তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-১২+১৩

0
84

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :- ১২

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

আজ সকাল থেকেই প্রকৃতি বড্ডো বৃষ্টিমুখর। দীর্ঘ চার দিন পর আজ আদিল ও আহিল তালুকদার বাড়িতে ফিরে এসেছে। গোটা গ্রামে তালুকদার বাড়ির নামে ছিঃ ছিঃ পরে গেছে। এই বাড়ীর মানুষদের সাথে কেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পর্যন্ত নারাজ।

ইয়াজউদ্দিন তালুকদারের মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। আজ সকালে যখন তিনি বাজার যান তখন তিনি শুনতে পান সবাই বলাবলি করছে তাদের পরিবারের কেচ্ছা নিয়ে। যেখানে তাকে আগে গোটা গ্রাম সম্মান করতো, সেখানে আজ লোকে দেখলেও চোখ মেলতে চায়না।নিজের আব্বাজানকে এই ভাবে বসে থাকতে দেখে এনামুল তালুকদার এগিয়ে আসেন।

“আব্বাজান কি হয়েছে বলেন?? এমনভাবে বসে আছেন কেনো??”
” আব্বাজান কেও কি কিছু বলেছে আপনাকে??” হামিদুল বলেন।

তৎক্ষণাত এনামুল আক্রমণ করে হামিদুল তালুকদারকে বলেন,” আহ্ থামো তো বড়ো ভাইজান। আজ তোমার মেয়ের জন্যেই আমাদের এই অবস্থা। কতকরে তখন বলেছিলাম যে না ভার্সিটি তে মেয়েকে পড়িও না, এইচ এস সি পরীক্ষা হয়েগেছে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও। শুনলে না মেয়েকে শিক্ষিত বানাবে, এবার সাধ মিটেছে??”

” তাই না তাই এবার আমার মেয়েটার কি হবে?? গোটা গ্রামে যা কেচ্ছা কাহিনী রটেছে কেও এসে আর বিয়ে করতে চাইবে মেহেক কে? আপনাদের চরিত্র*হীন মেয়ে বড়লোকের রক্ষি*তা হয়ে মজা লুটবে ও ফুর্তি করবে,আর আমার নিষ্পাপ মেয়েটা তার পাপের ফল ভোগ করবে?” স্বামীকে সঙ্গ দিলেন সুমাইয়া বেগম।

মেয়ের নামের কটু কথা যেনো আর নিতে পারলেন না নাজিয়া বেগম,” আমি কোনদিন আমার মেয়ে আর তোর মেয়ে আলাদা করে দেখিনি রে সুমু। তবে আজ একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। আমার মেয়ে যদি স্বইচ্ছায় কোনো পাপ করে থাকে তাহলে জীবনেও ওর কপালে সুখ নসিব হবে না, কিন্তু আমার মেয়ে যদি নিজ ইচ্ছায় কিছু না করে থেকে সে যদি নির্দোষ হয় তাহলে তোর মেয়ের জীবন জাহান্নামের থেকেও খারাপে পরিণত হবে।” আর এক মুহূর্ত সেখানে না দাড়িয়ে রুমে চলে যায় নাজিয়া বেগম।

এতক্ষণে ইয়াজউদ্দিন তালুকদার মুখ খোলেন,” হামিদুল তুমি বড় বৌমাকে কয়েকদিন তার বাপের বাড়ি থাকতে দিয়ে আসো, তার বিধ্বস্ত মন শান্ত হবে।……. আজিজুল ও ছোটবউমাকে বলো তাদের ছেলেদের নিয়ে যেনো এবাড়ি থেকে বেরিয়ে, শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকতে বলো তাদের। আর তুমি এনামুল যত শীঘ্র সম্ভব মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করো, পারলে এই মাসেই বিয়ে হয়ে গেলে ভালো হবে।”

_______________

ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ। আকাশপানে তাকিয়ে মুখমণ্ডলে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি-বিন্দু অনুভব করতে ব্যস্ত সে।

” এভাবে ছাদে আসবেন না মুগ্ধ। আপনার সৌন্দর্যে প্রকৃতি লজ্জায় মূর্ছা যাবে যে।”

হঠাৎ কথায় পিছন ঘুরে তাকায় মুগ্ধ। অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।

