ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে পর্ব-১৩

0
290

#_ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
#_পর্বঃ ১৩
#_আরজু_আরমানী

পশ্চিম আকাশের সূর্যটা লাল আভায় রঙিন হয়েছে। কিছুটা আলো এসে আড়াআড়িভাবে আমার বারান্দায় পরেছে। হাতে থাকা বইটা নামিয়ে ফোনে নজর দিলাম। তিশার নাম্বারে ডায়াল করলাম। ও যেন ফোনের কাছেই বসে ছিল সাথে সাথে ফোন ধরেছে।

” রাত্রি রেডি হয়ে নে। আমরা একটু পরেই বের হবো।”

” আচ্ছা। ”

আমি ওয়াশরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হলুদরঙা একটা থ্রি- পিস পরে নিলাম। হিজাব বাধলাম। দশ মিনিটের মতো লেগেছে। এর মধ্যে তিশা নিচে নামার জন্য কয়েকবার কল করেছে। আমি নিচে এসে দেখি পুরো বিল্ডিংয়ের সবাই যাচ্ছে। আমাকে দেখে আমার বড় ফুফু বললেন,

” তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

আমি তিশার দিকে তাকালাম। তিশা বললো,

” ও আমার সঙ্গে যাচ্ছে।”

” ওর যাওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার ছেলেদের বিয়ে আমি কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই দিতে চাই।”

বড় ফুফুর কথা শুনে এশা আপু আর তাহমিদ ভাইয়া বললো,

” ও যেন আমাদের শপিংয়ে না আসে। যদি আসে তবে আমরা যাবোনা।”

সেই মুহূর্তে ঢাল হয়ে দাড়ালেন তামিম ভাইয়া। তিনি সবাইকে জানালেন,

” তোমরা আজ শপিং করে আসো আমরা কাল গিয়ে শপিং করে আসবো। ”

বড় ফুফু কুলকুল বললেন,

” কেন? সবার তো এখনি যাওয়ার কথা ছিলো?”

” আপনাদেরই তো আবার সমস্যা হচ্ছে রাত্রি যাচ্ছে বলে। ”

আমি তামিম ভাইয়াকে জানালাম,

” আপনারা চলে যান। আমি যাবোনা।”

” তুই যাবি না মানে? তোকে যেতে হবে মানে হবেই। ওঠ গাড়িতে। ”

আমাকে ঠেলে-ঠুলে গাড়িতে ওঠালো তিশা। আমাদের গাড়িতে আমি, তিশা, তামিম ভাইয়া, মেহেরিমা, তাসকিন, আব্বু, এবং ছোট ফুপি। গাড়ি চলতেই আমরা মজে উঠলাম আড্ডার আসরে।

____________________________

একসপ্তাহ কেটে গিয়েছে। আজ এশা আপুর বিয়ে। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়নি। বাড়ির ছাদেই সব কিছুর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। রান্নার জন্য বাড়ির পিছনের বাগান ঠিক করা হয়েছে। ভোররাত থেকেই গরু কেটে তার সব কিছু ঠিকঠাক করছেন লোকেরা। বড় দুই ফুপা, বাবা, ছোট ফুপারা বাগানের কাজের তদারকি করছেন। বাড়ি ভর্তি মেহমানে গিজগিজ করছে। আমার রুমেও অনেক মানুষ। আমি এতোক্ষণ বাইরে ঘুরেছি। রুমে এসে মাত্রই বসলাম। বিছানার উপর পা মেলে সবাইকে পর্যবেক্ষন করছি। আমার মেরুন কালারের লিপস্টিকটা একটা বাচ্চা মেয়ে পুরো মুখে মেখে বসে আছে। আমার রাগ হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমার হাসি আসছে। বাচ্চাটাকে দেখতে খুবই কিউট লাগছে। আমি ওকে কোলে নিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। বাচ্চাটাকে জিভ করে ভেঙাচ্ছি। বাচ্চাটা ফোকলা দাঁতে হাসছে। আমারও মজা লাগছে ওর সাথে এরকম দুষ্টুমি করতে।

” রাত্রি আপু তোমাকে এশা আপু ডাকছে।”

আমি খানিকটা অবাক হলাম। আজ কি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে নাকি? তাহমিদ ভাইয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে এশা আপু আমার সাথে তেমন কথা বলেনি। ডাকলে জবাব দেয়নি। আজ হঠাৎ করে ডাকার কারন কি? আমি এশা আপুর রুমের দরজায় টোকা দিলাম। সে আমায় ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলো। সদ্য গোসল করে বের হয়েছে সে। তাকে এই মুহুর্তে ঠিক শুভ্র গোলাপের মতো মনে হচ্ছে। চুলে তোয়ালে পেঁচানো। হোয়াইট কালারের একটা গাউন পরা। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

” আমায় ডেকেছিলে?”

” হ্যাঁ।”

এটুকু বলেই থামলেন। মাথার তোয়ালে খুলে চেয়ারের উপর রাখলেন। হাতে হেয়ার ড্রয়ার নিলেন। চুল শুকাতে শুকাতে বললেন,

” তাহমিদ ভাইয়াকে আমি জেদের বশে বিয়ে করছি। তাকে একটা সময় আমি ভীষন ভালোবাসতাম। তবে তিনি কখনোই আমাকে বোঝেননি। মজার ছলে একদিন তাকে বলেছিাম,’ ভাইয়া আপনাকে বিয়ে করতে চাই।’ তাহমিদ ভাইয়া আমাকে বলেছিলেন, তাকে বিয়ে করার মতো কোনো যোগ্যতা আমার নেই। কারন তখন তিনি তোকে ভালোবাসতেেন । তুই তার কাছে এখনো তার ভলোবাসার মানুষ। আমি কখনো তার জীবনে ঠাঁই পাবোনা। আর সে চেষ্টাটাও আমি করিনা। তার সাথে শুধু সম্পর্কটাই হবে, এর মধ্যে আর কোনো অপশন থাকবেনা।’

আপু কথা শেষ করে হেয়ার ড্রয়ারটা তার নিজ স্থানে রেখে দিলো। চেয়ার টেনে আমার সম্মুখীন হয়ে বললেন,

” তুই চাইলে এখনো ওকে বিয়ে করতে পারিস। তবে সেটা আমি হতে দিবোনা। তোর জীবনে ওর স্থান না থাকলে ও নিজেও তোকে মনে রাখবে না। জানিস তো, পুরুষ মানুষ প্রতিবার নতুন গন্ধে মা’তা’ল হয়।”

সত্যি কি আমার জীবনে তাহমিদ ভাইয়ের কোনো স্থান আছে? না নেই। তাকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারবোনা।”

” তাহমিদ ভাইকে আমি কখনো ভাই বহির্ভূত অন্য কোনো নজরে দেখিনি। তার প্রতি কখনোই আমার আকর্ষন ছিলোনা, বাকি জীবনেও থাকবে না। তুমি এটুুকু নিশ্চিত থাকতে পারো।”

আপু বসা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,

” সবাই আমাকে স্বার্থপর ভাবছে।”

আপুর কথার পিঠে আমি আর কোনো কথা বললাম না।আমি উঠে দাড়ালাম। দরজার দিকে হাঁটা দিতেই এশা আপুর হাসির স্বর শুনতে পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম তিনি ল্যাপটপে কিছু করছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

” কিছু বলবি?’

আমি ঘাড় নাড়িয়ে না বললাম। মানুষ একটা সময় করুনভাবে প্রেমে পরে। সেই প্রেম যখন কেউ প্রত্যাখান করে তখন সেই প্রেম নামক বস্তুটি তিক্ততায় পরিনত হয়। প্রেম বিষাক্ত হয়ে যায়। এশা আপুর সাথেই এমনটা হলো। তিনি তার প্রিয় মানুষের সাথে বিয়ে করতে পারছেন কিন্তু তাকে এখন তার হৃদয় মেনে নিচ্ছে না। জীবন কি অদ্ভুত? জীবনের টানাপোড়েন বোঝার সাধ্য আমাদের নেই। আমরা শুধু তা দেখতে পারি।

চলবে…………..