তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-০৭

0
49

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :- ৭

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

চৌধুরী ম্যানসনে সকাল থেকেই আজ লোক জনের সমাগম প্রচুর। বাড়ির পিছনের সুমিংপুলটা সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে চারিদিকে সোনালী আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। চার দিন আগে ইভান একটা কাজে বাইরে গেছে এখনো আসেনি। মুগ্ধ এবাড়িতে এসে থেকে একদিনও রুমের বাইরে যায়নি। আজ যেনো তার মন আর শান্ত হচ্ছে না। বাইরে লোকের হইহুল্লোড়ে মুগ্ধর ও মন আজ ঘরে টিকছে না।অনেক সাহস নিয়ে অবশেষে রুম থেকে বেরিয়ে নীচে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ায় সে।

” আরে ভাবী যে আজ নীচে কি মনে করে??” মুগ্ধতা কে দেখে জিজ্ঞেস করে ইনায়া।
” আহ্ ইনায়া দেখছিস না ভাবী আমাদের এক হপ্তা পর নীচে এসেছে।আপনি ওর কথায় কান দেবেন না তো ভাবী। আর তুই যা mom কে ডেকে আন।” ইয়ানা মুগ্ধ কে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসায়।

” কই দেখি আমার বেটার চয়েস কেমন??”বুশরা বেগম গিয়ে মুগ্ধর পাশে বসেন।তার মুখটা একটু তুলে ভালো করে দেখেন। ” Now I can understand. ইভান তাহলে তোমার রূপেই মজেছে।রূপের জাদুতেই বশ করেছো আমার ছেলেকে বুঝি??”

বুশরা বেগমের কথায় মুগ্ধর চোখ ছলছল করে ওঠে।আজ ওই ইভানের জন্যই তাকে এতো কুকথা ও অপমান শুনতে হচ্ছে। যেটা অতীতে হয়ে গেছিল তাতো হয়ে গেছে,তার জন্য এখন কেনো এভাবে অত্যাচার করছে তাকে??

ইয়ানা কাঁধে হাত দিয়ে নাড়াতে মুগ্ধ নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। ” Mom তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করেছে ভাবী, she is waiting for your answer.”
” আহ্ ইয়ানা ওকে ভাবী কেনো বলছো?? She is not your brother’s wife.”
” But mom বিগ ব্রো আমাদেরকে মুগ্ধতা কে ভাবী বলেই ডাকতে বলেছে।”
” তাহলে আর কি বলি?… Whatever I need to go now. তোমরা তোমাদের ভা….. বী কে কাজ গুলো বুঝিয়ে দাও কালকের ব্যাপারে।”

বুশরা বেগম চলে যেতেই ইয়ানা ও ইনায়া তাদের ভাবীকে নিয়ে রান্নাঘরে যায়।
” আমাকে আপনারা এখানে কেনো নিয়ে এলেন আপু?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে মুগ্ধতা।
” আজ থেকে তুমি প্রতিদিন রান্নাঘরের দায়িত্ব পালন করবে। ঠিক আছে ভাবী??”
“আমি??”
” হ্যাঁ ভাবী তুমি। বিগ ব্রো তো তোমাকে তোমাকে নিয়ে বিয়ে ছাড়া সংসার করবে বলেছে,তাই না?? তা সংসারটা কি বেডরুমেই সীমাবদ্ধ রাখবে নাকি একটু রুমেই বাইরেও সংসার করার ইচ্ছা আছে??”

ইনায়ার কথা শুনে মুগ্ধ আর চুপ করে থাকতে পারে না। চোখের জল মুছে উওর দেয়,”আপনারা সবাই আমাকে যতোটা খারাপ মেয়ে ভাবছেন, আমি অতোটাও খারাপ নয়। আপনার ভাইয়াই আমায় এখানে তুলে নিয়ে এসেছে, আমি নিজে থেকে আসতে চাইনি।”
“বাবাহ্!!! শোনো তুমি যে কেমন মেয়ে আর তোমার বাড়ির লোকেরা কে কেমন সেটা না আমাকে বোঝাতে এসো না। বুয়া আপনি এই মেয়েকে কাজ গুলো বুঝিয়ে দিন।” ইনায়া ও ইয়ানা সেখান থেকে প্রস্থান করে।সেই দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ ভাবতে থাকে,” আচ্ছা ওরা কি বলে গেলো?? আমার বাড়ির কে কেমন সেটা ওরা জানে। কি করে??আমার বাড়িতে তো ওদের কাওকে কখনো দেখিনি।”

“এবাড়ির নতুন কাজের বেডি নাকি আপনে?? পাশে দাঁড়ানো বুয়ার কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ে মুগ্ধর।
“কাজের মেয়ে??”
” হ। আফামনিরা তো কইলো আপনেরে কি কাম কাজ করতে হইবো বুঝাই দিতে”
” আমি এবাড়ির কেও নয় খালা। কি কাজ করতে হবে বলুন?”
______________