” আপনি??”
” আমি রেহান। ইয়ানাদের খালাতো ভাই।”
” ও আপনি ইভানের খালার ছেলে….”
” উহু উহু, আমি ইয়ানা আর ইনায়ার খালার ছেলে।”
” সে তো একই হলো এতে আবার আলাদা কি আছে?”
হেসে ওঠে রেহান ” ইভান চৌধুরী আপনার সাথে প্রতি রাতে শুচ্ছে অথচ নিজের অতীত সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলেনি??”
” মুখ সামলে কথা বলুন রেহান।”
” কিচ্ছু ভুল বললাম কি?? আচ্ছা ইভানের শারী*রিক অত্যাচারের শিকার হতে তোমার ভালোলাগে মুগ্ধ?? একটা সুস্থ সুখী সংসারের ইচ্ছা হয় না??”

মুগ্ধ ছাদ থেকে চলে আসতে নিলে হাতে টান পড়ায় পিছনে ঘুরে তাকায়। ঝটকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।

” আমাকে ছোঁয়ার অধিকার আপনার নেই”
” ইভান তোমাকে কোনোদিনই বিয়ে করবে না মুগ্ধ। তার একবার বিয়ে হয়ে গেছে। তোমার ওপর থেকে মন ভরে গেলে,তোমায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে ওর বেশী সময় লাগবে না। আমি তোমায় ভালোবাসি। আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা তুমি……”

মুগ্ধ স্তব্ধ হয়ে গেছে।

“কি বললেন রেহান? ইভানের বিয়ে হয়েগেছে?? তার মানে ইয়ানা আপুরা ঠিকই বলেছিলো আমার জন্য উনি ওনার সংসার ভেঙেছেন।বউ বাচ্চা সবই আছে নিশ্চয়। উনি উনি আমাকে শুধু ব্যবহার করছেন? আমার শরীর টাকে প্রতি রাতে শুধু ব্যবহার করছেন??”

মুগ্ধ প্রলাপ বকতে বকতে ছুটে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। মুগ্ধর এই অবস্থা দেখে রেহাননের তো মাথা খারাপ অবস্থা। ছুটে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে সে।

” মুগ্ধ মুগ্ধ দরজা খোলো। মুগ্ধ শোনো।”

দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে একে একে বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে যায়। বুশরা বেগম বলে ওঠেন,” কি হয়েছে রেহান তুই চিৎকার করছিস কেন? মুগ্ধতার কি হয়েছে?”

” খালামনি মুগ্ধ দরজা আটকে বসে আছে। কিছুতেই খুলছে না।”
” রেহান ভাইয়া তুমি কিছু করোনি তো??” ইনায়া বলে। রেহানের ভীত ভাবে তাকানোতেই ইনায়া বুঝে যায় নিশ্চয় কিছু খারাপ ঘটেছে।

ইভান বাড়িতে এসে দেখতে পায় সবাই ওর রুমের বাইরে জড়ো হয়ে আছে।

” কি হয়েছে এখানে??”

ইভানের আওয়াজে সবাই ভয় পেয়ে যায়।

” বেটা মুগ্ধতা দরজা খুলছে না।” বুশরা বেগম বলেন।
” মানে??? কতক্ষন mom??”
” Half an hour বেটা।”
” আর তোমরা এখনো দরজা ধাক্কাচ্ছ?? অয়ন দরজা ভেঙে ফেল। অয়ন দরজা ভাঙ্গে। সবাই ভেতরে প্রবেশ করে।

” মুগ্ধওওওওওওওওওওওওওও”
_______________

রিং রিং

” হ্যালো আরফিন ভাইয়া কবে আসবে তুমি??”
” আমার যেতে তিন চারদিন তো লাগবে মেহুপরী।কেনো কি হয়েছে??”
” আব্বুকে আজকে দাদাজান ডেকে বলেছে যত দ্রুত সম্ভব ছেলে দেখতে আমার জন্য।”
” মানে?!!!”
” তুমি তাড়াতাড়ি এসো না আরফিন ভাইয়া। ”
” তুই একটু মেজো চাচীর সাথে কথা বলে রাখ, আমি এখানে কাজ ফেলে কি করে যাবো বল??”
” তোমার কাছে আমার আগে ওই কাজ তাই তো??”
” এখানে কাজ ফেলে গেলে দাদাজান রাগ করবে মেহু একটু বোঝ।”
” তুমি কাজই করতে থাকো আজ সন্ধায় আমাকে ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে।”
” দেখতে এলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না। আমি তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছি।পরশুর মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করবো। তোর কোনো চিন্তা নেই মেহুপরী।আমি সব সামলে নেবো।এবার তো একটু হাস ”

