দখিনা দুয়ারে প্রেমের ছোয়া পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
142

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ২০ (last part) 💜

সময়টা এখন শীতের শেষের দিকে। গাছের পাতা জড়ে গিয়ে নতুন করে উঠছে। বসন্তের হাওয়ায় প্রকৃতিতে এক নতুন সুর। সবকিছু যেন নতুনের ছোয়ায় পুরাতনকে ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।

ভার্সিটির মাঠের এক কোনায় বড় একটা বটগাছ। বিশাল আকৃতির গাছটার নিচে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। তবে কেউ একজন জীবনের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। দেখতে দেখতে দু মাস কেটে গিয়েছে।

“কি রে কি ভাবছিস?”

মেঘলার কথায় নবনীর ঘোর ভাঙে। সে হেসে বলে,

“না। কিছু না।”

“তুই এবার গ্রাম থেকে আসার পর অনেকটা বদলে গিয়েছিস।”

“মানে?”

“হুমম। যেমন কথা বলা কমিয়ে দিয়েছিস। আগের মতো হাসিখুশি থাকিস না। একটু কেমন যেন।”

“না অরকম কিছু না।”

“এই ওনারা কি আমাদের ডাকছে?”

মেঘলার কথায় নবনী অন্যদিকে তাকায়। দূরে দাড়িয়ে কয়েকটা ছেলে মেয়ে তাদের ডাকছে। ভার্সিটির সিনিয়র হবে হয়ত।

“চল ক্লাসে চলে যাই।”

“নারে নবনী। এরা ফাইনাল বর্ষের। না গেলে পরে সমস্যা হবে। চল দেখি কি বলে।”

মেঘলা নবনীকে সাথে নিয়ে ছেলেমেয়েগুলোর সামনে গিয়ে দাড়ায়। নবনীর কেন যেন হঠাৎ বুকটা একটু বেশিই ধরফর করছে। যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলছে।

“নাম কি?”

হাতের আইফোনটা দেখিয়ে শো অফ করতে করতে একটা ছেলে বলে উঠে। তিনজন ছেলে আর দুইজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আর আরেকটা ছেলে ওদিকে ফিরে বাইকে হেলান দিয়ে ফোন চালাচ্ছে। যেন পিছে কি হচ্ছে তা দেখার সময় তার নেই। ফোনের ভিতর বিশ্ব জয় করে ফেলবে।

মেঘলা কাপা কাপা গলায় উত্তর দেয়,

“মেঘলা।”

“তা বৃষ্টি ফেলছ না কেন? গরম লাগে।”

ছেলেটার কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। নবনী বেশ বিরক্ত হয়ে মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে বলে,

“চলতো। ”

“এই মেয়ে। তুমি আবার কি বলছ? সিনিয়রদের সম্মান করতে জানো না নাকি?”

“যারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাদের করতে জানি। যারা যোগ্য নয় তাদের করার প্রয়োজন মনে করি না।”

“আরে বাস! এতো দেখি পুরো কাচা লংকা।”

পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে বলে উঠে। ঐদিকে বাইকে হেলান দিয়ে থাকা ছেলেটা হঠাৎ নড়ে উঠে। এই আওয়াজ, এই কন্ঠ। এটাতো তার খুব পরিচিত। তবে কি মেয়েটা এই ভার্সিটিতেই পড়ে। পেছন ফিরে তাকানোর সাহস পায় না ছেলেটা।

নবনী এইদিকে কাউকে পাত্তা না দিয়ে মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে চলে যায়। একটা ছেলের যেন খুব ইগো হার্ট হয়। সে উঠে কিছু করতে যাবে, তার আগেই পিছন থেকে তার হাত টেনে ধরে বাইকের ছেলেটা।

“তোদের কত করে বলছি এসব বাদ দিতে?”

“আরে একটু মজা করতে চাইছিলাম।”

“ছেড়ে দে মেয়েটাকে। ওর জিদ সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া নেই।”

এবার যেন সবাই কিছুটা অবাক হয়। ববিতা নামের মেয়েটা মুগ্ধর কাছে এসে বলে,

“তুই চিনিস ওকে।”

মুগ্ধ কিছু বলে না। শুধু এক দৃষ্টিতে নবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

“কি হলো বল।”

“এখন না। পরে সব বলছি তোদের। লম্বা ঘটনা। আর এই মেয়েটাকে একটু দেখে রাখিস।”

মুগ্ধ গিয়ে নিজের বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়। ছোট চাচার বাসায় যেতে হবে। আপাদত কিছুদিন এক্সামের জন্য এখানে এসেছিল সে। এক্সাম শেষে চলে যাওয়ার কথা। তবে এখন আর সে যাবে না। গেলে নবনীকে নিয়েই যাবে।

“আমি তোমাকে ঠিকই জয় করে নিবো নবনী। তুমি দেখে নিও।”

মুগ্ধ চলে যায়। ওর ফ্রেন্ডসরা সবাই অবাক হয়। হঠাৎ কি হলো ছেলেটার।
……

নবনী ক্লাস শেষে অন্যমনস্ক হয়ে হোস্টেলের দিকে যাচ্ছে। সবকিছুই কেমন যেন লাগছে তার। সকালে এমন অদ্ভুত অনুভূতি হওয়ার কোনো ব্যাখ্যা যেন তার কাছে নেই। এমন সময় কেউ একজন পেছন থেকে হঠাৎ তাকে টেনে নিয়ে একটা গলিতে ঢুকে যায়।

“আহহ…”

মুখ চেপে ধরায় ভালোভাবে চিল্লিয়ে উঠতে পারে না সে। ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে ফেলে। কপালে কারো ঠোটের স্পর্শ পেয়ে সামনে জনকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে যেই না যেতে ধরবে, তখনই শুনতে পায় সেই চিরচেনা কন্ঠ।

“সবকিছু নতুন করে শুরু করা যায় না?”

নবনী থমকে যায়। তার নিজের সাথে যেন পুরো দুনিয়াটা থেমে গিয়েছে। বুকের ভিতর নিশ্বাস যেন আটকে আছে। নবনী ধীরে ধীরে সামনে তাকায়। মুগ্ধ একটা সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বেশ শুকিয়ে গিয়েছে এই কয়েকদিনে। নবনীর বেশ মায়া লাগল।

“এই অবস্থা কেন আপনার?”

“যেমন রেখে গেছ তেমনই আছি।”

“আপনিই তো সবসময় চাইতেন আমি চলে যাই।”

“সত্যিই আমি চাইতাম?”

নবনী কোনো উত্তর দিতে পারে না। মাঝে মাঝে তার ভিষণ গিলটি ফিল হয়। ঐদিন কেন সে চলে এসেছিল। কেন জোর করে থেকে যায় নি। যেই সময়ে মুগ্ধর সব চাইতে বেশি প্রয়োজন ছিল তার, সে তখনই অভিমান করে চলে এসেছিল।

অভিমান কি ভালোবাসা বাড়ায়? হয়ত বাড়ায়। তবে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় তা হলে সম্পর্কের ইতিও টানা যায়। নবনীর কি হলো কে জানে। হঠাৎ মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠল।

“আপনি কেন একবারও আমাকে আটকালেন না? কেন এই দুই মাসে একবার
ও কল করলেন না।”

মুগ্ধ কিছু বলে না। আস্তে করে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলে,

“সব উত্তর দিবো। চলো আমার সাথে।”

“কোথায়?”

“তোমার শশুর বাড়ি।”

“কিহহ?”

“সবাই এখনো তোমার অপেক্ষা করছে। চলো। তোমার বাসায় আমি কথা বলে নিবো।”

নবনী বেশ ঘাবড়ে যায়। হঠাৎ কিভাবে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। মুগ্ধ নবনীর এক হাত নিয়ে বুকের উপর রেখে বলে,

“সব আমার উপর ছেড়ে দেও। ভরসা করো। আমি আছি না। সব ঠিক করে দিবো।”

নবনী আর কিছু না বলে মুগ্ধকে জড়িয়ে। এখন সবটা শুরু হবে নতুন করে।
…….

দু দিন পর…

মেম্বার বাড়িতে অনেকদিন পর আনন্দ ফিরে এসেছে। যদিও মুগ্ধর বাবা এখনো জেলে। ছাড়া পাবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে একজনের জন্যতো আর সবার জীবন থেমে থাকে না। মুগ্ধর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নার কাজ করতে থাকে। তার ভাগ্যকে সে মেনে নিয়েছে।

এইদিকে শরীফও আজ খুব খুশি। বাড়ির বৌ, যে কি না তার মতো একটা মানুষকে বদলে দিয়েছে সে বাড়ি ফিরবে। খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

নবনী বাড়িতে ঢুকেই সবাইকে সালাম করে। প্রথম যখন এবাড়িতে সে বৌ হয়ে এসেছিল। তখন শুধু তার শরীরটা বাধ্য হয়ে বৌ হওয়ার অভিনয় করত। যেন কোনো শর্ত পূরণ ছাড়া তার আর করার কিছুই নেই। তবে এখন সে সারাজীবনের জন্য সংসার করতে এসেছে। এ বাড়িটা তার।

সবার সাথে খোস গল্পে মেতে সারাদিন কাটিয়ে নবনী রাতের বেলা রুমে ফিরে। আজ যেন একটু অন্যরকম লাগছে সবকিছু।

রুমে ঢুকতেই মুগ্ধ একটা হেচকা টান দিয়ে নবনীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

“হুশশ। কোনো কথা না।”

নবনীকে স্পর্শ করে তাকে খুব কিছে টেনে নেয়। আজ থেকে তাদের মাঝে আর কোনো দূরত্ব থাকবে না।

তারপর… ( বিয়ে করে জেনে নিয়েন। 🐸👍)

#সমাপ্ত