গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব:-২
🥀 কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য 🥀
তালুকদার বাড়ীর বড়ো নাতনির বিয়ের দিনই বর মরেছে এই কথা যেনো লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে।সেই ঘটনার পর থেকে কেও আর তালুকদার বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে যেতে চাইছে না।
বাড়ির হেঁসেলে বাড়ির তিন বউ দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত।বড়ো বউ নাজিয়া বেগম মেয়ের চিন্তায় মগ্ন। ছোটো বউ সুরাইয়া বেগম বলে ওঠেন,” যা অঘটন হলো তার ফলে শুধু মুগ্ধতার নয় এবাড়ির বাকিদেরও কপাল পুড়লো,কি বলেন বড়ো ভাবী??”
জায়ের কথায় নাজিয়া বেগমের হুশ ফেরে। মেজবৌ সুমাইয়া বেগম বলেন,” আঃ এমন করে কেনো বলছিস বোন??দুই বাচ্চার মা হয়ে গেলি তবুও তোর কথা বলার ধরন হলো না।”
“আপা আমি কি ভুল বললাম শুনি?? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তোমার একটা মেয়েও আছে।মুগ্ধতার জন্য মেহেকের জন্যও যে কোনো সম্বন্ধ আসবে না সেই খেয়ালটা তোমার আছে??”
“আঃ তোরা দুই বোনে ঝগড়া করিস না। সুমু ছোটোবউ তো কোনো ভুল কিছু বলেনি।সেদিন যা হলো….আমার মনে হয় আমাদের এবার উচিত আমাদের মেহুরানীর জন্যও একটা ভালো ছেলে দেখে তাকে বিয়ে দেওয়া।”
“না ভাবী আগে আমাদের মুগ্ধতার বিয়ে হবে তারপর মেহেকের।” বলেই রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সুমাইয়া বেগম।
অন্যদিকে মনমরা হয়ে পুকুর পারে বসে আছে মুগ্ধ। নীরবে অশ্রুপাত করতে ব্যস্ত সে।তার একটা ভুলের জন্য আজ একজন নিষ্পাপ মানুষ মৃত।তার একটা ভুলের জন্য যে একজনের প্রাণ এভাবে চলে যাবে সেটা সে কোনোদিনই ভাবতে পর্যন্ত পারেনি। তাকে খুঁজতে খুঁজতে পুকুরের কাছে এসে পৌঁছায় মেহেক।
“আপাই এই আপাই।…..বাপরে বাপ কখন থেকে তোমায় ডেকে যাচ্ছি শুনতে পাচ্ছো না??”
“ও মেহু, শুনতে পাইনি রে।এখানে কেনো এলি কিচ্ছু বলবি??”পিছন ফিরে বলে মুগ্ধ।
“তুমি কাঁদছিলে আপাই?? কেনো?? ওই তিহানের জন্য আপাই??তুমি কি সত্যিই তিহান কে ভালবাসতে আপাই??”
“জানি না রে মেহু। তিহান আমার teenage love ছিলো।ওর জন্য আমি বড্ড বেশী আবেগী ছিলাম।ওর হাসি দেখে ওর প্রেমে পড়েছিলাম আমি।কিন্তু যখন আমি দেখলাম যে সেই ভালবাসাটা একতরফা ছিলো, সেখানে তিহান ছিলোই না।”
” তাহলে কেনো ওই ছেলেকে বিয়ে করার জন্য হ্যাঁ বলেছিলে দাদাজানকে আপাই??”পুকুর পাড় থেকে উঠে দাড়ায় মেহেক।
“তুই বুঝবি না।চল ভেতরে চল আম্মু নাহলে আবার খেতে ডেকে ডেকে সারা হবে।”
ডাইনিং টেবিলে তালুকদার বাড়ির সকলে খেতে বসেছে। হঠাৎ ডালের বাটি থেকে ডাল মুখে দিতেই মুগ্ধতা ছটফট করতে থাকে।
“কি হয়েছে মা? এমন ছটফট করছিস কেন??”
” মুগ্ধতা কি হয়েছে তোমার??”প্রশ্ন করে দাদাজান।
“অ্যাক ক্ষ….” আর কিছু বলতে পারে না মুগ্ধতা মুখের খাবারটা হর হর করে ফেলে দেয় প্লেটে। মুগ্ধর প্লেটে রক্ত দেখে চমকে ওঠে উপস্থিত সবাই। মুগ্ধর জিব দিয়ে গর গর করে রক্ত পরছে।তার সুন্দর হালকা গোলাপী রঙের জামাটা রক্তে লাল হয়ে গেছে।
“মুগ্ধতা জিব বের কর এতো রক্ত বেরোচ্ছে কেনো আব্বু কে দেখা মা।”উদ্বিগ্ন হয়েমেয়ের কাছে ছুটে যান হামিদুল তালুকদার। মুগ্ধতাকে জিব বের করতে বললে দেখা যায়। জিবের মধ্যে দুটি আলপিন ফুটে আছে।খুব সাবধানে তিনি মেয়ের জিব থেকে সেগুলো বের করে দেন।
“কিন্তু তরকারির মধ্যে আলপিন আসবে কথা থেকে?”বলেন সুমাইয়া বেগম।
“সেটা তো তোমাদের তিন বৌয়ের জনার কথা রান্না তো তোমরাই করেছো”এনামুল সাহেব রেগে মুগ্ধতার ডালের বাটিটা মেঝেতে ফেলে দেয়।
“হায় আল্লাহ্ দেখুন দুলাভাই বাটিতে আরো আলপিন ছিলো।”সুরাইয়া বেগমের আহাজারীতে বাড়ি শুদ্ধ মানুষ মেঝেতে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধতার দলের বাটিতে আরো অনেক আলপিন ছিলো।তো দেখে নাজিয়া বেগম হুহু করে কেঁদে ওঠেন,” আমার মেয়ের জীবনে এসব কেনো হচ্ছে গো আল্লাহ?আমার মেয়েটা কি পাপ করেছে গো??”
“তোমরা সবাই থামো। হামিদুল তুমি মুগ্ধতা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাও।এখন আগে তার সুস্থ হওয়াটা দরকার।”দাদাজান হুকুম করেন।
_________________
পার্সোনাল home movie theatre এ ড্রিংক করায় ব্যস্ত ইভান চৌধুরী। সামনের স্ক্রীনে তার প্রেয়সীর বাড়ির দৃশ্য উপভোগ করেছে সে। মদের গ্লাস হাতে নিয়ে সীটে গা এলায় ইভান।বাটন খোলাকালো রঙের shirt এ তার ফর্সা সিক্স প্যাক একটু বেশীই নজর কারছে।
“Snowflake ❄️ I am extremely not sorry জান ❤️। তোমাকে যে আজ এই শাস্তিটা পেতেই হতো জান।আমার স্পর্শ করা মুখে তুমি অন্যের নাম নাও কোন অধিকারে??……..যে মুখে তুমি ইভান চৌধুরী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের নাম নিয়েছো,সেই মুখ যে ক্ষতবিক্ষত হতেই হতো।তোমার দোষেই আজ তোমার এই রক্তপাত।”ভারী গলার বিকট হাসিতে হাসিতে থাকে ইভান।
“যাকে এতো ভালবাসিস তাকে এইরকম হিংস্র ভাবে কি করে আঘাত করতে পারলি ইভান??”
তানহার কথায় ক্ষিপ্ত ভাবে তার গলা চেপে দেওয়ালে ঠেসে ধরে ইভান।
“আমার Snowflake ❄️ আমার ভালবাসা নয়। ভালবাসা হারিয়ে যায়। মুগ্ধ আমার নেশা। আমার নেশা একান্তই আমার।”
________________
কিছুক্ষণ পর,
“আপাই এখন কেমন আছো??তোমার ফোনে একটা নাম্বার থেকে কয়েকবার call এসেছিলো।নাম্বারটা দেখে মনে হলো ফ্রান্সের….”
“তুই ধরিসনি তো??”
“না তবে আমার মনে হয় ফুফুমনি call করেছিলো।”
“আস্তে মেহু। জানিস তো এই বাড়িতে ফুফুমনির নাম নেওয়া নিষেধ। দাদাজানের পছন্দ নয়।”
“কেনো?? উনি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বলে? প্রেম করে কি বিয়ে করা যায় না??”
“এবাড়িতে আমাদের সেই স্বাধীনতা নেই।”
“তাও তো ভালো আপাই,বড়ো আব্বু তোমাকে এইচ এস সি পরীক্ষার পর একবার ফ্রান্সে ফুফুমণির কাছে ঘুরতে পাঠিয়ে ছিলো।আমার আব্বু তো আমাকে নানাবাড়ি পর্যন্ত এক ছাড়ে না।”
মুগ্ধ মেহুর কথায় নিজের আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে। তার আব্বু তাকে কত বিশ্বাস করে একা বিদেশে পাঠালো আর সে কিনা ওমন কাজ করলো??
_______________
কয়েকদিন পর দাদাজান বাড়ির সকলকে ডেকে পাঠান নিজের ঘরে”তোমাদের সবাইকে আজ এখানে একসাথে জরুরি তলব করেছি তার একটা কারণ আছে।”
“কি আব্বাজান?”হামিদুল জিজ্ঞেস করেন।
“তোমাদের একমাত্র ভাগ্নে দেশে আসছে।আমার মেয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও নাতিটি আমার যে বড্ড প্রিয় সেটা আর তোমাদের কাওকে বলার লাগে না। সে আমার বড়ো নাতি তাই তার কোনো আবদারই আমি ও তোমাদের আম্মাজান অপূর্ন রাখিনি।…….এই বার সে আমার কাছে আমার প্রিয় নাতনি মুগ্ধতা কে আবদার করেছে। আমি তাকে কথা দিয়েছি তার এই আবদারও আমি পূর্ণ করবো। সে দেশে এসে পৌঁছলেই বিয়ের আয়োজন শুরু করবে তোমরা।”
মুগ্ধ অবাক সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে। ভয়ে তার শরীর কাপতে লেগেছে তাহলে কি আবার তার জন্য আরেকজনের প্রাণ যাবে??
______________
“অয়ন আমার দেশে হওয়ার ব্যবস্থা কর।”
“কিন্তু ইভান স্যার সেখানে তো……….”
“বউকে বিধবা করতে না চাইলে যা বলেছি তাই কর।আমার Snowflake ❄️ কে আমার কাছে নিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে।”
চলবে।