#তোমার_নিমন্ত্রণে (শেষ পর্ব)
নুসরাত জাহান লিজা
শোভাকে দেখে শ্রেয়সী খানিকটা তটস্থ হয়ে উঠল ভেতরে ভেতরে দীপ্তর মানসিক অবস্থার কথা ভেবে। তবে দীপ্ত আজ নির্বিকার। শুরুতে কিয়দক্ষণের জন্য একটা ক্ষোভের ছায়া পড়লেও তা দ্রুত সরে গেছে।
“কেমন আছো তোমরা?”
দীপ্তই উত্তর দিল, “ভালো আছি।”
“তোমারা যদি কিছু মনে না করো আমার সাথে একটু বসবে কিছুক্ষণের জন্য? জানি আমি ক্ষমা চাইবার অযোগ্য, তবুও একবার…”
“স্যরি, সবাইকে ক্ষমা করা সম্ভব হয় না। তবে আগে আপনার প্রতি অসম্ভব রাগ ছিল, এখন সেটা নেই। বরং করুণা হয় আপনার জন্য। আসি। চলো শ্রেয়সী।” কথাটা বলেই দীপ্ত শ্রেয়সীকে হাত ধরে নিয়ে গেল। শ্রেয়সী একবার ঘুরে শোভার মুখের দিকে চাইল, ওরও বড্ড করুণা হলো তার জন্য। কিঞ্চিৎ কষ্টও।
আর শোভা, তিনি যতদূর পর্যন্ত দীপ্ত মিলিয়ে না যায়, তাকিয়ে রইলেন ওদের যাওয়ার দিকে। চোখ দুটো ঝাপসা। তিনি জীবনের হিসেব মেলাতে বড্ড ভুল করে ফেলেছিলেন। মোহসীনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ থেকে তিনি বিয়ে করলেন একজন নামী ব্যবসায়ীকে। সন্তান জন্মালো। তাদের নিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়ে রইলেন। সাথে প্রাক্তন স্বামীর প্রতি তীব্র ক্রোধ। সেই ক্রোধে চাইতেন তার ছেড়ে আসা স্বামী তার অভাব ভয়ানকভাবে টের পাক, ব্যর্থ হোক। বাবা হিসেবে যে বড়াই তার তা নিঃশেষ হয়ে যাক! তার তখন মাথায় ছিল না, এই খারাপ কামনার সাথে তার নিজের সন্তানও জড়িয়ে আছে।
বছর কয়েক আগে তিনি আবিষ্কার করেন, তার বর্তমান স্বামী ঢাকার অভিজাত এক এলাকায় তার অফিসের এক ইয়াং এমপ্লয়িকে নিয়ে থাকেন। তিনি ভেঙে পড়েন। তার সন্তানদের সাথে শেয়ার করলে তারা জানায় এসব নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। দেশের বাইরে তারা তাদের বন্দোবস্ত করে নিয়েছে। তাকে ওরা তাদের সাথে গিয়ে থাকার প্রস্তাব দেয়। শোভা ভীষণ একা হয়ে পড়েন। গত মাসে তিনি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন। লোকটা রাজি নয় বলে মামলা চলছে।
