#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩৩
গভীর রজনী মুষলধারে বৃষ্টির পরে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে। দক্ষিণা বাতাস বইছে।আকাশে থালার মতো পূর্ণীমার চাঁদ উঠেছে। ধরাধাঁমে চাঁদের জোছনা ঠিকরে পড়ছে। দূর থেকে মাঝেমাঝে গাড়ির শব্দ ভেসে আসছে। অরিনের প্রচণ্ড শীত শীত করছে। চেঞ্জ করার পরে চয়নিকা ওর খাবার দিয়ে গিয়েছিল। এই বাড়ির উপযুক্ত বড় বউ সে। সর্বদা সকলের উপরে শীতল দৃষ্টি তাঁর। অরিন শুধু অবাক হয়ে দেখে বড় জায়ের কর্মকাণ্ড। এমনও মানুষ হয়? মন্ত্রীর প্রাণপ্রিয় স্ত্রী তবুও চেহারা বা পোশাকে অতি সাধারণত একজন গৃহকর্ত্রী। যে স্বামী আর তাঁর পুরো পরিবারকে নিজের ভেবে আগলে রাখতে পটু। অরিন এই অতি সাধারণ গৃহবধুর ন্যায় স্বামী সংসার নিয়ে বাকী জীবন পার করতে চাই। দরকার নেই বিখ্যাত হওয়ার জন্য লড়াই করার। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর চোখ ভার হয়ে আসলো। ঘুম নেমে আসলো নেত্রজোড়াই।আরাফাত চেঞ্জ করে বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসে আছে।একবারের জন্যও অরিনের সঙ্গে কথা বলেনি। অরিন সাহস পাইনি কথা বলার। লোকটা রেগে আছে। অরিনের ভয় লাগে লোকটার রাগী চোখদুটোকে। কখন রেগে যায় আবার কখন হাঁসে বলা মুশকিল। আরাফাতের চোখে ঘুম নেই। ঘন্টা তিনেক থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে। হৃদয় পুড়ছে,জ্বলছে সেই যন্ত্রণা চোখ থেকে অশ্রু হয়ে ঝরছে। মনের সঙ্গে নিরব যুদ্ধ হয়েছে,সেখানে ও হেরেছে। মাঝেমাঝে হেরে গিয়েও সুখ পাওয়া যায়। আরাফাত হুট করে উঠে গেলো। রুমে জিরো পাওয়ারের লাল সবুজ বাল্ব জ্বলছে। অরিন কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘন নিশ্বাসের শব্দ জানান দিচ্ছে মেয়েটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দৃশ্যটা আরাফাতের সহ্য হলো না। একজন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুখের রাজ্যে ভেসে যাবে আরেকজন সারারাত জেগে তাঁকে নিয়ে চিন্তা করবে এটাতো হতে দেওয়া যায় না। আরাফাত সময় নষ্ট করলো না হুড়মুড় করে অরিনের কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লো। অরিনকে ঝাপটে ধরে ওর গলাই মুখ ডুবালো।রুমে এসি চলছে। হঠাৎ আক্রান্তে অরিন চমকে উঠেছে। ওর শরীর কাঁপছে। ভেবেছিল চিৎকার করবে কিন্তু আরাফাত ফিসফিস করে বলল,
> চিৎকার করো না। বাড়িতে লোকজন আছে।
অরিণের চোখ বড়বড় হয়ে গেছে। ঘুমের মধ্যে দেখা কোনো স্বপ্ন ভেবে নড়াচড়া করে উঠতে গেলো কিন্তু পারলো না। আরাফাতকে সারানো ওর সাধ্যের বাইরে। অরিন চুপ করে গেলো। কোনো তরল বস্তু ওর কাধে ফোঁটাই ফোঁটাই পড়ছে। ভাবলো লোকটা কি কাঁদছে?। অরিন দেখার জন্য উতল হলো। হাত বের করতে চাইলো আরাফাত ও হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বলল,
> নড়াচড়া করলে কিন্তু খুন করবো। চুপচাপ থাকতে পারছো না? দূরে গেলে কষ্ট পাও আবার কাছে এলে অস্বস্তিতে গুড়িয়ে যাও। কি চাও তুমি নিজেও জানো না।
আরাফাতের কথা শুনে অরিনের তীব্র প্রতিবাদ,
> আমি জানি আমি কি চাই। আপনি ধমক ছাড়া কথা বলতে পারেন না? আমি চমকে যায়।
> তোমার কি মনে হয় আরাফাত বউয়ের পিছে পিছে ঘুরবে আর সিনেমার বস্তাপচা ডাইলগ ঝাড়বে? ওসব হবে না। আমার সঙ্গে থাকার অভ্যাস করে ফেলো।
আরাফাত ফিসফিস করে কথা বলছে। ওর নিশ্বাস অরিনের কাধের সঙ্গে বাড়ি খাচ্ছে। অরিনের লোমকূপ শিহরিত হচ্ছে। এভাবে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। অরিন বিনীতভাবে বলল,
> শুনছেন আমি উঠবো।অনেকক্ষণ এভাবে আছি তো কেমন ব্যাথা করছে পিঠে।
আরাফাতের ওষ্ঠে হাসি। কিছু বুঝতে পেরে বলল,
> একদিন ব্যাথা হলে কিছু হবে না। আমি আছি তো ঠিক করে দিব। চুপচাপ ঘুমাও কথা বলবে না।
অরিন কথা বলতে পারলো না। চোখ বন্ধ করলো । মন মস্তিষ্কে নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। অরিন ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তো তবে আরাফাত পারলো না। অরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে সারারাত না ঘুমিয়ে কেটে গেলো।
☆☆☆☆☆☆☆☆
কিছুক্ষণ আগে বিদেশি মেয়েটার সঙ্গে রোহানের বিয়ে হয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেল। সব কিছু আবির নিজ দ্বায়ীত্বে পালন করেছে। শরীর মোটামুটি দুর্বল তবে জ্বর নেই। রোহানের মুখটা দেখার মতো হয়েছে। প্রথমে রাজী ছিল না। মেয়েটা ওদের অন্তরঙ্গ মূহুর্ত্তের কিছু ভিডিও আর ছবি আবেদা বেগমকে দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে উনি রোহানের গালে স্বজোরে কয়েকা থাপ্পড় দিয়ে উকিল আর কাজী ডেকেছেন। বিয়ে দিয়ে এই পাপ উনি মোচন করতে চান। বিয়ের আগে প্রেম হারাম তারপর আবার এসব আজেবাজে কাজকর্ম। উনি ভালো রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। ছেলেমেয়েদের অঘাত স্বাধীনতা দিয়ে ভুল করেছেন বুঝতে পারছেন। কিন্তু সেই ভূলটা উনি আর করবেন না।মেয়েদের বলে দিলেন পছন্দ থাকলে বলে দিতে উন নিজ দায়িত্বে প্রস্তাব পাঠাবেন। তোড়জোড় করে রোহানের গার্লফ্রেন্ডের পরিবারকে খবর দেওয়া হলো। মেয়েটার মা বাবা আলাদা থাকে। এক কথায় ডিভোর্সী। মেয়ের মায়ের কোনো আপত্তি নেই। তাই উনি ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে দিবেন। রোহান চুপচাপ বসে আছে। আবেদা মিজা ভয়ানক চটে আছেন। উনি ছেলেকে বলেছেন যদি এই বিয়েটা না করে তবে এই বাড়ির রাস্তা ওর জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। উনি সুইসাইড করবেন । রোহান দুষ্ট হলেও মাকে ও খুব ভালোবাসে। শেষপর্যন্ত থমথমে মুখে বিয়ের জন্য রাজি হতে হলো। তিনবোন মিলে সুন্দর করে শাড়ি পরেছে। টকটকে লাল শাড়ি। আবির সুন্দর করে বাসরঘর সাজিয়ে রোহানের কানে ফিসফিস করে বলল,
> শালাবাবু বাসর সাজানোর জন্য কোনো টাকা দিতে হবে না। দুলাভাইয়ের পক্ষ থেকে তোমার জন্য উপহার।
রোহান কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
> সব কিছু আপনার জন্য হয়েছে।। ভিলেনের মতো আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিলেন। ওই ফালতু মেয়েটাকে আপনি নিয়ে এসেছেন তাইনা? ও আমার বাড়ির ঠিকানা কিভাবে পেলো সব আপনি দিয়েছেন।।
> আরে রাগ কেনো করছো? গুছিয়ে সংসার করো। আড়ালে আবড়ালে লুকিয়ে চুমু টুমু খেতে হবে না। লাইসেন্স করে দিলাম। বিন্দাস থাকবা। আমাদের মতো।
আবির দুষ্ট করে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। রোহানের মনে হলো গায়ে আগুন লেগে গেছে। বিয়ের জন্য পাঞ্জাবী পরেছিল। সোজা বাথরুমে গিয়ে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পড়লো। এক ঘন্টা পরে বের হলো লাল লাল চোখ নিয়ে। আবেদা মির্জার রেগে ছিলেন কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না। উনার মাথায় আন্যরকম চিন্তা ঘুরছে। হৈমন্তীর বিয়ের সময় উনি থাকতে পারেননি তাই এই সুযোগে আবির আর হৈমন্তীর দ্বিতীয়বার বিয়ে পড়িয়ে দিবেন ভাবছেন। বাড়ির সবাই নেচে উঠলো। কিন্তু হৈমন্তী একবারে না বলে দিলো। আবিরের বেশ পছন্দ হয়েছে প্রস্তাবটা। বউ কতদিন দূরে ছিল পরপর ফিলিং হচ্ছে আবার যদি বিয়েটা হয় তাহলে আর তেমন কিছু হবে না। ও আনন্দে এখানকার কয়েকজন বন্ধুে ডেকে নিলো। আবেদা মির্জা বাড়িতে ফোন দিয়ে বললেন। কথা হলো বিয়ে পড়ানোর সময় ভিডিও কলে সবটা দেখানো হবে। হৈমন্তী রেগেমেগে রুমে গিয়ে বসে থাকলো এদের পাগলামি দেখে। আবেদা মির্জা মুখ ভার করে আবিরের কাছে এসে বললেন,
> ও আমার কতটা প্রিয় তুমি তো জানো? বিয়েটা চোখে দেখতে পারিনি। এই সুযোগে দেখবো ভাবলাম।
> ফুফি আম্মা চিন্তা করবেন না। আমি রাজি করিয়ে ফেলবো।
আবির কথাটা বলে চুপচাপ রুমে এসে হাজির হলো। হৈমন্তী সোফায় পা তুলে বসে ছিল আবির হুড়মুড় করে ওর কোলের উপরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। হৈমন্তীর হাতটা টেনে নিজের মাথার উপরে রেখে বলল,
> তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> আমি আপনার বউ আবার কেনো বিয়ে করবো? লোকে শুনলে কি বলবে?
আবির হৈমন্তীর মুখে হাত রেখে বলল,
> সামান্য লোকের কথায় তুমি আমাদের খুশীটাকে নষ্ট করবে? লোকে তো কতকিছু বলে সব কি আমাদের ভালোর জন্য বলে? ফুপি খুব আশা করে আছেন। তাছাড়া এবার প্রমিজ করছি বাসর থেকে পালাবো না। আমার আফসোসটা থেকে যাবে হৈমী একটা সুযোগ দাও না প্লিজ। আহারে আমার বউ,আমার ঘর সব ছেড়ে পালাতে হলো। সেই শোকে আমি এখনো মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে যায়। দেখছো জ্বর ঠিক হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে ওটার জন্যই।
আবির একদমে কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তীর কপালে ভাজ পড়লো। আবিরের চুল টেনে নিয়ে বলল,
> আজেবাজে কথাবার্তা বলার জন্য আপনাকে নোবেল দেওয়া উচিৎ। ফুপিকে বলুন আমি রাজি।
হৈমন্তীর বলতে দেরি হলো কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে জুলি আর নায়রার প্রবেশ করতে দেরী হলো না। আবির দ্রুত উঠে বসলো। ওরা দ্রুত এসে হৈমন্তীর হাত ধরে তুলে নিয়ে বলল,
> কাজী আসতে এক ঘন্টা লেট। লামিমাকে সাজানো শেষ এবার হৈমন্তীর পালা।
হৈমন্তীর হতভম্ব হয়ে বলল,
> শাড়িতো পরেছি আবার কি? আমাকে দেখতে কি খারাপ লাগছে?
>কোনো কথা হবে না। শুনছি না।
ওরা জোরকরে নিয়ে গেলো হৈমন্তীকে। যাওয়ার আগে আবিরের জন্য পাঞ্জাবী রেখে গেলো। আবির ভাবতেও পারেনি এমনটা হতে পারে। সেবার বিয়ে করেছিল একপ্রকার বাধ্য হয়ে। আনন্দের থেকে কষ্ট ছিল বেশি কিন্তু এবার মনের মধ্যে লাড্ডু ফুঁটছে। কখন না জানি খুশীটা উপচে পড়ে তখন লজ্জায় পড়তে হবে। এক ঘন্টা পরে,রোহানের বিয়ের পর আবির আর হৈমন্তীর বিয়ে হয়ে গেলো। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি। হৈমন্তীর জন্য হঠাৎ বেনারসি কেনা যায়নি তাই আবেদা মির্জার বিয়ের শাড়ি ছিল যদিও সেটা অনেক আগের কিন্তু একদম নতুন। লাল টুকটুকে বেনারসি। হৈমন্তীকে একদম নতুন বউয়ের মতোই হাজানো হয়েছে। নায়রা কোনো কমতি রাখতে চাইনা। আবিরের বন্ধুরা মিলে বাসর ঘর সাজিয়ে ফেলল। হৈমন্তী লজ্জায় মাথা নিচু করেই আছে। আবির ঘনঘন উঁকি ঝুঁকি কাঁটছে বউকে দেখার জন্য। ভিডিও কলে আরাফাত রাজীব চয়নিকা ওরা সবাই বিয়েটা দেখলো। সবাই খুশী। আবির মায়ের কাছে বিয়ের অনুমতিও নিয়েছে। একদম প্রথমবারের মতো। কষ্টের পরে সত্যিই সুখ আসে। ধৈর্য্য ধরলে ফল পাওয়া যায়। দুদিন আগেও ভেবেছিল দুজন কতটা দুরে।
☆☆☆☆☆☆
রোহানকে রুমে যেতে কেউ বাধা না দিলেও আবিরকে ঠিকই বাঁধা দেওয়া হলো। ওর উৎসাহ বেশি ছিল। সকলেই বুঝতে পারলো ওর বেশ কিছু টাকা থেকে পাওয়া যাবে। সেই হিসেবে ওর থেকে বিশ হাজার টাকা চাওয়া হলো কিন্তু আবির পঞ্চাশ হাজার টাকা বন্ধুদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
> টাকার চাইতে আমার কাছে সময়ের দাম বেশি। ভেতরে আমার বউটা একা একা বসে আছে কষ্ট পাচ্ছে। তোরা আছিস টাকা নিয়ে? আমি আজ ভীষণ খুশি। এর চাইতে বেশি চাইলেও দিতে পারতাম।
জুলি ঠোঁট উল্টে ফেলল। বন্ধুরা খুব করে আফসোস করলো ততক্ষণে আবির ভেতরে গিয়ে ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। ফুলের সৌরভ চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। দারুণ করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু পালঙ্কে হৈমন্তী নেই। বর আসলে বউ বিছানা থেকে নেমে এসে সালাম করবে তানা ঘরে বউ নেই? আবির বাথরুম বেলকনি সব জায়গাই খোঁজ করলো কোথাও নেই। মনে মনে ভাবলো ওরা হৈমন্তীকে আটকে রেখে আবার মজা নিচ্ছে না তো? আবির রাগ করে বের হতে গিয়ে হঠাৎ পালঙ্কের নিচের দিকে নজর গেলো। শাড়ির আচল দেখা যাচ্ছে। বুঝতে ওর সময় লাগলো না। দ্রুত হামু হয়ে খাটের নিচে যেতেই হৈমন্তীর মুখোমুখি পড়ে গেলো। আবির ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,
