দখিনা দুয়ারে প্রেমের ছোয়া পর্ব-১৫+১৬

0
2

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ১৫ (❌কপি করা নিষেধ❌)

নবনী চায়ের কাপ নিয়ে রুমে যেতে যেতে ভাবল, কীভাবে চোখের পলকে এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এ বাড়ির মানুষ কে কেমন খুব ভালোভাবে জানা হয়ে গিয়েছে নবনীর। বিহানের সাথেও ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে, দু একদিনের মাঝেই নাকি ও নবনীর সাথে দেখা করবে।

তবে নবনী যেন এক অন্যরকম দোটানায় পড়ে গিয়েছে। মুগ্ধ ছেলেটার সম্পর্কে যা শুনেছে কিছুর সাথেই ওর ব্যক্তিত্ব মিলছে না। যেন আলাদা মায়া জমে যাচ্ছে মানুষটার প্রতি। এই মায়ার বন্ধন ছিড়ে নবনী এত সহজে চলে যেতে পারবে। কোনো উত্তর পায়না সে। ভাবতে ভাবতে রুমে এসে এমন দৃশ্য দেখে নবনীর মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়।
……..

সকাল থেকে মিছিলের কাজ। আর মাত্র চার দিন পরেই ইলেকশন। সারাদিন তাই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে মুগ্ধকে।

“আপনার বিড়াল আমার বিড়ালকে ধ/র্ষণ করছে, এই বিচার না করলে আমি আপনাকে ছাড়ব না।”

রুমে ঢুকে গামার্ত শরীর থেকে শার্ট খুলছিল মুগ্ধ। এত এত জামেলায় বেশ হাপিয়ে উঠেছে সে। তবে নবনীর মুখে এমন কথা শুনে চোখ বাকিয়ে তার দিকে তাকায়। নবনী এখনো রাগী মুখে বসে আছে।

নবনী বৌভাতের পরেরদিন আসার সময় সাথে করে পিকুকে নিয়ে এসেছে। এ বাড়িতে মূগ্ধদেরও একটা ছেলে বিড়াল আছে। নাম বান্টি। পিকুকে প্রথম দেখায় যেন প্রেমে পড়ে যায় ছেলেটা। সারাদিন পিকুর পিছে পিছে ঘুরে। তবে নবনীর জন্য পিকুকে একাই পায় না।

মুগ্ধ হেসে বলে,

“তুমি ওদের ভিতর যা হচ্ছে তা দেখতে যাও কেন? ওটা ওদের জামাই বৌর মধ্যকার রোমান্টিক ব্যাপার সেপার। আমরা খামোখা নাক গুলিয়ে কি করব বলো?”

“জামাই বৌ?”

“আমারা যা, আমাদের বিড়ালদের মধ্যেও তো সেই সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। রাইট?”

নবনী তেড়ে এসে মুগ্ধর শার্টের কলার ধরে তার দিকে ওকে ঘুরায়। মুগ্ধ ভাবে এই মেয়েটা এমন তেজী কেন? মেয়েরা থাকবে শান্ত। একটু নেকাবতী। কথায় কথায় গাল ফুলাবে, আবদার করবে। তা না। এই মেয়ে পুরো লোহার মতো মনোবল দেখাতে আসে।

“আপনি যদি বিচার না করছেন তবে…”

“তবে কি? কি করবে তুমি? একটা বুদ্ধি দেই। তুমি তোমার বিড়ালের প্রতিশোধ আমার উপর দিয়ে নিয়ে নেও। আমি অসহায় পুরুষের মতো মুখ বুজে সব সহ্য করে নিবো। এমনিতেও পুরুষরা আজ সমাজে বেশ অবহেলিত।”

মুগ্ধর কথায় নবনী বেশ ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কলার ছেড়ে মুখ ঘুরিয়ে দাড়ায়। লোকটার মুখে সব উল্টাপল্টা লজিকলেস কথা। মুগ্ধ নবনীকে লজ্জা পেতে দেখে হেসে উঠে। শার্ট খুলে তোয়ালে নিয়ে বাহিরে যেতে যেতে বলে,

“আমারতো আমার বিড়ালকে নিয়ে গর্ব হয়। আমি যা বৌয়ের সাথে করতে পারেনি, ও করে দেখিয়েছে। তোমারও উচিত পিকুকে দেখে কিছু শেখা। ঐ দেখো, কি সুন্দর স্বামীর গা ঘেষে শুয়ে আছে।”

নবনী তাকিয়ে দেখে তার বিড়ালটা আসলেই নির্লজ্জের মতো বান্টির শরীরের সাথে লেখে শুয়ে আছে। একটু পরপর জিহ্বা দিয়ে মুখে একটু চেটেও দিচ্ছে। এসব দেখে নবনী তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে মুগ্ধ হাতটা ধরে একটা হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

“শিখো শিখো। শিখে রাখো। আমাদের বিড়াল যদি আমাদের আগেই বাড়ির সবাইকে গুড নিউজ দিয়ে দেয়, সেটা আমার মতো পুরুষের জন্য অপমান জনক।”

“আপনি একটা খারাপ লোক খুব।”

নবনী রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। মুগ্ধ হাসে। এই মেয়েটা একান্তই তার।
…..

“এত কম দামে মাইয়া বেচি না। আরো দুই লাখ লাগবো।”

পান চিবুতে চিবুতে লাল দাতগুলোর একটা হাসি দিয়ে বলে উঠল মতিসুর। সামনের চেয়ারে এক উচা লম্বা ভদ্রলোক বসে আছে। পড়নে যার সুট বুট। মুখে বড় বড় দাড়ির জন্য চেহারাটা দেখাই যাচ্ছে না। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। এনাকে দেখতে ভদ্র পরিবারের মনে হলেও, তাকে ভদ্রলোক বলা ঠিক না।

ভালো হলে নিশ্চয়ই এই নোংরা এলাকায় আসত নাহ। লোকটা সুটকেসটা মতিসুরের সামনে রেখে বলে,

“যা চেয়েছেন তার থেকে বেশিই আছে। এখন আমার জিনিস আমাকে দেন।”

“তা আর বলতে।”

মতিসুর বাইজি শালার এক মহিলাকে ইশারা দিয়ে কাউকে আনতে বলল। একটু পর মহিলা একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে আসল। বয়স ১২ নাকি ১০ ঠিক আচ করতে পারল না লোকটা। এইটুকু মেয়েদের নানান জায়গা থেকে ধরে এনে ব্যবসা করে মতিসুর? কত জগন্য একটা মানুষ হতে পারেহ। রুহ কেপে উঠে বিহানের।

এই এলাকায় আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক না। আশেপাশের মেয়েগুলো ইশারায় ডাকছে। কি বাজে কাপড়ের অবস্থা। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তার উপর যদি মতিসুর বুঝে যায় এসব ফন্দি, তাহলে আর রক্ষা নেই। বিহান তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে নিয়ে সেখান থেক্র বেরিয়ে যায়। বাহিরে গিয়ে একটা বড় গাড়িতে উঠে। মেয়েটা ভয়ে গুটিশুটি মেরে আছে। বিহান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

“শান্ত হও বোন। আমি তোমার ক্ষতি করব না। তোমাকে শুধু সব সত্যি বলতে হবে।”
……

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চলল। মুগ্ধর কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলছে। আর তাতে সে সব হারিয়ে ফেলবে।

“এমনটাতো হওয়ার কথা না? এমন কেন লাগছে আল্লাহ?”

মুগ্ধ কোনো জবাব পায় না। এদিকে নবনী নিচে সবাইকে কাজে টুকটাক সাহায্য করছে। মুগ্ধ একাই রুমে। তখনই শাওন আসে হঠাৎ কাদতে কাদতে।

“ভাইই….”

মুগ্ধ বিরক্ত নিয়ে শাওনের দিকে তাকায়। ছেলেটা বাচ্চাদের মতো হুট করে কেদেঁ ফেলে কেন সব সময়।

“কি হয়েছে? মেয়েদের মতো কান্না করছিস কেন?”

“আমার একটু কাজে জেলা অফিসের কাছে যাওয়া লাগবে। একটু দিয়ে আসো না।”

“কিই? এই জন্য কাদছিস? তুইকি বাচ্চা নাকি রে?”

“এভাবে বইলো না ভাই। ঐ দিকে যেতে গেলে সেই তালগাছটার নিচ দিয়ে যেতে হবে। মনে নাই ওখানে কি ভুত দেখছিলাম আমি।”

পুরোনো ঘটনা মনে পড়লে মুগ্ধ হাসে। ছোট থাকতে একবার রাত করে শাওন বাসায় ফিরছিল। ঐ তাল গাছটার কাছে আবার এক বসির চাচার বাড়ি। সে রাতের বেলা বাহিরে থাকতে একবার তালগাছ থেকে তাল চুরি করতে উঠছিল।

কয়েকটা তাল নিয়ে নিচে নামতেই দেখে শাওন। তবে শাওন অন্ধকারে মোটাশোটা শরীর দেখে ভাবে নিশ্চয়ই কোনো ভূত। সে ভয়ে “ওহ আল্লাহ গো!” বলে চিৎকার দিয়ে দাড়িয়ে যায়। ঐ বেটাও বুঝে যায়, শাওন তাকে চিনেনি। তাই তালচোর শাওনকে বোকা বানাতে কন্ঠ একটু ভার করে বলে উঠে,

“লুঙ্গি খুলে দৌড় দে। পিছন ফিরে তাকালে শরীর থেকে ক/ল্লা ভাগ করে দিবো।”

শাওনকে আর পায় কে। সে লুঙ্গি খুলে এমন দৌড় দেয় এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য সত্যটা মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ মিলে বের করে, তবে শাওনের বিশ্বাস ওটা ভূত ছিল।

এখনো ঐ বাচ্চাকালের ভূতকে ভয় পেতে দেখে মুগ্ধ হাসে।

“আচ্ছা চল। তোকে দিয়ে আসি।”

শাওন দাড়িয়ে বলে,

“ভাই একটা প্রশ্ন করি?”

“বল।”

“তুমি কি ভাবীর প্রেমে পড়ছ?”

মুগ্ধ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

“মানে?”

“না আসলে ইদানিং তুমি কাজের মাঝেও ভাবনায় পড়ে যাও। প্রেমে পড়লে যা হয় আরকি। ”

মুগ্ধ আর কিছু উত্তর দেয় না। বৌয়ের প্রেমে পড়াতো আর অন্যায় নাহ।

………

এদিকে আজকে রাতেও নে/শা করে বাড়ি ফিরেছে শরীফ। তবে ঢুকেই একদম নবনীর সামনে পড়ে যায়।

আর একদিন এমন সামনে পড়েছিল নবনীর। সেদিন নবনী কি কান্ডটাই না করেছিল। রাতে খেতে দেয়নি শরীফ কে। আরো কত বাহানা। এই দিকে নবনীর দেখাদেখি বাকিদের মনেও যেন একটু সাহস এসেছে। তবে আজ শরীফ হার মানবে না। এই পুচকে মেয়ের কথায়, সে ম\দ ছেড়ে দিবে? কখনোই নাহ।

নবনীও যেন রেডি হয়ে ছিল, কখন এই লোক আসবে। আজ যেন একটা হাড্ডাহাড্ডির লড়াই হবে।

#চলবে …..

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ১৬ (❌কপি করা নিষেধ❌)

শরীফ নে/শাক্ত অবস্থায় রাত করে বাড়ি ফিরেছে। ঢুকার সাথে সাথেই নবনীর সামনে পড়ে যায়। এইটুকু মেয়েটা তাকে চোখ রাঙাচ্ছে। শরীফ কি ভয় পাওয়ার পাত্র নাকি?

সে নবনীকে পাশ কাটিয়ে ঢুলতে ঢুলতে খাবারের টেবিলে গিয়ে বসল।

“ভাত দে। খাইয়া ঘুমামু।”

শাওনের মা চুপ করে দাড়িয়ে আছে। নড়ছে না। শরীফ দেখে আরো উচু গলায় বলে উঠে,

“যাবি, নাকি চুলের মুঠি ধইরা দুইডা লাগামু? যা কইছি।”

“আপনাকে খাবার দিতে পারব না। আমি রুমে গেলাম।”

অবাক চোখে বৌয়ের দিকে তাকায় শরীফ। এত তেজ দেখানোর সাহস পায় কোথায়? এক ম আকার দিয়ে খুব বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে উঠে শরীফ। তেড়ে আসে স্ত্রীর শরীরে হাত তুলতে। তবে এর আগেই নবনী এসে জগের ঢাকনা খুলে, পুরো এক জগ পানি শরীফের মুখে ফিক্কে মারে।

হঠাৎ এমন হওয়ায় শরীফ ও থেমে যায়। আর মুগ্ধর মা মুখে আচল দিয়ে নবনীকে দেখতে থাকে। এই মেয়ের মনে ভয় ঢর কিচ্ছু কি নেই। শরীফ হা করে নবনীর দিকে তাকায়। নবনী পাশের একটা গ্লাসে লেবুর শরবত নিয়ে এসে বলে এটা খান।

“খাবো না আমি। কী করবি তুই? এত সাহস দেখাস।”

“আছে বলেই দেখাচ্ছি। শরবতটা খান বলছি। নেশা অনেকটা কমে যাবে। তারপর আপনার সাথে কথা হবে। নয়ত আপনার খাবার বন্ধ হবে।”

“তুই আরেক বাড়ির মাইয়া আইসা ঠিক করবি কে কি খাইবো, না খাইবো? এত সাহস পাস কই। তোরে আমিই..”

আর কিছু বলার আগেই নবনী বলে উঠে,

“কি করবেন? মারবেন? কাপুরুষদের তো কাজই এটা। বসে বসে বৌয়েরটা খায়, বেকার থাকে। কাজকর্ম করতে পারে না। ফকির একটা।”

“তুই আমারে কাপুরুষ কইলি?”

শরীফের পুরুষত্বে আঘাত হানে কথাটা। সে কাপুরুষ।বৌয়ের টাকায় খায়?

“তোরে কইছে আমি বৌয়ের টাকায় খাই?”

“খানই তো? নাহয় আর কি? এ বাড়িতে আপনার মতো অকর্মার ঢেকি আর কেউ আছে নাকি বলেন তো? আপনার বৌ সারাদিন ঘরের কাজ করে। আপনার ছেলে আমার স্বামীর চামচামি করে। এর বদলে আপনার শশুর আপনাকে দুমুঠো খেতে দেয়। নাহয় নিজে টাকা ইনকাম করার যোগ্যতা আছে আপনার? নেশা করে বাইজিদের নিয়ে রাতটাই কাটাতে পারবেন। আর কিছু না।”

শরীফ ঢুলতে ঢুলতে উত্তর দেয়,

“তুই কিন্তু বেশি বলছিস মেয়ে। এ বাড়ির প্রতিটা ইটায় আমার ভাগ আছে।”

“ভালো কথা। তাহলে ইটা খুলে কামড় দিয়ে খেয়ে খেয়ে পেট ভরেন। আমার শশুরের আর জামাইর টাকায় খেয়ে থাকতে হলে ভদ্রভাবে থাকবেন। নয়ত…”

নবনী আর কিছু বলে না। শরীফকে টেনে শরীফের রুমে নিয়ে যায়। আর বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়।

“না খেয়ে থাকুন। আর আপনার বৌ আর আপনার কাছে যাবে না। আজ থেকে যতদিন নেশা করে বাড়ি ফিরবেন, কেউ আপনাকে খাবারও দিবে না। আপনার সাথে কথাও বলবে না। বেশি জেদ দেখাতে আসলে, শেষে গোয়াল ঘরে গরুর সাথে রাত কাটাতে হবে।”

শরীফ বারবার দরজা ধাক্কা দিয়ে বিশ্রি ভাষায় নবনীকে গালি দিতে থাকে। একটু পর শরীরে ক্লান্তি এসে গেলে দরজার সামনে ঠাস করে পরে অজ্ঞান হয়ে যায়। বাহির থেকেও এই আওয়াজ পাওয়া যায়। শাওনের মা দৌড়ে ভিতর যেতে নিলে নবনী খপ করে হাত ধরে ফেলে।

” না মা। যাবেন না। আপনি সবসময় এত দরদ দেখান দেখেই আজ এই অবস্থা।”

শরীফের স্ত্রী কাদতে কাদতে বলে,

“মারে তুই যা যা করতে বলেছিস করেছি তো। কিন্তু সেও তো আমার স্বামী। আমরা আগের মানুষজন। খোদার পর স্বামীকেই সব মানি। মানুষটা নিচে শুয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

নবনী তাকে জড়িয়ে ধরে। এত ভালোও মানুষ হয়। এসব ভালো মানুষদের জীবনেই সব কষ্ট। নবনী শরীফের স্ত্রীকে শান্ত করে বলে,

“আমি বললাম তো। আমি যে কদিন আছি। আমাকে আমার মতো সব করতে দিন। একটু শক্ত হন। আমি সব ঠিক করে দিবো।”

পাশ থেকে মুগ্ধর মা ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

“যে কদিন আছো মানে? কোথায় যাচ্ছো?”

নবনী হতাশার একটা মুচকি হাসি দেয়। চোখে মুখে বিষন্নতা ফুটে থাকে। তবে সে কোনো উত্তর দেয় না। শাওনের মাকে চেহারে বসিয়ে বলে,

“আপনি আজ অন্য রুমে শুবেন। চাচার কাছে ভুলেও যাবেন না।”
……

বিহান রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মোটামুটি সব প্রমাণ জোগাড় করা শেষ। তবে এগুলো পুলিশকে দিয়ে কোনো কাজ হবে নাকি কে জানে। তবে আগে একবার নবনীকে সব দিতে হবে কালকে।

……

রাত এখন প্রায় বারোটা। মুগ্ধ বিছানার এক পাশে শুয়ে কপালে হাত ভাজ করে রেখে ঘুমাচ্ছে। তবে নবনীর চোখে ঘুম নেই। এত সুন্দর জোসনার রাতে তার ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। বরং ইচ্ছে করছে চায়ের ফ্লাক্সে চা নিয়ে বাহিরে কোথাও এতো রাতে ঘুরে আসুক। মুগ্ধকে একটু একটু করে ডাকতে শুরু করে সে।

“এই উঠুন না। এই। শুনেন একটু।”

মুগ্ধ আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়। নবনীকে দেখে একটু অবাক হয়। নবনী একদম সুন্দর করে সেজেগুজে বসে আছে। একটা গোলাপী রঙের গোল জামা। হাতে আর গলায় কাজ করা। সাথে সাধা একটা ওড়না পেচানো।

“হা করে কি দেখছেন। উঠুন প্লিজ।”

মুগ্ধ চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে।

“কি সমস্যা।”

“চলুননা একটু নদীর পারে ঘুরে আসি। সাথে করে একটু নৌকাতেও উঠব।”

“এখনন? এত রাতে? তাও আবার শীতে। না নাহ পারব না। মাফ চাই। আমারতো বৌ নেই যে ঠান্ডা লাগলে শরীর সুস্থ করে দিবে।”

‘আপনি যাবেন মানে যাবেনই। প্লিজ। একটু চলুন না। একটা আবদার রাখেন”

নবনী চোখ মুখ ফুলিয়ে মুগ্ধর হাত ধরে বারবার টানতে থাকে। শেষে মুগ্ধ এই জেদি মেয়েটার কাছে হার মানে। পাশ থেকে চাদরটা নিয়ে পেচিয়ে একটা হারিকেন হাতে নিয়ে আলো জালায়।

“এটা কেন?”

“নৌকায় উঠবে বললে যে। একটু আগের দিন ভাইব পাওয়া যায় এটায়।”

নবনী আর কিছু বলে না। আগে থেকেই ফ্লাক্সে চা রেডি করা ছিল। ওটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায়। মুগ্ধও পিছনে পিছনে হারিকেন হাতে নিয়ে হাটতে থাকে।

খোলা আকাশের নিচে মেঠোপথ দিয়ে হেটে হেটে নদীর দিকে যেতে থাকে দুজন। আকাশের তারিগুলোও যেন আজ জ্বলজ্বল করছে। শীত আজ রাতে এখন একটু কমমনে হচ্ছে। নীরবতা ভেঙে নবনী বলে উঠে,

“জানেন আমি আগে কোনোদিন রাতে এমন পরিবেশে বের হইনি। শুধু গল্প, উপন্যাসে পড়তাম।”

“তুমিও উপন্যাস পড়ো?”

“হুমম। আপনি পড়েন বুঝি?”

“হ্যা। মাঝে মাঝে আরকি।”

“ভালোই তো। আজকের যুগে এসেও যেসব ছেলেরা গল্প, উপন্যাস পড়ে তারা যথেষ্ট রুচিসম্মত মানুষ।”

কথা বলতে বলতে দুজন নদীর পারে চলে আসে। আলাদা করে এখানে আলো না আনলেও চলতো। রাতের চাদেঁর আলো নদীর পানিতে পড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। ওপাশের গাছগুলোর পাতাতেও সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে জ্বলজ্বল করছে। এই পরিবেশ নিজের চোখে দেখলে মনে হয় আল্লাহ সৃষ্টি কত সুন্দর ! এক অন্য জগৎ মনে হচ্ছে চারদিকটাকে।

এইদিকে মুগ্ধ গ্রামের ছেলে হলেও, রাতে এভাবে একা কখনো নদীর পাশে আসা হয়নি। নবনীর দিকে তাকিয়ে দেখে কি খুশি হয়ে মেয়েটা চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। মুগ্ধর বুকটা মোচর দিয়ে উঠল। এই মেয়েটা এত অল্প সময়ে তার সবটা দখল করে নিয়েছে।

মুগ্ধ কল্পনায় দেখতে পায় আবার কোনো এক রাতে তারা এখসাথে এখানে আসবে। তখন আর তাদের মাঝে এই দূরত্বটা থাকবে না। অনেকটা অধিকারবোধ থেকেই নবনীকে কাছে টেনে নিতে পারবে সে। নবনীও বাধা দিবে না।

“চলো। নৌকায় উঠি।”

মুগ্ধর কথায় সায় দেয় নবনী। নদীর পাশে সারি সারি নৌকা সাজিয়ে রাখা। একটাতে মুগ্ধ উঠে, নবনীর হাত ধরে তাকে উঠিয়ে রশি ছেড়ে দেয়।

“এই এই কী করলেন।”

“ভয় পেও না। এই মাঝিদের আমি চিনি। আর আমিও চালাতে পারি। ”

মুগ্ধ নৌকার ভিতর হারিকেনটা জালিয়ে রেখে নৌকার একদম মাথায় গিয়ে বসে। দুহাতে বইচা নিয়ে বাইতে থাকে। নদীতে স্রোত নেই বললেই চলে। একদম শান্ত নদীটাকে অশান্ত করে তুলে। নবনী ভিতরে বসে ফ্লাক্স থেকে দুটো কাপে চা ঢেলে একটা মুগ্ধকে দেয়। তারপর তার পাশে বসেই রাতের প্রকৃতি উপভোগ করতে থাকে।

এক মূহুর্তের জন্য যেন তারা ভুলে যায়। তাদের সব শর্ত। সব ঝগড়া। মান অভিমান। অথচ একটা ঝড় এসে মূহুর্তেই যে সব লন্ডভন্ড করে দিবে তা সবার অজানা।

#চলবে …..