” তুমি উত্তর দেবে কখন বলো ভাইয়া??” মেহেকের শান্ত হুমকিতে বিরক্ত হলো আরফিন।
” কি বলবো কি??”
” তুমি ওই লোকটা কি যেনো নাম ইভান, ওনাকে চেনো?? কিভাবে??”
” আমি জানি না।”
” ঠিক আছে বলবে না তো, আমি আজই বিয়ের জন্য আব্বু কে হ্যাঁ বলে দেবো।”

মেহু উঠে চলে যেতে নিলে আরফিন মেহুর হাত পিছনে মুচড়ে টেনে ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

“কি বললি তুই? মেজো চাচাকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিবি?? তোর সাহস তো কম নয়।”
” বলবই তো। আমার প্রতি কিসের তোমার এতো অধিকার বোধ??”
” তুই বুঝিস না কিসের অধিকার বোধ??”
” না বুঝিনা। কে লাগি আমি তোমার??”
” সব কথা বলে বোঝাতে হবে বুঝি??”
” তাহলে বলো ওই লোকটাকে তুমি কি করে চেনো??” আরফিন মেহু কে ছেড়ে একটু দূরে সরে আসে।

” ইভানের সাথে আমার আলাপ হয় ফুফুমনির বাড়ীতে থাকাকালীন। একদিন একটা গ্রসেরি স্টোরে ওর সাথে দেখা হয়। সেখান থেকেই চেনাজানা ও বন্ধুত্ব।”
” তারমানে আপাই ও ইভান চৌধুরীকে চেনে? কিভাবে?”
” কিভাবে চেনে জানি না, তবে ইভান মুগ্ধর জন্য পাগল।ওদের মধ্যে কি হয়েছে জানি না। কিন্তু এটুকু জানি আমার বোনটা ওর কাছে সুখে থাকবে।”
” একবার অপাইয়ের কাছে নিয়ে যাবে ভাইয়া??”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরফিন বলে,”দেখি ইভান পারমিশন দেয় কিনা।”
__________________

রাতের অন্ধকারে স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় প্রকৃতি বড্ডো মোহনীয় রূপ ধারণ করে। হালকা মৃদুমন্দ বাতাস তার সাথে থাকলে আর কিই বা চাই? সেই মোহনীয় রাতের অন্ধকারে রান্নাঘরের জানলা দিয়ে বেরোনোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যস্ত মুগ্ধতা।সকালে রান্না ঘরে কাজ করার সময়ই খেয়াল করেছিলো যে বাড়ির সব জানলায় গ্রিল থাকলেও এই জানলাটা এক মাত্র গ্রিল বিহীন। তখনই মনে মনে ঠিক করে সে আজ রাতেই সে পালাবে। খুব সাবধানতার সঙ্গে বাড়ির বাইরে বেরোতে সফল হয় মুগ্ধ।এবার কোনোরকমে মেইন গেট পেরিয়ে পারলেই ব্যাস্!!

বন্ধ ঘরে মুখে টেপ আটকে হাত বাঁধা অবস্থায় আছে মুগ্ধতা। গায়ের বেগুনি রঙা থ্রী পিসটার একটা হাত ছিঁড়ে সেখান দিয়ে মুগ্ধর ফর্সা হাতের বহু দৃশ্যমান। সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মুগ্ধতার সামনে দাঁড়ায়।

” কেনো গেছিলে ওদের ওখানে?? কি হলো উওর দাও।” ইভানের হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে মুগ্ধ।” কিসের জন্য গেছিলে সার্ভেন্ট কোয়াটারে মুগ্ধ??বলো।”
এক ঝটকায় ইভান মুগ্ধতার জামাটা কাঁধের দিক থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেলে যার ফলে মুগ্ধতার শরীর অনাবৃত হয়ে পড়ে। হাউ মাউ করে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে মুগ্ধতা। ইভান তার থেকেও দ্বিগুণ চিৎকার করে বলে ওঠে,” ওদের লোভাতুর দৃষ্টি খুব ভালো লাগছিল তাই না?? এনজয় করছিলে ওদের নোং*রা কথা গুলো?? শরীরে শিহ*রন জাগাছিলো বুঝি?? এতো কাম*নার আগুন তোমার শরীরে?”