জীবনের শেষ বেলায় এসে তার মনে হয়েছে কিছু কিছু অন্যায়ের শাস্তি আল্লাহ পৃথিবীর মাটিতেই দেন। যাকে তিনি ছেড়ে এসেছিলেন বহুবছর আগে, সে এখনো একা। আর যার হাত ধরেছিলেন, সে… অবশ্য শোভা যেমন লোকটার প্রতিপত্তি ব্যবহার করে একজনকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলেন। এই সম্পর্কে কখনো ভালোবাসাই ছিল না। তিনি বুঝতে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। ডিভোর্স হয়ে গেলে তিনি চট্টগ্রাম ফিরে যাবেন। তিনি নিজেও পেশাগত দিক থেকে একজন সফল মানুষ। জীবনের যে কয়টা দিন আছে, তিনি একাই কাটাবেন। একাকীত্বের চাইতে যন্ত্রণাময় শাস্তি পৃথিবীতে আর কী আছে! দীপ্তর ক্ষমা পেলে হয়তো খানিকটা সহজ হতো পরের সময়টা, কিন্তু সেটা তো হবার নয়। তিনি মন খুলে কাঁদতেও পারছেন না, তার দম্ভ তাকে আটকে দিচ্ছে বারবার। তবুও চোখ ভিজে আসছে।
***
শ্রেয়সী দীপ্তর হাতটা ধরে আছে। গাড়ি চলছে বাড়ির দিকে। দীপ্ত শ্রেয়সীর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে বলল,
“তোমাকে ধন্যবাদ শ্রেয়সী।”
“কেন?” হতচকিত গলায় জিজ্ঞেস করল শ্রেয়সী।
“আমার জীবনে আসার জন্য। আমাকে ভালোবাসার জন্য। আমাকে সঠিক রাস্তাটা দেখানোর জন্য।”
“তাহলে তো আমারও তোমাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত।”
“উনাকে দেখে আমার আগের মতোই পৃথিবী উল্টেপাল্টে দিতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু আমার তখন তোমার কথা মনে পড়ল, তোমার আমার প্রতি রাখা বিশ্বাসের কথা মনে পড়ল। আমি সামলে নিতে পারলাম। আমি যতটা নিজের ঠিক ততটাই তো তোমারও। তোমাকে আরেকবার আমি হতাশ করতে চাই না।”
শ্রেয়সী দুই চোখ বেয়ে তখন ঝর্ণা নেমেছে। বিষাদেও এত জল ঝরেনি যতটা আজ পরম সুখে গড়িয়ে পড়ছে। মনে মনে দোয়া করল, “এমন প্রগাঢ় ভালোবাসা যে চিরদিন আমার জন্য থাকে আল্লাহ।”
***
আজ দীপ্ত-শ্রেয়সীর প্রথম বিবাহবার্ষিকী। একটা বছর কীভাবে যে চলে গেছে! দীপ্ত এই কতদিনে একটা আক্ষেপ শ্রেয়সীকে করতে শুনেছে, শ্রেয়সীর জামদানী শাড়ি। দীপ্ত ঠিক করল এবার একই রঙের একটা জামদানী স্ত্রীকে উপহার হিসেবে দেবে। সে কিনেও নিয়ে এলো।
শ্রেয়সী শাড়িটা খুলে দেখল, দীপ্ত বলল “তোমার জলপাই রঙের জামদানী।”
শ্রেয়সী বলল, “আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তবে এটা টিয়া রঙ, জলপাই রঙ না।”
দীপ্ত প্রথমে মানতে চাইল না, পরে পাশাপাশি দুটো শাড়ি রেখে দেখল শ্রেয়সীর কথাই ঠিক। সে হতাশ ভঙ্গিতে বলল, “একটাই রঙ, একটু আলাদা। কোনো মানে হয়!”
শ্রেয়সী হেসে ফেলল। সে দীপ্তকে কিছুটা খোঁচানোর জন্য শাড়িটার প্রসঙ্গ তুলত। পাগলটা যে একই রঙের শাড়ি কিনে আনার চেষ্টা করবে বুঝতে পারেনি। তবে ওকে খুশি করবার এই যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, এতেই সে ভীষণ খুশি।
শ্রেয়সী দীপ্তকে নিজের হাতে এমব্রয়ডারি করা একটা পাঞ্জাবি দিয়েছে উপহার হিসেবে। দু’জনেই শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে বাবার দোয়া নিয়েছে।
তিনজন মিলে বাইরে খেয়েছে, মোহসীন সাহেব এরপর ওদের নিজেদের মতো কাটানোর সুযোগ দিয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন।
একগুচ্ছ বেলীফুলের মালা কিনে দীপ্ত তা গুঁজে দিলো শ্রেয়সীর খোঁপায়। টিয়ে রঙের জামদানীত, খোঁপায় বেলীফুল, শ্রেয়সীর মধ্যে চিরায়ত বাঙালি মেয়ের শাশ্বত রূপ এসে যেন ভিড়েছে। দীপ্ত কতক্ষণ চোখ সরাতে পারল না।
***
দীপ্তর এবারের জন্মদিনেও কেউ উইশ করল না। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শ্রেয়সী একটা কাগজ ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। দীপ্ত ভেবেছিল সুন্দর কোনো চিঠি হবে। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে খোলার পরে বাজারের লিস্ট দেখে প্রত্যাশার বেলুন ঠুস করে ফুটো হয়ে গেল। মুখ গোমড়া করে হাত মুখ ধুয়ে আসতেই শ্রেয়সী বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিল।
বেরিয়ে আসার সময় বাবা বললেন, “ভালো মাছ আনিস। দেখে যাচাই করে আনিস।”
“আমি বাজারে আজকে নতুন যাচ্ছি না বাবা।”
“গতবারের মাছ এইজন্যই ওমন ছিল।”
“ধূর।” তিক্ত মন নিয়ে দীপ্ত বেরিয়ে এলো। কাদের সাথে সে থাকছে! সামান্য দাম কেউ দেয় না ওকে।
প্রথমে দীপ্ত ভীড় ঠেলে কাঁচা বাজারে গেল। দোকানী হেসে জিজ্ঞেস করল, “কী লাগব?”
দীপ্তর মুখে বলতেও ইচ্ছে করল না, জিজ্ঞেস করল, “পড়তে জানেন?”
লোকটা হেসে বলল, “কেলাস সিক্স পর্যন্ত পড়ছিলাম।”
দীপ্ত পকেট থেকে বাজারের লিস্ট বের করে তার হাতে দিল, লোকটা পড়তে শুরু করেছে, মুখে মিটমিটে হাসি। বাজারের লিস্ট পড়ে ব্যাটা এমন হাসছে কেন?
“স্যার মনে হয় ভুল কইরা এইটা দিছেন।”
দীপ্ত কাগজটা হাতে নিয়ে নিজের কপাল চাপড়ালো। এটা একটা চিঠি, গভীর ভালোবাসা নিয়ে লেখা প্রেমপত্র। প্রেরক শ্রেয়সী।
দীপ্ত এক পৃথিবী অস্বস্তি নিয়ে পকেটে হাত দিল, দেখল আরেক খানা একই রকমের কাগজ। তাতে বাজারের লিস্ট। একসাথে দুটোই ছিল বোধহয়, একটা দেখে উত্তেজিত হয়ে অন্যটা আর খোলা হয়নি। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সে কোনোদিন পরেনি। স্ত্রীর চিঠি কিনা হাটে-বাজারে পড়িয়েছে! ছিঃ ছিঃ! এমন গাধার মতো কাজ কেউ করে! শ্রেয়সী শুনলে ওকে জ্বালিয়ে মারবে!
চিঠিটা না পড়েই পকেটে রেখে দিল। এরপর কোনোমতে বাজার শেষ করে বাসায় ফিরে ওয়াশরুমে গিয়ে চিঠিটা খুলল।
“তোমার ভালোবাসার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে চলে এসেছিলাম তোমার হৃদয় বাড়িতে। এরপর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছি তোমার সাথে। প্রতিনিমন্ত্রণে তোমাকে ডেকেছিলাম, তোমার সাড়া আমি টের পাই প্রতিনিয়ত। আমি তোমার মতো ধন্যবাদ জানাতে চাই না, প্রতিটা মুহূর্তে তোমার পাশে থেকে মুহূর্তগুলো নিজের করে নিতে চাই।
পৃথিবীর সবচাইতে চমৎকার মনের ছেলের জন্য পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা—-
শুভ জন্মদিন, দীপ্ত
ইতি,
শ্রেয়সী।”
ছোট্ট চিঠি, কিন্তু এর তাৎপর্য দীপ্তের কাছে অপরিসীম। জীবনে বহু চড়াই উৎরাইয়ের পরে সে ভালোবাসার নিমন্ত্রণ পেয়েছিল। সে প্রথমে দ্বিধা নিয়ে ছুটে গিয়েছিল, এরপর সেই দ্বিধা কোন সূদূরে হারিয়ে গেছে। এখন পুরোটাই ভালোবাসার ঘর।
শ্রেয়সী ওয়াশরুমের দরজায় নক করছে, দীপ্ত দরজা খুলে শ্রেয়সীকে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল। মুখে কোনো কথা না হলেও তারা পরস্পরের সমস্ত অব্যক্ত কথাই বুঝে নিল অনুভূতি দিয়ে।
কিছুক্ষণ পরে দীপ্ত বলল, “তুমি চিঠিটা আমাকে সরাসরি দিতে পারলে না? তাহলে..”
