গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩০(১ম খন্ড)
প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে কাটানো দিন গুলো যেন চোখের পলকে পার হয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটাও যেন দৌড়ে চলছে,ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা উল্টে যেতেও দেরি হচ্ছে না। পাতাঝরা বসন্তে শেষে, গ্রীষ্মের খরতাপ শুরু হলো, গ্ৰীষ্মের সেই দাবদাহ শেষে তৃষ্ণার্ত প্রকৃতিতে রোমাঞ্চকর বার্তা নিয়ে এলো বর্ষা। আজ বর্ষা ঋতুর প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝিরঝির বাতাস আর এক পশলা বৃষ্টি।
শহরতলীতে এই বৃষ্টি অনেকের জন্য সমস্যার কারন হলেও প্রেমিকদের জন্য প্রণয় বর্ষন বলে খ্যাত। কেউ কেউ প্রেমিকার হাতে হাত রেখে এই ঝির ঝির বৃষ্টি স্পর্ষ করছে ,তো কেউ ভেজা গালে লেপ্টে থাকা চুল আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছে।আবার কেউ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে টং দোকানের ছাউনি তলে আশ্রয় নিয়েছে। চোখে চোখে কথা আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতেও ভুলছে না। এই এক পশলা বৃষ্টিতে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকলো সাদ। সবাই তার প্রিয়তমার সাথে বৃষ্টি বিলাস করতে ব্যাস্ত হলেও সাদ তার উদ্বিগ্ন চোখ জোড়া ঘুরিয়ে তার প্রিয়তমাকে খুঁজতে ব্যাস্ত।
সাজি সুস্থ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর জুবায়ের সাজিকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়ে দেয়। এর পর থেকে সাজির ভার্সিটিতে যাওয়া আসা শুরু। প্রতিদিন সাজিকে নেওয়ার জন্য ড্রাইভার এলেও ,আজ সাদ নিজেই এসেছে সাজির জন্যে। প্রকৃতির চাহিদা বলে কথা!বছরের প্রথম বৃষ্টি প্রিয়তমাকে নিয়ে না ভিজলেই নয়।
ক্লাস থেকে বের হয়ে চারপাশটা দেখে নিলো সাজি। শীতল বাতাস আর বৃষ্টির ঝাপটায় মুখটা আধ ভেজা হয়ে রইলো। হাত বাড়িয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির জল হাতে পুরে নিয়ে উপরের দিকে ছুঁড়ল। খানিকটা জল মুখের উপর পড়তেই খিল খিল করে হেসে উঠলো সাজিঁ। চঞ্চল চোখ জোড়া বন্ধ করে বৃষ্টির জলে মুখ ভেজানোর চেষ্টা চালালো। পিছলে যাওয়ার ভয়ে বার বার পিছিয়ে এলো। যার দরুন মুখ ভেজানো হয়ে উঠলো না।
সাজি থেকে কিছুটা দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে একজন সাজির কার্যকলাপ দেখছে। সাজির প্রতিটা কাজে ঠোঁট জোড়া বার বার প্রসারিত করছে সে। বৃষ্টির জলে মুখ না ভেজাতে পারার ব্যর্থতায় মুখ ফুলালো সাজি। বৃষ্টির উপর অভিমানে হাতজোড় গুটিয়ে নিলো।
সাজির এহেন কান্ডে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা পকেটে হাত গুজে সাজির দিকে এগিয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে সাজির দিকে বাড়িয়ে দিল। হাত ভর্তি পানি দেখে সেই হাতের মালিককে দেখার জন্য তাকাতেই চমকে উঠলো সাজি।ভয়ে জড়সড় হয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালো। ওড়নার কোনা হাতে গুজে মিনমিনে গলায় বলল,, স্যার আপনি এইখানে?
সাজির ভয়ে জড়সড় হওয়া মুখায়বব দেখে মুচকি হাসলো রিসাদ।
আবরার রিসাদ ভার্সিটির প্রভাষক । গম্ভীর প্রকৃতির হওয়াতে সবাই বেশ ভয় পায়। সাজিও সেই সবার মধ্যে একজন।
রিসাদ সাজির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল।ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই মেয়েটাকে দেখে আসছে। চঞ্চল, প্রাণবন্ত মেয়েটা, যদিও সামনে গেলে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। সবাই-তো তাকে ভয় পায় তবে মেয়েটা বাকি সবার থেকে একটু আলাদা।যার পরিপ্রেক্ষিতে রিসাদ সাজি নামের মেয়েটিকে মনে রেখেছে। শুধু মনে রেখেছে বললে ভুল হবে, মনের পাশাপাশি নজরেও রেখেছে।
রিসাদ পকেটে দুহাত গুঁজে নিরেট স্বরে বলল,, হ্যা আমি। এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। দেখলাম আমার একটা স্টুডেন্ট বৃষ্টির পানি ছুঁতে না পারায় মন খারাপ করছে। তাই ভাবলাম একটু হেল্প করি।
সাজি নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,, না মানে আসলে স্যার,আ’ম স্যরি।
রিসাদ সাজির দিকে তাকালো। কোমর সমান চুল গুলো পনিটেল করে রেখেছে সাজি।কিছু অবাধ্য চুল সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে চোখে মুখে আঁ*চ*ড়ে পড়ছে।সেই অবাধ্য চুল গুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে লেপ্টে গেছে গালে। রিসাদের হাত জোড়া ক্ষনে ক্ষনে বেসামাল হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বার বার মন বলছে লেপ্টে থাকা অবাধ্য চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে।মন মস্তিষ্কের বাকবিতন্ডায় চোখ সরিয়ে নিল রিসাদ।হাত মুঠ করে নিজেকে ধাতস্থ করলো। লম্বা শ্বাস টেনে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। পরে ক্লাস এটেন্ড করতে পারবে না।
বাধ্য ছাত্রীর মতো মাথা নাড়ল সাজিঁ। রিসাদ এক পলক সাজির দিকে তাকিয়ে হনহন করে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। রিসাদ আজ প্রথম নিজেকে নিজের কাছে বোকা মানুষ বলে দাবি করেছে। তা না হলে যার দিকে বৃষ্টির পানি এগিয়ে দিলো তাকেই আবার ভিজতে বারন করে এলো! রিসাদ কপালে আঙ্গুল ঘঁষতে ঘঁষতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, তুই বড়ই বেকুব রিসাদ।
রিসাদের যাওর পানে তাকালো সাজি। আজ স্যারকে দেখছে নাকি অন্য কাউকে দেখছে ঠিক বুঝলো না সাজি। রিসাদ স্যার কখনোই কারো সাথে পড়ালেখার ব্যাপার ছাড়া ঠিক করে কথা বলেনা।আজ স্যারের রূপ ধরে অন্য কেউ এলোনা তো? সন্দিহান গলায় নিজেকে নিজে সুধালো সাজি,, রিসাদ স্যার কি অসুস্থ ?
সাজি যখন ভাবনার জগতে ডু*বে বুঁদ হয়ে গেছে তখনই সাদ সাজির শিয়রে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,, উঁহু!! Risaad is in love with you.
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,
নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩০(২য় খন্ড)
সাদের মুখে এমন কথা শুনে ভাবনার জগৎ থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সাজি। ঘাবড়ে গিয়ে সাদের দিকে তাকালো। সাদের মুখায়বব স্বভাবিক। না বিষ্ময় প্রকাশ পাচ্ছে, না রাগ প্রকাশ পাচ্ছে।সাজি মনে মনে ভয়ে কুঁ*ক*ড়ে গেলো। হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। স্যারকে দেখে সাদ ভাই ভুল বুঝলো নাতো? সাজির মনে মনে এই প্রশ্ন সাত-আটবার আওড়ালো।
সাদ সাজির মুখোমুখি দাঁড়ালো।বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে সাজির মুখের উপর লেপ্টে থাকা ভেজা চুল গুলো আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে দিলো। সাজি ভীতু চোখে সাদের দিকে তাকালো। নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে।সব দোষ ওই বেটা স্যারের। তার জন্যই আমার ছোট্ট হৃদয়ের পানি শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি হচ্ছে।
সাদ যেন সাজির মনের কথা বুঝে ফেললো।সাদ সাজির হাত ধরে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে যেতে বললো,, পছন্দ-ও করবে,ভালোবাসতেও শুরু করবে এইটাতে খারাপের কিছু নেই। শুধু তুই না বাসলেই হবে।
সাদের কথা শুনে সাজি মুখ বাঁকিয়ে বললো,, আমার এতো বাসাবাসির দরকার নেই। এমনিতেই ভালো আছি। রইলো স্যারের কথা, আপনার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে। স্যার আর পছন্দ? পড়ালেখা ছাড়া দু’কথা কারো সাথে বলে না। গম্ভীর মুখে থাকে সারাক্ষণ,হাসি বোধহয় বাপের জন্মেও কেউ দেখেনি। নেহাত ভার্সিটির ভেতরে আছি দেখে আন্দাজ করে স্টুডেন্ট বলেছে ,তা না হলে আমাকে চেনা তো দুরের কথা নাম ওবদি জানে না।
~ অবশ্যই চেনে। তার চোখ বলছে সে তোকে খুব ভালো করেই চেনে।
সাজি চোখ ছোট ছোট করে বললো,, বাইদা ওয়ে আপনি ইনসিকিউর ফিল করছেন নাতো?
সাদ সাজির কথা শুনে মুচকি হেসে বলল,, ইনসিকিউর ফিল করবো কেন? তাছাড়া তোকে ভালোবেসে উ*ল্টিয়ে ফেললেও তোর মো*টা মাথায় সেটা ঢুকবেনা। যেখানে এতো বছর আমাকে সামনে দেখেও বুঝিসনি সেখানে কয়েকঘণ্টায় স্যারের ভালোবাসা কি করে বুঝবি?
সাজি ঠোঁট ফুলিয়ে সাদের হাত টেনে ধরে বললো,, একেতো আপনার ভেতর কোনো প্রকার ইনসিকিউর ফিল দেখছি না। তারউপর এতোবড় অপ*মান ?
সাজির কথা শুনে মুচকি হাসলো সাদ। একপাক্ষিক ভালোবাসা দেখে ইনসিকিউর ফিল করার কিছুই দেখছে না সাদ। এই নিরাপত্তাহীনতা-ই সন্দেহ সৃষ্টি করে। যা তৃতীয় পক্ষের আগমন নিশ্চিত করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।সাদ জানে সাজি তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। যার ফলে ইনসিকিউর শব্দটা সাদের কাছে ভিত্তিহীন বলে মনে হয়।সাদ মৃদু হেসে বলল, অ*পমান না অভিযোগ তা নাহয় পরে বলবো। এখন দেখ বাইরে কিসুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।
সাজি সাদের কথা অনুসরণ করে বাইরে তাকালো। বছরের প্রথম বৃষ্টি তাও মুষলধারে হচ্ছে। সাজি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে সাদের দিকে ছু*ড়ে মা*র*লো। সাদ হকচকিয়ে যেতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো সাজি।
সাদে চোখে বিষ্ময় কে*টে মুগ্ধতা ছেয়ে গেলো।সাজির হাসির শব্দ যেন সমস্ত হৃদয় জুড়ে খনে খনে ঝংকার তুলছে। সাদ সাজির হাতটা শক্ত করে ধরে আদুরে গলায় সুধালো,, ভিজবি সাজঁবাতি?
সাদের এহেন কথায় থমকালো সাজি। বোবা চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।
সাদ সাজির হাত ধরে বাইরে পা বাড়ায়। সাজি সাদের পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। বৃষ্টির জল দুজন ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেছে। আশেপাশে কেউ না থাকলেও দোতলা আর তিনতলা ভবনের দাঁড়িয়ে থাকা কিছু স্টুডেন্ট সাদ আর সাজিকে দেখে হই হই করে উঠলো। সাদ সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাজির হাত আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলো। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলে এই বুঝি পালিয়ে যাবে। অতঃপর দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়ির দিকে গেল।
সাদ গাড়ির দরজা খুলে সাজিকে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে গন্তব্যহীন পথে ছুটে চললো।
নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামালো সাদ। এই রাস্তায় গাড়ির দেখা পাওয়াটা প্রায় স্বপ্নের মতো। ঘন্টায় একটা গাড়ি পার হয় কিনা সন্দেহ। অনেক সময় ঘন্টা পেরোয় কিন্তু গাড়ি পেরোয় না।
সাদ গাড়ি থেকে নেমে সাজির পাশের দরজা খুলে দিল। সাজি সাদের হাত ধরে নেমে ,চঞ্চলা চোখ দুটো দিয়ে আশপাশ অবলোকন করায় ব্যাস্ত হলেও সাদ সাজিতে ব্যাস্ত।সাজি হাত ছেড়ে সামনে যেতেই সাজির চুল খুলে দিলো সাদ। সাজি অবাক চোখে তাকায়, যা দেখে সাদ মুচকি হেসে বললো,, এইবার মনে হচ্ছে বৃষ্টি কন্যা।
সাদের এহেন কথায় লজ্জায় কুঁ*ক*ড়ে গেলো সাজি। গালের দুপাশ লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে ততক্ষণে।
সাদ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, ভ’য়ং’ক’র অ*সুখ বাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য বৃষ্টিতে ভেজা তুমিকি কম ছিলে? এখন আবার লজ্জায় রাঙা হয়ে খু’ন করতে চাইছো!
মেয়ে তুমি বড্ডো বেশি জ্বা*লা*চ্ছো।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,
নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩১
বর্ষা মৌসুমে গ্ৰাম আর শহরের বেড়ে উঠা মানুষ গুলোর মধ্যকার পার্থক্য বেশি দেখা যায়। গ্ৰামে সকলেই বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের কাজ করে থাকে। বাচ্চারা দল বেঁধে বৃষ্টির পানিতে ভিজে শৈশবের মজা নেয় । একঝাঁক কিশোর কিশোরী বৈশাখী ঝড় মাথায় নিয়ে আম কুড়াতে নামে।
সেখানে শহুরে জীবন ভিন্ন ধারার অতিবাহিত হয়। বৃষ্টি নিয়ে তাদের যত রোমান্টিক মূহূর্ত রচনা করা হলেও বৃষ্টির সাথে তাদের সম্পর্ক দূর দূরান্তের। বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে অসুস্থ হয়ে যাবে বলে অনেকেই বৃষ্টিতে ভেজে না। আবার কেউ কেউ আছে দু’ফোটা বৃষ্টির জল মাথায় পড়লে জ্বর বাঁধিয়ে বসে। বৃষ্টিতে ভিজলে তো কথাই নেই। সপ্তাহখানেক জ্বর আর বিছানায় সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের।
সাদ সেই শহুরে মানুষের মধ্যে একজন হলেও সাজি ভিন্ন ধারার। বৃষ্টিতে ভেজার আজ নিয়ে চতুর্থতম দিন হলো।এই চার দিনে সাদকে জ্বর কাবু করে ফেলেছে। নাম মাত্র বিছানা থেকে উঠেছে সাদ। সেখানে সাজি নিয়ম করে ভার্সিটির সব কটা ক্লাস এটেন্ড করেছে। সাজির কাছে বৃষ্টি মানে ভালোবাসা। ছোট থেকেই লুকিয়ে চুরিয়ে বৃষ্টির জল গায়ে মাখে সাজি। বৃষ্টির সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বৃষ্টির জল তাকে কাবু করতে পারেনি। অন্যথায় সাদের অবস্থা সাজির বিপরীত। জ্বরে চোখ মুখ লাল হয়ে বিছানায় প*রে আছে সাদ।
এই চারদিনে অনিলা রহমান হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। ছেলে তার হাতে পায়ে বড় হয়েছে । তা না হলে এখনো সেই ছোট্ট সাদ-ই আছে। যে জ্বর হলে মায়ের আঁচল ধরে ফিকরে কেঁদে দুনিয়ার যত লুকানো কথা সব উগলে দেয়। আজও তার ভিন্ন কিছু হলো না। মায়ের কোলে মাথা দিয়ে ফিকরে কেঁদে উঠলো সাদ। এতো বড় ছেলের কান্নায় হা হুতাশ করে উঠলো অনিলা। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো। কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললো,, কি হয়েছে বাবা ?বেশি খারাপ লাগছে? রায়হানকে কল দিয়ে আসতে বলি? রায়হান এলে না হয় হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
মায়ের কথা শুনে হাত চেপে ধরলো সাদ। জ্বরে কম্পিত গলায় বলল,, সাজিকে ডেকে দাও মা। মেয়েটা বড্ডো বেশি জ্বা*লাচ্ছে। ছেলের কথায় মুচকি হাসলো অনিলা। আজ ওবদি সাজি জানে না সাদের অসুখের কথা। সাদ নিজেই বলতে বারন করেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো? ছেলের মাথায় কি চলছে ভেবে পায় না অনিলা। এই চারদিনে সাজিকে নিয়ে কতোশত কথা বলেছে তার হিসাব নেই। এমন কোনো কথা নেই যা সাজিকে নিয়ে সাদ বলেনি। সাজিকে পছন্দ করা থেকে শুরু করে আজ ওবদি সব কিছুই এই জ্বরের ঘোরে উগলে দিয়েছে সাদ। অনিলা দুঃখ প্রকাশ করবে, না খুশি হবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
সাদকে বিছানায় শুইয়ে উঠে পড়লো অনিলা। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে প্রথমে সেঁজুতিকে কল দিলো। সেঁজুতির সাথে কথা বলে জানতে পারলো সাজি ভার্সিটিতে গেছে। অনিলা সেঁজুতিকে সাজির কথা বলাতে সেঁজুতি অমত পোষন করলো না। বরং অনুমতি সহ দুইদিন রেখে দিতে বললো। সেঁজুতির কথা শুনে মুচকি হেসে ফোন কা*টলো অনিলা।
আজ ভার্সিটিতে শুধু দুটো ক্লাস ছিলো। একটা ক্লাস শেষ হতেই বেরিয়ে পড়লো সাজি। পরের ক্লাসটা রিসাদ স্যার নিবে। এই চারদিনে রিসাদ স্যারের হাবভাব ভালো লাগছেনা সাজির কাছে। পুরো ক্লাস জুড়ে সাজিকে একটু বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে। যা সবার চোখে পড়ছে। বিষয়টা নিয়ে ক্লাসে সবাই কানাঘুষা শুরু করছে। অন্যদিন হলে সব শুনে চুপ করে থাকতো সাজি। কিন্তু আজ সাজির মন ভীষণ খারাপ। সেই দিনের পর থেকে একটা বারের জন্যেও সাদ ভাইকে দেখতে পায়নি সাজি।কল দিয়ে খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা , উল্টো যতবার কল দিয়েছে ততবারই ফোন কেটে দিয়েছে সাদ। অভিমানে বুকটা ভারি হলো সাজির। ইতিমধ্যে চোখ জোড়া ভিজে উঠলো।
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে চোখ মুছলো সাজি। মোবাইল বের করে ড্রাইভারে নাম্বার কল দিবে তার আগেই মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। ভিজে উঠা চোখ জোড়ার ঝাঁপসা দৃষ্টি মোবাইল স্ক্রীনে রাখলো। গোটা গোটা অক্ষরে ” ফুপ্পি” লেখা নামটা দেখেই চমকালো সাজি। মনের মধ্যে হাজরো প্রশ্নের জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ফুপ্পির নাম্বার থেকে সাদ ভাই কল দেয়নি তো? নাকি ফুপ্পিকে সাদ ভাই সব বলে দিয়েছে? ভয়ে ভয়ে পুরো শরীর শিউরে উঠলো সাজির। সাদের সাথে সম্পর্কটা অন্য দিকে মোড় নেওয়ার পর থেকে ফুপ্পি শব্দটাকে ভয় পেতে শুরু করেছে সাজি। সব কিছু জানার পর ফুপ্পির সাথে সম্পর্কটা ঠিক আগের মতো থাকবে কিনা সেটা নিয়েই বেশি ভয় হচ্ছে সাজির।
কল একবার কেটে দ্বিতীয়বার বেজে উঠলো। সাজি ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো।
অনিলা রহমান কোমলমতি গলায় হ্যালো বলতেই সাজি নিম্নস্বরে সালাম দিলো। অনিলা রহমান সাজির গলার স্বর শুনেই বুঝতে পারে সাজি ভালো নেই। অন্য দিনের মতো গলায় সেই চঞ্চল ভাবটা নেই। কেমন জানি মিইয়ে গেছে। এর কারনটা যে তার একমাত্র ছেলে তা বুঝতে বাকি রইলো না।
অনিলা রহমান সালামের উত্তর দিয়ে বললো,, সাজিঁ মা! ফুপ্পি তোর জন্য গাড়ি পাঠিয়েছি। ক্লাস শেষে সোজা আমাদের বাড়িতে চলে আসবি। আর হ্যা! তোর মাকে নিয়ে কোনো টেনশন করবি না, আমি বলে দিয়েছি তোর কথা। ঠিক আছে?
হঠাৎ করে ফুপ্পি তার বাড়ি যেতে বলছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠলো না সাজি। কি এমন কাজ হতে পারে? সাজির চিন্তা ভাবনার মাঝে অনিলা রহমান পুনরায় বলে উঠলো,, কি হলো কথা বলছিস না কেন মা?
অনিলার কথায় ধ্যাণ ভাঙ্গলো সাজির। তড়িগড়ি করে বলে উঠল,, ঠিক আছে ফুপ্পি। আমার ক্লাস শেষ গাড়ি এলেই আমি বেরিয়ে পড়বো।
~ এতক্ষণে হয়তো গাড়ি পৌঁছে গেছে। তুই বরং গেইটের কাছে গিয়ে দাড়া। সাবধানে আসিস। আল্লাহ হাফেজ।
সাজিঁ অনিলাকে সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিল। সাজি অন্য মনস্ক হয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেইটের কাছে যেতে লাগলো । সাদের প্রতি ভীষণ অভিমান হলো। একটা বার কল দিলে কি হতো? কল বাদ একটা মেসেজ তো দিতে পারতো? বুক চি*রে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো। টে*নে নিঃশ্বাস নিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালালো সাজি,ইতিমধ্যে গলা ব্যাথ্যাও শুরু গেছে।কারো সহানুভূতি পূর্ণ হাত মাথায় রাখলে হয়তো কেঁদে ভাসাবে।
যতক্ষনে সাজি গেইটের সামনে গিয়ে পৌঁছায় ততক্ষণে সাদের গাড়িটাও এসে থামে। ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই সাজি গিয়ে বসে পড়ে। সাদের গাড়ির ব্যাকসিটে শুধু একবার বসেছিল সাজি। তাও সাদের সাথে,সেই দিন ঘুমের ঘোরে সাদ তাকে ভালোবাসার কথা কনফেস করে দেয়।গা শিরশির করা অনূভুতি হয়েছিল তখন। হৃৎপিণ্ড আন্দোলিত হয়ে বলেছিলো,সাজি সাদ ভাই নামক মানুষটা তোকে সত্যি ভালোবাসে”। অন্য দিকে মস্তিষ্ক জুড়ে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, যা শুনেছে হয়তো তা মনের ভুল।
অবশেষে সাজির মন জয়ী হয়েছে। মনের কথাই ঠিক। সাদ ভাই নামক মানুষটা সত্যি তাকে ভালোবাসে।সেই কথা ভেবে মুচকি হাসলো সাজি।
সময় যে কতো দ্রুত অতিবাহিত হয়! মনে হচ্ছে এই তো সেই দিনকার ঘটনা। কিন্তু সেই ঘটনার প্রায় দেড় বছর হতে চলল। জানালার কাঁচ নামিয়ে চোখ বুজে নিলো সাজি। বাতাসের ঝাপটায় চুল গুলো এলোমেলো হতে লাগলো। সেই দিকে সাজির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সাজি এখন তার কল্পনার জগত নিয়ে মত্ত। অভিযোগ, অভিমান ভরা কল্পনা জগৎ ।যা শুধুই সাদময়।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,