#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
#পর্বঃ২( অন্তিম পর্ব)
#Jhorna_Islam
সব কিছু কেনাকাটা করে প্রান্তিকা যখন বাড়ি ফিরবে তখন বাঁধে আরেক বিপত্তি। কোনো গাড়িই সে পাচ্ছে না। যদি ও বা দুই একটা পাচ্ছে চওড়া দাম চাচ্ছে। আর সব কিছু কিনে প্রান্তিকার কাছে এতো টাকা ও নেই।অনেক সময় নিয়ে দামাদামি করে একটা পেয়েছে।সেটা দিয়েই বাড়ি এসেছে।
বাড়িতে ঢুকে প্রান্তিকা বেশ অবাক হয়। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। তারপর ভাবলো হয়তো যে যার রুমে সময় কাটাচ্ছে। এসবে মাথা না ঘামিয়ে ভাইয়ের রুমের দিকে এগিয়ে যায় সব জিনিস পত্র ভাবিকে দেওয়ার জন্য।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় প্রান্তিকা ভিতরের রুমের থেকে আসা কিছু তিক্ত শব্দ শুনে। কান দুটো যেনো ভুল শুনছে।এই ভেবে কানে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দেয়।কিন্তু না একি কথা শুনে যাচ্ছে। কথা নয়তো তার জীবনের কিছু রহস্য।
সে এতোদিন যাদের বাবা মা ভাবতো নিজের আপন ভাবতো তারা আসলে কেউ না। এ-ই বাড়ি টা তার আপন না। তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছে। নিজেদের মেয়ের সম্মান দিয়েছে।
প্রান্তুিক কে তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি, বউ বোঝাচ্ছে এই মেয়ে কে কেনো এখনো এই বাড়িতে রেখেছে? তাড়িয়ে কেন দিচেছ না। একজন মানুষের কতো খরচা।তাও আবার মেয়ে মানুষ বিয়ে শাদি দেওয়ার সময় তো বস্তা বস্তা টাকা দিতে হবে।
প্রান্তিক কাউকে বোঝাতে পারছে না। যতোই সে খারাপ ব্যবহার করুক এক সময় তো নিজের আপন বোন ভাবতো।বোনের জায়গা দিয়েছিল। এখন হয়তো সত্যি টা তার সামনে আসায় খারাপ ব্যবহার করে।বা এড়িয়ে চলে।তাও কি করে সে এমন বয়সের একটা মেয়ে কে বের করে দিবে?
প্রান্তিক ও তার বাবা মা মারা যাওয়ার পর মায়ের ডায়েরি পরে জানতে পেরেছে এসব।আগে থেকে কিছু জানতো না। ডায়েরি তে তার মা জীবনে ঘটে যাওয়া সব কিছু লিখে রাখে।সেখানেই প্রান্তিকার কথা লিখা ছিলো। তাকে একটা ময়লা ফেলার ডাস্টবিন এর কাছে কুড়িয়ে পেয়েছে।
এসব জেনে সব তার বউকে জানায়।তখন থেকেই প্রান্তিকা কে দেখলে তার কেন জানি প্রচুর রা’গ লাগে।প্রান্তিকের ধ্যান ভাঙে তার শ্বশুরের কথায়।
তুমি কেন ঐই মেয়ে টা কে রেখে দিছো আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। ভালো ঘরের মেয়ে তো হবে না। কে জানে কার পা*পের ফসল।তাই তো রাস্তায় ফেলে রেখে গিয়েছিলো।আর তাকে তোমার দরদী বাবা মা তুলে এনেছে কোনো বাছ বিচার না করেই।
কথাটা ব’জ্র’পা’তে’র মতো প্রান্তিকার আর প্রান্তিকের কানে বারি খায়।
প্রান্তিক বাবা বলে চিললিয়ে উঠে।
অন্যদিকে প্রান্তিকার হাতে থাকা সকল জিনিস পত্র মেঝেতে পরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
জিনিস পত্র পড়ার আওয়াজে সকলেই দরজার দিকে তাকায়।
প্রান্তিক কিছু বলতে নিবে তার আগেই প্রান্তিকা দৌড়ে বেরিয়ে আসে। শুধু ঐ ঘরের দরজার পাশ থেকে না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। কানে বারি খাচ্ছে বারবার কিছু সময় আগের কথা গুলো।
এজন্য সবার ওর প্রতি এতো অনীহা।ভাই আর তাকে আগের মতো ভালোবাসে না। নানির বাড়ির লোকজন এজন্য তাকে দেখতে পারতো না।
জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোন সময় যে মেইন রাস্তায় এসে পরে সেই দিকে তার খেয়াল নেই। হুট করে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়। প্রান্তিকা নিচে পরে যায়। মাথা দিয়ে র’ক্তে’র বন্যা বইছে।
আহান গাড়ি চালাতে চালাতে মায়ের সাথে কথা বলছিলো হুট করে সামনে একটা মেয়ে চলে আসে। গাড়ি ব্রেক করার আগেই অঘটন ঘটে যায়। তারাতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়ে মেয়েটার কাছে যায়।
হাঁটু গেড়ে বসে। জামা কাপড় দেখে কিছু টা অবাক হয়ে যায় আহান।এটা তো সেই মেয়ে টা। আর কিছু না ভেবে তারাতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
————————-
কয়েক বছর পর,,,,,,
আহান এই আহান উঠো ঘুম থেকে।
উমমম,
কি উমম ঘুম থেকে উঠো বলছি।তোমার না আমাকে আজ বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা? এই উঠো না। আমার কিন্তু রা’গ উঠতেছে আহানননন!
