তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-১৮+১৯

0
71

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-১৮

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

সারা রাত ব্যাথায় কাতরিয়ে ভোরের দিকে গভীর ঘুম নেমে আসে মেহুর দুই চোঁখে। স্বপ্নে হয়তো সে তার হারিয়ে যাওয়া অতীতের স্মৃতি চারণ করছে ।

ছপাত!!!!!

হঠাৎ মুখের ওপর জল পড়ায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে মেহু। ধাতস্থ হয়ে ভীত চোঁখে সামনে তাকায় মেহু।

” সকাল বেলার রান্না গুলো কি তোর ভা*তার এসে করে দিয়ে যাবে??”

ঈশানের বলা কথায় যেনো ভেতরের কষ্ট গুলো আরো দলা পাকিয়ে এলো মেহুর। আবার চিৎকারে চমকে ওঠে সে।

” কিরে তোকে কতো বার বলবো??”
” আপ…… আপনি কেনো আমার সাথে সব সময় এমন বাজে ব্যবহার করেন ঈশান? কি করেছি আমি?”
” সেটা নিজেকে জিজ্ঞেস কর তুই। কি পাপ করেছিলি তুই? ভুলে গেছিস না সবকিছু?”

ঈশানের কথায় হাজারো চিন্তা করেও বের করতে পারছে না মেহু যে কি ভুল করেছে সে?? কি এমন পাপ সে করেছে যার ফল তাকে ভুগতে হচ্ছে??
_____________

রিং রিং রিং রিং

“হ্যালো কে??”
” আমি আম্মু বলছি”

এতোদিন পর নিজের সবথেকে কাছের মানুষটার আওয়াজ পেয়ে আবেগে গলা ভেঙে আসে মুগ্ধতার।

” আম্মু। কেমন আছো আম্মু??”
” ঠিক আছি মা। তুই কেমন আছিস মা? ইভান তোকে অত্যাচার করে না তো?”
” খুব ভালো আছি আম্মু। উনি এমনিতে আমার খুব যত্ন নেন। শুধু যদি ওনার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করি বা ওনার কথা না শুনি তাহলেই যা একটু রাগ করেন।”
” ইভান চৌধুরী তোকে ভালবাসে মুগ্ধ??”

আম্মুর প্রশ্নে বোকার মত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে মুগ্ধ। এই প্রশ্নের উত্তর তো তারও জানা নেই।

” জানি না।”
” এটা কেমন কথা মুগ্ধ?? আচ্ছা তুই কি ওনাকে ভালবাসিস??”
” জানি না আম্মু। এই দুটি প্রশ্নের উত্তরই আমার কাছে নেই।”
” তাহলে গতকাল কেনো বিয়ে করতে চাইলি তুই??”
” আমার যে আর কিছু করার নেই আম্মু। আমি কোনোদিনও ইভানের কাছে থেকে মুক্তি পাবোনা। উনি কোনো দিনও আমায় ছাড়বেন না। আর যদি একবার পালিয়েও যেতাম তাহলে কি অন্য কোনো ছেলে তার জীবনে আমাকে গ্রহণ করতো?? বলো আম্মু। আমার কাছে যে তাকে দেওয়ার মতো কিচ্ছুই ছিলো না। কেনো কোনো ছেলে অন্য পুরুষের স্পর্শ করা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে বলো?? আমাকে নিয়ে অন্যরা মজা মেরে ছেড়ে দিতো আম্মু, কেও বিয়ে করতো না।”
” মুগ্ধ মা আমার সেই ছোট্ট মুগ্ধতা কবে এতো বড় হয়ে গেল??”
” পরিস্থিতি বড়ো করে দিয়েছে আম্মু। তবে জানোতো আজও আমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি, সেদিন নাইট ক্লাবে ওই জলের বোতলে কে কি মিশিয়েছিলো আর কেনো মিশিয়ে ছিল? ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করেছো আম্মু এই ব্যাপারে?”
” জিজ্ঞেস করা আর হলো কোথায়?? তোর দাদাজান তোর ভাইয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।”
” কি!!!!!!”
” হ্যাঁ কালকে মেহেকের সাথে কথা বলতে যাওয়ার জন্য।”
” এরা কি কোনোদিনও আমাদের মন বুঝবে না আম্মু?? মেজো চাচার জেদের জন্য আজ মেহুটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। দাদাজানের জেদের জন্য ফুফুমনি আজও নিজের দেশে আসতে পারে না। তবুও এরা শুধরাবে??”

মেয়ের কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন নাজিয়া বেগম,” বাবাহ!! আমার ভীতু মেয়েটা এতো প্রতিবাদী হয়ে উঠলো কবে থেকে??”

মায়ের কথায় অবাক হয় মুগ্ধ। মনে পড়ে যায় ইভানের তাকে বলা কথা গুলি।



গতকাল রাতে নিজের প্রাণপ্রেয়সীর মাথা নিজের উন্মুক্ত বুকে জড়িয়ে ধরে পরম আবেশে তার চুলের ভাজে হাত বোলাতে যখন ব্যস্ত ছিলো ইভান।তখন মনের ব্যাথায় নিজের স্বামীকে জিজ্ঞেস করে মুগ্ধ।

” আপনি কেনো আমার সাথে অতো খারাপ করেছেন ইভান? কি দোষ ছিল আমার?”
” দোষ তোমার নয়। তুমি অন্যের পাপের ফল ভুগেছো।”
” কার পাপের ফল দিচ্ছেন আমায়??”
” সেটা এখনও তোমার জানার সময় হয়নি। সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।”
” আমাকে কষ্ট দিয়ে কিসের পৈশাচিক আনন্দ পান আপনি??”
” তোমাকে দেওয়া প্রতিটা আঘাত প্রতিটা যন্ত্রণা আমি নিজেকেও দিয়েছি মুগ্ধ। তুমি আর আমি আলাদা নয়।”
“এই সব কাব্যিক কথা উপন্যাসেই মানায়, বাস্তবে তা বড়ো অবাস্তব শোনায়।”

মুগ্ধের কথায় তাচ্ছিল্য হাসে ইভান।

” আজ পর্যন্ত যতবার তোমার কাছে এসেছি তুমি কষ্টে–ঘৃণায় নিজের চোখ সর্বদা বন্ধ করে রেখেছো। যদি একটি বারও চোখ খুলে তাকাতে প্রিয়, তাহলে দেখতে পেতে শরীর আমারো অক্ষত নেয়।”

ইভানের কথায় খাটের পাশের লাইটটা জ্বালিয়ে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধতা তার স্বামীকে। গায়ের ওপরের চাদরখানি কাঁপা কাঁপা হাতে সরিয়ে দিতেই চোঁখ চক্ষুকোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়ে যায় তার।

ইভানের বলিষ্ঠ সিক্স প্যাক শরীরে অজস্র কাটা দাগ। দেখে মনে হবে কেও হয় অতীব সখে গোটা শরীরে ব্লে*ডের দ্বারা কারুকার্য করতে চেয়েছে। কোনো কোনো দাগটা শুকিয়ে গেছে একটু তো কোনো কোনো দাগ এখনো দোগদোগে। ক্ষত স্থানে নরম হাতের স্পর্শ পেতে চোঁখ খুলে তাকায় ইভান। দেখে কি অবাক দৃষ্টিতে মুগ্ধ তার দিকে চেয়ে আছে।