> বাহ বউ, নোবেল তো এবার তোমাকে দেওয়া উচিত। বাসর ঘরে বরের ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে আছো। বের হও এখুনি।
হৈমন্তী দাঁত বের করে সালাম দিয়ে বলল,
> নায়রা আপু শিখিয়ে দিয়েছে। আমার কোনো দোষ নেই। তাছাড়া কিসের ভয়? আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি না।
> তাহলে বের হও। অন্ধকার লাগছে বউটাকে ভালো দেখতে পাচ্ছি না। গম্ভীর আবির এহসানের মাথা আউলে গেছে বউয়ের চিন্তাই। বের হও।
হৈমন্তীর হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতেই আবির ওর কোলের উপরে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ওর মাথায় যন্ত্রণা করছে। সারাদিন প্রচুর ঝামেলা হয়েছে। হৈমন্তী বাস্ত হয়ে বলল,
> বিছানায় চলুন। ফ্লোরে ঠাণ্ডা প্রচুর।
> তো এতক্ষণ ছিলে কেনো? তিন মিনিট নষ্ট করেছো এর জন্য তোমার কি শাস্তি হওয়া উচিত বলো?
> মজা করেছি। শাস্তি কিসের? পালিয়ে তো যায়নি।
আবিরের মন খারাপ হলো হৈমন্তীর কথা শুনে। মুখ ভার করে বলল,
> ফুপাকে পাচ্ছে না। উনাকে না পেলে টেনশন যাচ্ছে না। উনি স্থানীয় ছোটখাট সন্ত্রাস ছিলেন। এখান লেভেলধারী হয়েছেন। হাতে বেশ ক্ষমতা আছে। কি হবে বুঝতে পারছি না। হঠাৎ এটাক করে বসবে। আরাফাত ভাইকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
হৈমন্তীর বুকটা কেঁপে উঠলো। হৈমন্তী ভয় পাচ্ছে দেখে আবির দ্রুত উঠে বসলো। ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় চলে আসলো।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।
#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩৪
নিস্তব্ধ কক্ষে হৈমন্তী ঘুমে বিভোর। দেয়াল ঘড়িতে সময় ভোর চারটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ফোনের শব্দে আবিরের ঘুম ভেঙে গেলো। এলাম সেট করা ছিল বন্ধ করা হয়নি। আবির চোখ বন্ধ করেই বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে চোখের সামনে ধরলো। হৈমন্তী ওর বুকের কাছে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আবির সামান্য আলোতে ওকে ভালো করে দেখে নিলো।।মেয়েটার শাড়ির অর্ধেক অংশ ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে বাকীটা পিঠের নিচে। হৈমন্তীর চোখে আলো পড়তেই ওর নড়াচড়া করে আবিরের দিকে আরও এগিয়ে আসলো। চোখমুখ কুচকে ফেলল। ঘুমের মধ্যে মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে। আবির মলিন হেসে হৈমন্তীর কপালে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো।তারপর ফোনটা পাশে রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু ঘুম আসছে না। হৈমন্তীকে ছেড়ে ও উঠে বসলো। কফি খেতে মন চাইছে। কিছু কাজ ছিল করতে হবে। ভাবলো কফি খেতে খেতে কাজটা করলে মন্দ হবে না। কথাগুলো ভেবে ও দ্রুত বিছানা থেকে নেমে পড়লো। কম্বলটা হৈমন্তীর গায়ে টেনে দিয়ে শাড়িটা ওর বালিশের পাশে গুছিয়ে রাখলো। মেয়েটা শাড়ি সামলাতে পারেনা আবার পরার জন্য লাফালাফি করে। আবির আগে কখনও হৈমন্তীকে এতোটা মুগ্ধ হয়ে দেখেনি। হঠাৎ কি জানি হয়েছে মেয়েটা যেটাই পরে বা করে আবির মুগ্ধ হয়ে যায়। লক্ষণ বেশি ভালো না। এমনে চললে লোকে বউ পাগল উপাধি দিতে সময় নিবে না। কথাগুলো ভেবে ও চুপচাপ রুম থেকে বের হলো। ডাইনিং রুমে আবছা আলোতে সোফার দিকে তাঁকিয়ে আবিরের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। রোহান লামিমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটাও সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। কি দৃশ্য?রোহান গতকাল বিয়ে করবে না বলে কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দিতেছিল। কিন্তু ঘর ছেড়ে এরা বাইরে কি করছে ও বুঝতে পারলো না। চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে তিন কাফ ফফি তৈরী করে নিলো। এক কাফ কফি মগে ঢেলে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে বেরিয়ে আসলো। সোফায় বসে আয়েশ করে কফির মগে মুখ ঢুবিয়ে রোহান বলে ডাক দিলো। প্রথম ডাকে সাড়াশব্দ না দিলেও দ্বিতীয় ডাকে দুজনই হুড়মুড় করে উঠে বসলো। রোহান বুকে হাত রেখে বলল,
>কি কি হয়েছে?
আবিরের বেশ মজা লাগলো। তবুও হাসলো না। কোনোক্রমে হাসি চাপিয়ে বলল,
> বাসর ঘর পছন্দ হয়নি? বললেই পারতে নতুন করে সাজাতাম।
রোহান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> অভ্যাস নেই।
লামিমা হতভম্ব হয়ে রোহানকে দেখছে। আবির ভ্রু নাচিয়ে বলল,
>বিয়ের আগে বাসরের অভ্যাস সবার থাকে না গাঁধা। বিয়ের পরে হয়। তুমি কি আগেই অভ্যাস করতে চেয়েছিলে?
রোহান বিরক্তি নিয়ে বলল,
> আপনি শুধু নেগেটিভ চিন্তা করেন কেনো? ওসব ফুলফলের মধ্যে আমার ঘুম আসছিল না। মেজাজ খারাপ লাগছিল। বাসর টাসর আমার লাগবে না।
> ও আচ্ছা। যাইহোক লামিমা তুমি এখানে কেনো?
লামিমা হাফ ইংরেজি হাফ বাংলাতে উত্তর দিলো,
> ওকে ছাড়া একা ঘুম আসছিল না। এখানে বসতেই ও আমার পায়ের উপরে ঘুমিয়ে গেলো উঠতে দিলো না।
> বাহ দারুণ। এভাবে ওর পেছনে পেছনে চিপকে থাকলেই হবে। আজেবাজে দিকে নজর দিয়ে সময় নষ্ট করবে না বুঝলে?
> একদম।
আবির ফ্লাক্সের কফিটা লামিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
> তোমাদের জন্য।
আবির উত্তরের আশা করলো না দ্রুত রুমে ফিরে আসলো। ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো সোফায়। এখানে এসেছে দুদিন গত হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। ওর ক্লিনিক খোলা হয়েছে। আপাতত রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। কাছের কিছু বন্ধু আর সিনিয়রদের অনুরোধ করে টাকা দিয়ে রোগী দেখার ব্যবস্থা করেছে। যতদিন এখানে থাকবে আরাফাত সবটা সামলে নিবে। তবুও ওর কিছু কাজ থেকেই যায়। এখানে থাকা অবস্থায় ক্লিনিক থেকে ইনকামের আশা ও ছেড়ে দিয়েছে। যা হবে বাইরের ডাক্তারদের জন্য লেগে যাবে। আবিরের অনেক স্বপ্ন ছিল ক্লিনিকটা নিয়ে। যতদিন সাধ্য থাকবে তাঁর উন্নতির জন্য প্রাণপনে কাজ করবে। আবিরের কাজ শেষ করতে করতে সকাল হয়ে গেলো। চারদিকে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। হৈমন্তী আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলো। চোখ বন্ধ করে হামি ছেড়ে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো আবির মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। হৈমন্তী ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
> শুপ্রভাত ডাক্তার।
আবির ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল,
> আর প্রভাত উঠলে তো দুপুরে। বর একা একা বসে আছে। বাসর শেষ না হতেই অবহেলা শুরু করলে? প্রয়োজন শেষ?
হৈমন্তী নাকমুখ কুচকে বলল,
> আবারও আজেবাজে কথা বলছেন? আপনি প্রচণ্ড রকমের খারাপ মানুষ। ডাকলেন না কেনো?
> ভাবলাম বউটা আমার ঘুমিয়ে আছে নাইবা বিরক্ত করি। ফ্রেস হয়ে আসো আমি বাইরে থেকে আসছি।
আবির ল্যাপটপ বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লো। হৈমন্তী ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখলো আবির ওর খাবার নিয়ে হাজির। ফলের জুস আর বিখ্যাত ওমলেট। সবাই ঘুমিয়ে আছে। এরা সকালে তেমন ঘুম থেকে ওঠে না। এখনো এক ঘন্টা পরে উঠবে। আবির খাবার রেখে বলল,
> আমি এইটুকুই পারি। শিখেছিলাম কোনরকম। ইনশাআল্লাহ সময় পেলে সব শিখে ফেলবো।
হৈমন্তী আবিরের পাশে বসতে বসতে বলল,
> আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেনো? আমি নিজেই যেতাম। তাছাড়া রান্না মেয়েদের কাজ,ছেলেদের না।
> কোথায় লেখা আছে রান্না মেয়েদের কাজ? অনেক ছেলে আছে রান্না করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাছাড়া এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আর্ট। বাঁচতে হলে দরকার হয়। এতদিন গুরুত্বটা বুঝতে পারিনি। এখন বুঝতে পারছি বউকে পটানোর জন্য এটার গুরুত্ব কতখানি।
> আমি এমনিতেই পটে আছি নতুন করে পটানোর কিছু দেখছি না। আচ্ছা আপনাদের বংশের ডাকাতের ইতিহাসটা কি আপনার জানা আছে?
> এটা তোমার ভাইয়ের বানোয়াট কথা। আমাদের বংশে কেউ ডাকাত ছিল না। আমার বাবার দাদা ছিলেন জমিদার। এতো এতো জমি আছে এসব উনার থেকেই প্রাপ্ত। তবে আমি ডাকাতি শুরু করবো ভাবছি।
হৈমন্তী চোখ বড়বড় করে বিস্মিত হয়ে বলল,
> কেনো?
> মনের আনন্দের জন্য। তোমার উপরেই ডাকাতিটা করবো,যেকোন সময়। দ্রুত খাওয়া শেষ করো আমার কাজ আছে। তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ যাওয়া ঠিক হবে না। ইনশাআল্লাহ বাড়িতে থাকো আগামীকাল যাবো।
আবির অপেক্ষা করলো না। হৈমন্তীকে খাওয়ানোর পরে বেরিয়ে পড়লো। নিকটবর্তী একটা ইউনিভার্সিটি আছে হৈমন্তীর এডমিশনের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে দরকারি কাগজপত্র সাবমিট করার আছে। তাছাড়া তিনমাস এখানে ওর থাকা হবে না। ফিরতে হবে। নিজের বিপদটা ও আরাফাতের উপরে চাপিয়ে দিতে পারবে না। যা করবে ও নিজেই করবে। হৈমন্তীকে এখানে রেখে যাবে। দরকার হলে মাঝেমাঝে আসবে। মেয়েটা সেভ থাকবে পড়াশোনা করবে। দেশের পরিস্থিতি ভালো না।
______________________
আমেনা বেগম তিন পুত্রবধুর উপরে বিরক্ত। তিনটা মিলে সিনেমা দেখতে বসেছে। কমেডি মুভি চলছে। হাসাহাসি করে সব একে অন্যর উপরে গড়িয়ে পড়ছে। উনি এত করে ধমক দিচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কেউ শুনছে না। ধমক শুনে চুপচাপ থেকে আবারও গগনবিদারী হাসিতে ডাইনিং রুম কাপিয়ে দিচ্ছে। একজন হাসলে বাকীদের থামার নাম নেই। চয়নিকা চুপচাপ থাকার চেষ্টা করলেও অরিন বা রুনির জন্য হচ্ছে না। কি একটা বিরক্তিকর অবস্থা। আমেনা বেগম সমানে বকে চলেছে। বিরক্ত হয়ে ভাবছেন যেমন দেবা তার তেমনি দেবী। ছেলেগুলা যেমন মহা ফাজিল বউগুলোও কেউ কারো থেকে কম না। ভেবেছিলেন নিজের পছন্দসই বউ আনবেন কিন্তু একটা ছেলেও উনার সেই ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূরণ করেনি। যার যাকে পছন্দ হয়েছে ধরে এনেছে। না মেনে উপাই ছিল না। আরাফাতের উপরে উনি সব সময় রুষ্ট থাকলেও আপাতত এখন আর নেই। বড় মেয়েটা জামাইয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম থাকে। বছরে একবারও বাবার বাড়িতে আসার সময় হয়না। ফোনে টুকটাক কথা হয়ে। মেয়েটা ভালো আছে ভেবেই উনি খুশী। হঠাৎ হাসির শব্দে উনার ধ্যান ভাঙলো। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
> থামবে তোমরা? দুপুর হতে চলেছে রান্নার খোঁজ নেই। ছেলেগুলা কি না খেয়ে থাকবে?
রুনি হাসি থামিয়ে জবাব দিলো,
> আজ রান্নাঘরে তালা ঝুলিয়েছি মা। আপনার ছেলেরা আজ আমাদের সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে। সঙ্গে আপনি আর বাবাও যাচ্ছেন।
আমেনা বেগম অবাক হলেন। এই বাড়ি থেকে কখনও বাইরে খেতে যাওয়া হয়না। চয়নিকা যা রান্না করে তাই খাওয়া হয়। খুব দরকার হলে হোম ডেলিভারীর জন্য অর্ডার করা হয়। ছেলেদের কর্মব্যস্ততা দিনদিন বাড়ছে। তাছাড়া রাজীব গার্ড নিয়ে ঘোরে। খেতে গেলে রেস্টুরেন্টের সামনে সব দাঁড়িয়ে থাকবে বিষয়টা বিরক্তিকর। উনি বা চয়নিকা পছন্দ করেন না। এদের মাথায় কী চলছে জানার জন্য বললেন,
> অনলাইনে অর্ডার দিলেও পারতে বউমা। শুধু শুধু ঝামেলা না করে। রান্না করতে মন না চাইলে জরি আছে ওকে বলো।
রুনি দ্রুত বলল,
> আপনার ছেলেরা সারাদিন বাইরে বাইরে মেইল ট্রেনের মতো ঘুরছে। এদিকে আমাদের ঘরে বন্দি করে। আজ আমরা অনশনে নেমেছি। তিনভাই বাড়িতে ফিরে আমাদের সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে। না নিয়ে গেলে ঘরে জায়গা দিচ্ছি না। তালা ঝুলিয়ে তিনজন এক রুমে গিয়ে ঘুমাবো।
আমেনা বেগম বুঝলেন এরা যুক্তি করে একসঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে। উনার বলাতে কাজ হবে না। এদের মধ্যে না ঢুকাই ভালো। যা মন চাই করুক। উনি কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বসলেন।
দুপুরে সত্যি সত্যি রান্না হলো না। তিন ভাইকে টেক্সট পাঠিয়ে ফোন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফোন খোলা থাকলে অসুবিধা আছে। চয়নিকার দরদি শরীর। রাজীব ইনিয়ে নিবিয়ে কিছু বললেই মেয়েটার মন গলে যাবে। এটা হতে দুপুরে মাসুদ আর রাজীব বাড়িতে ফিরলেও আরাফাত ফিরতে পারলো না। অরিন বাধ্য হয়ে ফোন আন করে ফোন দিলো। কিন্তু বন্ধ বলছে। ওর বেশ টেনশন হচ্ছে। খেতে যাওয়া হলো না। ভাবলো রাতে যাবে। চয়নিকা সামান্য কিছু রান্না করে সবাইকে খেতে দিলো। কিন্তু অরিনের খাওয়া হলো না। রাজীব ভাইকে খোঁজার জন্য লোক পাঠালো। ছেলেটা আবিরের ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে কোথায় গেছে কেউ জানেনা। ওর কাজকর্ম গুলো সব উল্টোপাল্টা টাইপের। সকলের চিন্তার অবসান ঘটিয়ে সন্ধ্যার পরে আরাফাত বাড়িতে ফিরলো। হাত পায়ে জখম নিয়ে। ঠোঁটে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। রাজীব ওকে ধরে রুমে দিয়ে গেলো। অরিন বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। আরাফাত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে ইশারা করতেই অরিন ওকে জড়িয়ে ওরে হু হু শব্দ করে কেঁদে উঠলো। আরাফাতকে শক্ত করে ধরতেই ছেলেটা বলে উঠলো,
> আরে আস্তে ধরো আমি সিনেমার নায়ক না গায়ে ব্যাথা আছে। কান্নাকাটি বন্ধ করো। আমি ঠিক আছি।
অরিন ওকে খপ করে ছেড়ে দিলো কিন্তু আরাফাতের পছন্দ হলো না। ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,
> ছেড়ে দিতে বলেছি নাকি? শুনো তোমার ফুপা ধরা পড়েছে। পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিলাম তুলতে। শহর ছেড়ে গ্রামে পালিয়েছিল। তুমি জানো যেইনা আমাদের দেখলো অমনি দৌড়। তারপর মুরগি ঘরের নিচে ঢুকে গেলো। আমি পা ধরে টানাটানি করলেও ব্যাটা বের হয় না। কি একটা অবস্থা।
> আপনি কেনো গিয়েছিলেন? পুলিশের কাজ পুলিশ করতো।
> এসব পুলিশ টুলিশে আরাফাতের বিশ্বাস নেই। টাকা ছড়ালে আসামি আর ভিকটিম গুলিয়ে দিতে এদের সময় লাগে না। যতদিন পযর্ন্ত বিচার না হচ্ছে আমার শান্তি নেই। আমাকে তো চিনে না। প্রিয়জনের জন্য আমি সব করতে পারি।
অরিন ঠোঁট উল্টে বলল,
> হিরো
> হীরো না তোমার বর। যাও এখন বরের সেবা করো। রেডি হয়ে আসো রাতের ডিনারের ব্যবস্থা করেছি। টেক্সট পেয়েছি ঝামেলা শেষ করে ফোন অন করলাম সেই সময়। তখনই টেবিল বুক করেছি। বউয়ের চাওয়া অপূর্ণ রাখতে চাই না। ভাবিদের বলে এসেছি।
অরিনের ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো। লোকটা যে ওকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। ভালোবাসার প্রথমধাপে পা দিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু সামনে এগোনোর দিন
☆☆☆
থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে হৈমন্তী। আবির কিছুক্ষণ আগে ফিরে এসেছে। আবিরের কাছে থাকা কাগজপত্র দেখে ওর ভয়ানক মন খারাপ। ভেবেছিল দুজনে এক সঙ্গে ফিরবে কিন্তু আবির সেটা করছে না। ওর এখানে রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে কিন্তু কেনো? হৈমন্তীর মতে ওর পড়াশোনার কোনো দরকার নেই। বাপ ভাই বা শশুরের টাকা পয়সার অভাব নেই। ও যেখানেই থাকবে না খেয়ে থাকতে হবে না।তাহলে ও কেনো পড়াশোনার জন্য সংসার করতে পারবে না? আবির কড়াকড়ি ভাবে বলেছে, মেয়েদের পড়াশোনার দরকার আছে। অবস্থা পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। কোনো এক সময় আবির নাও থাকতে পারে। হঠাৎ যদি মারা যায় তবে সবকিছু হৈমন্তীকেই দেখতে হবে তাই ওর পড়াশোনা শেখার দরকার আছে। এখানে থাকলে পড়াশোনা ভালো হবে। জ্ঞান বাড়বে। চাকরি করতে হবে না তবুও জ্ঞানের দরকার আছে। এটা শুনে হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হয়েছে। চুপচাপ বসে আছে আবিরের সঙ্গে কথা বলছে না। আবির অসহায় ভাবে ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কিভাবে বোঝাবে মাথায় আসছে না। আবির চুপচাপ উঠে গিয়ে হৈমন্তীর গা ঘেঁষে বসে ওকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> তোমার ভালো চাইতে পারবো না আমি?
> এটা কেমন ভালো? আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। বাচ্চা কাচ্চা হবে মন দিয়ে সংসার করতে চাই। আমি চাইনা পড়াশোনা শিখে বিদ্যান হতে।
আবির হাসলো। মেয়েটা ফাঁকিবাজ বুঝতে সময় লাগলো না। তবুও বলল,
> ফেল করার ভয়ে পড়াশোনা ছাড়বে হেমী? বিয়েও তো করেছিলে এই জন্য?
হৈমন্তী থমথমে মুখে আবিরের কথা ইগনোর করে বলল,
> পাশের বাসার ভাবির বাবু হবে। আমি চাই আমারও হোক। তারপর গুছিয়ে সংসার করবো। আপনার জন্য রান্না করবো। শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে ভাব জমাবো কত মজা হবে।
> কপাল আমার। মায়ের সঙ্গে তোমার ভাব কম ছিল কবে শুনি? আর বেবি তুমি সামলাতে পারবে না। আগে নিজেকে সামলাতে শিখো। মাথায় শুধু বদ বুদ্ধি। বইখাতা রবিনকে বলেছি ও পাঠিয়ে দিবে। প্রজেক্টরে ক্লাস হবে তুমি ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারবে। আমি কয়েকদিনে আছি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবো।
হৈমন্তী আবিরের হাত কামড়ে দিয়ে বলল,
> পারবো না আমি। এখানে কেনো পড়তে হবে? দেশে স্কুল কলেজ নেই? দরকার হলে আগে যেমন ছিলাম তেমনি পড়বো।
> সুযোগ বারবার আসে না হৈমী। তুমি মন্ত্রীর বোন আর একজন ভালো ডাক্তারের বউ বলে সুযোগটা পেয়েছো। দেশের অসংখ্য প্রতিভা আছে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে সুযোগের অভাবে। সুযোগ কাজে লাগাও আশাকরি আমার কথা তুমি একদিন বুঝবে। আমরা কাছে না থাকলেও পর হবো না। ইন্টারনেটের যুগ। হাজার মাইল দূরে থাকলেও অদৃশ্য ভাবে কাছে থাকবো। দেশে রাজনৈতিক হাঙ্গামা চলতেই থাকবে। রাজীব ভাইয়ার নির্বাচনের বেশিদিন নেই। ওসব ঝামেলা টেনশনে তোমার পড়াশোনা হবে না। বডি গার্ড নিয়ে কলেজে যাওয়া ঝামেলা। এখানে তুমি নিরাপদে থাকবে।
আবির একদম কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তী ওর বুকের মধ্যে ফ্যাচ ফ্যাচ করে নাক টেনে কাঁদছে। আবির ওর মুখটা তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে কাপলে চুমু দিয়ে বলল,
> আচ্ছা জোর করবো না। তুমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নাও। এখন কান্না থামাও।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।