ভালবাসার মানুষের ভরসায় প্রশান্তির হাসি হাসে মেহু। পনের বছরের কিশোরীর ফোলা ফোলা অশ্রুসিক্ত চোখের প্রেমে পড়েছিলো আরফিন। সেই প্রেমের মাদকতায় আজও সে নেশাক্ত।
________________

নার্সিং হোমে ওটি এর বাইরে বসে আছে ইভান ও চৌধুরী পরিবারের সকলে। ভেতরে চিকিৎসা চলছে মুগ্ধর। তখন দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে সবাই দেখতে পায় মুগ্ধ মাটিতে পরে আছে ও পাশে ঘুমের ওষুধের কৌটোটা পরে আছে। কি হয়েছে বুঝতে কাউরির বাকি থাকে না। ওটি থেকে তানহা বেরিয়ে আসে।

” তানহা আমার মুগ্ধ ঠিক আছে তো?? বলনা কিছু হয়নি তো ওর?? ও…”

ডান হাত মুষ্ঠি করে মুখে চাপা দিয়ে কোনো রকমে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ইভান। ইভান চৌধুরীকে কাঁদতে দেখে সবাই হতবাক চোঁখে তাকিয়ে আছে। এ কাকে দেখছে সবাই??

তানহার আজ ভারী হিংসে হচ্ছে। ইভান কেনো কাঁদছে এইভাবে?? কই এতবছরেও কোনো কিছুর জন্য তো ইভানকে কাঁদতে দেখিনি সে??

নিজের ভাবনা তে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় তানহা।যে মানুষটার ওপর থেকে নিজেই নিজের সব অধিকার তুলে নিয়েছিলো একসময় তাকে নিয়ে এসব ভাবার কোনো অধিকার নেই তার।নিজেকে সামলে বলে,” মুগ্ধকে নিয়ে কিচ্ছুই বলা যাচ্ছে না। যতক্ষণ না ওর জ্ঞান ফিরছে কোনো গ্যারেন্টি নেই।”

ধপ করে মেঝেতে বসে পরে ইভান।

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-১৩

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

বিগত দুদিন ধরে প্রকৃতি বড্ডো বিরূপ রূপ ধারণ করে আছে। চারিদিকে কালো মেঘে আঁধার ছেয়ে আছে। তার চেয়েও বেশী আঁধার ছেয়ে আছে ইভানের মনে। সেই আঁধারের এক চিলতে আলো হলো আজ সকালে মুগ্ধের জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার বলেছে এখন আর ভয়ের কোনো কারন নেই।

চৌধুরী বাড়ির সবাই এক জরুরি কল আসার পর বাড়ি চলে গেছে। রয়ে গেছে শুধু ইভান। এই কয়েকদিনে ইভান একবারের জন্যও মুগ্ধর কাছ ছাড়া হয়নি। মুগ্ধ আধ শোয়া হয়ে বসে আছে বেডে। ইভান মুগ্ধর রুমে ঢুকে বেডে এসে বসে।হাত বাড়িয়ে মুগ্ধর গাল ছুঁতে গেলে মুগ্ধ মুখ সরিয়ে নেয়। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে সে।

হঠাৎ ক্ষিপ্ত ভাবে মুগ্ধর গলা চেপে ধরে ইভান। মুগ্ধর মুখের একেবারে কাছে এসে ইভান বলে, ” খুব সাহস বেড়ে গেছে তাই না babe?? আমি ছুঁতে গেলে মুখ সরিয়ে নাও কোন অধিকারে?? আমার ছোঁয়া ভালো লাগে না, কিন্তু ও রেহানের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে খুব মজা লাগে তাই না??”