বলতে বলতে নিজের হাতে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটটা মুগ্ধতার ফর্সা উন্মুক্ত পেটে। মাআআআআ করে প্রাণ ফাটা চিৎকার করে উঠে মুগ্ধ।

” চিৎকার করে লাভ নেই মুগ্ধ,এই সাউন্ড প্রুফ রূমে কেও কিচ্ছু শুনতে পাবে না। আর পেলেও ইভান চৌধুরীকে কিছু বলার না আটকানোর ক্ষমতা কারোর নেই।” মুগ্ধর গলা চেপে ধরে বলে ইভান। ” 1 week ধরে তোমাকে স্পর্শ করিনি কারণ আমি চাইনি তোমার মতের বিরুদ্ধে তোমার সাথে মিলিত হতে।কিন্তু আজ তুমি আমায় বাধ্য করলে।”

ইভানের কথায় জোরে জোরে মাথা নেড়ে না বোঝায় মুগ্ধ। ইভান তার কোনো কথায় কান না দিয়ে মুগ্ধর শরীরের বাকি বস্ত্র টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলতে উদ্ধত হয়। চোখ দিয়ে জল গড়ানো ছাড়া কিচ্ছুই করতে পারলো না মুগ্ধ। ইভান তাকে বিবস্ত্র করে পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিয়ে যায়। খাটের সাথে মুগ্ধর হাত বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের প্রাণপ্রেয়সীর ওপর।
__________________

সকালে চোখ খুলতে নিজের বুকের ওপর ইভান চৌধুরীকে দেখার পর ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেয় মুগ্ধ।বহু চেষ্টা করেও তাকে নিজের ওপর থেকে সরাতে ব্যার্থ হয় মুগ্ধ।

” এতো সকাল সকাল জাগাছো কেনো babe?? কাল রাতের আদরে বুঝি মন ভরেনি?? এখন আবার লাগবে??……… লাগলে বলতে পারো আমি রেডী ও সবকিছুই রেডী।”
” ছি!!!! আপনাকে দেখে আমার ঘেন্না করছে ইভান। ছাড়ুন আমাকে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে আমার বমি হয়ে যাবে।”মুগ্ধর কথা শোনা মাত্রই ইভান মুগ্ধর গলার নিচের কামড় বসিয়ে দেয়।
” আহ্ লাগছে। লাগছে মাগো ছাড়ুন আমাকে লাগছে। আহ্ প্লীজ। মা গো!! ছাড়ুন ইভান। ছেড়ে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে আমায় ছেড়ে দিন।”

ইভান মুগ্ধ কে ছেড়ে দিয়ে উঠে যায়। মুগ্ধ পাশের আয়নায় দেখে ইভান যেখানটা কামড়ে ধরে ছিলো সেখানটা কেটে দাঁতের ছাপ বসে গেছে, রক্ত পরছে। ক্লান্ত ও ক্ষত-বিক্ষত শরীরটাকে নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোনোরকমে বাথরুমে ঢোকে মুগ্ধ।

” কি খবর ওইদিকের??”
” ইভান স্যার আপনি বলেন কি করবো?”
” মে*রে ফেল। কু*পিয়ে কু*পিয়ে তরপিয়ে মারবি।আমার ভিডিও চাই।”

শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছে মুগ্ধ কেনো কাল পালাতে গেলো। কালকে রাতে অমন না করলে আজ এইভাবে এসব হতো না।গতকাল রাতে মুগ্ধ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে দেখে একটি বড়ো লম্বা দোতলা বিল্ডিং। সাহায্য চাওয়ার জন্য ভেতরে যায় মুগ্ধ।কিন্তু সেখানে যেতেই সে কয়েকটা মানুষরূপী জানোয়ারের সামনে পরে। সেই লোক গুলো মুগ্ধ কে লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে ও বিভিন্ন নোংরা কটু কথা বলতে থাকে। পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে তারা মুগ্ধর পথ আটকে ধরে।তাদের একজন যখন মুগ্ধর গায়ে হাত দিতে যায় তখনই তার হাতের কব্জি কে*টে নিচে পরে যায়। মুগ্ধ পাশে তাকিয়ে দেখে ইভান দাঁড়িয়ে আছে। ও তার হাতে আছে একটা র*ক্ত মাখা Cleaver knife. চোখের সামনে ওরকম দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারায় মুগ্ধ।জ্ঞান ফিরলে নিজেকে ইভানের রুমে বাঁধা অবস্থায় পায়।
_______________

বাথরুম থেকে বেরিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় মুগ্ধ। পরনে তার নীল রঙের সফ্ট জামদানি শাড়ি। হঠাৎ দুটি বলিষ্ঠ হাত কোমড় স্পর্শ করায় চমকে পিছনে ঘুরতে নিলে ইভানের উন্মুক্ত বুকে বাড়ি খায় সে। এই ফাঁকে হালকা করে একবার নিজের প্রাণ প্রেয়সীর ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় ইভান।

” এতো রূপ নিয়ে কাকে মারার প্ল্যান করছো Snowflake ❄️??”
“আমি বাড়ি যাবো ইভান। আপনার যা দরকার তো কালকে রাতে পেয়ে গেছেন। এবার আমায় যেতে দিন। এখনে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”
” ঠিক আছে। রেডী হয়ে থেকো , অবেলায় দিয়ে আসবো।”
_____________

” ইভান ভাইয়ার রুমে ওই নীল শাড়ী পরিহিতা সুন্দরী নারীটি কে ইয়ানা?? I want her at any cost.”

#চলবে