আহান ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে।
আহানের কান্ড দেখে হেসে ফেলে রিতু। তারপর বলে তারাতাড়ি ফ্রেশ হও। আজ আমরা সারাদিন বাইরে ঘুরবো।খাওয়া দাওয়া করবো।তোমার তো এমনিতে সময় ই হয় না। আজ ছাড় পাবে না।
আরেকটু ঘুমাতে দাও না। একটু পরে উঠি?
এই গু’মড়া মুখো উঠবে তুমি? বলেই কোমড়ে হাত দিয়ে রা’গী চোখে তাকায় আহানের দিকে।
আমার সাথে তুমি রা’গ দেখাচ্ছো? আমার ঘুম থেকে বুঝি তোমার ঘোরাঘুরি টা বেশি দরকারি?
রিতু মুখটা কালো করে ফেলে।তারপর বলে আচ্ছা ঘুমাও তাহলে কোথাও যেতে হবে না।
এই পা’গলি মজা করেছি।
আহান রিতুর মাথায় চুমু খেয়ে বলে ঠিক আছে তুমি তৈরি হও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
রিতু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
আহান মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে।
এইদিকে মনের আনন্দে রিতু তৈরি হয়ে নেয়।
আহান রিতুকে নিয়ে মা কে বলে বেরিয়ে পরে। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। রিতুর পছন্দের সব খাবার খায়। ফুচকা,ঝালমুড়ি, আইসক্রিম সব।মেয়ে টা কি খুশি।আহান সারাক্ষণ রিতুর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
কি মায়া মেয়েটার মুখে। শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।
সন্ধায় একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে ওরা থামে। আহান রিতুর হাত ধরে ভিতরে যেতে থাকে। আর ভাবে কয়েক বছর আগের কথা।
এই রেস্টুরেন্টের সামনেই তার রিতুর সাথে প্রথম দেখা।যদিও বা মুখ দেখে নি। ধাক্কা খেয়েছিলো।মাথা নিচু করে স’রি বলে চলে গিয়েছিলো।
পরে আহানের গাড়িতেই ধাক্কা খায় প্রান্তিকা।আহান তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অন্য দিকে প্রান্তিক অনেক খোঁজে ও পায়নি প্রান্তিকা কে।
দুইদিন কোনো জ্ঞান ছিলো না প্রান্তিকার।মাথায় বেশ জোড়ালো আঘাত পেয়েছে। যার জন্য অপারেশন করা লেগেছে।
জ্ঞান ফিরে প্রান্তিকা কাউকে চিনতে পারে নি।এমনকি নিজের নাম টা ও বলতে পারে নি। আহান নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে।আহানের মা রিতু নাম দেয়। সেই থেকে আহানদের ই আপন করে নেয়।ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছিল স্মৃতি ফিরে পাওয়ার কোনো চান্স নেই।
আহান গোপনে প্রান্তিকার পরিবার কে অনেক খোঁজে কিন্তু পায়নি।তাই আর চেষ্টা ও করেনি।যে ভাবে আছে থাকুক না।
এক বছর যাওয়ার পর আহান রিতুকে ভালোবেসে ফেলে। রিতুও তাই। আহানের মা তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। এখন তারা সুখে সংসার করছে। রিতু তো আহান বলতে পা*গল।
কয়েকদিন আগে রিতুর আসল পরিচয় সব কিছু আহান জানতে পারে। এমনকি প্রান্তিকের সাথে তার দেখা ও হয়। আহান সব শুনে বলে দেয় সে আর রিতুকে কোন ভাবেই কষ্ট পেতে দিবে না। অতীতের ছায়া ও পরতে দিবে না তার জীবনে। প্রান্তিক প্রথম অনেক জোর করেছিলো বোনকে নিয়ে যেতে।তার ভুল সে বুঝতে পেরেছে। পরে বোনকে খুশি দেখে সুখী দেখে আর বলার সাহস পায় নি। এমনকি সামনেও যায় নি।দূর থেকে দেখেই চলে এসেছিল। যখন দেখতে ইচ্ছে করে লুকিয়ে একটু দেখে আসে।প্রান্তিক তার বউ আর শ্বশুর শ্বাশুড়ি আর বউকে ও অনেক কথা শোনায়।তাদের প্ররোচনায় পরে আরো তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন বোনের জন্য মন পো”ড়ে তাও কিছু করার নেই। কথা ও বলতে পারে না একটু।এহটাই হয়তো তার শাস্তি।
খেয়ে দেয়ে রিতুর হাত ধরে আহান বেরিয়ে আসে। সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে তারা ধাক্কা খেয়েছিলো।মনে মনে আহান বলে যদি সেই সন্ধায় আমি এখানে না আসতাম তুমি না আসতে তাহলে কি হতো বলোতো।তোমাকে তো আমি কোন দিন পেতাম না।
আহান রিতুকে কাছে টেনে মাথায় চুমু খায়। তুমি আমার মনের রানী রিতু। তোমাকে আজকের মতো আরো শতো সন্ধা উপহার দিবো।তোমার নামে করে দিবো।
#সমাপ্ত।