” আঁক কোইউ”
মুগ্ধ ইভানের হাত খামচেও হাত ছাড়াতে পারছে না। মুগ্ধর কথা আটকে যেতে দেখে ইভান মুগ্ধ কে ছেড়ে দেয়। চোঁখ বুজে নিজেকে শান্ত করার জন্য জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে ইভান। মুগ্ধতার কথায় চোঁখ খুলে তাকায় সে।

” ছোঁবেন না আমায় একেবারে। আপনার ওই নোংরা হাতে একেবারে আমাকে ছোঁবেন না।”

উওর হিসাবে ইভান ক্ষিপ্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে মুগ্ধর অধর জোড়া। মুগ্ধ কিল ঘুষি মেরেও নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে নিজের নখের দ্বারা খামচাতে শুরু করে ইভানকে। কিন্তু সেগুড়ে বালি, ইভানকে ছাড়াতে সে ব্যার্থ হয়। ইভান ব্যস্ত তার প্রাণপ্রেয়সীর ঠোঁটে নিজের দাঁতের চিহ্ন দেওয়াতে। অনেক্ষণ যাবৎ ঠোঁটের উপর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কেঁদে দেয় মুগ্ধ। মুগ্ধর চোখের জল নিজের চোয়াল ছুঁতেই মুগ্ধ কে ছেড়ে সরে আসে ইভান।

” লজ্জা….লজ্জা লাগে না বউ থাকতে অন্য মেয়েকে নিয়ে রাত্রিযাপন করতে?? আপনার এই নোং*রা খেলায় কোনো নোং*রা মেয়েকে নিয়ে মাতুন,আমায় এই পাপ থেকে মুক্তি দিন। আমি নিজেকে অন্য মেয়ের ঘর ভাঙার কারন হিসাবে দেখতে পারবো না। পারবোনা।” হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে মুগ্ধ ” আপনি আমাকে না ছাড়লে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো, শেষ করে দেবো।”

মুগ্ধ পাগলের মতো আসে পাশে কিছু একটা খুঁজতে থাকে । পাশের টেবিলে একটা কাঁচি চোঁখে পড়তেই সেটা তুলে নিজের পেটে আঘাত করতে যায়। ইভান সঙ্গে সঙ্গে মুগ্ধর হাত ধরে আটকায়, ধস্তা ধস্তি করে মুগ্ধর হাত থেকে কাঁচিটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ধস্তাধস্তির সময় কাঁচির আঘাতে ইভানের হাত কেটে রক্ত বেরোতে থাকে, কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই ইভানের। মুগ্ধ কে শান্ত করতে সপাটে এক চর মারে মুগ্ধর গালে। কাঁধ ধরে নিজের কাছে টেনে আনে ইভান।

” কে বলেছে তোমায় আমি আগে থেকে বিবাহিত?আমার অন্য বউ আছে?”
” আপনি আমাকে ছুঁয়ে বলুন আপনি আগে কখনও বিয়ে করেননি??”

অনেক্ষণ যাবৎ থেমে ইভান নিজেকে প্রস্তুত করে, মুগ্ধ কে সত্যিটা বলতে।
” আজ থেকে দশ বছর আগে আমি যখন ভার্সিটি তে পড়ছিলাম তখন দুইজন মানুষ আমার খুব কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। তুহিন ও তানহা। আমরা তিন জন একসাথে অনেক মেমোরি বানিয়েছি। ক্লাস পালিয়ে ঘুরতে যাওয়া, টিচারদের নিয়ে মজা খিল্লি আরও অনেক কিছু। আমি ছোটো থেকেই বরাবরই চুপচাপ থাকতাম। আমাকে ওরা দুজনে হাসতে শিখিয়েছিলো। দিন যেতে থাকে তানহা ও তুহিনের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রেম গড়ে উঠতে থাকে। এরই মধ্যে mba ফাইনাল ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার কয়েক মাস আগে তানহা হঠাৎ জানতে পারে সে প্রেগনেন্ট। তুহিন হঠাৎ খবরটা শুনে কেমন পাল্টে যায়। ও অস্বীকার করে বাচ্চাটাকে।তানহার বাড়ির লোক অনেক পুরোনো চিন্তাধারার। তানহা যখন মেডিকেলে চান্স পায় যেহেতু বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে পড়তে হবে তাই তাকে মেডিকেলে পড়তে দিতে চাইনি আর বাড়ির লোকেরা। লুকিয়ে মিথ্যা বলে এক বছর কোনোরকমে মেডিকেলে পড়লেও একদিন ধরা পড়ে যায় ওর চাচীর কাছে। বাড়ীতে বিশাল ঝামেলা হয় ওদের বাধ্য হয়ে ওকে মেডিকেল ছেড়ে এখানে অনার্সে ভর্তি হতে হয়। তাহলে বুঝতে পারছো ওর বাড়ির লোকেরা মেয়েদের পড়ার কতটা বিরুদ্ধে??

” তার সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক??”

” তানহার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা ওর বাড়ীতে জানাজানি হয়ে গেলে তারা বাচ্চাটিকে এবরশন করে নেওয়ার জন্য তানহাকে মানসিক চাপ দিতে থাকে। এবং তানহার পড়াশোনা ছড়িয়ে দিতেও চাই। আমি চাইনি অন্য কারোর ভুলের শাস্তি ওই নিষ্পাপ শিশুটা পাক। আমি তখন তানহা কে বিয়ে করি।”

” ওহ্ তারমানে তানহা আপু আপনার স্ত্রী।”

” অর্ধেকটা শুনে কেনো সবকিছু ভেবে নাও মুগ্ধ?? তানহা কে আমি বিয়ে করলেও আমার আর ওর মধ্যে খুব সুক্ষ একটা ডিল হয়েছিল। তানহা ও তাঁর বাচ্চার জন্য আমার ওকে বিয়ে করাটা দরকার ছিলো। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পর যখন তানহা একটা জব পেয়ে যাবে তখন আমরা মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স নিয়ে নেবো। তানহার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে মুগ্ধ ও এখন আর আমার স্ত্রী নয়।”
______________

” মেহু কোথায় দাদাজান??” চিৎকার করে ওঠে আরফিন।
ছেলের চিৎকারে হামিদুল তালুকদার বলে ওঠে,” আরফিন!!!! নিজের দাদাজানের সাথে চিৎকার করে কথা বলার সাহস তোমার হয় কোথা থেকে??”
” তাহলে তুমি উওর দাও আব্বু মেহু কোথায়??”
” মেহেক নিজের শশুরবাড়িতে আছে।”

আরফিনার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। শশুরবাড়ি মানে?? মেহুর বিয়ে হয়ে গেছে??




কিছুক্ষণ আগে,

” আম্মু ও আম্মু আমি বিয়ে করবো না।”
” চুপ করো মেহেক। ইদানিং একটু বেশিই কথা বলছো।” সুমাইয়া বেগম বলেন।
” আচ্ছা আম্মু ওরা তো আমাকে দেখতে এসেছিলো, বিয়ের তো কোনো কথা ছিলো না?? আমি তো ওই লোককে চিনিও না।”
” বিয়ের আগে কি আমি তোমার আব্বুকে চিনতাম?? আর লোক কি ভাষা?? অতোটাও বেশি বয়স নয় ওই ছেলের। ওকেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে।”
” আমার থেকে চোদ্দো বছরের বড়ো লোকটাকে তুমি কি বলতে পারো বিয়ে করতে?? তুমি তো এমন ছিলে না??”
” ভুল ছিলাম। অত্যধিক স্বাধীনতা দিলে যে মেয়েরা বংশের মুখ ডোবাই সেটা ভুলে গেছিলাম। আমি চায়না আমার মেয়েও দ্বিতীয় মুগ্ধতা হয়।”

মেহু ওর মায়ের পা ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।

” আম্মু ও আম্মু আমাকে ওই লোকের সাথে বিয়ে দিওনা আম্মু। একটু আব্বুকে বোঝাও।… আচ্ছা… আচ্ছা বিয়েই দেবে তো?? আরফিন ভাইয়ার সাথে বিয়ে দাও”

ঠাসঠাস

মেহুর বলতে দেরী হয়েছে কিন্তু গালে তার চর পড়তে দেরী হয়নি।

” নিজের মেয়েকে সামলাও সুমাইয়া। এই বিয়ে না হলে আমি তোমায় তালাক দেবো বলে দিলাম।পাঁচ মিনিটের মধ্যে মেয়েকে সাজিয়ে নীচে নিয়ে এসো।” এনামুল তালুকদার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
সুমাইয়া বেগম এসে মেয়ের মাথায় ওড়না দিতে দিতে বলে ওঠে,” শান্ত হ মা। এই বাড়িতে প্রেম করে বিয়ে করা কখনো হয়না তুই তো জানিস মেহু আর ছেলেটা আরফিনের থেকে অনেক ভালো। তুই সুখী হবি।”




বর্তমান,

আরফিন ছাদের এক কোণে বসে মদ্যপান করে যাচ্ছে।হয়তো পুরুষ মানুষ বলে সে মন খুলে কাঁদতে পারছে না,আজ মেয়ে হলে সেও হাউ মাউ করে কাঁদতো। হঠাৎ কাঁধে হাত পরাতে চমকে পিছন ফিরে তাকায় সে।

” আব্বু”
” আর কতো রাত অবদি এভাবে নেশা করবে?? শুতে যাও।”

নিজের আব্বুকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না আরফিন। আব্বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে দেয় সে।

” আমি পারছি না আব্বু। আমি পারছি না। আমার বুকের ভেতরটা কেমন জ্বালা পড়া করছে। মেহু.. মে… মেহু আমার মেহুপরী আর আমার নেই আব্বু। ও অন্যের আমানত হয়ে গেছে। অন্যের…..” অঝোরে কাঁদতে থাকে আরফিন।
” শান্ত হও বাবা। শান্ত হও আরফিন। কি করার আছে বলো?? তোমার দাদাজানের হুকুমের ওপরে কথা বলার সাহস নেই কারোর।”
” আব্বু ও আব্বু…”
” হ্যাঁ বাবা বলো।”
” আব্বু আমার মেহুপরী আর আমার নেই বলো?? ওর স্বামী এখন…”
” আরফিন চুপ চুপ শান্ত হও চুপ করো।”

হামিদুল সাহেব অন্য দুই ভাইদের থেকে অনেকটা আলাদা। ওনার কাছে অন্যের স্ত্রী ও সন্তানরা সবার আগে। সন্তান অন্তপ্রাণ তার।
____________

ফুল সজ্জিত ঘরে ফুলের চাদর দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছে এক অষ্টাদশী যুবতী। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে সে। হঠাৎ দরজা লাগানোর আওয়াজে চমকে ওঠে আর জড়োসড়ো হয়ে বসে।

” তোমার বাড়ির গুনধর লোকেরা কি তাদের মেয়েকে শেখায়নি যে বাসর রাতে স্বামীর পা ছুঁয়ে সালাম করতে হয়??”

ভারী পুরুষালী কণ্ঠ কর্নগহর হতেই কান্নার বেগ যেনো বেড়ে যায় মেহুর।
” আ… আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মানি না। আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।”

সশব্দে হেসে ওঠে মেহুর সামনে দাড়ানো পুরুষটি
” যৌবনের আঠারো বছর নারীসঙ্গ থেকে দূরে থেকেছি কি বাসর রাতে বউকে ভো*গ করবোনা বলে??”

সামনে দাঁড়ানো মানুষটির কথা কর্নগহর হতেই গ রিরি করে ওঠে মেহুর।

” ছিঃ।”
” সে তুমি ছিঃ বলো আর যায় বলো সুন্দরী। তোমার এই নরম শরীরটা আজ আমার চাই।”

নিজের গায়ের পাঞ্জাবী খুলে সে এগিয়ে আসতে থাকে।মেহু ধীরে ধীরে পিছতে থাকে। পুরুষটি তার শাড়ি ধরে টান দেয়।এক টানেই মেহু শাড়ি খুলে আলাদা হয়ে যায়।
” না না প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।আমি…..”

ঠাস

মাহুর চোয়াল খামচে ধরে সে বলে ওঠে,
” চুপ একদম চুপ। আমাকে আমার কাজ করতে দে। তোকে সাজিয়ে রাখার জন্য আমি তোকে বিয়ে করিনি। তুই কাকে ভালবাসিস না বাসিস আমার জেনে কাজ নেই। প্রতি রাতে তোর এই শরীরটা আমার কাজে লাগলেই হলো।”

কথা শেষ করেই ক্ষিপ্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে লোকটা মেহুর ঠোঁট। স্বামীর স্পর্শে যেনো মেহু কোনো সুপ্ত রাগ অনুভূত হয়। লোকটা আর কাছে টেনে নেয় মেহু কে নিজের শরীরের ক্ষু*ধা মেটানোর জন্যে। মেহুর গোটা শরীরে তার স্বামীর প্রথম পরশ যেনো কামড় রূপে পাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও মেহু নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি নিজের স্বামী নামক অচেনা চোদ্দ বছরের বড়ো মানুষটার হাত থেকে।




সকালে সূর্যের রোদ জানলার পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের মেঝেতে এসে পড়েছে। বিবস্ত্র হয়ে খাটের এক পাশে পড়ে আছে মেহু। চোখের জল কিছুতেই বাঁধ মানছে না তার। পাশের মানুষটা যে তার সতীত্ব হরণ করেছে এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। সারা রাত তার শরীর ওপর নিজের ইচ্ছামত নিজের অধিকার খাটানোর পর এখন কেমন শান্তিতে শুয়ে আছে লোকটা।

বিছানা থেকে ওঠার শক্তি টুকুও আর বাকি নেই মেহুর শরীরে। পাশে ফোনটা বাজার আওয়াজে কোনোরকমে পাশ ফেরে মেহু।

” হ্যালো”
” মেহুপরী”
” আরফিন ভাইয়া” ডুকরে কেঁদে ওঠে মেহু।
” কোথায় আছিস মেহুপরী?? অ্যাড্রেস বল। আমরা পালিয়ে যাবো অনেক দূরে।”
” আম…..”

উন্মুক্ত পিঠে ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই রক্ত যেনো শীতল হয়ে যায় মেহুর। কানে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে ওঠে পিছনে শায়িত সেই পুরুষটি ,” এতো দূরে কেনো শুয়ে আছো জান?? বিয়ের পর স্বামীর বুকে মাথা রেখে শুতে হয় তুমি জানো না??” কথা শেষ হতেই মেহুর গলায় মুখ গুঁজে দেয় সে।

” কি আছে বলোতো তোমার এই নরম তুলতুলে শরীরে, সারা রাত ভো*গ করেও মন ভরছে না??…. এখন আরেকবার তোমায় না করলে আমার পক্ষে নিঃশ্বাস নেওয়াও দুস্কর হয়ে যাবে।”

আবার কাছে টেনে নেয় মেহুকে লোকটি নিজের চাহিদা মেটাতে। মেহুর শরীরে আর আটকানোর ক্ষমতা টুকুও নেই। বাধ্য হয়ে অনিচ্ছাকৃত আবার স্বামীর ভোগ্য বস্তুতে পরিণত হতে হয় তাকে।

ফোনের ওপর পাশের মানুষটি যেনো নিজের মধ্যে আর নেই, জীবন্ত লাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের ভালবাসার মানুষটাকে অন্য কেউ গভীর স্পর্শ করছে, তার মাঝে ডুবে রাত যাপন করেছে এই কথা ভাবলেই মানুষের বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে। সেখানে ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে ভালোবাসার মানুষটার স্বামীর ও তার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের শব্দরা আরফিনের কানে যেনো বিষের মতো বিঁধছে। গোটা শরীরে যেন জ্বালাপোড়া করছে তার। হাতের ফোনটা সজোরে ছুঁড়ে মারে দরজার দিকে।
_______________

মুগ্ধ কে কোলে তুলে বাড়ীতে প্রবেশ করে ইভান। শরীর দূর্বল থাকার দরুণ হাঁটতে কষ্ট হছিলো তাই নিজের প্রাণপ্রেয়সী কে কষ্ট দিতে চাইনি ইভান। ডাইনিং রুমে এসে বসে তারা।

” একটা চা আরেকটা কফি নিয়ে আসো খালা।”
কাজের খালাকে বলে ইভান।

কিছুক্ষণ পর ট্রেতে করে চা ও কফি নিয়ে হাজির হয় ওদের সামনে। মুগ্ধ সামনে তাকিয়ে চমকে ওঠে।

” মেহু!!!!!! তুই এখানে?????”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা