#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
—ব্রেকিং নিউজ —
“মাহমুদ খান ও তার স্ত্রী এর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর তাদের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হলো। একটা ভিডিও ক্লিপ এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি নেহমাত শেখ নওশাদ শিকদার মাহমুদ খান ও তার স্ত্রী রেহানা খান কে গুলি করে হত্যা করেছে। আরো বেশ কিছু অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। অন্ধকার জগতের বস NS এর ডান ছিলেন নেহমাত শেখ। অবৈধ ওষুধ, ড্রাগ নারী পাচার কার্যের সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন।কয়েক মাস আগে সি আই ডি অফিসার আরহাম মাহমুদ খান ও A.K নওশাদ শিকদার কে আটক করে ছিলেন। আপাতত তিনি জেলে আছেন। আজ সকালে মাহমুদ খানের বাড়ি থেকে নেহমাত শেখ কে আটক করেছে সি আই ডি। গোপন সূত্রে জানা গেছে নেহমাত শেখ মাহমুদ খানের বোন জামাই ছিল। আরহাম মাহমুদ খানের বিয়ে উপলক্ষে নেহমাত শেখ তাদের বাড়িতেই ছিল। এই কেসটা পুলিশ দেখতে চেয়েছিল কিন্তু এই কেস টা দেখছেন আরহাম মাহমুদ খান নিজেই কারন তিনি তার মা বাবার কেসটা নিজেই দেখতে চান। বিয়ের পরের দিনই এরকম একটা মর্মান্তিক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে এটা সত্যিই দুঃখজনক।’
একি নিউজ সব চ্যানেল এ লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে।
_________________
সকাল হতেই পুরো সি আই ডি টিম চলে এসেছে আরহাম দের বাড়িতে। নেহমাত শেখ নিচে নামতেই তাকে সব দিক থেকে আটকে ফেলে তারা। প্রমান দেখতে চাইলেই সবার সামনে মাহমুদ খান ও তার স্ত্রী রেহানা খান এর মৃত্যুর একটা ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। কাল রাতে যেটা অজ্ঞাত একজন সি আই ডি অফিস এ পাঠিয়েছিল। সেখানে স্পষ্ট দেখা এবং বোঝা যাচ্ছে নেহমাত শেখ এবং নওশাদ শিকদার কতো গুলো বন্দুকধারী লোককে ধরে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে । এতগুলো লোক থাকায় মাহমুদ খান রিভলবার হাতেও কিছু করতে পারে নি। তারপর প্রথমে কিছু বলে হুমকি দিয়েছে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর তারা তাদের দুজন কে গুলি বের করে শ্যুট করে। শ্যুট করার পর তারা রুমে কিছু খুঁজতে থাকে । কিন্তু না পেয়ে তারা দুজন এ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এগুলো দেখে আনোয়ার খান সবার সামনে চড় দিয়ে বলে,,
“এতকিছু নেহমাত আমার ছেলের হত্যাকারী আমাদের সামনেই ছিল এতদিন কিন্তু আমি চিনতে পারি নি। উল্টো একদিন তার কথা মতো নিজের ছেলেকে নিজের থেকে আলাদা করে দিয়েছিলাম। ভাবতেও নিজের ওপর আমার ঘৃনা হচ্ছে।”
নেহমাত শেখ অসহায় চোখে শুধু সবার দিকে তাকিয়ে ছিল। রুহানি ওর বাবার সামনে গিয়ে বলল,,,
“কেন বাবা এরকম করলে প্রথমে রবিন তারপর তুমি আমরা কি নিয়ে বাঁচবো তোমরা ভাবো নি একবার ও তাই না। কি ক্ষতি করেছিল আরুহির বাবা মা তার জন্য তাদের এই দুনিয়া ছাড়তে হলো। আর আরুহি আর আরহাম কে এতিম হতে হলো। তোমাকে বাবা বলতেও লজ্জা হচ্ছে আমার। ঘৃনা করি আমি তোমায় শুনতে পাচ্ছো তুমি। ঘৃনা করি তোমায় খুব ঘৃনা করি।”
