দীর্ঘ রজনী পর্ব-২০+২১

0
455

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২০

ভোরের আলো ফুটেছে অনেক আগেই। স্নিগ্ধ ভোরে জানালার কাঁচ ভেদ করে একফালি রোদ্দুর এসে পড়লো সাজির চোখে মুখে। সেই মিষ্টি রোদ্দুর সাজির কাছে বিরক্তের কারন ব-ই কিছুই না। কপাল কুঁচকে আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুললো সাজি। বালিশের পাশে হাতড়ে ওড়না খোজার ব্যার্থ চেষ্টা চালালো। ওড়না না পাওয়ায় কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে উঠে পড়লো। ওড়না বালিশের পাশেই তো রেখেছিল। তাহলে গেলো কোথায়? বিছানার নিচে খুঁজে ধপাধপ পা ফেলে ওয়াশ রুমে চলে গেল। সকাল সকাল মুড খারাপের জন্য ছোট একটি কারনেই যথেষ্ট ছিলো।

দাঁত ব্রাশ করে মুখে পানির ঝাপটা দিতেই টনক নড়লো। রাতের কথা মনে হতেই শুকনো ঢোক গিললো সাজি।সাদ ভাইকে কি কি বলেছে, কি ভাবে ধমক দিয়েছে সব একে একে চোখের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করলো। ওড়নার চিন্তা মাথা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো এতক্ষণে। ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিজের ভেতরে সাহস সঞ্চার করলো। যা হবে দেখা যাবে। আমিতো আর এমনি এমনি বলিনি। ঘুমের ঘোরে বলেছি সব। ঘুমের ঘোরে মানুষ অনেক কিছুই বলে। এইসব সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। তারউপর আমি ছোট মানুষ। এমন একটু আধটু ভুল হবেই। হ্যা তাইতো! থা*প্প*ড় মারার আগেই স্যরি বলে নিবো।
নিজেকে নিজে শান্তনা দিয়ে আরেকটা ওড়না নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, বেশি করলে ফুপ্পির পেছনে লুকিয়ে পড়বো। এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় পাবো!হু!

আজ শুক্রবার ছুটির দিন। সাদের আজ অফিস না থাকলেও অফিসের কাজ ঠিকই আছে। সকাল ছয়টা থেকে সোফায় বসে ল্যাপটপে প্রয়োজনীয় ই-মেইল আর ফাইল গুলোই চেক করছিলো।

সাজি হেলেদুলে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো। গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে টেবিলে মাথা এলিয়ে স্বভাবসুলভ জোরে জোরে চিল্লিয়ে অনিলা রহমানকে ডাকতে লাগল।

সাজির চিল্লানোতে সাদ হকচকিয়ে গেল। ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে সাজির দিকে একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকালো। সাজিকে এইভাবে কখনো ডাকতে দেখেনি। দেখবেই বা কি করে?তার সামনে এই মেয়ের মুখে বুলিই তো ফোটে না।কি মেয়েরে বাবা। সাত সকালে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রেখেছে।

পুরো বাড়িতে ফুপ্পি শব্দটা বার কয়েক প্রতিধ্বনি হতে লাগলো।

অনিলা রহমান আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো। বাড়িতে থাকলে মাকে এইভাবে ডেকে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে। ফুপ্পির বাড়িতে থাকলে ফুপ্পিকে। এই দুই জায়গায় সাজি তার আবদার খাটায়। তাছাড়া দাদার বাড়ি কিংবা নানার বাড়িতে সাজির রা শব্দ শুনা যায় না।

অনিলা রহমান মৃদু হেসে সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরে। সাজি ছোট বাচ্চাদের মতো লেপ্টে থেকে বলে উঠলো,, তাড়াতাড়ি খেতে দাও ফুপ্পি। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।

অনিলা রহমান আড় চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো।ছেলে তার অবাকাতার চরম সীমান্তে পৌছে গেছে। সাদ হা করে তাকিয়ে আছে। সাজি যে তার মায়ের কাছে এতোটা বাচ্চামো আবদার জুড়ে দেয় তা সাদ জানতো না। সাদের কাছে মনে হচ্ছে সাজি ছোট বাচ্চা।
হুট করে রাতের কথা মনে পড়লো।মূহুর্তে চোখ মুখ শক্ত করে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,, আদরে বা*দ*র হওয়া বাচ্চা।

অনিলা রহমান সাজিকে নাস্তা এনে খেতে দিলো। সাজি পা দুলিয়ে পরোটা চিবোচ্ছে। রেনু কিচেনে কাজ করছে,এইদিকে রাফি পুরো বাড়িতে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে সাজির কাছ থেকে পরোটার টুকরো নিয়ে খাচ্ছে। চাঁদ ঘুমাচ্ছে তাই তার শব্দ নেই। এইদিকে সাজির বিন্দু পরিমান আইডিয়া নেই তার ঠিক পেছনে সোফায় বসা ব্যাক্তি তার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

খাওয়া শেষে টেবিল ছেড়ে উঠে পেছনে ফিরে হকচকিয়ে গেল।ভয়ে বুক দুরুদুরু করতে লাগলো।এই সময় সাদকে মোটেও আশা করেনি। তাছাড়া সাদ যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে বুঝতে দেরী হলোনা তার কপালে শনির দশা ঘুরছে। সাদ ভাই নামক শনির দশা। সাজি ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। উনি এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?কাল রাতে কি বেশি বলে ফেলেছি? না এতো বেশি তো বলিনি। কিন্তু ধ*মক দেওয়া আমার মোটেও উচিত হয়নি। আল্লাহ এই যাত্রায় বাঁ*চিয়ে দাও। পরের যাত্রায় জিবনেও ধমক দিবো না।

সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় ডাকলো,, এইদিকে আয় কথা আছে।

ব্যাস আর কি লাগে। জিবন এইখানেই শে*ষ। ইচ্ছে করছে টমের মতো মাথার উপর ফুলের টব রেখে নিজেকে রিপ ঘোষণা করে দিতে। কিন্তু এই মূহুর্তে ফুলের টব জোগাড় করা কষ্ট সাধ্য হয়ে যাবে।সাজি চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে নিজের প্রিয় ফুপ্পিকে খোঁজার চেষ্টা চালালো। কিন্তু ফলাফল শূন্য!

বুকে হাত দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলো। সাদ ইশারায় সোফা দেখিয়ে বসতে বলে। সাজি গুটিসুটি মে*রে বসে পড়লো।
সাদ কিছু বলবে তার আগে কলিং বেল বেজে উঠলো।

কলিং বেল নয় যেন সাজির ছুটির ঘন্টা বেজেছে। খুশিতে লাফিয়ে উঠার জোগাড়।সাজি উঠতে গেলে সাদ হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।কে না কে এসেছে তা না জেনেই সাজিকে দরজা খুলতে দেওয়া মোটেও উচিত নয়। সাদ উঠে দরজা খুলে দিলো।

সাদের দাদার বাড়ি থেকে তার কাজিনরা এসেছে। সাদ তার দাদার বাড়ির আত্মিয়দের পছন্দ না করলেও তার কাজিন গুলোকে সে বড্ডো বেশি স্নেহ করে। সাদের মতে মা বাবার দো*ষের দা*য়ভার সন্তানরা কেন বহন করবে!মনমালিন্য চাচা,ফুপুদের সাথে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে নয়। সাদ দরজা খুলে সবাইকে ভেতরে আসতে বলে ।

সাদের দাদার বাড়ি থেকে রশনি,জিহান, আজাদ , বিন্দু, আর শেফালী এসেছে। বাড়ির ভেতর ঢুকতেই সবাই হই হই করে উঠলো। সাজি সবার এমন হইচই শুনে থমথমে খেয়ে বসে আছে। তার ঠিক কি রিয়েকশন দেওয়ার কথা সেটাই বুঝতে পারছে না।

অনিলা রহমান হইচই শুনে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো।
অনিলা রহমানকে দেখা মাত্র ছুটে গিয়ে সালাম করলো সবাই। অনিলা খুশি হয়ে সবাইকে একে একে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলায়।

~ এতো দিন পর মনে পড়লো?

অনিলা রহমানের এহেন অভিমানী কথায় রশনি মুখ ফুলিয়ে বললো,, কি করবো মামুনী! কারো ক্লাস ছিল তো কারো পরীক্ষা। এইজন্যই আসতে পারিনি। আজ শুক্রবার হওয়াতে সবাই চলে এলাম। রশনির কথায় আজাদ সম্মতি দিয়ে বললো,, হ্যা মামুনি তা না হলেতো রশনি আপু প্রায় উড়ে চলে আসে।এই বাড়ি তার একটু বেশিই প্রিয় কিনা।
বিন্দু বরাবরের মতই চুপচাপ। চোখের চশমা ঠিক করে মুচকি হাসলো শুধু ।
শেফালী অনিলার গলা জড়িয়ে ধরে আবদারের সুরে বলল,, তোমাকে খুব মিস করি জেঠি।
অনিলা রহমান মৃদু হেসে শেফালির মাথায় পিঠে হাত বুলোয়।
জিহাদ মুখ বেঁকিয়ে বললো,, জেঠিকে মিস করিস নাকি তার হাতের বিরিয়ানি মিস করিস! মি*থ্যুক মেয়ে কোথাকার!

জিহাদের কথায় সবাই হা হা করে হেসে উঠলো। অনিলা রহমান সবাইকে বসতে বলে কিচেনের দিকে ছুটলো। ছেলেমেয়ে গুলো এতো দিন পর এসেছে। খালি মুখে বসিয়ে রাখবে নাকি!
রেনুকে তাড়া দিয়ে সবার জন্য নাস্তা বানাতে বললো।

সাজি পিটপিট করে তাকিয়ে সবাইকে দেখছে। এদের আরো আগেও একবার দেখেছে। তবে নাম গুলো ঠিক মনে নেই। অবশ্য মনে না থাকারই কথা।

সবাই ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসলো। ঠিক তখনই সবার চোখ সাজির দিকে পড়ে। সাজি সবার তাকানোতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। সবার দৃষ্টি কেমন অদ্ভুত হলেও তন্মধ্যে চশমা পরা মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে তাকাচ্ছে।

বিন্দু মুচকি হেসে সাজির সাথে কুশলাদি বিনিময় কর। যদিও আর সবাই সাজিকে দেখে তেমন একটা খুশি হতে পারলো না। যার দরুন কুশলাদি বিনিময়ের চেয়ে তারা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করায় ব্যাস্ত।
শেফালী রশনিকে চিমটি কে*টে সাজির দিকে ইশারা করলো।
এতে রশনি এক ভ্রু উঁচিয়ে কিঞ্চিৎ বিরক্ত প্রকাশ করে। এই মেয়েকে রশনি একটুও পছন্দ করে না। এই মেয়ের জন্যই সাদ একটু বেশিই দরদ দেখায়। বেশি কেয়ার করে, যা রশনির খুব বেশি অপছন্দ।

সাদ এতক্ষণ ফাইল আর ল্যাপটপ নিয়ে ব্যাস্ত। ফাইল গুলো গুছিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে উঠে পড়ে। সাদের সাথে কথা বলার জন্য উদ্যত হয়ে উঠে দাঁড়ালো রশনি।

সাদ রশনিকে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো, তুই কোথায় যাচ্ছিস?

~ কোথায় আবার! তোর সাথে যাচ্ছি। অনেক দিন পর দেখা ভাবলাম গল্প করি।

সাদ নিরেট স্বরে বলল,, গল্প করার জন্য আমার পেছনে পেছনে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। গল্প এইখানে বসেও করা যায়। এইখানে সবার সাথে বস আমি এই গুলো রেখে আসছি।

সাদের কথায় রশনির মুখটা চুপসে গেল। সব সময় সাদ এইভাবেই কথা বলে । একটু হেসে,সুন্দর করে কথা বললে কি হয়?

সাদ গটগট করে হেঁটে রুমে চলে গেল।

রশনি সাদের মেজো ফুফুর বড় মেয়ে, আজাদ ছোট ফুফুর ছেলে। শেফালী, জিহাদ আর বিন্দু ছোট চাচার ছেলে মেয়ে। রশনি ছাড়া বাকি সবাই সাদের চার পাঁচ বছরের ছোট। রশনি আর সাদের বয়সের গ্যাপ একবছর। তাই সাদকে তুই সম্বোধন করে কথা বলে।

সাদ যেতে রশনি মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে পড়লো।নজর ঘুরিয়ে বার কয়েক সাজিকে দেখে মুখ বেঁকিয়ে শেফালির সাথে ফুসুর ফুসুর করে সাজিকে নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করলো।
অন্য দিকে আজাদ আর জিহাদ আলোচনার শীর্ষেও সাজি রয়েছে। আজাদ আর জিহাদ দুইজন সমবয়সী। দুইজনের দৃষ্টি ঘুরেফিরে সাজির দিকে নিবদ্ধ হচ্ছে। যেই দৃষ্টি সাজিকে অস্বস্তিতে ফেলছে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে উঠে যেতে পারছেনা।

সাজি বিন্দুর সাথে টুকটাক কথা বললেও সে ভীষণ পী*ড়ায় আছে। সামনে বসা দুইজোড়া মানুষ যে তাকে নিয়ে আলোচনা করছে তা বুঝতে বাকি নেই। তাদের তাকানো , কথার ভঙ্গি সেটাই ইঙ্গিত করছে বারবার। সাজি ওড়না টেনেটুনে পুনরায় ঠিক করে। বিন্দু সবটা বুঝেও চুপ করে রইলো। তার ইচ্ছা থাকার সত্তেও সবার ছোট হওয়ার দরুন কিছুই বলতে পারছে না। শুধু বারবার সাজির সাথে কথা বলে তাকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে।

সাদ রুম থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। দাঁতে দাঁত চেপে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো।শুরু থেকেই সাজির প্রতি এদের ব্যাবহার দেখছে সাদ। পুরো বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে এদের ছেড়ে উঠে এসেছিল। এখন যা দেখছে বেশিক্ষণ এইভাবে থাকা যাবে না।

সাদ পকেটে দুহাত গুঁজে সাজির পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলল,, চাঁদ ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। কান্না করছে বোধহয়, যা গিয়ে কোলে নে। রেনু কাজ করছে ওকে ডাকিস না। তুই কিছুক্ষণ চাঁদকে সামলা।

সাদের কথা শেষ হতেই তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো সাজি। সাজের গলার স্বর তার ভয়ের কারন হলেও আজ ভয় পেলো না। বরং মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।এতক্ষণে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে একছুটে রেনুর রুমে চলে গেল। তখন থেকে মনে মনে এইটাই চাইছিল। যেন কেউ তাকে ডেকে এইখান থেকে নিয়ে যায়।

সাজি যাওয়ার পরপরই সাদ সাজির জায়গায় বসে পড়ে। কয়েক সেকেন্ড রশনি আর শেফালি তাকিয়ে কপালে আঙ্গুল ঘঁষে।না চাইলেও কিছু কথা বলা আবশ্যক।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২১

সাদের তাকানোর ধরনে রশনি আর শেফালি হকচকিয়ে গেল। দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো।

সাদ সোজা হয়ে বসে রশনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, সাজির সাথে কথা হয়েছে?

সাজির কথা শুনতেই রশনি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো, নাহ হয়নি।আসলে খেয়াল করিনি।

রশনির কথায় সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়।
তাদেরো বিশ্বাস হচ্ছে না রশনির কথা।

সাদ সোফায় হেলান দিয়ে বসে তাচ্ছিল্য করে হাসলো।

রশনি সাদের রিয়েকশন দেখে ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলার কি আছে! দেখলেই গা জ্বলে উঠে রাগ লাগে,যদিও সেই রাগ সাদের সামনে জিবনেও দেখানো যাবে না। একেতো সাদকে ভীষণ ভয় পায়, দ্বিতীয়ত সাদ এমনিতে কথা কম বলে। রাগ দেখাতে গিয়ে ব্যাপার আরো বিগড়ে যাবে।

সাদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে পুনরায় সোজা হয়ে বসলো।রশনিকে উদ্দেশ্য করে শিতল কন্ঠে বললো,, ব্যাপারটা কেমন একটা লাগলো না? তোর সাথে যারা বসে ছিল তারা ওবদি তোর কথায় হকচকিয়ে গেল। তাদেরো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তুই চোখ থেকেও অ*ন্ধ। তোর সামনে গোটা একটা মানুষ বসা ছিল তুই দেখিসনি, খেয়াল করিসনি?লাইক সিরিয়াসলি রশনি?

সাদের কথায় রশনি একেবারে চুপসে গেল।
শেফালী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এইদিকে আমজাদ আর জিহাদ আড় চোখে সাদের ভাব ভঙ্গি লক্ষ্য করছে। বিন্দু সাদের পাশে বসে মনোযোগ দিয়ে সাদের কথা শুনছে। সাদ ভাইয়া মানুষটা মিথ্যা কথা আর মিথ্যা ছলচাতুরি করা মানুষদের মোটেও পছন্দ করে না। তিনি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড একজন মানুষ। বিন্দু সাদকে নিজের আইডল মানে। বিন্দুর মতে সাদ ভাই ভুল বলতেই পারে না।

~ তুই খেয়াল করিসনি কিন্তু ঠিকই তাকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে আলোচনা , স*মা*লোচনা করায় ব্যাস্ত ছিলি। খেয়াল করা থেকে মনে পড়লো, সাজি সালাম দিয়েছিলো। তার উত্তর তো দিয়েছিস তাইনা?

সাদের কথায় শেফালী মাথা নিচু করে ফেললো।সাদ ভাই তাকে সরাসরি কিছু না বললেও তার সাথেইতো রশনি এই নিয়ে কথা বলেছিলো।তার মানে তাকেও বলছে। এই ভেবেই মুখ ভার হলো।

~ জনসম্মুখে কানে কানে কথা বলা ব্যাড ম্যানার্স মধ্যে পড়ে রশনি। তোর সামনে তুই বাদেও আরো পাঁচজন মানুষ ছিল, যারা কিনা তোর ছোট । কিন্তু তুই তাদের সামনে কানাকানি করছিস! এতো বড় হলি রশনি ,আজ ওবদি ম্যানার্স শিখতে পারলি না। আর না পারলি নিজের ছোটদের শেখাতে।

সাদের এহেন কথায় রশনি মাথা নিচু করে ফেললো।

সাদ পুনরায় বলে উঠলো,তার চেয়ে বড় কথা তুই একটা মেয়ের সামনে বসে তাকে নিয়ে আরেকজনের সাথে আলোচনা করছিস। আলোচনা বললে ভুল হবে স*মা*লোচনাই করছিস। সেক্ষেত্রে ভেবে দেখ সামনে বসা মেয়েটার কেমন লাগে। সাজি কোনো বাইরে মেয়ে নয় যে তাকে নিয়ে কানাকানি, আলোচনা, স*মা*লোচনা করলে আমি চুপ করে থাকবো। তোরা যেমন আমার আত্মীয় সেও আমার আত্মীয়। ওকে নিয়ে কেউ বা*জে কথা বললে যেমন আমার রাগ লাগবে, তেমনি তোদের নিয়ে কেউ কোনো বা*জে কথা বললেও আমার খা*রাপ লাগবে, রাগ লাগবে।

~রশনি মাথা নিচু করে মিনমিনে গলায় বলল,, আমি ওকে নিয়ে কিছুই বলিনি।

সাদ ভ্রু কুঁচকে নিরেট স্বরে বলল,, আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না রশনি। কে কি ভাবে কথা বলছে কাকে নিয়ে কথা বলছে কোন নজরে তাকাচ্ছে সবই বুঝতে পারি। তাই সাফাই গাইতে হবে না।

সাদ টেনে নিঃশ্বাস নিলো অতঃপর কোমলমতি গলায় বলল,,বেড়াতে এসেছিস হেসে,খেলে, আনন্দে সময় কা*টা। ভেতরগত তিক্ততা দিয়ে না ভালো থাকা যায়, না ভালো সময় কাটানো যায়। তোদের মতো সজিও এই বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। আমি যতটুকু জানি ওর সাথে তোদের কোনো প্রকার রেষারেষি নেই।তেমন দেখা হয় না তাহলে রেষারেষি থাকবে কেন?
সাজি চঞ্চল মেয়ে , মিশতে পছন্দ করে। কেউ ওর দিকে তাকিয়ে হাসলেও তাকে আপন ভেবে নেয়। মিশে দেখ সময় ভালো যাবে।

রশনি সাদের কথায় ভেতরে ভেতরে রেগে ফে*টে পড়লেও সামনে মাথা নেড়ে সায় জানায়।

~ যা তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করবো।

বিন্দু পাশ থেকে বলে উঠলো,, ভাইয়া তুমি এখনো না খেয়ে আছো?

সাদ মুচকি হেসে বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, হুম। অফিসের কাজ করছিলাম তাই এখনো ওবদি খাওয়া হয়নি। কিন্তু তোর চোখে চশমা কেন বুড়ি?

বিন্দু মৃদু হেসে চশমা ঠিক করে বললো,, দূরের জিনিস ঠাওর করতে পারিনা ভাইয়া। যদিও সেটা এতো ইম্পর্ট্যান্ট না,তাও ডাক্তার চশমা ধরিয়ে দিলো।

বিন্দুর কথায় সাদ নিঃশব্দে হেসে বললো,, ডাক্তার ঠিক কাজ করেছে। এখন যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। সব ভাই-বোন একসাথে ডাইনিংএ বসবো।

রশনি আর শেফালি ধপাধপ পা ফেলে গেস্ট রুমে চলে গেলো,বিন্দুও তাদের পেছন পেছন ছুটলো ।

কিন্তু আজাদ আর জিহাদকে যেতে দিলো না সাদ। তারা উঠে দাড়াতেই সাদ বলে উঠলো,,

~তোরা কোথায় যাচ্ছিস? তোদের সাথে কথা এখনো শেষ হয়নি । বস!

সাদের এমন কথায় জিহাদ আজাদের হাত চেপে ধরলো। না জানি সাদ ভাই আবার কোন বিষয় নিয়ে পেছনে পড়ে।আজাদ সোফায় বসে পড়লো।তার সাথে জিহাদও বসলো

সাদ দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর গলায় বলল,, মেয়ের দিকে এমন ভাবে তাকাও যাতে তাদের অস্তিত্ব না লাগে। এমন ব্যবহার করো যাতে তারা ইনসিকিউর ফিল না করে। ওকে!!

আজাদ না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো,, কি নিয়ে কথা বলছেন ভাইয়া? ঠিক বুঝলাম না।

সাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,না বোঝার মতো কিছুতো বলিনি আজাদ! তোরা দুজন যেই ভাবে সাজির দিকে তাকাচ্ছিলি সেটা দেখেই বলছি। আমি ছেলে তাই ছেলেদের দৃষ্টি ভঙ্গি বুঝতে দেরী হয় না। কোন ছেলে কোন মেয়ের দিকে কোন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সেটা একপলক দেখেই বলে দিতে পারি। তোদের এই দৃষ্টিভঙ্গির কারনে একটা মেয়ে কতোটা অস্বস্তিতে পড়ে জানিস তোরা? দৃষ্টি সংযত কর দুজনে। হয় তাকানোর দরকার নেই, নয়তো এমন ভাবে তাকা যেন আমার চোখে সেই তাকানো ভুল না লাগে। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?

~ স্যরি ভাইয়া! আসলে,,

সাদ আজাদকে থামিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,স্যরি বলতে হবে না। তার বদলে কিছু কথা বলি যা সব সময় মনে রাখবি।”
~একটা মেয়ের কাছে সেই পুরুষ উত্তম যে মেয়েদের সম্মান করে, এবং সম্মান রক্ষা করে। একজন পুরুষ হিসেবে নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে একজন নারী অন্য পুরুষ দ্বারা প্রস্তুত অবস্থা পড়লে সে তোমার কাছে সাহায্য চাইতে আসে। একজন নারীর দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকাও যাতে সে তোমার দৃষ্টিতে অপ্রস্তুত না হয়ে পড়ে, আর না অস্বস্তি বোধ করে। একজন পুরুষের জন্য সব চেয়ে গৌরবের বিষয় তখনই হয় যখন সে কোনো মেয়ের জন্য ভরসার যোগ্য হয়ে ওঠে।

সুতরাং ভক্ষক না হয়ে রক্ষক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমি জানি আমার ভাইয়েরা অবশ্যই সেই চেষ্টা করবে। কি তাইতো?

আজাদ আর জিহাদ এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে সাদের কথা শুনছিলো। সাদ ভাই ঠিকই বলেছে। ভক্ষক না হয়ে রক্ষক হতে হবে।

দুইজন সাদের কথায় মুচকি হেসে বলল,, হ্যা ভাইয়া। আমরা চেষ্টা করবো।

সাদ মুচকি হেসে বলল,, মনে রাখতে হবে সম্মান, শ্রদ্ধা বাধ্য হয়ে নয় বরং সেটা প্রতিটা নারীর প্রাপ্য।

——-

~সেজুতির ভাইয়ের ছেলেকে তুই মে*রে*ছিস সাদ?

অনিলা রহমানের কথায় সাদ থমকে দাঁড়ালো।

ছেলের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে আছে অনিলা।

সাদ স্বভাবিক ভঙ্গিতে বললো,, আমি কেনো মা*রতে যাবো?

অনিলার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। চিন্তিত গলায় বলল,, তাহলে কে মে*রে*ছে! আমিতো ভেবেছিলাম তুই করেছিস এইসব।

সাদ পকেটে হাত গুঁজে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,, আমি কেন মা*রবো, আমার এতো সময় নেই। আমার লোকেরা মে*রেছে। চিন্তা করোনা শুধু ভে*ঙ্গেছে। একেবারে পুঁ*তে ফেলেনি যে এইটাও তার ভাগ্যে।

অনিলা ছেলের যাওয়ার পানে হা করে তাকিয়ে আছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। )