গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :- ৫
🥀 কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য 🥀
সারি সারি গাছ পিছনে ফেলে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে ব্ল্যাক কালারের Rolls Royce ghost hearse. জনবহুল শহর থেকে বেরিয়ে একটু দূরে নির্জন এলাকায় একটি বিলাস বহুল অট্টালিকা ‘ চৌধুরী ম্যানসন’। বাড়িটির চারপাশে খোলা মাঠে ঘেরা। মাঠের পর সারিবদ্ধ ভাবে নারকেল গাছ ঘিরে আছে বাড়িটিকে চারিদিক দিয়ে। একধারে পরপর দাঁড়িয়ে বহু নামিদামী গাড়ি। অপরদিকে বাড়িটির একটু পিছনে সার্ভেন্ট কোয়াটার।
ইভান চৌধুরীর গাড়িটি যখন চৌধুরী ম্যানসনে এসে পৌঁছায় তখন ঘড়ির কাটা রাত সাড়ে দশটায় ঘরে। কাঁদতে কাঁদতে মুগ্ধ কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল তা তার জানা নেয়,কিন্তু যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন সূর্যের আলো পর্দার আড়াল থেকে তার চোখে এসে পড়েছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধতা। যখন নিজের শরীরের দিকে নজর যায় তখন নিজেকে অন্য ড্রেসে দেখে তার চোখ ছল করে ওঠে। তাহলে কি??……তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে রুমে প্রবেশ করে ইভান।
” Good morning my Snowflake ❄️” মুগ্ধতার কপালে চুমু দিতে যায় ইভান। মুগ্ধতা তার হাত ঝটকে দিয়ে সরে যায়,” একেবারে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।কোন অধিকারে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন আমায়??”
ইভানের অট্টহাসিতে মুগ্ধ সাথে যেনো ঘরও কেঁপে ওঠে ” অধিকার!! ইভান চৌধুরীকে তুমি অধিকার দেখেছো? ইন্টারেস্টিং।” হটাৎ মুগ্ধর কোমর ধরে হ্যাঁচকা টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ইভান। ঘটনার তৎপরতায় চমকে ওঠে মুগ্ধ।সে চোখ খুলে ইভানের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।
” তাকাও মুগ্ধ। তাকাও, নিজের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে এতো কিসের আড়ষ্টতা তোমার babe??……. অধিকার কি জিজ্ঞেস করছিল তাইনা? তোমার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত পুরোটাই একান্ত আমার অধিকার।”
” আ….আমায় ছেড়ে দিন। আমা……”
“তোমার রন্ধ্রে আমার অধিকার;তোমার সুগন্ধে আমার অধিকার।
আমার অধিকার তোমার চোখের চাহনিতে; আমার অধিকার তোমার খোলা চুল ও বিনুনিতে।
তোমার সর্বত্র আমার মুগ্ধ;তুমি আমার নেশা আমি তোমাতে মুগ্ধ।”
ইভানের বলা কথার সাথে সাথে শুধু তার গলার আওয়াজই নয় তার হাতের বাঁধনও দৃঢ় হয়েছে।হতে তরল কিছুর অনুভূতি হতেই কোমর থেকে হাত সরিয়ে নেয় ইভান।হাতের দিকে চোখ দিতেই বুঝতে পারে যে তার নখে মুগ্ধর কোমরে লেগে রক্ত বেরোচ্ছে।হঠাৎ করে ইভানের পাগলপ্রায় রূপ দেখে অবাক হয়ে চেয়ে আছে মুগ্ধতা। এইতো মানুষটা রেগে ছিলো,এখন হঠাৎ করে এরকম হন্যে হয়ে কোথায় গেলো?
বেশ কিছুক্ষণ পর মুগ্ধতার রুমে কেউ দরজায় নক করে। ” আসবো ভাবী??” অচেনা আওয়াজে মুগ্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একুশ – বাইশ বছরের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিরবিরিয়ে মুগ্ধতার মুখ দিয়ে বেরোয় “ভাবী??”
” ভেতরে চলেই এলাম ভাবী। অনেক্ষন দাড়ালাম আপনি তো ডাকলেন না। বিগ ব্রো পাঠালো আপনার নাকি কোথায় লেগেছে??কই দেখি।”মুগ্ধর কোমরে ব্যান্ডেজ করতে লাগে সে মেয়েটি। ” বিগ ব্রো কে কি জাদুতে ফাসালেন ভাবী? সে তো দেখি মুগ্ধতা ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। আপনার জন্য তো নিজের সংসারটাও করলো না, ভেঙে দিলো।”
“সংসার?? ইভানের সংসার আছে??” প্রশ্ন করে মুগ্ধতা।
“ওর আজাইরা কথায় কান দেবেন না ভাবী।” আরেক মেয়ের আওয়াজে দরজার দিকে তাকায় মুগ্ধ। এই মেয়েটিও তার অচেনা।মেয়েটি ভেতরে এসে মুগ্ধতার সামনে চেয়ারে বসে। ” ভাইয়া আপনাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে আপনি শুধু এটাই জানুন।…… আরে দেখুন পরিচয় তাই তো দেওয়া হয়নি, আমি ইনায়া আর ও হলো আমার যমজ বোন ইয়ানা।” মুগ্ধতাকে তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা হেসে ওঠে। ” আরে ভাবী ওই ভাবে দেখার কিছু নাই। আমরা হুবহু একই রকম দেখতে হলেও আমার নাকের পাশে তিল আছে ,যেটা ইনায়া আপুর নেই।”
” ওই রাক্ষসটা আপনাদের ভাই??”
” বড়ো ভাই। তাই তো আপনাকে ভাবী বলে ডেকেছি। তাই নয় কি??” বলে ইনায়া।
“আমাকে ভাবী বলে ডাকার কোনো দরকার নেই।আমি ওনার wife নয়।”
” তবুও তো কালকে রাতে একই রুমে ছিলেন।তখন মনে হয়নি যে আপনারা বিবাহিত নন??”
ইয়ানার প্রশ্নে যেনো মুগ্ধর মনে কেও কুড়াল দিয়ে আঘাত করেছে। ছি ছি কত বড়ো লজ্জা!!!!!
__________________
” ইভান বেটা ভেতরে আসতে পারি??”
পাঞ্চিং বাগে পাঞ্চ করছিলো ইভান। হঠাৎ উক্ত কথা শুনে পিছনে তাকায়।
“Dad এসো।”
” কিছু কথা ছিলো champ। শুনলাম তুমি নাকি মেয়েটাকে নিয়ে এসেছোবিয়ে ছাড়াই?”
“Yeah dad.”
” এটাকি তোমার ঠিক মনে হচ্ছে??”
” ভুল হলেও কোনো উপায় নেয়। আমি মুগ্ধর মতের বিরুদ্ধে ওকে বিয়ে করতে চাইনা dad”
” মুগ্ধতার ব্যাপারে তোমাকে কিছু বললে যে তুমি শুনবে না সেটা আমার অজানা নয়। এই বুড়ো বয়সে আর ছেলের থেকে দুরে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু mom কে নিয়ে কি ভাবলে?? তাকে কি করে বলবে??”
” ওটাই তো চিন্তা dad…….. আমার না তোমার।”
” মানে??”
” Mom কে কীকরে বোঝাবে সেটা তোমার চিন্তা।she is your wife dad you should know how to manage her.”
ইভান নিজের protin Shake খেতে খেতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। পিছনে ফিরে তাকালে সে শুনতে পেতো তার বাবার নাজেহাল আহাজারি।
” পোলাডাও হইসে একহান জিনিশ, খালি বাপেরে যত্রতত্র ফাঁসাইদিয়া পালাই যাইবো। এহন এডার আম্মুরে সামলাতে হইবো আমারে। কুচুটে পোলা।”
__________________
“হ্যালো অয়ন। কি খবর ঐদিকের?? পেলি সে মহিলাকে??”
” স্যার আমি অনেক খুঁজছি কিন্তু কিছুতেই কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা।”
” একটা মহিলাকে খুঁজতে তোদের কি গোটা জীবন সময় দিতে হবে? বৌয়ের সাথে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর পারিস টা কি বল?……. এতো বড় ঘটনা ঘটিয়ে কোথায় লুকিয়ে আছে সে?? শোন last one week তোকে দিলাম তারপর আর নয়। এরপরেও যদি তাকে খুঁজে না পাশ তুই চিনিস এই ইভানের ভেতরের ইভান টা কতো টা খারাপ হতে পারে।”
__________________
স্নান করে এসে জমা পাল্টানোর জন্য আলমারি খুলতেই চমকে ওঠে মুগ্ধ। গোটা আলমারি জুড়ে বিভিন্ন রঙের শাড়ি, থ্রি পিস, চুড়ি আরো অনেক অনেক সুন্দর সাজের সামগ্রী।
“এগুলো উনি কখন আনলেন?? নাকি এগুলো অন্যের জন্য?? তখন ইনায়া আপুরা কি যেনো বলছিলো ওনার সংসার ভেঙেছে??”
#চলবে