বলেই রুহানি কাঁদতে কাঁদতে নিজের মায়ের কাছে গেল। তার মা খুশি না দুঃখী কিছু বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অনুভূতিহীন মানবী। মেয়ের কথা শুনে নেহমাত শেখ এর নিজের ওপর নিজের ঘৃনা হচ্ছে। নিজের সন্তানের চোখে ঘৃনা দেখার মতো কষ্ট আর কি হতে পারে। আফরিন আরহামের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর আরহাম সে তার বোনের হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে। আরহাম আর আরুহির চোখ মুখ এ কোন অবাকতার ছাপ নেই। এটা দেখেই সবাই অবাক হচ্ছে। যখন এসব হচ্ছিল তখন আফরিন আবরার দের ফোন করে জানিয়েছে ওরাও এ বাড়িতে চলে এসেছে। আরহাম আর আরুহি একসাথে নেহমাত শেখ এর সামনে দাঁড়ালো। আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,
“একদিন এরকম একটা জায়গায় দাঁড়াবেন কখনো ভাবেন নি তাই না। আপনি সবসময় ভাবতেন আমরা কেন রহস্য করে আপনার সাথে কথা বলি শুধু আপনি না সবাই ভাবতো। একদিন তো আমার ভাবি মানে আফরিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল সবাইকে আমি আর ভাইয়া সালাম দিয়ে কথা বললেও আপনাদের দুজন কে কেন সালাম দিয়ে কথা বলি না। সেদিন আমি তাকে বলতে পারি নি আমার বাবা মায়ের খুনীদের কি করে বলি আল্লাহ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত করুক। মন থেকে আসে নি। আপনাদের দুজন কে যখন সামনে দেখতাম তখন আমার বাবা মায়ের এই ভিডিওটি চোখের সামনে ভেসে উঠতো। এই ভিডিওটি আমরা বাবা মা মারা যাওয়ার কয়েক মাস পরেই পেয়েছিলাম। কিন্তু জানেন কেন কাউকে বলি নি কারণ সব পুলিশ অফিসার আপনাদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছিল। মানে NS এর কাছে। কাউকে প্রমান গুলো দিলেই ওরা আপনাদের তো ধরতোই না উল্টো প্রমান গুলো নষ্ট করে দিতো। একদিন নিজের হাতে যেন আপনাদের শাস্তি দিতে পারে এই জন্য ভাইয়া নিজেই একজন সি আই ডি অফিসার হয়েছে। এখন যদি বলেন ভাইয়া তো সি আই ডি অফিসার হয়েছে অনেক আগে তার জন্য বলি ভাইয়া আপনাদের সাথে Main NS কেও ধরতে চেয়েছিল তবে কাল A.K এর সাথে তার কথা হয়েছে আর তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে তাই আজ আপনি এখানে। এই ভিডিও ক্লিপ টা আমি ভাইয়া আর A.K জানতো। তাই NS এর সাথে চ্যালেন্জ হওয়ায় সব কিছু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। আরো কয়েকটা দিন খুলাখুলি ঘুরতে পারতেন কিন্তুNS সেটা বন্ধ করে দিল। একটা কথা মনে রাখবেন পাপ কখনও বাপ কে ছাড়ে না। নিজে তো পাপ করেছেন সাথে নিজের ছেলেকেও জরিয়েছেন।
“নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।” (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
শাস্তি তো আপনি পাবেন -ই তাও কঠিন শাস্তি। শাস্তি উপভোগ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। আমি মনে করি মানুষ যে অবস্থায় -ই পুরুক না কেন তাকে তা উপভোগ করা উচিৎ। ”
আরুহি আর কিছু বলছে না। ওর রাগে হাত পা কাঁপছে। রাগে দু ফোঁটা পানিও গড়িয়ে পরল চোখ থেকে। আরহাম আরুহির চোখ মুছে দিল। বাকি সবাই আরুহির কথা শুনে অবাক ওরা নিজেরাই এতদিন ওদের বাবা মায়ের মৃত্যুর রহস্য জানতো কিন্তু কাউকে কিছু বলে নি। তখন আরহাম বলল,,,
“স্যার নেহমাত শেখ কে আপনারা নিয়ে যান । আমি আরA.K কাল অফিস গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আজকের দিনটা আমি পারছি না। ”
নেওয়াজ আহমেদ বলল,,
“আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা। ইউ নো ইউ আর ভেরি স্ট্রং গাই! নাহলে এতদিন সব জেনেও এভাবে বসে থাকতে পারতো না কেউ। শুধু তুমি না তোমার বোন ও অনেক স্ট্রং।”
এইটুকু বলেই সবাই নেহমাত শেখ কে নিয়ে গেল। আরহাম বলে দিয়েছে যাতে কড়া গার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।
___________
নেহমাত শেখ কে নিয়ে যাওয়ার পর আরুহি কোন দিকে না তাকিয়ে ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। আফরিন আর আবরার এগিয়ে যেতে চেয়েছিল আরুহির কাছে কিন্তু আরহাম মানা করে। পুরো মাহমুদ ভিলা নিস্তব্ধ হয়ে আছে। আনোয়ার গিন্নি অনেক কাঁদছে নিজের ছেলের মৃত্যুর খুনীকে দেখে আর নিজের মেয়ের চিন্তা করে। আনোয়ার খান কি বলবেন বুঝতে পারছে না। নাহিয়ান খান এর পরিবার সব দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। নওশাদ শিকদার ও এই খুনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। নাহিয়ান খান আরহাম এর কাঁধে হাত রাখল। তখন আরহাম অসহায় চোখে তার দিকে তাকালো। আরুহি আজ নিজেকে সামলাতে পারছে না। ওর চোখের সামনে শুধু ওর বাবা মায়ের খুন করার মুহূর্তগুলো ভাসছিল। আবরার বারবার চাইছে আরুহির কাছে যেতে কিন্তু যেতে পারছে না। আরুহির অবস্থা দেখে আবরারের খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রিয়জনের কষ্ট কখনো নিজ চোখে দেখা যায় না। আজিম আহমেদ আরহাম কে জরিয়ে ধরলো। আরহাম এর মনে পরলো আরুহি ওপরে চলে গেছে। তখন আরহাম বলল,,,
“আজ আমাদের দু ভাই-বোন কে একটু একা ছেড়ে দিন। আমি ওপরে যাচ্ছি দয়া করে কেউ আমাদের ডাকবেন না। আর হ্যা কেউ যদি এখন আমাদের বাড়িতে না থাকতে চান তাহলে চলে যেতে পারেন আমাদের বলতে হবে না। আল্লাহ হাফেজ। ”
আফরিন আরহামের হাত ধরলো। তা দেখে আরহাম বলল,,,
“চিন্তা করো না। তোমার ননদ আমার থেকেও বেশী স্ট্রং। আমরা দু ভাই-বোন একে অপরকে সামলাতে পারি। আমাদের দুজনের এখন দুজনকে প্রয়োজন। তুমি এখন বাবার সাথে ও বাড়িতে যাও। আমি বিকেলে আরুহিকে নিয়ে চলে আসবো তোমাদের বাড়িতে। তখন দেখবে তোমার ননদ কতোটা হাসি খুশি সাথে তোমার বর ও।”
আফরিন আরহামের কথায় বুঝতে পারল এই কথাগুলোই কতোটা কষ্ট আছে। আফরিন অসহায় চোখে আরহাম এর দিকে তাকালো। আরহাম ওপরে চলে গেল। আরুহি জানতো ওর ভাই আসবে তাই দরজা না আটকিয়ে ভিরিয়ে রেখেছিল। আরহাম আসতেই দেখতে পেল আরুহি মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের কোনায় পানি জমে আছে। আরহাম এর উপস্থিতি টের পেয়ে আরুহি চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় বলল,,
“ভাইয়া দরজাটা আটকে এসো আমি চাইনা আমাদের ভাইবোনের মধ্যে এখন অন্য কেউ আসুক।”
আরহাম দরজা বন্ধ করে এসে আরুহির পাশে বসলো। তখন আরুহি বলল,,
“কেউ একজন বলেছিল,,
অতিরিক্ত খুশিতে থাকার কথা ও অতিরিক্ত কষ্টে থাকার কথা, কাউকে বলবেন না। কারন খুশিতে মানুষ নজর লাগায় আর কষ্টে মানুষ লবণ লাগায়!