“কেন? কী করেছ?”
দীপ্ত ঘটনাটা খুলে বলতে শ্রেয়সী সশব্দে হেসে ফেলল, “তুমি এমন কেন?”
দীপ্ত উত্তর দিল না, সেই হাসিতে বুঁদ হয়ে গেল।
পরিশিষ্টঃ
মোহসীন সাহেবের এখন সময় কাটে নাতনিকে নিয়ে। এখনো নাম রাখা হয়নি, ছেলে আর ছেলের বউ, দুজনেই এই গুরুদায়িত্ব তার উপরে অর্পণ করেছে।
একসময় সবকিছুর জন্য মোহসীন সাহেবের নিজেকে দায়ী মনে হতো মাঝেমাঝে। তখন ছেলেটার কথা চিন্তা করে তিনি কী আরেকটু ভেবে দেখতে পারতেন! শোভাকে বোঝাতে পারতেন! কিন্তু তাতে তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেত। একটা দমবন্ধ পরিবেশে বাঁচার চাইতে তো আলাদা হয়ে যাওয়াটাই সঠিক ছিল। কী করা উচিত ছিল তার! তার দুদিকেই লস হতো। যা হয়েছে তা আটকানোর মতো অবস্থা তার হাতে ছিল না। শোভার স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। মুখ বুঁজে তা সহ্য করা যেত না। প্রতিবাদ করলেই সংঘর্ষ বাঁধত। শেষ পর্যন্ত যখন দীপ্তকেই তাদের মধ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হলো তিনি রুখে দিলেন।
বাবা হিসেবে তিনি তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। জীবনে কখনো তিনি অসৎ পথে রোজগার করেননি। তাই এটা নিয়ে কোনোদিন তার মধ্যে বিবেক দংশেনি। দীপ্তও বাবাকে নিয়ে গর্ব করে। তার যথেষ্ট সুযোগ ছিল বিপথগামী হবার, ঘরে চাহিদা ছিল, বাইরে প্রলোভন ছিল। তবুও তিনি দাঁতে দাঁত চেপে তার নিজের যেটুকু আয় তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছেন। শোভার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের সামর্থ্য তার তখন ছিল না। তার অবস্থান জেনেই শোভা তার হাত ধরেছিল। এসব দংশন তিনি এখন ছেলেকে সুখী দেখে, নাতনীকে দেখে তিনি ভুলে গেছেন। এখন আর তার মনে আলাদা করে কোনো ক্লেদ জমে না। ওদের সুখে তিনিও সমান অংশীদার।
দীপ্তকে যখন দেখেন কোনো কোনো রাতে মেয়েকে কোলে নিয়ে বারান্দায় হেঁটে হেঁটে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে, তার চোখ দুটো ভিজে উঠে। একরোখা হয়ে উঠা দীপ্ত, কেমন একজন বাবা হয়ে উঠেছে! প্রথমবার মেয়েকে কোলে নিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল, তাকে প্রশ্ন করেছিল, “বাবা, আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন তোমার মতো একজন বাবা হতে পারি।”
এই ভালোবাসা, ভরসা শুধু জন্ম দিলেই পাওয়া যায় কী! তার মনে হয়, সেটা অর্জন করে নিতে হয়। তিনি কিছুটা হলেও পেরেছেন। এটাই তার জন্য এই জীবদ্দশায় সবচাইতে বড় প্রাপ্তি।
শ্রেয়সীর মতো এত চমৎকার আর সংবেদনশীল মনের একজন মেয়ে, যে দীপ্তর পাশে তাকে আগলে রাখছে সর্বদা, তখন ছেলেকে নিয়ে তার আর কোনো শঙ্কা নেই। তিনি যখন থাকবেন না, তখন তার ছেলে একা হয়ে যাবে না, ভালো থাকবে, এই স্বস্তি নিয়ে তিনি ডাক এলে চলে যেতে পারবেন!
এসব যখন ভাবছিলেন, তখন দীপ্ত এলো ভেতরে, অফিস থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে এপাশে এসেছে।
ঘুমন্ত মেয়েকে বিছানা থেকে কোলে নিতেই মেয়ে কেঁদে উঠল।
“দিলি তো ঘুমটা ভাঙিয়ে। এখন কোলে নেবার কী দরকার ছিল?”
“সারাদিন ওকে দেখিনি। তাই তো নিলাম৷ নে মা বাপের কোলে ঘুমা, তাও কাঁদিস না।”
শ্রেয়সীর ছুটি আরও কিছুদিন আছে। সে খেয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিতেই মোহসীন সাহেব নিয়ে এসেছে। মেয়েটা ঘুমাক একটু এই ভেবে।
মনে মনে খুশি হলেও তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দীপ্তের উদ্দেশ্যে বললেন, “গাধা।”
“বাবা, এটা ঠিক না। তুমি আমার মেয়ের সামনে আমাকে গাধা ডেকে আমার প্রেস্টিজের বারোটা বাজিও না।”
মোহসীন সাহেব হেসে ফেললেন, পুঁচকিটা কান্না থামিয়ে দিয়েছে দেখে দীপ্তও হাসল। মেয়ের কান্না শুনে শ্রেয়সীর ঘুম ভেঙেছে বলে এদিকেই আসছি। তিন প্রজন্মের তিনজনের কাণ্ড দেখে আর ভেতরে এলো না। সেখানেই দাঁড়িয়ে মুহূর্তটাকে হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে নিল চিরস্থায়ীভাবে।
***
আজ শিমুলদের বাসায় দাওয়াত আছে। দীপ্ত আজও প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে রেডি হয়েছে। শ্রেয়সী খুঁনসুটি করতে করতে অবচেতনেই দীপ্তর চুল এলোমেলো করে দিল। এরপর প্রমাদ গুণল, আরও কতক্ষণের জন্য চুল আঁচড়ানোর বিরতি চলবে ভেবে। কিন্তু দীপ্ত আর ঘরে গেল না। হাত দিয়ে কোনোরকমে চুল ঠিক করে মেয়েকে কোলে নিল।
“আমি আঁচড়ে দেই, দাঁড়াও।”
দীপ্ত বলল, “থাক লাগবে না। আমার কন্যা নিজ দায়িত্বে আবারও এলোমেলো করে দেবে। আমার চুলের মধ্যে ওর যে কীসের খেলা!” কপট বিরক্তি প্রকাশের চেষ্টা করলেও তাতে স্নেহ ঝরে পড়ল৷
শ্রেয়সী হেসে ফেলল। এতদিনে সে যা পারেনি, মেয়ে এই দেড় মাসেই সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে।
মোহসীন সাহেব এসে বললেন, “তোরা দাঁড়া, আজ আমাদের পুঁচকিটা প্রথম বাইরে যাচ্ছে। তোদের একসাথে একটা ছবি থাকুক।”
ক্যামেরার ফ্রেমের পাশাপাশি হৃদয়ের ফ্রেমেও ছবিটা বন্দী করে নিলেন তিনি। একটা সুখী পরিবারের ছবি।
………
(সমাপ্ত)