” কি দেখছো ওমন করে Snowflake? বিশ্বাস হয়েছে আমার কথা?”
” কেনো নিজেকে আঘাত করেছেন আপনি?? নিজেকে এত কষ্ট দেওয়ার মানে কি??”
” আমি যে আমার প্রাণপ্রেয়সীকে আঘাত দিয়েছি, আমাকে তো আঘাত পেতেই হতো।”
” ভালবাসেন না যখন এতো কি আছে??”
” ভালোবাসা একসময় ফুরিয়ে যায় মুগ্ধ, নেশা কখনও ফুরায় না।…… ভালোতো তুমিও আমাকে বাসো না তাহলে বিয়ে করলে কেনো??”
” আপনি ছাড়া অন্য কেউ কখনো আমাকে স্বীকার করতো না নিজের স্ত্রী হিসাবে। রেহানের মতো বাকিরাও আমার ফায়দা লুটতে চাইবে।আপনি আমার স্বামীর হক জোড় করে নিয়েছিলেন, তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করতে হয়েছে আমাকে।”
” কে বলেছে তোমায় যে তোমার স্বামীর হক আমি জোড় করে নিয়েছি?? মনে আছে সেইদিন গাড়ির কথা? সেদিন তোমায় আমি একটা কাগজে সাইন করায়।সেটা আমাদের কাবিননামা ছিলো বেইব।”
” মানে?? কি!!!”
” হ্যাঁ যাতে তুমি আমার থেকে মুক্তি পেতে না পারো তাই সেদিনই আমি তোমায় বিয়ে করি। আমি আমার বৈধ অধিকার তোমার ওপর খাঁটিয়েছি।”
” আর তাঁর আগের দুইবার??”
” দ্বিতীয়বার তোমার করা কাজের জন্য আমি নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারিনি, আমার ভুল ছিলো। কিন্তু প্রথম দিন তুমি নিজে থেকে আমার কাছে এসেছিলে Snowflake। একজন নারী যদি নিজে থেকে আমায় সিডিউস করে, তাহলে নিরীহ পুরুষ মানুষ হয়ে কতক্ষণ নিজেকে সংযত রাখবো জান??”
” তারমানে যে কেও আপনাকে সিডিয়ুস করলে আমি তার সাথে শুয়ে পড়বেন??”
” বাবাহ!!! সেদিনের ভীতু মুগ্ধ এত প্রতিবাদী হয়ে উঠলো কবে থেকে??”



” কিরে মুগ্ধ কোথায় হারালি??”

মায়ের ডাকে অতীত থেকে ফিরে আসে মুগ্ধ।
” আচ্ছা মা আমি রাখছি। পরে কথা বলছি।( গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
_____________

” কোথায় গেছিলি ইয়ানা? বল কোথায় গেছিলি?”
” বড়ো আপুর কাছে।”
” এতো টান তোর আর ভাইয়ার কি করে আসে বিগ ব্রো আর বড়ো আপুর প্রতি বুঝিনা বাপু??”
” এভাবে কেনো বলছো ছোট আপু? ওরা দুজনা তো আমাদেরই বড়ো ভাই বোন।”
” একটা কথা মনে রাখবি নিজের রক্ত নিজের রক্তই হয়।”
_____________

” শাড়ি পরোনি কেন মেহেক??”

ঈশানের কথায় চমকে পিছন ফিরে তাকায় মেহেক।

” আমার শাড়ি পরে কষ্ট হয়। আমি থ্রী পিসেই বেশি কোম্ফোর্ট হয়।”
” সেটা কি আমি জানতে চেয়েছি?? এবাড়ির বউ তুমি,তোমার শত কষ্ট হলেও এবাড়ির নিয়ম মেনেই চলতে হবে।”
” আপনার মম ওতো………”

ঠাসঠাস

” তর্ক আমার পছন্দ নয় মেহেক।শাড়ি পরে নীচে রান্না ঘরে যাও। আজ dad আসবে।”

ঈশান হন হন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। গালে হাত দিয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠে মেহেক।

_____________

সকাল থেকে আজ চৌধুরী ম্যানসনের রান্নাঘরে বিশাল আয়োজন চলছে। বাড়ির কর্তা ও ইভানদের বাবা ইশতিয়াক চৌধুরী আজ বাড়ি ফিরছেন।

” মেহু তুই এখানে একা একা কেনো সব করছিস? আমাকে ডাকলি না কেনো??”
” তোমার রুমের দরজা লাগানো ছিল আপাই। তাই আর ডাকিনি।”
” হ্যাঁ রে ঈশান তোকে মারে??”

চমকে ওঠে মেহেক।

” ন…. না না না।”
” তাহলে গালে এই লাল দাগটা কি করে হলো তোর?? রাতে তো ছিলো না।”
” ওহ্ কিছু না আপাই। ওটা তো ”
” নিজের আপাই কেও এতো মিথ্যা কথা বলা কবে থেকে ধরলি মেহু??”

ছল ছল চোখে তাকায় মেহু তার আপাইয়ের দিকে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না সে। ঝাঁপিয়ে পড়ে আপাইয়ের বুকে। হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে।

” আমি আর পারছি না আপাই। আর পারছি না আমি। আরফিন ভাইয়াকে আমার কাছে এনে দাও না আপাই। আমাকে আগের মতো একবার জড়িয়ে ধরতে বলো না আরফিন ভাইয়া কে।একবার বুকের মাঝে নিতে বলো আমাকে। ওই ঈশানের কাছে থেকে আমাকে নিয়ে যেতে বলো। আমি আর এখানে থাকতে পারছি না। নইলে নইলে আমাকে মেরে ফেলতে বলো ঈশান কে। বলো মেরে ফেলতে বলো। শেষ করে ফেলতে বলো আমাকে।”

উম্মাদের মতন আর্তনাদ করতে করতে জ্ঞান হারায় মেহু। বোনকে ওই অবস্থায় দেখে মুগ্ধ বড়ো ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার করে ডাকতে থাকে ইভানকে। মুগ্ধের চিল চিৎকার শুনে ইভান ভয় পেয়ে ছুটে আসে রান্না ঘরে।

” দাঁড়াও ভাইয়া আমিও যাবো।” ঈশানও নিজের ভাইয়ার সাথে রান্না ঘরে এসে পৌঁছায়।

” কি হয়েছে মুগ্ধ?? চিৎকার করছো……”
” ইভান মেহুর কি হলো দেখুন না।”

মেহু কে নিয়ে মুগ্ধ মেঝে তে বসে পরেছে। বোনের এই অবস্থা দেখে হাউ হাউ করে কাঁদছে সে। ঈশান গিয়ে মেহুকে টেনে নিজের গায়ে হেলিয়ে নেয়।

” মেহেক এই মেহেক কি হয়েছে?? চোঁখ খোলো। কি হয়েছে তোমার?? এই মেহেক তাকাও না প্লিজ।”
” মুগ্ধ মেহেকের চোঁখে মূখে জলের ঝাপটা দাও।” ইভান বলে।

” কি ব্যাপার বলতো ইয়ানা?? এ আবার হঠাৎ অজ্ঞান হলো কেনো??”

দূরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে ইনায়া বলে ইইয়ানা কে।
” কি করে জানবো?? দেখো গিয়ে আবার ওই আরফিনের পাপ পেটে ধরেছে কিনা??”

মেয়েদের কথা শুনে বুশরা বেগমের যেনো কপালে ভাঁজ পড়ে। তাহলে কি আবার হিস্ট্রি রিপিট হবে??

চোঁখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়েও জ্ঞান ফিরছে না মেহুর। হঠাৎ ইভানের ফোন বেজে ওঠে।

” হ্যালো কে বলছেন?? ………… কি!!!!????? এক্সিডেন্ট??? কোথায় হয়েছে???”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-১৯

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

“ডক্টর কি হয়েছে মেহকের? ও ঠিক আছে তো??” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ঈশান বলে।

” বাপরে মিঃ ঈশান আপনি তো দেখছি বউয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবেন। কিচ্ছু হয়নি আপনার বউয়ের উনি একদম ঠিক আছেন। শুধু একটু হাইপার হয়ে যাওয়ায় আর সকাল থেকে পেটে কিছু না পরায় উনি জ্ঞান হারান। চিন্তার কিছু নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে।” ডক্টর বলেন।

” থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর। আসুন আপনাকে এগিয়ে দি।” বুশরা বেগম ডক্টর কে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

মুগ্ধ মেহুর মাথার কাছে বসে আছে। চোঁখমুখ শক্ত করে সে বলে ওঠে,” ঈশান আপনার সাথে আমার কিছু আছে।”
” বলুন ভাবী”
” একান্তে”
” ইয়ানা তোরা বাইরে যা।”

ইয়ানা ও ইনায়া একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

” মেহু কে বিয়ে করার পিছনে আপনার আসল উদ্দেশ্য কি??”
” সেটা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নয়।”
” আমার বোনটাকে আপনি মারেন কোন সাহসে??”
” সেই কৈফিয়তও আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নয়।”
” একটা কথা জানবেন ঈশান,দড়ি অতিরিক্ত টানলে সেটা ছিঁড়ে যায়। আপনি ভাবছেন অত্যাচার করে, জোড় করে মেহুকে নিজের কাছে রাখবেন?? পারবেন না। আজ জানেন ও যখন জ্ঞান হারায় তার আগে বার বার কি বলছিলো?? আরফিন ভাইয়ার কাছে যাওয়ার জন্য।”
” ভাইয়াও তো আপনাকে জোড় করে নিজের কাছে আটকে রেখেছিলো, তাহলে আপনি কেনো থাকলেন তার কাছে ভাবী??”
” আপনার ভাইয়া আমার যত্ন নেয়। আমার কি খেতে পছন্দ, কি পরতে পছন্দ সবটার খেয়াল উনি সুদূরে ফ্রান্স থেকেও রাখতেন। বিগত দুই বছর প্রতিদিন ভার্সিটি তে আমার বেঞ্চে একটা করে গোলাপ রাখা থাকতো। প্রায়ই বান্ধবীদের নাম করে আমার জন্য আমার প্রিয় খাবার গুলো পাঠাতেন উনি।রোজ একটা করে রিক্সা বাড়ির সামনে দাঁড়ানো থাকতো যাতে আমাকে কষ্ট করে রিক্সা খুঁজতে না হয়।আমাকে অত্যাচার যেমন করেছেন তেমন নিজের শরীর কেও ক্ষত সৃষ্টি করেছেন তিনি। যখনই কেউ আমার দিকে কুনজর দিয়েছে বিনিময়ে তার জীবন আপনার ভাইয়া কেড়ে নিয়েছেন।আপনার ভাইয়া আপনার মতো জানোয়ার নয়।একবারও তাকিয়ে দেখেছেন ওর দিকে?? কতো বয়স মেহুর?? আঠারো বছরের মেয়ে ও। আপনার বয়স দেখেছেন?? কোন আক্কেলে ওকে বিয়ে করতে গেছিলেন আপনি??”
” আপনার বাড়ির লোকেরা কোন আক্কেলে ওর সাথে আমার বিয়ে দেয়? আপনার কাছের মানুষটার পাপের ফল আপনারা দুই বোন ভুগছেন?”
” তারা কেমন সেটা আপনি জানেন বলেই সেটার সুযোগ নিচ্ছেন। তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন। এইসব প্রতিশোধের খেলা আপনাদের দুইভাইয়ের একদিন তো শেষ হবেই আশা করি। তারপর যখন আপনি নিজের জীবনের দিকে নজর দেবেন তখন দেখবেন আপনি কি করেছেন নিজের জীবনে।”

কথা শেষ করে হন হন করে বেরিয়ে যায় মুগ্ধ। নীচ তলায় চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নীচে যায় সে।

” কি হয়েছে ইয়ানা আপু?? এতো চিৎকার কেনো গেষ্ট রুমে??”
” সেটা তুমি তোমার হাসবেন্ড কে জিজ্ঞেস করো। ভালোই তো বশ করেছো।” বুশরা বেগম গেষ্ট রুম থেকে বলতে বলতে বেরিয়ে আসেন।

বুশরা বেগমের কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারেনা মুগ্ধ। এগিয়ে যায় গেষ্ট রুমের দিকে।

” ভাইয়া!!!! তুমি ??”

মুগ্ধ দেখে খাটের মধ্যে আরফিন বসে আছে ও তার হাতে প্লাস্টার করা।

” কি হয়েছে তোমার?? কি হয়েছে ভাইয়ার ইভান??”
” শান্ত হও মুগ্ধ। হাত ভেঙে যাওয়ায় প্লাস্টার করতে হয়েছে। তেমন কোনো চিন্তার কিছু নেই। ওর যাওয়ার জায়গা নেই তাই ভাবলাম যতদিন না সুস্থ হচ্ছে এখানেই থাকুক।” ইভান বলে।

” কিন্তু তুই আমাকে না নিয়ে এলেই ভালো হতো ইভান। আন্টি আন্টির হয়তো আমার আসাটা পছন্দ হয়নি।…….”
” তোকে সেটা ভাবতে হবে না। তুই রেষ্ট কর। আর মুগ্ধ, মেহেকের জ্ঞান ফিরেছে?? কেমন আছে ও??”
” কি……কি হয়েছে মেহুপরীর??”

আরফিনের কথায় ভুরু কুঁচকে তাকায় ইভান।
” ভাষা সংযত কর তুই আরফিন। ভুলে যাসনা যার বিষয়ে কথা বলছিস সে আমার ভাইয়ের বিবাহিতা স্ত্রী।”

ইভানের অপমানে মাথা নীচু হয়ে আসে আরফিনের। সত্যিই তো সে তো ভুলে গেছিলো যে তার মেহুপরী আর তার নেই। সে এখন তারই বেষ্ট ফ্রেন্ডের ভাইয়ের স্ত্রী। অন্যের অর্ধাঙ্গিনী,অন্যের আমানত।
_____________

” ইটস টু মাচ ইরিটিটিং। আমি জাস্ট আর নিতে পারছি না।এতো কিছুর পরেও বিগ ব্রো কি করে ওই আরফিন তালুকদার কে এই বাড়িতে থাকতে দিতে পারে?? আমি এক্ষুনি তানহা আপুকে ফোন করে সবটা বলছি।” ইয়ানা বলে।

” এতো অধৈর্য হোস না ইয়ানা।তোর বিগ ব্রোর নিশ্চই কিছু প্ল্যান মাথায় আছে নইলে ও কখনওই ওই আরফিন কে এবাড়ির চৌকাঠও পেরোতে দিতো না।” বুশরা বেগম বলেন।

” কি করে বলছো মম??” ইনায়া বলে।
” কারণ আমি আমার বেটা কে চিনি। আজ তোদের ড্যাড এলে আমি ওনার সাথে কথা বলবো।”

বুশরা বেগম বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

ইনায়া তার মমের চলে যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে মুখ ঝমটাই ,” মমের যে কেনো এত পীড়িত আসে বিগ ব্রো আর বড়ো আপুর প্রতি, কে জানে?? কখনো আমাদের নিয়ে এত কনফিডেন্ট দেখবি না মম কে। নিজের পেটের ছেলে মেয়ের প্রতি অতো ভালবাসা আসেনা আর ওই………”
” ছোটো আপু তোমার বিগ ব্রো আর বড়ো আপুর প্রতি এতো রাগ কেনো বলোতো?? ওরা তো আমাদের পর নয়। রক্তের সম্পর্ক তো আছে…….”

ইয়ানা কে মাঝ পথে থামিয়ে দেয় ইনায়া,”কিন্তু সেটা কি রকম রক্তের সম্পর্ক সেটা আশা করি বলে বোঝাতে হবে না।”
_______________

” আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো ইভান।”
” বলো বেইব।”
” ঈশান কে বলুন মেহুকে ডিভোর্স দিতে।”
” এটা ওদের পার্সোনাল ব্যাপার ”
” তাহলে বিয়েটা আপনি দিয়েছেন কেনো?? অবাক হচ্ছেন?? কি ভেবেছে আমি কিছু বুঝিনা।আপনাকে সেদিন ভাইয়া মেহুকে ভালবাসে বলার পর পরই হঠাৎ করে আপনার ভাইয়ের দেশে এসে বিয়ে করা একদিনের মধ্যে। আবার অন্য কাওকে নয় মেহুকেই বিয়ে করা আমি কিছু বুঝি না??”
” দেখ মুগ…….”

ইভানকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় মুগ্ধ। চোঁখ মুখ শক্ত করে বলে ওঠে,”লেট মি ফিনিশ ফার্স্ট মিস্টার ইভান চৌধুরী। আপনি আর আপনার ভাই কি যেনো বলেন পাপের ফল তাই না? পাপের ফল ভুগছি আমরা দুই বোন। আজ আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি আপনাকে প্রমাণ করে দেবো যে আমরা দুই বোন কোনো পাপ করিনি। কি এমন রহস্য আপনাদের বাড়িতে লুকানো আছে তো আমি খুঁজে বের করবো। আর এটা মুগ্ধতার প্রমিস।
_______________

“ওঠো এই ওষুধটা নাও।”

জ্ঞান ফেরার পর একটু ধাতস্থ হতেই ঈশানের কথায় চোঁখ তুলে তাকায় মেহু।

” নাও নাও। তোমার না*গরের হাত ভাঙ্গা নইলে হয়তো এখানে এসেই খাইয়ে দিত।”
” আরফিন ভাইয়ার হাত ভেঙেছে মানে?? কোথায় উনি??”

মেহু উদ্বিগ্ন হয়ে বিছানা থেকে নেমে ছুটে রুম থেকে বেরোতে যায়। পিছন থেকে হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয় ঈশান। ঈশানের বুকে আছড়ে পড়ে মেহু।

” স্বামীর সামনে দিয়ে পরপুরুষের কাছে যাচ্ছো, বিশাল সাহস বেড়ে গেছে তাই না??”
” আমার জীবনের পরপুরুষ হচ্ছেন আপনি ঈশান। আমি আরফিন ভাইয়ার সাথে থাকলে আমার নিজেকে পবিত্র মনে হয় কারণ সেখানে ভালবাসা আছে। আর আপনি আমায় ছুঁলে আমার ঘেন্না লাগে, মনে হয় আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম।”
” মেহেক!!!!!!”
” চিৎকার করে লাভ নেই মিস্টার ঈশান চৌধুরী। আপনি আজ পর্যন্ত যখনই আমায় স্পর্শ করেছেন আমি চোঁখ বন্ধ করে খালি আরফিন ভাইয়া কে ইমাজিন করেছি আপনার জায়গায়।”

ঠাসঠাস

মেহুর বলতে দেরী হলেও গালে চর পড়তে দেরী হয়নি।

” খুব ভালোবাসা দেখেছো তাই না?? যাকে ভালবাসো তার স্বভাব জানো?? তাকাও আমার দিকে।”
” একদম মিথ্যা বলবেন না।”
” যাও গিয়ে জিজ্ঞেস করো তোমার আরফিন ভাইয়া কে, ফ্রান্সে নাইট ক্লাবে জুয়ায় হেরে যখন টাকার কাঙাল হয় তখন টাকার পরিবর্তে ভাইয়ার কাছে একরাতের জন্য কেনো নিজের বোন কে বেচে ছিলো?? কেনো নিজের বোনের খাওয়ার জলে নেশার জিনিস মিশিয়ে ছিল?? জিজ্ঞেস করো গিয়ে তখন তার ভালো মানুষী কোথায় গেছিলো??”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা