। ”

মনিরা বললেন, ” দেখুন যা করার দ্রুত করুণ এভাবে সময় নষ্ট করলে কিন্তু পেসেন্টের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ”

তালিব আবসারকে পুনরায় বলতে না দিয়ে তন্ময় জানাল, ” ডক্টর আমার আর তামান্নার ব্লাড গ্রুপ একই। এ পজিটিভ। আমার দিতে আপত্তি নেই। যতটুকু লাগে আপনি আমার শরীর থেকে নিন। ”

কথায় আছে বিপদে বন্ধুর পরিচয়। হলো তেমনটাই। শেষ সময়ের জন্য হলেও তামান্নার বিপদে এবারো তার প্রিয় বন্ধুটাই এগিয়ে এলো। ডাক্তার সম্মতি জানিয়ে সব ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন।

রক্ত দেওয়ার সময় তন্ময় চোখ বন্ধ করে মনে মনে তামান্নার নিকট বার্তা জানাল, ” তোকে কোনো এক সময় বলেছিলাম প্রাণ থাকতে আমার জন্য আমি তোর চোখে এক ফোঁটা পানিও আসতে দেবো না। সেদিক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত আমার জন্যই কিছুই না। তবুও সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইবো আমার বন্ধুটা ভালো থাকুক। এভাবেই বাকি জীবনেও আমাকে তোর পাশে পাবি। কথা দিলাম! ” অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তন্ময়।
.

.
সাদিব হসপিটালের করিডোরের অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছে। পরিচিত ডাক্তারগণের দু’একজন এগিয়ে এসে তার সাথে কথা বলতে আসলে সে এড়িয়ে গেল। এ মুহূর্তে তার মনের অবস্থা সে ছাড়া কেউই বুঝবে না বলে তার ধারণা। মনটা বারবার কু ডাকছে যার দরুন কিছুক্ষণ পর পর থিয়েটারের দিকে তাকাচ্ছে। ব্লাড নিয়ে একঘন্টা আগে ডাক্তার মনিরা গিয়েছেন এখনো কোনো খবর নিয়ে আসতে পারলেন না কেন? ভেবে পায়না সাদিব। সাদিবের ভাবনার কিয়ৎক্ষণের মাঝে সদ্য জন্মানো বাচ্চার কান্নায় সবার রুহে যেন পানি আসে। সাদিব তাৎক্ষণিক উঠে দাঁড়াল। নার্স এসে তার কোলে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তানকে তুলে দেয়। সেই সাথে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মনিরাও বেরিয়ে আসেন। তবে মনিরার চেহারা তুলনামূলক ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সাদিব বাচ্চাটির কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে আশফাক শিকদারের কোলে তুলে দিয়ে ব্যাকুল কন্ঠে জানতে চাইল প্রেয়সীর শারীরিক অবস্থায় কথা।
” ডক্টর ও ঠিক আছে তো? ”

মনিরার চেহারা তুলনামূলক ফ্যাকাশে দেখায়। বললেন, ” আপনি শান্ত হোন ডক্টর ইরফান! আপনার অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। ”

সাদিব ধমকে উঠল, ” আরে কি বুঝতে পারছেন? এতোই যখন বোঝেন তাহলে বলছেন না কেন? ”

সাদিবের ধমকে মনিরা স্তব্ধ হয়ে গেছেন। গত কয়েক মাসে এতটুকু বুঝেছেন তামান্নার কিছু হলে সাদিব তাকে ছাড়বে না। ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার আগেই সাদিব তার ক্যারিয়ারকে আলবিদা জানবে। কিন্তু বাঁচানোর মালিক তো কেবলমাত্র আল্লাহ। তারা ডাক্তারটা শুধু উছিলা মাত্র। নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করেও তিনি কোনো কুল কিনার পাননি৷

আশফাক শিকদার জানতে চাইলেন, ” কি হলো ডাক্তার আপনি কিছু বলছেন না কেন? ”

মনিরার চুপ করে থাকা অনেক কিছু বোঝাচ্ছে। সাদিব মনিরার জবাবের তোয়াক্কা না করে তাকে ঠেলে থিয়েটারের ভেতর ঢুকে পড়ে। অপারেশন থিয়েটারে জোরে কথা বলার কোনো নিয়ম নেই। সে তিনি যত বড় ডাক্তারই হোক না কেন? সেসব নিয়মের বালাই উড়িয়ে সাদিব জোরালো কণ্ঠে ডাকতে থাকল তামান্নার নাম ধরে। একসময় তামান্নার নিথর শরীরটা নজরে পড়তে সে সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। জবাব না পেয়ে ভাবে সে দেরি করে আসায় তামান্নার তার ওপর বড্ড অভিমান জমেছে। অতঃপর এভাবে অনবরত ডাকার পরও তামান্নার তরফ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে এক সময় সাদিব বুঝতে পারে, তার প্রেয়সী বাকশক্তি হারিয়েছে। নেত্রপল্লবের দ্বার টেনেছে, সারাদিনের বিরক্তিকর বকবকানি চিরতরে থামিয়ে দিয়েছে! তাকে মুক্তি দিয়ে পরকালে পাড়ি জমিয়েছে প্রেয়সী তার। সাদিব স্তব্ধ হয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। চোখজোড়া ঝাপসা হতে শুরু করে এবং পলক ফেলার আগেই সেখানে সে সেন্সলেস হয়ে যায়!

___★★★___

#তোমার_নামে_হৃদয়
#অন্তিম_পর্ব
পরিশিষ্টঃ-

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নোটবুক অফ করল সাদিব। পুরনো কথা মনে করে চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। চশমাটার খুলে পাশে রাখল। রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখজোড়া যেই না বন্ধ করল সবে মাত্র, এরই মাঝে হঠাৎ শুনতে পেল তানিম চিৎকার করে তাকে ডাকছে, ” বাবাই বাঁচাও! ” সাদিব হুড়মুড় করে বসা থেকে উঠে পড়ল।

পাশের রুমে যেতে দেখতে পেল ছেলের প্যান্টের চেইন জায়গামতো আটকে গেছে। সেখানটায় হাত দিয়ে ধরে রেখে সমানতালে লাফাচ্ছে। সাদিব দৌড়ে গেল তানিমের কাছে। সাদিবকে দেখে তানিম ব্যথাতুর কণ্ঠে বলল, ” বাবাই প্লিজ তাড়াতাড়ি কর। ব্যথা পাচ্ছি! ”

ছাড়িয়ে নিতে তানিমের দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো। এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল ওয়াশরুমের ভেতর। ছেলে চলে যেতে সাদিব চলে আসতে পা বাড়ালে পুনরায় ওয়াশরুমের ভেতর থেকে তানিম চিৎকার করে উঠে। দরজার এপাশ থেকে সাদিব আওয়াজ তুলল, ” আবার কি হলো? চেঁচাচ্ছ কেন? ”

” বাবাই শুনতে পেলে কিছু? ”
” না, শুনতে পায়নি। কি হয়েছে? ”
” ওয়াশরুমে ভূত ঢুকে লাইট ফাটিয়ে ফেলেছে বাবাই। ”

ছেলের আহাম্মক কথাবার্তায় সাদিবের মাথার বাজ পড়ার উপক্রম। মৃদু ধমকে ছেলেকে বলল, ” তানিম! অনেক হয়েছে। প্রতিদিন এক কাহিনি শুনতে ভালো লাগে না। তুমি কি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে? নাকি আমি সত্যি সত্যি ভেতরে ভূত পাঠিয়ে দেবো? ”

” না বাবাই। একদম না! আমি এক্ষুনি আসছি৷ ”

ছেলেটা ভীষণ পাঁজি হয়েছে ঠিক তার মায়ের মতো। মা ছেলে মিলে তাকে জ্বালাতে পারলে যেন তাদের শান্তি। আদতে তানিম দেখতে ঠিক তার মায়ের মতোই হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দুষ্টুমি সে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে করে সেদিক থেকে সে তার মাকেও হারিয়ে দিয়েছে। সাদিব ভাবতে ভাবতে বেলকনির দিকে পা বাড়ায়। বাড়িতে একটা ফোন করা উচিত বলে ভাবল। সেই যে বাসা ছেড়েছে তারপর আর যাওয়া হয়নি। সেখানে গেলেই নতুন করে না আবার তার মা কোনো ফাঁদে ফেলার ফন্দি আঁটে সেই বিশ্বাস থেকে কিনা! সেই ছাড়ার আজ প্রায় দশ দশটা বছর হতে চলল। এর মাঝে বারকয়েক ফিরে যাওয়ার কথা উঠলেও অগ্রাহ্য করে চলেছে।
.

.
ষাটোর্ধের বৃদ্ধ এখন আশফাক শিকদার। সারাদিন বাসায় বসেই কাটান। আগের মতো চলাফেরা করতে বেশ সমস্যা দেখা দেয় আজকাল। এ বয়সে কোথায় নাতি নাতনি নিয়ে হৈ হুল্লোড় করবেন অথচ তা আর হয়ে উঠল কই! এন্ড্রয়েড ফোনের ওয়ালপেপারের নাতির ছবি দিয়ে রেখেছেন। নাতিকে কাছে না পেলে কি হয়েছে ছবির সাথে কথা বলে পার করে দেন। ছেলেকে আসতে বলতে সাহস হয়না যে! তার ভাবনার মাঝে সামিরা কাশি দিতে দিতে বলল, ” শুনছো সাদিবের বাবা? সাদিবকে একটু আসতে বল না। ছেলেটাকে কি মরার আগেও একবার দেখে যেতে পারবো না? ”

সামিরার অবস্থাও খুব একটা সুবিধের না। একপ্রকার সয্যাশায়ী জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবার পরিজন হারিয়ে আজ তার এরূপ করুণ দশা। ভাগ্য সহায় ছিল তার সেজন্য সেদিন আশফাক শিকদার বাসা ছাড়তে বললেও ছাড়িয়ে দেননি। তবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন স্বামী এবং ছেলেমেয়েরা। বিশেষ করে ছেলে। সাদিয়া বছরে এক কিংবা দেশের বাহিরে থাকায় আসেও না৷

সামিরার কথার খেই ধরে তিনি জবাব দিলেন, ” কোন মুখে আসতে বলি তাকে? সেই মুখ কি তুমি রেখেছো? ”

সামিরা চুপসে গেলেন। আশফাক শিকদারের ফোন বেজে উঠলে তিনি তাতে ব্যস্ত হয়ে যান। সাদিব ফোন করেছে বুঝতে পেরে সামিরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে। ইশারায় বোঝাতে চায়, সেও ছেলের সাথে কথা বলতে চায়! কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারো আশফাক শিকদার চোখ রাঙিয়ে চুপ করিয়ে ফেলেন। সামিরার সামনে থাকলে ঠিকভাবে কথা বলতে পারবে না ভেবে তিনি সেখান থেকে সরে গেলেন।

” বাবা আপনার থেকে একটা কথা জানার ছিল! ”
” কি বল না! ”
” মায়ের শরীর ঠিকঠাক আছে তো? ”

” আর ঠিকঠাক। একটু আগেও বলছিল তোদের যেন আসতে বলি। অন্তত মৃত্যুর আগে হলেও যেন তোদের এক নজর দেখতে পায়। ”

সাদিব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মায়ের দিন দিন অসুস্থতা বেড়েই চলেছে। এভাবে হয়তো একদিন চলেই যাবেন। তখন আফসোস ছাড়া বোধহয় করার মতো কিছুই থাকবে না। বলল, ” তুমি কি বল বাবা? যাওয়াটা কি উচিত? ”

” সবটা নির্ভর করছে তোর আর তামান্নার ওপর। ওকে জিজ্ঞেস করে দেখ কি বলে? ” আশফাক শিকদার যেই না কথাটা শেষ করলেন ওমনি পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে কেউ একজন ফোন টেনে নিয়ে নিল।

কাজটি কার বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয়নি সাদিবের। হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ব্যক্তিটির দিকে। ” বাবা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, আমরা আসছি মাকে বলে দিন।”

তামান্না ফোন কেটে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ” আমার ছেলেকে কি বলছিলে তুমি? ”

” কি বলেছি? ”

” কিছু বলনি বুঝি? আমার ছেলে কি তাহলে শুধু শুধু ভয় পেয়ে আছে? ”

সাদিব বুঝল তার বাঘিনী ক্ষেপেছে। তাকে এখন কিছু বোঝালেও সে বুঝবে না। বরং আরেকটু বাজিয়ে দেওয়ার স্বার্থে বলল, ” ভয় তো উল্টো তোমরা আমাকে পাইয়ে দেও! আগে তুমি দেখাতে এখন তোমার ছেলে, কই আমি তো কাউকে নালিশ জানাই না? ”

” কি বললে তুমি? আমি তোমাকে ভয় পাইয়ে দেই? কিভাবে ভয় পাইয়েচ্ছি দেখাও দেখি? ”

” পাইয়েছো পাইয়েছো। সবাই সাক্ষী আছে কিন্তু। তানিম জন্মের সময় কিভাবে আমাকে সেন্স হারাতে হয়েছে ভুলিনি আমি। ”

সাদিবের কথা শোনা মাত্রই তামান্না চুপসে গেল। মুখটা মলিন দেখাল। বুঝতে পেরে সাদিব এগিয়ে গেল। কাতর গলায় তামান্না বলল, ” সেদিন কি বেশি ভয় পেয়েছিলে? ”

” শুধু ভয়ই না। ভীষণ ভয়। যেটা কিছুক্ষণ আগেও আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। ”

” তুমি আজকেও নোটবুকটা পড়েছিলে? ”

সাদিব মুখে কিছু বলল না। মৌন থেকে বাহিরে দৃষ্টি ঘোরালো। তামান্না যা বুঝার বুঝে গেল। সিন্ধান্ত নিল আজই সে এটাকে পুড়িয়ে ফেলবে। সব নষ্টের মূল এটাই। নোটবুকটা হাতে নিতে সাদিব বাঁধা দিলো। ছো মেরে কেঁড়ে নিয়ে নিল তামান্নার হাত থেকে। বলল, ” খবরদার এটাতে একদম হাত দেবে না বলছি। ”

” কেন? এটার জন্য তুমি প্রায়ই পুরাতন কথা টেনে এনে কষ্ট পাও। দেখতে পাচ্ছ না আমি একদম সুস্থ সবল। ”

” দেখতে পেলেও তুমি এটাতে হাত লাগাবে না বলছি। এটা আমার প্রেয়সীর তরফ থেকে পাওয়া সেরা উপহারের একটি। ”

বাবা মায়ের খুনসুটির মাঝে উপস্থিত হলো তানিম। বিজ্ঞের ন্যায় বলতে লাগল, ” ঝগড়াঝাটি পঁচা ছেলেমেয়েরা করে। আমি কি ধরে নেবো তোমরা তাদের দলের একজন? ” তামান্না সাদিব খেয়াল করল তানিমকে। কথা বলা থামিয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। তানিম বলল, ” কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেন? ” বুঝতে কারোরই বাকি রইল না তানিম কাকে অনুকরণ করে কথাটা বলেছে। সাদিব ফিক করে হেসে ফেলল। সেই সাথে তামান্নার চেহারার রং বদলে গেল। তামান্না ছেলেকে তেড়ে গেলে তানিম দৌড়ে বাবার পেছনে লুকালো।
.

.
আজ বহুদিন পর শিকদার বাড়তি পা রাখল সাদিব তামান্না। সাথে তাদের ছেলে তানিমও আছে। তানিমের জন্য এ প্রথম। একদম অচেনা পরিবেশ। আসার পথে মাকে অবশ্য সে জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় যাচ্ছে তারা! মা তাকে বলেছিল এটা নাকি তার দাদার বাড়ি। শুনেছে দাদার বাড়িতে দাদা, দাদি থাকে। দাদাকে সে ভিডিও কলে দেখেছে কিন্তু দাদিকে সেভাবে দেখতে পায়নি।

আশফাক শিকদার সকাল থেকে ব্যাকুল হয়ে বসে আছেন সাদিবদের আসায়। কলিং বেলের শব্দে কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলে তানিম বাবা মাকে ফেলে রেখে দৌড়ে চলে যায়। বাসায় ঢুকতে পথিমধ্যে আশফাক শিকদারের সাথে দেখা হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা লোকটিকে চিন্তে অসুবিধে হয়না ইনি-ই যে তার দাদা। তানিম দৌড়ে এসে ” দাদাভাই! ” বলে দাদাকে জড়িয়ে ধরে।

তানিমের চিৎকার শুনে সামিরারও বুঝতে বাকি রইল না সাদিব এসেছে। তানিমকে দাদার কাছে রেখে সাদিব তামান্না সামিরার সাথে দেখা করতে গেল। তামান্না সামিরার খাটের একপাশে বসে সামিরার হাত ধরল। বলল, ” মা কেমন আছেন আপনি? ”

সামিরা মৃদু শব্দ তুলে কান্না করে দিলেন। কান্নারত কণ্ঠে তামান্নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ” মা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। অনেক অন্যায় করেছি তোমার আর আমার নাতিটার সাথে। ”

সামিরার চোখের পানি মুছে দিয়ে তামান্না বলল, ” ক্ষমা তো আপনাকে কবেই করে দিয়েছি মা। আপনি কাঁদবেন না। ”

সাদিব দূরে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ সবটা দেখছিল। শ্বাশুড়ি বউমার মুলাকাতের পর তারও বলার মতো কিছু রইল না। শুধু মায়ের এহেন দশায় মনে খারাপ লাগা জমেছে। সামিরা ছেলেকে বললেন, ” বাবা তুই ক্ষমা করবি না? ”

” যার সাথে অন্যায় করেছো সে যদি করে দেয় তাহলে আমার এখানে আর কি বা করার আছে! ”

” এভাবে কেন কথা বলছিস বাপ? ”

” ঠিকই তো বলছি মা। ”

তামান্না বলল, ” মা বাদ দিন তো। আপনি এবার তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান দেখি। আমরা আবার আগের মতো থাকবো কেমন? ”

” সেটা বোধহয় আর সম্ভব না রে মা। আমার দাদুভাই কোথাও? ওকে আনোনি? ”

” এনেছি। বাবার সাথে আছে। ”

দাদাভাইয়ের সাথে কুশলাদি বিনিময় করার মাঝে তানিম এসে মায়ের পাশে বসল। মায়ের সাথে কথা বলা সামিরাকে দেখিয়ে জানতে চাইল, ” মামনি ইনি কি আমার দাদু? ”

” হ্যাঁ বাবা। ইনি-ই তোমার দাদু। ”

তানিমকে দাদির পাশে বসতে বললে তানিম দাদির পাশে বসে দাদির দিকে চেয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। সামিরা নাতিকে কাছে টেনে নিলেন। জড়িয়ে ধরে বললেন, ” আমাকে ক্ষমা করে দিও দাদুভাই! ”

তানিম বুঝল না দাদির কথার আগামাথা। মায়ের মতো চঞ্চল হলেও বাবার মতো পরিস্থিতি বোঝার নূন্যতম জ্ঞান আগে থেকে তারমধ্যে দিয়ে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা। তাই চুপচাপ বসে রইল।
.

.
তামান্নাদের আসার খবর পেয়ে তামান্নার বাসার প্রতিটি সদস্য শিকদার বাড়িতে ছুটে আসল। পুরো বাড়ি জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে কাটলো পুরোটা দিন। এতোগুলো বছর সবার চেয়ে দূরে থেকে তানিমও আজ বুঝতে পারল পরিবার পরিজনদের মাঝে কাটানোর আনন্দ। এতোদিন সবার সাথে তার টেলিফোনে যোগাযোগ চলতো। আর আজ সে সবার সাথে সরাসরি সময় কাটাল। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলল সবার আড্ডা। তবে কিছুটা মন খারাপও হলো, খালাতো আর ফুপাতো ভাইবোনদের দেখে।

তামান্না বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছে। নিগুঢ় অন্ধকারের মাঝেও ছোট কয়েকটা তারা উঁকি ঝুঁকি মারছে। বহু বছর পর আজ তারা দু’জন সেই একই বেলকনিতে বসে আগের মতো সময় কাটাবে বলে ভেবে রেখেছে। বেলকনিটার বরাবর আগে প্রিয়ন্তির বেলকনি ছিলো। খুব জানতে ইচ্ছে হলো, ‘আচ্ছা! প্রিয়ন্তিরা কি এখনো আছে ও বাসায়? প্রিয়তির ছেলেমেয়ে এখন কয়জন? তখনকার জন ছেলে ছিলো নাকি মেয়ে? ‘ ভাবনার ছেদ ঘটলো সাদিবের হাতের স্পর্শে। তামান্নার কোমর জড়িয়ে আছে সাদিবের দু’টো হাত। কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে সাদিব জানতে চাইল, ” একা একা এতো কি ভাবছো? ”

” ভাবছি তানিমের কিছুক্ষণ আগে বলে যাওয়া কথাটা। ”

” কি বলেছে? ”

” জানতে চেয়েছে। তার সাথের সবার ভাইবোন আছে, কেবল তারই নেই কেন? ”

” শুনে তুমি কি বলেছো? ”

” ওকে কিছু বলিনি। তোমাকে বলছি, এনে দিলে হয় না? ”

সাদিব তামান্নার কথা শুনে আঁতকে উঠে তামান্নাকে ছেড়ে দিল। বলল, ” পাগল হইছো? আমি তোমাকে নিয়ে আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না। অন্য যা বলবে শুনতে রাজি আছি। ”

” কিসের রিস্ক যাহ্। ”

” নয়তো কি? টানা তিনদিন অজ্ঞান ছিলে তুমি। সেই তিনদিন কীভাবে কেটেছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। প্রথমে না বুঝেই সত্যি ভেবে ভেঙে পড়েছিলাম। সেন্স ফিরতে শুনলাম তোমার শুধু সেন্সটাই ছিলো না। কিন্তু যদি সত্যি সত্যি এর থেকেও বেশি কিছু হয়ে যেত? ”

” এবার এমন কিছুই হবে না ইনশাআল্লাহ। ”
তামান্নার বোঝানোতেও কাজ হলো না। সাদিবের মাঝে কোনো হেলদোল দেখা গেল না। সাদিব এখনো নিজের কথাতেই অটুট। বুঝতে পারে তামান্না বলল, ” যাও লাগবে না। তুমি আগেও যেমন ছিলে এখনো সেরকমটিই রয়ে গেছো। বদ লোক একটা, বদ লোকও না ভীষণ বদ লোক। ”

প্রতিত্তোরে সাদিব বলল, ” যত বকার বকো। কোনো লাভ হবে না সোনা! ”

মুখ গোমরা করে সাদিবকে ফেলে রেখে ঘুমোতে চলে যায়। সাদিব আড়ালে মুচকি হাসে। লাইটের সুইচ অফ করে সেও শুতে চলে যায়। তামান্না বুঝতে পেরে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। সাদিব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে হাতটাও ছাড়িয়ে দেয়। ” যাও ধরবে না আমায়! ”

তামান্নার রাগ, ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় মায়াবী চেহারা, সাদিবকে তামান্নার প্রতি একইভাবে আকৃষ্ট করে। শেষ পর্যন্ত প্রতিবারের মতো এবারো হেরে যায় প্রেয়সীর জেদের কাছে। দ্বিমত করার সুযোগ না খুঁজে তামান্নাকে জোরপূর্বক নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। তামান্নাও বুঝতে পারে সে সফল। অতঃপর মিলিয়ে যায় দু’জন দু’জনার মাঝে।

_____________________সমাপ্ত _____________________