এই যে আজ কতো মানুষ আমাদের বাড়িতে এখানে তুমি সবাই তোমাকে সহানুভূতি দেখাবে এমন টা হবে না। কেও কেও তোমার বাবা মায়ের ও ভুল ধরবে হয়তো বলবে হয়তো তারা অন্যায় কোন কাজ করেছিল তাই তারা তাদের কে এরকম ভাবে মেরে ফেলেছে। কিন্তু সত্যি টা তো জানে না। সেদিন যদি আমার ক্যামেরা টা না খুঁজতাম আর চালিয়ে না দেখতাম তাহলে আজীবন আমাদের কাছে সব অজানায় থেকে যেতো ভাইয়া।”
আরুহির চোখ দিয়ে পানি পরছে। আরহাম বোনকে দুহাত দিয়ে আগলে নিলো। আরহাম এর বুকটা ও ফেটে যাচ্ছে। সর্বদা তার বোন কে সে স্ট্রং দেখেছে আজ এতটা ভেঙে পরেছে। আরহাম বলল,,
“আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,
“ভেঙ্গে পড়োনা, নিরাশ হয়োনা, সাহায্য আসবেই, এটা আল্লাহর ওয়াদা। জেনে রেখো আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে!
– সূরা বাকারা- ২১৪!
এই কথাটা আমার বোন তো আমাকে বলেছিল পাঁচ বছর আগে। যখন মা বাবার মৃত্যুর রহস্যের হদিস ছিল না। ধৈর্যশীল দের শেষ পরিনতি সুন্দর হয়। আর আল্লাহর রহমতে আমরা আমাদের বাবা মায়ের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছিলাম।
পাঁচ বছর আগে যখন আজিম খান ওদের কে গ্ৰামে নিয়ে যায়। কয়েকমাস পর হুট করে আরুহির মনে পরে তার ক্যামেরার কথা। ঐ ক্যামেরা টা ওর বাবা মাহমুদ খান ওকে দিয়েছিল। আরুহির প্রকৃতির ওপর অনেক জোক ছিল। তাই দেখে আরুহি বাবার কাছে আবদার করেছিল ক্যামেরার জন্য। সে প্রকৃতিকে তার ক্যামেরায় আবদ্ধ করবে বলে। আরুহি প্রকৃতির সাথে সাথে ওদের সুন্দর মুহুর্তে গুলোও রেকর্ড করতো ওর ক্যামেরায়। সেদিন আজিম খানের বাড়িতে গিয়েছিল ওরা ভুলে ক্যামেরাটা ফেলে রেখে গিয়েছিল।সেটা নিতেই সব জানতে পারে ওরা।
ফ্ল্যাশব্যাক,,
রাতে মাহমুদ খান আর রেহানা খান মিলে কিছু কথা বার্তা বলছিলেন। এমন সময় তারা গাড়ির আওয়াজ পায় ওনারা ভাবে হয়তো আরহাম আর আরুহি আজকেই এসেছেন। কি মনে করে যেনো আবার রেহানা খান জানালা দিয়ে দেখেন কে এসেছে। যখনি দেখতে পান কতো গুলো বন্দুক নারী লোক এসেছে তখনি তিনি মাহমুদ খান কে জানায়। তারা সংখ্যায় অনেক জন ছিল মাহমুদ খান তাদের সাথে পারবে না। তাদের পুরো বাড়িটাই তারা ঘিরে ফেলেছে। মাহমুদ খান রুমে গিয়ে ওনার রিভলবার নিয়ে আসেন। রেহানা খান আরুহির রুমে একটা লকার আছে সেখানে NS এর সমস্ত প্রমান রেখে এলো। আসার সময় আরুহির ক্যামেরার দিকে নজর পরতেই রেহানা খান কি মনে করে যেন আরুহির ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ড অন করে ড্রয়িংরুমে আসে। তার মনে হচ্ছিল কিছু একটা খারাপ হবে। তিনি ভিডিও রেকর্ড অন করে বলে,,,
“প্রিয় আরুহি আর আরহাম,,, জানিনা আজ আমরা বাঁচতে পারবো কিনা। ওরা সবাই আমাদের বাড়িটাকে ঘিরে ফেলেছে। যদি আমরা মরে যাই তাহলে এর প্রধান মাথা থাকবে NS কারন আমি তার সবকিছু জেনে গেছি।সাথে তোমাদের বাবাও NS হলো অন্ধকার জগতের বস। যদি আজ আমরা আর ফিরতে না পারি তোমরা দু ভাই-বোন ওদের শাস্তি দেবে। আমি জানি আমার দুই ছেলে মেয়ে অনেক স্ট্রং তারা পারবে তাকে শেষ করতে। NS অপারেশন এর সমস্ত ডকুমেন্ট আরুহির লকারে রেখে এসেছি। ওগুলো ভবিষ্যতে তোমাদের কাছে লাগবে। হ্যা তবে যা করবে আইন অনুযায়ী করবে । দরকার পরে আইনের লোক হবে। আরহাম তুমি তোমার বোনকে আগলে রেখো কখনো তাকে কাঁদতে দিও না। সবসময় মনে রাখবে আল্লাহ তায়ালা এবং আমরা তোমাদের সাথে আছি। তোমরা একে অপরের সহায়ক হবে। আর তাদের শাস্তি দেবে। তাদের কাউকে ছাড়বে না। সবসময় মনে রাখবে তারা এই দেশের শত্রু। যাই হোক তোমাদের বলছি তোমাদের মা বাবা তোমাদের দুজনকে খুব ভালোবাসে তারা তোমাদের এভাবে ছেড়ে দিতে চায় নি। তোমাদের মা বাবা তোমাদের সাথে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছে। আই লাভ ইউ মাই বাচ্চারা। মা তোমাদের অনেক ভালোবাসে এখন মনে হচ্ছে যদি তোমাদের দেখতে পেতাম। সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সকল কাজ কে সহজ করবে। ভালো থেকো আর আমাদের কথা ভেবে একদম কাঁদবে না। দুই ভাই-বোন সবসময় হাসি খুশি থাকবে । আর হ্যা মানুষের কাছে কখনো দূর্বলতা দেখাবে না। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ভরসা রেখে সামনে এগিয়ে যাবে। ”
রেহানা খান আরো কিছু বলবে তার আগেই দরজা ভেঙে নেহমাত শেখ আর নওশাদ শিকদার কতোজন লোক কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। রেহানা খান তাড়াতাড়ি করে ক্যামেরা টা একটা ফুলদানির ভেতরে রাখলো যেখান থেকে ড্রয়িংরুম পুরোটা দেখা যায়। রেহানা খান তখন কাউকে চিনতো না। তারা দরজা ভাঙতেই দেখতে পেল মাহমুদ খান রিভলবার তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আর তার পেছনে রেহানা বেগম। তখন মাহমুদ খান বললেন,,,
“সামনে কেউ আগাবে না এলেই শ্যুট করে দেব।”
তখন সবার পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,,
“ওহ তাই নাকি!” বলতে বলতেই সে এগিয়ে আসে। মাহমুদ খান নেহমাত শেখ কে দেখে অবাক হয়ে বলল,,,
“নেহমাত তুমি! তুমি এদের নিয়ে এখানে কেন এসেছো?”
“হ্যা আমিই! ও হচ্ছে আমার বন্ধু নওশাদ শিকদার। তোকে মারতে আমাদের NS বলেছে। এমনিতেও তোকে আমি আগেই শেষ করে দিতাম। কিন্তু পারিনি।
“আমাদের কেন মারতে এসেছো?”
“কারন তোমার বউ মাই ডিয়ার সুইট ভাবি। NS এর অপারেশন করেছে। আর সে NS এর সকল তথ্য পুলিশ কে জানিয়ে দেবে বলেছে। তার ওপর তুই জেনে গেছিস তার ব্যাপারে। এখন তাকে ধরলে আমরাও তো শেষ হয়ে যাবো। তাই তোদের দুজনকে শেষ করতে এসেছি।”
“কি!! আমার বোনের বিয়ে একজন অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তির সাথে হয়েছে।”
“হ্যারে ভাই তাই হয়েছে। তুই যে এখন তোর পরিবার থেকে দুরে সেটাও আমার জন্যই তোর তো খুব সাহস আর বুদ্ধি! তুই পুলিশ হলে আমাকে সহজেই ধরতে পারতি তাই আমাদের মাঝে যেনো দূরত্ব থাকে তাই আনোয়ার খান কে ফুঁসলিয়ে ফাসলিয়ে তোকে বাড়ি ছাড়া করেছি। যাতে আমাকে কাছে থেকে তুই দেখতে না পারিস।”
“কি তোর জন্য আমি পরিবার থাকতেও কেউ নেই আমার আজই তোর শেষ হবে আমার হাতে।”
বলেই মাহমুদ খান গুলি করতে যাবে তার আগেই নওশাদ শিকদার মাহমুদ খানকে দুটো গুলি করে। রেহানা খান এগিয়ে আসলে তাকেও গুলি করে। তারা ওখানেই মারা যায়। ওদের মেরে নেহমাত শেখ আর নওশাদ শিকদার ওদের ঘর সার্চ করে কিন্তু কিছুই পায় না দেখে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়।
__________________
বর্তমানে,,
আরহাম আর আরুহির কে জরিয়ে ধরে বসে আছে কেউ কোন কথা বলছে না। আরুহির চোখ দিয়ে পানি পরছে। আরুহাম নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“অনেক হয়েছে বোনু । তুই আবারো কাদিস তবে সেটা এখন না NS কে শেষ করার পর। আমার বোনের চোখের পানি অনেক মূল্যবান কিন্তু এভাবে অকারণে ওয়েস্ট করছে সেটা কিন্তু আমি ভাবতে পারছি না। তাছাড়া তুই আরুহি মাহমুদ খান তোকে এই কান্না তে একদম মানায় না।
তখন আরুহি চোখ মুছে বলল,,
“ঠিক বলেছো ভাইয়া হুম মানছি মা বাবার জন্য খারাপ লাগছে। কিন্তু মা কি বলেছে মনে নেই কাঁদতে বারন করে দিয়েছে সবসময় হাসিখুশি থাকতে বলেছে আর আরুহি মাহমুদ খান কিনা কাঁদছে সো ব্যাড।”
“এই না হলে আমার আরুহি মাহমুদ খান। আমার বোন অনেক স্ট্রং। এবার চল খেয়ে নে সকাল থেকে তো কিছুই খাস নি। ”
“সবাই চলে গেছে না আছে?”
“জানিনা তবে আমি বলে দিয়েছি যাদের থাকতে ইচ্ছে করবে না। তাদের চলে যেতে আমাদের বলতে হবে না।”
“তোমার শুশুরবাড়ির লোকজন?”
“জানিনা তবে আফরিন কে যেতে বলেছি আর বলেছি আমি তোকে নিয়ে বিকেলে যাবো।”
“ওহ আচ্ছা।”
“আচ্ছা তুই কিন্তু এখনো বলিস নি ভিডিও ক্লিপ ঠিক রাখলেও কথা কেন দিলি না। না মানে তাদের যা কথা হয়েছে কেউ তো কিছুই শুনলো না।”
“এই তোমাকে সি আইডি অফিসার কে বানিয়েছে শুনি। আরে যদি সব কথা দিয়ে দিতাম। তাহলে সবাই জেনে যেতো না রেহানা খান মানে আমার আম্মাজান NS এর অপারেশন করেছে। তখন মিডিয়ায় অন্য ঝড় উঠতো আমাদের বাড়ি পুরো সার্স করতো কোথাও অপারেশন এর ফাইল আছে নাকি। তখন ঝামেলা বেশি হতো। ”
“একটা জিনিস কিন্তু আমার মজা লাগে। NS কে আমরা চিনি। সঠিক সময় আসলেই সব শেষ করে ফেলবো।”
“হুম অনেক হয়েছে এখন আমার ক্ষুদা লাগছে চলো এখন তুমি ব্রেকফাস্ট বানাবে আমার ফ্রেবারিট পাস্তা সাথে নুডুলস ও! নাকি রুটি আর ডিম অমলেট করবে।”
“সকাল এ তো ভালো মা সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে আমি কেন বানাবো।”
“কারন আমি তোমার হাতের রান্না খেতে চাইছি তাই।”
“আমিও তো এখনো খায় নি। তাহলে আমিও বলছি আমার এখন আমার বোনের হাতের বানানো ব্রেকফাস্ট খেতে ইচ্ছে করছে।”
“আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। আমি এখন রান্না করতে যাবো। এখন তোমার বউ হয়েছে তাকে গিয়ে বলো।”
“আমার বউ তো বাপের বাড়ি গেছে মনে হয়। নাহলে বউকে বলা যেত। আর তুই কিরে বিয়ের পরই আমাকে পর করে দিলি। তোর একটা মাত্র ভাই তাও আবার কি ভোলাভালা মাসুম বাচ্চা। সে তোর রান্না করা খাবার খেতে চেয়েছে আর তুই এরকম করছিস। ”
“কয়েকদিন পর বাচ্চার বাবা হবে। সে নাকি বলছে মাসুম বাচ্চা এটা জাতি কখনো মেনে নেবে না।”
“সত্যি আমার বাচ্চা হবে আমি বাচ্চার বাবা হবো । কালকেও তো আয়নায় নিজের বদন খানি দেখলাম মাসুম বাচ্চাই তো লাগলো আমাকে। সে নাকি বাচ্চার বাবা হবে ভাবা যায়।”
“ন্যাকামি একটু বেশি হচ্ছে না। ”
“তা একটু হচ্ছে আর কি! আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে এক কাজ করি আমার ব্রেকফাস্ট তুই বানাবি আর তোর ব্রেকফাস্ট আমি ডান।”
“একদম ডান।”
“ওকে তাহলে নিচে যাওয়া যাক। অনেক ক্ষুদা লেগেছে কিন্তু আরেকটু অপেক্ষা করলে যদি বোনের হাতের রান্না খাওয়া যায় তাহলে অপেক্ষা করতে ক্ষতি কি।”
“অনেক ক্ষুদা লাগলে তো আর খেতে পারবে না। তার থেকে বরং আমার কাছে কয়েকটা চকলেট আছে। সেগুলো এখন খাই রান্না শেষ করে তারপর ভালোভাবে ব্রেকফাস্ট করে নেব।”
“আরে ব্রেকফাস্ট বানাতে খুব বেশি হলে পনেরো মিনিট লাগবে এর জন্য খালি পেটে চকলেট খেতে হবে না।”
“এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিসকাশন না করে নিচে চলো শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করছো। আমি তো চকলেট খাবো তুমি খেলে খাও না খেলে না খাও।”
আরুহি একটা চকলেট এর প্যাকেট ছিঁড়ে খেতে লাগলো আর দরজা খুলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাঁটতে লাগলো। আরুহি জানে ওর কাছ থেকে আরহাম চকলেট নিয়েই ছাড়বে। আরুহি কে চকলেট খেতে দেখেছে আর আরহাম ওখান থেকে নিয়ে খায়নি সেটা করানো হয় নি। এই জন্য আরুহি সবসময় একটা চকলেট এক্সট্রা রাখে । আরহাম ওটা নিয়ে গেলে ও আরেক টা খায়। দেখতে দেখতে আরহাম আরুহির পাশে এসে চলতে লাগলো। আর বলল,,
“বোনু কি হয়েছে বলতো তোর থেকে একটু চকলেট দে না।”
আরুহি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,
“আমি আগেই বলেছিলাম চকলেট খাও। তুমি বললে খাওয়ার দরকার নেই। এখন তাহলে চাচ্ছ কেন ?” তাছাড়া তুমি না একটু আগে বললে তুমি ভোলাভালা মাসুম বাচ্চা। তুমি জানো বাচ্চাদের চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হয়। তাই তোমার খেতে হবে না চকলেট।”
“অন্যের কাছে থেকে একটু চকলেট খেলে কিছুই হয় না। তাছাড়া এটা একটা চকলেট খাওয়ার থেকে অন্যের কাছ থেকে একটু খাওয়া চকলেট অনেক মজা।” ‘
“সরি দিব না সেটা যতোই মজা হোক।”
“আসলে কি বলতো বোনু,,,
বলেই আরহাম আরুহির চকলেট নিয়ে একটা দৌড় দিল। আর আরুহিও চিৎকার করে বলল,,,
“ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না। তবে তুমি ওটা নিলে কি হবে আমার কাছে আরো একটা আছে।”
এটা শুনে আরহাম থেমে গেল। আর দেখলো আরুহি মুচকি হেসে একটা চকলেট খাচ্ছে। ও তাকাতেই ও হাত দিয়ে উঁচু করলো চকলেট টা। আরহাম বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে পাশে থেকে হাঁসির শব্দ পেল। আরহাম আর আরুহির এতক্ষনে খেয়াল হলো ওরা কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে এসে পরেছে। যেটা কিনা ওরা খেয়াল করে নি। ওরা দুজন সোফার দিকে তাকালো ওখানে আফরিন আর আবরার বসে আছে। তারপাশে আজিম আহমেদ এর ওনার স্ত্রী। আর কাউকে ওরা দেখতে পেল না। সবাই চলে গেছে নাকি। ওদের হাসি দেখে আরহাম মাথায় হাত দিল। আর আরুহি ও একটু বোকা হয়ে গেল। আরহাম এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“আরে আফরিন তুমি যাও নি?”
তখন আফরিন বলল,,
“যে কাল রাতে বলল আমার সুখ দুঃখের সাথী হবে। তাকে এই সময় একা ফেলে যাই কি করে। সে যেমন আমার সুখ দুঃখের সাথী আমিও তো তার সুখ দুঃখের সাথী। ”
আরহাম আফরিন এর কথা শুনে মুচকি হাসলো। আরুহি হেসে কিচেনে চলে গেল। আরহাম বলল,,,
“বাকি সবাই কোথায়? নাকি চলে গেছে!”
তখন আজিম আহমেদ বলল,,
“তোরা ওপরে যাওয়ার পর আখি তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে। আনোয়ার খান তোদের ফেস করতে পারবে না বলে চলে গেছেন সাথে আহমদ ভাইয়ারাও রুপা যেতে চাইছিল না তাই আমিই পাঠিয়ে দিয়েছি। আর নাহিয়ান রাও চলে গেছে তোর কথা মতো আফরিন কে
নিয়ে মেতে চাইছিল কিন্তু আফরিন তার দায়িত্ব থেকে যায় নি। তার মনে হয়েছে তার স্বামীর পাশে দাঁড়ানোটা তার উচিত। আবরার একসাথে তোদের ও বাড়িতে নিয়ে যাবে তাই রয়ে গেছে।”
আরহাম কিছু বললো না। আফরিন এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,,,
“তা সবাই খেয়েছে নাকি জামাই খায় নি বলে সে ও খায় নি। ”
তখন আজিম আহমেদ এর স্ত্রী বলল,,
“হুম শুধু আফরিন খায় নি আর সবাই খেয়েছে। আবরার ও বলল সে নাকি খেয়ে এসেছে।”
“ওহ আচ্ছা আফরিন তুমি আপাতত এই চকলেট টা খাও। তোমার জামাই আজকে তার বউ আর বোনের জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে খাওয়াবে। ”
বলেই আরহাম ওখান থেকে চলে গেল। আফরিন মুচকি হেসে চকলেট এ একটা বাইট দিল। আরহাম একটা বাইট খেয়ে গেছে। আফরিন বলল,,
“বিয়ের পরের দিনই স্বামীর হাতে রান্না করা খাবার কয়জনের ভাগ্যে জোটে। আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া এরকম জীবন সঙ্গী হিসেবে আরহাম নামক মানুষটাকে আমার জীবনে পাঠিয়েছেন।”
কিছুক্ষণ পর আরুহি আরহাম এর জন্য বানানো ব্রেকফাস্ট এনে টেবিলে রাখলো। আর আরহাম এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আরহাম এলো। আরহাম এসে আফরিন কে টেবিলে বসালো। আরহাম বলল,,,
“আজ আমি নিজের হাতে আমার বোন আর বুকে খায়িয়ে দেব। আমার বোন তো আমাকে খায়িয়ে দেবে। চাইলে আমার বউ আমাকে খায়িয়ে দিতে পারে। স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়া এটা সুন্নাহ। স্ত্রীর পানি পান করার জায়গায় ও পানি পান করাও সুন্নাত।
স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়া সুন্নাত। স্ত্রীকে খাবার খাইয়ে দিলে তা সদকা হিসেবে কবুল হয়, এবং তার প্রতিদান রয়েছে।
———(আবু দাঊদঃ২৮৬৪)
স্ত্রী গ্লাসের যে স্থানে ঠোঁট রেখে পানি পান করে সেই স্থানে ঠোঠ রেখে পানি পান করা সুন্নাত।
———(মুসলিমঃ৫৭৯)
এ কথা শুনে আফরিন মুচকি হাসলো। আরুহিকে আর আফরিন কে আরহাম খায়িয়ে দিল। আর ওরা আরহাম কে। একটা ছোট পরিবার এ এরকম দৃশ্য দেখতে পাওয়া সত্যিই চমৎকার। ওখানে যারা ওদের দেখছে তারা মুগ্ধ। আবরার কি মনে করে ওদের একটা ভিডিও করলো। আবরার মনে মনে বলল,,,
“আশা..ভালো লাগা..ভালোবাসা অনুভব…ও
অনুভূতি! সবার জীবনের সুখ সবার
চিন্তার মানের উপর নির্ভর করে।
যেমন টা ওদের”
~চলবে,